১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ আর পরবর্তী কয়েকদিনে চট্টগ্রামের লালখান বাজারে পাক বাহিনী, তাদের দোসর আর বিহারীরা মিলে হত্যা করে প্রায় আড়াই হাজার বাঙালী। আমরা বাংলাদেশীরা গোল্ডফিস মেমোরি জাতি। তাই, সহজেই ভুলে যায় অতীতের কথা। লালখান বাজারে বসবাসরত বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই জানে না এই নিশৃংস গণহত্যার কথা।
মার্চের শুরু হতেই স্বাধীনতা আন্দোলনের জোয়ারে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো চট্টগ্রাম।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার সাথে সাথে ফুঁসে উঠে চট্টগ্রাম। লালখান বাজার চট্টগ্রাম শহরের মাঝামাঝি হবার কারণে লালখান বাজার, পার্শ্ববর্তী ওয়াসা, দামপাড়া পুলিশ লাইন, টাইগার পাস এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেদিনই দামপাড়া পুলিশ লাইনের বাঙালী পুলিশরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাঙালীরা তাদের সর্বস্ব দিয়ে এগিয়ে আসে পুলিশদের সহায়তায়।
২৭ মার্চ লালখান বাজার এলাকার পানি-বিদ্যুৎ সরবারাহ বন্ধ করে দেয় পাকি প্রশাসন। সেদিন রাতে পাকি সেনারা লালখান বাজারের দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করে।
২৮ মার্চ দামপাড়ায় পাকি সেনা আর বাঙালী পুলিশ বাহিনীর মধ্যে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পাকি হায়েনা বাহিনীর সামনে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি হালকা সাধারণ অস্ত্রে সজ্জিত বাঙালী পুলিশ বাহিনী। প্রচুর বাঙালী পুলিশ সদস্য শহীদ হন। হতাহতের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টিকিয়ে রাখতে না পেরে লালখান বাজার এলাকার মানুষের সহায়তায় দামপাড়া পুলিশ লাইনের পিছন দিয়ে লালখান বাজারের পাহাড় টপকে পালিয়ে যান অবশিষ্ট বাঙালী পুলিশ সদস্যরা। সেদিনই বিকেলে পাক বাহিনী দখল করে দামপাড়া পুলিশ লাইন।
২৯ মার্চ দুপুরে ওয়াসার মোড়ে পাকি সেনারা আচমকা গুলি করে ১০-১২ জন বাঙালীকে হত্যা করে। আতংক ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে সব জায়গায়। থমথমে নীরবতায় ঢাকা পড়ে পুরো এলাকা, যেন মৃত্যুদূত ঘিরে আছে চারদিক। এরমাঝে পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।
পরদিন ৩০ মার্চ সকালে লালখান বাজার এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে ওয়াসার মোড়ের কল হতে পানি দেয়া হচ্ছে। গুজব ছড়িয়ে যাবার পর লালখান বাজার এলাকার অনেকেই পানি আনতে ওয়াসার মোড়ে জড়ো হতে থাকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ শুরু হয় পাকি বাহিনীর গুলি বৃষ্টি। লুটিয়ে পড়ে শত মানুষ। মুহুর্তেই লাল হয়ে যায় আশপাশ সবকিছু। পানি আনতে গিয়ে শহীদ হলেন কয়েকশত মানুষ।
সেদিন দুপুর হতে পাকিরা পরিকল্পনামাফিক বাঙালী নিধন করা শুরু করে। বাঙালী দেখা মাত্রই গুলি করতে থাকে পাকি বাহিনী।
সন্ধ্যা হতে শুরু হয় মৃত্যু তান্ডব। স্থানীয় বাঙালী বেজন্মা দালাল আর স্থানীয় বিহারীদের সহায়তায় পাকিরা অনেক বাঙালীকে ধরে নিয়ে যায়। এঁদের অনেকের লাশ পাওয়া যায় বাটালী হিলের ঝোপে-নালায়। অনেকের আর কোন হদিস মেলেনি।
একাত্তরের পরবর্তী নয় মাস লালখান বাজার এলাকা পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে; আযরাইল যেন বাসা বেঁধেছিল আশেপাশে।
স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে। আমরা সব ভুলে গেছি। ভুলে গেছি ৩০ মার্চ, ১৯৭১-এ পানি আনতে গিয়ে লালখান বাজারে পাকিদের হাতে নিমর্মভাবে খুন হওয়া শতাধিক শহীদকে। ভুলে গেছি ৩০ মার্চ ও তার পরের কয়েকদিনের পাকিদের বাঙালী-হত্যা উৎসব। ভুলে গেছি বলেই আমরা আজ বলতে পারি We Forget Everything, ভুলে গেছি বলেই বুকে পাকিদের পতাকা আঁকতে পারি।
লালখান বাজারের শহীদদের কথা ভাবি।
পানিতে কেমন যেন রক্তের নুনতা স্বাদ, লাশের গন্ধ।
আমরা বড্ড বেঈমান জাতি।
মন্তব্য
http://www.amarcharpash.com/2011/04/blog-post.html এটা কি আপনার ব্যক্তিগত ব্লগ?
জ্বী।
খুব বেশি হৃদয়স্পর্শী ঘটনা, বলতে খুবই খারাপ লাগছে কিন্তু এ ইতিহাস আমি জানতামই না ....
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি মানতেই হচ্ছে।
পথখোঁজা পথিক
শহীদদের আত্মা শান্তি পাক। তাঁদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়।
লালখান বাজার এলাকায় শহীদদের স্মরণে কী কোন স্মৃতিসৌধ আছে? থাকলে একটা ছবি দিয়ে দেবেন পোষ্টের সাথে। আমি কখনো চট্টগ্রাম যাইনি তাই কৌতুহল হলো দেখার। আপনার পোষ্টের সাথে এর উৎসের(রেফারেন্স) উল্লেখ থাকলে ভালো হয়। লালখান বাজারের শহীদদের প্রতি থাকলো অসীম শ্রদ্ধা
- আয়নামতি
০১। রণাঙ্গণে সূর্যসৈনিক-সাখাওয়াত হোসেন মজনু।
০২। মুক্তিযুদ্ধের দু'শো রণাঙ্গন-মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি।
ভালো থাকবেন।
"আমরা বড্ড বেঈমান জাতি।
আমাদের গোল্ডফিস মেমোরি......
তাই সবই ভুলে যাচ্ছি............
শহীদদের আত্মা শান্তি পাক।
তাঁদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়।
আপনার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ।
ধন্যবাদ।
শ্রদ্ধা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।
শ্রদ্ধা
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।
...........................
Every Picture Tells a Story
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।
লালখান বাজারের খুব কাছেই আমার বাড়ি, অথচ এই ঘটনা আমি জানতাম ই না।
শহীদ দের প্রতি শ্ব্রদ্বা।
- বহিরাগত
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।
আমি জাতীয়তায় ইন্ডিয়ান।
বাংলাদেশে রবিতে চাকরি করি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এর প্রতি রইলো শ্রদ্ধা।
সকল সহিদদের প্রতি রইলো হাজার সালাম।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন