শার্লক হোমসের ইয়াআআআ মোটা সমগ্রটা হাতে নিয়ে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো মাতু। হঠাৎ তার খুব কাছ দিয়ে উড়ে যায় একটা পাখি, আর চমকে গিয়ে মাতিসের হাত থেকে বইটা পড়ে যায়...
পাঁচতলা উচ্চতা থেকে যখন বইটা পড়ে, তখন গতি, ভর ও আয়তনের এক বিপুল বোমায় পরিনত হয়! আর পড়বি তো পড়বি মালির ঘাড়ে!!! একি বিপুল দৈবযোগ! তখনই বিল্ডিঙ্গের নিচ দিয়ে যাচ্ছিলো মালিহা, যাকে সবাই আদর করে মালি বলে ডাকে...
মালি ততক্ষনাৎ ঘাড় উলটে ভূমিশয্যায়, আর গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা শাইক এই ভয়াবহ দূর্ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী তড়িৎবেগে পাশ দিয়ে যেতে থাকা একটা খালি রিকশা ডেকে মালিহাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ডাক্তার জানায় একটুর জন্য কোন বড় ক্ষতি হয়নি... যেকোন কিছুই হতে পারতো, মৃত্যুও হতে পারতো, কিন্তু সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে আসায় এবং ডঃ আর্থার 'সু'চিকিৎসা করায় মালিহা এখন কিছুটা সুস্থ্য, এবং চার পাঁচদিনের মধ্যেই বাসায় যেতে পারবে...
সেইরাতে মাতুর ঘরেঃ
মাতু তীব্র বেদনা বুকে নিয়ে সাদা ক্যানভাসে একের পর এক রঙের আঁচড় দিয়ে যাচ্ছে। আজকে সকালে তার প্রেমিকা মালিহার আসার কথা ছিলো তার বাসায়, পোরট্রেইটের মডেল হবে বলে... কিন্তু ওরই ভুলে... কেন যে এত ভারী বইটা নিয়ে বারান্দায় গেলো, হাফ রেলিঙ্গের বারান্দা, আর বদমাশ পাখিটা!! তারচেয়েও বদমাস দোতলার শাইকু হারামজাদা। বেকার বদলোক, বৌয়ের কামাই খায় বসে বসে আর মেয়েদের সাথে নষ্টামী করে বেড়ায়... থিয়েটার করে নাকি ফাজিলটা! আসলে তো বড়লোকের বৌদের জিগোলো! কিভাবে চোখের পলকে মালিহাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো!! পাঁচতলা থেকে নামতে যতটা দেরী, তার মধ্যেই?? রাগে মাতুর গা চিড়বিড় করে।
মালিহা যে হাসপাতালে সে খবর মাতু পায় সন্ধ্যাবেলায়। সাথে সাথে দেখতে যায়। কিন্তু মালিহা তার সাথে কথা বলাতো দূরে থাক, সম্পর্কই আর রাখতে চায় না! শাইকু নাকি বইটা সাথে নিয়ে নিয়েছিলো এবং জ্ঞান ফেরার পর সে দেখতে পায়, বইয়ের প্রথম পাতায় জ্বলজ্বলে অক্ষরে লেখা মাতুর পুরা নাম...
"Henri Matisse, ঢাকা বইমেলা ২০০৮"
চোখের জলে জ্বল জ্বল করে জ্বলতে জ্বলতে মাতিস ছবি এঁকে চলে খোলা জানালার ছবি...
সেই রাতে শাইকুর ঘরেঃ
শাইকুর চোখে ঘুম নাই, মাথায় কি যেন ঘুরঘুর করে ঘুরেই চলছে। হঠাৎ শাইকুর চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক ফালি বুক, না না... এক ফালি মুখ! ঘাড়ে আর মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা, একচোখ হালকা বেগুনী হয়ে আসা এক অপূর্ব রমনী... আরো মনে আসে অর্ধচেতন অবস্থায় ঝুকে আছে সে, রিকশার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিসরে, তার পিঠ চেপে ধরে আছে শাইকুর হাত... ঝুঁকে থাকায় জামার লো-কাট নেকলাইন দিয়ে উঁকি দিচ্ছে একজোড়া চাঁদ... না না না না... চাঁদমুখের সেই রমনী! তার কোন তুলনা নেই!
ঝট করে মেন্টোসের বাত্তিটা শাইকুর মাথার উপর জ্বুলে উঠলো। পাশ থেকে তার বিশালদেহী বৌ গর্জে উঠলো, "মিনসের জ্বালায় রাতেও ঘুমানোর উপায় নাই, এতো রাতে ঘরে লাইট জ্বালাইলি কেন?"
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে শাইকু... এই মুটকি মাগী যদি এতো মোটা বেতনে চাকরী না করতো, কবেই একে লাথি দিয়ে বের করে দিয়ে ঘরে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান খোলা যেতো, তখন সে-ই মাসে কামাতো লাখ টাকা! না-না ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান না, ভালোবাসা তৈরীর কারখানা... যাই হোক!
সে ডাইনিং রুমে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে কাগজ কলম নিয়ে লেখা শুরু করে,
"আমি কি তোমাকে একটি গ্রীষ্মের সূর্যের সাথে তুলনা করবো... ব্লা ব্লা ব্লা"
তারপর এসএমএস পাঠায় মালিহার নাম্বারে...
এসএমএস পাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই মালিহা কল ব্যাক করে! খুশীতে গদ গদ হয়ে শাইকু বাথরুমে চলে যায়, মন খুলে কথা বলার জন্য।
:: হ্যালো মালুউউউউ!
: মালু কি রে শুয়োরের বাচ্চা? এতো রাতে এসএমএস দিলি কেন?
:: হ্যালো, মালু, একি ভাষা তোমার? আমি তোমার জীবন বাঁচিয়েছি আজকে...
: তাই না? জীবন বাঁচাইছিস? খা*কীর পোলা, চান্সে যে আমার গায়ে হাতাপাতা করতেসিলি আমি বুঝি নাই মনে করছিস? তখন গায়ে কোন জোর পাইতেসিলাম না দেখে কিছু বলি নাই... এখন আবার আসছিস এসএমএস **দাইতে? শালার শালা, আমি মাতিসের বাসায় যাওয়ার সময় তোরে দুই দিন দেখসি দুই মাইয়া নিয়ে বাসায় ঢুকতে... আরেকবার যদি আমাকে ডিস্টার্ব করিস, তোকে ঈভ টিজিঙ্গের কেসে ফাঁসায় দিবো আর চুরির কেসেও! আমাকে অজ্ঞান পায়ে তুই আমার ব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা সরাইছিস না?
:: আমাকে পুলিশের ভয় দেখায় লাভ নাই, র্যাব পুলিশ আমার হাতেও আছে, হুহ!
বলে ফোন কেটে দেয় শাইকু। তারপরই ডায়াল করে পাকিজা সুলতানার নাম্বার। বিরাট পুলিশ অফিসার। শাইকুর রেগুলার কাস্টোমার। শাইকুর উপর ভীষন প্লিজড! শাইকু নাকি তার আগের দুই স্বামীর চেয়েও খুব ভালো জানে... কবিতা লিখতে আর কি?
পাকিজা সুলতানা অফিসের কাজে বিদেশে আছে... সে দেখে একটা মিসডকল তার মোবাইলে। চেক করে মনটাই ভালো হয়ে যায়। সে কলব্যাক করে তাকিয়ে থাকে স্ক্রীনের দিকে...
"Calling William Shakespeare"
সেই রাতে আর্থারের ঘরেঃ
সারাদিন ব্যস্ততার পরেও আর্থারের ঘুম নাই। একটা জটিল গল্প ঘুরছে মাথায়, নামিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু ক্লাইম্যাক্সটাই ঠিক মন মতো জমছে না। তাই থার্ড কাপ কফি হাতে ঝিম মেরে বসে আছে সে। একটি সুন্দরী মেয়েকে খুনী প্রমান করে ফাঁসির আদেশ হয়ে গিয়েছে। সেই মুহূর্তে মেয়ে শেষ ভরসা হিসাবে গোয়েন্দা নিয়োগ করে। এভাবেই কাহিনী আগায়। সুন্দরী মেয়েটার বর্ণনায় বার বার একটা ব্যান্ডেজ বাঁধা মেয়ের মুখ ভেসে উঠছে, গল্প না আগানোর এটাও একটা কারন। আর ঠিক তখনই, তার ফোনটা বেজে ওঠে!
: হ্যাল্লো ডক্টর, আমি মালিহা, আজকে...
:: জ্বী মালিহা আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। কোন সমস্যা হয়েছে?
: না ডক্টর, আমার এখানে একদমই ভালো লাগছে না। নার্সের সাথে কথা বললাম, সে আপনার নাম্বার দিয়ে বললো, আপনি পারমিশন দিলেই ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যেতে পারবো।
:: আসলে আপনার যা অবস্থা, এখন ছুটি... কি হয়েছে বলুন তো?
: আমার ভীষন মন খারাপ! আজকে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে, আবার এক লুইচ্চা আমার সাথে বদমায়েশী করছে... সব মিলায়ে...
মালিহা, আমি হাসপাতালের কোয়ার্টারেই থাকি, আপনি চাইলে আমি এখন এসে আপনার সাথে আড্ডা দিতে পারি, যদি আপনি চান!
সত্যি? ডক্টর, তাহলে তো খুবই ভালো হয়! তাছাড়া আমি নার্সের কাছে আরো জানতে পারলাম, আপনিই নাকি সেই বিখ্যাত লেখক? আমি আপনার চরম ফ্যান!
হাহা! ইট'স নট আ বিগ ডীল! ওকে আমি আসছি!
খুশী মনে রেডী হয়ে দরজায় তালা লাগায় আর্থার। তারপর তার দরজার নেমপ্লেটের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে। পেছনে পিতলের পাতে চকচক করতে থাকে তার নাম...
"Dr. Arthur Conan Doyle "
মন্তব্য
মজা পেলাম। এভাবেও হতে পারে বটে! বেচারা মাতিসের কথা ভেবে দুঃখ লাগছে!
লেখার শেষে নিজের নাম যোগ করতে ভুলে গেছেন। এটা প্রথম লেখা হলে সচলে স্বাগতম। আরো লিখুন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ আপনাকে! আরে, তাইতো নাম লিখতেই ভুলে গিয়েছি!
হে অতিথি, এবারও তো নাম দিতে ভুলে গেলেন। নামপ্রচারবিমূখ হলে ছদ্মনাম ব্যবহার করুন। কিন্তু সচলায়তনের রীতি মানতে হলে নাম যে আপনাকে দিতেই হবে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
উফ! আমিও তো মাতিসের মতো ভুলোমনা!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
ভায়োলেট সন্ধ্যা
লেখার ধরনটা চেনা চেনা ঠেকলো। আপনি কি আগেও কোনো পোস্ট দিয়েছেন সচলে?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ধন্যবাদ আপনাকে! লেখার ধরন চেনা চেনা?
জ্বী না, আমি এই প্রথম পোস্ট দিলাম সচলে।
ভালো লাগল আপনার পোস্ট।
সচলে স্বাগতম।
অনেক ধন্যবাদ!
ভায়োলেট সন্ধ্যা
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ!
ভায়োলেট সন্ধ্যা
নতুন মন্তব্য করুন