হুজুরদের গল্প ২
হুজুরদের গল্প ৩
ইশকুল কাণ্ড
আমাকে অনেকেই ছিদ্রান্বেষী বলতে পারেন, তবে বলতে দ্বিধা নেই, ওনাদের কিন্তু দুয়েকটা দোষ ছিল । রফিকুল্লাহ স্যার ছাত্রদের মুসলমানির দাওয়াত, তাদের ভাইবোনদের বিয়ের দাওয়াত বলে কয়ে আদায় করে নিতেন। সাখাওয়াতের মুসলমানীতে দাওয়াত না দেওয়াতে তাকে খেলাচ্ছলে লা’নত করেছিলেন যেন তার ক্ষত দেরী করে শুকোয়, হয়েছিলও তাই। তাবাসসুমের বড়ভাইয়ের আকদ-হলুদ-স্বাদী-ওয়ালিমা কিসসুতে দাওয়াত না পেয়ে স্যারের বেজায় মনোক্ষুন্ন হয়েছিল, হয়তো এজন্যই বিয়ের টাটকা চার মাসের মাথায় নবদম্পতি বাচ্চা বিইয়ে বসে কেলেঙ্কারী বাঁধিয়েছিল। হুজুরের বদদোয়ায় যদি মহাভারতের মহাত্মারও কপাল ফাঁড়ে, তবে প্রাকবৈবাহিক পুষ্পশয্যায় এহেন পাপাত্মার কন্ডম ফাঁড়তেই বা দোষ কী!
অপরপক্ষে, কাজিম স্যারের ত্রুটি এধরণের নয়। তিনি যেচে দাওয়াত খেতেন না। ঐশীমন্ত্র যপে কারও রক্ততঞ্চন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করেছেন কিংবা কুলগ্নে কারও বীর্যস্খলন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছেন বলেও কখনো জানা যায়নি। তবে তিনি কী করেছেন বা করতেন, সেটাই আজকের গল্প…
ছিমছাম দুপুর বেলা। টিফিনছুটি পেরিয়েছে মাত্র। কানাউল্লাহ আর হায়দর স্কুলের কাঁটাতার টপকে দূরের হোটেল থেকে গরুর-ভুড়ির চাপ আর পটলের রোল খেয়ে এসে উদরে মজাসে তা দিচ্ছে। দৃপ্রকে সাথে নেয়নি বলে তার মন খারাপ। প্রতিশোধ স্বরুপ সে হায়দরকে দেখিয়ে দেখিয়ে তার প্রিয়পাত্রী, ক্লাসসুন্দরী মোটা মোমেনার দিকে বল্গাহীন বদনজর পেশ করে চলেছে। আমি নিরীহ, স্কুলের কাঁটাতার টপকানোয় হায়দর-কানা গ্যাঙ এর সাথেও নেই, আবার সহপাঠিনীদের দিকে নজরারোপের বেলায় দৃপ্র’র পাছেও নেই। বসে বসে জানালা দিয়ে বাইরের প্রাকৃতিক সুষমা দেখছি, গাছ-পালা-লতা-পাতা-কাক-কইতর গুনছি। আবছাভাবে শোনা যায়, কাজিম স্যারের লেকচার ভেসে আসছে- “আততাহরু শাতরুল ইমান- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। আমাদের উচিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ওযু করা, শরীর ধৌত করা…”
হঠাৎ পিঠের উপর একটা হালকা গুঁতো খেয়ে সম্বিত ফিরে পাই। ঘুরে দেখি কানা বলছে, “ওই দ্যাখ খাইজ্জায়, খাইজ্জায়।”
ধ্যানভঙ্গ আমি কানাউল্লাহ ওরফে কানার দিকে কিছুক্ষন ভ্যাবলার মত তাকিয়ে রইলাম। “কে খাইজ্জায়, কী খাইজ্জায়?”
“আররে ব্যাটা, কাজুর দিকে তাকাইয়া দ্যাখ”, বলল কানা।
সামনে মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকা কাজিম স্যারের দিকে তাকালাম। স্যারের দক্ষিন হস্তে ইসলামিয়াতের বই ধরা। চোখের বার্মিস চশমা গলে সুতীব্র মনোযোগ পুস্তকপৃষ্ঠে ঠিকরে পড়ছে। জবান-পাকে গুঞ্জরিত হচ্ছে পঠিত আয়াতসমূহের তর্জমা ও তফসির। থেকে থেকে দরাজ কন্ঠে বলছেন, “আগামীকাল আমি এই আয়াআআআআআআত পড়া নেব। একেবারে ফাস্ট-টু-লাস্ট এই আয়াআআআআআআত পড়া নেব।”
সম্ভবত কানার আপত্তি স্যারের বাম হাত নিয়ে। যেটা দেখলাম, সেটা আবহমান কালের সেই পরিচিত দৃশ্যেরই পুনর্মঞ্চায়ন। দেখি, তাঁর বামহাতটা কটিদেশ পেরিয়ে কুঁচকি সংলগ্ন বন্ধুর জমিনে অবলীলায় ট্রেকিং করে বেড়াচ্ছে। হঠাৎই চাপ দিচ্ছেন, পরক্ষণেই কিছু একটা খাবলে নেবার মত করে ঝাঁকুনি দিচ্ছেন- কিছুতেই যে তিনি জুত করতে পারছেননা, পর্যায়ক্রমিক হস্তচালনায় সেটাই প্রতিভাত হচ্ছে। কানাউল্লাহ’র প্রতি আমি বিবিধ কারণে নাখোশ। এর মধ্যে অন্যতম হল তার অশুদ্ধ এবং অবান্তর চিন্তাচেতনা। সে বলেছে ‘খাইজ্জায়’- মানে স্যার তথায় চুলকোচ্ছেন। হয়তো ভেবেছে হুজুরের করকমল দাদ বা খুজলির সাথে অনভিপ্রেত খুনসুটিতে লিপ্ত। কিন্তু আমি জ্যামিতি, বলবিদ্যা আর কিঞ্চিৎ চিকিৎসাবিদ্যাগত বিশ্লেষন প্রয়োগ করে দেখলাম, ব্যাপারটা আদৌ চুলকোনো নয়। স্যার বোধ’য় তাঁর ম্লেচ্ছ অন্তর্বাসে অসংলগ্নভাবে ফেঁসে যাওয়া অসহায় প্রত্যঙ্গটির ওরিয়েন্টেশন ঠিকঠাক করছেন। তো ওবস্তু তাঁর; নেড়েচেড়ে, দলাই-মলাই করে ওটার সম্যক দিকস্থিতি নির্ধারনের অধিকার তিনি আলবৎ রাখেন, কিন্তু শ্রেণীকক্ষজুড়ে এত এত তরুণ শিক্ষার্থী, যার অর্ধেক আবার মেয়েমানুষ- এমন পরিবেশে ‘শিশ্ন-সংস্থিতকরণ প্রক্রিয়া’র এমন উদোম প্রদর্শনী উপস্থিত সবার সইতে হবে কেন?
যাই হোক, আমাদের ক্লাসে দুষ্টু ছেলের অভাবে ছিলনা। টিফিনের ফাঁকে প্রায়ই তারা এ দৃশ্য অভিনয় করে দেখাত। ডান হাতে ধরা থাকতো সমাজ বই, নয়তো গণিত বই- বাম হাত থাকতো তথাস্থানে। তারপর অশোভন ভঙ্গিতে দলন-মর্দন-প্রেষণ, সাথে কণ্ঠটাকে একটু ভারি করে মুখে ধরা থাকতো সেই পরিচিত বুলি- “আমি আয়াআআআআআআত পড়া নেব।”
(চলতে পারে...)
ধৈবত
মন্তব্য
হা হা হা...আপ্নে পারেন ও!!
- দিগন্ত বাহার
দারুণ লেখা। আপনার বর্ণনার গুণেই গল্পটা এরকম মজার লাগল। আপনি সবসময়ই ভালো লেখেন। তাড়াতাড়ি পরের পর্ব ছাড়ুন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মজা পেলাম।
চালিয়ে যান। আপনার এই সিরিজটা ভালোই চলছে।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
হুজুরদের আমার স্বাভাবিক মানুষ মনে হয় না। বেশিরভাগ হুজুরকেই যথেষ্ট রকমের স্যাডিস্ট, কান্ডজ্ঞানহীন, নির্লজ্জ আর লোভী মনে হয়। অন্যদের কস্ট দেখে অদ্ভুত আনন্দ পায় আর সেটার মাঝে আল্লাহর মহিমা খোজায় ব্যস্ত থাকবে
আপনার আয়াআআআআআআত পড়া দেবার সময় হয়েছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনার হুজুরদের গল্প বিষয়ক চারটি লেখাই পড়লাম। বাংলাদেশের হুজুর শ্রেনীর অধিকাংশ লোকজন সমাজের সুবিধা বঞ্চিত, অশিক্ষার জালে আবদ্ধ, হতভাগ্য হয়ে থাকে। তাদের এই দূরদশাকে বিদ্রুপ করা কোন ভাবেই সুস্থ রুচির পরিচয় নয়। বরং তাদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষিত করে কিভাবে এই অবস্থা থেকে উত্তরোন ঘটানো যায় সে বিষয়ে দায়িত্বশীল নাগরিকদের ভাবা উচিত।
স্যাটিরিকাল লেখাগুলোর উদ্দেশ্যই হল সারকাজমের মাধ্যমে সামাজিক কিংবা ব্যক্তির মধ্যকার বিভিন্ন অসঙ্গতিকে তুলে ধরা। এজন্য রুচিবোধে অসুস্থতার ট্রেস খুঁজতে হবে কেন? আর এখানে যেগুলো তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো আকাশ থেকে পেড়ে আনা হয়নি, ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকেই লেখা হয়েছে।
ধৈবত
বাচ্চাদের বুঝনো যায়, যারা না বুঝে, তাদের বুঝানো যায়। কিন্তু যা বুঝেও বলে যে বুঝবে না, তাদের কিছুতেই বুঝানো যায় না। আমাদের দেশের গ্রামের হুজুর গুলোও চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। তাদের ঘুম কোন মতেই ভাঙ্গানো সম্ভব না, যদি না তারা নিজে থেকে সজাগ হয়।
কথাটা ১০০% মানতে পারলাম না। আমি নিজে অনেককে দেখেছি, যারা মোটেও সুবিধা বঞ্চিত না, রীতিমত ভাল পাশ দেয়া, কিন্তু গোড়ামি ছাড়তে পারে না। এর মূল কারণ একটাই, অন্ধ বিশ্বাস। কেউ, কোন কালে তাদের মস্তিস্ক ধোলাই দিয়েছিল, সেইটা থেকে একচুলও নড়ানো সম্ভব হয় না।
চলবো মানে, লৌড়াইবো ব্যাটা... ল্যাখ...
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ভাই, আপনে আসলেই লাজওয়াব!!! তয় এইডা বুঝতেও যে আপনে মেডিক্যাল+ম্যাথ+ইঞ্জিনিয়ারিং খাটাইলেন তাতে আন্দাজ করা যায়, ভবিষ্যতে এতদসংক্রান্ত বিষয়ে আপনে উপদেষ্টা কিংবা কন্সালট্যান্ট হিসেবে অনন্য হইতে পারিবেন।
অতীত
পাঠক এবং মন্তব্যকারী সকলকে ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন