কেউ নেই, কিছু নেই, তবু মুখোমুখি এক আশাতীত ফুল আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৬/০৪/২০১১ - ৩:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক সপ্তাহ থেকে এমন মেঘলা আর বৃষ্টি বৃষ্টি যেন বর্ষাকাল চলছে। এসময় কালবৈশাখির। কিন্তু দিনগুলি দেখে কেবল-ই মনে হচ্ছে জুন-জুলাই বা অগাস্ট মাস।যেন এখনি ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নামবে আকাশ-বাতাস আর মন অন্ধকার করে।

হরতালের দিন। অফিসে বসেই মন উসখুস করছিলো। সাড়ে পাঁচটায় বের হয়ে যাব করতে করতে সাড়ে ছ’টা বাজালাম। নিচে নেমে দেখি মেঘলা সন্ধ্যা। রাস্তায় রিকশাও কম। অস্থির লাগছিলো। ঘরে ফিরতে একদম-ই মন চাইলো না। পার্লারে ফোন দিলাম, খোলা আছে কিনা। কিন্তু ৮ টার আগে পৌঁছুতে পারবো কিনা এই ভাবতে ভাবতে বাসায় যাবার রিকশা ধরালাম।

ঘরে ঢুকে আয়নায় টিপ খুলে রাখতে রাখতে আরো অস্থির লাগতে শুরু করে দিলো। ব্যাগটা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম মোবাইলের বোতামে আঙুল বোলাতে বোলাতে। মিনিট দশেকের মাথায় সিদ্ধান্ত হয়ে গেলো – গন্তব্য মিরপুর, উপলক্ষ্য কোন একজন-কে চমকে দেয়া।
মিরপুরের এক একটা জায়গার নাম কেমন যেন অদ্ভুত। সাড়ে এগারো-এটা কোন নাম হ’লো? পাশে হলুদ জামা পরে মিষ্টি চেহারার ১৪-১৫ বছরের যে মেয়েটা বসে ছিল, ড্রাইভার-কে বলছিলো তাকে যেন ‘অরিজিনাল দশে’ নামিয়ে দেয়া হয়। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি করেন। মৃদু হেসে জানালো গার্মেন্টসে চাকরি করে। আমার স্বভাবসুলভ, দশ মিনিটেই তার অনেক তথ্য জেনে গেলাম। শরিয়তপুর থেকে এসেছে, শ্যাওড়াপাড়ায় ফুপাতো বোনদের সাথে বাসা নিয়ে থাকে। আজ রাতে তার নাইট শিফট, ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ডিউটি। কাল সারাদিন ঘুমাবে-আর সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার......ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছে... তারপর গ্রামের আরো দুজনের সঙ্গে ঢাকায় আসা।
রাস্তা একদম ফাঁকা, যেতে লাগলো মাত্র চল্লিশ মিনিট! তখন হাওয়া থামিয়ে টিপ-টিপ বৃষ্টি পড়তে শুরু করে দিয়েছে।আমি আর সাথে থাকা বন্ধুটির সাড়ে এগারোতে নামবার মিনিট বিশেকের মাথায় বৃষ্টির তোড় বেড়ে গেলো।যে তৃতীয় মানুষটার জন্যে আসা, সে এসে পৌছুলো আরো দশ মিনিট পর।
মিরপুর থেকে বিশ্বকাপ এর ছুতোয় মনে হয় টং এর চা দোকানগুলি উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এইখানে গ্রামীন অফিসের সামনে চ্যাফি(কফি মেশানো চা) খেতাম। একটা দোকানও পেলাম না। নাকি বৃষ্টি-হরতাল আর সন্ধ্যার জন্যে টং গুটানো? হালকা বৃষ্টির ছাঁট গায়ে লাগিয়েই রাস্তায় হাঁটছিলাম তিনজন।
বৃষ্টি বাড়তে থাকায় মিরপুরবাসি বন্ধুটির গাড়িতে ফের সওয়ার হলাম। মিনহাজ (চালক) ভাই এই রাস্তা অই রাস্তা করে একসময় হাজির করলো কমার্স কলেজের সামনে। ক’দিন আগেই পত্রিকায় কাভারেজ দেখেছি শুধু চা নিয়ে করা নতুন একটা রেঁস্তরা’র। শ্রীমঙ্গল টি। সামনে পেয়ে নেমে পড়লাম। সরু খাড়া সিঁড়ী বেয়ে ওঠার পর দেখি আমরা তিনজন-ই এ বেলার ক্রেতা। জায়গাটা খুব পছন্দ হয়ে গেল।মেঝে জুড়ে শীতল পাটী, শিকড় –এর ওপর গ্লাস বসিয়ে টেবিল আর বেতের ছোট ছোট টুল, এক পাশে নীল সোফা।যদিও চা-বিশারদ নই একেবারেই, শ্রীমঙ্গলে এর আগে পাঁচ লেয়ারের চা খেয়ে জানা আছে দেখতে মজার হলেও এই চা খুবি বিস্বাদ। ৫ রকমের চা চেখে দেখলাম, সাত লেয়ার চা পুরো অন্যরকম লাগলো।একটা কফি মেশানো, একটা কমলা ফ্লেভার, অন্যটা মধু দেয়া- আলাদা করে স্বাদ বোঝা যায়।
আমরা টুল ছেড়ে মেঝে তে বসে গেলাম আয়েশ করে। বাইরে ঝমঝমে বৃষ্টি তখন। দেয়ালে মুখোশ, ছাদ থেকে ঝুলে থাকা বাঁশের ল্যাম্পশেড গড়িয়ে মৃদু আলো, সবুজ দেয়াল ঘন সবুজে মিশে গেছে মেঝের কাছাকাছি এসে। কাঁচের দেয়ালে পিঠের আলতো হেলান। সামনে দুটো প্রিয়মুখ, আর মনজুড়ে অসংখ্য কাটাকুটি খেলা।

অল্প পরে মধ্যবয়সী এক দম্পতি আর তাঁদের দুই আত্মীয়া এলেন। ভদ্রমহিলা বসেছিলেন আমার মুখোমুখি- নীল সোফায়। তাঁর চেহারা দেখে কেমন যেন চমকের মত লাগলো-একটা মুখ মনে পড়ে গেলো। জানি খুব অদ্ভুত- এবং খুবি অবিশ্বাস্য-আর কিছুটা পাগলামোর মতই লাগে-যে মুখ কখনো দেখিনি বা দেখবার কোন সম্ভাবনাও নাই- শুধু সন্তানের মুখের অবয়ব মিলিয়ে সেই মুখটুকু কল্পনা থেকে এনে যোগসূত্র করার চেষ্টা করছি। কি যে অসুস্থ মানুষের মত এক মুখ মনে করে দিন আর দিকভ্রান্ত হচ্ছি। মুহূর্তে আমার সব ভ্রান্তির মত লাগে- স্বপ্ন-কল্পনা, অতীত, বাস্তবতা, ভবিতব্য আর...... আর কিছু অজানা- অধরা- অনুভূতি আমাকে আরো একটু বেশি অসুস্থ করে দেয়- অস্থির করে দেয়। এ এক মনোরোগ, আমি জানি।

ভদ্রলোক মাথা ঘুরিয়ে ঘুরেয়ে আমাদের দেখছিলেন, ভদ্রমহিলাও। কি ভাবছিলেন জানিনা। হয়তো রাত দশটায়ও সন্তান বয়সী আমাদের আড্ডায় পড়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হচ্ছিলেন, হাহা...... জানিনা...... নিজের মা-কে ভেবে বলা।

যাপিত দিন শেষ হলেই অতীত হয়ে যায়। সময় তার গতিতে চলে। এক একটা স্টেশনে এক একটা মানুষ কিংবা দল সঙ্গী হয় সাদাকালো আর রঙ্গীন এই পথচলায়। পুরোনো পছন্দের মুখ কি কখনো নতুন করে ফিরে আসে? নতুন কোন পথচলায় কি সাথী হয়? জানি প্রিয় বন্ধুটি ক্ষেপে যেতো এ-ই শুনলে...... অতীতবাদি চিন্তা!

রাত বারোটায় বাসায় ঢুকতে হবে আজকেও। কি বলে সামাল দেবো-অতীতবাদি চিন্তা ছেড়ে হয়তো এই ভাবনাই এখন বাস্তবসম্মত।


মন্তব্য

সৈয়দ আফসার এর ছবি

চলুক

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

অপরজন এর ছবি

মাঝে মাঝে আপনাদের এই ঢাকাকে চিনতে পারি না, বড় বদলে যাচ্ছে শহরটা। ভালো লাগলো আপনার দিনপঞ্জি নাম না দেওয়া লেখক হাসি

তিথীডোর এর ছবি

লেখকের নাম /নিক জানতে চাই। হাসি
লেখা চলুক।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

অনায়াসেই বলে দেয়া যায় এটি আমি লেখেছি চোখ টিপি এতে কাজ হবে, পোষ্ট লেখক কেমন পড়িমরি নামটা বলতে ছুটে আসেন খাইছে লেখাটা বেশ সাবলীল লাগলো অনামিকা। আরো লেখুন।

আয়নামতি

অতিথি লেখক এর ছবি

দিনপঞ্জির শতরঞ্জি চমৎকার লাগলো।

অতীত

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বর্ষার দিনে চায়ের গল্পগুলো কেমন আনমনা করে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তাসনীম এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

দুর্দান্ত এর ছবি

বিবিধ চা' এর দোকান? বাহ বেশ মজা তো!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।