মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নিয়ে একদমই অগোছালো কিছু চিন্তাভাবনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ৩০/০৩/২০১১ - ২:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
এই মুভিটি যতো দেখি, ততোই ভালো লাগে। ছোটকালে ভাবতাম, বড় হয়ে নিই, জ্ঞানবুদ্ধি বাড়ুক, তখন নিশ্চয়ই এইসব 'বাংলা সিনেমা' আর ভাল্লাগবেনা। বড় হয়েছি। বুদ্ধিশুদ্ধি নিশ্চয়ই হয়নি। হলে কী আর প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী-মার্চের আশেপাশে চ্যানেলগুলোতে যখন এই মুভিটি দেখি, তখন 'কী একটা' যেন চুম্বকের মত টেনে রাখে আমাকে। আগেও রাখতো। সেটা ছিলো শৈশবের নিখাদ ভালোলাগা। একটা পরিবারের গল্প কীভাবে এগিয়ে গেছে পরিণতির দিকে, দেখে ভালো লাগতো।

এর বেশি কিছু না। অনেক পরে বুঝতে শিখলাম, পর্দার পেছনের মানুষটা একটা ছোট্ট চাবির আড়ালে কীভাবে একটা জাতির মুক্তি আকাংক্ষা ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাবতেই অবাক লাগে---'এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে' এই গানের মর্মার্থ উদ্ধার করতে আমাকে কলেজের উঠোন পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে হয়েছে। যে দ্‌শ্যে খান আতা গোপনে সারা বাড়ি পোস্টারে ছেয়ে ফেলেন, বাংলা চলচ্চিত্রে এমন অসাধারণ দ্‌শ্য কয়টা আছে, কে জানে। আসলে, 'জীবন থেকে নেয়া'র উপর বিশদ আলোচনা করার মত বোদ্ধা আমি এখনো হইনি। আমার টিভি দেখা এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে ঘোরাঘুরি করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু যখনই এই মুভিটি পাই, তখন আমরা সময়জ্ঞান ভুলে যাই, ভুলে যাই বাইরের প্‌থিবীর কথা, ভেতরের ও বাইরের অনেক অনর্থক দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা।

২।
'আগুনের পরশমণি' ঠিক এরকম আরেকটা মুভি। হুমায়ূন আহমেদ ভালো ফিল্মমেকার, কোন চলচ্চিত্রবোদ্ধাই বোধোহয় এটা স্বীকার করতে চাইবেন না। সে বিতর্কে যাচ্ছি না। ব্যক্তিগতভাবে আমার যেটা মনে হয়, হুমায়ূন তার আন্তরিকতার সমস্তটুকু দিয়েই এই ফিল্মটি বানিয়েছিলেন। হ্যাঁ, এই ফিল্মের নায়িকা যুদ্ধের মধ্যে রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে বেড়ায়, নায়িকার ছোট বোন টিপিক্যাল হুমায়ূনীয় বালখিল্যতা দেখায়---এমন অসংখ্য ত্রুটি বের করে দেখাবেন সমালোচকরা। আমি সাধারণ দর্শক। এবং হুমায়ূনের বড়সড় না হলেও খানিকটা ফ্যান। এই লোকটা আর কিছু না করুক, আমার মত অসংখ্য বইবিমুখ বাঙালিকে বই পড়া শিখিয়েছেন। এইসব বালখিল্যতা তাই মুগ্ধ দর্শকের চোখ এড়িয়ে যায়। তবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মুভিগুলোতে একটা জিনিসের অভাব বড্ড চোখে পড়ে। পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যারেক্টারকে কখনোই মুভিগুলোতে ফোকাস করা হয় না। টিপিক্যাল বাংলা মুভির ভিলেনের সাথে তাদের কোন পার্থক্য খুঁজে পাই না। অথচ গ্লোবালাইজেশনের কল্যানে যখন 'ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস' এ ক্রি্সটোফার ওয়ালজের অভিনয় দেখি, তখন আপনা থেকেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। আমাদের কিংবা আমাদের নেক্সট জেনারেশন যখন আমাদের মুক্তিযিদ্ধ বেসড মুভিগুলো দেখবে, তখন পাকি আর্মি সম্পর্কে ওরা কী ভাববে? 'যুদ্ধ করতে আসছিলো, হেরে চলে গেসে', ব্যাস। অথচ ওয়ালজের অভিনয় দেখে ন্যাজীদের প্রতি অটোম্যাটিক একটা ঘ্‌ণা তৈরি হয়। একজন ওয়ালজের জন্য কিংবা একজন টারান্টিনোর জন্য আমাদের কতদিন অপেক্ষা করতে হবে কে জানে।

৩।
মুক্তিযুদ্ধের উপর লিখিত বইগুলো যতো পড়ি, ততোই তাজউদ্দিন আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা একটু একটু করে বেড়ে যায়। কী করে এই লোকটা নয় মাস ঘরে-বাইরে হাজারো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে টিকেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধকে গতিশীল রেখেছিলেন, ভাবতে অবাক লাগে। আমারা কী তাজউদ্দিনকে তার যোগ্য সমান দিতে পেরেছি? আই ডোণ থিঙ্ক সো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মুভিগুলোতে দুটো দ্‌শ্য খুব কমন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আর জিয়াউর রহমানের রেডিও ঘোষণা। ও, আরেকটা দ্‌শ্য। প্রবাসী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ভিডিও ফুটেজ। কিন্তু প্রবাসী সরকারের মধ্যকার গ্রুপিং-উপগ্রুপিং, নানাজনের নানা ভূমিকা এবং যেই একজন সব শক্ত হাতে হ্যান্ডল করেছেন, সেই তাজউদ্দীন আহমদকে কী আমরা আর কোথাও খুঁজে পাই? বাঙ্গালদেশের কপাল খারাপ। ঠিক এরকম একটা টপিক নিয়ে মুভি বানাতে গেলে বিএনপি তো অর্থসাহায্য দেবেই না, আর যারা নিজেদের স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি দাবি করে করে মুখে ফেনা উলে ফেলে, তারা স্ক্রিপ্ট দেখে আর এগোতে সাহস করবে না। কেননা, সর্ষের মধ্যেই যে ভূত রয়েছে। এক তাজউদ্দীনকে নিয়ে মুভি বানাতে গেলে আশেপাশের মণি-রাজ্জাক-তোফায়েল, মশা-মাছি, কীটপতংগ এদের মুখোশ যে খুলে দিতে হবে। হোপস, ৫০ কী ১০০ বছর পরে হলেও এ নিয়ে ক্লাসিক কিছু নির্মিত হবে। প্রোব্যাবিলিটি বিলো ফিফটি। তবুও, আশা করতে দোষ কী?

আশফাক আহমেদ


মন্তব্য

পাগল মন এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আসলেই আমাদের দেশে ভালো, মানসম্মত তেমন মুভি নেই। তবে "ওরা এগারোজন", "হাঙর নদী গ্রেনেড" আর "আগুনের পরশমনি" চলে যায় আর কি। কিন্তু আফসোস যে স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আমরা আমাদের সবচেয়ে গর্বের, একই সাথে সবচেয়ে কষ্টের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা বানাতে পারলাম না।

সার্বিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভালো সিনেমা নেই আর আপনি আশা করছেন মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের নিয়ে ভালো সিনেমা। আগামী ৫০ বছরেও যদি উঁনাদের নিয়ে ভালো সিনেমা হয়, সেটা হবে আমাদের সৌভাগ্য।

তবুও, আশা করতে দোষ কী?

সেটাই, আমাদের আশা ছাড়া আর কীই বা করার আছে?

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আগামী ৫০ বছরেও যদি উঁনাদের নিয়ে ভালো সিনেমা হয়, সেটা হবে আমাদের সৌভাগ্য।

সৌভাগ্যের অপেক্ষায় রইলাম।

আশফাক আহমেদ

স্পর্শ এর ছবি

ভালো লেগেছে আপনার চলচ্চিত্র ভাবনা চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়া, আপনার কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু লেখা পাবার দাবি জানিয়ে গেলাম। সেটা নিশ্চয়ই অনেক গোছানো ও গঠনমূলক কিছু হবে।

আশফাক আহমেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ, ভাইয়া। পিসি ইদানীং খুব গণ্ডগোল করছে। এজন্য রেগুলার সচল ফলো করতে পারছি না

আশফাক আহমেদ

তিথীডোর এর ছবি

আশা করতে দোষ কী?

সেইই...

আচ্ছা, 'নদীর নাম মধুমতি' কি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি? চিন্তিত
অনেক দিন আগে দেখেছিলাম, ঠিক মনে পড়ছে না..

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

আরেকবার দেখে একটা চমৎকার রিভিউ লিখে ফেলুন না, আপু। বিদেশী মুভির রিভিউ পড়তে পড়তে ক্লান্ত। আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়েই কিছু লেখা হোক না।

আশফাক আহমেদ

দেরসু উযালা এর ছবি

৩ নম্বর আধ্যায়ে এসে ভাবলাম আপনি এখন তাজউদ্দীনের উপর তানভীর মোকাম্মেল নির্মীত তথ্যচিত্রটির কথা বলবেন। যা হোক দেখা আছে কিনা জানিনা, না থাকলে দেখে নিতে পারেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

তাজউদ্দীনকে নিয়ে ডকুমেন্টারী নির্মিত হয়েছে, জানতাম না। দারুণ একটা সাজেশনের জন্য ধন্যবাদ

আশফাক আহমেদ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পালাক্রমে সরকারে আসা দুই দল যখন ক্ষমতায় আসে তখন পাঠ্যপুস্তক, ইতিহাস তাদের নিজেদের মতো করে লেখে। একটা বিষয়ে দুই দলই এক মত, তা হচ্ছে কোনো ভাবে তাজউদ্দিনের আসল ভূমিকা ইতিহাসে দেখানো যাবে না। সম্ভব হলে তাজউদ্দিনের নাম ইতিহাস থেকে মুছে দেয়া। বড় জোর জাতীয় চার নেতা বলে পার পাওয়া। মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দিনের ভূমিকা সঠিক ভাবে দেখালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করাদের অনেকেরই কাছার কাপড়টাও যে থাকবে না! আশফাক, আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন; তাজউদ্দিনকে নিয়ে কোনো মুভি নির্মিত হবে না আগামী ১০০ বা ৫০০ বছরে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগে এক আধটা ডকুমেন্টারি ধরনের কিছু হয়তো নির্মিত হতে পারে। তবে সেগুলো কোন হলে বা সিনেপ্লেক্সে দেখতে পাবেন না, টিভি চ্যানেলগুলোতেও না। ঐ জায়গাগুলো মেহেরজানদের জন্য বরাদ্দ নেয়া। চিন্তা নেই, তাজউদ্দিনকে ইতিহাসের বই থেকেও মুছে ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

পালাক্রমে সরকারে আসা দুই দল যখন ক্ষমতায় আসে তখন পাঠ্যপুস্তক, ইতিহাস তাদের নিজেদের মতো করে লেখে। একটা বিষয়ে দুই দলই এক মত, তা হচ্ছে কোনো ভাবে তাজউদ্দিনের আসল ভূমিকা ইতিহাসে দেখানো যাবে না। সম্ভব হলে তাজউদ্দিনের নাম ইতিহাস থেকে মুছে দেয়া। বড় জোর জাতীয় চার নেতা বলে পার পাওয়া। মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দিনের ভূমিকা সঠিক ভাবে দেখালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করাদের অনেকেরই কাছার কাপড়টাও যে থাকবে না!

এর পর আর কিছু বলার দরকার পড়ে না । তবে, দু'দলের ইতিহাস চর্চায় পার্থক্য হল- বিম্পি তিলকে তাল বানায় কিন্তু আম্বাদের সঠিক (!) ইতিহাস চর্চায় শামসুল হক, অলি আহাদ,আমেনা বেগম , তাজউদ্দিনদের দেখা যায় না ! ইতিহাসের কোনো সত্য অস্বীকার বা চেপে যাওয়া ইতিহাস বিকৃতি আর এ কাজে আম্বালীগ চ্যাম্পিয়ন যদিও ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে এরাই সবচেয়ে বেশি চেচামেচি ও কান্নাকাটি করে !

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

ইতিহাসের কোনো সত্য অস্বীকার বা চেপে যাওয়া ইতিহাস বিকৃতি আর এ কাজে আম্বালীগ চ্যাম্পিয়ন যদিও ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে এরাই সবচেয়ে বেশি চেচামেচি ও কান্নাকাটি করে !

কী বলবো? আম্বালীগের ক্ষমতায় যাবার অস্ত্র ঐ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা। মন থেকেই ওরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় কিনা কিংবা পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করুক চায় কিনা ---আমার সন্দেহ আছে।

আশফাক আহমেদ

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আম্বালীগের ক্ষমতায় যাবার অস্ত্র ঐ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা।

উত্তম জাঝা!

অতিথি লেখক এর ছবি

এমনিতেও ভাইয়া তাজউদ্দীনকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। আপনি যেমন বললেন, 'চার নেতা'র তকমা লাগিয়ে লোকটার আরো অনেক ভূমিকাকে আড়াল করে রাখা হয়েছে।

আশফাক আহমেদ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

http://www.japanbangladesh.com/bn/muktijuddhofilmbook.html

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

তালিকা আপডেট করতে হবে। 'মেহেরজান'মিসিং। -রু

অতিথি লেখক এর ছবি

অনন্যসাধারণ একটা লিঙ্ক দেবার জন্য ধন্যবাদ, নজরুলদা।

আশফাক আহমেদ

সাফি এর ছবি

জীবন থেকে নেওয়া আমার অন্যতম প্রিয় ছবি একটা। আপনার লেখা খুব ভাল লেগেছে। আশা রাখি নতুন প্রজন্মের কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন এরকম একটা সিনেমা নিয়ে এবং এও আশা রাখি সবাই যেন রুবাইয়াত না হয়।

সচলে স্বাগতম

অতিথি লেখক এর ছবি

অত্যন্ত লজ্জার সাথে বলতে হচ্ছে, সচলে এর আগেও আমার বেশ কয়েকটি লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাগুলোর মান এতোই খারাপ যে, তেমন কারো চোখে পড়ে নি লইজ্জা লাগে

আশফাক আহমেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আগেই পড়েছি, কমেন্ট করা হয়নি। ভালো লিখেছেন। -রু

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

আশফাক আহমেদ

টিউলিপ এর ছবি

জীবন থেকে নেওয়া যে আমার কি প্রিয় একটা সিনেমা। প্রতি বছরই দেখাত, তাও দেখতাম। এখনো অনেক জায়গা মুখস্ত। আর হুমায়ূনের সব সিনেমা/উপন্যাসের মাঝে আগুনের পরশমণি আলাদা একটা জায়গা নিয়ে আছে আমার কাছে।

তাজউদ্দীনের কথা আর কি বলবো। আমাদের খুব বড় দুর্ভাগ্য স্বাধীন দেশে তাকে এরকম একঘরে করে রাখা হয়েছিলো। এখনো তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকুই দিতে পারি নি আমরা।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

হাসিব এর ছবি

৩ নাম্বার পয়েন্টে এসে লেখা বিষয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি।

মুক্তিযুদ্ধের উপর লিখিত বইগুলো যতো পড়ি, ততোই তাজউদ্দিন আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা একটু একটু করে বেড়ে যায়। কী করে এই লোকটা নয় মাস ঘরে-বাইরে হাজারো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে টিকেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধকে গতিশীল রেখেছিলেন, ভাবতে অবাক লাগে। আমারা কী তাজউদ্দিনকে তার যোগ্য সমান দিতে পেরেছি? আই ডোণ থিঙ্ক সো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মুভিগুলোতে দুটো দ্‌শ্য খুব কমন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আর জিয়াউর রহমানের রেডিও ঘোষণা। ও, আরেকটা দ্‌শ্য। প্রবাসী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ভিডিও ফুটেজ। কিন্তু প্রবাসী সরকারের মধ্যকার গ্রুপিং-উপগ্রুপিং, নানাজনের নানা ভূমিকা এবং যেই একজন সব শক্ত হাতে হ্যান্ডল করেছেন, সেই তাজউদ্দীন আহমদকে কী আমরা আর কোথাও খুঁজে পাই? বাঙ্গালদেশের কপাল খারাপ। ঠিক এরকম একটা টপিক নিয়ে মুভি বানাতে গেলে বিএনপি তো অর্থসাহায্য দেবেই না, আর যারা নিজেদের স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি দাবি করে করে মুখে ফেনা উলে ফেলে, তারা স্ক্রিপ্ট দেখে আর এগোতে সাহস করবে না। কেননা, সর্ষের মধ্যেই যে ভূত রয়েছে। এক তাজউদ্দীনকে নিয়ে মুভি বানাতে গেলে আশেপাশের মণি-রাজ্জাক-তোফায়েল, মশা-মাছি, কীটপতংগ এদের মুখোশ যে খুলে দিতে হবে। হোপস, ৫০ কী ১০০ বছর পরে হলেও এ নিয়ে ক্লাসিক কিছু নির্মিত হবে। প্রোব্যাবিলিটি বিলো ফিফটি। তবুও, আশা করতে দোষ কী?

  • লেখায় অনর্থক ইংরেজি শব্দের বাহুল্য লেখার মান উপরে ওঠায় না। এগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ থাকলো।
  • আমরা কীরাজনৈতিক দলগুলো যারা বিভিন্ন সময়ে রাজাকার দলকে নিজের কোটরে জায়গা দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে অর্থসাহায্য আশা করছি? আরেকটু পরিস্কার করবেন আশা করি।
  • সর্ষের মধ্যে কোন ভুতটা কোথায় লুকিয়ে আছে যে তাজউদ্দিনকে নিয়ে বানানো স্ক্রিপ্ট দেখে "স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি দাবি করে করে মুখে ফেনা উলে ফেলে সেই ভুতগুলো এগোবেনা? মনি রাজ্জাক তোফায়েল কী ঢাকতে মুখোশ ব্যবহার করছেন? একটু বিস্তারিত বললে ভালো হয়। আমি বুঝতে পারিনি এই অংশটা।

অতিথি লেখক এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকাটা ঠিক পরিষ্কার না। এরা ফ্রন্টে যতোটা না ব্যস্ত ছিলেন, তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন কলকাতায় তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধে দল পাকাতে। মণি-রাজ্জাক-তোফায়েল ছিলেন এই দলেরই হোমরা-চোমরা। এখন সেই সমইয়ে কলকাতায় যে রাজনীতি চলছিলো, তাকে ফোকাস করতে গেলে এরা খলনায়কের কাতারে গিয়ে দাঁড়ান। এ ব্যাপারটাই আমি ইঙ্গিত করেছি।

আর ইংরেজি শব্দের ব্যবহার নিয়ে আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

আশফাক আহমেদ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আরো বিস্তারিত বলেন। উপদলীয় কোন্দল থাকতেই পারে কিন্তু '৭১ এর প্রেক্ষাপটে শেখ মনি-রাজ্জাক-তোফায়েলদের ভূমিকা খলনায়কের কেনো?

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকাটা ঠিক পরিষ্কার না। এরা ফ্রন্টে যতোটা না ব্যস্ত ছিলেন, তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন কলকাতায় তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধে দল পাকাতে।

আপনি কি বলতে চাইছেন, মুজিব বাহিনীর সদস্যরা ফ্রন্টে যুদ্ধ করেনি?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধে যে বড় রকমের ষড়যন্ত্র হয়েছিলো এবং এর হোতা যে এই মণি-রাজ্জাক-তোফায়েলরাই ছিলেন, আমি সেদিএকেই ইঙ্গিত করেছি।
আর ইংরেজী শব্দের ব্যবহার নিয়ে আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

আশফাক আহমেদ

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

অপেক্ষায় রইলাম..........

সুফি এর ছবি

"মুক্তিযুদ্ধের উপর লিখিত বইগুলো যতো পড়ি, ততোই তাজউদ্দিন আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা একটু একটু করে বেড়ে যায়।"
- সহমত
তাজউদ্দিন আহমদ খুব দূরদরশী সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।