সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’। ৈসয়দ শামসুল হকের উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ এবং একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি।
ছবির নির্মাতা আমাদের বর্তমান সময়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব বলে স্বীকৃত। এছাড়াও তার নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের উপর ‘একাত্তরের যীশু’ নামে একটি চলচ্চিত্র রয়েছে। তাই অনেকটা আশা নিয়েই প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে।
ছবির শুরুতেই আমরা দেখি ছবির প্রধান চরিত্র বিলকিস বানু (জয়া আহসান) এবং হাসানকে (ফেরদৌস), হাসান, বিলকিসের স্বামী এবং পেশায় সে সাংবাদিক। পরে আমরা দেখি যে তাকে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী গুম করে ফেলে এবং বিলকিস বানু তখন তার সাংবাদিকতার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে বের করেন গেরিলা নামক একটি পত্রিকা এবং এখান থেকেই শুরু হয় ‘গেরিলা’ ছবির কাহিনী।
এরপরে সাংবাদিক চরিত্রে আমরা আর বিলকিসকে খুঁজে পাইনা। তাকে পাওয়া যায় ব্যাংকার চরিত্রে এবং ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি সে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থের তহবিল সংগ্রহ করে এবং তাদের বিভিন্ন অপারেশনে সাহায্য করে। এরপরে আমরা ছবির মধ্যে পাই আরো অনেক চরিত্র। এদের মধ্যে অন্যতম হল ক্যাপ্টেন সরফরাজ (শতাব্দী ওয়াদুদ), ক্যাপ্টেন জামশাদ (শতাব্দী ওয়াদুদ), আলতাফ মাহমুদ (আহমেদ রুবেল), মিসেস খান (শম্পা রেজা), অনি (শাহাদাত), এটিএম শামসুজ্জামান (চরিত্রের নাম মনে নেই)। এছাড়াও আরো অনেক চরিত্র রয়েছে যাদের সবার নাম মনে নেই। এসব চরিত্রকে নিয়েই গল্প এগিয়ে যেতে থাকে পরিণতির দিকে।
‘গেরিলা’ ছবিতে আমরা নতুনত্ব এবং বৈচিত্র্যময় খুব বেশি কিছু খুঁজে পাইনা। নতুনত্ব এবং বৈচিত্র্যময় বলতে আমি বোঝাতে চাইছি চলচ্চিত্রের ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ভাষার নতুনত্ব এবং বৈচিত্র্যকে। অনেক ক্ষেত্রে মনে হয়েছে আমাদের অতীতের মুক্তিযুদ্ধের যেসব সাদাকালো ছবি রয়েছে সেগুলোর কালার ভার্সন হচ্ছে ‘গেরিলা’ ছবিটি। বম্বিং, ফায়ারিং, হেলিকপ্টারের কিছু দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে আমরা এখনও সত্তরের দশকে রয়ে গেছি। এই ধরনের বম্বিং, ফায়ারিং, হেলিকপ্টারের দৃশ্য ব্যবহার না করলে হয়তো ছবির ভিজ্যুয়ালাইজেশন আর একটু মান সম্পন্ন হতো কেননা ঐসব দৃশ্য আমাদের এফডিসির তথাকথিত সামাজিক-একশান নির্ভর ছবির প্রচলিত দৃশ্য এর কথাই মনে করিয়ে দেয়। এছাড়াও ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া, রিকশার চাকা ঘোড়ানো এবং মোটর বাইক এর দৃশ্যগুলো আমাদের নতুন কিছু দেখায় না। তবে নির্মাতা রিমান্ডে যে দৃশ্যগুলো দেখিয়েছেন এবং রাস্তার পাশে মৃত মানুষের যে দৃশ্যগুলো দেখিয়েছেন তা অভিনবত্বের দাবি রাখে।
এবার যদি আমরা ছবির চিত্রনাট্যের দিকে তাকাই তবে দেখি যে গল্প মোটামুটি সরলরৈখিক ভাবেই এগিয়েছে এবং গল্পের মাঝে মাঝেই ব্যবহার করা হয়েছে ফ্ল্যাশব্যাক। অনেক ক্ষেত্রে ফ্ল্যাকব্যাক দৃশ্যগুলো দেখে মনে হয়েছে আমি বর্তমানকেই দেখছি। এবং ছবির একেবারে শেষে আমরা দেখি বিলকিস বানু কোমর থেকে বম্ব খুলে নিয়েছে কিন্তু বম্বটা সে কোথায় পেয়েছে তা আমরা দেখতে পাইনা। এবং বিরতির পরে যখন ছবিতে একই ব্যক্তির রিপিটেশন আমরা অন্য চরিত্রে পাই তখন নির্মাতা ঐসব চরিত্র রি-এস্টাবলিস্ট করতে তাদের নামকে বিভিন্নভাবে দেখাতে চেষ্টা করেন। এছাড়া ছবির গল্পে হলিউডি স্টাইলের মতো কিছু ওঠা-নামা ছিলো অর্থাৎ গল্পের লয়ের কিছু পরিবর্তন দ্রুত ছিলো। এ ছবির চিত্রনাট্যের দায়িত্বে ছিলেন পরিচালক নিজে এবং এবাদুর রহমান। বলে রাখছি কিছুদিন আগে এবাদুর রহমানের চিত্রনাট্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধের উপর আরেকটি ছবি পেয়েছিলাম সেটা হচ্ছে ‘মেহেরজান’।
এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য যথেষ্ট প্রশংসার দাবি করতেই পারেন শতাব্দী ওয়াদুদ। তিনি প্রথমে সরফরাজ এবং পরবর্তীতে জামশাদ চরিত্রে তার সবটুকু দিয়েই অভিনয় করেছেন। এই ছবির সুন্দর কিছু বিষয়ের মধ্যে শতাব্দীর অভিনয়কে এগিয়ে রাখা যায়। সাধারণত জয়া আহসানের অভিনয়ের মধ্যে আমরা যে এক্সপ্রেশন এবং যে ফিজিক্যাল এক্টিং এর নমুনা পাই এ ছবিতে তার কিছুটা ছিলো অনুপস্থিত। এই ছবিতে হাসান চরিত্রে ফেরদৌস এর অভিনয় একটু খাপছাড়া মনে হয়েছে। তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে আমরা যেনো কোনো ত্রিভুজ প্রেমের ছবি দেখছি। আমি কখনই বলছি না যে যুদ্ধের গল্পে ভালোসা থাকবে না বা প্রেমের কোনো দৃশ্য থাকবে না। কিন্তু আমরা হাসান চরিত্রে ফেরদৌসের কথাবার্তা, চালচলন, সংলাপ বলার ভঙ্গী সব মিলিয়ে এক্সপ্রেশন গুলো মানে ছবির গল্পে হাসান চরিত্রের যে ব্যাপ্তি সেটা ঠিক ফেরদৌসের অভিনয়ে বোঝা যায়নি। এছাড়া এটিএম শামসুজ্জামান তার বর্তমান অভিনয় গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। নতুন কোনো বিষয় তার অভিনয়ে আমরা খুঁজে পাই না। আলতাফ মাহমুদ চরিত্রে আহমেদ রুবেল ভালোই করেছেন। এবং শাহাদাত চরিত্রে অনি, বিন্নি চরিত্র, সিরাজ চরিত্র, খোকন কমান্ডার চরিত্রটি এবং আজাদ আবুল কালাম এর অভিনয়ে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা ছিলো।
‘গেরিলা’ ছবির চিত্রগ্রহনের কাজটি করেছেন ভারতের সমীরণ দত্ত। তার চিত্রধারণের কাজে আমরা হাই এঙেল, লো এঙেল, লংশট, মিড লংশট, ক্রেন শট, মিড ক্লোজ-আপ এবং হ্যান্ড-হেল্ড শটের কিছু ভালো প্রদর্শন পাই তবে চমৎকৃত হওয়ার মতো কোনো কাজ আমরা দেখিনা। কিন্তু বেশ ভালো কিছু ফটোগ্রাফি সিনেমাটিতে রয়েছে অন্ধকারে প্রদীপের আলো খূঁজে পাওয়ার মতো।
ছবিটিতে শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন অনিমেষ আইচ। শিল্প নির্দেশনার এই কাজটি তিনি দক্ষতার সাথেই করেছেন। তবে ছবিটির মাঝে যে ট্যাক্সিক্যাবটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি দেখে কিছুটা মনে হয়েছে এই সময়ের। এবং জামায়াত ও শান্তি বাহিনীর কর্মী যে যুবক তার গেট আপ এবং মেক আপ দেখে মোটামুটি পরিচিত ভারতীয় ছবির কিছু চরিত্রের কথা মনে হয়েছে। তবে বিলকিস বানু চরিত্রের কস্টিউম এবং মেক আপ অনেক যত্ন নিয়ে করা হয়েছে।
ছবিটিকে অনেক কালারফুল মনে হয়েছে, কালারফুল বলতে আমি বোঝাতে চাইছি এই ছবিতে অনেক উজ্জ্বল কালার ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই কালারের ব্যবহার বিচ্ছিন্নভাবে করা হয়েছে। নির্মাতা যদি আরেকটু সচেতনভাবে কালারের ব্যবহার করতেন তবে এই ছবিতে কালারই হয়তো একটা আলাদা চরিত্র হয়ে উঠতো।
ছবিটির একটি দুরবল অংশ মনে হয়েছে সংগীতের ব্যবহারকে। ছবির শুরুতেই যখন টাইটেল কার্ডে ‘গেরিলা’ নামটি ওঠে তখন ব্যাকগ্রাউন্ডের মিউজিক শুনে মনে হয় আমি বলিউডের একশানধর্মী কোনো ছবি দেখছি (আমার কিছু পরিচিত ব্যক্তি আমায় বলেছে যে সংগীতের এমন ব্যবহার ছিলো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সাথে আমাদের বর্তমান সময়ের সংযোগ ঘটানোর জন্য। নির্মাতা সেটা করতেই পারেন আমার প্রশ্ন সেখানে নয়, আমার কথা হচ্ছে সেই ব্যবহারটা কিন্তু অন্যভাবেও হতে পারতো)। আবার ছবির মাঝখানে যখন আলতাফ মাহমুদের মেয়ে হারমোনিয়াম বাঁজিয়ে গান করে তখন আমরা ব্যাকগ্রাউন্ডে শুনি পিয়ানোর সংগীত। তবে ভাল সংগীতের অভাববোধ দুঃখবোধে পরিণত হয় যখন ক্যাপ্টেন জামশাদ, বিলকিস বানুকে শারীরিক অত্যাচার করতে উদ্যত হয় এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে বাঁজে বাঁশির চড়া সুর। (এই ধরনের সংগীত সাধারণত ব্যবহার করা হয় তখনই যখন দুই চরিত্রের মাঝেই কামের ঊদ্দীপনা কাজ করে)। এছাড়া ছবির ভিতরে কিছু অংশে সংগীতের ভালো ব্যবহার পাওয়া গেলেও পুরো ছবি জুড়ে শ্রুতিমধুর সংগীত আমরা শুনতে পাইনা।
আমরা জানি যে, এই ছবির নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এখনও পযর্ন্ত মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী এবং তিনি কর্ম জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন মঞ্চে। তাই আমরা মঞ্চের অভিনয় এবং সেটআপের বেশকিছু স্বাদ পাই এই চলচ্চিত্রে। কিন্তু এই স্বাদটা বিস্বাদ হয়ে ওঠে যখন সিনেম্যাটিক ল্যাঙুয়েজে তা আঘাত হানে।
ছবির নির্মাতা যে ধরনের রাজনৈতিক মতে বিশ্বাসী, সেই বিশ্বাসটা স্পষ্টভাবে ধরা পরে এই ছবিতে। অনেক ক্ষেত্রে মনে হয় নির্মাতা নিজেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। আমরা ছবির মাঝখানে দেখতে পাই ফিদেল ক্যাস্ট্রো, চে গুয়েভারার স্টিল ফটোগ্রাফির পাশে বঙবন্ধুর স্টিল ফটোগ্রাফ।
‘গেরিলা’ ছবিতে আমরা ম্যাজিক রিয়ালিজম ও সুর রিয়ালিজমের কিছু ব্যবহার পাই। তবে তখনই অভিভূত হতে হয় যখন দেখি জয়া আহসান তার মৃত ভাই খোকন কমান্ডারের মুখ ছুয়ে শান্তির পাখির স্পর্শ পায়।
‘গেরিলা’ ছবিটি সরকারিভাবে অনুদানপ্রাপ্ত, জনগণের ছবি। তাই বলতেই হয় ছবিটিকে এতোটা বাণিজ্যিক না করলেও চলত। ছবিটিতে বাণিজ্যের পরিমাণ কিছু কম থাকলে হয়তো নির্মাতা ছবিটিকে আরো নান্দনিক করতে পারতো এবং মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার প্রত্যক্ষ একটা স্বাদ আমাদের দিতে পারতো। ছবিটির মাঝে মাঝেই ফ্যান্টাসীর গ্লামারাস কিছু দৃশ্যে আমরা জয়া আহসান এবং ফেরদৌসকে পাই। এছাড়াও শতাব্দীর কিছু ফিজিক্যাল এক্সপ্রেশন, সংলাপ বলার ভঙি এবং জয়ার সাথে কিছু দৃশ্য সম্পূর্ণ ব্যবসায়িকভাবে দেখানো হয়েছে। ছবিতে বাড়তি সাসপেন্স আনার জন্য একটি দৃশ্যে আমরা দেখি জয়ার গাড়ি পাকিস্তান আর্মির চেকপোস্টে এসে আর স্টার্ট নিতে চায় না, একটু পরে আবার স্টার্ট নেয় গাড়ি। আমি আগেই বলেছি এই ছবির কাহিনীতে হলিউডি ছবির (গেরিলা আক্রমণের বেশ কিছু দৃশ্যে) দ্রুত লয়ে গল্প বলার ভঙির মতো একটা ভঙি ছিলো। এবং এটা যে শুধুমাত্র ছবির ভাষার জন্য করা হয়েছে এমনটা মনে হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের উপর কিছু ছবি আমরা এর আগেও আমাদের চলচ্চিত্র পেয়েছি, সেই তালিকায় নতুন যুক্ত হলো ‘গেরিলার’ নাম। কিন্তু এই ‘গেরিলা’ ছবিতে সেই সত্যিকার স্পিরিটটা যেনো খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। তবে পরিচালক হয়তো এই ব্যাপারটা পুষিয়ে দেবার জন্য অতিরিক্ত আবেগ ঢেলে দিয়েছেন খোকন কমাণ্ডারকে কোরবানি (জবাই) করার দৃশ্য দেখিয়ে। অথচ এই দৃশ্যটা যে কোনো সুস্থ মানুষকেই অসুস্থ করে দিতে পারে। যুদ্ধের উপর নির্মিত ভালো চলচ্চিত্র আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই বিভিন্ন সময়ে পেয়েছি কিন্তু ঐসব চলচিত্রে এতটা প্রত্যক্ষভাবে চোখে আঙুল দিয়ে কিছু দেখানো হয়নি।
এবার ছবির প্রচারণার বিষয়ে আসা যাক। দৈনিক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকা এই ছবি মুক্তির অনেক আগেই বিনোদন পাতায় সংবাদ করেছিলো যে নুরুল আলম আতিক এবং অনিমেষ আইচ (যাদেরকে বর্তমান সময়ে প্রতিভাবান নির্মাতা বলা হয় এবং যাদের কাজের মাধ্যমে অনেক তরুণেরাই উৎসাহিত) ‘গেরিলা’ চলচিত্রে সহকারি পরিচালক এবং প্রডাকশন ম্যানেজার হিশেবে থাকবেন। কিন্তু ‘গেরিলা’ ছবির টাইটেলে শিল্প নির্দেশক হিশেবে অনিমেষ আইচের নাম থাকলেও নুরুল আলম আতিকের নাম আমি কোথাও দেখিনি।
আমি আমার উপরোক্ত আলোচনায় ‘মেহেরজান’ ছবির কথা এক জায়গায় উল্লেখ করেছি। কারণ ‘মেহেরজান’ চলচ্চিত্রটিও মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত একটি আলোচিত ছবি যেটা কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে। তাই একটু অযাচিতভাবেই লেখায় ‘মেহেরজান’ চলে এসেছে। এটা ছাড়াও বলিউড, হলিউড, সামাজিক, একশানধর্মী এবং ত্রিভুজ প্রেম এসব প্রচলিত শব্দ ব্যবহার করেছি সহজে বোধগম্য হওয়ার জন্য। এবং ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্র বিষয়ে উপরোক্ত মতামত সম্পূর্ণভাবেই আমার নিজস্ব মতামত।
কামরুল হাসান কাইউম
মন্তব্য
উনার নাম মুক্তিযুদ্ধের সাথে আসতেই পারে, এতে কোন সমস্যা দেখি না। মুক্তিযোদ্ধারা মুজিবের নামেই যুদ্ধ করত।
অথচ আমি মনে করি নির্যাতনের খুব কমই দেখানো হয়েছে, সবই দেখানো উচিৎ, তাতে বর্তমানের স্খলিত প্রজন্ম পাকিস্তান আর রাজাকারদের নাম উচ্চারণ করতেও অপরাধবোধ করবে!!!
আর আমার কাছে মনে হয় এই ছবিটি সম্পূর্ণরূপে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করার জন্য, অস্কার পাওয়ার জন্য নয়!!!
টোনটা অন্যরকম লাগলো কিছুটা!!!
আগে কইয়া রাখি, সিনেমাটা দেখার সুযোগ হয় নাই। তয়,
প্রত্যক্ষ স্বাদ দিলে তো আপনারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন ভায়া! নির্মাতা কই যাবে?
সিনেমা না দেখে রিভিউ লিখলে কথা ছিল। দেখেও এটা লিখলেন? অনুরোধ করি - "ফিজিক্যাল এক্সপ্রেশন", "ব্যবসায়িক দৃশ্য", "কাম উদ্দীপনার সঙ্গীত" এগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে সিনেমাটা আবার দেখে আসুন, ঐ দৃশ্যে মনোযোগ দিন, সম্ভব না হলে - "গেরিলা" দেখেছে এমন কারো সংগে আলাপ করে নিন বোমাটা কোত্থেকে এলো। পাবলিক ফোরামে নিজের "অমনোযোগী" মত, "আমরা" করে বলার আগে একটু সচেতন হোন।
_
লেখাটিতে মোট ২৭বার "আমরা" পড়লাম। লেখক নিজের আর কাকে কাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন বুঝতে পারলাম না। সে সঙ্গে শেষ লাইন "‘গেরিলা’ চলচ্চিত্র বিষয়ে উপরোক্ত মতামত সম্পূর্ণভাবেই আমার নিজস্ব মতামত" নিতান্তই স্ববিরোধী মনে হলো।
-
তাই নাকি? কে কখন কোথায় এ স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করলো?
-
আপনার নিজের ব্যবসায়িক দৃষ্টির প্রশংসা করছি। কী কী কারণে ব্যবসায়িক মনে হয়েছে, কী কী করলে ব্যবসায়িক হতো না; জানার আগ্রহ জাগছে।
-
এবং ছবির একেবারে শেষে আমরা দেখি বিলকিস বানু কোমর থেকে বম্ব খুলে নিয়েছে কিন্তু বম্বটা সে কোথায় পেয়েছে তা আমরা দেখতে পাইনা।
এই লাইনটি ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। আপনার সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ।
(এই ধরনের সংগীত সাধারণত ব্যবহার করা হয় তখনই যখন দুই চরিত্রের মাঝেই কামের ঊদ্দীপনা কাজ করে)।
স্ট্যান্ডার্ডতো ভাই আমি ঠিক করি নাই। আমি শুধু বলতে চেয়েছি, ঐ দৃশ্যে ব্যাকগ্রাউন্ডে যে সংগীত ব্যবহার করা হয় তার প্রয়োগবিধিটা নিয়ে। আপনি যদি সিনেমায় সংগীতের এমন ভূল প্রয়োগ সম্পর্ক আর কিছু উদাহরণ চান তবে আমি আপনাকে 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' ছবির একটি দৃশ্যে।
(আপনার নিজের ব্যবসায়িক দৃষ্টির প্রশংসা করছি। কী কী কারণে ব্যবসায়িক মনে হয়েছে, কী কী করলে ব্যবসায়িক হতো না; জানার আগ্রহ জাগছে)
আপনার কাছে আমার এই 'গেরিলা' ছবি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী যদি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গী মনে হয় তাহলে (এছাড়াও শতাব্দীর কিছু ফিজিক্যাল এক্সপ্রেশন, সংলাপ বলার ভঙি এবং জয়ার সাথে কিছু দৃশ্য সম্পূর্ণ ব্যবসায়িকভাবে দেখানো হয়েছে।)
এই গুলো কেন ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রকাশ মনে হয় না, সেটা বুঝলাম না।
কাইউম
"আমি বুঝি সহজবোধ্যতা, আমার স্টাইল আপনার ভালো নাও লাগতে পারে।"
একটু নিচে আবু শাহেদ ইমনের মন্তব্যের জবাবে বলেছেন আপনি।
স্বঘোষিত সহজবোধ্যতার দাবীদার আপনার উপরের এই কমেন্ট পড়লাম কয়েকবার। কি বললেন, কী বোঝাতে চাইলেন, বুঝলাম কি? "আপনি যদি সিনেমায় সংগীতের এমন ভূল প্রয়োগ সম্পর্ক আর কিছু উদাহরণ চান তবে আমি আপনাকে 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' ছবির একটি দৃশ্যে।"
এই বাক্যটার অর্থ কী?
জিজ্ঞেস করেছিলাম - আপনার ভাষায় "কামের উদ্দীপনা সৃষ্টি করে" এমন সংগীত সম্পর্কে। জবাবে বললেন, ভুল প্রয়োগের উদাহরণ দিবেন, এরকম কিছু একটা...। আজব!!!
শতাব্দীর কিছু ফিজিক্যাল এক্সপ্রেশন, সংলাপ বলার ভঙি এবং জয়ার সাথে কিছু দৃশ্য সম্পূর্ণ ব্যবসায়িকভাবে দেখেছেন আপনি, সুতরাং কেন ব্যবসায়িক মনে হলো - তার ব্যাখ্যাও আপনি দেয়ার কথা। পালটা প্রশ্ন করে পিছলে যাওয়ার প্রবণতা ত্রিভূজ সিন্ড্রোম।
আমি শুধুমাত্র ছবিতে সংগীতের এমন ভুল প্রয়োগের একটা উদাহরণ দিতে ছেয়েছি থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবির মাধ্যমে।
কাইউম
আমি সিনেমাটা দেখার সু্যোগ পাই নাই, কিন্তু লেখাটা পড়ে মনে হলো , সিনেমা হিসেবে গেরিলা কেমন সেটার আলোচনা করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকে কোনভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হয়নাই। মুক্তি্যুদ্ধ নিয়ে বানানো সিনেমাকে ফিল্মমেকিং এর তরফ থেকে সমালোচনা করা হলে সেটাকে মুক্তি্যুদ্ধের চেতনার প্রতি কোনরকম আক্রমন হিসেবে দেখাটা অবিচার । মুক্তি্যুদ্ধ নিয়ে সিনেমা হতে হবে অবশ্যই। সে সাথে সিনেমা হিসেবে মানসম্পন্ন আর কোহেরেন্ট হওয়াও তো জরুরী। এখানে আমি গেরিলা সিনেমাটার মান বা কোহেরেন্স নিয়ে বলছি না জেনেরালাইজড ভাবে বলছি।
বানান ভুলের জন্য আগাম দুঃখিত।
অনেক অগোছালো লেখা। এক অ্যাসপেক্টের কথা শেষ না করেই অন্য অ্যাসপেক্টে চলে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই বক্তব্যকে স্ববিরোধী মনে হলো। লেখক নোতুন কিছু বা বৈচিত্রময় কি দেখতে চান, তাও স্পষ্ট না। এ আলোচনা বুঝতে হলে মনে হয় আগে সিনেমাটা দেখতে হবে। ডিভিডি বের হোক।
তবে মেহেরজান 'মুক্তিযুদ্ধের' ছবি না, 'স্বাধীনতাযুদ্ধবিকৃতির' ছবি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
৫ জন রাজাকারের নাম বলেন না ভাই।
ছবিটা আমি দুই বার দেখেছি । আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না ।
ছবির একেবারে শেষে আমরা দেখি বিলকিস বানু কোমর থেকে বম্ব খুলে নিয়েছে কিন্তু বম্বটা সে কোথায় পেয়েছে তা আমরা দেখতে পাইনা।
আপনি কি গাঁজা খেয়ে ছবিটি দেখেছেন ? ছবিতে বিলকিস কোমর থেকে গ্রেনেড বের করেনি । দৃশ্যটা এরকম ছিল-
বিলকিস বানুকে আর্মি ক্যাম্পে যে রুমে নেয়া হয় সেখানে টেবিলের উপরে কয়েকটা গ্রেনেড ছিল । সেই টেবিলে বিলকিস বানুকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল জামশাদ । বিলকিস টেবিল থেকে গ্রেনেডটা নেয় । তাই বলি ছবিটা ভালো করে দেখুন । তারপর লিখেন ।
আপনার লেখাটা পড়ে মনে হলো আপনি ঝাল ঝাড়ছেন । আপনি কি "মেহেরজান" ছবির সাথে ছিলেন ? আপনার লেখায় সেই টোন পাচ্ছি ।
গাজা খেয়ে ছবিটা দেখিনাই ভাইজান। আমি যে হলে দেখেছিলাম ঐ হলের যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে
'ছবির একেবারে শেষে আমরা দেখি বিলকিস বানু কোমর থেকে বম্ব খুলে নিয়েছে কিন্তু বম্বটা সে কোথায় পেয়েছে তা আমরা দেখতে পাইনা'
এই দৃশ্যটা মিস হয়ে গিয়েছিলো। এই ভুলটার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুখিত।
ভাইজান আমি 'মেহেরজান' ছবির সাথে ছিলাম না। কিন্তু আপনি বোধহয় লেখায় পড়েন নাই 'গেরিলা" ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন 'মেহেরজানের' চিত্রনাট্যকার এবাদুর রহমান। বোধহয় গল্পটাও ওনারি ছিলো।
কাইউম
ভাই, আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনি বিশাল পাকনা একজন দর্শক...গেরিলার রিভিউ লিখতে গিয়ে আপনি যে টোনে লিখলেন কেমন যেন ভালো লাগল না। আপনার অনেক আক্ষেপ কাজ করছে...বুঝতে পারলাম। আরেকটু ঝাইরা কাশেন। আর সিনেমা সব সময়ই বাণিজ্যিক হওয়া ভালো। এটা নিয়ে এত্ত কথা কেন বুঝলাম না?
লেখাটা আপনার নিজস্ব মতামত বলে পার পেয়ে যাবেন ভাবলে ভুল হবে। কারন আপনি পাবলিকলি জিনিসটা শেয়ার করছেন। তখন আপনার মতামত কিন্তু আর ব্যক্তিগত থাকলনা।
আমাদের কিছু সিনেমা বোদ্ধা ফিল্ম নিয়ে লিখতে গিয়ে গ্র্যান্ড ন্যারাটিভ টাইপের দূর্বোদ্ধ শব্দ ব্যবহার করে থাকে। আপনি বলিউড, হলিউড, সামাজিক, একশানধর্মী এবং ত্রিভুজ প্রেম এসব প্রচলিত শব্দ ব্যবহার করে খুব বোদ্ধা সাজার চেষ্টা করলেন দেখে হাসলাম।
ভাবছিলাম পারসোনাল অ্যাটাক করে লিখবনা। কিন্তু আপনার লেখাটার উদ্দেশ্য মোটেই সৎ মনে হয়নি। অন্তত গেরিলা নিয়ে আরেকটু গঠনমূলক ভাবে লেখা উচিত।
আপনি আমায় অকালপক্ক সিনেমার দর্শক মনে করতেই পারেন, এটা আপনার ব্যাপার। আর আপনার কাছে বোদ্ধা সাজার কোনো চেষ্টা আমি আমার লেখায় খুঁজে পাইনা। আমি বুঝি সহজবোধ্যতা, আমার স্টাইল আপনার ভালো নাও লাগতে পারে।
ছবির মান নিয়ে লিখেই 'মেহেরজানের' লোক হয়ে গেলাম। গঠনমূলক লিখলেতো রাজাকার হয়ে যেতাম।
সিনেমায় বাণিজ্য হবে ভালোকথা। কিন্তু ভাই এইটাতো সরকারি অনুদান এবং মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা। এই ব্যপারে একটু চিন্তা করে দেখবেন।
কাইউম
দয়া করে 'আমরা' কেটে 'আমি' করে দেন। আমার ধারনা আপনি বাদে সবাই দেখতে পেয়েছে কোথা থেকে আসলো গ্রেনেডটা।
কে ছাড়লোরে?
(মডুমামার রেস্ দরকার)
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
এতবার "দেখি না, পাই না, বুঝি না, শুনি না" পড়লাম প্রথম তিন প্যারাগ্রাফের মধ্যে যে, মনে হলো যে লেখক সিনেমা হলে বেশ একটা নাক-ডাকা ঘুম দিয়ে ঘরে ফিরে রিভিউ লিখে ফেলেছেন।
মডুরা কি বিনোদন/ গালি দেয়ার সুযোগ করে দিতে লেখাটা ছাড়লেন কি না ভাবছি।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
"ফালতু লেখা" আর "ভিন্ন মত" দুইটি আলাদা বিষয়।
শেষ দৃশ্যে গ্রেনেডের ব্যাপারটাই যে খেয়াল করে নি সে সিনেমার কী বালটা দেখেছে বোঝাই যায়। এমনকি আশেপাশের কাউকে জিজ্ঞেস করে নেবার ইচ্ছাও এই 'সমালোচকে'র মনে উদয় হয়নি। ওদিকে আস্ত একটা লেখা প্রসব করে বসে আছে। এই লেখায় তোলা পয়েন্টগুলোর প্রায় প্রত্যেকটাই কানে ধরে ধরে খন্ডন করানো যায়।
সচলায়তনে আরও মানসম্মত লেখা আশা করি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আপনি এক কাজ করুন। একটা ভালো সিনেমা হলে ছবিটা আবার দেখুন। আমার মনে হয় হলের যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে আপনি মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখতে পারেননি।
এ ধরনের ফালতু লেখা প্রকাশ এর পূর্বে সচলায়তন মডারেটর দের আরেকটু সচেতন হতে অনুরোধ করছি।
আরে ভাই জলজ্যান্ত পাকি সেনা সামনে থাকলে গ্রেনেড ক্কোথা থেকে নিল তা কি আর চোখে পড়ে নাকি? অত্যন্ত immature, চিকন ধান্ধা পরিপূর্ণ review
নতুন মন্তব্য করুন