রবীন্দ্রনাথ নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের তথ্যবিভ্রাট

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৯/০৫/২০১১ - ৮:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ায় অনেক লেখা আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ মে কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় রবি এবং রবি নামে একটা লেখা আমার চোখে পড়ে। লেখকের নাম হুমায়ূন আহমেদ বলেই উৎসাহভরে পড়া শুরু করি। শুরুতেই চমক। এ লেখায় রবীন্দ্রনাথ নিয়ে নতুন তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে লেখক প্রথমেই মনোযোগ টেনে নেন। লেখকের ভাষায়,


রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন কিছু কি লেখা সম্ভব? এমন কিছু, যা আগে লেখা হয়নি? মনে হয় না। সব কথা বলা হয়ে গেছে। নানানভাবে বলা হয়েছে। তারপরেও দেখি, নতুন কিছু বলতে পারি কি না।

কিন্তু নতুন তথ্য দেওয়ার নামে হুমায়ূন আহমেদ এমন একটি গুরুতর তথ্য বিভ্রাট করে বসবেন স্বপ্নেও ভাবি নি। লেখক এক জায়গায় লিখেছেন,

আইনস্টাইনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দেখা হলো। অনেক আলাপ-আলোচনার মধ্যে হঠাৎ করে আইনস্টাইন জানতে চাইলেন, পদার্থবিদ সত্যেন বসু কেমন আছেন?
রবীন্দ্রনাথ সত্যেন বসুকে চিনতে পারলেন না। আইনস্টাইন অবাক। পদার্থবিদ্যার একজন বাঙালি গ্র্যান্ডমাস্টারকে রবীন্দ্রনাথ চিনতে পারছেন না?
রবীন্দ্রনাথ লজ্জা পেলেন। তাঁর লজ্জা তো আর আমাদের দশজনের লজ্জা না। তাঁর লজ্জাতেও ফসল উঠে আসে। তিনি বিজ্ঞান নিয়ে অনেক পড়লেন।একটি বই লিখলেন, 'বিজ্ঞানের কথা'। বিজ্ঞান নিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথের একমাত্র গ্রন্থ।
বইটি উৎসর্গ করলেন সত্যেন বসুকে। এই মানুষটিকে না-চেনার প্রায়শ্চিত্ত এভাবেই করলেন।

পড়ে আমি পুরাই টাশকি খেলাম! রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ভাবনা আমার ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এ বিষয় নিয়ে কয়েকটি বই পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু সত্যেন বসুকে আইনস্টাইনের সাথে সংলাপরত রবীন্দ্রনাথ চিনতে পারেন নি এমন তথ্য কোথাও পাইনি। আইনস্টাইনের সাথে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার দেখা হয়েছে এবং যেহেতু বিষয়টি ব্যক্তিগত আলাপচারিতার পর্যায়ে ছিল সেজন্য এ তথ্যটিকে বেনিফিট অফ ডাউট দেওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে যদি কেউ রেফারেন্সসহ তথ্য দিতে পারেন তাহলে খুব ভাল হয়।

তবে পরের অংশে পরিবেশিত তথ্য একেবারেই ভিত্তিহীন। সত্যেন বসুকে না চেনার অপরাধে(!) সৃষ্ট অনুশোচনা থেকে তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ে কৌতুহল বা এ বিষয়ে পড়াশোনার শুরু-এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। বাল্যকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান নিয়ে ভীষণ উৎসাহী। বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল বিজ্ঞান প্রবন্ধ দিয়েই লেখক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু করেন। সাড়ে বারো বছর বয়সে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ একটি অসাক্ষরিত প্রবন্ধ লেখেন, যার নাম গ্রহগণ জীবের আবাসভূমি। এটাই রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রকাশিত গদ্য রচনা।

সারাজীবন-ই বিজ্ঞানের প্রতি রবীন্দ্রনাথের এই কৌতুহল বজায় ছিল। এর কিছু পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করব। তবে তার আগে হুমায়ূন আহমেদ যে শোচনীয় ভুলটি করে বসেছেন, সেটার কথা বলি। রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানের কথা নামে কোন বই কোনকালেই লেখেন নি। (ধরে নিচ্ছি - হুমায়ূন আহমেদের কাছে রবীন্দ্রনাথের কোন অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি নেই চোখ টিপি !)। রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান বিষয়ক একমাত্র যে বইটি লিখেছেন সেটি হল বিশ্বপরিচয়। এই বইটিই তিনি সত্যেন বসুকে উৎসর্গ করেছেন।

বিশ্বপরিচয় গ্রন্থে সত্যেন বসুকে উদ্দেশ্য করে লেখা উৎসর্গ অংশে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাল্যকালের বিজ্ঞানলেখাটির কথা উল্লেখ করেছেনঃ

আমি বিজ্ঞানের সাধক নই সে কথা বলা বাহুল্য। কিন্তু বালককাল থেকে বিজ্ঞানের রস আস্বাদনে আমার লোভের অন্ত ছিল না।......... তার পরে বয়স তখন হয়তো বারো হবে (কেউ কেউ যেমন রঙ-কানা থাকে আমি তেমনি তারিখ-কানা এই কথাটি বলে রাখা ভালো) পিতৃদেবের সঙ্গে গিয়েছিলুম ড্যালহৌসি পাহাড়ে। সমস্ত দিন ঝাঁপানে করে গিয়ে সন্ধ্যাবেলায় পৌঁছতুম ডাকবাংলায়। তিনি চৌকি আনিয়ে আঙিনায় বসতেন। দেখতে দেখতে, গিরিশৃঙ্গের বেড়া-দেওয়া নিবিড় নীল আকাশের স্বচ্ছ অন্ধকারে তারাগুলি যেন কাছে নেমে আসত। তিনি আমাকে নক্ষত্র চিনিয়ে দিতেন, গ্রহ চিনিয়ে দিতেন। শুধু চিনিয়ে দেওয়া নয়, সূর্য থেকে তাদের কক্ষচক্রের দূরত্বমাত্রা, প্রদক্ষিণের সময় এবং অন্যান্য বিবরণ আমাকে শুনিয়ে যেতেন। তিনি যা বলে যেতেন তাই মনে করে তখনকার কাঁচা হাতে আমি একটা বড়ো প্রবন্ধ লিখেছি। স্বাদ পেয়েছিলুম বলেই লিখেছিলুম, জীবনে এই আমার প্রথম ধারাবাহিক রচনা, আর সেটা বৈজ্ঞানিক সংবাদ নিয়ে।

কিন্তু এই সুদীর্ঘ উৎসর্গপত্রে বিশ্বপরিচয় রচনার হুমায়ূন কথিত কারণটির উল্লেখ কোথাও পেলাম না। বরং সাধারণ মানুষের মাঝে বিজ্ঞানের নির্যাসটুকু ছড়িয়ে দিতেই তাঁর এই প্রচেষ্টা সেটার-ই উল্লেখ পাওয়া যায়।

শিক্ষা যারা আরম্ভ করেছে, গোড়া থেকেই বিজ্ঞানের ভাণ্ডারে না হোক, বিজ্ঞানের আঙিনায় তাদের প্রবেশ করা অত্যাবশ্যক। এই জায়গায় বিজ্ঞানের সেই প্রথমপরিচয় ঘটিয়ে দেবার কাজে সাহিত্যের সহায়তা স্বীকার করলে তাতে অগৌরব নেই। সেই দায়িত্ব নিয়েই আমি এ কাজ শুরু করেছি।

রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান বিষয়ক উৎসাহ যে একদিনে তৈরি হয় নি তাঁর প্রমাণ মেলে এখানেই,

জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ বই পড়তে লেগে গেলুম। এই বিষয়ের বই তখন কম বের হয় নি। স্যার রবর্ট বল-এর বড়ো বইটা আমাকে অত্যন্ত আনন্দ দিয়েছে। এই আনন্দের অনুসরণ করবার আকাঙ্ক্ষায় নিউকো‌ম্ব্স, ফ্লামরিয়ঁ প্রভৃতি অনেক লেখকের অনেক বই পড়ে গেছি – গলাধঃকরণ করেছি শাঁসসুদ্ধ বীজসুদ্ধ। তার পরে এক সময়ে সাহস করে ধরেছিলুম প্রাণতত্ত্ব সম্বন্ধে হক্সলির এক সেট প্রবন্ধমালা। জ্যোতির্বিজ্ঞান আর প্রাণবিজ্ঞান কেবলই এই দুটি বিষয় নিয়ে আমার মন নাড়াচাড়া করেছে। তাকে পাকা শিক্ষা বলে না, অর্থাৎ তাতে পাণ্ডিত্যের শক্ত গাঁথুনি নেই। কিন্তু ক্রমাগত পড়তে পড়তে মনের মধ্যে বৈজ্ঞানিক একটা মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। অন্ধবিশ্বাসের মূঢ়তার প্রতি অশ্রদ্ধা আমাকে বুদ্ধির উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে আশা করি অনেক পরিমাণে রক্ষা করেছে। অথচ কবিত্বের এলাকায় কল্পনার মহলে বিশেষ যে লোকসান ঘটিয়েছে সে তো অনুভব করি নে।

অথচ হুমায়ূন আহমেদ কোথা থেকে এমন একটি লজ্জা থেকে বিজ্ঞান আগ্রহ তৈরির তত্ত্ব এনে ফেললেন সেটা বুঝতে পারলাম না। বিশ্বপরিচয় লেখা হয়েছিল লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা সিরিজের অংশ হিসেবে। সাধারণ মানুষ যেন সহজে বিভিন্ন বিষয়ের মূল নির্যাসটুকু আয়ত্ত্ব করতে পারে- সে লক্ষ্য নিয়েই রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী থেকে লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা নামে একটি সিরিজ গ্রন্থমালা বের করেছিলেন। সহজ সরল ভাষায় কিন্তু তথ্যের প্রাচুর্য ও সঠিকতা অক্ষুণ্ব রেখে জ্ঞান পরিবেশন ছিল এ সিরিজের মূল উদ্দেশ্য। আজকের দিনে যেমন আমরা ...for dummies অথবা complete idiot's guide টাইপের বই দেখে থাকি সেই রকম আর কি!

১৯৩৩ সালের জুলাই মাসে প্রমথনাথ সেনগুপ্ত বিশ্বভারতীতে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকেই লোকশিক্ষা সিরিজের জন্য বিজ্ঞানের বই লেখার ভার দিয়ে ছিলেন। এজন্য তাকে ইংরেজিতে লেখা কয়েকটি জনপ্রিয় বিজ্ঞানগ্রন্থ পড়তেও দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ভাষার দিকটা প্রয়োজনে ঘষামাজা করে দেবেন। কিন্তু প্রমথনাথ লিখতে বসে খুব বেশি এগোতে পারেন নি। অনেক পরিশ্রমে প্রথম খসড়া করে নিয়ে এলেন কবির কাছে। কবি পড়ে তাঁর সাবলীয় ভাষায় সেটাকে সাজিয়ে প্রমথনাথের হাতে তুলে দিয়ে বললেন,

তোমার রচনা পড়েছি, শুরু যেভাবে করেছ তার পাশে লিখে দিয়েছি কীভাবে শুরু করতে হবে। মনে হয় বাংলায় বিজ্ঞানের সহজবোধ্য বই ''এই ভাষায়" লেখা সংগত হবে।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নির্দেশিত ভাষায় প্রমথনাথ সেনগুপ্ত(যিনি সত্যেন বসুর ছাত্র ছিলেন) খুব বেশি দূর লেখা এগিয়ে নিতে পারেন নি, আর সেটা হওয়ার কথাও নয়। বিজ্ঞানের তত্ত্ব তিনি ভাল জানতেই পারেন কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আশ্চর্য-সুন্দর ভাষার অনুকরণ করা কি তাঁর পক্ষে সম্ভব! বোধ করি সেটা কারো পক্ষেই নয়, কারণ প্রত্যেকের নিজের নিজের স্টাইলটা আলাদা।
ফলে ধীরে ধীরে এটাই দাঁড়াল যে, প্রমথনাথ তত্ত্ব ও তথ্য সংগ্রহ করে তাঁর মত সাজিয়ে আনতেন, রবীন্দ্রনাথ সেটার খোল-নলচে পালটে দিয়ে সাবলীল ভাষায় সেটাকে নতুন করে লিখতেন। এই বইটি লেখার সময়কার এ ঘটনাগুলো প্রমথনাথ নিজেই তাঁর স্মৃতিচারণমূলক বই ''আনন্দরূপম''-এ লিখে গেছেন। প্রমথনাথের লেখায় পরিবর্তনের পরিমাণ শেষে এত বেশি হয়ে গেল যে শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ নিজের নামেই সেটা প্রকাশ করলেন। উৎসর্গপত্রে সেটা তিনি উল্লেখ করেছেন,

শ্রীমান প্রমথনাথ সেনগুপ্ত এম. এসসি. তোমারই ভূতপূর্ব ছাত্র। তিনি শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান-অধ্যাপক। বইখানি লেখবার ভার প্রথমে তাঁর উপরেই দিয়েছিলেম। ক্রমশ সরে সরে ভারটা অনেকটা আমার উপরেই এসে পড়ল। তিনি না শুরু করলে আমি সমাধা করতে পারতুম না, তাছাড়া অনভ্যস্ত পথে শেষ পর্যন্ত অব্যবসায়ীর সাহসে কুলোত না তাঁর কাছ থেকে ভরসাও পেয়েছি সাহায্যও পেয়েছি।

ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে রবীন্দ্রনাথ ''মানত'' রক্ষা করতে এই বইটি লেখেন নি, লিখেছেন অনেকটা বাধ্য হয়েই। প্রমথনাথের ভাষা কবিগুরুর পছন্দ হলে হয়তো রবীন্দ্রনাথকে এই বইটিতে হাত লাগাতেই হত না। বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ যখন বাংলাভাষার শ্রেষ্ঠপুরুষটির নামে তাঁরই জন্মদিনে তাঁর সম্পর্কিত মজলিশি আড্ডার জটায়ুমার্কা ভুল তথ্য দেশের প্রধান দৈনিকের প্রথম পাতায় পরিবেশন করেন তখন এর কুপ্রভাবটি অনেক বিস্তৃত হবে বলেই আশংকা হয়। আমার আশে-পাশের অনেকেই কেবল হুমায়ূন আহমেদের লেখার পাঠক। ফলে এই ভুল তথ্যটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে বিদ্যুৎগতিতে- সেটা ভাবা ভুল হবে না। সে জন্য হাতের কাছে থাকা কয়েকটা তথ্য সাজিয়ে এই অগোছালো লেখাটার অবতারণা।
আমার বিশ্বাস ভুল ধারণা বা তথ্য বিভ্রাটকে এড়ানোর একমাত্র পথ সঠিক তথ্যটি জানা। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয় লেখাটি পড়ার মাধ্যমে আমরা রবীন্দ্রনাথকে আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে পারি। বাংলা উইকিসংকলন বা অনলাইন রবীন্দ্র রচনাবলী তো হাতের নাগালে-ই!
বিশ্বপরিচয় বইটি প্রায় ৭৫ বছর আগে লেখা। বিজ্ঞানের জগতে এর মধ্যে ঘটে গেছে বিশাল পরিবর্তন। অনেক তত্ত্ব ও তত্ত্ব পালটে গেছে আমূল। তবু তারপরও এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা শুধু রবীন্দ্র রচনা-ই নয়, একই সাথে মাতৃভাষায় সাবলীল বিজ্ঞানচর্চার এক অনন্য উদাহরণ। রবীন্দ্রনাথের এই বইটি পড়ার সময় আসিমভের সাবলীল ভাষার কথাটি আমার মনে পড়ছিল। সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বপরিচয় থেকে একটা পরিচ্ছদ উদ্ধৃত করেই বিদায় নিচ্ছি,

বিশ্বজগৎ আপন অতিছোটোকে ঢাকা দিয়ে রাখল, অতিবড়োকে ছোটো করে দিল, কিংবা নেপথ্যে সরিয়ে ফেলল। মানুষের সহজ শক্তির কাঠামোর মধ্যে ধরতে পারে নিজের চেহারাটাকে এমনি করে সাজিয়ে আমাদের কাছে ধরল। কিন্তু মানুষ আর যাই হোক সহজ মানুষ নয়। মানুষ একমাত্র জীব যে আপনার সহজ বোধকেই সন্দেহ করেছে, প্রতিবাদ করেছে, হার মানাতে পারলেই খুশি হয়েছে। মানুষ সহজশক্তির সীমানা ছাড়াবার সাধনায় দূরকে করেছে নিকট, অদৃশ্যকে করেছে প্রত্যক্ষ দুর্বোধকে দিয়েছে ভাষা। প্রকাশলোকের অন্তরে আছে যে অপ্রকাশলোক, মানুষ সেই গহনে প্রবেশ করে বিশ্বব্যাপারের মূলরহস্য কেবলই অবারিত করছে। যে সাধনায় এটা সম্ভব হয়েছে তার সুযোগ ও শক্তি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই নেই। অথচ যারা এই সাধনার শক্তি ও দান থেকে একেবারেই বঞ্চিত হল তারা আধুনিক যুগের প্রত্যন্তদেশে একঘরে হয়ে রইল।

-----------------------------------------------

( আনন্দ থেকে প্রকাশিত দীপংকর চট্টোপাধ্যায় রচিত ''রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান'' বইটি থেকে তথ্যগুলো নেওয়া)

পথিক রহমান


মন্তব্য

 শুভাশীষ মনি এর ছবি

একেবারে জায়গা মতন ধরেছেন দেখছি ।

হিমু এর ছবি

সত্যেন বসু খ্যাতি লাভ করেন ১৯২৪ সালে লেখা তাঁর পেপারটির জন্যে। সেটি তিনি আইনস্টাইনের কাছে সরাসরি পাঠিয়েছিলেন, আইনস্টাইন সেটিকে জার্মানে অনুবাদ করে একটি জার্মান জার্নালে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করে বসুকে ইয়োরোপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করে পরবর্তী দুই বছর ইয়োরোপে কাটিয়ে ১৯২৬ সালে দেশে ফেরেন।

জার্মানিতে রবীন্দ্রনাথের সাথে আইনস্টাইনের প্রথম সাক্ষাতও ১৯২৬ সালেই হয়েছিলো। যেহেতু রবীন্দ্রনাথ জগদীশচন্দ্র বসুর বন্ধু ছিলেন, এবং সত্যেন বসু আচার্য জগদীশ বসুর স্নেহভাজন ছিলেন, এমন একটি যুগান্তকারী তাত্ত্বিক আবিষ্কারের সংবাদ এই দুই বছরে রবীন্দ্রনাথের অবিদিত থাকবে, এটি কিঞ্চিৎ কষ্টকল্পনা।

দ্বিতীয়ত, একজন জার্মান একজন ভারতবর্ষীয় কবিকে "আপনার দেশের অমুক কেমন আছেন" গোছের প্রশ্ন করবেন বলে বিশ্বাস হয় না। আইনস্টাইন নিশ্চয়ই জানতেন যে ভারতবর্ষ একটি বড় দেশ, এবং এটিই ধরে নেয়া স্বাভাবিক যে রবীন্দ্রনাথ ও বসু পাশাপাশি বাড়িতে বাস করেন না। রবীন্দ্রনাথ যদি আইনস্টাইনকে গিয়ে প্রশ্ন করতেন, রাইনার রিলকে কেমন আছেন, সেটা যেমন বেখাপ্পা প্রশ্ন হতো (আইনস্টান-ঠাকুর সাক্ষাতের কয়েক মাস পরই সুইৎজারল্যাণ্ডে কবি রিলকে পরলোকগমন করেন), আইনস্টাইনের কথিত প্রশ্নটিও তেমনি। এরকম ভোদাইমার্কা প্রশ্ন করে অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত লোকজন। আজকে কেউ হুমায়ূন আহমেদ সাহেবকে গিয়ে যদি প্রশ্ন করে, প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম কেমন আছেন, তিনি কি তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দিতে পারবেন, নাকি তার আদৌ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা উচিত? দুইজনই তো বাঙালি, একই দেশে থাকেন, কিন্তু একজন আরেকজনের কুশলাদির খবর রাখবেন, এটা কি আশা করা উচিত? আইনস্টাইনকেও তাই এই ক্যাটেগোরির বেয়াকুব কল্পনা করা মুশকিল।

ঐ লেখায় আরো দেখলাম, হুমায়ূন আহমেদ সাহেব নিজের লেখা কোনো এক নাটকে বিধৃত রবীন্দ্রানুরাগ পশ্চিম বাংলার কোন এক পত্রিকায় প্রশংসিত হবার ক্যানভাসিংও করলেন। আণ্ডারটোনটা এমন, হুঁ হুঁ বুঝলি, আমি নাটক না লিখলে ওরা জানতোই না যে আমরা রবিকে কদর করি। মজা পেলাম, হাসলাম। প্রৌঢ় বয়সে অ্যাকিউট অ্যাটেনশন ডেফিসিট সিনড্রোমের অপকারিতা সম্পর্কে গুগল মেরে খোঁজ নিলাম।

হিমু এর ছবি

Widely repeated anecdote প্রামাণ্য হয় নাকি? আরেকটা widely repeated anecdote হচ্ছে কাজী নজরুল মুসলমান দেখে তাকে নোবেল দেয়া হয় নাই। সেইটাও কি এখন থেকে বিশ্বাস করা শুরু করতে হবে?

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের কোনো আত্মজীবনীতে এ ঘটনার বর্ণনা থাকলে বইটার নাম আর পৃষ্ঠা নাম্বার জানান প্লিজ।

অনাহুত বা রবাহুত এর ছবি

সত্যেন্দ্রনাথের যেকোনো ভালো জীবনীগ্রন্থেই এটা পাবেন। হাতের কাছে আপাতত নাই তাই রেফারেন্স দিতে পারছি না; বাই দা ওয়ে আইন্সটাইনের সাথে রবীন্দ্রনাথের একটা আলোচনার কিন্তু কোনো রেকর্ড নেই! কাজেই রেকর্ডেড ডকুমেন্ট নাও পেতে পারেন। হাসি

অনাহুত বা রবাহুত এর ছবি
ইকবাল  এর ছবি

বাংলা অনেক বইতে ঘটনাটা লেখা আছে - বাংলাতে আইনস্টাইনের জীবনী, বোসের জীবনী, রবীন্দ্রনাথের সাথে সত্যেন বোসের সম্পর্ক বা বিশ্বপরিচয় লেখা বোসকে উৎসর্গ করার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কোনো লেখায়। মুল ঘটনা হল রবীন্দ্রনাথ ১৯৩০ সালে আইনস্টাইনের কাছে প্রথম সত্যেন বোসের পরিচয় জেনেছিল। ১৯৩০ সালে ইউরোপ ভ্রমন করে এসে তাই রবীন্দ্রনাথ প্রথম সত্যেন বোসের সাথে দেখা করেছিল তাকে শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রণ করে। বোস বাংলাতে বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে কাজ করতেন - সে ভাবে তিনি রবীন্দ্রনাথকে 'বিশ্বপরিচয়' লিখতে প্রভাবিত করেছিলেন কিনা সেটা জানা নেই। "আইনস্টাইন - সংগ ও নিসংগ" (কলকাতা থেকে প্রকাশিত, লেখকের নাম মনে নেই) বাংলা একাডেমির "সত্যেন বোস" জীবনীগ্রন্থে একথা আছে। রবীন্দ্রনাথকে আইনস্টাইন বোসকে নিয়ে কি বলেছিলেন সে ব্যাপারে একেকজন একেক কথা বসিয়ে নেন - এখানে নির্ভরযোগ্যতা নেই, তবে তারা যে কোলাবরেট করেছেন সেটা রবীন্দ্রনাথ জানতে পেরেছিলেন।

"Widely repeated anecdote" - এই কোট টা যে সাইট থেকে নেয়া হয়েছে, সেটা আমিও খুজে পেয়েছি। এটাকে ওখানে অ্যানেকডোট বলা হলেও এর সত্যতা আছে - মানে ঘটনার সত্যতা আছে - কি কথা বলেছিল সেটার না।

আর এর সাথে তুলনা "আরেকটা widely repeated anecdote হচ্ছে কাজী নজরুল মুসলমান দেখে তাকে নোবেল দেয়া হয় নাই। সেইটাও কি এখন থেকে বিশ্বাস করা শুরু করতে হবে?" - নজরুলের এটা কোনো অ্যানেকডোট না - কনস্পিরেসি থিওরি, হাইপোথেসিস এ ধরনের কিছু।

সত্যেন বোস কোনো সেলেব্রিটি সায়েন্টিস্ট নন - ইম্পর্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট বটে। তাকে নিয়ে খুব কম কিছুই লেখা হয়েছে - বা তার জীবনী খুব কম লোকেই পড়েছে। কেউ যদি উইকিপিডিয়ার বাইরে তার কোনো জীবনী পরে থাকে তাহলে এ ঘটনা জানার কথা। ১) তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ছিলেন ২) তিনি আইনস্টাইন কে চিঠি লিখেছিলেন পেপার পাঠিয়ে, ৩) বোস-আইনস্টাইন স্টাটিসটিকস। এর বাইরে কেউ কিছু তাকে নিয়ে জানলে এ ঘটনাটা (৪) নম্বরে পরে বলে আমার ধারনা। ধন্যবাদ।

ইকবাল এর ছবি

শুধু বইয়ের নামেই হুমায়ুন আহমেদ ভুল করেছেন। এই লেখায় আর কোথাও তো আমি ভুল দেখছিনা। সত্যেন বোসকে রবীন্দ্রনাথ চিনতে পারেন নি কথা ঠিক। রবীন্দ্রনাথ 'বোস' নাম শুনে জগদীশ চন্দ্রকে বুঝেছিলেন, কিন্তু আইনস্টাইন ভুল শুধরে দিয়ে বলেছিলেন উনি সত্যেন বোসের কথা বলছেন, "যিনি এমন একজন বিজ্ঞানী যাকে নিয়ে যে কোনো দেশ গর্ব করতে পারে"। রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের মিটিং এর অনেক লেখায়ই এ তথ্য পাবেন, তার চেয়েও বেশি পাবেন সত্যেন বসুকে নিয়ে লেখায়। আপনি কোনো কিছু না জানলে সেটা ঠিক না সেটা ভাবা ভুল। সত্যেন বোসকে তখন কেউই চিনত না - যদিও তার কয়েক বছর আগে উনি 'বোস স্টাটিসটিকস' নিয়ে পেপার লিখেছেন - আইনস্টাইন সেটা অনুবাদ করেছেন ও নিজেও সেই আইডিয়াকে এক্সটেন্ড করেছেন, তাই তিনি তার কাজের গুরুত্ব বুঝেছিলেন। বিজ্ঞানে রিকগনিশন খুব ধীরে ধীরে আসে বলে সত্যেন বোসকে তখন কেউই চেনা শুরু করেনি। রবীন্দ্রনাথ দেশে ফিরে এসে সত্যেন বসুকে শান্তিনিকেতনে ডেকেছিলেন দেখা করার জন্য।

হুআ লিখেছেন - "তিনি বিজ্ঞান নিয়ে অনেক পড়লেন"। হুমায়ুন আহমেদ কোথাও বলেননি রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন না। আপনি লিখেছেন "সত্যেন বসুকে না চেনার অপরাধে(!) সৃষ্ট অনুশোচনা থেকে তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ে কৌতুহল বা এ বিষয়ে পড়াশোনার শুরু-এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। বাল্যকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান নিয়ে ভীষণ উৎসাহী।" হুআ তো কোথাও আপনার এ তথ্য বলেন নি - "বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনার শুরু" তখন থেকে এটা আপনি বানিয়েছেন তার লেখার সুত্র ধরে। আপনি যদি "বিশ্বপরিচয়" বই টা পড়ে থাকেন তাহলে দেখবেন রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন যে তিনি এ বইটা লেখার জন্য অনেক খেটেছেন, অনেক পড়েছেন। হুআ কি এটাই বলেননি? তিনি তো বলেন নি রবিঠাকুর বিজ্ঞান নিয়ে জীবনে কখনো উৎসাহী ছিলেন না।

হুমায়ুন আহমেদ বইয়ের নামটা ভুল করেছেন, সেটা ঠিক। কিন্তু আপনার পুরো পোস্টের মধ্যে এক ধরনের অন্ধ পীর ভক্তি প্রকাশ পায়। প্রথমত, একটা ঘটনাকে আপনি মেনে নিতে চাচ্ছেন না শুধুমাত্র এ রকম মনোভাব থেকে যে "রবীন্দ্রনাথ জানতে পারে না সেটা তো হতেই পারে না।" সেকন্ড, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন - কিন্তু তাকে অযথা বিশাল বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানমনষ্ক, ডাক্তার, হেন তেন বানানোর জন্য অন্ধভক্তরা উঠেপড়ে লাগে - আপনার লেখা পড়ে তাই মনে হচ্ছে। আর হুমায়ুন আহমেদের কারেক্ট একটা কথার সুত্র ধরে আপনি পোষ্ট দিয়েছেন কারন আপনি আঘাত পেয়েছেন কেন সবাই রবীন্দ্রনাথের অন্ধভক্ত না, অথচ এটা আলাদাভাবে "রবীন্দ্রনাথের লেখায় বিজ্ঞান" বা এ ধরনের একটা কিছু হতে পারত - মুক্তমনাতে এ ধরনের একটা পোস্ট পড়েছি - সেভাবে পড়লেই লেখাটা ভাল লাগত - হুমায়ুন আহমেদ কি লিখেছেন তাকে খন্ডন করার জন্যে নয়।

শেষ কথা, হুমায়ুন আহমেদের লেখার আমি কোনো ফ্যান না, ক্রিটিকই বটে। তবে আপনার এ পোস্টের কোট পড়ে মনে হচ্ছে, বইয়ের নাম ভুল করেছেন তিনি, এর বেশি কিছু নয় - এ ধরনের ভুল হতে পারে, যদিও তার মেমোরি থেকে না লিখে রেফারেন্স চেক করা ‌উচিত ছিল। সত্যেন বসুর ঘটনার কথা অনেক বাংলা বইতে পাবেন - অনলাইনে সব লিন্ক পাওয়া যায় না।

অতিথি লেখক(pothik) এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য। সত্যেন বোসকে চিনতে না পারার ব্যাপারটি নিয়ে আমি নিজেই শিওর নই বলেই তো বিস্তারিত জানাতে বলে পোস্টে সাহায্য চাইলাম। হিমু এবং আপনি দুজনেই এ বিষয়ে তথ্য দিলেন বলে ধন্যবাদ। বোস হতে বোসে গোলমাল হতেই পারে। তবে রেফারেন্স দিলে আরেকটু ভাল হত।
রবীন্দ্রনাথের লেখা বইয়ের নাম ভুল করা হয়েছে সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু এটাই একমাত্র ভুল তো নয়। বিশ্বপরিচয় সৃষ্টির পেছনে 'লজ্জা তত্ত্ব' কোন রেফারেন্স বইতে আছে কিনা সেটা জানতে ভীষণ আগ্রহ হচ্ছে! আমি আমার লেখায় ভাল ভাবেই দেখিয়েছি সত্যেন বোসকে না চিনতে পারার ব্যর্থতা ঘোচাতে আদাজল খেয়ে বিজ্ঞান রচনা নয় বরঙ অন্যের লেখা বই সম্পাদনা করতে করতেই বিশ্বপরিচয় লেখা হয়েছে।
এনিওয়ে, নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স দিলে সব কিছুই মেনে নিতে রাজি। রবীন্দ্রনাথকে বড় করা বা হু আ কে ছোট করে আমার কি লাভ! সঠিক তথ্য জানতে পারলেই ভাল লাগবে।

সুরঞ্জনা এর ছবি

কিন্তু আপনার পুরো পোস্টের মধ্যে এক ধরনের অন্ধ পীর ভক্তি প্রকাশ পায়।

উনি আইন্সটাইন এবং রবি ঠাকুরের কথোপকথনের ব্যাপারে হয়্ত জানেন না, সে ক্ষেত্রে আপনার দেয়া তথ্য ঠিক আছে। কিন্তু পোস্ট পড়ে আমি বুঝলাম, লেখক বলতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথের বই লেখার ইন্সপিরেশনের ব্যাপারে হুমায়ূন আহমেদ যে তথ্য দিয়েছেন (সত্যেন বোস কে চেনেন না বলে ওনার লজ্জা হয়, এবং ফলে তিনি বিজ্ঞান নিয়ে অনেক পড়লেন, তাই বই লিখে ফেললেন) এটা সঠিক নয়।

বিজ্ঞান নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগ্রহ বরাবরই ছিলো, সেটা লজ্জা দ্বারা উদ্ভূত নয়। এটা বলা আর অন্ধ পীরভক্তি এক নয়। হাসি

তবে ভুল তথ্যের উদ্বৃতি দিতে গিয়ে লেখকের নিজের জানার সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পাওয়া দুঃখজনক।
পোস্ট লেখকের প্রতি অনুরোধ, আপনি যদি লেখাটা পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে পাঠান, তবে আরেকটু যাচাই করে পাঠাবেন।

আর যাই হোক, রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন, এবং সেটা লজ্জাপ্রসূত হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনো মনোভাব নয়। এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন আহমেদের বক্তব্যের সমালোচনা করা খুবই যুক্তিযুক্ত।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

কৌস্তুভ এর ছবি

আহা, উনি তো সত্যিই একটা নতুন গল্প বললেন আমাদের জন্য!

ফাহিম হাসান এর ছবি

রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানের কথা নামে কোন বই কোনকালেই লেখেন নি। (ধরে নিচ্ছি - হুমায়ূন আহমেদের কাছে রবীন্দ্রনাথের কোন অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি নেই চোখ টিপি !)। রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান বিষয়ক একমাত্র যে বইটি লিখেছেন সেটি হল বিশ্বপরিচয়।

আমি গতকালই এ নিয়ে একটা লেখা পড়ছিলাম "মুক্তমনা" ব্লগে। আপনি আরেকটু নিশ্চিত হয়ে লিখলে ভালো করতেন।

রবীন্দ্রনাথের "বিজ্ঞান" বইয়ের অনলাইন লিংক

হুমায়ূন আহমেদ "বিজ্ঞানের কথা" বলতে বোধকরি এইটাই বুঝিয়েছেন। তবে যাই হোক রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয় ছাড়াও "বিজ্ঞান" নামে আরেকটি গ্রন্থ আছে দেখা যাচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ভাবনা নিয়ে আরো জানতে ইচ্ছে হলে এখানে গুঁতো দিতে পারেন।

তবে কথোপথন অংশটুকু আমার কাছেও আজব ঠেকেছে। লেখাটাও ফালতু।

অতিথি লেখক(pothik) এর ছবি

আমি যথেষ্ট নিশ্চিত হয়েই লেখাটা দিয়েছি। বিশ্বপরিচয় রবীন্দ্রনাথের একমাত্র বিজ্ঞান-গ্রন্থ। অনলাইন রচনাবলীর যে লিঙ্কটি দিলেন সেটি কোন বই এর লিঙ্ক নয়, তৎকালীন বিভিন্ন সাময়িক পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের নিজ নামে বা সম্পাদকের অস্বাক্ষরিত লেখা( যেটা রবীন্দ্রনাথের বলে প্রচলিত ধারণা) সেসব এক সাথে কেবল গুছিয়ে রাখা হয়েছে। এসব লেখা পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল- বই আকারে বের হয়নি, সত্যেন বসুকে উৎসর্গ করা তো দূরের কথা। আপনার উল্লেখ করা লিংকের বিজ্ঞান অংশের রচনাগুলোর পাশে আমি পত্রিকার নাম উল্লেখ করে দিলাম, সময়কাল আমার লেখার শেষের রেফারেন্স বইটাতে পেয়ে যাবেন।
সামুদ্রিক জীব(ভারতী),দেবতায় মনুষ্যত্ব আরোপ( ),বৈজ্ঞানিক সংবাদ(বালক)
গতি নির্ণয়ের ইন্দ্রিয়(সাধনা),ইচ্ছামৃত্যু(সাধনা),মাকড়সা-সমাজে স্ত্রীজাতির গৌরব(সাধনা),
উটপক্ষীর লাথি জীবনের শক্তি(সাধনা),ভূতের গল্পের প্রামাণিকতা(সাধনা),
মানব শরীর(সাধনা),রোগশত্রু ও দেহরক্ষক সৈন্য(সাধনা),উদয়াস্তের চন্দ্রসূর্য(সাধনা),
অভ্যাসজনিত পরিবর্তন(সাধনা),ওলাউঠার বিস্তার(সাধনা),ঈথর(সাধনা),ভূগর্ভস্থ জল এবং বায়ুপ্রবাহ(সাধনা)

এর মধ্য রোগ শত্রু ও দেহরক্ষক সৈন্য লেখাটি পরে পাঠসঞ্চয় গ্রন্থে,অভ্যাসজনিত পরিবর্তন এবং
ভূগর্ভস্থ জল এবং বায়ুপ্রবাহ লেখাদুটি বাংলা শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে পুনঃপ্রকাশ করা হয়।

আশা করি ব্যাপারটা এবার খোলাসা হয়েছে আপনার কাছে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এটা কালের কণ্ঠে পাঠিয়ে দিন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নিয়মিত পাঠক এর ছবি

আবেগপ্রবন বাঙালীর আবেগ নিয়ে উনি খুব ভালোই খেলতে পারেন, কোন সন্দেহ নাই।

উনি (হু. আ.) কালের কন্ঠে লিখলেন যে -

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফাংকলিন ডি রুজভেল্টকে রবীন্দ্রনাথ নাকি একটি চিঠি লিখেছিলেন (তাঁর বন্ধু আইনস্টাইনের অনুরোধে) অ্যাটম বোমা যেন বানানো হয়। সেই এটম বোমায় ধ্বংস হয়ে গেল হিরোশিমা, নাগাসাকি। মানবদরদি এই কবির (রবীন্দ্রনাথ) সেদিন কেমন লেগেছিল, তা জানা যায়নি।

জানা কেমনে যাবে, জাপানে এটম বোমা ফাটানো হয়েছিল ৬ই আগষ্ট, ১৯৪৫ সালে আর কবিগুরু ধরাধাম ত্যাগ করেছিলেন ৭ই আগষ্ট, ১৯৪১ সালে।

হাসিব এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

শেষেরটুকু আরেকটা ক্লাসিক হুমায়ুনীয় বলদামি !! তাও আবার রবীন্দ্রনাথকে বিদ্রুপ করতে গিয়ে ধরা খাওয়া বলদের ! আর চিঠি লেখার বিষয়টাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। লেখাটেখা নামক কাগজ-কোপানো বাদ দিয়ে এবং কাগজের মত গরীব দেশের মূল্যবান সম্পদ অপচয় বন্ধ করে, হুমায়ুন আহমেদের উচিৎ শিগ্‌গির জি-বাংলা চ্যানেলের 'মীরাক্কেল' অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী প্রতিযোগী হিসাবে নাম লেখানো। নির্ঘাৎ চ্যাম্পিয়ন।

****************************************

দ্রোহী এর ছবি

গরীবের রবীন্দ্রনাথ হুমায়ূন আহমেদ!

বহুদিন বাংলাদেশি তারকাদের নেংটুপুটু ছবি দেখা হয় না। হুমায়ূন আহমেদের লেখার কল্যানে অ্যামেজিং আড্ডার খোঁজ পেলাম। আমি ভাবতাম আমি একাই বুঝি দেশি বিদেশি তারকাদের নেংটুপুটু দেখে বেড়াই। হুমায়ূন আহমেদের মত বড় লেখক যখন তারকাদের নেংটুপুটুর খবর আমার চাইতে বেশি রাখেন তখন আমার আর অসুবিধা কী? সময় করে রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলতে হবে। তারপর......মুহুহুহুহু! খ্রান, ভাইজান আইতাছে! দেঁতো হাসি

ক্রাক কমাণ্ডো  এর ছবি

অফ টপিক একটু আগে আলজাজিরা ইংলিশের ওয়েব পেইজে মুক্তিযুদ্ধ এর ইতিহাস বিকৃতিকারি শরমিলা বসুর লেখা ছাপা হয়েছে এবং কমেনট সেকসনে কিছু পাকি এবং এদেশিয় পাকি বির্যগুলার ফালাফালি আরম্ভ হয়ে গেছে সচলের ব্লগারদের অনুরোধ করছি তারা যদি কমেনট সেকসনে গিয়ে সেখানে শরমিলা বসুর লেখাগুলার খণ্ডন করে দাঁত ভাঙা জবাব দিয়ে আসেন তাহলে একটা কাজের কাজ হবে।

আশিস এর ছবি

হুমায়ূন আহমেদ এর আগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকেও অসন্মান করেছেন, এবার রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পড়লেন। আমি মনেকরি ‘রবীন্দ্রনাথ' বিষয়ে কিছু লিখতে হলে প্রথমেই রবীন্দ্র রচনাবলী অন্তত একবার পড়ে নেয়া উচিত (হুমায়ূন আহমেদ সেটা করেছেন বলে মনে হয় না) এবং অবশ্যই সূত্র (reference) উল্লেখ করা উচিত, কারন-

"... রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি সংস্কৃতির সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। তাঁর মধ্যেই প্রকাশ ঘটেছে একই সঙ্গে বাঙালির সৌন্দর্যবোধ ও মননশীলতার উপাদানসমূহ, সর্বাধিক পরিমাণে। বাংলা সাহিত্যের তিনি সর্বকালের সবচেয়ে বড় প্রতিভা। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান প্রভৃতি শুধু নয়; সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই, যা তিনি স্পর্শ করেননি। গুণগত ও পরিমাণগত উভয় দিকেই তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অনতিক্রম্য। বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনিই এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। শুধু শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়, রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা বিরাট। এবং তাঁর গঠনমূলক ও সাংগঠনিক কাজের পরিমাণও বিশাল। যে শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা তাঁকে একজন মহান কর্মযোগীর মর্যাদায় ভূষিত করেছে। ... রবীন্দ্রনাথ বাঙালিকে শুধু গান শেখাননি, তিনি শিখিয়েছেন রুচিজ্ঞান ও পরিমিতিবোধ। তবে তিনি শেখালেই যে শিখব, তেমন জাতি আমরা নই। তাই দেখছি, রবীন্দ্রনাথ শিখিয়ে গেলেও আমাদের রুচিজ্ঞান ও রসবোধ উন্নত হয়নি, মাত্রাজ্ঞান সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ... আমাদের দেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অন্য সমস্যাও আছে। রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেননি, তবে তিনি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তাঁর নির্দলীয় রাজনীতি ছিল শুভবুদ্ধির রাজনীতি। কিন্তু বারবার তিনি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের রাজনীতির শিকার হয়েছেন। তা হয়েছেন জীবনকালে ও মৃত্যুর পরও। ... একটি উচ্চতর সংস্কৃতির নাম রবীন্দ্রনাথ। রুচিশীলতা ও যুক্তিশীলতার নাম রবীন্দ্রনাথ। ..."

তাই আপনাদের লেখা কালের কণ্ঠে পাঠিয়ে দেয়া উচিত, আবশ্য সম্প্রতি হলুদ সাংবাদিকতার কারনে প্রেস কাউন্সিল হতে অভিযুক্ত সাংবাদপত্রটি তা ছাপবে কিনা সে বিষয়ে আমি সন্ধিহান।

আশিস এর ছবি

হুমায়ূন আহমেদ এর আগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকেও অসন্মান করেছেন, এবার রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পড়লেন। আমি মনেকরি ‘রবীন্দ্রনাথ' বিষয়ে কিছু লিখতে হলে প্রথমেই রবীন্দ্র রচনাবলী অন্তত একবার পড়ে নেয়া উচিত (হুমায়ূন আহমেদ সেটা করেছেন বলে মনে হয় না) এবং অবশ্যই সূত্র (reference) উল্লেখ করা উচিত, কারন-

"... রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি সংস্কৃতির সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। তাঁর মধ্যেই প্রকাশ ঘটেছে একই সঙ্গে বাঙালির সৌন্দর্যবোধ ও মননশীলতার উপাদানসমূহ, সর্বাধিক পরিমাণে। বাংলা সাহিত্যের তিনি সর্বকালের সবচেয়ে বড় প্রতিভা। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান প্রভৃতি শুধু নয়; সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই, যা তিনি স্পর্শ করেননি। গুণগত ও পরিমাণগত উভয় দিকেই তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অনতিক্রম্য। বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনিই এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। শুধু শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়, রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা বিরাট। এবং তাঁর গঠনমূলক ও সাংগঠনিক কাজের পরিমাণও বিশাল। যে শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা তাঁকে একজন মহান কর্মযোগীর মর্যাদায় ভূষিত করেছে। ... রবীন্দ্রনাথ বাঙালিকে শুধু গান শেখাননি, তিনি শিখিয়েছেন রুচিজ্ঞান ও পরিমিতিবোধ। তবে তিনি শেখালেই যে শিখব, তেমন জাতি আমরা নই। তাই দেখছি, রবীন্দ্রনাথ শিখিয়ে গেলেও আমাদের রুচিজ্ঞান ও রসবোধ উন্নত হয়নি, মাত্রাজ্ঞান সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ... আমাদের দেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অন্য সমস্যাও আছে। রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেননি, তবে তিনি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তাঁর নির্দলীয় রাজনীতি ছিল শুভবুদ্ধির রাজনীতি। কিন্তু বারবার তিনি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের রাজনীতির শিকার হয়েছেন। তা হয়েছেন জীবনকালে ও মৃত্যুর পরও। ... একটি উচ্চতর সংস্কৃতির নাম রবীন্দ্রনাথ। রুচিশীলতা ও যুক্তিশীলতার নাম রবীন্দ্রনাথ। ..."

তাই আপনাদের লেখা কালের কণ্ঠে পাঠিয়ে দেয়া উচিত, আবশ্য সম্প্রতি হলুদ সাংবাদিকতার কারনে প্রেস কাউন্সিল হতে অভিযুক্ত সাংবাদপত্রটি তা ছাপবে কিনা সে বিষয়ে আমি সন্ধিহান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।