• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

বিয়েটি বিয়োগান্ত

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/০৪/২০১১ - ৭:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রদীপ যেমন নিভার আগে একবার দপ্ করে জ্বলে ওঠে, তেমনি কাসেম সাহেব বছর খানেক আগে সাতাত্তুর বছর বয়সে জ্বলে উঠেছিলেন একবার। ‘নিরবকুঞ্জ’ নামের ছায়া সুনিবিড় বাড়ীটিতে তিনি তাঁর পুরাতন স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন, তবে আলাদা খাটে। আর ছেলে-মেয়েরা নিজেদের ‘নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি’ নিয়ে স্ব-স্ব ফ্ল্যাটে ব্যস্ত। সকলেই আর্থিক ভাবে বেশ স্বচ্ছল। বাবা-মা’র সব ধরনের প্রয়োজন মেটাতে কেউ সামান্যতম কার্পণ্য করে না, শুধুমাত্র সঙ্গ দেয়া ছাড়া।

এক প্রাতে ভেজা লুঙ্গি সমেত ধরফর করে ঘুম থেকে জেগে কাসেম সাহেবের হঠাৎ মনে হল, তিনি বুঝি আবার যুবা বয়সের মতই পারঙ্গম হয়ে উঠলেন! আর দেরী করা ঠিক হবে না জ্ঞান করে, খবর পাঠালেন ‘খাম্বা ঘটককে’। যদিও লম্বা হওয়ার কারণে ‘খাম্বা’ উপাধি, আদতে খাম্বা ঘটক তেমন লম্বা নন। ‘খাম্বা’ এলেন, শুনলেন এবং কাসেম সাহেবের নড়বড়ে হৃদয়টি একটিমাত্র বাক্য ব্যয়ে মেরামত করে ফেললেন। স্বভাব বশে তিনি বুড়ো পাত্রকে অভয় দিলেন, ‘চিন্তা নাই, হাতেই আছে বছর পঁয়ত্রিশের এক সুন্দরী বিধবা।’

সেহেতু কাসেম সাহেবের স্ত্রী তখনো এই নষ্ট ধরাধামে বর্তমান, সেহেতু গরমাগরম এই পরিস্থিতিতে সেখান হতে একটি মৃদু প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। ধর্ম কিংবা শরীয়তমতে নাকি দ্বিতীয় বিয়েতে প্রথম স্ত্রী’র ইযাযাতের প্রয়োজন হয়। সঙ্গত কারণেই কাসেম সাহেবের কপালে তা জোটেনি। কিন্তু অসুস্থ অর্ধাঙ্গিনীর অর্ধাংশ তখন কবরে চলে যাওয়ায়, ঝড়টি তেমন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি।

কাসেম সাহেবের দু’ছেলে এক মেয়ে তাদের বাবার অবর্তমানে পাকড়াও করে বসল ঘটককে। তাদের ভয়- ‘বয়স বিবেচনায়, বাবার পক্ষে ‘আবাদের’ সম্ভাবনা না থাকলেও, দুর্ভাগ্রক্রমে যদি ঘটনা ঘটে যায়, যদি সম্পত্তির ভাগ বসাতে উটকো কেউ উড়ে আসে নববধূ’র গর্ভে?’ ঘটক তাঁর স্বভাব মত উত্তর দিলেন, ‘চিন্তা নাই, যে পাত্রী দেখা হচ্ছে, সে বাঁজা।’

কাশেম সাহেবের ছেলেমেয়েরা মাইল কয়েক দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। আর নিঃসঙ্গ বাবা-মা একলা ফ্ল্যাটে একা। না, পুরোপুরি একা না, খেদমত করার যথেষ্ট লোকবলের ব্যবস্থা সেখানে আছে। পুরোনো অভিভাবকদের তেমন একটা সময় দিতে না পারায়, স্ব-স্ব দুর্বলতা হেতু তারা তাদের মা’র দুঃসময়ে কোন ভূমিকা রাখতে পারল না। অর্থাৎ মা’র সতীনের আগমনকে তারা কিছুতেই ঠেকাতে পারল না।

কাশেম সাহেবের ডাক্তার ছেলেটি তার বাবার বিবাহ প্রীতির একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে। তা-ও মনে মনে। একটি বয়সের পরে নাকি পুরুষ মানুষের ভিতর বিশেষ এক ধরনের হরমোনের নির্গমন হতে থাকে। যাতে পুরুষটি নতুন করে সাময়িক উত্তেজনা বোধ করতে থাকে। এবং মনে করতে থাকে, সে বুঝি তার হারানো যৌবন আবার ফিরে পেতে চলেছে। কিন্তু সেই নরাধম কিছু্তেই বুঝতে চায় না, এটি আসলে ভ্রম। তার হারানো যৌবন ফিরে আসবে ঠিকই, তবে তা ওই প্রদীপ নেভার আগ মুহূর্তের ঘটনার মতই ক্ষণিকের।

বেঁচে থাকা অবশিষ্ট বুড়ো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়ে অত্যন্ত অনাড়ম্বর পরিবেশে কাশেম সাহেব বিয়েটা সেড়ে ফেললেন। বাসরও হয়ে গেল যথা নিয়ম এবং সময়ে। মাঝরাতে দুরুদুরু বুকে বাসরে ঢুকলেও ভোর বেলায় বুক চিতিয়ে বেরিয়ে এলেন নয়া মোড়কের পুরোনো জামাই।

মাস তিনেক পর, ‘খাম্বা’কে চেরাগ জ্বালিয়ে খুঁজতে লাগল কাশেম সাহেবে ছেলেরা। কারণ, ওবাড়ী থেকে মা মারফত খবর এসেছে, তাদের বাবাকে তাদের নুতন মা’র ইউরিন ভরা ছোট্ট শিশি হাতে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।

তারা সকলে খাম্বা’র খোঁজে ছুটল। খাম্বা তাদের সকলকে ঠকিয়েছে। কিন্তু খাম্বা কি এতই বোকা? সে মানুষ চড়িয়ে খায়। তাই এইসব বিচ্ছু ছেলেরা খাম্বা’র নাগাল আর পায়নি কিছুতেই।

নতুন বউয়ের বাবা-মা, কাসেম সাহেবের চাইতে বয়সে ঢের ছোট। তা সত্ত্বেও শ্বশুর-শাশুড়ী বলে কথা। তিনি গুরুজনদের কদমবুচি করতে কিংবা ‘আম্মু-আব্বু’ সম্বধনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। এতে তাঁর নতুন অর্ধাঙ্গটিও তাঁর উপর বেজায় খুশী।

সব মোটামুটি ভালই চলছিল। কিন্তু ঘরে নতুন অতিথির আনাগোনা চাউর হওয়ার পর, আজগুবী ঘটনা ঘটতে শুরু করল নিরবকুঞ্জে।

কাসেম সাহেবের প্রথম এবং দ্বিতীয় অর্ধাঙ্গ মিলেমিশে একাঙ্গ হয়ে গেল। কেমন করে যেন তাঁদের মধ্যে দারুণ ভাব জমে উঠল ধীরে ধীরে। আর কাসেম সাহেব দু’অঙ্গ এক সঙ্গে হারাতে হারাতে অঙ্গহীন হয়ে পড়লেন অচিরেই।

ছেলে-মেয়েদের কুমন্ত্রনায় কাসেম সাহেবের অসুস্থ প্রথম স্ত্রী তরতর করে সুস্থ হয়ে উঠলেন। অল্পদিনে তিনি এতটাই সুস্থ হয়ে উঠলেন যে, সতীনকে একটিমাত্র কথায় হাত করে ফেললেন, ‘বুড়োর যা মতিগতি, তোমার এ-পোয়াতি অবস্থায় সে কি আর উপোস থাকবে? তাকে আমি হাঁড়ে হাঁড়ে চিনি, ঠিকই আবার খাম্বাকে খবর পাঠাবে দেখো।’ ব্যাস দু’সতীন এক হতে সময় লাগেনি বেশী।

লজ্জায় শরমে যে ছেলে-মেয়েরা এতদিন এবাড়ীর ছায়া মাড়ায়নি, তারাও হাসিমুখে ছোট ছোট কাঁথা-বালিশ নিয়ে হাজির হতে লাগল। হঠাৎ এই পরিবর্তনে কাসেম সাহেবের কপালের ভাঁজ দিন দিন বাড়তে লাগল। দ্বিতীয় স্ত্রী’র সাত মাসের সময় সত্যি সত্যিই একদিন তিনি পুরোপুরি অঙ্গহীন হয়ে গেলেন। অর্থাৎ কিনা একা, সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলেন।

সকলে মিলে হবু মাতাকে নানা রকম পিঠা খাইয়ে, ‘সাধ’ দিয়ে, বাপের বাড়ী নাইয়র পাঠিয়ে দিল। গদগদ পুরোনো-বুড়ো মাতাও নতুনটির সাথে নাইয়রে সঙ্গী হলেন। ‘সতীন’ এর এতদিনকার পুরনো সংজ্ঞাও পাল্টে যেতে লাগল কাসেম সাহেবের কল্যাণে। আর যাঁর কল্যাণে এহেন কল্যাণকর কর্মযজ্ঞ ঘটতে শুরু হল, সেই তিনি ধীরে ধীরে সকলের গোচরে বিস্মৃত হয়ে যেতে লাগলেন। তাঁর খবর কেউ নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেনা আর।

অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। ‘ওঁয়া ওঁয়া’ রবে সরব হল ‘নিরবকুঞ্জ’। প্রথম স্ত্রী স্বীয় জ্বালা জুড়োতে খবর পাঠালেন পত্রিকা অফিসে। ছুটে এলেন সংবাদ সংগ্রাহকরা। পরদিন আঞ্চলিক পত্রিকায় বক্স করে ছবি ছাপা হল; সপুত্র নব্য পিতা-মাতার ছবি। ছবিতে নবযাতক কোলে ঘোমটা টানা মা, আর হাস্যোজ্জ্বল পিতা কাসেম সাহেবকে তেমন খারাপ দেখাচ্ছিল না। তবে কাসেম সাহেবের ওই হাসিটিও যে তাঁর পূর্ব পুত্র-কন্যা-স্ত্রী’র ষড়যন্ত্রের ফল, তা সেখানে উপস্থিত বুদ্ধিমান সাংবাদিকরা ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেনি। তাঁরা মিটিমিটি হেঁসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিলেন, ওটা আসলে হাসি নয়, ছেলেমেয়ে আর প্রথম স্ত্রী’র ক্ষুব্ধ দৃষ্টির সামনে জোর করে কেবল নকল দাঁতগুলো প্রদর্শন করা। সাংবাদিক সাহেবদের তোলা সেই দুর্লভ ছবিটির ক্যাপশান ছিল, ‘আটাত্তুর বছরের বুড়োর ঔরসে বন্ধ্যা নারীর বন্ধাত্ব মোচন’।

এমন আনন্দের দিনে কাসেম সহেব শুধু ছবি তোলা পর্যন্তই নিজেকে যুক্ত রাখতে পেরেছিলেন। ষড়যন্ত্রীদের যাঁতাকলে পড়ে আর কখনো কোথাও তিনি ঠাঁয় পাননি।

ও হ্যাঁ, ছেলের নাম রাখার সময় সামান্য সুযোগ জুটেছিল তাঁর কপালে। তা-ও কেবল পুত্রকে কোলে নিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিকে অভ্যর্থনার জানানোর সময়ে। সেখানেও তিনি নিস্তার পাননি। সদা তটস্থ হয়ে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। প্রায় প্রতিটি অতিথিই ইচ্ছে করে একটি ভুল করছিলেন সে অনুষ্ঠানে। কাসেম সাহেবকে প্রায় প্রত্যেকের কাছ থেকেই একই প্রশ্ন শুনতে হচ্ছিল বারংবার; ‘কি, নাতি নাকি নাতনি, ছেলের ঘরের নাকি মেয়ের?’ কাসেম সাহেবতো কাউকেই কোন উত্তর দিচ্ছিলেন না, এমনকি কিছু বলছিলেনও না, শুধু কাষ্ঠ হাসি দিয়ে নকল দন্ত প্রদর্শন ছাড়া।

নাসির উদ্দিন খান

Email:


মন্তব্য

সুমিত রহমান এর ছবি

ভালো শিক্ষা হইছে বুড়ার =DX

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।