১.
আবার সেই চুল। গরম হলদে খিচুড়ির মধ্যে আমাজনের অ্যানাকোন্ডার মতো শুয়ে আছে চুল। লম্বা চুল। কোত্থেকে আসে এই চুল! আমাদের এই নারীরহিতনিবাসে এতো লম্বা চুল আসেই বা কি করে। শুধু নিবাস নয় কর্মক্ষেত্রেও আমাদের নারী ভাগ্য নেই। অফিসে পুরো ফ্লোরে যে একজন সবেধন নীলমণি আছেন তিনি আবার এইচআর ম্যানেজার। স্বয়ং আমার অন্নদাত্রী। তার চুল সংগ্রহ করতে গেলে আমার চাকরির মূল ধরে টান পড়বে। এই মেসে অন্য যে কজন আছেন তারাও মোটামুটি নারীবিহীন অফিসে কর্মরত।
তথ্যটা আবার পুরোপুরি ঠিক না। আমাদের এখানে কয়েকজন আছেন প্রায়গিক অর্থে কোনো কাজই করেন না। তাদের অফিসের তো প্রশ্নই আসে না। কেউ করেন টুকটাক সিজনাল বিজনেস। কেউ চাকরিসন্ধিৎসু বেকার। এবং আমার জানা মতে এদের কেউ কিন্তু কোনো নারীর সঙ্গে কোন প্রকার সম্পর্কে আবদ্ধও নয়। কারণ নারীকে পোষার মতো টাকার বাহাদুরি এখনো কারো হয়ে ওঠেনি। তাহলে চুল আসবে কোত্থেকে? হতে পারে চাতালের চুল এসে গেছে চালের সঙ্গে। কিন্তু তোয়ালের চুল? ডায়রির পাতায় চুল? এমন কি মাঝে মাঝে আমাদের শরীরেও চুল...
কি থেমে গেলেন যে?
মাথা তুলে দেখি জাহিদ সাহেব আমার দিকে উৎসুক চোখ করে তাকিয়ে আছেন। আমার নতুন রুমমেট। মাস খানেক হয় উঠেছেন।
চুল।
হো হো আবার সেই চুল! আপনার তো আবার চুলে এলার্জি।
আমি একটা কপট হাসি দিয়ে ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চাইলাম।
বন্ধের দিনে এই সাত সকালে কোথায় ছুটলেন।
ভদ্রলোক চোখ টিপ মেরে বললেন, যাই ভাই একটু সময় কাটাইয়া আসি।
বেশ মজা পেলাম। আগ্রহ নিয়ে তার দিকে ঝুঁকে বল্লাম, কি, বড়শিতে আটকাইতে পারলেন নাকি।
আরে রাখেন ভাই, লং ইনিংস খেলার ধৈর্য্য আমার নাই। আমার সব ওয়ান ডে।
বুঝলাম না।
গেলে চলেন, রহস্য নিয়ে তিনি এগিয়ে এলেন. খাসা মাল আছে ভাই। কলেজ পড়া। একেবারে ইনোসেনট। চর এলাকা তো খুব অভাব-
আমার কান দুটো লজ্জ্বায় গরম হয়ে উঠল। কি বলছেন এসব জাহিদ সাহেব।
আরে ভাই শরমিন্দা হওনের কিছু নাই। ভোগ পাইলে ভাত খান, ওইটা পাইলে সেইটা খাবেন লজ্জ্বা কি? খিচুড়ির পাত থেকে হাত তুলে নিয়ে কথার সঙ্গে হস্তবিক্ষেপণ করে বোঝানোর চেষ্টা করেন জাহিদ সাহেব। ফরিদপুর শহরের লোকজন বুঝলেন ঢাকার চেয়েও মর্ডান। ছেলেদের মেসে মেয়েরা যাচ্ছে, মেয়েদের মেসে... আরে ভাই ভয় নাই, আমার ফ্রেন্ডরা আছে। ওরা তো প্রতি সাপ্তাহে... হে হে হে...
এই তাহলে চুলের উৎস। মনে মনে ভাবলাম।
যাবো একবার। দু’তিনদিন ছুটি নিয়ে যাবো।
আজই চলেন।
মাস শেষ তো, পকেটে টাকা নাই।
আরে চলেন, আমার কাছে আছে।
এই কামও যদি পরের টাকায় করতে হয়...
হো হো হো তা... ই ...
২.
খুব শীত পড়েছে ক’দিন। নভেম্বর গেলো শীতের কোনো খবর নেই। ডিসেম্বর আসতেই হুটহাট কুয়াশার মশারি টাঙিয়ে দিল; ওমনি শীত। দুপুর বারোটা। আকাশ এখানো ছাই-মেঘে ঢাকা। বাতাসে সুঁই-ফুটানো ঠাণ্ডা। চারুকলা থেকে জাদুঘর হয়ে বাঁক নিয়ে ফিরছি কাঁটাবন। ফুটপাথের ওপর এক ঝাঁক এস্কিমো। শীতের ভারী পোশাক গায়। খড়কুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়েছে। আগুনে তাপের চেয়ে গন্ধ বেশি। প্লাস্টিক পোড়ার গন্ধ। গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসার দশা। একটা পেট-মোটা বাচ্চা শীতের শাসনের মাঝে আশেপাশে ছোটাছুটি করছে।
আইজ গোস্ত খামু।
আরেকটা বাচ্চা মায়লা-মাখা-মুখ বলল, মোরগার গোস্ত।
উৎসাহ গেলো আগুনের দিকে। প্লাস্টিকের গন্ধময়ী আগুনের ওপর ছোট্ট একটা সসপেন। ওখানে কালোসাদা ছিট ছিট কিছু পালক।
পালক সিদ্ধ করো কেন?
আস্তা মোরগা পামু কই স্যার। কাওরানবাজার থেকে চামড়া-পাখনা কিন্যা আনছি। একটু সিদ্ধ দিলেই পালকগুলো লুজ হইয়া যাবো-, ১৮-১৯ বছর বয়সী রাঁধুনি কথা শেষ না করেই রান্নায় ব্যস্ত হয়ে উঠল।
মেসে ফিরে দেখি জাহিদ সাহেবের বিছানা খালি।
অন্যরাও যে যার ধান্ধায়।
কাপড়-চোপড় ছেড়ে গোছলে যাব। শ্যাম্পুর বোতল হাতে নেব। তখনই ঘটল বিপত্তি।
শার্টের অস্তিনে আবিষ্কার করলাম একটা পালক।
অনুষ্টুপ
১৬ ডিসেম্বর ২০০৮, ঢাকা।
মন্তব্য
আপনার দ্বিতীয় লেখাটি আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে এই পোস্টটি দেখুন। পরের পোস্টটি মুছে ফেলা হোলো। প্রথম পাতা থেকে এই পোস্টটি সরে গেলে লেখাটি পুনরায় জমা দিন।
----
সংযুক্তি: এর আগে আপনার আরেকটি লেখা: ছাত্রলীগের আইডি কার্ড চালু করা হোক - প্রথম পাতায় প্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে। এই লেখাটি সেজন্যে নিজের ব্লগে সরিয়ে নেয়া হোলো।
নতুন মন্তব্য করুন