অধিকাংশ জাতির কিছু গর্ব থাকে, থাকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দেখানোর মতো কিছু ব্যক্তিত্ব৷ হতাশার বিষয়, আমাদের দেশে এমন ব্যক্তিত্বের বড় অভাব৷
এই দেখুন না, ইউরোপ-অ্যামেরিকার দেশগুলো প্রতি বছর লাটে নোবেল জয় করে৷ এসব দেশের গর্বিত নাগরিকরা কেউ বিজ্ঞান, কেউ চিকিতসা, কেউ রসায়নে নোবেল জয় করেন৷ আফসোস, জাতির চল্লিশ বছরের ইতিহাসে আমরা একবারই নোবেল জয় করেছিলাম, শান্তিতে৷ যে মানুষটা এই সম্মান এনে দিয়েছে, যে মানুষটা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশের পার্সপোর্ট নিয়ে, তিনি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস৷
এই মানুষটা এবারের দাভোস অর্থনৈতিক সম্মেলনে যেতে পারেননি৷ যাবেন কিভাবে, দেশি-বিদেশি পত্রিকায় তখন একের পর এক শিরোনাম, ‘নিজের দেশেই ফেঁসে গেছেন ইউনূস”, ‘ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদ”৷ শুধু তাই নয়, গত দু”মাসে একাধিক অভিযোগে অন্তত দু”বার আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে তাঁকে৷ আরো একবার হাজিরা দেবার বিষয়টি চূড়ান্ত৷ আগামী এপ্রিলে পাবনায় প্রতারণার দায়ে আদালতে হাজির হতে হবে প্রফেসর ইউনূসকে৷
দেখুন না, জাতির এই গর্বকে কিভাবে আমরা মাটিতে লুটানোর চেষ্টায় ব্যস্ত৷ যে ব্যক্তিটি আগের বছর দাভোস সম্মেলন দাপিয়েছেন, বাংলাদেশ নামক ছোট্ট একটি উন্নয়নশীল দেশের যে মানুষটি পৃথিবীর শীর্ষ নেতাদের চোখে চোখ রেখে তর্ক করতে সক্ষম, সে আজ বড় নিরব৷
অনেকেই বলে বসবেন, আরে তিনিতো সুদখোর৷ গরীব নিয়ে ব্যবসা করেন৷ তাছাড়া আমাদের প্রধানমন্ত্রীতো বলেই দিয়েছেন, তিনি গরীবের রক্তচুষে খাচ্ছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে অনুপ্রাণিত গণমাধ্যম ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইউনূসের আমলনামা প্রস্তুতে৷ বিদেশী গণমাধ্যম অবশ্য বলছে, ইউনূস ২০০৭ সালে রাজনীতিতে নামতো চাওয়ায় এখন হাসিনার জিদের শিকার হচ্ছেন৷
যাহোক, এই সুদখোর বিতর্কের খুব সহজ একটা ব্যাখ্যা আছে, গ্রামীণ ব্যাংক ইউনূসের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়৷ তবে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়েছেন তিনি, প্রতিষ্ঠাতা তিনি৷ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বছরের পর বছর তর্ক করে ক্ষুদ্রঋণকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি৷ এই ব্যাংকের সুদের হারকে ঠিকঠাক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক অর্থ নজরদারি সংস্থা৷ তাছাড়া সুদ যা খাওয়া হচ্ছে, তা ইউনূসের নিজের পকেটে যাচ্ছে না৷ যাচ্ছে গ্রামীণের তহবিলে, যার বড় অংশের মালিক গ্রামের মহিলারাই৷ তবে, হ্যাঁ বেতন হিসেবে তিনি এবং গ্রামীণ ব্যাংকের সাড়ে বারো হাজার কর্মী হয়তো এই সুদের খানিকটা খাচ্ছেন৷ এই খাওয়াতেই তাঁর নামের সঙ্গে নোবেল জয়ীর বদলে সুদখোর তকমা লেগে গেল?
এখন আবার বলতে পারেন, গ্রামীণ ব্যাংক অনেক নারীর ভাগ্য বদলাতে পারেনি৷ অনেককে আরো গরীব করেছে৷ মানছি, খুবই সম্ভব৷ যেমনটা নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ‘আশি-নব্বই লাখ ঋণ গ্রহীতার মধ্যে এরকম বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাতো থাকবেই”৷ বর্তমান সরকারের প্রচ্ছন্ন ইন্ধনে সেই বিচ্ছিন ঘটনাগুলোই মূল ঘটনায় রূপ নিয়েছে সরকার সমর্থিত পত্রিকায়৷
একজন গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে ইউনূসকে নিয়ে গর্ব করার হাজারটা কারণ আছে৷ কারণ আছে তাকে সমর্থনের৷ কিন্তু তাকে ঠিক সমর্থনটা কি আমরা করতে পারছি? প্রশ্নটা সবার কাছে৷
শিরোনামে আগেই বলেছিলাম, দেশীর সম্মান বাঁচাতে বিদেশী চেষ্টা৷ ওয়াশিংটন পোস্ট, গার্ডিয়ানের মতো পত্রিকাগুলোতে নিয়মিতই ইউনূসের পক্ষে কলাম লিখছেন বিশ্বের নাম করা ব্যক্তিত্বরা৷ যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ইউনূসের দীর্ঘ বিরোধ ছিল, সেই বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসন এর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংগঠন, নাম ফ্রেন্ডস অব গ্রামীণ৷ গ্রামীণ ব্যাংক এবং ইউনূসকে রক্ষায় এরকম আরো অনেক আন্তর্জাতিক সমর্থন আছে৷
অথচ দেখুন না, কত অসহায় আমরা৷ নিজের দেশের গর্বকে রক্ষায় আমরা সোচ্চার হতে অক্ষম৷ আমরা উচ্চস্বরে বলতে পারিনা, আমরা বাংলাদেশিরাই ইউনূসের রক্ষাকবচ হতে পারি, বিদেশী সাহায্যের দরকার নেই৷ সত্যি, বড় অসহায় আমরা!
- ডার্ক হর্স / Dark Horse
মন্তব্য
নোবেল পাওয়া একটা কারণ বুঝলাম। বাকি ৯৯৯টা কারণ কী?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব, উইকিপিডিয়ায় এই সংক্ষিপ্ত তালিকাটা পেলাম:
জানি, এই হিসেবে একেবারে হাজারটা হবেনা৷ এরমধ্যে কোন কোন সম্মাননা আরো বাংলাদেশি পেয়েছেন৷ তারপরও সংখ্যাটা নেহাত কম নয়৷ তারপরও হাজারটার জায়গায় হয়ত অনেক শব্দটি ব্যবহার যুতসই হত৷ কিন্তু এখন আর সম্পাদনার সুযোগ নেই৷
- ডার্ক হর্স / Dark Horse
তারমানে দেশে যাই করে থাকুক না কেন যেহেতু বিদেশীরা তারে এইটা সেইটা দিতেছে সেইহেতু তারে আমাদের মাথায় করে নাচতে হবে?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আপনার মন্তব্য দেখে বহু আগে শোনা এক গল্প মনে পড়ে গেল: কলকাতায় তখন সবে মেট্রো চালু হয়েছে৷ এক সকালে এক মাছ বিক্রেতা এক ঝুঁড়ি কাঁকড়া নিয়ে উঠলেন সেই মেট্রোতে৷ ঝুঁড়ির মুখ আবার আলগা৷ তাই দেখে আশেপাশের যাত্রীরা তটস্থ৷ আরে এখনই কাঁকড়াগুলো বাইরে বেরিয়ে আসবে, যাত্রীদের বিরক্ত করবে৷ যাত্রীরা তাই মাছওয়ালাকে বললো, এই ঝুঁড়ির মুখ লাগাও৷ নির্বিকার মাছওয়ালার মন্তব্য, কিছুই হবে না, এগুলো বাঙালি কাঁকড়া৷ সত্যিই তাই দেখা গেল, যখনই কোন কাঁকড়া ঝুড়ির গা বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করে, অন্য কাঁকড়ারা তার পা ধরে ঝুলে পড়ে৷ ফলে কারোরই আর উপরে ওঠার সুযোগ মেলে না৷ - আমরা সেই বাঙালি কাঁকড়া৷
- ডার্ক হর্স / Dark Horse
পয়েন্টে থাকেন প্লিজ। হাবিজাবি কাকড়া ফাকড়া উদাহরণ বাদ্দেন। ঐরকম গল্প আমিও জানি। আমি ঐসবের কোনটাতে আপনাকে ফিট করতে চাচ্ছি না।
বিদেশীরা কীসব সত্য মিথ্যা মিলিয়ে সার্টিফিকেট দিচ্ছে আর সেই জোরে আপনি ইউনুসকে হালাল করতে চাইছেন। এইসব প্রশ্নবোধক চরিত্রদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট ইউনুসের ক্ষতি ছাড়া লাভ করে না।
আপনি এগুলা যা লিখছেন -
এগুলা অমানুষিক রকমের হাবিজাবি স্টেটমেন্ট। নোবেল কমিটি যেইটা বলছে সেইটার ভিত্তি কী? কয়টা এ্যাকাডেমিক রিসার্চ এর পেছনে আছে? আর সরকার সমর্থিত পত্রিকা বলতে কী বোঝালেন? কোন কোন পত্রিকা কী কী করছে আরো একটু স্পেসিফিক বলেন। ইউনুস বা ক্ষুদ্র ঋণের ওপর ক্ষিপ্ত সবাই কী পত্রিকা পড়ে প্রভাবিত বলে আপনার মনে হয়?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব ভাই,
ভিন্নমতের শ্রদ্ধা বজায় থাকবে এমনি আশা রেখে কিছু সাদাসিদে প্রশ্ন করি। বিদ্বেষ নেবেন না।
১। ধরুন ডঃ ইউনুস নন, যে কোন একজন কৃতী বাঙালি নোবেল বিজয় করলেন। বিষয়টিকে আপনি দেশ ও জাতির জন্য কতবড় অর্জন বলে মূল্যায়ন করবেন?
২। রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত সেনের নোবেল বিজয় আপনার মূল্যায়নে কোন আসনে স্থিত?
৩। এই তিনটি অর্জনের মাঝে কি গুণগত কোন পার্থক্য আছে? যদি থেকে থাকে, তাহলে তাঁর দায়ভার কার উপর বর্তায়?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
বিষয়টা হলো কাকে, কীজন্য পদক দেয়া হচ্ছে। বিতর্কিত কাউকে এই পদক দেয়া হলে বাপে কইছে শালার ভাই আনন্দের আর সীমা নাই থিওরীতে নাচতে শুরু করবো না আমি।
রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত্য সেনের নোবেল পদক ন্যায্য বলে মনে হয়।
গুনগত পার্থক্য অবশ্যই আছে এবং এর দায়টা নোবেল কমিটির এবং এই দায়মুক্তিতে ইউনুসের কীর্তিকাহিনী হালাল হয় না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ধন্যবাদ আপনাকে।
সহমত, আমি এমনই উত্তর আশা করেছিলাম। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো এই যে, যিনি নোবেল পেলেন তিনি কোন দেশের বা কোন জাতির পরিচয় বহন করেন সেটি বিবেচ্য না হয়ে তাঁর কীর্তিতে তিনি কতটুকু মহান বোধকরি সে বিবেচনাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত ও কল্যাণকর। মানবতার সুর আজ পৃথিবীর প্রতি প্রান্তে এমন সর্বব্যাপি ধ্বনিতে প্রবহমান যে সেই সুবিশাল মহামিলনের উপকন্ঠে ক্ষুদ্র দেশ-বিবেচনা কোনক্রমেই কাম্য হতে পারে না। তাই তোমার জাতীয়তা নয় তোমার কীর্তিই তোমায় করুক মহান। ডঃ ইউনুস এর কীর্তি কালের বিবেচনায় তাকে কোথায় স্থান দেবে, পদ্মাসনে নাকি আস্তাকুড়ে সময়ই তা নির্ধারণ করবে।
আরো একটা বিষয় পরিস্কার যে, কোন বিবেচনাই প্রশ্নাতীত ও পুনর্বিবেচনার অতীত নয়। বিবেচনা ভুল হলে যেমন দায়মুক্তি ঘটে না, তেমনি অবিবেচনা কিম্বা ভুল বিবেচনা ছাইচাপা দিয়ে রাখাও যায় না।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অত্যন্ত মূল্যবান কথা বলেছেন রোমেল ভাই। কিন্তু দুঃখ যে আমরা এই সত্যিটাকে মানতে বড়ই নারাজ। বিচার বিবেচনার বিষয়গুলো আজ লজিক্যাল মেরিট থেকে ফ্যাসিনেটিং মেরিটে চলে গেছে। যাকে ভালো লাগে তার জন্য সাতখুন মাফ আর যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
লেখাটা ঠিকমত বুঝি নাই।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
কোন অংশটি বুঝতে পারেননি সুনির্দিষ্ট করে জানালে উপকৃত হই৷
- ডার্ক হর্স / Dark Horse
সংশোধনী: ম্যারি রবিনসন আয়ারল্যান্ডের সাবেক এবং প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷ তবে ফ্রেন্ডস অব গ্রামীণের নেতৃত্বে আরো একজন আছেন যিনি বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট, নাম জেমস ভোল্ফেনশন৷অতিথিদের সম্পাদনার সুযোগ না থাকায় মন্তব্য আকারে সংশোধনী দিচ্ছি৷তবে মডারেটর চাইলে এটিকে মূল পোস্টে যোগ করে দিতে পারেন৷
- ডার্ক হর্স / Dark Horse
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মাথাগুলোর মধ্যে স্টিগলিৎজ বাদে আর কোন ভালো লোক তো চোখে পড়ে নাই। শিক্ষা বিষয়ক যেই প্রেসক্রিপশন ওরা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে সেইটা বিষয়ে আপনার মতামত কী? নাকি বলছেন যেহেতু তারা ইউনুস সমর্থক সেহেতু তাদের ঐসব জিনিস দেখা উচিত না?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আজ পর্যন্ত ইউনূস বাংলাদেশের স্বার্থে পৃথিবীর কোন শীর্ষনেতার চোখে চোখ রেখে কী তর্ক করেছেন, একটু শুনতে মন চায়।
'Creating a World without Poverty" - এই বইতে ইউনূস এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যকার দীর্ঘ বিতর্কের নমুনা পাবেন৷ ইন্টারনেটে সার্চ করলে আরো লিংক পাবেন এই বিষয়ে৷ এই কষ্টটুকু আপনিই করুন৷
এই লাইনটি পরিস্কার নয়৷ তবে যতটুকু বুঝি তাতে, গ্রামীণ ব্যাংকের কয়েক মিলিয়ন ঋণী বাংলাদেশের বাইরের কেউ নন৷ তারা বাংলাদেশেই বাস করে, বাংলাদেশেরই নাগরিক, তাদের জন্য কাজ করাটা প্রকারান্তরে দেশের স্বার্থেই কাজ করা৷
- ডার্ক হর্স / Dark Horse
নমুনাগুলোই দেখতে চাইছি। বিশ্বব্যাঙ্কের সাথে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের তর্ককে পৃথিবীর শীর্ষনেতাদের চোখে চোখ রেখে "বাংলাদেশের স্বার্থে তর্ক" বলা যায় কি না, সেটা তর্কসাপেক্ষ। দুই মুদি দোকানির মধ্যে তর্ককেও তাহলে এরপর জনসেবাতে ফেলে দিতে হবে দেখছি।
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কয়েক মিলিয়ন ঋণীর স্বার্থে ইউনূস পৃথিবীর কোন শীর্ষনেতার চোখে চোখ রেখে কী তর্ক করেছেন, তার নমুনা দেখান।
সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্নেহের ছায়ায় থেকে ইউনুস হাসিনাকে ঢিল ছুঁড়েছিলেন, হাসিনা এখন প্রতিউত্তরে পাটকেল ছুঁড়বেন - এটা কমনসেন্স। কিন্তু ইউনুসের রাজনীতিতে নামতে চাওয়া এবং তা থেকে নিজে নিজেই আবার উঠে যাওয়ার ক্ষেত্রে হাসিনার ভূমিকা কোথায়?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এটা কমনসেন্স নয়, আপনি বোঝাতে চাইছেন, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি৷ সত্যিই, আমাদের রাজনীতিবিদরা আমাদেরকে প্রতিহিংসাপরায়ন হতে শেখায়৷ আর পুস্তক বলে, অহিংসা পরম ধর্ম৷ আফসোস, চল্লিশ বছরেও আমরা এই অসুস্থ চর্চার বাইরে যেতে পারলাম না৷
- ডার্ক হর্স / Dark Horse
বাংলাদেশের রাজনীতি তো হিংসা-প্রতিহিংসারই। নোতুন কিছু না। তবে এক্ষেত্রে সেটার শুরু করেছিলেন ইউনুস। হাসিনারটা প্রতিক্রিয়া মাত্র।
আমার আসল প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। প্রশ্নটা আবারও করি:
ইউনুসের রাজনীতিতে নামতে চাওয়া এবং তা থেকে নিজে নিজেই আবার উঠে যাওয়ার ক্ষেত্রে হাসিনার ভূমিকা কোথায়?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সরি, আপনাদের আলোচনার মধ্য ঢুকে গেলাম বলে। আমি প্রফেসর ইউনুসের রাজনীতিতে আসার অভিলাষ কেনো হয়েছিলো তা জানিনা। তবে ধারনা করি কাজী ফারুকের এ্যাম্বিশান তার মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছিলো কোনও এক সময়ে। কাজী ফারুকের টাকার বণ্যায় স্নাত খুলনার মহাজোট কর্মীদের অনেকেই বলা শুরু করেছিলো যে বাংলাদেশ যদি আবার কোনওদিন প্রেসিডেনশিয়াল সিস্টেমে ফিরে যায় তবে শেখ হাসিনা হবেন প্রেসিডেন্ট আর কাজী ফারুক হবেন পিএম। কিন্তু বেশিদিন লাগেনি, মহাজোটই আবার কাজী ফারুককে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। ৩টা আসনে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে কাজী ফারুককে লোক ভাড়া করে মিছিল করাতে হয়েছিলো।
আমার মনে হয়েছে আবার এইসব পরিনতি দেখেই হয়তো প্রফেসর ইউনুস চেপে গেছেন। শেখ হাসিনা কিছু করতেন কি না তা দেখার আগেই তো তিনি ময়দান ছেড়ে ভেগে গেছেন। খালি খালি শেখ হাসিনারে দোষ দিয়ে লাভ কি? বাংলাদেশের সেমি-ডাইনাস্টিক্যাল পলিটিকাল হরাইজনে যেখানে প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরি, ডক্টর কামাল হোসেন, এদের মতো প্রমিনেন্ট দূঁদে বাক্তিত্বরা হারিয়ে যান সেখানে প্রফেসর ইউনুস বা ডক্টর কাজী ফারুকদের পরিনতি বিবেচকমাত্রই অনুধাবন করতে পারেন। প্রফেসর ইউনুস নিঃসন্দেহে একজন উত্তম বিবেচক।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ডার্ক হর্স, দুনিয়ায় সব তত্ত্ব নিয়েই বিতর্ক আছে, কোরান-বাইবেল নিয়েও বিতর্ক হয়। তত্ত্বকথা সাধারনত ভালো বা কল্যানকর হয়। তবে সব তত্ত্বেরই প্রস এন্ড কন্স আছে। তত্ত্ব তখনই ভালো হয় যখন তার পজেটিভ ইম্প্যাক্ট ৮৫-৯০ শতাংশ বা তারও বেশি হয়। অন্য সব তত্ত্বের মতো প্রফেসর ইউনুসের তত্ত্ব তত্ত্ব হিসেবে ভালো কিন্তু মাঠের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে।
নোবেল কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত জাস্টিফাই করার জন্য এমনটা তো বলবেই। আমি আপনার প্রফেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড জানিনা। তবে একজন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এনজিও কর্মী হিসেবে অনুরোধ রাখছি, প্লিজ মাঠে যান, তারপর দেখেন যে কি মহা ইম্পাক্ট গ্রামীনব্যাঙ্ক রেখে চলেছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ইউনুস সাহেবের হাসিটার দাম কুটি কুটি টাকা।
শেয়ার মার্কেট নিয়ন্ত্রণে মুহিতের গলদঘর্ম হওয়াটা এখন পর্যন্ত যথেষ্টই সমালোচিত এবং নিন্দিত। তবে এরকম সুদ বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার মুহিতের চেষ্টাকে আমি স্যালুটই দেব।
১. আপনি কি মনে করেন না যথেচ্ছা সুদের হারে সরকারের কিছু করণীয় আছে?
২. রাজনৈতিক অস্থিরতার ফাঁক পেয়ে অগনতান্ত্রিক সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্পষ্ট প্ররোচনায় জরুরী অবস্থায় তথাকথিত তৃতীয় শক্তি আমদানীর চেষ্টাকে কি আপনি হালালিজম দিতে চাচ্ছেন?
৩. ইতিপুর্বে ইউনুস নিজেই স্বীকার করেছেন নরওয়ের অর্থ অন্য প্রতিষ্ঠানে ট্রান্সফার করার উদ্দেশ্য ছিল ট্যাক্স কমানোর একটা পদক্ষেপ, আত্মসাতের কোন ব্যাপার এখানে জড়িত ছিল না। মানলাম, কিন্তু ইউনুসের এই ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা আপনি কি চোখে দেখেন? নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তিতে অর্জিত অর্থের ট্যাক্স দিতেও যে ইউনুস রাজী ছিলেন না সেটা কি আপনার মনে আছে?
৪. মাঠ পর্যায়ে মাইক্রোক্রেডিটের প্রভাব সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন এমন কোন নমুনা কিন্তু আপনার লেখায় পাওয়া যায়নি!
৫. দেশি সরকারের সাথে কিঞ্চিত ঠাসাঠাসির প্রাক্কালেই ক্লিন্টন পরিবার, সেই ধারাবাহিকতায় মার্কিন সরকারের কাছে দেশি সরকারের নামে বিচার দেয়া, সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে হিলারির ঔদ্ধতপূর্ণ আচরনের ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী?
৬. বেসরকারি ব্যাংকের নির্বাহী পদের বয়সসীমা পাঁচ-পাঁচটি বছর পেরিয়ে যাবার পরেও ইউনুসের চেয়ারম্যান পদ না ছাড়ার ইচ্ছাকে কি আপনি সাধুবাদ জানাচ্ছেন?
- দিগন্ত বাহার
অবশ্যই করণীয় আছে৷ গত বছরের মার্চ মাসে খোদ ইউনূসই ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার নির্ধারণ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন সরকারের প্রতি (সূত্র: প্রথম আলো, ১৮-০৩-২০১০)। সরকার এই হার নির্ধারণ না করা পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক বেশি সুদ নিচ্ছে এমনটা বলা যায় কিনা, তা বিতর্কের বিষয়৷ এখানে মনে রাখা উচিত, শুধু গ্রামীণ ব্যাংক নয় ব্রাক, প্রশিকা, আশাসহ অনেক সংস্থা কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে৷ সরকার সুদের হার নির্ধারণ করে দিলে, তা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে৷
প্রশ্নটিতে আপনার একান্ত চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে৷
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্যাক্স ল’ইয়ার নামক বিশেষ আইনজীবী রয়েছেন৷ যাদের দায়িত্ব হচ্ছে, কিভাবে তার খদ্দেরের ট্যাক্স কমানো যায়, তা দেখা৷ ট্যাক্স কমানো আর ফাঁকি দেওয়া এক নয়৷ নিয়মতান্ত্রিকভাবে আপনি ট্যাক্স কমানোর যেকোন উপায় খুঁজতে পারেন৷ গ্রামীণে বিদেশি সাহায্য থেকে পাওয়া অর্থের উপর ট্যাক্স দেওয়া হলে প্রাকারান্তরে তার প্রভাব পড়ত ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীদের উপর৷ গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হারও যেত বেড়ে৷ তাছাড়া এই ব্যাংকের ঋণ গ্রহিতারাই এর মালিকে পরিণত হন (সূত্র: ফ্রেন্ডস অব গ্রামীণ, বিবিসি বাংলা, ১৬-০২-২০১১)৷ সুতরাং সেই মালিকদের উপর থেকে চাপ বাঁচাতে ট্যাক্স কমানোর চেষ্টা খুব কি অপরাধের?
ক্ষুদ্রঋণের কর্মপ্রক্রিয়া মাঠ পর্যায়ে দেখার সুযোগ রয়েছে আমার৷ এই ঋণ প্রক্রিয়ায় কয়েকটি বিপত্তি আছে, যেগুলো সমস্ত ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে:
১. মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে৷ ফলে, এক ব্যক্তি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা খরচ করে ফেলছেন ভিন্ন কাজে৷ এরপর সেই ঋণ মেটাতে দ্বারস্থ হচ্ছেন ব্রাকের৷ ব্রাক আবার যখন পয়সা ফেরত চায়, তখন তিনি হাজির হন আশা কিংবা অন্য কোন সংস্থায়৷ এটাই ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদ৷ ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো সবাই নিজেদের ঋণী বাড়াতে চান, ঋণের পরিমান বাড়াতে চান৷ এই অসুস্থ চর্চা পুরো প্রক্রিয়াকে বিপর্যস্ত করছে৷
২. প্রাকৃতিক বিপর্যয়: ইদানিংকালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা বাড়ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গ্রামগঞ্জে চাষাবাদে পরিবর্তন আসছে৷ ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীরা একেক বার বন্যায় নিঃস্ব হন৷ আবার ঘুরে দাঁড়াতেই নতুন প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়৷ এমন মানুষেরা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ফেরত দেবেন কিভাবে? বলাবাহুল্য, গ্রামীণ ব্যাংক শুরু থেকেই ধরে নিয়েছিল, ৫ শতাংশ ঋণ তারা কখনো ফেরত পাবেনা৷ আটানব্বইয়ের বন্যা পর্যন্ত সামাল দেওয়া গিয়েছিল এই পাঁচ শতাংশে৷ বর্তমান অবস্থা জানিনা, তবে এসব বিষয় পর্যালোচনা করা উচিত৷ সেটা শুধু গ্রামীণ ব্যাংক কিংবা ইউনূসকে আক্রমণ করে নয়৷
এছাড়া ঋণগ্রহীতাদের তদারকি সহ আরো কিছু বিষয় আছে৷ ভিন্ন কোন সময়ে আমার মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা বিস্তারিত লেখার আশা রইল৷
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হিলারি ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেছেন, এমনটা কোথাও শুনিনি৷ অন্তত আনুষ্ঠানিক কোন সূত্রে আমি এই অংশের সত্যতা পাইনি৷ তাই, উত্তর দিতে পারছিনা৷
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশে অনেক বছর ধরেই অবসর আইন প্রয়োগ করা হয় না (সূত্র: প্রথম আলো, ১৬-০২-২০১১)। এখন হঠাৎ করে শুধু ইউনূসের জন্য এই আইন প্রয়োগ খুব জরুরী হয়ে গেল? ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলে হাসান আবেদ এর বয়স এখন ৭৫ বছর (জন্ম: ১৯৩৬)৷ তাঁরক্ষেত্রে কি অবসর আইন প্রযোজ্য নয়? আমি শুধু একটা উদাহরণ দিলাম৷ খুঁজলে আরো অনেককে পাওয়া যাবে, যারা অবসর আইনের তোয়াক্কা না করেই পদে অসীন আছেন৷ আইন কি সবার জন্য সমান নয়? তাছাড়া যে আইনের প্রয়োগ বা কার্যকারিতা নেই, তার গ্রহণযোগ্যতাও এক বিতর্কের বিষয়৷
ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদ কিংবা আশার সফিকুল ইসলাম কিন্তু কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নেই; তারা তাদের এনজিওর কর্ণধার। ফজলে হাসান আবেদ একসময় ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকলে সম্ভবত নিয়মানুযায়ী দুমেয়াদ পার করার পরই এই দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
অবসর আইনের তোয়াক্কা না করেই পদে আসীন আছেন এমন 'আরো অনেকের' নাম জানতে চাই। এদেরকে চিনে রাখা দরকার।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ওরেব্বাসরে! লেখক দেখি আবার শুশুকের মতো মাঝ-মইধ্যে ভুস্ করেন! অনেকগুলো মন্তব্যের উত্তর না দিতে দেখে আমিতো আরো ভাব্লাম গভীর জলের মাছ হয়ে গেছেন!
১. একমত হইছেন ধন্য হইলাম, সমস্যা হচ্ছে ইউনুস প্রকাশ্যে বলেন যে নীতিমালা দরকার, আবার চাপ আসলে বিচার-আচার ডাকেন ঠিকই!
২. প্রশ্ন যে আমার একান্ত চিন্তা থেকেই আসা উচিত ভাইডি! দোকান্ত হলে যে আমদানী করতে যেয়ে এরকম পুস্ত প্রসব করতে হবে!! ইউনুসের রাজনীতিতে আসার ইচ্ছার পেছনে আপনার একান্ত চিন্তাটাই বলেন না কেন?
৩. নরওয়ে থেকে প্রাপ্ত অর্থ তিনি যে উপায়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে ট্রান্সফার করে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে চেয়েছেন তাকে কোন সৎ নিয়মতান্ত্রিক বিজনেস এথিক্সেই ফেলা যায় না। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিলেন না যে বড়?! ''নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তিতে অর্জিত অর্থের ট্যাক্স দিতেও যে ইউনুস রাজী ছিলেন না সেটা কি আপনার মনে আছে?'' , এ ব্যাপারে তার ট্যাক্স ল'ইয়ারের প্রযুক্তিটা কি ছিল?
৪. ঠিক এমন উত্তরটাই আশংকা করেছিলাম! এটাই সামগ্রিক এনজিও টেন্ডেন্সি, প্রকারান্তরে ঋণ গ্রহীতাদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা। যদিও তারা জানত ঋণ কাকে দেয়া হচ্ছে!
এই অমোঘ বাণী কোথায় পেলেন? একটু বলবেন!
ধঈন্যাপাতা স্বীকার করার জন্যে!
৫. ও আচ্ছা...দ্বিতীয় মন্তব্যটা ভুলে গেছিলাম, আপনি তো আবার পশ্চিমা বা উত্তইরা কোন সরকার বা নোবেল কমিটির আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কোন কিছুতে আস্থা রাখেন না!
৬. উপরে গৌতমদা এঁর উত্তর দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে ফেলেছেন। উত্তর দেবেন আশা করি।
- দিগন্ত বাহার
=> দারিদ্রতা বিমোচনে ড: মুহম্মদ ইউনুসের থিউরি সফল এমনটা বলা যায় না।
=> ড: মুহম্মদ ইউনুসের নোবেল বিজয় উনার ক্ষুদ্র ঋণ থিউরিকে প্রতিষ্ঠা করে না।
=> শেখ হাসিনা বা, বা.আ.ল-এর অন্য যারা ড: মুহম্মদ ইউনুসের পিছনে লেগেছে, তাদের এই কাজ স্রেফ প্রতিশোধমূলক এবং হিংসাত্মকমূলক; তাদের এই কাজের মধ্যে কোন সৎ-উদ্দেশ্য বা, সৎ-মানসিকতা নেই।
(আড্ডমহলে প্রচলিত: শান্তিতে(?) নোবেল পুরস্কার হাসিনাকে না দেওয়ায় তিনি মনক্ষুণ্ণ হয়েছেন)
=> সবশেষে, সবকিছুতে অতিরিক্ত রং-রূপ দেয়া আমাদের মজ্জাগত বদভ্যাস। ড: মুহম্মদ ইউনুস বিষয়ক বর্তমান প্রসঙ্গও সেরকম।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
পরশ্রী কাতরতা আমাদের অনেকের মজ্জাগত, তাই ড: ইউনুসের সাফল্যে আমাদের কারো কারো কষ্ট লাগে, আমরা ভুলে যাই তার সাফল্য আমাদেরকে পৃথিবীর বুকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে
এখন আমরা অনেকে উঠে পড়ে লেগেছি ড: ইউনুসকে খাট করতে, তার সম্মানকে ভুলুন্ঠিত করতে, এটা আমাদের জন্য কাঙ্খিত নয়
ড: ইউনুস একজন অসামান্য বাক্তি, ইতিহাস তাকে তার যোগ্য আসন দিবে এই আশায় রইলাম
আমাদের এই আরেক বড় সমস্যা। আমরা খুব চাতুর্যের সাথে তথাকথিক 'মহৎ' কিছুর দোহাই দিয়ে বিরাট বিরাট অপকর্মকে আড়াল করে ফেলি। জাতির দোহাই দিয়ে আদিবাসী-নির্যাতন 'হালাল' করি, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দোহাই দিয়ে আইন ভেঙ্গে 'ক্রসফায়ারে' নাগরিক হত্যার 'বৈধতা' দিই।
'বস্তুনিষ্ঠভাবে' ভাবার এবং বুঝার চেষ্টা আমাদের সংস্কৃতিতে খুব লজ্জাজনকভাবে অনুপস্থিত।
ফলে 'রাষ্ট্রীয় গর্বের' দোহাই দিয়ে ইউনুসবাবুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত তহবিল তসরুপের অভিযোগকেও খারিজ করে তাঁর মতো দেশি লোকের 'সম্মান বাঁচানোর' 'বিদেশি' চেষ্টায় শামিল হতে লজ্জাবোধ করি না। মজার কথা এই অভিযোগও কিন্তু উল্লিখিত দেশিরা তুলেনি, তুলেছে প্রথমত বিদেশিরাই। তাহলে সেই অভিযোগের তদন্ত হতে দিতে আপত্তি কোথায়? বিশেষত অভিযোগটি যখন 'বিদেশিদের' কাছ থেকেই উঠছে? অভিযোগ না প্রমাণিত হলে তখন নিশ্চিত করেই বলা যাবে যে ইউনুসবাবু তহবিল নিয়ে কোন ঘাপলা করেননি। তখনই কেবল বলা যাবে তিনি নিষ্কলুষ। ইউনুসবাদীরা নিশ্চয় দাবি করবেন না যে নোবেল পাওয়ার সাথে সাথে তাঁর শারীরবৃত্তীয় এমন কোন পরিবর্তন ঘটে গেছে যে তার পক্ষে আর তহবিল তসরুপ করা সম্ভব নয়। যদি নিশ্চিত থাকেন তিনি নির্দোষ তাহলে আপনাদের উচিৎ হবে বরং আরো জোর গলায় তদন্তের দাবি করা।
নোবেলের কথা যখন এলোই আরো দু'টো কথা না বললেই নয়। নোবেল পুরষ্কার একটি মজার প্রপ্পঞ্চ। বহুদিন যাবৎ এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃথ হয়ে আসছে সে কথা নিশ্চয়ই নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবে না, বিশেষত আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধান ওবামার নোবেল প্রাপ্তির পর!
তা বলে আমি ইউনুসবাবুর নোবেল পুরষ্কার পাওয়াটাকে খাটো করছি না। নোবেল প্রাপ্তি একটি লম্বা-চওড়া বিরাট ঘটনা বটে। কথা হচ্ছে কার জন্য বিরাট ঘটনা? যাদেরকে কেন্দ্র করে এই ঋণ-বাণিজ্য, সেই প্রান্তিক দরিদ্র মানুষদের কাছে কি এটি বিরাট ঘটনা? যদি যে কারণে ইউনুসবাবু নোবেল পেলেন সেই ক্ষুদ্রঋণ এই দরিদ্র মানুষগুলোকে দারিদ্র থেকে বের করে আনতে পারতো, তাহলে তারা নিশ্চয়ই স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই এই 'অর্জনকে' বিরাত ঘটনা মেনে বিরাটভাবে উদযাপন করতো। তারা সেটি করতে পারছে না, কারণ তারা সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকে কখন গ্রামীণ ব্যাঙ্কের লোক এসে ঘরের খুঁটি খুলে নিয়ে যায়, কখন ঋণ শুধতে না পেরে গলায় দড়ি দিতে হয়!
তাহলে ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ে নোবেল কমিটির এত আহলাদ কেন যে একেবারে নোবেল দিয়ে ফেলবে? এটা বুঝবার মতো একটা বড় ঘটনা। বাজার অর্থনীতিবিদরা যখন ধরেই নিয়েছিল, দারিদ্রসীমার অত্যন্ত বেশি নীচে যারা, তারা বৃহদাকারের ভোক্তাশ্রেণিতে পড়বে না, তখন এই ইউনুসবাবুই রাস্তা দেখালেন। ঐ সাব-হিউম্যানের বাচ্চারা কেবল ভোক্তা নয়, প্রচলিত ব্যাঙ্কিং ইনভেস্টমেন্টের চেয়েও বেশি রিটার্ণ দিতে সক্ষম! সারা পৃথিবী চমকে উঠলো। সাম্রাজ্যবাদের চেহারায় উপনীত হওয়া লগ্নি পুঁজি এখন থেকে তৃতীয় বিশ্ব থেকেও ব্যাপক হারে মুনাফা লুটতে পারবে! কিন্তু সামান্য একটু দোহাই দিতে হবে।
কেমনতরো দোহাই? দারিদ্র্য দূরীকরণের দোহাই। এদেরকে বুঝাতে হবে ক্ষুদ্রঋণ আসলে দারিদ্র্য দূর করার মহামন্ত্র। এমন মন্ত্র যে তা আউড়ে নাকি দারিদ্রকে চিরতরে যাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়া যাবে। যুৎসই দোহাই দিতে পারলে আর কোন বেয়াদবের সাহস হবে না চ্যালেঞ্জ করবার। সেই দোহাইকে আরো পাকাপোক্ত করার কাজটি করতে পারে আমাদের পুরনো প্রপঞ্চ নোবেল!
একটু ভাবুন, এখন বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ৪৯.৮% (জাতিসঙ্ঘের মানব উন্নয়ন সূচক) - প্রায় প্রতি দুই জন আদম সন্তানের একজন আজকে এবং প্রতিদিন এই দেশে না খেয়ে থাকছে। ক্ষুদঋণের মায়া এই দারিদ্র মানুষগুলোকে বেঁধে ফেলতে চেষ্টা করছে আত্মহত্যার ফাঁদে। এই মানুষগুলোকে ঠকিয়েই ৮১৫ টাকা নিয়ে শুরু হওয়া গ্রামীণ ব্যাঙ্ক আজকে কোটি কোটি টাকার মালিক। কিন্তু দারিদ্র্যের হার কেন কমছে না?
বিদেশিদের কাছে নিজের সম্মান রক্ষা করার আগে প্রতারিত স্বদেশিদের কাছে একটু লজ্জিত হোন।
আগুন মন্তব্য, একদম টু দ্য পয়েন্ট।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ইউনূসের সহায়সম্পত্তি সব কেড়েকুড়ে নিয়ে দুই হাজার টাকা ক্ষুদ্রঋণ ধরিয়ে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, সে কতদিনে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসে।
উনি খুব জলদি দরিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসবেন, এই দুই হাজার না দিলেও বের হতে পারবেন। কারন ড. ইউনুসের সেই জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা আছে। যাদের নাই তারা কয়েক শ বা হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ধরা খায়।
-রু
ইউনুসের সমস্যা হবে না, উপরে রু যেটা বলেছেন, ইউনুসের মাথা আছে। ওই ২ হাজার টাকা সে ৫০% সুদে খাটাবে। সাথে টু অ্যান্ড এ হাফ মেন এর অ্যালান এর সিস্টেমে (এখানে পর্ব ১৫ ও ১৬) এর টাকা ও-কে দিয়ে আবার পুরোটা ফেরত নিয়ে বিজনেস করবে। কিছুদিনের মধ্যেই সে ডেসটিনির মতো একটা বিজনেস খুলে ফেলতে পারবে।
অন্যের মাথায় বাড়ি না দেয়ার নিয়ম ফলো করলে ক্ষুদ্র ঋণের হিসাবটা খুব সোজা। ঋণের টাকা খাটিয়ে যে পরিমাণ লাভ হবে, তা থেকে সুদের টাকা দিয়ে এবং ফ্যামিলি চালিয়ে বাড়তি যেটা থাকবে, সেটাই প্লাস। এই প্লাসে যাওয়ার জন্য সেই রকম প্রোডাক্টিভ খাত দরকার। সাথে পরিশ্রম। অনেক ঋণগ্রহীতাই ঋণের টাকাটাকেই ভোগ্য মনে করে, সুতরাং ওই সমীকরণ থেকে আসলই উধাও, বাধ্যতামূলক সুদের টাকা দিতে হয় ঘরের চাল বেঁচে, ফ্যামিলি চলে রাস্তায়, প্লাস-মাইনাসের হিসাব পর্যন্ত যাওয়া হয় না।
ক্ষুদ্র ঋণের তুলনায় হাতি পরিমাণ অসুদী, মূলধনও অফেরতযোগ্য টাকা দেয়ার ছোট অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ধুমায়া শ্রম না দিলে ঋণসিস্টেমে কোনো কাজ হয় না। প্রোডাক্টিভ খাত পাওয়া কঠিন, আবার ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি না থাকলে (যেমন, খামার করার জন্য জমি) শুধু ক্ষুদ্রঋণের টাকায় কিছু করা খুব কঠিন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মনে একটা প্রশ্ন জাগে, "ইউনুস-আবেদ-ফারুক-শফিক" এই চতুষ্টয় কেনো একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলেনা। বিশেষ করে নিজেরে সংস্থার এবং অপরের মাইক্রোফাইনান্স স্ট্র্যাটেজি নিয়ে।
এদের কি কোনও কমন স্ট্র্যাটেজি আছে যেমন, কাউয়ায় কাউয়ার গোস্ত খায় না অথবা সব রসুনের গুয়া একসাথে!
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমার আগের মন্তব্যে বেশ কিছু বানান ভুল হওয়ায় (ইউনূস মশাইয়ের নামসহ) এই নিবন্ধের লেখক ও পাঠকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।
এই সুযোগে সেনা-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনৈতিক ক্ষমতাকাঙ্খী তথাকথিত 'সুশীল সমাজ' ও তার 'মূল' প্রতিনিধি হিসেবে শ্রীমান ইউনূস প্রসঙ্গে একটি সাম্প্রতিক প্রবন্ধ সকলের সাথে শেয়ার করছি http://goo.gl/ltk5y
ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন