একটা গানের কলি ভোঁভোঁ করে চলেছে মাথার মধ্যে। স্মৃতি পুনপ্রচার হচ্ছে ভেবে সুইচ অফ করে দিলাম। কিন্তু গান তো আর থামেনা, “তুমি আজ কতো দূরে এ এ এ”। ডাইরেক্ট কানেকশন হয়ে গেলো নাকি বুঝছিনা। যাইহোক, যতটুকু মনে আছে তারই কিছু বলার দুর্ধর্ষ সাহস নিয়ে এই লেখার অবতারনা। আমার শৈশব নিতান্তই সাদাকালো, তাই অসাধারণ কিছু থাকার আশা করা বৃথা। আর যা অবশিষ্ট আছে, লেখার বিরল বিদঘুটে গুণাবলীতে তারও শ্রাদ্ধ নিশ্চিত।
স্কুলের নাম- টাঙ্গন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গ্রাম- টাঙ্গন, থানা- চারঘাট, জেলা- রাজশাহী। খুব সাধারণ আর দশটা গ্রাম্য স্কুলের মতোই আমার প্রথম পাঠশালা। পদ্মার পাড়ে অবস্থিত, ইংরেজি-L এর মতো বিন্যাস, পূর্বমুখী। সামনে এক চিলতে ঘাসচটা (রংচটা এর আদলে) মাঠ। টিনের ছাদ, কিন্তু পাকা দেয়াল। আর দরজা-জানালা সব কাঠের। পূর্ব আর পশ্চিম পাশে সীমানার পরে মানুষের বাড়ী, উত্তরে গ্রামের প্রধান সড়ক (আগে কাঁচা ছিলো, এখন পিচের হয়ে গেছে), এবং দক্ষিণে আমের বাগান ও বাগানের পরে পদ্মা। রাস্তাটা পদ্মার সমান্তরালে বয়ে গেছে। রাস্তার উত্তরে আবার একটা ছোটখাটো পুকুর। তাছাড়া বাকি চারপাশ জুড়ে ছাড়াছাড়া বাড়ীঘর। অতি সাধাসিধা এই ভৌগলিক অবস্থানে থেকে এই স্কুলই ছিলো পাড়ার সব ছেলেদের খেলাধূলার একমাত্র জায়গা।
স্কুলে ঐসময় আমাদের ভর্তি পরীক্ষা দিতে হতোনা। এটা চালু হয়েছে আরও পরে। কিন্তু ভর্তির আগে একটা ইন্টারভিউ হতো প্রধান শিক্ষকের সামনে অভিভাবকসহ। তবে কাউকেই বাদ দেয়া হতোনা। আমার ক্ষেত্রে কী হয়েছিলো তা একেবারেই স্মরণে নেই। শুধু এতটুকু মনে আছে যে, বছরের শুরুতে ভর্তির সময় সবার আগে যাওয়ায় নাম অন্তর্ভুক্তির সময় বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় রোল নম্বর এক পেয়ে গেলাম। মানে ফার্স্ট বয় আরকি। আমি ভর্তি হয়েছিলাম ক্লাস ওয়ানে। স্কুলে হাতেগোনা পাঁচ থেকে ছয়জন শিক্ষক ছিলেন। তাদের কারও নাম আমার আজ মনে নেই। আমার এক চাচা ( আব্বুর চাচাতো ভাই) স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আমার মাত্র পাঁচ শব্দের সমন্বয়ে নাতিদীর্ঘ একটা নাম থাকা সত্বেও কেনোজানি তিনি আমাকে আমার নাম ধরে ডাকতেননা। ডাকতেন “আফজালের ব্যাটা” নামে (আমার আব্বুর নাম আফজাল)।
কথায় আছে হাজির ব্যাটা পাজি। তেমনভাবে আমার স্যারেরা আমায় বলতেন বৈদ্যের ব্যাটা রুগী। কারণ আকার-আকৃতিতে কিংবা গায়ে-গতরে আমি আমার ক্লাসের অন্যদের চাইতে নাকি মসলিন ত্যানার মতো ছিলাম। বন্ধুদের ভাষায় ‘ফিলিপ্সের বডি’। অন্যদের করুণায় তাই আমার সুবিধার্থে প্রথম বেঞ্চিতে বসার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলাম শুরুতেই। কারণ হিসেবে আরও দুটো বোনাস পয়েন্ট ছিলো। নিয়তির স্বাভাবিক নিয়মেই ডাক্তার হিসেবে গ্রামের সমস্ত ছেলেমেয়ে আব্বুকে যমের মতো ভয় পেতো। আমাকে ঘাটালে বিপদ হতে পারে এই ভয়ে আমার সঙ্গে শুরুতে কেউ ভাব দেখাতে এলোনা। দ্বিতীয়ত, আমি ক্লাসের ফার্স্ট বয়। ফার্স্ট বয়কে স্কুলে না চাইলেও অন্যদের চাইতে বেশি পড়তে হয়, সবসময় স্যারের প্রশ্নের উত্তর সবার আগে দিতে হয়, ক্যাপ্টেন্সি করতে হয়, পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে হয়। আর তাই পড়াশুনাতে যাতে মনোযোগের কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেজন্যে প্রথম বেঞ্চের বাম পাশের সিট আমার জন্যে বুকিং হয়ে গেলো। আমি কোনোদিন একটু দেরিতে পৌঁছালেও দেখতাম সেটা ফাঁকা আছে।
তবে বেঞ্চে ঠিকমতো আরোহন করতে গিয়ে আমাকে রীতিমতো খাবি খেতে হতো। নিজের তুলনায় বেঞ্চটা বেঢপ টাইপের উঁচু হওয়ায়। ব্যাগ রাখার বেঞ্চকে বলতাম হাইবেঞ্চ আর বসার বেঞ্চকে সিটবেঞ্চ। হাইবেঞ্চ থেকে ব্যাগের ফিতা যেভাবে নিচে ঝুলতো তেমনিভাবে সিটবেঞ্চ থেকে ঝুলতো আমার পা দুইখানি। হুট করে পড়ে যাওয়ার ভয়ে সর্বদা আমার বামে কতকখানি নোম্যান্স ল্যান্ড রাখতাম। তবে সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় ছিলো ক্লাস ওয়ানের রুমে আমার পজিশন ছিলো একেবারে স্যারের টেবিলের সামনে, বামদিকে। টেবিলের উপরে ডাস্টার আর চকের বাক্স সদাপ্রস্তুত ছিলো মিসাইল হয়ে। প্রায় সময়ই দুষ্টুমি কেউ করতে গিয়ে ধরা খেলে দেখতাম সাঁইসাঁই করে ভাঙ্গা চকের টুকরো কিংবা আস্ত সে ডাস্টার আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পেছনে। সেখানে আমি বসে আছি রেঞ্জের সবচেয়ে কাছে, কী সাংঘাতিক ব্যাপার! তাই আমার কোনো চান্সই ছিলোনা এতটুকু নড়ার। এমনকি স্যার বোর্ড থেকে পেছনে ঘুরলেই অনেকসময় আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার আগে প্রস্তুত হয়ে যেতো মিসাইল কীভাবে প্রতিহত করবে সেই ভাবনায়। কারণ স্যার পেছনে ঘোরা মানেই, নিশ্চয় ক্লাসে গোলমাল চলছে মনোযোগ বাদ দিয়ে। তাছাড়া আরও বিস্তর কাহিনী আছে এ নিয়ে।
তারমানে এই নয়যে আমি কিংবা আমার বন্ধুগণ সবাই ভীতুর ডিম ছিলাম। আসলে আমাদের স্কুলে নিয়ম এমন ছিলো যে, পুরো বছর ক্লাস ওয়ানে একজন শিক্ষক পড়াবেন, ঠিক একইভাবে ক্লাস টু। বিষয় মাত্র তিনটা, বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। একজন শিক্ষক প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টা ক্লাস নিতেন একাই। মাঝে তিনি নিজে চাইলে আমরা কিছু সময়ের জন্যে বিরতি পেতাম। তো ক্লাস ওয়ানে আমাদের জন্যে বরাদ্দ ছিলো স্কুলের সবচেয়ে মারদাঙ্গা শিক্ষক, তিনি আমার সেই চাচা, নাম ঝন্টু। এজন্যেই তিনি থাকাকালীন আমরা কেউ তেমন সুবিধা করতে পারিনি। তাছাড়া, ক্লাসরুম বেশ ছোট সাইজের হওয়ায় এবং ছাত্রছাত্রী মাত্র তিরিশ-পঁয়ত্রিশ (যতদূর মনে পড়ে) হওয়ায় লুকোনোর কোনো সুযোগ ছিলোনা। আর ভাতিজা হিসেবে আমি যে কিছু বাড়তি সুবিধা পাবো তা তো নয়ই, বরং তার কথাবার্তায় তিনি বুঝিয়ে দিতেন, পরের পোলারে মারতে গেলে একটু দ্বিধা হতে পারে। কিন্তু তুই মোর আপনার লোক, তোকে তো চুটিয়ে পেটানো যাবে।
যাইহোক, এই কারণে ক্লাসের ভেতরে আমরা তেমন ভয়ংকর টাইপের কিছু বাঁদরামি করতে পারিনি ক্লাস টুতে না ওঠা পর্যন্ত। আর সেই কারণে নিজেদের মধ্যে মজা করার জন্যে আমরা সবাই স্কুলে এক থেকে দুই ঘন্টা আগেই চলে আসতাম। আমার বাসা থেকে মাত্র পাঁচ-ছয়মিনিট হেঁটে যাওয়ার পথ। কিন্তু আমি কখনও একা যাইনি আব্বুকে ছাড়া। আব্বু অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেতেন। আমাকে স্কুলের কাছাকাছি এনে ছেড়ে দিতেন। প্রথম যেদিন সাহস করে একা গেলাম মনে হয় সেদিনই ঘটেছিলো এক হৃদয় না, হস্ত-বিদারক ঘটনা, মানে হাত ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। সেই গল্প পারলে আরেকদিন করা যাবে। তো তারপরে মাঠে হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়ে যেতো যে যেভাবে যাকে নিয়ে পারে। আমাদের প্রধান খেলা ছিলো দৌড়, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, বোমবাস্টিং এবং লুকোচুরি। আমি অবশ্য লুকোচুরি বেশি খেলেছি বলে মনে পড়ে। কারণ অন্য কিছুতে সুযোগ পেতামনা, পেশাদারী সব খেলোয়াড়ের ভিড়ে ফিটনেস এর অভাবে। তাই হয়ত ঐ সময়ে না খেললে আমি একা একাই প্রায় ঘুরে বেড়াতাম স্কুলের মধ্যে, আশেপাশে। বেশিরভাগ সময় আমবাগানের ছায়ায়, নদীর ধারে। সাঁতার না জানার দরূন বেশি কাছে যাওয়ার সাহস পেতামনা। তারপরে ঘন্টা পড়লে সবাই মাঠে খেলা ছেড়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যেতো পিটি-সমাবেশ এর উদ্দেশ্যে।
স্যারেরা একে একে আসতেন। স্কুলে আলাদা কোনো শারীরিক শিক্ষক ছিলেননা। একেকদিন একেকজন সামনে এসে নেতৃত্ব দিতেন। উচ্চতার ঊর্ধ্বক্রমে লাইনে দাঁড়ানোতে আমি আবার আমার ক্লাসের লাইনের সামনে, মেয়েদের আলাদা লাইন, মিলেমিশে দাঁড়ালে দুই-একজনকে হয়ত আগে ফেলতে পারতাম। ঐ সময় আমার কাছে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ছিলো জাতীয় পতাকা উত্তোলন। হেডস্যারকে দেখতাম খুঁটির সাথে লাগানো একটা চিকন দড়ি ধরে নিচে টানছেন, আর পতাকা আস্তে আস্তে উপরে উঠছে। দড়ি টানছে নিচে, কিন্তু পতাকা কেনো বা কীভাবে উপরে উঠছে, এটা আমি হাঁ করে তাকিয়ে ভাবতাম। এই বিষয়ের সুরাহা, অবাক হলেও সত্য, ক্লাস ফাইভে থাকাকালীন আমি জানতে পেরেছি, তাও অন্য এক স্কুলে। খুঁটিতে কী আছে জানার কৌতুহল ছিলো, কিন্তু দেখার সাহস ছিলোনা। কারণ হেডস্যার এর রুমের দরজা ঐখুঁটির মুখোমুখি ছিলো।
আর একটা বিষয় ছিলো অবাক করার মতো যেটা আমি আমার দ্বিতীয় স্কুলেও পরে দেখেছি। তা হলো, জাতীয় সঙ্গীতের টিউন। পিটি বা শপথের সময় সমাবেশে ছেলেদের কন্ঠস্বরের প্রাধান্য থাকলেও জাতীয় সঙ্গীতের সময় কেনোজানি তা মেয়েদের স্বরে রূপান্তরিত হয়ে যেতো। মনে হতো মাঠে কোনো ছেলেই নেই! স্যারেরা অনেকসময় ভাবতেন, ছেলেরা মনে হয় গাচ্ছেনা। দুঃখজনক হলেও সত্য, ছেলেরা আদতেই গাইতোনা বা গাইলেও মিনমিন করে শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে গাইতো। এই জিনিস আসলে আমরা জানতাম যে- গাইতে হয়, তাই গাই। কিন্তু এর মাহাত্ম্য কেউ আমাদের তখন বলে দেয়নি বা জানায়নি। তাই অযথা হেঁড়ে গলায় চিৎকার করে কান-গলা এবং সর্বোপরি গানের বারোটা না বাজানোতেই আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো। মাঝেমাঝে স্যার বেত হাতে লাইনের মধ্যে পায়চারি করতেন কারা গাইছেনা জোরে তা বের করতে। তখন দেখা যেতো স্যারের সমান্তরালে একটা হেঁড়ে কর্কশ সুর মাঠের মধ্যে পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। অর্থাৎ স্যার যেদিকে যান, তার কাছাকাছি থাকা ছেলেরা তখন চিৎকার করতে থাকে। ফলে স্যারও ধরতে পারতেননা। কিন্তু অনেক সময় ভ্রু কুঁচকে যেতো তার, সব ছেলেই গাইছে, তাইলে শুধু মেয়েলি আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে কেনো? বড়োরা আসলে মনে হয় ক্ষমতাবান হলেও শিশুদের মতো চালাক-চতুর হতে পারেনা কখনও।
সমাবেশ শেষে লাইনের সবাই উলটোঘুরে ক্লাসের পানে হাঁটা দিতো। এইবার আমি সবার পেছনে। আর প্রায় আমার সাথে সাথেই ঢুকতেন স্যার। একখান সাদা কিংবা হলদে পাঞ্জাবী, গোলগাল শ্যামলা মুখ, সাথে একটা জাঁদরেল গোঁফ, ঢাউস সাইজের ভুড়ি আর বগলে একগাদা ফাইল নিয়ে। এরমধ্যে ক্লাসে থাকাকালীন তিনি শুধু হাজিরা খাতাই খুলতেন। অন্যগুলো টেবিলের উপরে যে অবস্থায় আনা হয়েছে ঠিক সেই অবস্থায় থেকে যেতো যাওয়ার আগপর্যন্ত। শুরু হতো রোলকল। এই সময় আমাদের ক্লাসের অনেকেই বিভিন্ন কায়দায়-দক্ষতায় তার উপস্থিতি জানান দিতো। যা পরে এমনকি ভার্সিটি লাইফেও করতে দেখেছি। বেশিরভাগের উত্তর ছিলো- ইয়েচ্ছার (ইয়েস স্যার)। কিন্তু বাকি তাদের মধ্যে থেকে আওয়াজ শুনতাম ‘জ্বিছার’, ‘হাঁছার’, ‘উপস্থার’ (উপস্থিত স্যার) কিংবা ‘পেজেন্সার’ (প্রেজেন্ট স্যার)। স্যার খুব দ্রুত ডেকে যেতেন ফলে তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে গিয়ে আওয়াজ বদলে যেতো। ঐসময় আমি জানতামনা ‘পেজেন্সার’ মানে কী। এটা বলে, এমন আমার একজন সহপাঠীকে একদিন তাই গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম শব্দটার অর্থ কী? কিন্তু হতাশ, সেও জানেনা। কিন্তু বড়োভাইদের (মানে ক্লাস থ্রী, ফোর বা ফাইভ কোনোটা হবে) এমন বলতে শুনেছে একদিন উঁচু ক্লাসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়। তার ভালো লেগেছে শব্দটা, তাই বলে সে এটা ক্লাসে। তাছাড়া এক গৎবাঁধা ইয়েস স্যার বলতে আর শুনতে তার নাকি এখন ইয়োতে লাগে।
আমাদের ক্লাসে মেয়ে বলতে যতদূর মনে পড়ে দশ-বারোজন ছিলো। ক্লাস ছিলো উত্তরমুখি, প্রবেশ পূর্বদিক থেকে। মেয়েরা দরজার দেয়াল ঘেঁষে যে সারি তাতে বসতো প্রথম তিন বেঞ্চে। বাকিসব ছেলে। স্যারের ভয়ে তটস্থ থাকলেও আমরা ছেলেরা-মেয়েরা একে অন্যের চিরপ্রতিদ্বন্দী ছিলাম। স্যার বোর্ডের দিকে মুখ ফেরানো মাত্রই শুরু হয়ে যেতো মুখ ভেংচানো কিংবা কাগজ নিক্ষেপ। মেয়েদের পেছনের বেঞ্চে যারা থাকতো তারা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতো মেয়েদের জ্বালাতে। কিন্তু এর আবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ছিলো। মেয়েরা ঠোঁটকাটা না, একেবারে পুরা গলাকাটা স্বভাবের ছিলো। আমরা ভেংচাতে কিংবা কাগজ নিক্ষেপে কখনও সুবিধা করতে না পারলেও কিছু বলতামনা। একবার না পারিলে দেখো শতবার নীতিতে অটল থাকতাম। কিন্তু কখনও মেয়েদের কেউ সুবিধা করে উঠতে পারছেনা দেখলেই হুট করে চিৎকার দিয়ে বলে উঠতো- স্যার, গুঁতায়। আর অমনি আগপাছ বাছবিচার না করেই চোখের পলকে পেছন ফিরে হাতে থাকা চকের টুকরো স্যার ছুঁড়ে মারতেন মেয়েদের পেছনে বসা ছেলেদের বেঞ্চের দিকে। স্যারের মনে হয় জন্মগত ধারণা ছিলো যে গুঁতানো মানে পেছন থেকে ঠুঁয়া মারা এবং একাজ শুধু মেয়েদের পেছনে বসা বদের হাড্ডিরাই করতে পারে। বরাত বেশি খারাপ হতো সেদিন যেদিন স্যারের হাতে চকের পরিবর্তে ডাস্টার থাকতো ঐ সময়। আর আমি? মাঠে সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও কান খাড়া করে ‘স্যার, গুঁতায়’ টাইপের আওয়াজের অপেক্ষায় থাকতাম। বলাতো যায়না, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুঁতানোর উদোর পিন্ডি এসে যদি বুধোর ঘাড়ে পড়ে?
(তেল পেলে তারিয়ে চলতে পারে)
-অতীত
মন্তব্য
ছিঃ বদ্দা, আপনি এতো খারাপ ছিলেন
লেখা দারুণ লাগসে। চলুক। তেলমশলার দরকার হইলে বইলেন
কী কও? আমার মতো লক্ষী ছেলে সেই সময় কেউ ছিলোনা
অতীত
আপনাকে ১০ লিটার তেল
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
হায়, হায়, তৈলমর্দনে পুরাই ত্যালত্যালে তৈলাক্ত হয়া গেলাম, এহন তো আর পিছলা খাওয়া ছাড়া দাড়াইতেই পারতাছিনা
পড়েছেন জেনে অত্যন্ত ভালো লাগতেছে, এই প্রেরণায় পরের পর্ব আসতেও পারে
অতীত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অতি উত্তম। তেল দেয়া শুরু হয়ে গেছে (oiling is on), পরবর্তী কিস্তির জন্য অপেক্ষায় র'লাম।
আপনার জন্য শুভ কামনা র'ল।
নিশাচর পার্থ
নতুন মন্তব্য করুন