মার্চ মাস বলে টিভি খুল্লেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাটক, টেলিফিল্ম, নাচ-গান দেখা যায়। শুনতে হয়ত খারাপ শোনাবে, কিন্তু মাঝে মধ্যে নাটকগুলো দেখে আমি বিরক্ত হয়ে যাই। মনে হয় যুদ্ধের নাটকের একটা থিওরি আছে এবং সেটা মেনে স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে। কয়েকটা ছেলে "দেশে গণ্ডগোল হচ্ছে, হাত গুটায় বসে থাকা যায় না, চল যুদ্ধে যাই" এ জাতীয় সংলাপ বলবে। একজন মউলানা রাজাকার থাকবে যে পাকিস্তানী আর্মির সাথে হাত কচলায় কচলায় কথা বলবে, কয়েকটা মেয়েকে ধরে নিয়ে যাবে। মাস্টার সাহেব একটা অপরিহার্য চরিত্র যে কিনা ছেলেদের উদ্বুদ্ধ করে। এই গৎবাঁধা নাটক গুলো নিয়ে আমার মূল অনুযোগ হচ্ছে এগুলো শুধু বর্ণনা করে যাচ্ছে কী কী হয়েছিল, কিছু পরিসংখ্যানের মতো, কিন্তু ঐ সময়ের আবেগগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা দেখি না। নাটকে, টেলিফিল্মে যদি সেই সময়ের কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষা ফুটে না উঠে তাহলে ৪০ বছর পরের প্রজন্ম সেটা গ্রহণ করবে না। কিংবা সাময়িকভাবে গ্রহণ করলেও অন্তরে পাকাপোক্ত জায়গা দিবে না। আমার বিশ্বাস 'আমার বন্ধু রাশেদ' যদি কিছুদিন আগে মুক্তি পেত (পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম গুণী মানুষ, উনার উপর ভরসা রেখে বলছি), তাহলে ২৩শে মার্চ মিরপুর স্টেডিয়ামে দুইটা কম পাকিস্তানী পতাকা উড়ত, কম করে পাঁচজন নিজেদের মুখে চাঁদ তারা আঁকা থেকে বিরত হতো।
মুক্তিযুদ্ধ কি শুধু রাইফেল নিয়ে গোলাগুলি? আর কোন বিষয় কি দেখানোর মতো নেই? আমি দেখতে চাই প্রচণ্ড সাহসী কিছু গুপ্তচরের গল্প। ধরা পড়লে কি পরিণতি জেনেও যারা হানাদার বাহিনীর কাছাকাছি থেকেছে। সেইসব মানুষের গল্প, যারা প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে রিফিউজি ক্যাম্পে অসহনীয় দিন কাটিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে আমাদের হ্যাংলা পটকা কৃষক, মজুর, ছাত্ররা কী ভাবতো, সেইসব কথা জানতে চাই। একজন কমান্ডার কি করে যুদ্ধ কৌশল ঠিক করত, অন্যদের সাথে যোগাযোগ রাখত কীভাবে।
আজ যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাটক সিনেমা বানাচ্ছেন তাদেরকে আমি সালাম জানাই। সাথে এও অনুরোধ করি একটু খেয়াল রাখবেন যেন চর্বিত চর্বণ না হয়ে যায়।
-রু
মন্তব্য
'আমার বন্ধু রাশেদ' আমারো খুব প্রিয় একটা বই। লেখকও। তাঁর শ্রেষ্ঠ বইগুলোর একটা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। -রু
মোর্শেদুল ইসলামকে কিছু কারণে শ্রদ্ধা করি. কিন্তু, পরিচালনা তার মধ্যে ঠিক পড়ে না। তাঁর 'দীপু নাম্বার টু' এবং 'পুতুল'-এর চিত্রায়ণ দেখে তেমন একটা ভালো লাগে নি। মনে হয় না, এটার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে।
যদি অন্যদের দেখে ভালো লাগে, তাহলেই একটা ঝুঁকি নেবো দেখার।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
'দীপু নাম্বার টু' কিন্তু আমার কাছে অসাধারণ লেগেছিলো!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
স্পর্শ, পড়ার জন্য ধন্যবাদ। নাম দিয়ে জবাব দিচ্ছি, মন্তব্য যদি এইদিক ওইদিক দৌড় দেয়ও অসুবিধা নাই। -রু
পুতুল দেখিনি। 'দীপু নাম্বার টু' ভালো লেগেছিল। রাশেদের রিভিউ ভালো খারাপ যেরকমই আসুক না কেন, আমি দেখব। আমার তরফ থেকে সাপোর্ট প্রদর্শন আর কি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। -রু
জাফর ইকবালের বইগুলোর মধ্যে প্রিয় বইয়ের নাম বললে অবশ্যই আমার বন্ধু রাশেদ। আর দীপু নাম্বার টু ও ভাল লেগেছিল
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ। -রু
তাই কি? নিচের লিংকটাতে দেখেন ৫:৩৬ এ। বাংপাকি শুওরের বাচ্চাদের কোনকিছুই ঠিক করতে পারবে না।
http://www.espncricinfo.com/icc_cric...btc/index.html
লিঙ্কটা দেখতে পাচ্ছিনা, কিন্তু কি জিনিষ আছে আন্দাজ করতে পারি। এখন এই একটা ছবি দেখুন।
বই, সিনেমা মানুষের মনে অনেক গভীর ছাপ ফেলতে পারে। এরকম একটা দৃশ্য দেখার পর কারো কি একটুও হাত কাঁপবে না পাকিস্তানী পতাকা উঠাতে? -রু
'দীপু নাম্বার টু' এবং "আমার বন্ধু রাশেদ" জাফর ইকবালের দুটো মাস্টারপিস। প্রথম ছবিটা ভালো লেগেছে। এবার আমার বন্ধু রাশেদের অপেক্ষায় রইলাম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমিও অপেক্ষায় আছি। -রু
ফেসবুকে একটা গ্রুপ আছে দেখলাম, কলাকুশলী (যেসব পোলাপান অভিনয় করেছে) তারাই এডমিন। খুব করে চাইছি সিনেমা বানিয়ে গল্পটা যেন পচানো না হয়। এই একটা বই যত বারই পড়ি চোখে পানি চলে আসে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
দুই একটা টুকরা ছবি দেখেছি, মনে হয় ভালো হবে। -রু
বইটা সত্যি ভালো লাগে ....জাফর স্যার এর লেখনি এক কথায় অসাধারণ ...আবার মনে করিয়ে দাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ... আসলে কেউ ইতিহাসকে এখন ভাও দেয়না যতযাই করা হোকনা কেন যাদের পতাকা উড়ানোর তারা উড়াবেই... এই ঘটনা নিয়ে এত লেখালেখি হলো কই কারো বোধদয় হয়েছে বলে তো শুনলাম না ...বরং তারা তাদের যুক্তিতে অটল ...
-অর্ফিয়াস
গল্প-নাটক-সিনামা, গুরুগম্ভীর আলোচনা বা রিপোর্টের থেকে একটু আলাদা কারন এখানে মানুষের আবেগগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে চায়। একটা আর্টিকেল পড়ে বা কারো সাথে তর্ক করে যে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে, 'আমার বন্ধু রাশেদ' দেখে তারই চোখে হয়ত পানি আসবে (উদাহরণ স্বরুপ উপরের একটা কমেন্টে ছবি দিয়েছি)। আমি অতটুকুই চাচ্ছি। কয়েকবার পানি আসুক, তারপর দেখি বদলায় কিনা। -রু
"আমার বন্ধু রাশেদ" বইটা ক্লাস সিক্স-সেভেনে পাঠ্যসূচিতে র্যাপিড রিডার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই বইটা পড়ে যেন সব বাচ্চা বড় হয়।
একমত।
অবশ্যপাঠ্য বই একটা
একমত। হিমু, প্রকৃতিপ্রেমিক, সাফি, তিনজনকেই ধন্যবাদ জানাই পড়ার জন্য। -রু
যদিও হিমু ভাইয়ের আর ফ্যান নই আমি, তবু বলছি, আমিও গতকাল ভাবছিলাম ঠিক এধরনেরই একটা কথা। ''একাত্তরের দিনগুলি'' ও র্যাপিড রিডার হওয়া উচিত।
পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। -রু
একমত।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
নতুন মন্তব্য করুন