‘দৈনিক আনন্দবাজার’ নামে পশ্চিমবঙ্গে একটি 'বনেদী' খবরের কাগজ আছে এবং তা বাংলাতেই ছাপা হয় এটা জানতাম। তবে আমি ভারতে গিয়েছি মাত্র একবার, পশ্চিমবঙ্গেও ছিলাম মাত্র দুই দিন। সেটাই আমার প্রথম বিদেশ সফর হওয়ায় স্বাভাবিক ট্যুরিস্টসুলভ উত্তেজনায় (অথবা আমার নিজের স্মৃতিভ্রষ্টতায়) এই বনেদী কাগজটি হাতে তুলে নেয়ার 'সৌভাগ্য' অর্জন করতে পারিনি। এমনকি পত্রিকাটির কারেন্ট অনলাইন ভার্সনও ইউনিকোড-সমর্থিত না হওয়ায় অনেক দিন ধরে অনলাইনে ঘোরাঘুরি করেও কখনোই সেটির সাক্ষাৎ পাইনি। ফলে আনন্দবাজারে কী ধরনের লেখা ছাপা হয়, ভাষা ও বানানরীতিই বা কেমন, অথবা ঠিক কী কারণে সেটি আন্তর্জাতিক মানের সমতুল্য সেসব বিষয় আমার অজানাই থেকে গিয়েছিল।
আনন্দবাজার সম্পর্কে আমার এই অজ্ঞতার ফলে একরকম শান্তিতেই ছিলাম বলা যায়। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারলাম যে পত্রিকাটিতে বাংলাদেশিদের নাম ভুল বানানে ছাপা হচ্ছে। তাও এটি একেবারেই কোনো সাম্প্রতিক ঘটনা নয়, বছরের পর বছর ধরেই এই অপকর্মটি করা হচ্ছে, কোনো ধরনের জোরালো আপত্তি বা প্রতিবাদ ছাড়াই। [১]
পত্রিকাটির ১৩ লাখ সার্কুলেশনই বলে দিচ্ছে পাঠকরাও এ ঘটনাটিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখছেন। পাঠকরা হয়তো ভাবছেন 'সচিন তেন্ডুলকর' বা 'সোনিয়া গাঁধি' বানান লেখা একটি পত্রিকা রাজ্জাককে 'রজ্জাক' বা আনিসুল হককে 'আনসুল হক' লিখবে এতে আর আশ্চর্য কী! কিন্তু পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, শচিন টেন্ডুলকার বা সোনিয়া গান্ধী বাঙালি নন, বাংলায় তাদের নাম কী লেখা হলো তাতে কিচ্ছু যায়-আসে না তাদের। তবে রাজ্জাক বা আনিসুল হকরা বাঙালি, আর এ কথা কি ধ্রুব সত্য নয় যে, প্রতিটি বাঙালিরই একটি নিজস্ব বাংলা নাম রয়েছে, তা সে-নামটি যে-ভাষা থেকেই আসুক না কেন? এবং তা কি এতই আপন, এতই নিজস্ব নয় যে তাতে অন্য দেশের, প্রতিষ্ঠানের, বা ভাষার খবরদারি কেউ মেনে নিতে রাজি হবেন না? আর যদ্দেশীয় নাম তদ্দেশীয় কায়দায় উচ্চারণ করার দাবিটাও তাহলে নিরর্থক? ভুলে গেলে চলবে না, এক ভাষার নাম অন্য ভাষায় ভিন্ন চেহারা নেয়, দস্তুরমতো সারা পৃথিবীতে এমনটাই হয়ে আসছে। অর্থাৎ, অন্য ভাষার নামকে নিজ নিজ রীতি ও ঝোঁক অনুসারে বদলে নেয়ার প্রবণতা সব ভাষারই রয়েছে। পার্থক্য এই যে, কখনো বানান ও উচ্চারণ উভয় ক্ষেত্রেই বদল হয়, কখনো বদল হয় কেবল উচ্চারণে। [২]
ভুলে গেলে চলবে না, বাংলা লিপির সাথে ইউরোপীয় লিপি বা আরবি-ফার্সি লিপির কোনোই মিল নেই। বাংলায় সাতটি মৌলিক স্বরধ্বনি ও তিরিশটি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, এই নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি। বাংলা যে একটি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ভাষা সে বিষয়েও সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষার এসব ধ্বনি দিয়ে ইউরোপীয় ভাষাগুলি বা আরবি-ফার্সি ভাষার সব ধ্বনিকে বোঝানো সম্ভব নয়। তেমনি বোঝানো সম্ভব নয় চৈনিক, জাপানি, কোরিয়ান, বার্মিজ বা অন্যান্য প্রাচ্যদেশীয় ভাষার সব ধ্বনিকেও। [৩] তাই যেসব নাম বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে সেগুলোর ‘মূল উচ্চারণানুগ’ হবার প্রচেষ্টা কেবল পেছন দিকেই নিয়ে যাবে, বিতর্ক তৈরি করবে, আসল কাজের কাজ অর্থাৎ সামনে এগিয়ে যাবার পথ তাতে রুদ্ধই হবে কেবল। আশা করি কারোই তা কাম্য নয়।
আনন্দবাজারের সচেতন পাঠকবর্গের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন, একজন বাঙালিকে আনন্দবাজারের মতো 'মহান' একটি পত্রিকায় নিজের নাম বিকৃত বানানে দেখতে হয় কেন, বিশেষত যেখানে তার নিজেরই একটি পিতৃপ্রদত্ত বাংলা নাম রয়েছে? এ বিষয়ে আপনাদের অভিমত কী?
আর আনন্দবাজারের ‘মহান’ সম্পাদক ও মালিক শ্রদ্ধেয় অভীক সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশিদের অনেকে আরবি-ফার্সি থেকে নাম ধার নিয়েছে বলেই কি তারা বাঙালি নয়? অথবা আপনাদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশি মাত্রই 'বাঙাল', অর্থাৎ আধা-বাঙালি? আর সেজন্যই আপনারা তাদেরকে শিখাতে চান বাংলা নাম কেমন হওয়া উচিত? আচ্ছা একটা ব্যাপার বলুন তো, আপনারা কি কেবল খাঁটি বাংলা অথবা সংস্কৃত থেকে ধার করে নেয়া নামই অবিকৃত রাখবেন, আর বদলে ফেলবেন বাদবাকি সবই? নাকি মূল উচ্চারণের নামে এই ভণ্ডামি কেবলই বাংলাদেশিদের জন্য, তাই নিজ দেশের 'বরেণ্য' বাঙালিদের নামে আপনারা হাত দিতে চান না? নয়তো আপনাদের গবেষণা (গো+এষণা)জাত ফর্মুলাটি কেন সকল 'অ-বাংলা নাম'ধারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না? আপনারা তেমনটি হতে দিতে চান না (বা পারেন না) বলেই কি এই দ্বিমুখী নীতি নিয়েছেন?
আর শুনেছি আপনারা বড়ই ইতিহাসকাতর, আমার ধারণা এতটাই যে হয়তো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাসটাও ভুলে বসে আছেন। তাই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বর্তমানে যে এই দিবসটি ২১ ফেব্রুয়ারির দিন পালিত হয় তার কারণ এই দিন বাংলাদেশের কিছু দামাল ছেলে প্রাণ দিয়েছিল মাতৃভাষা বাংলার জন্য। এইসব দামাল ছেলেদের নামগুলো দেখুন তো পরিচিত লাগে কি না—সালাম, রফিক, জব্বার। আমি একটুও অবাক হব না যদি আপনারা এইসব ভাষাবীরদেরকে ‘সলাম’, ‘রফক’, ‘জব্বর’ নামে ডাকতে শুরু করেন।
দয়া করে ভুলে যাবেন না, বাংলাদেশের ষোল কোটি বাঙালির একটি করে নাম আছে। নামগুলো বাংলাতেই লেখা হয়, তা সেগুলো যে-ভাষা থেকেই আসুক না কেন। এক একটি নাম এক একটি মানুষের মর্যাদাকে বহন করে। আমরা মনে করি, ষোল কোটি মানুষের এ মর্যাদাকে নাম বিকৃতির মাধ্যমে প্রকাশ্যে খাটো করে দেখার মধ্য দিয়ে আপনারা নিজেদেরকেই খাটো করছেন। এর জবাবে ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই জুটবে না আপনাদের কপালে।
আমরা মনে করি, সকল বাঙালি ভাই ভাই। আপনারাও যদি তা-ই মনে করেন তাহলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশিদের নাম বিকৃতি বন্ধ করুন। দয়া করে আপনার ভাইয়ের নাম বিকৃত করবেন না।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা তো এই যে, কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্তরা তো নয়ই। আশা করি আপনারা তাদের থেকে নিজেদেরকে ব্যতিক্রম কিছু বলে প্রমাণ করতে পারবেন। ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র : [১] আনন্দবাজারের মহান সম্পাদকের সাক্ষাৎকার ও কিছু এলোমেলো আফসোস
[২] সুভাষ ভট্টাচার্য ('বাংলাভাষা চর্চা', পৃষ্ঠা নং ৬৬)
[৩] বিস্তারিত পাওয়া যাবে আমার এই লেখাটিতে : বানানায়তন- ৭ | বাংলা হরফ বনাম রোমান হরফ—জ বনাম J, Z, G |
কুটুমবাড়ি
মন্তব্য
ভারী সত্যি কথা। তবে এটি শুধু "আনন্দবাজার পত্রিকা"তেই সীমাবদ্ধ নয়। কয়েক দিন আগে পশ্চিমবাংলার তারা মিউজিক টিভির একটা অনুষ্ঠান দেখছিলাম যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শকেরা ফোন করছেন। আশ্চর্য্য হয়ে খেয়াল করলাম যে দর্শকদের নামের বানানভুল গুলো শুধু মাত্র আরবী ফার্সি নামের ক্ষেত্রেই হচ্ছে। যেমন সাইফুল হয়ে যাচ্ছে সইফুল, হায়দার হয়ে যাচ্ছে হয়দর।
একসময় তো আনন্দবাজার পত্রিকা সব নামের আগে শ্রী/শ্রীমতী বসিয়ে দিত। জানিনা এখনো তা চলছে কিনা।
-নিলম্বিত গণিতক
সইফুল কেন ভুল বানান বুঝলাম না, আমার স্কুলের ক্লাসমেট ঐ বানানই লেখে। আমি হিন্দি সার্চ করেও सैफुल পাচ্ছি। सैफ (আলী খানের) নাম হিন্দি সিনেমায় এভাবেই আসে, বাংলাদেশে সাইফ লেখা হয়। একটা বাংলা সিনেমা করলে নামের বানানটা স্ক্রিনে কি আসে দেখব। শর্মিলা ঠাকুর "সৈফ" উচ্চারণই করেন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিগন্ত ভাই,
কেবল সইফুল কেন কোনো নামের বানানই ভুল নয়। ভুল হয় তখনই, যখন আমি সাইফুলকে সইফুল ডাকি অথবা বানানের সময় আ-কারটা বাদ দেই। অনিচ্ছাকৃত হলে ঠিক আছে, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে করা হলে ব্যাপারটা আর ভুলের আওতাভুক্ত থাকে না।
আপনি মূল উচ্চারণ বোঝার জন্য হিন্দিকে আদর্শ মানতে চাইছেন কেন? সাইফ তো হিন্দি নয়, আরবি শব্দ। এই যে দেখেন-
wikipedia অনুযায়ী- A saif (from Arabic سيف, literally 'sword') also Saif, Sayf, Seif is a curved Arabian sword.
খোঁজাখুঁজি করেও saif (سيف)-এর আরবি উচ্চারণের কোনো লিংক পেলাম না। তবে [url=http://translate.google.com/?hl=en#en|ar|saif]Google Translate [/url]অনুযায়ী saif-এর বাংলা উচ্চারণ সাইফ-ই হওয়ার কথা।
আমার তো ধারণা হল আপনি উচ্চারণভিত্তিক বানানের পরিবর্তে যে যেমন লেখে তার নামের বানান তেমন লেখার সমর্থক - আমিও তাই। উচ্চারণ সৈফ নিজে যা করেন সেটাই এখানে প্রাধান্য পাওয়ার কথা - যেমন পাকিস্তানের আব্দুর রজ্জাক (রাজ্জাক নয়) এই উচ্চারণই করেন নয় বা ভারতের জাহির খান (জহির খান নয়) নিজের নামটা এভাবেই বলেন। আজও বাংলাদেশের পত্রিকার জহির খান দেখলাম।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এই পোস্টের মূল বক্তব্যই হলো যে যেমন লেখে তার নামের বানান তেমন লেখা উচিত। আবাপ এটা করে না কেন?
আর উচ্চারণভিত্তিক বানানের ব্যাপারটাও তো উপেক্ষা করার মতো নয়। কিন্তু কোন উচ্চারণ? আরবি নামের ক্ষেত্রে হিন্দি উচ্চারণ কেন নিতে হবে? আমি বলছি না আরবির সাথে হিন্দির উচ্চারণে অনেক পার্থক্য, কিন্তু দুটোর কোনোটাই ঠিকঠাক বাংলায় প্রতিবর্ণীকরণ করা সম্ভব নয়। আমরা যা বলতে পারি না তা শুনতেও পাই না। তাই সাইফ নিজেকে হিন্দি উচ্চারণে (আপনার কথামতো) সইফ/সৈফ বলেন নাকি অনেকটা আরবি উচ্চারণে সিফ এবং সাইফ-এর মাঝামাঝি* কিছু একটা বলেন তা হয়তো আমাদের অনভ্যস্ত বাঙালি কানে ঠিকঠাক ধরা পড়ে না। আমরা যা করতে পারি তা হলো سيف-এর মূল উচ্চারণ অনুযায়ী সাইফ লেখা, তা-ই করা হচ্ছে এখানে। তবে কোনো বাঙালি যদি তাঁর নিজের নাম সইফ লিখেন বা উচ্চারণ করেন তাতেও আপত্তি করার বা তার নাম বিকৃতি করার কোনো কারণ দেখছি না। আর একজন হিন্দিভাষীর (যেমন ভারতীয় বোলার জহির খান) বা উর্দুভাষীর (যেমন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আব্দুল রাজ্জাক, আপনি লিখেছেন আব্দুর) নামের উচ্চারণ ঠিকঠাকমতো বাংলায় আনা যাবে এটা একটু বাড়াবাড়ি আশা হয়ে গেল না?
আমার আরবি জ্ঞান বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। তবু দু-একটা কথা বলার দরকার মনে করছি। ঊনিশ শতক পর্যন্ত আরবিতে punctuation বলতে কিছু ছিল না। 'যের'/'যবর'/'পেশ' (এ-কার/আ-কার/উ-কার) দিয়ে শর্ট ভাওয়েল (হ্রস্ব স্বরধ্বনি) চিহ্নিত করার কাজটি খুবই সাম্প্রতিক কালের ঘটনা। এর আগে শুধুমাত্র ব্যঞ্জনবর্ণ এবং লং ভাওয়েলই (দীর্ঘ স্বরধ্বনি) লেখা হতো। ফলে আরবি টেক্সট দেখে বোঝার উপায় ছিল না কোথায় কোথায় উচ্চারণে 'যবর' (আ-কার) হবে, আর কোথায় হবে না। (Only consonants and long vowels are written in Arabic orthography. The markings on top and underneath should not be confused with punctuation. They are, in fact, the short vowels.) তাই কেন রজ্জাক নয় রাজ্জাক এবং জাহির নয় জহির সঠিক উচ্চারণ তা আরবি না-জানা (আমার মতো) লোকের পক্ষে বোঝাটা একটু কষ্টকরই।
এক ভাষা থেকে নাম অন্য ভাষায় 'প্রতিবর্ণীকরণ' আর একই ভাষাভাষীর নাম 'বিকৃতিকরণ' এক কথা নয়। আমার শুধু একটাই প্রশ্ন, কারও নাম যে বিকৃত করা চলে না এই সামান্য জ্ঞানটুকু আবাপের নেই কেন?
[url=http://translate.google.com/?js=n&prev=_t&hl=en&ie=UTF-8&layout=2&eotf=1...|en|%D8%B3%D9%8A%D9%81]*গুগল ট্রান্সলেশন অনুযায়ী سيف-এর উচ্চারণ [/url]
এটা মেনে নিলে আমার কোনো আপত্তি নেই। মূল লেখায় আপনি লিখেছেন -
- এর অর্থ আমার কাছে অন্যরকম মনে হয়েছে। আমার মনে হয়েছে আপনি কিছু বানানকে "প্রতিষ্ঠিত" ধরে সবাইকে সেটাই লিখতে বলেছেন। সেটাও ঠিক না। নামের বানান ডিকশানারি-জাত বাংলা শব্দ না হলে সেটা যে উচ্চারণানুগ যে কোনো কাছাকাছি বানান লেখা সঠিক। এবং সংবাদমাধ্যমের কাজই হল সেই নামটা হুবহু পুনর্লিপিকরণ। নাহলে নামের পরিচিতির সমস্যা তৈরী হয়। পাঠকের ও নামের মালিকের মধ্যে একটা অস্বস্তির সৃষ্টি হবে যেটা কাম্য নয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কিছু বানানকে "প্রতিষ্ঠিত" ধরে সবাইকে সেটাই লিখতে বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। আপনি নিশ্চিতভাবেই ভুল বুঝেছেন। আমি শুধু সব নামের ক্ষেত্রেই 'মূল উচ্চারণানুগ’ হবার আবাপীয় চেষ্টার পরিণামের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছিলাম।
Paris-এর মূল ফরাসি উচ্চারণ কী? প্যারি/প্যারী নাকি পারি/পারী? আমরা ইংরেজদের মতো প্যারিস দেখে/শুনেই অভ্যস্ত। Prague-কে চেখরা প্রাহা উচ্চারণ করে, কিন্তু আমরা ইংরেজি উচ্চারণে বলি প্রাগ। অথচ চিলির কবি Neruda আমাদের কাছে নেরুদা, ইংরেজদের মতো নেরুডা নয়। অর্থাৎ সব সময়ই যে আমরা ইংরেজদের উচ্চারণ নিয়েছি ব্যাপারটা তা নয়। এখন কেউ যদি waterloo-কে বাংলায় ওঅট্যলু লিখতে শুরু করেন তা কি উদ্ভট মনে হবে না, তা আমাদের যতই জানা থাকুক না কেন যে শব্দটির মূল উচ্চারণ আসলে ওটাই? এসব নামের বানান তো ডিকশানারি-জাত বাংলা শব্দ নয়, এগুলোকে আপনি কীভাবে লেখার পরামর্শ দেবেন?
একটু ভেবে দেখেন যে শহরের প্রাণ নেই (কাজেই কষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই), যেসব অবাঙালি তাদের নাম কস্মিনকালেও আনন্দবাজার পত্রিকা খুলে দেখতে আসবেন এমন সম্ভাবনা নেই তাদের নামের বানান ঠিক করায় আবাপের কী প্রাণান্তকর চেষ্টা! আফসোস, এর সিকিভাগ আন্তরিকতাও যদি বাংলাদেশি ভাইদের নামের বানানে আবাপ দেখাতে পারত!
মনের মানুষের গান শুনলাম।
এই কলকাতা গোষ্ঠী 'খাঁচার ভেতর অচিন মানুষ কেমনে আসে যায়' কে বানিয়েছে 'খাঁচার ভেতর অচিন মানুষ কম্নে আসে যায়'। ইচ্ছাক্ত না অনিচ্ছাক্ত কে জানে?
---আশফাক
ও কিছু না, হয়তো আঞ্চলিক টান। ধন্যবাদ।
আপনার যুক্তি অকাট্য এবং আবেগ হৃদয়স্পর্শী ৷পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের 'বাঙাল'বলে মজা করে নিজেদের আভিজাত্য প্রকাশ করার যুগটি বিগত হয়েছে ৷বাঙালি মানেই যে উচ্চবর্ণের হিন্দু ,বাঙালি মানে বাঙালি মুসলমান নয়---এমন ভাবনার দিনও বহুদিন হলো বিগত হয়েছে ৷তবু যাঁরা বাংলাভাষার উপর নিজেদের সর্দারি আর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে গিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে দেশ ,সেই দেশের বাঙালিদের নামের বানানও পাল্টে দেন ,তাঁদের ঔদ্ধত্য সীমাহীন ৷বাংলাদেশ মানে যে কেবল তসলিমারই দেশ নয়,এ কথাটা একমাত্র আপনারাই পারেন তাঁদেরকে বোঝাতে,আনন্দবাজারের ওই তথাকথিত বড়ত্বের ভাবমূর্তিটাকে ভেঙে দিয়ে আরও বড় ,সত্যিকার অর্থেই বড় কোনও প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়ে ৷আমার পিতৃ-মাতৃকুলের শিকড় লুকিয়ে আছে যে দেশে ,সেই দেশের মানুষ আপনি ৷উনিশে মে-র দেশ বরাক উপত্যকার একজন মানুষ হিসেবে আপনার আবেগটুকু আমি ভাগ করে নিচ্ছি ৷
উনিশে মে-র কথা ভাসা ভাসা শুনেছি। তবে এটুকু বুঝতে পারছি, আপনারাও আমাদের মতো গর্ব অনুভব করেন ভাষার জন্য প্রাণ দিতে পেরে। আসলে নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলার, লেখার অধিকার পেতে রক্ত দিতে হয়েছে এটা সারা পৃথিবীতেই একটি বিরল ঘটনা। আপনার দেশের ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
পশ্চিমবঙ্গের কিছু বাঙালিদের একটা ধারণা আছে সারা বাংলাদেশেই বাঙাল ভাষা নামে একটা ভাষা আছে| আমি যতই বলি যে প্রতিটা বৃহত্তর জেলা অঞ্চলের ভাষাই (মানে ভাষার টান) আলাদা কিন্তু এদের মধ্যে কিছু গাড়ল সেটা কিছুতেই বুঝবেনা| এই "বাঙাল ভাষা" নিয়ে একই কথা একই লোক যখন পর পর ২/৩ দিন জিগ্গেস করে তখন কান্চাপা বরাবর থাপ্পর লাগাতে ইচ্ছা করে| যখন একটা পত্রিকা বাংলাদেশী একজন লোকের নাম বাংলা হরফে দেখেও ভুলভাবে লেখে সেটা অবশ্যই দোষনীয়| কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের নামের বানান কি বাংলাদেশে আমরা যেভাবে লেখি তারথেকে আলাদা? মানে সাধারণ লোকজন কেন ভুলটা করে? কারণ কি তারা সবসময় ঐভাবে বানানটা দেখে অভ্যস্ত বলে? উইকি তে দেখলাম ২৫% লোক মুসলিম| মানে মুসলিম নাম ওদের কাছে অতটা অপরিচিত হওয়ার কথা না| মানে সাধারণ লোকজন নিশ্চই ইচ্ছা করে বিকৃত নাম বলে না|
সাধারণ লোকজন অতি অবশ্যই ইচ্ছা করে বিকৃত নাম বলে না। তবে ভারত পুরোপুরি হিন্দি বলয়ে ঘেরা একটি দেশ, পশ্চিমবঙ্গও এর বাইরে নয়। সেখানকার বাঙালি মুসলিমরা হিন্দিভাষী মুসলিমদের অনুকরণে নামকরণ করতেই পারে। হয়তো এ কারণেই বাংলাদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের নামের বানানে কিছুটা ভিন্নতা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশেও হিন্দির প্রভাব দিন দিনই বাড়ছে। আমার ধারণা সেদিন খুব দূরে নয় যখন বাংলাদেশেও প্রচুর রেজ্জাক, রজ্জাক, সইফুল নাম দেখতে পাওয়া যাবে।
আমরা খালি খালি এই মহান বাঙালি অভীকবাবুর পিছনে লেগেছি। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে একটা নাম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন, মাথায় থাকলে চুল, কপালে এসে ভ্রু, মুখে এসে দাড়ি, নাক ও ঠোটের মাঝখানে এসে গোফ, তারপর নামতে থাকে আর নতুন নামকরণ হতে থাকে। অবশেষে জঙ্ঘায় এসে সেটা যে নাম ধারণ করে তা আবার পাকিস্তানীরা মাথায় রাখে।
তেমনই দেখা যায় মিকাইল (আরবি), মিখাইল (রাশান), মাইকেল (ইংরেজি/জার্মান), মিশেল./মিচেল (ফরাসী), ইত্যাদি। তাই ওনারা কিছু কিছু নাম ওপার বাংলার স্টাইলে বলে বা লিখে থাকেন। দোষ না ধরি।
আরেকটা কারন হতে পারে। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি ওপার বাংলার বাঙালিদের কৃচ্ছতার কথা।
এই কৃচ্ছতাসাধন করতে করতে তারা নামের বানান থেকে কার/ফলাগুলো সরিয়ে ফেলেছেন। যেমন, রাজ্জাককে বলছেন রজ্জক, মুজাফফরকে বলছেন মজফফর, জেফরি ডুজনকে বলছেন দূঁজ এবং গিয়ানলুইজি বুফনকে বলছেন বুফঁ। দেখা যাক 'পণ্ডন স্টোর' যদি কলকাতায় এসে ব্রাঞ্চ খোলো তবে হয়তো আনন্দবাজারে সেই স্টোরের বাঙালি নামকরণ করবে 'পোঁদ বিপনী'।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ফরাসীধাঁচের নামের ক্ষেত্রে উচ্চারণ দূজঁ বা বুফোঁ-ই তো হবে। ইংরেজ-জার্মান ইত্যাদি কমেন্টেটররা নাসিক্যবর্ণ উচ্চারণ করতে পারেন না বলে ডুজন বলে থাকেন। কিন্তু আনন্দবাজারকে ভরসা করা যায় কোনোদিন দুজন লিখে ফেলার জন্য।
ডেঙ্গি বানানটার জন্য আবাপকে প্রচুর গালি শুনতে হয়। ওই উচ্চারণটাও কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়, ডিকশনারিতেও পাবেন।
কৌস্তভ ভাই, সেটাই তো আরো বড় রহস্য !! হাজার-হাজার মাইল দূরে সাত-সমুদ্র-তের-নদী-কালাপানির ওপারে এক সম্পূর্ণ বিদেশী ভাষার এগজটিক 'নাসিক্য'-ধ্বণিটা পর্যন্ত পরম বিশ্বস্ততা আর মমতায় যারা নিদারুন নির্ভুলতার সাথে প্রতিবর্ণায়িত করতে পারেন, তারা সেই তুলনায় অফিস থেকে বেরিয়ে প্রায় দু'পা বাড়ালেই সীমান্তের ওপারেই তাঁদের নিজ ভাষা ও বর্ণমালাতেই যারা নিজেদের নাম লিখেন - তাদের নামটা কেন সঠিক ভাবে বানান করতে এত অক্ষম - সেই রহস্যটা উদ্ঘাটন করবে কে ? আপনি তো (আপনার কথা মত) 'ক্যাচমেন্ট এরিয়ার' মানুষ, আপনি একটু চেষ্টা করে দেখুন না বের করতে পারেন কিনা ? আমি কিন্তু এই আনন্দবাজারীয়... ইয়ে... অতিজাগতিক সাইকোলজিটা বুঝতে খুবই আগ্রহী। আমার কাছে এটা খুবই মজার এবং আগ্রহোদ্দীপক বিষয় মনে হয়!
তবে, কোথায় যেন পড়েছিলাম অভীক সরকারের পিতৃপুরুষের আদি নিবাস নাকি বৃহত্তর সিলেটে ছিল। তাই সিলেটিদের মুখে শোনা একটা ইডিওম বারবারই এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে --
আমার ধারণা, দুনিয়ার কারো সাধ্য এই সিলেক্টিভ-স্বেচ্ছাঅন্ধত্ব নিবারন বা জাগরিত-নিদ্রাভঙ্গ করা। আমার মনে হয় আনন্দবাজারের সমস্ত অফিসিয়াল কম্পিঊটারে বিনামূল্যে বাংলাদেশি নামের-বানান স্বয়ংক্রিয় শুদ্ধিকারক কোন সফটওয়্যার ইনস্টল করে দিলে পরেও ভুল বানানটাই বেরোবে সেখান থেকে বারবার।
আপাতত এটাই আমার ওয়ার্কিং থিওরি। তবে 'ক্যাচমেন্ট এরিয়ার' ভেতরে থাকা একজন সহমর্মী হিসেবে আপনার কাছে আবদার রইলো আসল রহস্যটা যদি কোনভাবে ভেদ করতে পারেন - তাহলে যেন একটু চেষ্টা করে দেখেন এবং আমাদের জানান।
মনমাঝি
মনমাঝি ভাই, নাম বিকৃতির ব্যাপারে বলতে গিয়ে নামের বানান ভুল করলে ক্যাম্নে কী? বানানটা কৌস্তভ নয়, কৌস্তুভ (সুন্দর একটা অর্থও বোধ হয় আছে শব্দটার, মনে পড়ছে না) অধিকারী।
হিন্দির প্রভাব একটা বড় নিয়ামক হতে পারে।
আমারও প্যাটার্ণ দেখে সেরকমই মনে হচ্ছে, কিন্তু মূলে যে উন্নাসিকতা আছেই সে নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কিন্তু কিসের ভিত্তিতে? নামের বানানের এই উদ্ভট রীতি দেখে তাঁদের ভাষাজ্ঞান নিয়ে সংশয় না জেগে পারে না। আর এত দিনেও যাঁদের মূল সাইট ইউনিকোডেড হয়নি তাঁদের এই উন্নাসিকতা আরও বেশি বিরক্তিকর লাগছে।
-কুটুমবাড়ি
হ্যাঁ এটাই আনন্দবাজারের বৈশিষ্ট্য। তারা মানুষের নামের বানানের প্রতি যতটা উন্নাসিক বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ততটাই যত্নবান। পশ্চিমবঙ্গের নাম নিয়ে টানাটানি করলে ডিকশানারী নিয়ে টানাটানি শুরু করতে হয় বলে হয়ত সেটা তারা করেন না, তবে সুযোগ পেলে তারা সেটাও করে থাকেন তার কিছু প্রমাণ আমার কাছে আছে। বাংলা রাজ্য ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় সৌরাশীষ লাহিড়ী নিজের নামটা এভাবেই লেখেন, আনন্দবাজার লেখে সৌরাশিস। সৌরভ জীবনে কোনোদিন গাঙ্গুলী ছেড়ে গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছে বলে জানি না, কিন্তু আনন্দবাজার সেটাই লেখে। প্রতিবাদ? আনন্দবাজার তো মনোপলি, কে করবে প্রতিবাদ? বাংলাদেশের সাহিত্য যতটা "গ্রসরূট", পশ্চিমবঙ্গে ততটাই বাণিজ্য-কেন্দ্রিক। তাই সহজ কথায় - আনন্দবাজারকে বিশেষ কেউ ঘাঁটায় না। আমার সদ্য প্রাক্তন এমপ্লয়ার মাইক্রোসফটের সাথে আনন্দবাজারের খুব ভাল মিল আছে এ বিষয়ে। অনেকেই মাইক্রোসফটের সফটওয়ার ব্যবহার করেন - কতজনে ভালবেসে করেন আর কতজনে বিকল্পের অভাবে সেটার খুব হিসাব নেই।
এইবারে "কেন"-টার উত্তরে আসি। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন বাজারে একচেটিয়া বাণিজ্য করে গেলে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে গ্রাহকের আবেগের প্রতি আমার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এবং গ্রাহকেরা যাই মনে করুক না কেন, যেহেতু আমার প্রোডাক্ট বাজারে চলে তাহলে আমিও খুশী। এটাই উন্নাসিকতা আর এই রোগ থেকে আনন্দবাজারের নিকট ভবিষ্যতে মুক্তি নেই।
আনন্দবাজারের সার্কুলেশন নিয়ে লিখেছেন। এতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীর সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাসের প্রতিফলন ঘটে - আনন্দবাজারের গুণগত মানের নয়। আনন্দবাজারের কিছু কিছু গুণগত দিক ভাল অবশ্যই স্বীকার করি - সম্পাদকীয়/প্রবন্ধ/লেখার সাহিত্যমান আনন্দবাজারের ভাল কিন্তু ভাল সংবাদপত্র হবার জন্য এগুলো ছাড়াও অনেক কিছু লাগে।
এইবারে আসি উন্নাসিকতার সাথে নামের বানানের সম্পর্কে। এই পোস্টে বেশ কিছু কমেন্টেই পশ্চিমবঙ্গীয় বানানকে "ভুল" বলা হচ্ছে। আমি নিশ্চিত এই একই ধরণের কিছু ব্যক্তি আনন্দবাজারের সাংবাদিককুলের মধ্যে বহাল তবিয়তেই আছেন। তারা এই ভুল বানান সংশোধনের একচেটিয়া দায়িত্ব নিয়ে সব বানান পশ্চিমবঙ্গীয়করণ করেন আর যেহেতু সংবাদপত্রের আয়ে এর কোনো প্রভাব নেই তাই আনন্দবাজারের পরিচালক গোষ্ঠীর এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। তারা উন্নাসিকের মত এই অভ্যাস চালিয়ে যাবেন।
আরেকটা বিকল্প ব্যাখ্যা হতে পারে। আনন্দবাজারের ইউনিকোড ও আন্তর্জাল বিষয়ে যা দখল তাতে আমার ধারণা তাদের অফিসে কেউই ইউনিকোডে টাইপ করতেই পারে না। কার্যত বাংলাদেশের মানুষের নামের বানান তাদের লিখতে হয় ইংরেজী বানানের বাংলা-রূপ দিয়ে। যেহেতু বানানরীতি কিছুটা তারতম্য হতেই পারে, তাই বেশ কিছু বানানে ভুল আসে। ভুলগুলো সবই প্রায় স্বরবর্ণ-ঘটিত (আ কারের স্থানে অ-কার সবথেকে বেশী) বলে এরকম হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তবে এক্ষেত্রেও উন্নাসিকতা চোখে পড়ার মত। একচেটিয়া বাজার আছে বলে তারা নিজেদের টেকনলজিতে উন্নয়ন আনার কোনো প্রচেষ্টাই দেখায় না, অন্যের বানান ঠিক করা তো দূরে থাক।
তবে নামের বানান নিয়ে এইরকম কারিকুরী করা পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ অভ্যাস নয়। ছাত্রাবস্থায় কোনো ছাত্রকে অন্যের বানান ইচ্ছাকৃত ভুল লিখতে দেখিনি বা মাতব্বরি করে নামের বানান "ঠিক" করে দেবার প্রবণতা দেখিনি। একই ঘটনা শিক্ষকদের মধ্যেও দেখিনি। সুতরাং এই প্রবণতা সম্পূর্ণ আনন্দবাজার (পত্রিকা + আনন্দ পাবলিশার্সের বই) -কেন্দ্রিক। বাকি সকলেই বাংলা নামের হুবহু প্রতিরূপ দিতেই অভ্যস্ত।
সবশেষে একটা গল্প শোনাই। আমি যখন ক্লাস এইটে, তখন আমরা ভূগোল বই পড়ি দেবাশীষ মৌলিকের। তিনি ভূগোলের অধ্যাপক। একবার আনন্দবাজারে তার নামে একটা রিপোর্ট এসেছে - তিনি কোথায় গিয়ে কিসব বক্তৃতা দিয়েছেন। আবার একই পৃষ্ঠায় তার নাম এসেছে তার বই-এর বিজ্ঞাপনে। দুটো ভিন্ন বানান। বিজ্ঞাপনে আনন্দবাজার মাতব্বরি করে না, তাই সেখানে ওনার সঠিক নামই এসেছে। আর রিপোর্টে এসেছে দেবাশিস। বুঝতেই পারছেন, আনন্দবাজার কি জিনিস।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনার এই চমৎকার মন্তব্যটির মাধ্যমে অনেক কিছুই খোলাসা হলো। সেজন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানবেন।
তবে মাইক্রোসফট কিন্তু তার প্রোডাক্ট ক্রমাগত আপডেট করে, একচেটিয়া বাজার থাকা সত্ত্বেও। আবাপ যদি এতই বাণিজ-কেন্দ্রিক হবে তাহলে অলাভজনক (এবং ঝুঁকিপূর্ণ) বানানতত্ত্বগবেষণাটা ভাষাবিদদের জন্য ছেড়ে দেয় না কেন? এসব না করে নিজেকে আপডেট করার চিন্তা করলেই তো পারে!
১. গায়ক হাবিব এবং ক্রিকেটার মাশরাফি কোনো হেঁজিপেঁজি লোক নন, তাঁরা বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের অন্যতম। আনন্দবাজারের সাংবাদিক ঢাকায় আছেন, মাশরাফিরাও ভারতে যান প্রায়শই। আবাপের সাংবাদিকদের সাথেও এইসব তারকাদের সাক্ষাৎ হয় নিশ্চয়ই। তো, স্টোরি করার আগে এসব তারকার কাছ থেকে নামগুলো জেনে নিলে কী হয়?
২. হাবিব এবং মাশরাফিদের ইংরেজি নামের বানানটা habib এবং mashrafi. আবাপের সাংবাদিকরা ইউনিকোডে লেখার কৌশল না জানতেই পারেন যেহেতু (আপনার কথামতো) পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা এখনো ইউনিকোডে হাঁটেন না। তো, ওনারা গুগল ট্রান্সলেশনে habib/mashrafi-দের নামটা লিখে সার্চ দিয়ে উচ্চারণটা শুনে নিলেই তো পারেন! তা না করে মূল উচ্চারণের নামে বিকৃত বানানে নাম লিখে এসব তারকাকে খাটো করাটা কেন?
গুগল ট্রান্সলেশন সাংবাদিকেরা অন্তত জানেনা, আমি ১০০% নিশ্চিত। তারকাদের ক্ষেত্রে আপনি সঠিক, কিন্তু এদের কোনো সাক্ষাৎকার আনন্দবাজারে বেরোয়নি এখনও। মাইক্রোসফট ততটাই আপডেট করে যতটা করলে তার বাজারটুকু থাকবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ধরে নিচ্ছি আবাপের সাংবাদিকেরা টেকনিক্যালি এতখানিই চ্যালেঞ্জড যে ইউনিকোড বা গুগল ট্রান্সলেশন সম্বন্ধে কিছু জানেন না। ধরে নিচ্ছি বাংলা যে আন্তর্জালে পাওয়া যায় সেটাও তাঁদের দৃষ্টিসীমার বাইরে আছে এখন পর্যন্ত। ধরে নিচ্ছি তাঁরা যেসব নাম বিকৃত বানানে লিখছেন সেগুলোর ইংরেজি উচ্চারণটাও জানেন না। ধরে নিচ্ছি ওইসব নামের মালিকেরা তাঁদের নামগুলো কীভাবে উচ্চারণ করেন সেটা নিয়েও তাঁদের মাথাব্যথা নেই। তাঁরা শুধু নামগুলোর মূল উচ্চারণ অনুযায়ী প্রতিবর্ণীকরণ করতে চান, আবাপীয় বানানতত্ত্বগবেষণার মান রক্ষার্থে। তো, সেক্ষেত্রে তাঁরা নামগুলোর হিন্দি উচ্চারণকে বেছে নিচ্ছেন কেন যেখানে তাঁরাও জানেন শব্দগুলো আরবি ভাষা থেকেই এসেছে? অন্য সবক্ষেত্রেই 'মূল উচ্চারণানুগ' হবার এত প্রচেষ্টা যাঁদের, শুধু এইক্ষেত্রেই তাঁদের এই অনীহাটা কেন?
বাংলা বানান জানতে অনলাইন পত্রিকা ঘাটলেই হয়। এক্সপি সার্ভিস প্যাক ২ থাকলেই বাংলাদেশে সংবাদপত্র পড়তে পারার কথা। হেজেপেজি মন্ত্রীর নাম খুব সহজে না পাওয়া গেলেও সাহিত্যিকদের নাম, ক্রিটেকারদের নাম সহজলভ্য।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সমস্যাটা আন্তর্জালে নয়। আবা গোষ্ঠির বিভিন্ন প্রকাশনায় কবি শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, থেকে শুরু করে আরো অনেক এমন প্রথিতযশা বাংলাদেশি লেখক-সাহিত্যিক-শিল্পীর নামের বানান বিকৃত করা হয়েছে যাদেরকে ঐ গোষ্ঠীর সাথে জড়িত অনেক লেখক-সম্পাদকই ব্যক্তিগত ভাবেই চেনেন। এদের নামের বানান জানার জন্য তাদের আন্তর্জাল ঘাটার কোন প্রয়োজন দেখি না। তাছাড়া ইউনিকোডের কারনে যদি বাংলাদেশি নামের বানান করতে তাদের ইংরেজির উপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে ওরা ঐ একই ইংরেজির উপর নির্ভর করে দাঁতভাঙ্গা ফরাসী, আফ্রিকান, রুশ বা চৈনিক নামের বানান নির্ভুল ভাবে করে কিভাবে ?
আর এসব ব্যাপার তো আজকে থেকে চলছে না -- আমি অন্তত গত বিশ বছর ধরে এসব প্রতিবাদ ইত্যাদি শুনছি-পড়ছি। বিশ বছরেও (আসলে আরো অনেক বেশি হবে) যাদের চৈতন্যোদয় হয় না - তাদের হয় চৈতন্য বলে আদৌ কিছু নেই এবং কখনো ছিল না - যেটা এমন সফল ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য নয়, আর নয়তো চৈতন্য তাদের একেবারে টনটনেই আছে। অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটাই জেনেশুনে, সচেতন ভাবে, ইচ্ছাকৃত এবং উদ্দেশ্যমূলক ভাবেই করা -- সমস্ত প্রতিবাদ সত্ত্বেও। এমন আচরনের কারন প্রসঙ্গে পশ্চিম বঙ্গেরই এক লেখকের একটা দৃষ্টি-উম্মোচনকারী কঠিন মন্তব্য পরেছিলাম অনেক আগে - এখানে যার উল্লেখ করলাম না রেফারেন্স দিতে পারবো না বলে। তবে এটুকু আমার মনে হয়, এটা 'আন্তর্জাল' নয়, বানানের অভিধানের অভাব নয়, নয় স্রেফ 'উন্নাসিকতা' নয় - এর পেছনে নিশ্চিত ভাবেই এক ধরনের প্রচ্ছন্ন কিন্তু জটিল মানসিক বিকৃতি কাজ করছে। এই বিকৃতির প্রতিবিধান নেহাৎ প্রতিবাদ করে হবে না। এর প্রতিবিধানের একটাই মাত্র পথ - যে পথ সব ব্যবসায়ীই বুঝে -- বর্জন। আমরা যদি আনন্দবাজারীয় প্রোডাক্টগুলি বর্জন বা প্রবেশ নিষিদ্ধ করি, তখন ২০ বছরেও যা তারা বুঝেও না বোঝার ভান করে আছে - তা বুঝতে তাদের ২০ সেকেন্ডও লাগবে না। আনন্দবাজারের কিন্তু এইভাবে বুঝার ইতিহাস আছে। নীরদ চৌধুরীর ঐ ঘটনার পর 'দেশ' পত্রিকা বেশ কিছুদিন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল, তখন ঐ এক ধাক্কায় সাপ্তাহিক দেশ পাক্ষিক হয়ে গিয়েছিল যদ্দুর মনে পড়ে। পরে অনেক হাতে পায়ে ধরে নিষেধাজ্ঞা তুলতে সমর্থ হয়। তবে শিক্ষা বোধহয় তখনই হয়েছিল। কয়েক বছর আগে (আগের বারের আওয়ামী আমলে সম্ভবত) ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের আওয়ামী-দাবীকৃত ভূমিকা নিয়ে খুব সম্ভবত বদরুদ্দিন উমরের একটা নেতিবাচক লেখা আবাপ গোষ্ঠির কোন একটা প্রোডাক্টে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে দেখা যায় (এ কথাটা আমার শোনা মাত্র) ভারতীয় সংস্করনে লেখাটা আছে - কিন্তু বাংলাদেশেরটায় নাই। এনিয়ে তখন তাদের বেনিয়াবৃত্তির অনেক সমালোচনা হয়েছিল এখানে। মোদ্দা কথা হলো, এসব সেন্সিটিভিটি তারা প্রচণ্ড ভালো ভাবেই বুঝে ও জানে - আন্তর্জাল-টান্তর্জাল কোন ব্যাপারই না। তবে তারা এদেশে মিলিটারি ডিক্টেটর, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাসীন পলিটিশিয়ানদের 'সেন্সিটিভিটি'টাই মূল্য দেয়, আসল ভোক্তাদেরটা না। সেটা যাতে দেয়, সেই ব্যবস্থা না করতে পারলে কোন প্রতিবাদ বা হাই-কমিশনেও কোন কাজ হবে না।
মনমাঝি
আপনার এই ব্যাপারে আমি ১০০% একমত, কোনোভাবে তাদের লাভে হাত দেওয়া গেলে অনায়াসে এই অভ্যাস থামানো যায়। শামসুর রাহমানের নাম নিয়ে আনন্দবাজারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এইটা আমি সঠিক শিখলাম সচলায়তনে আসার পরে। আমাদের মাধ্যমিক পাঠ্যবইতেও রহমান ছিল এবং ওই বানান লিখেই পরীক্ষাও দিয়েছি। উৎস হয়ত সেই আবাপ, কিন্তু শিকড় এতদূর গড়িয়ে গেছে যে সমূলে উৎখাত করার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা দরকার। এই বিষয়টা অন্তত হাইকমিশনের নজরে আনা উচিত।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
একমত।
অথচ একসময় আনন্দ পাবলিশার্সের বইয়ের কী ভক্তই না ছিলাম! স্কুল লাইফটা কোনো রকমে সেবার তিন গোয়েন্দা আর কিশোর ক্লাসিকে ভর করে পার করে দিলেও কলেজে ওঠার পর বিশাল শূন্যতা! মাসুদ রানা মাসে একটা বেরোয়, ও তো দু ঘণ্টাতেই শেষ! হুমায়ুন আহমেদ লিখেন ভালো, কিন্তু সে তো চটি সাইজের বই! কী করা কী করা! এই সময় পেলাম আনন্দ পাবলিশার্সের খোঁজ! 'সেই সময়', 'পূর্ব-পশ্চিম', 'দূরবীন' এগুলো কি আনন্দ পাবলিশার্সের বই নয়? একেকটা বই ইটের মতো সাইজের, আহ, কী অফুরন্ত মজা! কোথা দিয়ে দিন যায় কোথা দিয়ে রাত টেরই পেতাম না। তবে সেসব দিন এখন গেছে। কিশোর-তরুণদের হাতে এখন সময় কাটানোর অঢেল সুযোগ। বাংলাদেশে আনন্দ পাবলিশার্সের একসময়কার সেই রবরবাও আর এখন নেই বোধ হয়। প্রকাশনার সংখ্যা ও মানের দিক থেকে বাংলাদেশও এখন অনেক এগিয়ে গেছে। ফলে আমরা পাঠকরা আর আনন্দ পাবলিশার্সের ওপর নির্ভরশীল নই। আমরা চাইলেই তাঁদের বর্জন করতে পারি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবেন কে? মানে আমাদের মোড়লদের মধ্যে সেই সাহস কই যে আনন্দ পাবলিশার্সের বই বর্জন করতে আহ্বান জানাবে!
এটা মনে হয় 'সাহসের' ব্যাপার না - সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লাভালাভের লোভের ব্যাপার।
মনমাঝি
কী জানি! আমার কাছে তো অমনই মনে হয়। তা ছাড়া লাভালাভের লোভ ত্যাগ করতেও তো সাহসের দরকার হয়, তাই না?
ঠিক নয়, বাংলা আন্তর্জালে যে পাওয়া যায় সেটাই অনেকে পশ্চিমবঙ্গে জানে না
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বাংলা আন্তর্জালে পাওয়া যায় এবং এর সিংহ ভাগ অবদানই বাঙালদের এটা আবাপ যেদিন জানতে পারবে তাঁদের প্রতিক্রিয়াটা কেমন হবে বলে মনে করেন?
স্যরি! আসলেই ভুল হয়ে গেছে! আশা করি কৌস্তুভ ভাই মাইন্ড খাবেন না।
তবে আনন্দবাজারীদের সাথে একটু পার্থক্য আছে বোধহয় - এটা ইচ্ছাকৃত নয়, এবং ভুল বুঝতে পারলে আমি সেটা স্বীকার ও সংশোধন করতে পিছপা নই।
মনমাঝি
মনমাঝি
সর্বনাশ, আমি তো এতকাল ভুল বানানেই আপনাকে সম্বোধন করে এসেছি। সরি কৌস্তুভ ভাই।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনার যুক্তিগুলে করলুম ভক্তি,আপ্নার প্রতিবাদটি হোক শক্তি
-আক্ষরিক অভিলাষ
টিট ফর ট্যাট করি-
মমতা বন্দে পাদ দেয়
সুনিল গাংগে পাদ দেয়
হেমন্ত মুখে পাদ দেয়
-----------------------------
অনঘ
তার চেয়ে বরং বঙ্কিম চন্দ্রের কথাই রিপিট করি-
"তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?"
অথবা সেই বিখ্যাত দুটি চরণ স্মরণ করি-
আবাপের কাজ আবাপ করেছে কামড় দিয়েছে পায়
তাই বলে কি নাম ভাঁড়ানো আমাদের শোভা পায়?
কিছু কথা-
ট্যাগে আনন্দবাজার যোগ করেন।
শিরোনামটা আরেকটু সোজা সাপ্টা করলে ভালো হত। যেমন: আনন্দবাজারের বিচিত্র বানানরীতি
কয়েকটা ছবি পোস্ট করে দেন উদাহরণ সমেত।
পোস্টে
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আপনার সাথে আমিও একমত, স্ক্রিনশট দিয়ে আবাপীয় বানানতত্ত্বগবেষণার উদাহরণসমেত পোস্ট দিতে পারলে ভালো হতো। ট্যাগ আর শিরোনামের ব্যাপারটাও মিস্টেক হয়ে গেছে। যাকগে, এখন আর সেগুলো এডিট করার সুযোগ নেই বোধ হয়। তবে ভবিষ্যতে আপনার পরামর্শ মাথায় রাখব।
ও, আরেকটা ব্যাপার, আনন্দবাজারের 'ক্যাচমেন্ট এরিয়া'য় আমরা বাংলাদেশিরা পড়ি না, সুতরাং তাঁদের বিচিত্র বানানরীতি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথাও থাকা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা যদি বাঙালির নাম বিকৃতি অব্যাহত রাখেন তাহলে প্রতিবাদ তো করতেই হবে।
বিদেশী ধ্বনি ও বর্ণসম্ভারের সাথে বাংলা বর্ণসম্ভারের যে মিল নেই, ইত্যাদি তথ্য আনন্দবাজারের মহামহিম সম্পাদকেরা না জানলেও সচলের পাঠকেরা জানেনই। অতএব এবম্বিধ আলোচনা আপনার পণ্ডশ্রম হয়েছে। তারচেয়ে (ফাহা ভাইয়ের পরামর্শমত) আনন্দবাজারীয় বানানতত্ত্বগবেষণার অত্যাধুনিক কিছু প্রোডাক্টের স্ক্রিনশট দিয়ে সচলপাঠকদের তাঁদের উদ্ভাবনশক্তির বিস্তার সম্বন্ধে অবগত করলেই বুদ্ধিমানের কাজ হত।
ও, ভাল কথা, বস্তুটির নাম 'আনন্দবাজার পত্রিকা', ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ নয়কো...
আমাকে বকা দিলেন?
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
কোথায়? সহমতই জানালাম তো!
আবাপীয় বানানতত্ত্বগবেষণা অবাঙালিদের জন্যই যথার্থ হবে। তাঁরা বাংলা পড়বেনও না, জানবেনও না তাঁদের নাম কাঁটাছেঁড়া করে কী বস্তু দাঁড় করানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশিরাও যে বাঙালি এটাও আবাপ গোষ্ঠীকে বুঝতে হবে। আমি বরং আনন্দবাজারীয় গোষ্ঠীর সুমতি ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকতে চাই।
দুঃখিত, আবাপ মানে 'আনন্দবাজার পত্রিকা', এটা আমারই বোঝা উচিত ছিল।
পশ্চিমবঙ্গের ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার নাম সমকালের পাতায় আসে রাজ্জাক মোল্লা হিসাবে। আনন্দবাজারের কাজটা কি বাংলাদেশে সমকাল করে?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বাংলাদেশের বাংলা একাডেমী এই নিয়ে একটা লিস্টিং দিতে পারে না? প্রচলিত নামের বানান গোছের কিছু একটা। তাহলে লোকে রজ্জাক, রাজ্জাক আর রেজ্জাক না লিখে একই বানান লিখতে পারে। আমার স্কুলের বন্ধুরাও রজ্জাক আর সইফুল লিখত।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বাংলাদেশে রজ্জাক, রেজ্জাক বা সইফুল নামের লোক হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে। তবে রাজ্জাক বা সাইফুল নামের লোক অহরহই মিলবে।
এখানে প্রতিষ্ঠানের বানানরীতি মেনে কেউ বাচ্চাদের নাম রাখবেন এমনটা ভাবাই যায় না। অন্তত আমার মনে হয় না বাংলা একাডেমীর কিছু করার আছে এ ব্যাপারে।
অথচ পশ্চিমবঙ্গে লোকে সইফুর আর রজ্জাক লেখে। এবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কিছু প্রার্থীর নাম দেখতে পারেন - সইফুর রহমান, আব্দুর রজ্জাক , নঈমুদ্দিন শেখ , মোর্তাজা হোসেন, জাহির আলম । বাংলাদেশের প্রচলিত নামের বানানে এদের নামগুলো ভুল বানান। এদের নামগুলো বাংলাদেশের মিডিয়ায় এলে কি বানানে আসবে বলে মনে হয়?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নামের বানানের প্রচলিত ভুল ঠিকের মান বলে কিছু আছে বলে কখনো শুনিনি। শুনিনি বলতে, হুমায়ূন সঠিক, হুমায়ুন ভুল। যে যার নাম যেভাবে ঘোষণা করে, তাকে সে নামে ডেকে লিখে সম্মান করাই নিয়ম। আপনার কি মনে হয় কি বানানে আসা উচিত বাংলাদেশের মিডিয়ায়?
প্যাটার্নটা লক্ষ করুন। সবগুলো নামেই হিন্দি উচ্চারণকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যদিও সেগুলো মূল আরবি ভাষা থেকে নেয়া। বুফন/ডুজন নামের ক্ষেত্রে আবাপ গোষ্ঠী ইংরেজি/জার্মান উচ্চারণকে পাত্তা না দিয়ে মূল ফরাসি অনুযায়ী বুফঁ/ডুজঁ লিখে। বেশ, ভালো কথা। ঠিক একইভাবে মূল আরবি অনুযায়ী সাইফুর, রাজ্জাক, নাঈমুদ্দিন, মুর্তজা লেখাটাই কি ভালো নয়? কিন্তু আমরা তো সে দাবি তুলছি না। আমি নিশ্চিত, কেউ নিজের নামের বানান সইফুর রহমান, আব্দুর রজ্জাক, নঈমুদ্দিন শেখ, মোর্তাজা হোসেন, জাহির আলম লিখলে বাংলাদেশের মিডিয়াতেও নামগুলো সেভাবেই আসবে। অন্তত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কেউ নামগুলো বিকৃত করতে শুরু করবেন বলে মনে হয় না। আর যদি সেরকমটি কেউ করেও, বাংলাদেশের মানুষই সবার আগে প্রতিবাদ করবে এইটুকু আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন।
-কুটুমবাড়ি
আমি প্রতিবাদের বিষয়টা নিয়ে কিছুটা আশাবাদী আবার কিছুটা নইও। আশাবাদী এই কারণে যে আপনি ইউনিকোডেড বলে চাইলে সঠিক বানানগুলো খুঁজবেন। আশাবাদী নই এই কারণে যে খুঁজেও আপনি পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালীর নামের বানান নাও পেতে পারেন কারণ পশ্চিমবঙ্গ এখনও ইউনিকোডে হাঁটে না। যে হারে দলে দলে নতুন প্রজন্ম ইংরেজী মিডিয়ামে যাচ্ছে তাতে পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলা হরফে আন্তর্জালে নিকট ভবিষ্যতে নাও আসতে পারে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনি আশাবাদী হতে পারেন এই কারণে যে এখানকার মিডিয়া নামের বানানশুদ্ধির কথা চিন্তাও করতে পারে না। তাই পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালির নামের বানান ইউনিকোডে পাওয়া যায় না এই অজুহাত এখানে কেউ মানবেন বলে মনে হয় না। বাঙালি যখন, অবশ্যই তাঁর নাম বাংলাতেও লেখা হয়, কাজেই বাংলা পত্রিকায় তাঁর নাম ছাপানোর আগে সাংবাদিকরা সেই নাম খুঁজে বের করবেন এমনটাই ধারণা করা হয় এখানে। কদাচিৎ ব্যতিক্রম যে হয় না তা নয়, তবে ব্যতিক্রম তো ব্যতিক্রমই। অন্তত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কেউ এ ধরনের অপকর্ম করে এখানে পার পাবেন বলে মনে হয় না।
সমকাল পশ্চিমবঙ্গের নামের বানান ভুল সিস্টেমেটিকালি করে কিনা জানা নেই। সমকালে নামের বানান ভুলের সংখ্যা ঠিক কতোভাগ?
এর বিপরীতে আনন্দবাজারের নাম বিকৃত করার মোটামুটি ওদের সংস্কৃতি হিসেবে দাড়িয়ে গেছে। সার্চেবল কন্টেন্ট হিসেব করলে পশ্চিমবঙ্গের নাম থেকে বাংলাদেশের নামগুলো সহজলভ্য। কোন একটা পত্রিকা খুলে একটু খোজাখুজি করলেই হয়। আমি ৪ বছর আগে আনন্দবাজারের বানান নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। এখানে পেস্ট করে দেই। পড়ে দেখতে পারেন। অবস্থা এতোদিন এতটুকুও বদলায়নি।
কনফুসিয়াসের পোস্টে কয়েকদিন আগে জানলাম কোলকাতার এক ভদ্রলোক বাংলাদেশ চন্দ্রবিন্দু বিসর্গ এসব নাকি উঠিয়ে দিয়েছে বলে এরশাদ করেছেন । সাথে সাথে এটা যে দুষ্টমতি মুসলমানদের বানানকে মুসলমানি করার চেষ্টা সেটাও ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছেন । যাই হোক আমি আগ্রহী হয়ে অনেকদিন পরে ওদের সাইটগুলোতে ঢুঁ মারার চেষ্টা করলাম । দেখলাম আনন্দবাজারের সাইট এখনও সেই পুরনো বিটস্ট্রিমের টেকনোলজি ব্যবহার করে । বাংলাদেশে যেখানে এমনকি দিনকালের সাইটও ওদেরটা থেকে দেখতে ভালো । যাই হোক বিষয় সেটা না । ওরা আমাদের এখানের ডেভেলপারদের কাছ থেকে কিছু শিখবে না এটা প্রতিজ্ঞা করেই সাইট খুলেছে । ওটা পুরোটাই ওদের ব্যাপার । কাউকে কখনই জোর করে কিছু শেখানো সম্ভব না ।
ধাক্কাটা খেলাম তখনই যখন তাদের নিউজ পড়তে বসলাম । আর্কাইভ খুজে বের করলাম বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড খেলার খবরটা । পুরোটাই পজেটিভ ফ্লেভারে লেখা একটা নিউজ । ১১ জন খেলোয়াড়ই এখানে বাঙ্গালী সেটাও বলা হয়েছে । পড়তে ভালোই লাগছিলো । মেজাজটা বিগড়ানো শুরু হলো তখনই যখন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের নামগুলো দেখলাম । একটা লিস্ট দেই দেখেন ।
[i]তামিন ইকবাল
মোশারফ মোর্তাজা
আব্দুর রজ্জাক
জাভেদ ওমর
এখানে একমাত্র জাভেদ ওমরের নামটা ঠিক আছে । বিদেশীদের নাম লেখায় ওদের বানানরীতি কিছুটা উদ্ভটই মনে হয় আমার কাছে । যেমন ভেট্টোরীকে ওরা লেখে ভেত্তোরী । তা সেটা তারা লিখতেই পারে । হাজার হোক ভেট্টোরী তার নামের বানানটা বাংলাটা কি হবে সেটার নির্দেশনা কোথাও দেননি বলেই আমার ধারনা। কিন্তু বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের নামের বানানটা কি হবে সেটা তো আমাদের যেকোন পত্রিকার সাইট খুললেই দেখা যায় । এখানে দুটো সম্ভাবনা হতে পারে, এক তারা বাংলাদেশের কোন নিউজপেপারের থোড়াই কেয়ার করে । অথবা বাঙালদের কোন নিউজপেপার ইন্টারনেটে আছে বলেই তারা জানে না । কোনটা সত্য ওরাই বলতে পারবে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আরেকটা সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে আমার মাথায়। হয়তো তাঁরা বাংলাদেশিদের নামকে ভুল মনে করেন, তাই সংশোধনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
ভাইজান, আমিও আপনার সাথে একমত। শুধু আনন্দ বাজারই নয়; পশ্চিম বাংলার বলতে গেলে ৯০% পত্রিকা এবং বাংলা নিউজ চ্যানেলগুলো বানান বিকারে আসক্ত। তাদের পত্রিকাগুলো পড়তে গেলে বাংলাভাষার গতিপ্রকৃতি আর আদল নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগে। আমাদের কর্তৃপক্ষের অবশ্যই উচিত তাদের এহেন ঘৃণ্য কর্মের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া। কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশনে কি কখনোও আনন্দবাজার পত্রিকা যায় না, সংস্কৃতি বিনিময়ের অন্যতম সেতুবন্ধন রচনার জন্যই তো কলকাতার হাইকমিশন। ওপর বাংলার পত্রিকায় বাংলাদেশী নাগরিকদের নাম নিয়ে ছেলেখেলা খেলবে আর আমাদের হাইকমিশন চেয়ে চেয়ে দেখবে। তা তো হয় না।
আমি মূল লেখায় অথবা মন্তব্যে কোথাও বলিনি যে পশ্চিমবঙ্গবাসী বানান বিকারে আসক্ত। আমাদের সাথে পশ্চিমবঙ্গের বানানরীতিতে কিছুটা পার্থক্য থাকতেই পারে, এই নিয়ে আমাদের মাথাব্যথাও নেই। তবে আমার মতে বাংলাদেশিরাও যেহেতু বাঙালি, তাই তাদের নাম নিয়ে ছেলেখেলাটা বন্ধ হওয়া উচিত। কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশন কিছু ভূমিকা রাখতে পারত এ ব্যাপারে, কিন্তু তাঁরা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ। দেখা যাক সামনের দিকে কী হয়। আমি আশাবাদীদের দলেই থাকতে চাই।
নতুন মন্তব্য করুন