ফেব্রুয়ারি বিপ্লব; জাতীয় স্বতন্ত্রতা ও সাংস্কৃতিক মুক্তির প্রশ্নে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৮/০২/২০১১ - ১১:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফেব্রুয়ারি বিপ্লব আমাদের জাতীয় মুক্তি ও সংগ্রামের পথে ছিল ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মত । এ ঐতিহাসিক ঘটনার ফলাফল আমাদের স্বাধীনতা। দেশ ভাগের পর মাত্র ৫ বছরের মাথায় কেন এই গন বিস্ফোরণ, কোন চেতনায় তারা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল অন্যায়-অত্যাচার-শোষণ-আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তা কখনই নতুন প্রজন্মের সামনে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা হয় নাই। এ প্রজন্মের বেশির ভাগ অংশ শুধু এইটুকুনই জানে এটি একটি গুরুত্বপুর্ন দিন, যে দিন কিছু মানুষ বা ছাত্র পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিল। তাদের সম্মানে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হয় । আর গাওয়া হয় ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো___একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি।
এই দিনটি উৎযাপনে রাষ্ট্র পক্ষের মধ্যে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায় । এরা প্রভাত ফেরীর ভাবগাম্ভির্য্য নষ্ট করেছে। মধ্যরাত হতেই শুরু হয় এদের ফুল দেবার প্রবনতা। রাত ১২ টার আগেই রাষ্ট্রপক্ষ সশস্র বাহিনী দিয়ে শহীদ মিনার দখল করে নেয়, তারপর রাষ্ট্রপতি হতে শুরু হয় ফুল দেবার পালা, চলতে থাকে রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা প্রশাখা নাগাদ। শ্রদ্ধার চেয়ে সেখানে নিরাপত্তার প্রশ্ন বেশী, ফুল দেবার ছলে ক্যামারা বন্ধী হবার ইচ্ছা সেখানে প্রবল।
যাই হোক অন্য সকল দিক ছাড়াও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আমরা ৪৭ এ কেন আলাদা রাষ্ট্র গঠন করলাম? আমাদের সামনে দ্বি-জাতি তত্ব উপস্থাপন করা হয়েছিল যা বেশীরভাগ মানুষই ধর্মিয় ও শোষণ মুক্তির প্রশ্নে স্বমর্থন করে। পুর্ব বাংলার মানুষের কাছে এ নতুন রাষ্ট্রটি ছিল স্বপ্নের হাতছানি। তারা ভেবেছিল ধর্মভিত্তিক এ নতুন রাষ্ট্রটিতে আর খাবারের চিন্তা করতে হবে না অথবা বছরের পর বছর ধরে তারা যে শোষিত হয়েছে, বঞ্চিত হয়েছে তার চিরবসান ঘটবে।
সহজ ভাবেই দেখা যায় সম্পদ বণ্টন ব্যাবস্থা হতে উপরি কাঠামোর সকল ক্ষেত্রে পুর্ব বাংলার শ্রমজীবী মানুষেরা ঐতিহাসিক নিয়মে শোষিত হয়েছে। ব্রিটিশরা লন্ডন শহরের আদলে গড়ে তুলে তাদের রাজধানী কলকাতা। সুবিধা সচেতন হিন্দু সম্প্রদায় পায় ব্রিটিশদের নৈকট্য। ব্রিটিশরা তাদের কাঙ্খিত কর্মচারি শ্রেণী তৈরির জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রচলন করে, যার মধ্য দিয়ে একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীও গড়ে উঠে হিন্দু সম্প্রদায় হতে। অভিমানী, দাম্ভিক ও তুলনামূলক গোঁড়া মুসলমান সম্প্রদায় ইংরেজদের নৈকট্য লাভে আগ্রহ করে না, অন্যদিকে সচেতন হিন্দু শ্রেণীটি সহজেই ইংরেজদেরর কাছ হতে সুবাধা আদায় করে নেয়। ফলে পুঁজির বিকাশের ধারাবাহিকতায় কাঙ্খিত মধ্যবিত্ত-শিক্ষিত-মধ্যবর্তি শ্রেণীটি তৈরি হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের হায়্যার ক্যাস্ট থেকে। অন্যদিকে মুসলমান সম্প্রদায় শুধু পিছিয়েই পড়ছিল (আবার হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্ন বর্নের মানুষেরাও মুসলমানদের মত এবং মুসলমানদের চেয়েও বঞ্চিত ছিল)। যেহেতু পুর্ববাংলার মুসলমান সম্প্রদায় সরাসরি উৎপাদনের সাথে জড়িত ছিল তাই তারা অবধারিতভাবে শোষিতই হচ্ছিল। এ অঞ্চলে ঘুরত উৎপাদন আর অর্থনিতির চাকা আর শস্যল হত কলকাতা শহর। পুর্ব বাংলার জমিদাররা ছিল প্রায় সবাই কলকাতাবাসী হিন্দু আর প্রজারা ছিল মুসলমান, স্বভাবতই শাসক শ্রেণীটি দরিদ্র কৃষকদের উপর নানাভাবে অত্যাচার-শোষণ করত। এটা শ্রেণী শোষণ যা এক অবধারিত ঘটনা মাত্র। কিন্তু দ্বিজাতি তত্বের প্রেক্ষাপটে এ শোষণ ও শঠতাকে সাম্প্রদায়িক দিক থেকেই দেখানো হয়েছিল। এই সমীকরণ অশিক্ষিত-দরিদ্র-মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে খুব সহজবোধ্য ছিল যে তাদের সকল দুরাবস্থার জন্য দায়ী এই হিন্দুরা আর ইংরেজরা। অন্যদিকে হিন্দুদের কাছে এটি ছিল রেনেসাঁ যুগ, শত শত বছর ধরে বহিরাগত মুসলমানদের শাসন-শোষণ-লুণ্ঠন তাদের উন্নয়ন-জাগরন-স্বাধীনতাকে হরন করে দমিয়ে রেখেছিল এই মন্ত্রনা দেয় ব্রিটিশরা। এর ধারাবাহিকতাতেই দেখা যায় দ্বি-জাতি তত্বের মত অবৈজ্ঞানিক-দুর্বল তত্ব সুসংঘটিত রাজনৈতিক কাঠামো লাভ করে।
যাই হোক ভারত ভাগ হল। দ্বি-জাতি তত্বের স্বমর্থনের পেছনে অন্যান্য কারনের সাথে সাংস্কৃতিক বৈষম্যও অনেক গুরুত্বপুর্ন ছিল। অর্থাৎ সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সহ যাবতীয় সকল বৈষম্য মুক্তির মহৌষধ হিসেবে পুর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা দ্বি-জাতি তত্বকে স্বমর্থন করে। এক্ষেত্রে বাংলা ভাষার বিকাশ পর্বের দিকে নজর দিচ্ছি। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হাত ধরে বাংলা ভাষা তাঁর আধুনিক কাঠামো লাভ করে। এখানে উইলিয়াম কেরি সাহেবরা কৌশলে পুর্ব বাংলার কৃষকদের মুখের ভাষাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সাংস্কৃতি ভাষা হতে ‘শব্দ’ ধার করে এনে বাংলাকে ফলবতী করে তুলে। বাংলায় সংস্কৃতি শব্দের ঢল নামল আর দূরে দাঁড়িয়ে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদতে থাকল পুর্ব বাংলার কৃষকদের প্রাত্যহিক ব্যাবহার্য ‘বেওয়ারিশ’ শব্দ গুলো। বাকি কাজটুকুন করে ইংরেজদের হাত দিয়ে গড়া শিক্ষিত শ্রেণীর প্রতিভূ রাম মোহন, ইশ্বর চন্দ্র, বঙ্কিমরা । মাইকেল বাংলাকে দুমড়ে, মুচড়ে নতুন কাঠামো দিতে গেলেন। বঙ্কিম এলেন, অসাধারন প্রতিভাধর বঙ্কিম প্রাশ্চাত্য থেকে অর্জিত জ্ঞান গরিমা দিয়ে বাংলা ভাষাকে সাঁজাতে ব্যাস্ত হলেন। সম্পুর্ন ইচ্ছাকৃত ও সচেতনভাবে তিনি সাম্প্রদায়িক হিন্দু জাতীয়তাবাদকে জাগিয়ে তুলতে মনোনিবেশ করলেন। ওই সময় সে চূড়ান্ত মাত্রায় সফলও হলেন। তাঁর এ জনপ্রিয়তা-গ্রহন যোগ্যতা-হিন্দু জাতীয়তাবাদের জ্বালানী ছিল মুসলমান বিদ্বেষ এবং অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাসকে বিকৃত করে। অতঃপর রবীন্দ্রনাথ; বাঙালীর জাতীয় ইতিহাসের এই মহানতম শিল্পী বাংলাকে টেনে নিয়ে এলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষা সমূহের কাতারে।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই দেখা যায়, আধুনিক বাংলা ভাষার বিকাশ হিন্দু বাঙ্গালীদের হাত দিয়েই হয়েছে। এর কাঠামো, সম্ভৃদ্ধি, বিস্তার তাদেরই অবদান। যে শিক্ষিত সামাজিক শ্রেণী কলকাতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তারাই সময়কে নিজেদের মত করে সাজিয়ে ছিল। পুর্ব বাংলা ভাষা সহ সাংস্কৃতির সকল দিক হতে বঞ্চিত হয়েছিল সেদিন, যদিও এর মানে এই নয় যে পুর্ব বাংলার সমাজ বিবর্তন, তাদের সমাজ ও সংস্কৃতি থেমে রয়েছিল। এটা কখনো হয় না, শোষিত শ্রেণীর সব কিছুই তাদের মধ্যে বহাল তবিয়তে নিজের মতই বেঁচে থাকে, নিজের মতই সম্পদশালীও হতে থাকে।
যাই হোক এ সকল কারনেই আমরা এ অঞ্চলে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য কোন চিন্তাশীল ব্যাক্তিত্ব, কোন মনীষারও সরব উপস্থিতি দেখি না। এ অঞ্চলে যে দু একজন লেখক তৎসময়ে এক আধটু খ্যাতি কামিয়েছিলেন তাও প্রবল ইচ্ছা আর প্রতিভার জোরে। তারা লিখতেন দুরু দুরু বুক নিয়ে। যথাসম্ভব কলকাতার বাবুদের মত বা কাছাকাছি করে লেখার চেষ্টা করতেন। কেননা লেখার আলোচনা-সমালোচনা-গ্রহন-বর্জন-প্রসংশা-দুর্নাম সব ঐখান হতেই আসত। উনারা স্বীকৃতি দিলেই কেবল একজন সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হতে পারত। মীর মশারফ হোসেন ‘বিষাদ সিন্ধু’ খুব যত্ন সহকারেই লিখেছিলেন ঠিক ‘উনাদের মত’ করে। এজন্যেই বঙ্কিম বাবু খুশী হয়ে লিখেছিলেন ‘এই লেখকের লেখায় পেয়াজ রসুনের গন্ধ নাই’। নজরুল অবশ্য এসবের ধার ধারেন নি। তিনি বলেছেন, তিনি লিখেছেন, তিনি গেয়েছেন নিজের ইচ্ছায়। তাঁর জন্মই হয়েছিল ভেঙে আবার গড়ার জন্য। তাকে স্বীকৃতি দিতে উনারা বাধ্য ছিলেন। তারা জ্ঞানী মানুষ, রতন চিনতে তাদের ভুল হয়েছিল না, তাই নজরুলের পৃষ্ঠপোষকও সেই কলকাতাই। এ বাংলা নয়, এ বাংলা তো তাকে নাস্তিক বলতেও দ্বিধা করেনি।
যাই হোক মুদ্দা কথা এই বলা যায় সাহিত্য-সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করে কলকাতা বাসী। পুর্ব বাংলা আর্থ-সামাজিক কারনেই তাদের সমাজ হতে বড় মনীষার জন্ম দিতে পারে নি। এ বাংলার মানুষের পক্ষে তাদের সমকক্ষ হওয়া সম্ভব ছিল না। এ ব্যাপারটা এ পারের মানুষের কাছে ছিল খুব দুঃখজনক। স্বাভাবিক ভাবেই জ্ঞান গরিমায় শ্রেষ্ঠ বাবুরা এ পারের কৃষক শ্রেণীকে মোটামোটি হেয় জ্ঞান করতেনই এবং বাঙ্গালীও বলতে চাইতেন না। বলতেন বাঙাল, যাই হোক ব্যাপারটা অনেকাংশেই আঞ্চলিকতা প্রশ্নে নিছক সম্বোধন বলেই নেয়া যায়। যাই হোক এ পারের মানুষ যেহেতু তাদের সমকক্ষ হতে পারবে না তাই অবচেতনভাবেই বিকল্প পথের কথা তারা ভাববে এটাই স্বাভাবিক।
আবার লক্ষ্য করুন ব্রিটিশ রাজ ভগরথির তীরের ভাষাকেই মান ভাষা হিসেবে গ্রহন করলেন। তাই পুর্বাঞ্চলের ভাষা হয়ে গেল বিকৃত উচ্চারনের। কিন্তু উল্টোটাও হতে পারত। এ পারের বেশ কিছু লেখক বিশেষ করে আবুল মনসুর আহমদ তাঁর অনেক রচনাতে এই দেখানোর চেষ্টা করেছেন ভাষাগত দিক, উচ্চারন গত দিক হতে এ অঞ্চলের ভাষাই সঠিক, ও পারের বাঙ্গালীরাই বাংলাকে বেশ খানিকটা বাঁকিয়ে উচ্চারন করে। আগ্রহীরা তাঁর ‘পাক বাংলার কালচার’ বইটি পড়তে পারেন।
স্বাধীনতার পরও আমারা দেখি আমাদের কিছু স্বপ্নিল, আত্ববিশ্বাসী মানুষ ভিন্ন চিন্তা করেন। এদের মধ্যে মনীষা আহমদ ছফা অন্যতম। খুব সম্ভবত তিনিই প্রথম জাতীয় সাহিত্য বা সাহিত্যের জাতীয় ধারার কথা বলেন। আবুল মনসুর আহমদ এই ব্যাপারটিকে বা বোধটিকে বলতেন ‘স্বতন্ত্রতা’। তিনি তাঁর কিছু রচনাতে এরকম বলেছেন, মার্কিনিরা স্বাধীনতার অনেক বছর পরও নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারছিল না যতদিন তারা জাতিগত ভাবে ব্রিটিশ সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত অথবা স্বতন্ত্র হতে পারছিল না। তারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে তখনই শ্রেষ্ঠত্ব পেল যখন তারা নিজেদের মত চিন্তা করতে পারল, ফলশ্রুতিতে তারা স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা পেল।
অর্থাৎ আমরা আমাদের মত হব। ওরা ব্রিটিশদের কাছ হতে শিখেছে কিন্তু বেড়ে উঠেছে নিজেদের মত। এক্ষেত্রে সাহিত্য ধারা ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের যেকোন অঞ্চলের হতে পারত, ঢাকাইয়া, ময়মনশিংহি বা টাঙ্গাইল্যা যে কোন স্টাইলের হতে পারত। তবে অনেকেই ভাবতে পারেন আমাদের উপভাষা গুলোর ক্ষেত্রে তো একটা অন্যাটা হতে অনেক দুরের, ব্যাপারটা তো একই হয়ে গেল। কিন্তু মোদ্দা কথা আমাদের ভাষার ‘শব্দ ভাণ্ডার’, যেগুলো আমাদের নিজস্ব। আর আমাদের সব অঞ্চলের সকল আঞ্চলিক উপভাষা সমূহের সমন্বয়ে, শব্দ বাছাই করে আমাদের নিজস্ব সতন্ত্র মান ভাষাও তৈরি করা যেত। আরেকটা ব্যাপার একটা উপভাষা হতে আরেকটা দূরে হলেও অচেনা নয়। তবে আলাদা দেশ বাংলাদেশ হবার পরে আমাদের ভাষার নিজ্বস্ব একটা ধরন আপনা আপনি দাঁড়িয়ে গেছে, তবে কাঙ্ক্ষিত সাহিত্য যেমন ওপারের সাথে তুলনা করলে আমরা এখনও যোজন যোজন পেছনে। সে আলোচনার সুযোগ এখানে নেই। আমরা এখন প্রচলিত এই ‘মান বাংলা’ ভাষাটাতে বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাই একে সরিয়ে আমাদের মত মান ভাষা গঠনের চেষ্টা, অনেকের কাছে ব্যাপারটা উদ্ভট ঠেকবে। আসলে এই সময়ে মানে পুঁজিতান্ত্রিক মুক্তবাজার অর্থনীতির এই সময়ে এরূপ চিন্তা নির্বুদ্ধিতা, তবে এমন কিন্তু হতে পারত। তো আসল কথা হল আমাদের নিজেদের ভাষা তো ওই ‘মান ভাষার’ মত না। তো একজন কৃষকের সন্তানের কাছে এই বাংলা ভাষাটি বেশ নতুন এবং প্রায় বিদেশী ভাষার মত তাই এটি তাঁর কাছে একটি বিদেশী ভাষা শিখে নেবার মতই। শব্দগুলো তাঁর কাছে অচেনা, যে নদীটিকে সে জন্ম হতে ‘গাং’ বলে জেনেছে তাঁর ভদ্র নাম ‘নদী’, যে গৃহপালিত গরুটির দুধ খেয়ে সে বড় হল যারে ‘গাই’ বলে চিনত তাঁর কেতাবি নাম ‘গাভী’ যা তাকে যারপরনাই আন্দোলিত করে। কদিন পর ফাইভ পাশ করে কয়েকটি ভদ্র শব্দ ব্যাবহার করে বাংলা বলতে পারলেই সে বড় অর্জন হিসেবে ধরে নেয়। তাঁর কাছে মনে হয় সে ক্রমাগত শিক্ষিত সমাজের পথে একজন হয়ে যাচ্ছে। তো ক্রিয়াপদ গুলো শিখতেই তাঁর আত্বা খাঁচাছাড়া হবার যোগার হয়। এই ব্যাপারগুলা আমরা মানে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজের মানুষেরা সহজে উপলব্ধি করতে পারি না।
যাই হোক এমন স্বপ্ন হয়ত দেখতেন কিছু স্বপ্ন বিভোর মানুষেরাই। তবে এটা হয়ত পিছিয়ে পরা এ অঞ্চলের মানুষদের খানিকটা দ্রুত সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারত। তবে এমনই প্রাত্যাশা ছিল সদ্য বিভাজিত পাকিস্তানের ক্ষেত্রে। প্রাত্যাশা পূরণের বিন্দুমাত্র নমুনাও তারা দেখাল না। বরং অন্যান্য শোষণের সাথে তাল মিলিয়ে এল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। শত বছরের বহিরাগত শাসন হতে শুরু করে ব্রিটিশ শাসন শোষণের সকল ধাক্কাকে তুচ্ছ করে এল আরও ভয়াবহ হাজারগুন শক্তিশালী ‘সরাসরি আগ্রাসন’। বাংলাকে সরিয়ে পুর্ব বাংলার রাষ্ট্র ভাষা উর্দু করার পরিকল্পনা করা হল। নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে যে জাতি ‘বাঙ্গালী’ যার শারীরিক বিবর্তনের সাথে যে ভাষাও বিবর্তিত হয়ে তাদের মুখের ভাষা ‘বাংলা’, তাকে সরানোর চেষ্টা উন্মাদনা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এটা সম্ভব হতে পারে ছোট ও অর্থনিতিক ভাবে স্বাবলম্বী কোন নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, যেমনটি হয়েছে সিঙ্গাপুরের মালয় জাতির ক্ষেত্রে।
আসলে উর্দু ভাষী কারা ? এরা বেশির ভাগই দেশ ভাগের ফলে হিন্দুস্থান হতে পাকিস্থানে আসা নেতৃত্ব স্থানীয় শ্রেণীটি। পাকিস্তানের কোন অঞ্চলের ভাষাই উর্দু নয়। এই উর্দু ভাষী মানুষগণ ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২%। তারা পশ্চিম পাকিস্তান অঞ্চলে সহজেই ওই ভাষাটি চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পুর্ব পাকিস্তানেই ঘটল যত বিপত্তি। আসলে সাংস্কৃতিক দিক হতে ‘বাংলা’ ছিল পাকিস্তানের অন্য যে কোন ভাষার চেয়ে সম্বৃদ্ধ ও শক্তিশালী। এদিক থেকে উর্দু নিতান্তই উদ্বাস্তু ভাষা। তাই পাকিস্থানের বেশির ভাগ মানুষের মুখের ভাষা ‘বাংলা’ কে সরানোর চেষ্টা ছিল চরম বোকামি, অবশ্য তারা অল্প সময়েই তা বুঝে নেয় এবং ভিন্ন রাস্তায় অগ্রসর হয়।
এক্ষেত্রে তাদের মনে শঙ্কা কাজ করত। ব্যাপারটা পাকিস্থান রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নিয়ে। পুর্বাঞ্চলের মানুষ ও ভাষা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে। দু অঞ্চলের একমাত্র কমন বিষয় বা ঐক্যের জায়গা হল তারা বেশিরভাগই মুসলমান, বাকি সকল দিক থেকে দু অঞ্চল ছিল সম্পুর্ন আলাদা। সর্বোপরি এ বিশাল দূরত্ব, শোষণ, প্রতিবাদ, অসন্তোষ ইত্যাদি রাষ্ট্রটির দুর্বলতাই প্রকাশ করছিল। তার উপর সবকিছু ছাপিয়ে মুর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পেছনে লেগে থাকত ভারত। তাই রাষ্ট্রটির ভিত আরও মজবুত এবং সেই সাথে উর্দু ভাষীদের শাসন আরও দৃঢ় করার নিমত্তে আরও ঐক্যের প্রয়োজন ছিল। এটিও একটি চিরায়ত পক্রিয়া, ভারতের দিকে লক্ষ্য করুন। ৪৭ এর সময় ভারতের কোন জাতীয় ভাষা ছিল না। তখন ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ ছাড়া আর কোন বিষয়কে ফোকাস করতে দেয়া হয় নি, তাই পুর্ব পাকিস্তানে ভাষা ভিত্তিক জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের সময় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষা আন্দোলন দানা আন্দোলন দানা বেধে উঠতে চায়। ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে যে জাতীয়তাবাদ জেগে উঠে তা স্বাভাবিক ভাবেই যেকোন ধরনের ধর্ম ভিত্তিক সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের চেয়ে হাজারগুন বেশি শক্তিশালী ও আবেগপ্রবন। এই ভয় তাড়িয়ে বেড়াত সবসময় ভারতের হিন্দি ভাষী শাসক শ্রেণীদের মধ্যে। তাই তারা তাদের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠা ভাষা আন্দোলন সমূহকে কঠোর হাতে দমন করে (অথচ কৌশলগত কারনে পুর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলনকে স্বমর্থন দেয়)। যাই হোক আসল কথা হল ভারতে ৪৭ এ কোন একক গ্রহন যোগ্য জাতীয় ভাষা ছিল না, অফিসিয়াল ভাষা ছিল ইংরেজি এবং এই ধীর্ঘ সময় ব্যাপী হিন্দি ভাষী শাসকদের কৌশলগত পৃষ্ঠপোষকতায় আজ হিন্দি এক সর্বজন গৃহীত ‘জাতীয়’ ভাষা হয়েই উঠেছে(প্রায়)। পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটা হত কিন্তু তারা কৌশলের চেয়ে জোর খাটিয়েছিল বেশি এবং তাড়াহুড়া করেছিল সেই সাথে বাঙ্গালী ছিল অতিমাত্রায় ঐতিহ্য সচেতন। এইসব কারনের পুঞ্জিভুত ফল ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি । এই ফেব্রিয়ারির বৈপ্লবিক ঘটনা মুহুর্তে জাতীয় জীবনে ছড়িয়ে পরেছিল। চায়ের কাপ হতে কবিতায়, রাজনীতি হতে কৃষকের ধান ক্ষেত নাগাদ। ২১ শে ফেব্রুয়ারি থতমত শাসক শ্রেণীকে মোটামোটি চাপের মধ্যেই ফেলে দেয়। অতপর তারা অন্য রাস্তা দিয়ে এগুতে আরম্ভ করল, বিকল্প রাস্তাটি আরও সহজসাধ্য। বাংলা যেহেতু হিন্দু বাঙালীর হাত দিয়েই কাঠামো লাভ করেছে, আবার বাংলায় যেহেতু ‘সংস্কৃতি’ শব্দের প্রাধান্য বেশি অন্যদিকে বঙ্কিম বাবুরা শুধুমাত্র প্রচার করেই প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিল যে ‘বাংলা’ ‘সংস্কৃত’ এর মেয়ে তাই পাকিস্থানী শাসকরা প্রথমেই চাইছিল একে(বাংলা) হিন্দুয়ানী প্রভাব হতে মুক্ত করা। অবশ্য এখানে একটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য যে বাংলা যে হিন্দুয়ানী ভাষা তা অনেক অনেক আগ থেকেই এদেশ বাসীকে বুঝানো হয়েছিল। সেটা আবার আরেক বিশ্লেষণের দাবী রাখে যা এখানে না করাই বেশ।
যা বলছিলাম, এবার পাক শাসকরা চেষ্টা করল সরাসরি ধর্মিয় অনুভূতিকে ব্যাবহার করে। এবার পাকিস্থানিরা ভুল করতে চাইল না এবং মোটামুটি ধীর্ঘ সময়ব্যাপী পরিকল্পনা করে এগুলো। তাদের প্রথম পদক্ষেপ হল হরফ পরিবর্তন। পরিকল্পনাটা ছিল বাংলা হরফকে সরিয়ে আরবি হরফ এনে তার ভেতর দিয়ে উর্দু করন। যেমনটা উর্দু ভাষা নিজেই; আরবি হরফে লেখা প্রায় হিন্দি ভাষা।
হাদিসে তিনটি কারনে আরবিকে অন্য ভাষা হতে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। ১. এটি কোরানের ভাষা ২. এটি বেহেস্ত বাসীর ভাষা ৩. এটি মুসলমানদের শেষ ও শ্রেষ্ঠতম নবী মুহাম্মদের মাতৃভাষা । স্বভাবতই প্রবল ধর্মানুভুতি জনিত কারনে আরবির প্রতি মানুষের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম ও আরবি ভাষা ব্যাপারটা স্বমার্থক ছিল। ইসলাম গ্রহনের ক্ষেত্রে আরবি ব্যাপারটা ইসলামের পরিপূরক ছিল। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এই ভাষাটি আগ্রাসী রূপ নিয়ে অন্য ভাষা সমূহের মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন ইসলাম আরব অধিকারের পুর্বে মিশর ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তাদের নিজ্বস্ব ভাষা ও বর্নমালা দুইই ছিল, কিন্তু আফ্রিকানরা ইসলাম গ্রহনের সাথে সাথে আরবি ঐ সকল ভাষাকে সরিয়ে দেয়।
এই অঞ্চলে ইসলামের বিস্তরনে বিদেশী মুসলিম শাসকদের (পাঠান, মুঘলরা) কোন ভুমিকা ছিল না। সামাজিক শোষণ হতে নিস্তার পেতে এ অঞ্চলের নিরীহ মানুষেরা পর্যায়ক্রমে আর্য ধর্ম, অতঃপর বুদ্ধ ধর্ম এবং সবিশেষে তুলনামূলক বৈষম্যহীন ধর্ম ইসলাম গ্রহন করে। ইসলামের আগমন, বিস্তার, প্রচার, প্রসার ভিন্নতর প্রসঙ্গ। যা বলতে চাচ্ছি তা হল, জাতিগত ভাবে যেকোন ভাষা গ্রহন করার জন্য একটি শক্ত আর্থ সামাজিক ভিত জাতির থাকতে হবে, নিম্ন শ্রেণীর এই শ্রমজীবী অশিক্ষিত মানুষগুলোর তা ছিল না। তাছাড়া ইসলাম সম্পর্কে তাদের ভাসা ভাসা ধারনা ছিল। তো এই অঞ্চলে এই আরবিকরনের চেষ্টা স্বাভাবিক ভাবেই চলেছিল(তবে তা নির্দিষ্ট শ্রেণীর মধ্যে)। কবিরা আরবিতে কাব্য লেখার চেষ্টা করেছিল, সুবিধা করতে না পেরে ফার্সিতে চেষ্টা করে, তাতেও কুলিয়ে না উঠে উর্দুতে আশ্রয় নেয় বিভিন্ন সময়। এই সব বিষয়ের বিস্তৃত বিবারন আছে মনীষা আহমদ শরীফ এর ‘একুশ শতকের বাঙ্গালী’, মনীষা আহমদ ছফার ‘বাঙ্গালী মুসলমানের মন’ প্রবন্ধ সমুহে। এ আরবি, ফারসির প্রতি দুর্বলতা, গ্রহনের ব্যর্থ চেষ্টা ইত্যাদি অনেক আগে থেকেই শুরু হলেও এসব বিশাল জনমনে বিন্দুমাত্রও প্রভাব ফেলতে পারেনি, কেননা বেশিরভাগ মানুষই শ্রমজীবী ও অশিক্ষিত শ্রেণীর।
তবে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন মাত্রা নিয়ে শুরু হয়। শাসক শ্রেণীর সরাসরি চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর কৌশল অবলম্বন করে। এক্ষেত্রে তারা ধর্মীয় অনুভুতি ব্যাবহার করে আরবির পিঠে সওয়ার হয়ে উর্দু করনের পথ বেছে নেয়। আর বাঙ্গালী মুসলমানদের ক্ষেত্রে ফার্সি ও উর্দু, আরবির মতই পবিত্র ছিল। পবিত্রতার নিরখে ব্যাপারটি, আরবি>ফার্সি>উর্দু এরকম ছিল। এ অনুভূতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে সচেতনভাবে উর্দু ভাষী শাসক গোষ্ঠী ও অসচেতনভাবে ধর্মান্ধ নির্বোধ একটি শ্রেণী।
এই পক্রিয়া ৪৭ এর আগ হতেই শুরু হয়েছিল। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে আরবি হরফে বাংলা কাব্য-পুথি অনুলিখনের দৃষ্টান্ত মেলে। মনীষা আহমদ শরীফের এইসবের উপর অনেক বিস্তৃত প্রবন্ধ রয়েছে। তবে এইসবই ছিল কাব্য সাহিত্যে কৌতূহলী বিশেষ কতক মৌলবীদের নিতান্ত পরীক্ষণ মাত্র।
১৩২২ বঙ্গাব্দে ‘আল এসলাম’ পত্রিকায় ‘বাঙালীর মাতৃভাষা’ শিরোনামে ‘খাদেমুল ইনসান’ লেখেন, ‘ উর্দুর ন্যায় আমাদের ভাষা কায়দা মত লেখা হইলে আরব পারস্যের লোক অতি সহজেই আমাদের ভাষা পড়িতে ও শিখিতে পারিব। আমাদের মাতৃভাষা আরবি অক্ষরে লিখিত হইলে নিশ্চই তাহার প্রতি সাধারনের ভক্তি অতি বেশি হইবে, ...... মুসলমানদের উচিত এই বিষয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করা ”
এ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকেন চট্টগ্রামের জে.এম.সেন স্কুলের আরবি-ফার্সির শিক্ষক মওলানা জুলফিকার আলী। বিভাগ পুর্ব হতেই তিনি আরবি হরফে বাংলা লেখার উদ্যোগ করে আসছিলেন। এই প্রয়াসে তিনি বেশ কয়েকটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন এদের মধ্যে ‘হুরফুল কোরআন’ একটি। তার উদ্যোগেই ১৯৩৯ সালের ২৯-৩১ শে ডিসেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় ‘all India Muslim education conference’ । এখানে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব গৃহীত হয়। আর দেশ ভাগের পর তা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পায়।
আরবি হরফে বাংলা লেখার ‘দার্শনিক’ তথা মুল প্রবক্তা কেন্দ্রীয় বাঙ্গালী মন্ত্রী ফজলুর রহমান (বদরুদ্দিন উমর; পুর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, ১ম খণ্ড)। প্রকৃত পক্ষে তার স্বমর্থনে আর বেশ কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি বর্গের সপ্রনদিত শ্রমে ও ষড়যন্ত্রে এ পক্রিয়া এগিয়ে যেতে থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষা দফতরের সচিব ফজলে আহমেদ, টিচার্স ট্রেইনিং কলেজের অধ্যাপক উসমান গনি, আরমেনিটোলা স্কুলের শিক্ষক উর্দুভাষী মওলানা আব্দুর রহমান বেখুদ এবং সর্বেসর্বা চট্টগ্রামের মওলানা জুলফিকার আলী।
মন্ত্রী ফজলুর রহমানের সুপারিশে ও উদ্যোগে সরকার পুর্ব পাকিস্তানে আরবি হরফে বাংলা প্রচলন ও শিক্ষার বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহন করে। আরবি হরফে বাংলা শিক্ষার জন্য বয়স্ক শিক্ষা, পাঠ পুস্তক রচনা, লেখকদের উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি করতে থাকে। ১৯৪৯ ও ১৯৫০ সালের বয়স্ক শিক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত সকল অর্থ এই কাজে ব্যয় করা হয়। ১৯৫১ সালে পুর্ব বাংলা সরকার আরবি হরফে বাংলায় শিশু শিক্ষার প্রবর্তন করেন। এ ব্যাবস্থা ও পক্রিয়াকে বেগবান ও সুসংবদ্ধ কাঠামো দেবার জন্য ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘পুর্ব বাংলা ভাষা কমিটির উর্দু হরফ সাব কমিটি’। ১৯৫১ সালে মওলানা নিছার উদ্দিন ও আকরাম খা সরাসরি আরবি হরফে বাংলাকে সরাসরি সমর্থন দেয়। এ পক্রিয়ার সকল উদ্যোগ ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার পাশে দাঁড়ায় তৎকালীন প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবী শ্রেণী যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মোঃ ওয়াজেদ আলী, শাইখ শরফুদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা ইত্যাদি গনেরা। তবে এনামুল হক, ডঃ মোঃ শহিদুল্লাহ প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ এ প্রচেষ্ঠার বিরুধিতা করেন। তবে এনামুল হকের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। এ বিষয়ে পরে বলছি।
উর্দু ভাষার প্রতি পুর্ব বঙ্গ বাসীর অনীহা, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা হতে চরম প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ইত্যাদি পাক শাসকদের বিকল্প পথ অনুসরন করতে বাধ্য করে। তারা তখন আরবি হরফের কাঁধে চেপে উর্দুকে নিয়ে আসার প্রতি অধিক জোড় দেয়।
এ ষড়যন্ত্রের প্রথম প্রতিবাদকারী আব্দুল হক। তিনি ১৯৪৯ সালে দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় বলেন, “আরবি হরফ আর উর্দু ভাষা গ্রহনের পরও বাঙ্গালীরা, অবাঙ্গালী উর্দু ভাষীদের চেয়ে পশ্চাদপদ থাকবে, কেননা উর্দু তাদের মাতৃভাষা নয়। কখনোই তারা উর্দু ভাষীদের সমকক্ষ হতে পারবে না। অন্যদিকে ভাষা ও সাহিত্যের দিক থেকে পশ্চিম বাংলার বাঙ্গালীদের থেকেও পিছিয়ে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে তারা বাঙ্গালীও হতে পারবে না অবাঙ্গালীও হতে পারবে না”।
আরবি হরফে বাংলার পবর্তন প্রশ্নে সবচেয়ে যুক্তিপুর্ন ও পরিকল্পনা মাফিক কৌশল অবলম্বন করে লেখা হয় ‘হরফ সমস্যা’ নামের প্রবন্ধ। লেখক এখানে ‘দুরদর্শি’ ছদ্মনামে লিখতেন, ধারনা করা হয় তিনি ছিলেন লেখক এনামুল হক। তিনি এই প্রবন্ধে ভাষা ত্বাত্তিক যুক্তি, ধর্মিও আবেগ, রাষ্ট্রীয় সংহতি ইত্যাদির মিশেল ঘটিয়ে অত্যান্ত সুচারুভাবে আরবি হরফে বাংলার পক্ষাবলম্বন করেন। যুক্তি গুলোর মুদ্দাকথা এরকম __
১. হিন্দুয়ানী প্রভাব হতে মুসলিম ‘তাহজিব তমুদ্দুন’ রক্ষা।
২. আরবি হরফের সহজবোধ্যতা, বাংলা ভাষা সম্বৃদ্ধ হবার সুযোগ।
৩. পশ্চিম পাকিস্তানীদের বাংলা শেখার ক্ষেত্রে সহজ বোধ্যতা।
৪. বাংলা ভাষার মারাত্বক কিছু দুষে দুষ্ট, তা চিহ্নিত করে হরফ পরিবর্তনের যুক্তি।
৫. টাইপিং, কম্পোজিশনের সুবিধা।
৬. আরবিকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথ প্রসারিত হওয়া। __ ইত্যাদি

অর্থাৎ ব্যাপারটা হল আরবি হরফ আমদানির চেষ্টা অনেক পুরাতন প্রচেষ্টা। তবে পাক শাসকরা যখন উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করতে চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ হয় তখন ওই পাশ দিয়ে চলতে থাকা বিকল্প রাস্তাটিকে আকরে ধরে, মানে আরবি হরফের পিঠে চেপে উর্দু করনের জোরদার চেষ্টা করে। আসলে পাক উর্দু ভাষী শাসক শ্রেণীটির শাসন চিরস্থায়ী করতে হলে এর উর্দু করন অত্যাবশ্যক ছিল। তারা সহজেই এই উর্দু পশ্চিম পাকিস্থানে চাপিয়ে দিয়েছিল। তারা পুর্ব বাংলায় এক্ষেত্রে চূড়ান্ত রকম ব্যর্থ হয় যার কারন বাঙ্গালীদের নিজস্ব শক্তিশালী সংস্কৃতি।
অপরদিকে ভারতে কিন্তু হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেয়া বা তা ভাবারও সুযোগ ছিল না। ভারতে পাকিস্থানের মত মাত্র কয়েক জাতি নয় উপরন্ত অসংখ্য স্বাবলম্বী, আত্ব বিশ্বাসী জাতির সমাবেশ। এদের বেশির ভাগেরই কালচার খুব শক্তিশালী। তাই যে ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ দিয়ে বিশাল ভারত ইউনিয়ন গঠন করা হয়েছিল তাতে ‘হিন্দি ভাষা’ প্রশ্নে ফাটল ধরতই। তাই ভারতের হিন্দি ভাষী কেন্দ্রীয় শাসক সেটা করেছে ধীর্ঘ সময় নিয়ে। লক্ষ্য করলেই দেখবেন হিন্দি এখন ভারতের অঘোষিত ও সর্বজস্বিকৃত একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য সকল ভাষা শুধু নামে মাত্রই রাষ্ট্র ভাষা, যে ভাষা গুলো হিন্দির প্রবল আগ্রাসনে মরতে বসেছে।

যাই হোক, এভাবেই সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র চলছিল। ঐতিহ্য সচেতন বাঙ্গালী তার অস্ত্বিত্ত রক্ষার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় শেষমেশ। যার চূড়ান্ত পরিণতি ১৯৫২ এর ২১ শে ফেব্রুয়ারি। এই ২১ শে ফেব্রুয়ারির বিপ্লব বাঙ্গালীকে পুরুদমে পাল্টে দিয়েছিল তার জাতীয় চিন্তার জগত। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনকে সার্বজনিনতা দান করে। এতদিন যে সকল সাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ তাদের অবচেতন মনে বাস করত ২১ তাদের জেটিয়ে বিদায় করে এবং তার সচেতন মনে, ঘুমিয়ে থাকা জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটায় ।
যাই হোক এ প্রবন্ধে আমি বাঙালীর উপর সংস্কৃতি আগ্রাসনের সবচে বড় মাত্রা ভাষিক আগ্রাসন ও তার পরবর্তি দ্বিতীয় ধাপের বা বিকল্প পথের ‘হরফ ষড়যন্ত্র’ তথা ‘আরবি হরফের ভেতর দিয়ে উর্দু করন’ পক্রিয়ার কিছু দেখানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু শেষ কথা হল বাঙ্গালী সব ষড়যন্ত্র বীরত্বের সাথে রুখে দিল এবং তা চূড়ান্ত মুল্য রক্তের বিনিময়ে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা বহাল থাকল, কিন্তু আমরা কি আমাদের সংস্কৃতিক মুক্তি পেলাম? আমরা কি আমাদের নিজ্বস্ব সাহিত্য, সংস্কৃতি, স্বাতন্ত্রতা নিয়ে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি? আমরা কি সারা পৃথিবীকে জানান দিতে পেড়েছি, সারা পৃথিবীতে বাঙ্গালীদের একমাত্র জাতীয় রাষ্ট্রের নাম ‘বাংলাদেশ’?
এসব প্রশ্নের অনেক লোক ভুলানো উত্তর আছে। শেষ কথা হল, আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। অনেক অনেক দূর।

সোয়াদ আহমেদ

এই লেখাটির প্রেরনাঃ
১. বাঙ্গালী মুসলমানের মন; আহমদ ছফা
২. একুশ শতকের বাঙ্গালী; আহমদ শরীফ
৩. ভাষা আন্দোলনের দলিল; আবুল আহসান চৌধুরী
৪. পাক বাংলার কালচার; আবুল মনসুর আহমদ
৫. এবং অন্যান্য


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

তথ্যবহুল লেখা, সন্দেহ নেই... তবে নতুন কোন আলোচনার বিষয়ও নেই। সবই চর্বিত চর্বন। দৃষ্টিভঙ্গীটিও গতানুগতিক। লেখক হিসেবে আপনার পরিচয় আমি জানি না... তবে সেই বৃটিশ রাজের তৈরী করে দেয়া সাম্প্রদায়িক বিভক্তি থেকে আপনিও যে খুব একটা মুক্ত নন সেটা স্পষ্ট, তাতে অবশ্য দোষ দেয়া যায় না। আমরা পূর্ববঙ্গের বাঙ্গালী মুসলমান, আর ওরা পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী হিন্দু... আঞ্চলিক রেশারেশী তো শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য। এই বিষয়গুলোতে যারা লিখেন, তাদের কাউকেই এখনো খাঁটি বাঙ্গালী হয়ে লিখতে দেখলাম না। প্রত্যেকের কাছেই নিজের ধর্মটাই বড় হয়ে ওঠে কোন না কোন সময়... এপার ওপারে পার্থক্য নেই। তার মধ্যে মাইগ্রেটেড বাঙ্গালী হিন্দুদের অবস্থা আরো খারাপ। তারা ঘাটেরও হতে পারে নি, আর ঘর থেকে কবেই বিতারিত।

শুদ্ধ বাংলা কোনটা হবে সেটা আসলেই একটা বিতর্কের বিষয়। বাংলার রাজধানী গত আটশত বৎসরে কতোবার বদল হয়েছে সেটা ইতিহাসের খুবই চিত্তাকর্শক ব্যাপার মনে হয় আমার কাছে। গৌড়-ঢাকা-মুর্শিদাবাদ-কোলকাতা-ঢাকা। বৃটিশরা যখন হুগলীতীরের তিনখানা গ্রাম কিনে উপনিবেশ স্থাপন করে, তখন রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। রাজা বা নবাবের চেলা চামুন্ডারা সেখানেই থাকতো, তাই সেখানকার ভাষাটাই রাজভাষার মর্যাদা পাবে সেটা আর অবাক হবার ব্যাপার না। যদি এমন হতো যে মুর্শিদ কুলি খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করতেন মানে ঢাকা ছেড়ে চলে না যেতেন, তাহলে বৃটিশ বেনিয়ারা হয়তো রাজধানীর কাছাকাছি কোথাও(ধরি ফরিদপুরে) উপনিবেশ স্থাপন করে বসতো আর ঢাকার কথ্যভাষা হতো এখনকার শুদ্ধ বাংলা। কোলকাতা মুর্শিদাবাদের ভাষা হয়ে যেত স্বাভাবিক ভাবেই আঞ্চলিক।

ভাবছি বৃটিশরা এসে যদি দেখতো যে বাংলার রাজধানী চট্টগ্রামে, আর তারা নোয়াখালীতে তিনখানা গ্রাম নিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করতো, তাহলে আজকের শুদ্ধ বাংলার চেহারা কি হতো!!!

লেখক-সাহিত্যিকেরা কোলকাতার বাবুদের স্বীকৃতি না পেলে সাহিত্যিক হিসেবে পৈতা পেতেন না, খাঁটি কথা। কিন্তু এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসেও তো অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয় নি। এই আন্তর্জালীয় জগৎ এসে আমাদের প্রচারের খানিকটা সুবিধা করে দিয়েছে বটে, কিন্তু সাহিত্য-রাজপধানীর বিকেন্দ্রিকরন হয় নি এখনো। এই সচলেই পড়েছিলাম একজন লিখেছিলেন যে "আনিসুল হক ঢাকায় এসেছিলেন কবি হতে"। কারন তিনি তাঁর নিজের গ্রামের বাড়িতে বসে কবি বা সাহিত্যিক হতে পারতেন না, এখনকার কেউ ও পারবে না।
অথচ আব্দুল হাকিম সেই কয়েকশত বৎসর(সঠিক সময়টা ভুলে গিয়েছি) আগে চট্টগ্রামে বসেই লিখে গিয়েছেন, আর সেটা তাঁর আঞ্চলিক 'শুদ্ধ' চাটগাঁইয়া বাংলায়। ময়মনসিংহ গীতিকাও ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষাতেই লিখা ছিল, তাতে আমাদের কাছে পৌছুতে তাদের কোন সমস্যা হয় নি। কেবল সময়ের মানদন্ডে পুড়ে তার শুদ্ধতা প্রমান করতে হছে মাত্র। ভাষা কোনটা শুদ্ধ আর কোনটা অশুদ্ধ সেটা মনে হয় সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমাদের সেটার উন্নতিকল্পে কাজ করা উচিৎ।

আপনার লিখাটা যদি কয়েক পর্বে ভাগ করে প্রত্যেকটা আলাদা বিষয়কে নিয়ে আরো বড় করে লিখতেন, তাহলে ভাল হতো। কারন একটা সময় এসে খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। আপনার লিখাটার ওপর বিস্তারিত আলোচনা করবো বলে বসেছিলাম, কিন্তু খেই হারিয়ে এখানেই থেমে যেতে হলো।

--- থাবা বাবা!

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে সেই বৃটিশ রাজের তৈরী করে দেয়া সাম্প্রদায়িক বিভক্তি থেকে আপনিও যে খুব একটা মুক্ত নন সেটা স্পষ্ট, তাতে অবশ্য দোষ দেয়া যায় না।

↔ লেখাটি পরে আপনার ‘লেখক’ হিসেবে আপনার এই ধারনা হয়েছে; দুঃখজনক । খুব সম্ভবত লেখটির ‘দুর্বলতার’ জন্য আপনার এই ধারনা হয়েছে। যাই হোক ব্যাক্তিগত ভাবে আমি নিরেশ্বরবাদি। যা জানি সেটুকুন ‘মূল্যবোধ নিরেপেক্ষ’ থেকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। সেই নিম্ন বর্গিয় শ্রেণীটির দিক থেকে বলার ব্যাপারটাতেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। আমি অখণ্ড বাংলার স্বপ্ন দেখি।

যারা লিখেন, তাদের কাউকেই এখনো খাঁটি বাঙ্গালী হয়ে লিখতে দেখলাম না

↔ আমার দৃষ্টিতে অনেককে না হলেও খাটি বাঙ্গালী হয়ে এবং নির্লিপ্ত ও নিরেপেক্ষ হয়ে লিখেছেন এমন অনেকেই আছেন। এক্ষেত্রে আমি সবার আগে যার কথা বলব তিনি আহমদ ছফা।

প্রত্যেকের কাছেই নিজের ধর্মটাই বড় হয়ে ওঠে কোন না কোন সময়... এপার ওপারে পার্থক্য নেই।

↔ খাটি কথা বলেছেন। এটাই স্বাভাবিক । একজন ধার্মিকের কাছে দেশ, জাতি এইসব ধর্মের চেয়ে বড় হয়ে উঠে না। কিন্তু আপনি লেখকদের কথা বলেছেন, প্রগতিশীল লেখকরা বেশিরভাগই হন প্রচলিত ধর্মে অবিশ্বাসী । তবে তাদের নিজেদের একটা সম্পুর্ন ধর্ম থাকে। আমার সৌভাগ্য আমি আমার আশেপাশের বেশিরভাগ ছেলেপেলেকেই পেয়েছি যাদের কাছে এই ধর্মের চেয়ে বড় তার দেশ, ভাষা, জাতীয়তা ।

শুদ্ধ বাংলা কোনটা হবে সেটা আসলেই একটা বিতর্কের বিষয়।

↔ তর্কের বিষয়, কিন্তু তর্ক আবশ্যক নয় ভাবছি। ‘সময়’ ব্যাতিত কোন কিছুই নেই যা ‘পরম’ । যাকে ‘মান’ হিসেবে হিসেবে নেব তাই হবে ‘আদর্শ’, তাই হবে শুদ্ধ।

রাজা বা নবাবের চেলা চামুন্ডারা সেখানেই থাকতো, তাই সেখানকার ভাষাটাই রাজভাষার মর্যাদা পাবে সেটা আর অবাক হবার ব্যাপার না। যদি এমন হতো যে মুর্শিদ কুলি খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করতেন মানে ঢাকা ছেড়ে চলে না যেতেন, তাহলে বৃটিশ বেনিয়ারা হয়তো রাজধানীর কাছাকাছি কোথাও(ধরি ফরিদপুরে) উপনিবেশ স্থাপন করে বসতো আর ঢাকার কথ্যভাষা হতো এখনকার শুদ্ধ বাংলা।

↔ হ্যা, অবাক হবার কিছু নেই। এটাই স্বাভাবিক। আমিও লেখাতে ‘অবাক’ না হয়ে লেখার চেষ্টা করেছিলাম। আমি এই দেখাতে চেয়েছে অই ‘স্বাভাবিক’ প্রক্রিয়াটির ফলে পুর্বাঞ্চল বৈষম্যের স্বীকার হয়েছিল। এবং তাকে বলতে চেয়েছি ‘সাংস্কৃতিক বৈষম্যের ভিত্তি’ হিসেবে।

ভাবছি বৃটিশরা এসে যদি দেখতো যে বাংলার রাজধানী চট্টগ্রামে, আর তারা নোয়াখালীতে তিনখানা গ্রাম নিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করতো, তাহলে আজকের শুদ্ধ বাংলার চেহারা কি হতো!!!
↔ হাঁ , হাঁ __ ভাল বলেছেন । তাহলে মউদুদ আহমেদকে আর কষ্ট করে মিঠিয়ে মিঠিয়ে শুদ্ধ বাংলা বলতে হত না।

কিন্তু এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসেও তো অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয় নি। এই আন্তর্জালীয় জগৎ এসে আমাদের প্রচারের খানিকটা সুবিধা করে দিয়েছে বটে, কিন্তু সাহিত্য-রাজপধানীর বিকেন্দ্রিকরন হয় নি এখনো।

↔ সম্ভবত এই কথাটি বলার জন্যেই লিখতে বসেছিলাম। তবে মনে হল না ভাল কিছু লিখতে পেরেছি।

ভাষা কোনটা শুদ্ধ আর কোনটা অশুদ্ধ সেটা মনে হয় সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমাদের সেটার উন্নতিকল্পে কাজ করা উচিৎ।

↔ ভাল বলেছেন। তবে বিবর্তন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এখন মানুষের হয়েছে। এখন আর প্রবল ক্ষমতাধর প্রকৃতির উপর অথবা সুধির্ঘ সময়ের উপর সম্পুর্ন নির্ভর তাকে না করলেও চলে। তদ্রুপ সমাজ বিবর্তনের ক্ষেত্রেও বলব সমাজের বিভিন্ন চলক যেমন ‘ভাষার’ ক্ষেত্রেও সেকথা প্রযোজ্য।

আপনার লিখাটা যদি কয়েক পর্বে ভাগ করে প্রত্যেকটা আলাদা বিষয়কে নিয়ে আরো বড় করে লিখতেন, তাহলে ভাল হতো। কারন একটা সময় এসে খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। আপনার লিখাটার ওপর বিস্তারিত আলোচনা করবো বলে বসেছিলাম, কিন্তু খেই হারিয়ে এখানেই থেমে যেতে হলো।

↔ খেই হারানোর ব্যাপারটা আমার জন্যেই হয়েছে বলে মনে করছি। আমার লেখাগুলাতে আমি নিজেই খেই হারিয়ে ফেলি। শুভাকাঙ্ক্ষীরা বারবার এই কথাটি বলে।
যাই হোক লেখাটি পরে আপনার মুল্যবান মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ভাল থাকুন। যাত্রা অব্যাহত থাকুক।

সোয়াদ আহমেদ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পুরো লেখাটা পড়ে আমাদের ভাষা আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারী কীভাবে "বিপ্লব" হলো সেটা বুঝতে পারিনি। ১৯৫২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কেউ এটাকে "ফেব্রুয়ারী বিপ্লব" বলে দাবীও করেনি। কী জানি, ওটা "বিপ্লব" হতেও পারে। আমি কম লেখাপড়া জানা মানুষ, অত কিছু জানবো কী করে! "বদলে যাও, বদলে দাও" বলে এখন কত কিছুইতো পালটানো হচ্ছে; সেখানে ভাষা আন্দোলন নাহয় "ফেব্রুয়ারী বিপ্লব"ই হলো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কবে "মার্চ বিপ্লব" বা "ডিসেম্বর বিপ্লব" বা "দুনিয়া কাঁপানো নয় মাস" হয়ে যায় সেটাই চিন্তার বিষয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরো লেখাটা পড়ে আমাদের ভাষা আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারী কীভাবে "বিপ্লব" হলো সেটা বুঝতে পারিনি। ১৯৫২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কেউ এটাকে "ফেব্রুয়ারী বিপ্লব" বলে দাবীও করেনি। কী জানি, ওটা "বিপ্লব" হতেও পারে। আমি কম লেখাপড়া জানা মানুষ, অত কিছু জানবো কী করে! "বদলে যাও, বদলে দাও" বলে এখন কত কিছুইতো পালটানো হচ্ছে; সেখানে ভাষা আন্দোলন নাহয় "ফেব্রুয়ারী বিপ্লব"ই হলো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা কবে "মার্চ বিপ্লব" বা "ডিসেম্বর বিপ্লব" বা "দুনিয়া কাঁপানো নয় মাস" হয়ে যায় সেটাই চিন্তার বিষয়।

আসলেই চিন্তার বিষয়। গুরুত্বটা আগে বুঝতে পারি নি। তবে ‘বিপ্লব’ শব্দটা বড় ভুল হয়েছে এমন মনে হচ্ছে না। বলেছেন আপনি ‘আমি কম লেখাপড়া জানা মানুষ, অত কিছু জানবো কী করে!’। সত্যিই তাই হলে আমার জন্য সহজ হত। তাহলে শুধুই ‘জানতে চাওয়া’টাই হত। ‘তুচ্ছ’ জ্ঞান করাটা হত না।
লিখেছেন, ‘১৯৫২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কেউ এটাকে "ফেব্রুয়ারী বিপ্লব" বলে দাবীও করেনি’। খুব সম্ভবত এটা আক্ষরিকভাবে ‘বিপ্লব’ নয়, তাই হয়ত কেউ দাবি করেনি। তবে একজন দাবি করলেই ত তা আর ‘বিপ্লব’ হয়ে যায় না। তবে "বদলে যাও, বদলে দাও" এর ধারক বাহক ‘প্রথম আলু’, ‘সুশীল গুষ্টিরা’ বললেই যে তা ‘বিপ্লব’ হয়ে যেত তাতে আমি নিশ্চিত।
কোন শতস্ফুর্ত গন আন্দোলন বিস্ফোরণে রূপান্তরিত হয়ে কোন দেয়াল ভেঙ্গে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছালে তাকে ‘বিপ্লব’ বলা যেতে পারে। রুশ বিপ্লব, ফ্রেঞ্চ বিপ্লব যেমন সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য গুরুত্বপুর্ন ছিল তেমন ব্যাক্তি ‘আমার’ মনে হতেই পারে ফেরুয়ারি আন্দোলন বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে সাংস্কৃতিক মুক্তির ক্ষেত্রে ঠিক একটা সত্যকারের ‘বিপ্লব’। ব্লগের লেখকরা তার জানা শুনা ও বুঝার উপর দারিয়েই নিজের দৃষ্টিকে উপস্থাপন করে। তবে সৌভাগ্য বশত শব্দটা আমি ধার করেছি, আমার এই মুহুর্তে মনে নেই কার লেখাতে পড়েছিলাম(খুব সম্ভবত, মহসিন শস্ত্রপাণির কোন একটি লেখাতে)। তবে আপনাকে মনে করে তা জানাব।
আর যে 'মুক্তিযুদ্ধ' নিয়ে সংশয় করেছেন তাকে, দুই একজন অন্তত ‘বিপ্লব’ বলে জ্ঞান করেছেন। এদের মতে আহমদ ছফা অন্যতম। সলিমুল্লাহ খানের মতে ছফাই একমাত্র লেখক যিনি একাত্তরের যুদ্ধটিকে ‘বিপ্লব’ বলে বিবেচনা করতেন।
তবে যে ‘বদলে যাওয়ার’ ভয় করেছেন তা ত খানিকটা বদলেই গেছে, তবে পেছনের দিকে। ৭২ সালের সংবিধানে যেটা ছিল ‘মুক্তিসংগ্রাম’, জিয়ার হাতে তা হয়ে গেছে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’।
ভাল থাকুন ।

sowadahmed@gmail.com

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. "ফেব্রুয়ারী বিপ্লব" শব্দবন্ধটা আগে কেউ ব্যাবহার করেছেন বলে জানিনা। করলেও এখানে কিছু যায় আসেনা। এই লেখাটা আপনার, আর এখানে প্রথম বাক্যেই আপনি এই শব্দবন্ধটা ব্যবহার করেছেন। সুতরাং আমাদের ভাষা আন্দোলন কীভাবে "ফেব্রুয়ারী বিপ্লব" হয় সেটা ব্যাখ্যার দায়িত্ব আপনার উপরই বর্তায়। মন্তব্যের কলামে আপনি পাঠককে সে ব্যাখ্যা দেবেন কিনা সেটা আপনার বিষয়, তবে অনলাইন মিডিয়াতে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর সেখানেই দেয়াটা কনভেনশন।

২. আমি আপনাকে তুচ্ছজ্ঞান করিনি। সেই যোগ্যতা আমার নেই। আমি আসলেই কম পড়াশোনা করা মানুষ, আমার বোঝার ক্ষমতা আরো কম। তাই উপরে আপনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন তার খুব কমই বুঝেছি বলে মনে হচ্ছে। তবে আমাদের ভাষা আন্দোলন কীভাবে "ফেব্রুয়ারী বিপ্লব" হলো সেই প্রশ্নটাতে আমি দাঁড়িয়ে আছি। মন্তব্যে করা আপনার ব্যাখ্যাটি স্পষ্ট নয়।

৩. আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে "বিপ্লব" বলা যায় কিনা সেই প্রশ্ন আমি তুলিনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে আমি আসলে কী মনে করি সেটা নিয়ে সচলেই আমি পোস্ট দিয়েছি, আলোচনা করেছি। সচলে আমার ব্লগটি খুঁজলে সেটি পাবেন। অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনায় পোস্টটির লিঙ্ক দিচ্ছিনা।

৪. কর্পোরেট আর সুশীলরা ভিন্ন কিছু বললেই সেটা বাস্তবায়িত হয়ে যায় না, ইতিহাসও পালটায় না। তবে তারা যথেষ্ট পরিমাণে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে, কিছু মানুষকে বিপথগামী করতে পারে। আমার ভয়ের জায়গাটা সেখানে। ভিন্ন কনটেক্সট থেকে ইতিহাসের পাঠ থাকতেই পারে। তবে সেটা যদি সত্যের অপলাপ হয়, ভুল ব্যাখ্যা হয়, অতিরঞ্জন হয়, উদ্দেশ্যমূলক অবনমন হয়, কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে পাদপ্রদীপে ঠেলে দেয়া হয়, কারো ভূমিকাকে যদি খাটো করা হয় তাহলে সেই পাঠ আর ইতিহাস থাকেনা "মেহেরজান" সিনেমা হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

সুতরাং আমাদের ভাষা আন্দোলন কীভাবে "ফেব্রুয়ারী বিপ্লব" হয় সেটা ব্যাখ্যার দায়িত্ব আপনার উপরই বর্তায়। মন্তব্যের কলামে আপনি পাঠককে সে ব্যাখ্যা দেবেন কিনা সেটা আপনার বিষয়, তবে অনলাইন মিডিয়াতে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর সেখানেই দেয়াটা কনভেনশন।

তাত অবশ্যই। সেটা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলিনি। তবে আপনার মন্তব্যটা শুধুই জানতে চাওয়া বা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা মনে হয়েছিল না। যাহোক এটা সামান্য ভুল বুঝাবুঝি মাত্র।

তাই উপরে আপনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন তার খুব কমই বুঝেছি বলে মনে হচ্ছে।

এটা সম্পুর্নই লেখকের ব্যার্থতা।

সচলে আমার ব্লগটি খুঁজলে সেটি পাবেন। অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনায় পোস্টটির লিঙ্ক দিচ্ছিনা।

হ্যা, ওটা পড়ব ।

তবে সেটা যদি সত্যের অপলাপ হয়, ভুল ব্যাখ্যা হয়, অতিরঞ্জন হয়, উদ্দেশ্যমূলক অবনমন হয়, কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে পাদপ্রদীপে ঠেলে দেয়া হয়, কারো ভূমিকাকে যদি খাটো করা হয় তাহলে সেই পাঠ আর ইতিহাস থাকেনা "মেহেরজান" সিনেমা হয়।

যথার্থ।
যাই হোক যা বুঝলাম তা হল, আমরা আলাদা পথের কেউ নই।
ভাল থাকুন।
সোয়াদ আহমেদ।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

এ পক্রিয়ার সকল উদ্যোগ ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার পাশে দাঁড়ায় তৎকালীন প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবী শ্রেণী যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মোঃ ওয়াজেদ আলী, শাইখ শরফুদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা ইত্যাদি

একটা বাদ গেছে -তার নাম সৈয়দ আলী আহসান

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

ও হ্যা।
ধন্যবাদ মানিক ভাই ।
ভাল থাকুন।

সোয়াদ আহমেদ

হাসিব এর ছবি

দেশ ভাগের পর মাত্র ৫ বছরের মাথায় কেন এই গন বিস্ফোরণ, কোন চেতনায় তারা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল অন্যায়-অত্যাচার-শোষণ-আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তা কখনই নতুন প্রজন্মের সামনে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা হয় নাই। এ প্রজন্মের বেশির ভাগ অংশ শুধু এইটুকুনই জানে এটি একটি গুরুত্বপুর্ন দিন, যে দিন কিছু মানুষ বা ছাত্র পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিল। তাদের সম্মানে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হয় । আর গাওয়া হয় ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো___একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি।

একমত না। ৭১ নিয়ে অনেক ধরণের বিকৃতি হয়েছে। ৫২র ভাষা আন্দোলন নিয়ে এটি হয়নি। শিক্ষিত মানুষ মাত্রই মোটামুটি জানে ৫২তে কী হয়েছিলো।

আমরা ৪৭ এ কেন আলাদা রাষ্ট্র গঠন করলাম? আমাদের সামনে দ্বি-জাতি তত্ব উপস্থাপন করা হয়েছিল যা বেশীরভাগ মানুষই ধর্মিয় ও শোষণ মুক্তির প্রশ্নে স্বমর্থন করে।

বেশীরভাগ মানুস দ্বিজাতিতত্ত্ব সমর্থন করেছিলো - এই দাবির পক্ষে কোন ঐতিহাসিক রেফারেন্স দিতে পারবেন?

... বলতে চাচ্ছি তা হল, জাতিগত ভাবে যেকোন ভাষা গ্রহন করার জন্য একটি শক্ত আর্থ সামাজিক ভিত জাতির থাকতে হবে, নিম্ন শ্রেণীর এই শ্রমজীবী অশিক্ষিত মানুষগুলোর তা ছিল না।

[যদি বুঝতে না ভুল করে থাকি] তাহলে আপনি বলছেন শক্ত আর্থ সামাজিক ভিত থাকলে একটি জাতি যেকোন ভাষা গ্রহণ করতে পারে। এই দাবিকে জেনারালাইজ করা মুশকিল। তুরস্ক রোমান হরফ যখন গ্রহণ করে তখন তাদের আর্থ সামাজিক ভিত খুব একটা দুর্বল ছিলো না। আবার দুর্বল সাংস্কৃতিক ভিতের পূর্ব এশিয় কয়েকটি দেশের হরফও রোমান হরফে প্রবর্তিত হয়েছে। অতএব, ভিত শক্ত থাকলে অন্য ভাষা গেড়ে বসতে পারে এটা খুব কার্যকরি থিওরী না।

এই অঞ্চলে ইসলামের বিস্তরনে বিদেশী মুসলিম শাসকদের (পাঠান, মুঘলরা) কোন ভুমিকা ছিল না।

মধ্যযুগে রাষ্ট্রিয় হেফাজত ছাড়া কোন ধর্ম কি কোথাও গেড়ে বসতে পেরেছে? আপনি কি নিশ্চিত যে মুসলমান শাসকের বদলে অন্য ধর্মের শাসকেরা থাকলে এ অঞ্চলে মুসলমান ধর্ম এভাবে ছড়াতে পারতো? উত্তর ভারতের যেমন কাশ্মীরের উদাহরণ হয়তো দেবেন এই ক্ষেত্রে। কিন্তু কাশ্মীরি মুসলমানেরা বেশীরভাগই আরোও উত্তর থেকে আসা বলে জানি।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হাত ধরে বাংলা ভাষা তাঁর আধুনিক কাঠামো লাভ করে। এখানে উইলিয়াম কেরি সাহেবরা কৌশলে পুর্ব বাংলার কৃষকদের মুখের ভাষাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সাংস্কৃতি ভাষা হতে ‘শব্দ’ ধার করে এনে বাংলাকে ফলবতী করে তুলে। বাংলায় সংস্কৃতি শব্দের ঢল নামল আর দূরে দাঁড়িয়ে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদতে থাকল পুর্ব বাংলার কৃষকদের প্রাত্যহিক ব্যাবহার্য ‘বেওয়ারিশ’ শব্দ গুলো। বাকি কাজটুকুন করে ইংরেজদের হাত দিয়ে গড়া শিক্ষিত শ্রেণীর প্রতিভূ রাম মোহন, ইশ্বর চন্দ্র, বঙ্কিমরা ।

সম্পদের প্রাচুর্যের কথা চিন্তা করে কেরি, রাম মোহন, ইশ্বরচন্দ্রেরা আর কী করতে পারতো বলে মনে করেন? আপনি আরোও বলছেন -

এক্ষেত্রে সাহিত্য ধারা ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের যেকোন অঞ্চলের হতে পারত, ঢাকাইয়া, ময়মনশিংহি বা টাঙ্গাইল্যা যে কোন স্টাইলের হতে পারত।

সেকালে বাংলার অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিলো কলকাতা। আপনি যে ঢাকা ময়মনসিংহ টাঙ্গাইলকে "আমাদের" হিসেবে চিহ্নিত করলেন এটা তো দেশ ভাগের পরের ধারণা। কেরি বিদ্যাসাগরকে এজন্য দায়ি করা কেন?

বাংলাদেশ হবার পরে আমাদের ভাষার নিজ্বস্ব একটা ধরন আপনা আপনি দাঁড়িয়ে গেছে, তবে কাঙ্ক্ষিত সাহিত্য যেমন ওপারের সাথে তুলনা করলে আমরা এখনও যোজন যোজন পেছনে।

নতুন তথ্য!

আধুনিক বাংলা ভাষার বিকাশ হিন্দু বাঙ্গালীদের হাত দিয়েই হয়েছে।

হিন্দু বাঙ্গালী মুসলমান বাঙ্গালীর বিষয়টা কী? এই জাতীয় রচনার একটা কমন বৈশিষ্ট্য হলো বাঙ্গালী জনগোষ্ঠিকে ধর্মীয় পরিচয়ের ব্র্যাকেটে আবদ্ধ করা। সেই সূত্রে আসে হিন্দু শোষক জমিদার, কলকাতার বাবু কালচার, ওরা আমাদের বাদ্দিয়ে ভাষা ঠিক করে ফেললো ইত্যাদি ছিচকাদন। এই একই লেখকদের লেখায় অগ্রহণযোগ্যভাবে "হিন্দু" বাঙ্গালীদের সমাজ সংস্কারের যাবতীয় রেটরিক অনুপস্থিত থাকে। আরোও অনুপস্থিত থাকে ঈশ্বরচন্দ্রেরা তখন একটা স্ট্রাকচার না দাড় করালে আজকে আমরা ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়া থেকে কতটুকু আলাদা থাকতাম। কেরিকে গালমন্দ করার সময় তারা ভুলে যান বাংলা ভাষার প্রথম যুগের অভিধানগুলোও বেশীরভাগ ইংরেজদেরই তৈরী। কোন বাঙ্গালির শখ হয়নি সেগুলো করার।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার নিচের মন্তব্যটা আপনার কথার প্রেক্ষিতে লেখা। এখন দেখছি ভুল করে নতুন মন্তব্য হিসাবে দিয়ে ফেলেছি। -রু

অতিথি লেখক এর ছবি

একমত না। ৭১ নিয়ে অনেক ধরণের বিকৃতি হয়েছে। ৫২র ভাষা আন্দোলন নিয়ে এটি হয়নি। শিক্ষিত মানুষ মাত্রই মোটামুটি জানে ৫২তে কী হয়েছিলো।

↔ আমি আপনার সাথে মোটামোটি একমত তবে আপনি তা ঢালাওভাবে বলতে পারেন না।
দেখুন বদরুদ্দিন উমর তার ‘ভাষা আন্দলনের শিক্ষা ও বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা’ প্রবন্ধে বলেন, “...... এই পরিবর্তনের বাহ্যিক রূপ নিয়ে আবেগের ছড়াছড়ি হলেও ভাষা আন্দোলন স্বম্পর্কিত হাজারো আলোচনা, বক্তব্য ও গদগদ স্মৃতিচারন স্বত্তেও এর শিক্ষার বিষয় এবং এর শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বিশেষ দেখাই যায় না। ......”
তাছারা আমি ‘নতুন প্রজন্মের সামনে সঠিক রূপে উপস্থাপনের’ কথা বলেছি।
আবার সেদিন উমরেরই আরেকটা সাম্প্রতিক লেখা দেখলাম, গোলাম আযমকে নাকি ভাষা সৈনিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আসলে আমি স্কুলের ছেলেপেলেদের কাছ থেকে ভাষা আন্দোলন বিষয়ে বিশেষ সুদুত্তর পাইনি। গত ৬ মাস আমার একাডেমিক কাজে বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে ঘুরতে হয়েছে এটা তখনকার অভিজ্ঞতা। তাই এটাকে রাষ্ট্রীয় বড় ব্যার্থতা হিসেবেই ধরেছি। অবশ্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতে এই দায় অভিভাবকের।
আর ভাষা আন্দলনের ইতিহাস বিষয়ে ভাষা সৈনিক অলি আহাদ বলেন “ ......বদরুদ্দিন উমর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস লিখেছেন। তিনি যা জেনেছেন তাই লিখেছেন। তার জন্য ওটা সঠিক। কিন্তু আমার জন্যে তা পুরাপুরি সঠিক নয়। কারন আরও কথা আছে, কাহিনী আছে .........আসলে ভাষা আন্দলনের সঠিক ও পুর্নাংগ ইতিহাস লেখার জন্য যে রিসার্স হওয়া দরকার ছিল তা হয় ন”। (সাক্ষাৎকারে, আমার দেশের সাথে)
তবে বদরুদ্দিন উমরের উপর আমরা যথেষ্ঠই আস্থাশীল।
আবার মহসিন শাস্রপানির মতে, সংগ্রামের স্মৃতি বহনকারী ‘একুশে ফেফ্রুয়ারি’ দিবসটি শহরবাসী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা বড় অংশের একটা উৎসবের দিবসে পরিনত হয়েছে।
যাই হোক ২১ নিয়ে বিতর্ক তুলনামূলক ভাবে কম, আপনার সাথে একমত। আমি ‘চেতনা জাগ্রত’ করনের দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষ সঠিকভাবে পালন করেনি তাই বলেছি।

বেশীরভাগ মানুস দ্বিজাতিতত্ত্ব সমর্থন করেছিলো - এই দাবির পক্ষে কোন ঐতিহাসিক রেফারেন্স দিতে পারবেন?

↔ এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। দ্বিজাতি তত্ব বেশীরভাগ মানুষই স্বমর্থন করবে। কেন করবে লেখার বেশীরভাগ অংশজুড়ে সেই কারণই নিজের মত করে বলার চেষ্টা করেছিলাম। যে প্রত্যাশা নিয়ে স্বমর্থন করেছে সে আশায় গুরে বালির পথ ধরে যখন দেয়ালে পিঠ তখনই ৫২, ৬৯ অতঃপর ৭১ । কিন্তু আপনি কেন যে এই প্রশ্ন করেছেন তা বুঝলাম না, মানে আমি বলছি যা লেখা তা ত আপনার জানা থাকারই কথা। আমি স্পেসিফিক ভাবে এই মুহুর্তে কোন পরিসংখ্যান দেখাতে পারছি না। খুব সম্ভব এরকম পরিসংখ্যান নেইও। তবে কিছু উদাহরন দেই।
নতুন বৈষম্যহীন দেশটির হাতছানি এমনই ছিল যে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীটির মধ্যে ‘জয় হিন্দ’ এর মত একটা স্লোগান চলে এসেছিল “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান”।
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকি তার এক প্রবন্ধে এভাবে লিখেছেন “...... ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তানের’ উত্তেজনায় কিছুদিন কেটেছে। পাকিস্তান হাসিল হলে পর। কিছু দিন যেতে না যেতেই পাকিস্তানকেই আমার দেশ বলেই জেনেছি, কিন্তু পুর্ব বাংলা যে দেশের মধ্যেই উপনিবেশ হয়ে গেল এটা মানতে পারছি না ......”
বদরুদ্দিন উমর তার পুর্বাল্লেখিত প্রবন্ধেই বলেন, “...... শুধু কৃষকদের ক্ষেত্রেই নয়, মধ্য শ্রেণীর মধ্যেও এ সাম্প্রদায়িক দন্দ প্রবল ছিল। ......” তাই দ্বিজাতি তত্ত বেশীরভাগের দ্বারাই স্বমর্থিত হবে এটাই স্বাভাবিক।
আরেকটি রেফারেন্স দিচ্ছি এটাকে আমি আংশিক ঐতিহাসিক বলব। এখানে দেখা যায় বুঝে না বুঝে দ্বি জাতি তত্তকে স্বমর্থন দিচ্ছে আমজনতা। ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন তার স্মৃতিচারণে, “......সে সময় পাকিস্তান আন্দোলন চলছে। ভারত বর্ষ ভেঙে ভাষার ভিত্তিতে দু অঞ্চলে দুটি আলাদা রাষ্ট্র হবে এটাই কথা ছিল। ...... ঢাকায় থেকে দুটি বছর লক্ষ করেছি পাকিস্তান আন্দোলনের উত্তেজনা। সে সময় মুসলিম লীগ নির্বাচনী প্রচারণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে যেত। বক্তৃতা হত ইংরেজিতে। নির্বাচনী প্রচারণায় আমিও এক দলের শরীক হই। দু দফায় সিরাজগঞ্জ ও টঙ্গীতে যাই। দেখি বক্তৃতা হচ্ছে, হিন্দু মুসলমান আলাদা___হিন্দুরা জমিদার___মুসলমানরা প্রজা___মুসলমানদের আলাদা রাষ্ট্র পাকিস্তান হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। জনসভায় যে মানুষেরা উপস্থিত তারা নিরক্ষর ও নেংটি পরা। অথচ বক্তৃতা হচ্ছে ইংরেজিতে। পাকিস্তান, কায়দে আযম ইত্যাদি পরিচিত শব্দ এলেই তাদের তুমুল হাততালি। ......”
আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম যেহেতু পাকিস্তানই সকল বৈষম্যের সমাধান করছে তাই স্বাভাবিকভাবেই দ্বি জাতি তত্ত মুসলমান মাত্রই সমর্থন করবে এটাই স্বাভাবিক। আর প্রগতিশীলদের সংখ্যা যে নগন্য ছিল তা আর বলার অপেক্ষাও রাখে না।

[যদি বুঝতে না ভুল করে থাকি] তাহলে আপনি বলছেন শক্ত আর্থ সামাজিক ভিত থাকলে একটি জাতি যেকোন ভাষা গ্রহণ করতে পারে। এই দাবিকে জেনারালাইজ করা মুশকিল। তুরস্ক রোমান হরফ যখন গ্রহণ করে তখন তাদের আর্থ সামাজিক ভিত খুব একটা দুর্বল ছিলো না। আবার দুর্বল সাংস্কৃতিক ভিতের পূর্ব এশিয় কয়েকটি দেশের হরফও রোমান হরফে প্রবর্তিত হয়েছে। অতএব, ভিত শক্ত থাকলে অন্য ভাষা গেড়ে বসতে পারে এটা খুব কার্যকরি থিওরী না।

↔ এটা স্বাভাবিক হিসাব, শ্রমজীবী, অশিক্ষিত শ্রেণী কখনই আরেকটি ভাষা আয়ত্ত করতে পারবে না। যে জাতীর খাদ্যের যোগান করতে দিন যায় সে জাতীর আরেকটি ভাষা আয়ত্ব করতে যাওয়া স্বপ্নেরও অতীত। কিন্তু সিঙ্গাপুর বাসী তাদের তাদের আর্থ সামাজিক (সম্পদশালী ও শিক্ষিত) শক্ত অবস্থা সাহায্যে সহজেই ইংরেজিকে তাদের রাষ্ট্র ভাষা করে নিল। আমি ইসলামের ওই সময়টার কথা বলেছি যখন আরবি ও ইসলাম প্রচার হচ্ছে। তাছাড়া তুরস্কের মত ঘটনাত এখানে ঘটতেই যাচ্ছিল। মানে আরবি অক্ষর দিয়ে বাংলাকে সরানোই হতে যাচ্ছিল। আর সেটা হচ্ছিল আনুষ্ঠানিক শিক্ষার হাত ধরে। আর তার অর্থ এই হচ্ছিল না যে ইতিমধ্যে আরবি ভাষী হয়ে উঠতাম। যে শিক্ষিত শ্রেণিটা পেতাম তা থাকত আরবি হরফে শিক্ষিত শ্রেণী। এই যা। জাতিগত ভাবে তা হতে গেলে আরবি শব্দ সমূহকে বছরের পর বছর ধরে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাংলা শব্দ সমুহকে আরবি শব্দ দিয়ে রিপ্লেস করতে হত। আর এটা দ্রুত হতে পারত যদি বাঙ্গালী অন্তত পক্ষে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হত, যেমন দৃঢ় আর্থ সামাজিক অবস্থার আর্য ব্রাহ্মণরা মুঘলদের দরবারে ফার্শি শিখেই চাকুরি বাকুরি করত।
বিষয়টা অত জটিল ভাবে না দেখলেও চলে।

মধ্যযুগে রাষ্ট্রিয় হেফাজত ছাড়া কোন ধর্ম কি কোথাও গেড়ে বসতে পেরেছে? আপনি কি নিশ্চিত যে মুসলমান শাসকের বদলে অন্য ধর্মের শাসকেরা থাকলে এ অঞ্চলে মুসলমান ধর্ম এভাবে ছড়াতে পারতো? উত্তর ভারতের যেমন কাশ্মীরের উদাহরণ হয়তো দেবেন এই ক্ষেত্রে। কিন্তু কাশ্মীরি মুসলমানেরা বেশীরভাগই আরোও উত্তর থেকে আসা বলে জানি।

↔ হ্যা, শেষ লাইনটা দিয়ে এমনিতেই এই প্রসঙ্গটা শুরু করতাম, হ্যা তারা এবং খোদ পাকিস্তানের থেকে আমাদের পুর্ববাংলায় ইসলামের প্রসারের পক্রিয়া সম্পুর্ন আলাদা। যাই হোক যা বলতে চাই তা আপনার জানা ব্যাপার। শুধু এটা বলব আপনার কথা ঠিক, মুসলমান শাসক না থাকলে ইসলাম এতটা ছড়াতে পারত না। কিন্তু তাদের কাছে ইসলাম প্রচার এতটা গুরুত্ব পেত না। তারা এদেশের চাষাদের কথাও ভাবত না। তারা কর পেলেই খুশি থাকত। আর মুঘলরা এতটা ধর্মভেধ করত না (আকবর নাগাদ)। তাদের দরবারের প্রায় সকল কর্মচারি থাকত ব্রাহ্মণ। তারা ধর্ম প্রচারে মন দিয়েছিলনা বলেই তাদের ৬০০ বছরের শাসনে ভারতে ইসলামের বিস্তার নেই বললেই চলে। পশ্চিম অংশে মুসলমানদের আগমন বাইরে থেকে হয়। আর পুর্বাংশে হয় আরব বনিক, দরবেশদের দ্বারা। বাংলার দরবারের কর্মচারিরা ছিল বিদেশি। দরবারে বাংলার ঠাই ছিল না, অফিসিয়াল ভাষা ফার্শি ছিল। এ অঞ্চলের মুসলমানরা তাদের কাছে ছিল আতরাফ আর তারা আশারফ। তারা প্রচার করলে ইসলাম এতটা বিকৃত বা পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় আসার কথা ছিল না। মানে বলতে চাচ্ছিলাম, সুরম্য মসজিদ বানালেও তারা ইসলাম প্রচারে নিবেদিত ছিল তা না। তবে তাদের শাসন ইসলামের বিস্তারে অনুকুল অবস্থা তৈরি করে তাতে আপনার সাথে একমত।

সেকালে বাংলার অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিলো কলকাতা। আপনি যে ঢাকা ময়মনসিংহ টাঙ্গাইলকে "আমাদের" হিসেবে চিহ্নিত করলেন এটা তো দেশ ভাগের পরের ধারণা। কেরি বিদ্যাসাগরকে এজন্য দায়ি করা কেন?

↔ এই অংশটা আপনি ভুল অর্থ করেছেন। খুব সম্ভবত ভালভাবে সব লাইন পরেন নি। আমি বলেছি পাকিস্তান সৃষ্টির পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল আমাদের নিজেদের ধারা তৈরি হবে বা নিজেদের মান বাংলা তৈরি হবে । এই অংশটা আপনি পুরাই ভুল বুঝেছেন। আর বিদ্যাসাগর-বঙ্কিম কাওকেই এ লেখায় দুষা হয় নি। আমি বৃটিশদের হাত ধরে পুঁজির বিকাশের স্বাভাবিক ধারায় ভাষার বিকাশ ও এ এঞ্চলের পিছিয়ে পরা আর বৈষম্যের শিকারের ব্যাপারটিই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এটাই উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ পিরিয়ড হতে পাক কাল নাগাদ এরা সাংস্কৃতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। এই সাংস্কৃতিক বৈষম্যের বিপরীতে নিজেকে দাড় করায় ৫২ এর ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে।

হিন্দু বাঙ্গালী মুসলমান বাঙ্গালীর বিষয়টা কী? এই জাতীয় রচনার একটা কমন বৈশিষ্ট্য হলো বাঙ্গালী জনগোষ্ঠিকে ধর্মীয় পরিচয়ের ব্র্যাকেটে আবদ্ধ করা। সেই সূত্রে আসে হিন্দু শোষক জমিদার, কলকাতার বাবু কালচার, ওরা আমাদের বাদ্দিয়ে ভাষা ঠিক করে ফেললো ইত্যাদি ছিচকাদন। এই একই লেখকদের লেখায় অগ্রহণযোগ্যভাবে "হিন্দু" বাঙ্গালীদের সমাজ সংস্কারের যাবতীয় রেটরিক অনুপস্থিত থাকে। আরোও অনুপস্থিত থাকে ঈশ্বরচন্দ্রেরা তখন একটা স্ট্রাকচার না দাড় করালে আজকে আমরা ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়া থেকে কতটুকু আলাদা থাকতাম। কেরিকে গালমন্দ করার সময় তারা ভুলে যান বাংলা ভাষার প্রথম যুগের অভিধানগুলোও বেশীরভাগ ইংরেজদেরই তৈরী। কোন বাঙ্গালির শখ হয়নি সেগুলো করার।

↔ আপনার এই কথাগুলোর বেশিরভাগই খাপছাড়া লাগছে। ধর্মের আশ্রয় বা ধর্মিয় ব্যাক্ষা ছাড়া এই অঞ্চলের শোষণ সাশনের ব্যাক্ষা আপনি আমারে দিতে পারবেন ? ভারত বর্ষের ইতিহাস শুরুই হয়েছে আর্যদের আগমনের মধ্য দিয়ে, বৈদিক ধর্মের হাত ধরে___ ম্যাক্স ওয়েবার আর্যদের ব্যাপারে বলেছিলেন “ভারতের আর্যরা এক অদ্ভুত জাত, তারা ভারতে ঢুকে পুরা ভারতের আদিবাসীদের বৈদিক ধর্মে আটকিয়ে দাস করে ফেলল। (তারা ছাড়া যত অনার্য সকলি নিম্ন জাতের এবং সেবা করার জন্য জন্ম) আর মুঘলরা ক্ষমতা দখলের পর নিজেরা তাদের প্রয়জনে দাস হতেও দ্বিধা করেনি”
আর কিছু বলার নেই, হুমায়ূন আজাদের একটা ডায়ালগ মনে পড়ছে, এইরকম মনে হয় “বাঙালীরা আগে ছিল মুসলমান, পরে মুসলমান বাঙ্গালী সবিশেষে বাঙ্গালী” (উক্তিটা ঠিক এরকম নয়, মনে পড়ছে না।)
ভাল থাকুন, যাত্রা অব্যাহত থাকুক।

sowadahmed@gmail.com

অতিথি লেখক এর ছবি

৭১ নিয়ে অনেক ধরণের বিকৃতি হয়েছে। ৫২র ভাষা আন্দোলন নিয়ে এটি হয়নি। শিক্ষিত মানুষ মাত্রই মোটামুটি জানে ৫২তে কী হয়েছিলো।

পুরো লেখাটা পড়িনি, তাই লেখার বা আপনার মন্তব্যের সারবস্তু নিয়ে কোন মন্তব্য করছি না। তারপরেও উপরের কথাটি নিয়ে না বলে পারলাম না। সব লেখাপড়া জানা বাংলাদেশি কিন্তু জানেনা। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া অনেকেই জানেনা। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজ সকালে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম (স্কলাস্টিকা থেকে ও-লেভেল করেছে), কিছুক্ষণ গাইগুই করলো শুধু। ভাষা আন্দোলন বলে একটা কথা প্রচলিত আছে সে জানে, কি জিনিষ বা কোন তারিখ তা বলতে পারল না (প্রথমে আমাকে জিজ্ঞেস করলো ৭১-এ হয়েছিল কিনা, তারপর আন্দাজ করলো ৪৭-এ কিছু একটা হয়েছিল)। একটা কথা ঠিক যে দেশে থাকলে এই ছেলে হয়ত এতোটা বিস্মৃত হতো না। কিন্তু তবুও বলি ভাষা আন্দোলনের চেতনা ভিতরে থাকলে ১০ কী ১০০ বছরেও মানুষ ভুলবে না।
-রু

অতিথি লেখক এর ছবি

উনার লেখার প্রেক্ষিতেই উত্তর দিয়েছি উনার মন্তব্য তবে এখানেও কিছু অংশ কপি করে দিলাম ।
হ্যা, ৫২ নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি কম হয়েছে। এজন্য বদরুদ্দিন উমর সহ যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দলিল সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
তবে হাসিব ভায়ের সাথে আপনার মত এই জায়গাটিতে কিছুটা দ্বিমত।

দেখুন বদরুদ্দিন উমর তার ‘ভাষা আন্দলনের শিক্ষা ও বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা’ প্রবন্ধে বলেন, “...... এই পরিবর্তনের বাহ্যিক রূপ নিয়ে আবেগের ছড়াছড়ি হলেও ভাষা আন্দোলন স্বম্পর্কিত হাজারো আলোচনা, বক্তব্য ও গদগদ স্মৃতিচারন স্বত্তেও এর শিক্ষার বিষয় এবং এর শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বিশেষ দেখাই যায় না। ......”
তাছারা আমি ‘নতুন প্রজন্মের সামনে সঠিক রূপে উপস্থাপনের’ কথা বলেছি।
আবার সেদিন উমরেরই আরেকটা সাম্প্রতিক লেখা দেখলাম, গোলাম আযমকে নাকি ভাষা সৈনিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আসলে আমি স্কুলের ছেলেপেলেদের কাছ থেকে ভাষা আন্দোলন বিষয়ে বিশেষ সুদুত্তর পাইনি। গত ৬ মাস আমার একাডেমিক কাজে বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে ঘুরতে হয়েছে এটা তখনকার অভিজ্ঞতা। তাই এটাকে রাষ্ট্রীয় বড় ব্যার্থতা হিসেবেই ধরেছি। অবশ্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতে এই দায় অভিভাবকের।
আর ভাষা আন্দলনের ইতিহাস বিষয়ে ভাষা সৈনিক অলি আহাদ বলেন “ ......বদরুদ্দিন উমর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস লিখেছেন। তিনি যা জেনেছেন তাই লিখেছেন। তার জন্য ওটা সঠিক। কিন্তু আমার জন্যে তা পুরাপুরি সঠিক নয়। কারন আরও কথা আছে, কাহিনী আছে .........আসলে ভাষা আন্দলনের সঠিক ও পুর্নাংগ ইতিহাস লেখার জন্য যে রিসার্স হওয়া দরকার ছিল তা হয় ন”। (সাক্ষাৎকারে, আমার দেশের সাথে)
তবে বদরুদ্দিন উমরের উপর আমরা যথেষ্ঠই আস্থাশীল।
আবার মহসিন শাস্রপানির মতে, সংগ্রামের স্মৃতি বহনকারী ‘একুশে ফেফ্রুয়ারি’ দিবসটি শহরবাসী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা বড় অংশের একটা উৎসবের দিবসে পরিনত হয়েছে।
যাই হোক ২১ নিয়ে বিতর্ক তুলনামূলক ভাবে কম, আপনার সাথে একমত। আমি ‘চেতনা জাগ্রত’ করনের দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষ সঠিকভাবে পালন করেনি তাই বলেছি।

সোয়াদ আহমেদ।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

লেখা মাঝে মাঝে বেশ গোলমেলে লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা মাঝে মাঝে বেশ গোলমেলে লাগলো

গোলমালে অংশগুলো কূট করলে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারতাম।
ভাল থাকুন।

সোয়াদ আহমেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা। বিষয়গুলি আগে জানা থাকলেও ভালো লাগলো, তবে আরেকটু গোছালো এবং আনবায়াসড হলে আরো ভালো হতো।

অনেক রাত এখন, তাই তাড়াতাড়ি দু'য়েকটা কমেন্ট করে বিদায় নেই।

১. ইদ্দিশ ভাষাতাত্ত্বিক ম্যাক্স ওয়েনরাইখের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে - "A language is a dialect with an army and navy"। ভাষা বলতে এখানে বোধহয় ডায়ালেক্টের বিপরীতে মান ভাষা সম্পর্কেই বলা হয়েছে। মোদ্দা কথা হলো, সব তথাকথিত মান-ভাষাই আসলে একটা ডায়ালেক্ট মাত্র -- সেই ডায়ালেক্ট যেটায় সমাজের ঐ ভাষাভাষী এলিট শ্রেণী (ক্ষমতাশালী বা তাদের নিকটবর্তী শ্রেণী) কথা বলে। ইতিহাসের গতিধারায় সাধারণত এই মান-ভাষাত্ব বা প্রমিতকরন বোধহয় রাজনৈতিক কারনেই হয়ে থাকে, ভাষাতাত্ত্বিক বা সাহিত্যিক কারনের চেয়ে। এটা আসলে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রায় ইতিহাসের নিয়ম বলা চলে হয়তো। এটা কাঙ্খিত হোক বা না হোক, এনিয়ে গাল ফোলানোর কিছু নেই। তবে আমাদের, অর্থাৎ বাংলাদেশিদের, বেলায় এখানে যে টুইস্টটা যোগ হলো - তা হচ্ছে, যে এলিট শ্রেণী উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলার প্রমিত রূপ নির্ধারন করেছেন তাঁরা আজ আর আমাদের দেশের এলিট শ্রেণি নন -- এমনকি আমাদের মধ্যে ঐ এলিট শ্রেণীর সরাসরি শিষ্য-ভাবশিষ্য-অনুসারী ছিলেন যারা তারাও আস্তে আস্তে বিদায়ের পথে বলেই মনে হচ্ছে। এখন যারা এলিট শ্রেণীভুক্ত হচ্ছেন, তাদের সাথে ঐ পূর্বতন জেনারেশনের বোধহয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এ্যাস্পিরেশনে একটা বড়সড় ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। এই জন্যই মনে হয় পূর্ব-বাংলা তথা বাংলাদেশের জন্য একটা ভিন্ন ভ্যারাইটির মান-ভাষা তৈরির দাবীটা এতটা পালে হাওয়া পাচ্ছে। এর ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ।

২. কি হয়েছে বা হয়নি বা কি হওয়া উচিত বা অনুচিত, সেসব নিয়ে এধরণের বিষয়ে আমার মনে হয় রাগারাগি-মানঅভিমান করে কোনই লাভ নেই। এটা আসলে করে দেখানোর বিষয়। কেরী, রামরাম বসু, রামমোহন রায়, ইশ্বরচন্দ্র, মাইকেল থেকে শুরু করে বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ বা প্রমথ চৌধুরী - সবাই যুগান্তকারী কাজ করে দেখিয়েছেন। তাঁরা যা করেছেন - তা করে দেখাতে পেরেছেন এবং তা তৎকালীণ বৃহত্তর সমাজকে সদর্থকভাবে অনুবর্তী করানোর মত বিরাট মাপের ছিল বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে, বাস্তবায়িত হয়েছে। সম্ভব হয়েছে তাঁদের সেই বিশাল মাপের প্রতিভা ছিল বলেই। এজন্যেই তাঁদের এই সময়টাকে 'বেঙ্গল রেনেসাঁ" বলা হয়ে থাকে। যারা বাংলাদেশে বাংলার একটা নতুন রূপ প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাদেরও কিন্তু তাদের প্রস্তাবিত বাংলায় এইরকম অজস্র যুগান্তকারী কাজ করে দেখাতে হবে আগে। এবং সেটা যুগান্তকারী হতে হবে ২১শতকের প্রেক্ষাপটে ও মাপে, অষ্টাদশ শতকের প্রেক্ষাপটে বা মাপে নয়। এছাড়াও, শুধু শিল্প-সাহিত্যে নয় - জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও - যেমন বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রনীতি, প্রযুক্তি, চলচ্চিত্র, চর্চিত রাজনীতি, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার ও আন্দোলন, এধরনের সব বিষয়েই ঐ প্রস্তাবিত বাংলায় সর্বোচ্চ মানের সৃষ্টিকর্ম বা অর্জন থাকতে হবে। সামগ্রিক ভাবে আমাদের জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সম্পদের যুগান্তকারী বা বৈপ্লবিক উন্নতি ঘটাতে হবে - যা ১৯ শতকের ওনারা ঘটিয়েছিলেন। উনবিংশ শতাব্দীর (২০ শতকের শুরুর দিকটাও কি ধরবো?) "বেঙ্গল রেনেসাঁ" কেবল কবি, ঔপন্যাসিক, অভিধানকার আর ব্যকরনবিদের ঘাড়ে চড়ে হয়নি। ঐ সময় অন্যান্য ক্ষেত্রেও (ভাষিক, সাহিত্যিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এমনকি বৈজ্ঞানিক) অনেক ক্ষণজন্মা প্রতিভার জন্ম হয়েছিল। সবাইকে নিয়েই মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে। সোজা কথায়, ভাষা কোন বিচ্ছিন্ন ও স্বয়ম্ভূ বিষয় বলে আমার মনে হয় না - আলাদাভাবে যাতে ইচ্ছা করলেই উন্নতি বা নতুন গতিধারা আরোপ সম্ভব।

তো, আমার প্রশ্ন হলো, এসব কে করবে এখানে ? কিছু অতি-নিম্নমানের, চ্যাংড়া, অর্বাচীন জোকার টেলি-নাট্যকার বা আজিজে গাঞ্জা-ফোঁকার দল ? তারা কি আমাদের বড়জোর একটা ভাঙাচোরা, হাস্যকর "পিজিন" ভাষার চেয়ে বেশি কিছু দিতে পারবে ? আমার তাই মনে হয়, যারা "বাংলাদেশি" ভাষা চান তাদের আগে কিছু করে দেখানো উচিত। ২১ শতকের মাপে একটা ইতিবাচক, সদর্থক, সৃষ্টিশীল ও যুগান্তকারী "বাংলাদেশ রেনেসাঁ"-র জোয়ার সৃষ্টি করুন আগে তারা। ফুলে-ফলে ভরিয়ে দিন আমাদের সংস্কৃতির বাগান। তারপরে তাদের কাঁদুনি শুনতে ভালো লাগবে।

নেহাতই নিজের সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধি থেকে মন্তব্য করলাম। মন্তব্যগুলি কোন ব্যক্তিবিশেষকে লক্ষ্য করে নয়। কোন ভুলভাল হয়ে থাকলে আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আবারও বলি, লেখাটা ভালো লেগেছে।

মনমাঝি

অতিথি লেখক এর ছবি

একমত ।

তো, আমার প্রশ্ন হলো, এসব কে করবে এখানে ? কিছু অতি-নিম্নমানের, চ্যাংড়া, অর্বাচীন জোকার টেলি-নাট্যকার বা আজিজে গাঞ্জা-ফোঁকার দল ? তারা কি আমাদের বড়জোর একটা ভাঙাচোরা, হাস্যকর "পিজিন" ভাষার চেয়ে বেশি কিছু দিতে পারবে ?

আহ, কি বলেছেন ভাই। হাজার কথার এক কথা ।
ভাল থাকুন, যাত্রা অব্যাহত থাকুক।

সোয়াদ আহমেদ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ডটুর কপালে খারাবি আছে। মার্কেটে কম্পিটিশান বাইড়া গেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম..... এটাতো জানতাম না !

মনমাঝি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এ প্রজন্মের বেশির ভাগ অংশ শুধু এইটুকুনই জানে এটি একটি গুরুত্বপুর্ন দিন, যে দিন কিছু মানুষ বা ছাত্র পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিল।

ভাই,
শ্রদ্ধা রেখেই বলি, নতুন প্রজন্মের সিংহভাগ সম্পর্কে এই ধারণাটি বোধকরি একটি ঝেড়ো মন্তব্য (sweeping statement)। বিগত প্রজন্মের একজন মানুষ হিসেবে যখন নতুন প্রজন্মকে আমার বিপরীতে মাপি, তখন তাঁদের প্রজ্ঞার ব্যাপ্তি, নিরাবেগ সচেতনতা ও সময়ের স্ত্রোত মাপার দক্ষতা আমায় অভিভূত করে। আমার দৃষ্টিতে এঁদের সবচেয়ে বড় গুণ ও সাহস এই যে, এঁরা বাস্তবতার নিরিখে অতীত ও বর্তমানের ধারাকে ভ্রুত বিশ্লেষণ করে সাহসী আগামী রচনার নির্মোহ বিবেচনা টানতে পারে। এঁদের অধিকাংশই অনেক পড়াশোনা করেন এবং সকল মতামতের ঊর্ধ্বে উঠে নিজস্ব বাস্তবসম্মত মতামত রচনায় ব্রতী হন।

পুর্ব বাংলার মানুষের কাছে এ নতুন রাষ্ট্রটি ছিল স্বপ্নের হাতছানি। তারা ভেবেছিল ধর্মভিত্তিক এ নতুন রাষ্ট্রটিতে আর খাবারের চিন্তা করতে হবে না অথবা বছরের পর বছর ধরে তারা যে শোষিত হয়েছে, বঞ্চিত হয়েছে তার চিরবসান ঘটবে।

সত্যি কি তাই। তাহলে তো বাঙালির সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্যের পরিচয় নতুন করে অধ্যয়নের দাবী রাখে। কথিত নতুন রাষ্ট্র (পাকিস্তান) গঠনের আন্দোলনে সমাজের কোন শ্রেণীর লোকেদের অংশগ্রহণ ছিল আর কারাই বা ছিল তার ফল ভোগী সেটি কি বিবেচনায় নেয়া দরকারী নয়? ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের স্ফটিক গোলক কেনই বা চূর্ণ হলো?

যাহোক, আলোচনা চলুক আরো। আলোচনার মধ্যদিয়েই তো সত্যানুসন্ধান!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।