আজ ০২ মার্চ...
ভারতীয় উপ-মহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী মহিলা নেত্রী...
"ভারত-এর নাইটিংগেল" বলে পরিচিত...
সরোজিনী নাইডু...
-এর মৃত্যু বার্ষিকী...
তিনি এই বাংলার-ই সন্তান... তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রাম-এ...
পুরো নাম...
সরোজিনী দেবী...
বিয়ের পর... সরোজিনী নাইডু...
সাধারণ পরিচিত...
ব্রিটিশ ভারত-এর স্বাধীনতা সংগ্রামী... কবি... বাগ্মী...
জন্ম...
১৩ ফেব্রুয়ারী, ১৮৭৯ খ্রীস্টাব্দ...
জন্ম-স্থান...
ব্রিটিশ ভারত-এর হায়দরাবাদ-এ...
মৃত্যু...
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ০২ মার্চ, ১৯৪৯...
মৃত্যু-স্থান...
স্বাধীন ভারত-এর যুক্ত প্রদেশ (বর্তমানঃ উত্তর প্রদেশ)-এর রাজধানী এলাহা-বাদ-এ...
পিতা...
বিজ্ঞানী-দার্শনিক-শিক্ষাবিদ ও হায়দ্রাবাদ নিজাম কলেজ-এর প্রতিষ্ঠাতা অঘোর নাথ চট্টোপাধ্যায়...
তিনি ও তার বন্ধু মোল্লা আব্দুল কায়ুম ছিলেন হায়দ্রাবাদ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর প্রথম সদস্য... পরবর্তী-কালে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেবার জন্য তাকে কলেজ-এর অধ্যক্ষ-এর পদ থেকে... পদচ্যুত করা হয়...
মাতা...
কবি বরদা সুন্দরী দেবী...
ভাই...
তার জেষ্ঠ্য ভাই বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়-ও ছিলেন এক-জন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী... ১ ম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন বার্লিন কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য... এবং... হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র-এর অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব... পরবর্তী-কালে তিনি কমিউনিজমে আকৃষ্ট হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন-এ যান... ধারনা করা হয়... সেখানে-ই স্তালিন-এর নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়েছে...
অপর ভাই হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এক বিশিষ্ট নাট্যকার-কবি-অভিনেতা...
স্বামী...
ড. মুথ্যালা গোবিন্দরাজুলু নাইডু... ১৪ বছর বয়সে সরোজিনী তার প্রেমে পড়েন... ১৯ বছর বয়স-এ... পড়াশোনা সমাপ্ত করে... তার সঙ্গে পরিণয়-সূত্রে আবদ্ধ হন...
সে-যুগে অসবর্ণ বিবাহ সমাজে নিষিদ্ধ ছিল... সরোজিনী ব্রাহ্মণ... গোবিন্দরাজুলু ছিলেন অ-ব্রাহ্মণ... ১৮৯৮ সালে মাদ্রাজ-এ ১৮৭২ সাল-এর আইন অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়...
সন্তান...
তার চারটি সন্তান... জয় সূর্য... পদ্মজা... রণধীর... লীলামণি...
পদ্মজা পরবর্তী-কালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য-এর... রাজ্যপাল হন...
শিক্ষা-গ্রহণ...
বারো বছর বয়স-এ... মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায়... সমগ্র মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন...
১৮৯১ সাল থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা বন্ধ রেখে... নানা বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করেন...
১৮৯৫ সালে ইংল্যান্ড-এ গিয়ে... প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজ-এ... ও... পরে কেমব্রিজের গার্টন কলেজ-এ পড়াশোনা করেন...
তিনি উর্দু-তেলুগু-ফারসি-বাংলা... এই ৪-টি ভাষা শিখেছিলেন...
তার প্রিয় কবি ছিলেন পি. বি. শেলি...
রাজনৈতিক জীবন-এর ইতিহাস...
১৯০৫ সাল-এ... বঙ্গ-ভঙ্গ আন্দোলন-এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা আন্দোলনে সরোজিনী যোগ দেন...
১৯১৫ সাল থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়-এ... ভারতের নানা স্থান-এ... যুব কল্যাণ-শ্রমের গৌরব-নারী মুক্তি-জাতীয়তাবাদ বিষয়ে বক্তৃতাদান করেন...
১৯১৬ সাল-এ... জওহরলাল নেহরু-এর সঙ্গে সাক্ষাতের পর... চম্পারণ-এ... নীলচাষীদের হয়ে আন্দোলন শুরু করেন...
১৯১৯ সালের মার্চ মাস-এ... ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন জারি করে সকল প্রকার রাজদ্রোহমূলক রচনা নিষিদ্ধ করে... প্রতিবাদে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করলে... সরোজিনী সর্ব-প্রথমেই আন্দোলনে যোগ দেন...
১৯১৯ সালের জুলাই মাস-এ... ইংল্যান্ড-এ... হোমরুল লিগ-এর দূত মনোনীত হন...
১৯২০ সালের জুলাই মাস-এ... ভারত-এ... প্রত্যাবর্তন করনে...
১৯২০ সালের ১ আগস্ট... গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করলে... তাতে অংশ নেন...
১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাস-এ... পূর্ব আফ্রিকা-গামী... ভারতীয় কংগ্রেসের দুই সদস্য-বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল-এ অন্যতম-রূপে নির্বাচিত হন...
১৯২৫ সাল-এ... কংগ্রেস-এর... সভাপতি নির্বাচিত হন...
১৯২৮ সালের অক্টোবর মাস-এ... নিউ ইয়র্ক সফর করেন... সেখানে আফ্রিকান ও ইন্ডিয়ানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা করেন...
১৯২৮ সাল-এ... ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর... কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন...
১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি... জাতীয় কংগ্রেস... ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে... ৫ মে গান্ধীজি গ্রেফতার হন... অনতিকাল পরেই গ্রেফতার হন তিনি... এই সময় কয়েক মাস কারারুদ্ধ থাকেন...
১৯৩১ সালের ৩১ জানুয়ারি... গান্ধীজি-এর সঙ্গে তাকে-ও মুক্তি দেওয়া হয়...
১৯৩১ সাল-এ... গান্ধীজি ও পণ্ডিত মালব্যের সঙ্গে... তিনি-ও গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন...
১৯৩১ সাল-এর শেষ দিক-এ... আবার-ও গান্ধীজি ও তাকে গ্রেফতার করা হয়... স্বাস্থ্য-হানির কারণে অল্পদিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যান তিনি...
১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর... ভারত ছাড় আন্দোলন-এ অংশ নেবার জন্য পুনরায় গ্রেফতার হন... এ-সময় গান্ধীজি-এর সঙ্গে ২১ মাস কারারুদ্ধ ছিলেন...
১৯৪৭ সালের মার্চ মাস-এ... এশীয় সম্পর্ক সম্মেলন-এর স্টিয়ারিং কমিটি-এর... সভা-পতি নির্বাচিত হন...
রচনাবলি...
The Golden Threshold (১৯০৫)...
The Bird of Time: Songs of Life, Death & the Spring (১৯১২)...
The Broken Wing: Songs of Love, Death and the Spring (১৯১৭)...
The Sceptred Flute: Songs of India (১৯৪৩)...
The Feather of the Dawn (১৯৬১)...
যে-জন্য বিখ্যাত...
"দ্য নাইটিংগেল অফ ইন্ডিয়া" নামে পরিচিত...
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর প্রথম মহিলা সভাপতি...
স্বাধীন ভারত-এর প্রথম মহিলা রাজ্যপাল...
----------------------------------------------------------------------------------
সব-শেষে তার একটি কবিতা তুলে ধরছি...
ঘুমপাড়ানি গান
---সরোজিনী নাইডু
মশলা-বনের আমেজ নিয়ে
কত ধানের ক্ষেত পেরিয়ে
পদ্মদিঘির সুবাসটুকু মেখে,
শিশিরকণার ঝিকমিকানি -
ছোট্ট মিঠে স্বপনখানি
এনেছি দূর পরীর দেশের থেকে।
খোকনমণি, ঘুমোও এবার,
দীপ জ্বেলেছে জোনাকি তার,
ঝাঁকে ঝাঁকে নাচছে নিমের গাছে।
আফিম ফুলের পেয়ালা ছেঁকে
চোরাই করে আঁচল ঢেকে
এনেছি এই স্বপন তোমার কাছে!
ঘুমোও আমায় বিদায় দিয়ে,
লক্ষ তারা ঝলমলিয়ে
তোমায় ঘিরে জ্বলছে দু'চোখ মেলে।
আদর করে শুইয়ে ঘুমে
সোনার জাদুর নয়ন চুমে
স্বপন-মধু দিলেম তাতে ঢেলে।
______________________________________________
সূত্র...
* উইকী...
* মুন্সিগঞ্জ.কম
-----------------------------------------------------------------------------
লেখা-টি যদি কারো পূর্ব-তন কোনো পোস্ট-এর সাথে মিলে যায়... তা-হলে ক্ষমা-প্রার্থী... এবং... কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি...
... প্রভাষক (Lecturer_Ashiq)
মন্তব্য
অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ পোষ্টটার জন্য।
ভারত-এর নাইটিংগেল কে শ্রদ্ধা।
পোস্টটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
১৯৩৮ সালে স্তালিন সরকার যেসব বিদেশী নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেয় তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজন বাঙালী কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন। তাঁরা হচ্ছেন অবনী মুখার্জী, বীরেন চট্টোপাধ্যায় ও গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী। কমরেড মোজাফফর আহমেদ তাঁর "আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি" বইয়ে অবনী মুখার্জীকে নিয়ে ধারণাপ্রসূত অনেক গল্প বললেও বাকি দু'জনের নাম একেবারেই চেপে গেছেন। কী অপরাধে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল সে বিষয়েও কোন কথা বলেননি। ঐ সময়ে বা পরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে সোভিয়েত সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবী করার মত মেরুদণ্ড কারো ছিল না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেক কিছু জানলাম।
সরোজিনী নাইডুর জন্য শ্রদ্ধা।
ধন্যবাদ।
----------------------
সবুজ পাহাড়ের রাজা
পরপারে তিনি সুখে থাকুন।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
কবিতাটা খুব মিষ্টি লাগলো। এর আগে কখনো তাঁর কোনো লেখা পড়িনি।
Thanks Othithi Lekhak for this tribute to Sarojini.
however, I am also grateful to Shasto Pandab for the valuable information he gave. However, I request to Shasto Pandab to give some information about those 3 communist leaders who were sentenced to death by Stalin government.
Bari Vibgyor, মন্তব্য লেখার ঘরটার উপরে একটা "অ" লেখা বাটন দেখতে পাবেন। ওটা চেপে নিলে অনায়াসে বাংলায় লিখতে পারবেন।
অবনী মুখার্জী, বীরেন চট্টোপাধ্যায় ও গোলাম আম্বিয়া খান লোহানী সম্পর্কে খুব বিস্তারিত কিছু আমার জানা নেই। এম এন রায়ের শুরুর দিকের কমিউনিস্ট আন্দোলন নিয়ে লেখা বইগুলোতে উনাদের খুব অল্প-স্বল্প কিছু কথা পাবেন। মোজাফফর আহমেদের "আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি" বইয়ে অবনী মুখার্জীকে নিয়ে বেশ কিছু কথা পাবেন যার বেশির ভাগ ধারণাপ্রসূত। বিক্রমন নায়ারের "দুই ইউরোপের দিনিলিপি"-তে অবনী মুখার্জী ও বীরেন চট্টোপাধ্যায় নিয়ে দুই-এক লাইন পাবেন। গোলাম আম্বিয়া খান লোহানীকে নিয়ে মতিউর রহমানের (প্রথম আলো সম্পাদক) একটা লেখা কয়েক বছর আগে ঈদ সংখ্যা প্রথম আলোতে বের হয়েছিল (একটা ছবিসহ)। তবে সে লেখাতেও উনার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু পাবেন না। উনাদের নিয়ে আল্প-স্বল্প আরো কিছু পড়েছি এখানে-সেখানে যার বিস্তারিত আমার মনে নেই। তবে একটা বিষয়ে নিশ্চিত যে এই তিনজনকে ১৯৩৮ সালে স্তালিন সরকারের নির্দেশে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মারা হয়। সে সময় আরো ভারতীয় নিহত হয়েছিলেন কিনা আমার জানা নেই।
আরেকটা বিষয়ে নিশ্চিত যে উপমহাদেশের কোন কমিউনিস্ট পার্টি ইহজীবনে এই সব বিষয়ে সোভিয়েত সরকারের কাছে কোন ব্যাখ্যা দাবী করেনি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন