আসেন, দাবা খেলি!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০৩/২০১১ - ৭:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মহসীন রেজা

বাংলাদেশে এখন ক্রিকেটের জোয়ার। আমি, আমরা এবং গুটিকয় বাদে প্রায় সকলেই ক্রিকেটোন্মাদ। এই সময় অন্যকোন খেলার প্রসঙ্গে বলতে যাওয়া বোকামি। আমি সেই বোকামি করতে চলেছি।

সাম্প্রতিককালে বাইরের দুনিয়ায় ক্রিকেটে ই বাংলাদেশকে সবচেয়ে উচুঁতে তুলে ধরেছে। আহ্, মুহম্মদ ইউনূসের কথা ভুলে গেলাম। যাউকগা। খেলাধুলার জগতে যেটুকু সম্মান আমরা পেয়েছি তার সিংহভাগই আছে ক্রিকেটের অধিকারে। বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।

ইদানিং আমরা বাংলাদেশের ব্রান্ডিং এর কথা খুব বলছি। “ ব্রান্ডিং বাংলাদেশ" আমার কাছে খুবই একটা ভালো আইডিয়া বলে মনে হয়। আমার কেন যেন মনে হয় খেলাধূলার মাধ্যমে যত সহজে বাংলাদেশের পজিটিভ ইমেজ তৈরি করা সম্ভব তা আর কোন কিছুতেই সম্ভব না। সুতরাং ক্রিকেট মনোযোগ দাবি করে এবং তা পাওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের কর্তাব্যক্তিসহ কর্পোরেট দুনিয়া যেভাবে ক্রিকেটের পিছনে ছুটছে তাতে সন্দেহ হয় অন্যকোন খেলা বাংলাদেশে শুধু নামকাওয়াস্তেই টিকে থাকবে কি না?

এত কথা বলার দরকার ছিল না। কেন বললাম জানি না। দাবার কথা বলতে গিয়ে ক্রিকেটের প্রসং গ টানা অনেকটা ধান ভানতে শীবের গীত গাওয়ার মতই। দাবা খেলার ভক্ত আমি ছোট বেলা থেকেই । দাবা খেলতে বসলে সময়ের কোন হুশঁজ্ঞাণ থাকত না। আমার শৈশব-কৈশোরের সেই আবেগের কারণেই এই লেখাটা লিখতে বসা।

মেধাবিদের দেশ এই বাংলাদেশে গ্রান্ডমাস্টারের সংখ্যা মাত্র চার জন। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে এই সংখ্যাটা আর বাড়বে বলে মনে হয় না। এখনকার কিশোর-তরু ণেরা দাবা খুব একটা খেলে বলেতো মনে হয়। মোবাইল ফোন, ভিডিও গেমস্ ইত্যকার নানা বিষয় নিয়া তারা ব্যস্ত। তাদের দাবা খেলার সময় নেই এবং সবচেয়ে দুঃখের কথা তাদেরকে খেলতে আগ্রহী করার মতো কেউ নেই। অথচ দাবা এমন একটি খেলা যেখানে টাকা-পয়সা-লোকবল লাগে সামান্যই , লাগে শুধু আগ্রহ। আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়াতে শুনেছি দাবা যে পরিমাণ কর্পোরেট মনোযোগ পায় আমরা তার এক দশমাংশও পাই না।যাইহোক বাংলাদেশের দাবা নিয়ে আমার কিছু প্রস্তাব আছে। যেমনঃ স্কুল পর্যায়ে দাবা প্রতিযোগিতা চালু করতে হবে এবং এটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এই প্রতিযোগিতার স্পন্সর হতে বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহী করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত দাবা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্মশালার আয়োজোন করতে হবে। সবচেয়ে জরুরী আমার মনে হয় দাবা বা দাবাড়ুদের মিডিয়া কভারেজ বাড়ানো। আমরা কত জন বর্তমান জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নের নাম জানি। দাবা বিষয়ক বইপত্রের প্রকাশনাও বাড়ানো যেতে পারে। আমারতো মনে হয় চাইলেই দাবাতে বাংলাদেশের একটা সম্মানজনক অবস্থা তৈরি করা সম্ভব।

ক্রিকেটে বাংলাদেশ তার জয়যাত্রাশুরু করেছে।ধারণা করছি অচিরেই বিশ্বকাপটি আমাদের ঘরে আসবে।ক্রিকেটের সঙ্গে সঙ্গে আমি চাই দাবারও উন্নতি।কেননা দুটোই তো মস্তিষ্কের খেলা। শারীরিক কস রৎটা ক্রিকেটে একটু বেশি লাগে এই যা। পনেরো-ষোল কোটির এই বঙ্গদেশে চার জন গ্রান্ডমাস্টার মানায় না। কাজী মোতাহের হোসেন, নিয়াজ মোর্শেদদের সংখ্যা বৃদ্ধি চাই। ধন্যবাদ।


মন্তব্য

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আরক্তিম মুখে দাবার গুটি সাজাতে সাজাতে
সে একদিন বলেছিল, "আসেন, দাবা খেলি";
আমি বুঝিনি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

স্বপ্ন দেখাটা সবার আগে জরুরী বলে মনে করি। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আরো উন্নতি করবে। কারণ গ্রামে গঞ্জে হাজারো ছেলেমেয়ে আজ সাকিব আল হাসান হবার স্বপ্ন দেখে। দাবাড়ু হবার স্বপ্ন কেউ দেখে না। আমরা আমাদের শিশুদেরকে দাবাড়ু হওয়ার স্বপ্ন দেখাইনা, বৈজ্ঞানিক হবার স্বপ্ন দেখাইনা।

৬/৭ বছর আগে বোধহয়, যখন পত্রিকায় কাজ করতাম তখন লিজা নামের বাচ্চা একটি মেয়ের উপর একটা স্টোরি করেছিলাম। 'দাবার রানী লিজা' নামে। হঠাৎ করেই দাবা খেলতে নামা এই মেয়েটির উন্নতি দেখে আমি চমকে গিয়েছিলাম। সে সম্ভবত এখন প্রমীলা দাবাড়ুদের মধ্যে বাংলাদেশের সেরা। অথচ তারপরে আমি তাকে নিয়ে আর কারো উৎসাহ দেখিনি! এই কথাটি বললাম প্রতিভার স্বীকৃতি দিতে আমাদের অনীহা বোঝাতে! ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, যে দেশে গুণের কদর নেই সেদেশে গুণী জন্মাতে পারেনা!

আমাদের আমাদের শিশুদের সামনে স্বপ্ন দাঁড় করিয়ে দেয়া দরকার। এদেশের শিশুরা যখন গ্রান্ড মাস্টার হবার স্বপ্ন দেখবে তখনই তাদের মধ্যে থেকে দাবাড়ু বের হয়ে আসবে! আর কর্পোরেটদের কে মানবতা শিখিয়ে লাভ নেই। লাখে হাজারে মানুষ যখন দাবা নিয়ে উৎসাহী হবে তখনই কেবল তারা পৃষ্ঠপোষকতায় উৎসাহী হবে। ব্যাবসার লাভ না দেখলে তারা কোনোকিছুর উন্নতি, অবনতি, প্রচার, প্রসার নিয়ে চিন্তা করেনা!

আমরা চাইলে অনলাইনে দাবা খেলতে পারি। Gameknot নামের একটা ওয়েব সাইটে আমি খেলি। ট্রাই করে দেখতে পারেন। সঙ্গীর অভাবে অনেকেই খেলতে দাবা পারেনা না বলে মনে হয়!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

warfaze1784 এর ছবি

Gameknot এ একসময় অনেক খেলতাম, খেলোয়াড় পাওয়া গেলে হয়ত আমরা আমরা আবার শুরু করতে পারি। http://gameknot.com/stats.pl?warfaze1784

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

অনলাইনে দাবা খেললে শুধু হেরে যাই। চুরি করা যায় না।

--------------------------------------------------------------------------------

ফাহিম হাসান এর ছবি

রুই কাতলার সেই e4 e5 মনে পড়ল!!

guest writer rajkonya এর ছবি

ভাল লেগেছে আপনার ভাবনাগুলো

অতিথি লেখক এর ছবি

মামারে, দেশের কিরিকেটের যা অবস্থা... তাতে তো দাবাটাই ভাল মনে হচ্ছে!!!

--- থাবা বাবা!

হিমু এর ছবি

দাবা খেলা শুরু করলে সেই দাবাড়ুদের পিছনেও কাগজকলম হাতে হাজির হবে মূর্তিমান উপদ্রব উটপোঁদ শুভ্র।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমরা দাবা খেলতে নামলে প্রতি পক্ষের থাকবে ১৭টি গুটি। ১৭ নাম্বার গুটিটি হবে বেশ লম্বা এবড়ো খেবড়ো এবং সেটি থাকবে বোর্ডের পাশে। কোনো ধরনের কোনো উৎপাত এলেই সেই গুটির সদ্ব্যবহার করা হবে...

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইজান খুব ভাল লেকচেন।আসুলেই পুলাপাইন কিরকেট লয়া যেহারে মাততাচে তাতে মনে হয় ডজনখানেক শচীন লারা পামু...তবে কখন পামু সে ব্যাপারে গ্যারান্টি নাই..হেহে

কাটাকাটি এর ছবি

http://www.chesscube.com/
এই সাইটটা অনেক ভাল লেগেছে আমার কাছে। katakati নামে সার্চ দিয়ে কেউ আমার সাথে খেলতে পারেন(যদিও আমি খুবই বাজে খেলি)।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

পনেরো-ষোল কোটির এই বঙ্গদেশে চার জন গ্রান্ডমাস্টার মানায় না। কাজী মোতাহের হোসেন, নিয়াজ মোর্শেদদের সংখ্যা বৃদ্ধি চাই।

একদম ঠিক।

বাংলাদেশে দাবার খেলার বিকাশ হোক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।