এক দেশে এক রাখাল ছিল। সে খুব সহজ সরল আর প্রান চঞ্চল বালক ছিল। সে দেখতে সুন্দর আর বলবান ছিল। সারাদিন ভেড়া চড়াতো মাঠে আর অবসরে গান গাইত আর বাঁশি বাজাত। তার গান শুনে বনের পশুপাখিরাও মন মুগ্ধ হয়ে সে গান শুনতো। সেই দেশের সাবাই রাখালকে অনেক ভালোবাসতো। সে দেশে এক ভয়ংকর রাক্ষস ছিল। সে সাবাইকে কষ্ট দিত। কারো বাড়ীর ছাগল নিয়ে যেত, কারো বাড়ীর গরু নিয়ে যেত। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে মানুষকে নিয়ে যেত। কিন্তু সে রাখাল ছেলেকে সহ্য করতে পারতো না, কেননা গ্রামের সবাই রাক্ষসকে ভয় পেত কিন্তু রাখাল তাকে ভয় পেত না। আর এটা রাক্ষস কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না।
এক দিন সে শিকার করতে যাচ্ছিলো। তখন সে রাখাল ছেলের গান শুনতে পেল। রাখাল ছেলের গান শুনে সে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলো। সে রাখাল ছেলের গান আর বাঁশি বাজানো শুনে রাখাল ছেলেকে পছন্দ করে ফেললো। সে রাখাল ছেলেকে তার সাথে নিয়ে যেতে চাইলো। মনে মনে ঠিক করলো রাখালকে সে তার সঙ্গে নিয়ে যাবে তার দাশ হিসেবে। রাক্ষসের যখন খুশি তখন রাখালের গান শুনবে বাঁশি বাজানো শুনবে। তাই সে রাখালকে ভয় দেখিয়ে তার সাথে নিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু রাখাল ছেলে ছিল বড্ড সাহসি আর চালাক। রাক্ষস অনেক ভাবে তাকে ভয় দেখালো কিন্তু রাখাল কোনো কিছুতেই ভয় পেলো না। তাই রাক্ষস ঠিক করলো রাখাল যখন ঘুমিয়ে যাবে তখন তাকে তুলে নিয়ে যাবে তার প্রাসাদে। রাক্ষসের একটা নীতি ছিলো। সে সব সময় ঘুমন্ত প্রানীকে তার সঙ্গে নিয়ে যেত যাতে করে প্রানীটা চেচামেচি না করে। রাখাল সেটা জানতো। তাই যখন সে রাক্ষসের ফন্দি বুঝতে পারলো তখন রাখাল ঠিক করলো সে আর ঘুমাবে না। রাক্ষসও কম চালাক না, সে একটা বুদ্ধি আটলো। সে বার বার “ হাউ মাউ খাউ মানুষের গন্ধ পাও” বলতে লাগলো। রাখাল এক কথা বার বার শুনতে শুনতে এক সময় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। সেই ফাঁকে রাক্ষস রাখালকে তার প্রাসাদে তুলে নিয়ে গেলো।
রাক্ষস একটা সোনার খাঁচা বানালো রাখালের জন্য। খাঁচায় সব রকম সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করলো। রাক্ষস শুধু চায় রাখাল এখানে থাকবে আর তাকে গান শুনাবে আর বাঁশি বাজিয়ে শুনাবে। কিন্তু যে রাখাল মুক্ত পাখির মত স্বাধীন সে কি আর সোনার খাঁচায় সুখ পাবে। সে গান গাওয়া বন্ধ করে দিলো, বাঁশি বাজানো বন্ধ করে দিলো। সে ঠিক মত খায় না, হাসে না, কথা কয় না। রাক্ষস কত ভাবে তাকে খুশি করার চেষ্টা করলো তবু সে হাসে না। এভাবে দিন দিন না খেতে খেতে রাখাল অসুস্থ হয়ে পড়লো। রাক্ষস খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো। একদিন রাক্ষস দেখলো রাখাল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে তখন সে চলদি করে কবিরাজ মসাইকে দেকে আনলো। রাখাল কে ঠিক মত দেখে কবিরাজ মসাই বুঝতে পারলো রাখালের কি সমস্যা। সে রাক্ষসকে বললো এভাবে যদি রাখাল না খেতে থাকে তবে এক সময় রাখাল মারা যেতে পারে। তাই কবিরাজ মসাই রাক্ষসকে বললো সে যেনো রাখালকে মুক্ত করে দেয়। এ কথা শুনে রাক্ষসের মন খারাপ হয়ে গেলো। সে মনে মনে রাখালকে ভীষন পছন্দ করত, সে চায় না রাখালের কোন ক্ষতি হোক। তাই সে অনেক চিন্তা করলো। এক সময় সে ঠিক করলো সে রাখালকে মুক্ত করে দিবে। এক দিন সে রাখালের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে মুক্ত করে দিলো।
রাখাল তার পুরনো জীবন ফিরে পেয়ে আবার আগের মত হাসতে লাগলো গাইতে লাগলো। রাক্ষসের সাথে তার বন্ধুত্ত হয়ে গেলো। যখন রাখালের মন চায় সে রাক্ষসকে গান শুনায়, বাঁশি বাজিয়ে শুনায়। রাক্ষস আর আগের মত গ্রামবাসীকে অত্যাচার করে না, বরং রাক্ষস অন্য আরো ভয়ংকর রাক্ষস থেকে গ্রামের মানুষকে রক্ষা করে। আর এভাবেই রাক্ষস আর রাখাল বন্ধু হয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।
ভালোবাসা দিয়ে কর জয় সকল ভয়।
labin rahman
মন্তব্য
ভালো লাগলো। আরেকটা গল্প শুনেছিলাম, এক রাজা বনের এক পাখিকে সোনার খাঁচায় পুরে রাখে, এই গল্প দুটোর প্লট একই।
এই গল্পের কনটেক্সটটা আমি ধরতে পারি নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মেঘলাদিনে এমন রূপকথা বেশ জমে ক্ষীর হলো নববর্ষের শুভেচ্ছা থাকলো।
গল্পের ভিতরে কোনো গল্প আছে কি না বুঝি নাই।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অনেক ধন্যবাদ।
সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
গল্পের নিচের লাইনটা পড়েছেন?
labin rahman
নতুন মন্তব্য করুন