একপুকুর ভর্তি টলটলে জল পেছনে আর সামনে একটা মসজিদ। ঠিক কত বছর পর নামাজ পড়বো আজ, তাই গুনে বের করার চেষ্টা করছিলাম। খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকিনি , তারপরই দেখলাম তুমি হেঁটে আসছো। ঐটুক পথ হেটে আসতে তোমাকে এত ক্লান্ত দেখাচ্ছিল যে, আমি সযত্নে জমিয়ে রাখা সব অভিমান মুহুর্তেই ভুলে গেলাম। প্রবল অসহায়ত্ব ভর করলো বরং। একটা ব্লটিং পেপার হয়ে জন্ম নিলেও তোমার দুঃখগুলোকে সুনিপুণ শুষে নিতে পারতাম। অথচ অবলা আর ব্যর্থ মানুষ, ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি।
কতদিন পর গ্রামে এলাম। একটা বিচ্ছিরি শহর ডিঙ্গিয়ে তবেই তোমার কাছে পৌছালাম। মৃত্যুর শোকে ভারি হয়ে আছে চারপাশ। অথচ আমি বেহায়ার মত সারাক্ষণ কেবল তোমার কথাই ভাবছিলাম। অপরিচিত লোকগুলাকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। নির্মলেন্দু গুণের মত দেখতে সব প্রবীণেরা : বয়োবৃদ্ধ
চোখে রাজ্যের প্রজ্ঞা। প্রত্যেকে কেমন সুখী বুড়ো মানুষ! মাঝে মাঝে আড় চোখে তোমাকে দেখছিলাম। আহা, কতদিন তোমাকে দেখিনি!
খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছিলো সময়। শেষ হয়ে যাচ্ছিল মৃতের যাবতীয় সত্কারপ্রথা। একটু পরেই যেতে হবে। তোমাকে ছেড়ে যেতে হবে, এই ভাবনায় অবশ হয়ে যাচ্ছিল আমার সমস্ত অস্তিত্ব। সেই পুরোনো অনুভূতি। ঝন ঝন ভেঙ্গে পড়া আমার পৃথিবী কান্নায়। আমি তার কিছুই তোমাকে বুঝতে দেইনি।
শেষ বারের মত তোমার চোখের দিকে তাকালাম। তোমার চোখে এতটা বিষাদ, ইশ্বর আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। কতদিন পর তুমি এতটা নিকটে দাড়ালে। কেবল ইশ্বর জানেন আমি শুধু নিজেকে ধরে রেখেছিলাম যেন হুড়মুড় ভেঙ্গে না পড়ি। তুমি কি উচ্চারণ করছিলে বিদায় বলার প্রথাগত কোন বিনয়বাক্য? বিশ্বাস কর আমি তার কিছুই শুনতে পাইনি। তার কিছুই আমার মনে নেই। আমি আমার সকল ইন্দ্রিয়গুলোকে মরে যেতে দিয়ে শুধু দৃষ্টিটাকে জ্বালিয়ে রেখেছিলাম। অনেক কান্নার পরে রক্তগোলাপের মত ফুটে থাকা তোমার মুখ, শুধু আমি অনন্তের তরে একবার দেখে নিতে চেষ্টা করেছিলাম।
-রাখাল বালক
মন্তব্য
কিছু অনুভূতির প্রকাশ... বেশ লাগলো...
কষ্টগুলো সব মুছে যাক... ভালো থাকুন...
ধন্যবাদ
খুব খুব ভালো লাগলো, রাখাল বালক।
আপনার নিকটাও চমৎকার!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
থেংকু থেংকু
দারুণ! অসাধারণ!
আরো লিখুন অবশ্যই!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
অসাধারণ লাগলো।
-অতীত
বেশ!
নতুন মন্তব্য করুন