আড়িয়াল বিল এবং আমার সরল ভাবনা
আজকে লেখার জন্য বিষয়টা যথেষ্ট পুরোনো................ তারপরও......................................
অনেকদিন থেকেই ভাবনাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিন্তু সময়ের অভাবে ঠিক হয়ে উঠছিলো না। আসলে আমরা যারা পেট চালাতে গিয়ে অন্যের দাসত্ব করি তাদের পক্ষে নিয়মিত কলম চালানো খুবই মুশকিল। বিষয়টা এখন লেখার জন্য যথেষ্ট পুরোনো হলেও আশাকরি কিছুটা হলেও নতুন চিন্তার খোরাক যোগাবে।
সেদিন ২১ শে ফেব্র“য়ারির রাতে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে যখন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন অনেক আলাপের মাঝে প্রসঙ্গটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। কিছুদিন আগে আড়িয়ল বিলে নতুন বিমান বন্দর স্থাপন করা নিয়ে যে ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে গেলো তার পোস্টমর্টেম অনেকেই অনেকভাবে করার চেষ্টা করেছেন। কেউ বিরোধী দলগুলোর ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেছেন, কেউবা সরকারীদলের হঠকারী সিদ্ধান্তকে দোষ দিয়েছেন।
আমি এখানে সরকার বা বিরোধী দলকে দায়ী না করে ভিন্ন আঙ্গিকে বিষয়টা তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাতে পাঠক হৃদয়ে দাগ কাটতে পারবে কিনা জানিনা, কিন্তু নিজের ভাবনাটা অন্তত জানাতে পারব।
৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যখন নতুন বিমানবন্দর নির্মানের প্রসঙ্গ আসে তখন সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভবে বাংলাদেশে এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। আর সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আড়িয়ল বিলকে নির্ধারণ করা হয় নতুন বিমানবন্দরের জন্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আমাদের বর্তমান বিমানবন্দরগুলো পুরোমাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে না। শাহজালাল বিমানবন্দর মোট ক্ষমতার মাত্র ৬০-৬৫% ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যান্য বিমানবন্দরগুলোর কথা এখানে বলাই বাহুল্য।এমতাবস্থায় নতুন বিমান বন্দরের আবশ্যকতা অনেকেই যেমন বুঝে উঠতে পারছিলো না তেমনি আমিও বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
সেদিনের আলাপে আমার খুব কাছের একজন বন্ধু বলেন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা থেকেই নতুন বিমানবন্দরের চিন্তা করছে সরকার। অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য সুপরিসর জায়গায় বিমানবন্দর নির্মান দরকার।
অথচ ঢাকার বর্তমান দুর্বিষহ জীবন যাপনের কথা কারো অজানা নয়। প্রতিদিন যানজটে কত হাজার কর্মঘন্টা যে নষ্ট হচ্ছে এবং তাতে অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিমানবন্দর নির্মানের ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যদি ঢাকার অবকাঠামো উন্নত করা যায় তবে মানুষের দুর্ভোগ যেমন কমবে তেমনি উন্নত অবকাঠামো ব্যবহার করে বর্তমান বন্দরকেই অনেক বেশী ব্যবহারপোযোগী করে তোলা যাবে। সেটা এক অর্থে যেমন সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে তেমনি অর্থনীতির গতিকেও স্থিতিশীল করা যাবে। এ প্রসঙ্গে সবাই একমত হলেও উঠে আসে নতুন ভাবনা। সে বিষয়ে আলোকপাত করার আগে আরও কিছু কথা না বললেই নয়।
আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মান নিয়ে যখন সাধারণ মানুষ মারমুখী অবস্থায় তখনকার পেপার পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি খেয়াল করলেই দেখবেন সেই বিক্ষোভে অংশগ্রহনকারী সবাই গ্রামের সাধারণ মানুষ ছিলেন না। সেখানে এমন অনেক বিক্ষোভকারী ছিলেন যাদের হাতে ছিল দস্তানা, মাথায় হেলমেট, হাতে হকিস্টিক। গ্রামের সাধারণ মানুয়ের এত প্রস্তুতি থাকার কথা না। তাহলে তারা কারা ছিলো!! সে প্রশ্নের উত্তর আমরা কেউ খোঁজার চেষ্টা করিনি। তারা যদি কোন দল বা গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট হয়ে থাকে তবে তা সত্যিই ভয়ংকর। অতঃপর কিছু মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এবং পদ্মার পাড়ে বন্দর নির্মাণের ঘোষণা সরকার যখন দেয় তখন হঠাৎ করেই সব চুপচাপ হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো তার কিছুদিন পর একটি জাতীয় দৈনিকে দেখতে পাই গোপালগজ্ঞের মানুষ তাদের ওখানে বিমানবন্দর নির্মানের জন্য প্রধাণমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে।তারা বন্দর নির্মানের জন্য জমি দেয়ার কথাও বলেছে। আমার ধারণা (একান্তই আমার) সরকারও সেরকম ভাবছে। কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস পদ্মার পাড়ের মানুষও প্রতিবাদ করবে। ফলে সরকারের পক্ষেও তখন সহজ হবে গোপালগজ্ঞে বিমানবন্দর নির্মানের পক্ষে যুক্তি দেখাতে। আর সেটা হলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। বঙ্গবন্ধু সিটি নির্মান এবং আধুনিক বিমানবন্দর। গোপালগজ্ঞে বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই কিন্তু সেটা যদি করতেই হয় তাহলে এত নাটকের কি দরকার!! (বিরোধী দল আন্দোলন করবে বলে!) আমি এখনও নিশ্চিত নই সেটা হবে কিনা!! আপনারাও ভেবে দেখতে পারেন।
এবার নতুন ভাবনাটায় আসা যাক। বাংলাদেশের অর্থনীতির খোঁজ খবর যারা একটু রাখেন তারা হয়তো অনেকেই স্বীকার করবেন যে, ১৯৯০ সালের পরে এদেশে বিদেশী সাহায্য বা অনুদান অনেকটাই কমেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর অনুদান নির্ভর নয়, অনেকটাই বাণিজ্য নির্ভর। কাজেই দাতাগোষ্ঠীও আগের মত আমাদের উপর ছড়ি ঘোরাতে পারেনা। তারপরও আই.এম.এফ, বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে যার অনেকটাই সরকারী নীতি নির্ধারক মহল গোপনে অথবা যথেষ্ট স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করে কার্যকর করার চেষ্টা করেন, সেটা যে সরকারই হোক না কেন। তাই দাতাগোষ্ঠীর চাপ যে আমাদের অর্থনীতিতে একেবারেই নেই সেটাও বলা যাবেনা। আমাদের মত দরিদ্র দেশের সরকারকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উভয় কারণেই বিভিন্ন চাপের মুখে থাকতে হয়। কোন সরকার কতটা চাপ সামলাতে পারে সেটাই মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এবং সরকারের সাফল্যও নির্ভর করে এর উপর।
আমার সে বন্ধুর মতে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ দাতাগোষ্ঠীর চাপ। রাজনৈতিকভাবে এই মতামতকে আমি অগ্রাহ্য করি না। দাতাগোষ্ঠী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্ভট দাবী আমাদের কাছে করেছে, তার সবই আমরা মেনে নিয়েছি সেটাও যেমন সত্যি নয় একইসাথে রাজনৈতিকভাবে আমাদের সরকারগুলো যেহেতু অনেকটাই তাদের উপর নির্ভরশীল, কাজেই তাদের দাবীকে সরাসরি অগ্রাহ্য করাও ভবিষ্যতে তাদের বিপদের কারণ। আর তাই তাদের দাবীকে পাশ কাটানোর জন্য নেয়া হয় ভিন্ন পথ।
আমার বন্ধুর মতে নতুন বিমান বন্দর নির্মান নিয়েও বর্তমান সরকার ঠিক একই পন্থা অবলম্বন করেছে। যেহেতু প্রতিটি সরকারই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার, তাই জনগণ না চাইলে সরকারের পক্ষে তাদের বিরোধী কোন কিছু করা সম্ভব নয়। আর তাই আড়িয়াল বিলে বন্দর নির্মাণ নিয়ে জনগণ যখন তীব্র বিরোধীতা করলো তখন সরকার ঠিকই পিছিয়ে আসলো। এতে করে সরকারের দুটো উদ্দেশ্য সফল হয়েছে- বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর চাপকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সেই সাথে আপাতত নতুন বিমানবন্দরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা।
দাতাগোষ্ঠীর চাপ অগ্রাহ্য করার জন্য এটাই যদি সরকারের কৌশল হয় তবে এই রাজনৈতিক কৌশলকে আমি স্বাগত জানাই। এ কৌশলের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ গ্যাস রপ্তানীর সময় সাধারণ মানুষের বিরোধীতা এবং সরকারের গ্যাস রপ্তানীর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা।
কিন্তু সব কিছুর পরও যে প্রশ্নটা বুকের ভেতর থেকে যায় তা হলো- এই কৌশল বাস্তবায়নের জন্য কি লাশের দরকার ছিলো??? প্রতিবারই এমন কিছু না কিছু ঘটছে, কানসাট, ফুলবাড়িয়া আর এবারে আড়িয়াল বিল। সাধারণ মানুষের বুকের রক্ত না ঝরালেই কি নয় ? অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামো উন্নয়নের নামে জনগনের উপর এই অত্যাচারের ফলাফল কি কখনও ভালো হবে??? প্রতিটি সরকারেরই এব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরী, অন্যথায় কোন কৌশলই আসলে কার্যকর হবে না।
অর্ক রায়চৌধুরী
***প্রচন্ড আলসেমী আর তাড়াহুড়োর কারণে অনেক কথাই ঠিক মতো বলা হলো না এবং গুছিয়ে লিখতে পারলাম না। অবশ্য আমি গুছিয়ে লিখতে জানি ও না। লিখতে গেলে মাথার মধ্যে সবকিছূ একসাথে হুড়মুড় করে আসতে থাকে, তখন আর তাল সামলাতে পারি না। আশাকরি পাঠকেরা সেটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে না দেখে উপযুক্ত পরামর্শ দেবেন।
মন্তব্য
আপনি সত্যিই সৎ মানুষ। বেশ অগোছালো একটা লেখা পড়লাম। আপনার পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলাম না। পরামর্শ একটাই: "একটা লাইন লেখার আগে এক হাজারটি লাইন পড়ুন"।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
"একটা লাইন লেখার আগে এক হাজারটি লাইন পড়ুন"
ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না শুধু বলবো বুকের ভেতরে যখন আগুন জ্বলে তখন সব এলোমেলো হয়ে যায়। প্রচন্ড প্রতিবাদে ফেটে পড়তে ইচ্ছে করে।
নতুন মন্তব্য করুন