জিয়ারতের রকমফের

খন্দকার আলমগীর হোসেন এর ছবি
লিখেছেন খন্দকার আলমগীর হোসেন [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৩/০২/২০১১ - ১১:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঢাকায় বসে একজন যদি বলে, সে জিয়ারত করতে যাচ্ছে, সবাই ভাববে, সে আজিমপুরে যাবে, কিংবা বনানীতে অথবা বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে। আমাদের যুবক তেমনটাই ভাবল, যখন জেদ্দায় তার মিসরীয় সহকর্মী জানাল যে সে স্ত্রী জিয়ারতে যাচ্ছে কাল। আর চোখে মুখে একটা সহানুভূতির ভাব ফুটিয়ে প্রায় বলেই ফেলতে যাচ্ছিল, আই অ্যাম ভেরী সরি টু নো দ্যাট……। কিন্তু একটু থতমত খেয়ে গেল সহকর্মীর আকর্ণবিস্তৃত একখান হাসি আর সর্বোপরি আনন্দোচ্ছ্বল মুখমণ্ডল দেখে। লোকটা অত খুশি হয় কি করে জিয়ারতের কথা বলে?

পরে জানল যুবক, আরবিতে সব ধরনের ‘ভিজিট’কেই জিয়ারত বলে, শুধু কবরস্হান নয়। একবছর পর তার মিসরীয় সহকর্মী ছুটিতে স্ত্রী জিয়ারতে যাচ্ছে কাল। সব আনন্দ তার নয়তো কার?

বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অতিথিরা হামেশাই সৌদিতে ঢুঁ মারেন নানা আনুকূল্য লাভের জন্যে, অনেকে আসেন দাবী নিয়ে, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী উড়ে যান জাতিসংঘে, এগুলো সবই একেকটা ‘জিয়ারত’। প্রবাসী বাংলাদেশীরা জীবন্ত বাংলাদেশ ‘জিয়ারত’ করতে ছুটে যান বছরান্তে দেশে, অন্যেরা ‘জিয়ারত’ করেন নিজ নিজ দেশ।

যুবককে খুব শিগগীর একবার ডাক্তার ‘জিয়ারত’এর প্রয়োজন পড়ে গেল। সৌদি আরবের মশলা বিহীন খাবারগুলো একদম সহ্য হচ্ছিলোনা পেটে। একপর্যায়ে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ‘দাওয়া’গুলো ফেল মারল, পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। লেবানীজ চিকিৎসক রোগের সূত্র বের করতে প্রশ্নোত্তরের পর্ব শুরু করলেন।

-গতকাল দুপুরে কি খেয়েছ?
-রাইস এন্ড চিকেন, যুবক বলে।
-এবং রাতে?
-রাইস এন্ড ফিশ।
-আজকের প্রাতঃরাশ?
-অলছো রাইস। (মনে মনে যুবক আওরায়, পান্তা)।
-কনটিন্যুয়াসলি রাইস! আর্তনাদের মত শুনালো আরবি ডাক্তারের গলা।

তারপর প্রেসক্রিপশনে কলম চালালেন বেগে। আর মুখ থেকে অনর্গল বাক্যবাণ ছুঁড়লেন। যাতে অসুখের অন্যতম কারণ হিসেবে রাইসের অবদানের কথাই বলা হচ্ছিল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। উপসংহারে উপদেশ এল, দিনে একবারের বেশি ভাত খাবে না।

ব্যবস্থাপত্রটা পকেটে রাখতে রাখতে যুবক দেখে, ডাক্তার তখনও ভাতের দোষ বর্ণনায় তৎপর। ভেতো বাংগালির আর সহ্য হয় না। বলতে শুরু করে সে।

-ডক্টর, আমার দাদা একশ বিশ বছর বেঁচেছিলেন।
-‘ইয়া সালাম’! অবাক হবার মুহূর্তে মাতৃভাষা বেরোয় তার মুখ দিয়ে।
-শেষ বয়সেও তিনি সুঠাম স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন।
-‘ব্রাভো, ব্রাভো! এবারো তিনি প্রশংসা করলেন যুবকের মরহুম দাদাজানের।

যুবক এবার প্রয়োগ করে ব্রম্মাস্ত্র।

-তিনি রোজ তিনবেলা ভাত খেতেন। ডাক্তার সাহেবের ফর্সা মুখ লাল করে দিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসে যুবক।

খন্দকার আলমগীর হোসেন


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

হাহাহা...ভাত খাওয়া বন্ধ করতে যাইয়া একি খাইয়া বসিল আরবী ডাক্তার

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

আরবিরা মূলতঃ নানা ধরনের রুটি খায়। তাই ভাত নিয়ে সতর্ক তারা। আপনাকে ধন্যবাদ।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

হো হো হো ...যুবকের কাহিনী অতীব আনন্দদায়ক।
আসলেই, ভাত ছাড়া আমাদের এক বেলাও চলে না...।
____________________________________
মেঘদুত

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাত ছাড়া আমাদের এক বেলাও চলে না...

ঠিক বলেছেন, কোনদিন ভাত না খেলে মনে হয় কোথাও অসম্পূর্ণতা রয়ে গেল।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

হাহাহাহা

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

পাঠক হাসলেই না লেখকের সার্থকতা। শুভেচ্ছা রইল।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভাতের উরফে কিছু আছে নাকি দুইন্যায়?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাতের উরফে কিছু আছে নাকি দুইন্যায়?

দেশের বাইরে এলে সেই উপলব্ধিটা হাড়ে হাড়ে মিলে। আপনাকে ধন্যবাদ।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাতের উরফে কিছু আছে নাকি দুইন্যায়?

উপলব্ধিটা জোরদার হয় সেই দুনিয়ায় গেলে, যেখানে চাইলেই ভাত পাওয়া যায় না।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি বেশ মজাদার।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

খন্দকার আলমগীর হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ... ভালো লাগলো লিখাটা।

--
কালো ও সাদা

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাদের ভাললাগাই লেখকের প্রেরণা।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাত খাওয়ার কাহিনী শুইনা গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

পলাশ মুস্তাফিজ

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ভাল লেগেছে জেনে স্বস্তি পেলাম।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

ধুসর গোধূলি এর ছবি

জিয়ারত করা নিয়ে একটা কাহিনি আছে, কিঞ্চিৎ খাইষ্টা। কিন্তু কবো না। আমি ভালো হইয়া যাইতাছি। মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ভালো হইয়া যাইতাছি।

আপনার ভালো হয়ে যাবার আগের লেখাগুলো পড়ে দেখছি।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- দিলাম।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

valo achiপাঠক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে শুভেচ্ছা।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

আনোয়ারুল কবির খান এর ছবি

তিনবেলা খবুজ (রুটি) খাওয়ার চেয়ে ভাত খাওয়া অনেক উত্তম। ইলিশ ভাজা আর কাচা লঙ্কা দিয়ে ভাত খাওয়ার সুযোগ পেলে ডাক্তার তিনবার 'ইয়া সালাম' বলতো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।