একজন মানুষের ছেলেবেলা তার সবচে প্রিয় সময়।আজকে আমি আমার ছেলেবেলা নিয়ে লিখবো।এ লিখার উদ্দেশ্য আমার ছেলেবেলার গল্প শোনানো না,এখনকার শহরের শিশু কিশোরদের সাথে আমদের ছেলেবেলার পার্থক্য আছে তা বলা।
গ্রামের ডানপিঠে ছেলেরা যেরকম হয় আমি ঠিক সেরকম ছিলাম না।এদিক ওদিক ঠিকই ঘুরে বেড়াতাম কিন্তু আমার সমবয়সীদের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিলাম।দুঃসাহসিও ছিলাম না।প্রাইমারিতে পড়ার সময় প্রচুর দুষ্টামি করেছি। গ্রীষ্মকালে একবার পুকুরে নামলে আমাদের উঠায় এমন হিম্মত কারো নাই। আম্মা লাঠি নিয়ে না আসা পর্যন্ত উঠার নাম নেই। পুকুরে ঢুব দিয়ে “মরিচ মরিচ” খেলা আমাদের অত্যন্ত প্রিয় খেলা ছিল। ক্লাস টু পর্যন্ত আমাদের স্কুল দুপুর ১২টা পর্যন্ত হত।স্কুল থেকে এসে কোন মতে বই রেখে, শার্ট-প্যান্ট খুলে সোজা পুকুরে। তারপর লাফালাফি, ঝাপাঝাপি, মরিচ মরিচ,কে কতক্ষন ঢুব মেরে থাকতে পারে, কে কে কতদূর ঢুব দিয়ে যেতে পারে,সাঁতার প্রতিযোগিতা, এসব শেষ করে যখন উঠতাম তখন চোখ হয়ে যেত রক্ত লাল। সে লাল আম্মার চোখেও দেখা যেত। প্রায় উত্তম মাধ্যম খেতাম। কিন্তু তাতে কি আসে যায়? শীতকাল ছিল এর বিপরীত। আমার উপর জলাতঙ্ক রোগ ভর করত। দু-চারদিন কোন ঘটনাইনা না। কতদিন যে পুকুরে গিয়ে গোসল না করে মাথায় পানি দিয়ে এসে “গোসল করছি” বলেছি তার কোন ঠিক নেই।
তখন থেকে ক্রিকেটের জন্য পাগল ছিলাম।একদিন আমাদের দলের বড় দলে চান্চ পেয়ে যাই।চান্চ পাওয়ার পিছনে একমাত্র কারন হল আমি খেলা ধরে রাখতে পারতাম। আমাদের অধিনায়ক ছিলেন নাজিম ভাই। তিনি আমাকে দিয়ে ইনিংস উদ্ভোধন করাতেন। আমি সিঙ্গেল নিয়ে দিতাম আর অন্যরা মারত। একবার আমাকে দিয়ে উদ্ভোধন না করিয়ে অন্য দুজনকে দিয়ে উদ্ভোধন করালেন ।ফলাফল খুব খারাপ, ৭ রানে ৩ উইকেট। নাজিম ভাই আমাকে ব্যাটিংয়ে পাঠালেন আর ধমক দিয়ে বললেন “দুনিয়া উল্টাই গেলেও তুই আউট হবিনাম। আউট হউলে খবর আছে” আমি গিয়ে এমন ঠেকান দিলাম যে একটা সময় আমাকে আমার প্রতিপক্ষ দল আর আউট করতেই চাচ্ছে না। এদিকে আমি রানও করতে পারছিনা। আমি ক্যাচ তুললাম তারা ছেড়ে দিল, আমি রান আউট হওয়ার চেষ্টা নিলাম, তারা আউট করল না। ভালই বিপদে পড়লাম।পরে হিট আউট হলাম।১৫ ওভারের খেলায় আমি নেমেছিলাম ২য় ওভারে, আউট হলাম ১৪ ওভারের মাথায়।আমার রান ছিল ১৪!বর্তমানে রকিবুলের মধ্যে আমি আমার ছায়া দেখতে পাই, ছোড়াটা প্রায় আমার মত খেলে।মাঝে মাঝে ভাবি কি খেলতাম আমি।
মাছ ধরার জালের প্রতি আমার ব্যপক আগ্রহ ছিল।কিন্তু জাল মেরে মাছ ধরতে পারতাম না।আমার বন্ধু জিকুও পারতো না।একবার বন্যা হয়েছিল।আমাদের বাড়ীর পিছনে পানির স্রোত বইছিল।আমরা দুজন মিলে জাল যোগাড় করলাম।স্রোতের মধ্যে জাল মারছিলাম।প্রথমে জিকু মারল।দেখে মনে হল জাল না,কোন দড়ি পেছিয়ে পানিতে ফেলল।আমি ওকে ব্যাপক তিরস্কার করলাম।তারপর জাল আমার হতে নিয়ে ওকে বললাম দেখ জাল এভাবে মারতে হয়।নিয়ম অনুযায়ী জাল ছুড়ে দিলাম পানিতে।কিন্তু হাতে থাকা জালের মাথা মানে দড়িটা খুব হাল্কা মনে হল।টান দিলাম বুঝলাম দড়ি থেকে জালখানআ ছিড়ে পানিতে মাছের কাছে চলে গেছে।দুজনে প্রথমে হাসলাম।জালটা কার যেন ছিল এই মূহূর্তে আমার ঠিক মনে নাই।তবে এটা মনে আছে জালটা খুজেঁ না পেলে আমাদেরকে জাল বানাবে।তাই দুজন মিলে লেগে গেলাম জাল খুজতে।পানিতে ডুব মের জাল খোজার সে কি অভিযান।কেমনে কেমনে জানি পেয়ে গেলাম।আজ পর্যন্ত আফসোসের বিষয় এই যে আমি জাল মারা আজও শিখিনি।
শীত আসলে খেজুরের রস,আর মোয়া আমার সকালের প্রধান খাবার হয়ে যেত।বন্ধুরা মিলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ধান ক্ষেত থেকে ধান চুরি করতাম।তারপর সে ধান নিয়ে যেতাম মোয়া ওয়ালার বাড়ীতে।ধানের বিনিময়ে মোয়া নিতাম।
একসময় শহরে আসলাম।আমার অনেক বন্ধু হল।একদিন এক বন্ধু থেকে জানলাম সে নাকি সাঁতার জানেনা।আমি বেশ অবাক হলাম।আমি ভাবতেই পারতামনা একজন ছেলে সাতাঁর জানেনা।পরে ভাইয়্যা বলল শহরের ছেলে পেলেরা নাকি সাতাঁর জানেনা।কেন জানেনা ঠিক বুঝলাম না।আজ আর অবাক হইনা,জানি কেন সাতাঁর জানেনা।আজকাল অভিভাবকরা সাতাঁর থেকে কম্পিউটার জানাকে বেশী গুরুত্ব দেয়।তারচে গুরুত্ব দেয় গাধার মত কাঁধে বই সমৃদ্ধ ব্যগ ঝুলিয়ে দিতে।শহর বলে কথা।এটা অভিভাবকদের দোষনা,এটা আমাদের মাথায় গজিয়ে উঠা অবাধ শিক্ষা প্রতিযোগিতা দায়ী।অদ্ভুত, সেসব অভিভাবকরা একবারও ভাবেননা নিজেদের শৈশবের কথা।তারা কি পেয়েছিলেন,আর তাদের সন্তানদের কি দিচ্ছেন?
এখনকার বাচ্চারা খুব কম বয়সে কম্পিউটার শিখে, ইন্টারনেট দুধ ভাত,অনেক কিছুই জানে।যা আমরা ভাবতেও পারতাম না।কিন্তু আমরা যে স্মৃতি ফেলে এসেছি তা কি তারা পাবে।গল্প করতে পারবে ধান চুরি নিয়ে,গল্প করতে পারবে মরিচ মরিচ খেলা নিয়ে।আমি জানি আমার এই কথা হয়ত শহরে বড় হওয়া তরুন তরুনিরা মাথায় নিবেনা।নিবেনা কারন তারা আসলে এটার স্পর্শও পায়নি।কোন কিছু মিস করতে হলে তা আগে পেতে হয়।
কাসাফাদ্দৌজা নোমান
মন্তব্য
অনেক ভালো লেগেছে।
আমিও সাতার পারি না।
হা হা। বেশ মজার তো !
অনেক ভালো লেগেছে।
তবে আমিও সাঁতার পারি না।
labin rahman
মজা পেলাম।
আমার অনেক বন্ধুও সাঁতার জানে না।
আমিও সাঁতার জানি না, তবে সময়মতো সাঁতরাতে পারবো এই ভরসায় শিখছি না।
লেখায় কিছু টাইপো রয়ে গেছে, দেখবেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে চাঁপাই নবাবগঞ্জে। আম বাগানের মধ্যে সেই ছোটাছুটি (একটা আমও কিন্তু ছুঁয়ে দেখার উপায় নাই, বেন্ধে রেখে দিবে), স্কুলের পিছনেই বিস্তীর্ণ হলুদ ফুলের সরিষার ক্ষেত, এখনো যেন চোখের সামনে ভাসে। খুব সুন্দর একটা সময় কেটেছে। এখনকার বাচ্চাদের হয়ত আমরা প্রকৃতির মাঝে বড় করতে পারবো না, কিন্তু যেটা অনায়াসে করতে পারি সেটা হচ্ছে ভারী ব্যাগের বোঝাটাকে একটু হাল্কা করা। বাচ্চাকাল থেকে পরীক্ষায় ভালো করার দরকার হয়না। বই নেড়েচেড়ে খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে যতটুকু শেখে আমরা তাতেই সন্তুষ্ট থাকি না কেন।
মজা লাগলো পড়ে
সাঁতার না জানাদের দেখে আমিও অবাক হই। সাঁতার আবার শেখার কী আছে? পানিতে তো এমনিতেই ভেসে থাকা যায়!
তবে আমাদের শৈশব অনেক আনন্দময় ছিলো, এখনকার পোলাপানের শৈশব লাড্ডাগুড্ডা এই বিষয়টা নিয়ে আমার একটু দ্বিধা আছে।
আমাদের বাপ চাচারাও আমাদের নিয়া একই রকম কথা বলতো। আমার ধারণা তাঁদের শৈশব নিয়া তাঁদের বাপ চাচারাও এমনই কথা বলতো...
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সবাই ভাবতেছে আমার জমানাই ভালো ছিলো, বর্তমান হইলো কলিকাল।
এইটা ঠিক না...
আমরা যা পাইছি, এখনকার পোলাপান তা না পাইলেও অন্য অনেক নতুন কিছু পাইতেছে যা আমরা পাই নাই। প্রথম লিফটে চড়ার অনুভূতি নিয়া রচনা লেখা যাইতো, আর এখনকার পোলাপান জন্মের পর থেকে এগুলা ডাইল ভাত।
প্রথম কম্পিউটার স্পর্শ করার স্মৃতি জীবনের উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আমার চার বছর বয়সী মেয়ের এখন নিজস্ব ল্যাপটপ আছে...
আমাদের জমানা একরকম ছিলো, তাদের জমানা অন্যরকম, কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ এই তুলনায় না যাই চলেন...
ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শুভকামনা রইলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন