বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করার সুবাদে রোজ দিন দেশি বিদেশী নানান লোকের সাথে কথা হয় । আর অবধারিত ভাবেই অসংখ্য বার শুনতে হয় , কেমন আছেন ?!
এক একটা সময় মনে হয় বাংলা ভাষায় এই একটা বাক্য বোধ হয় অতি এবং অপ এই দু রকম ব্যবহারেই সবচাইতে ক্লিশে হয়ে গিয়েছে । কেউ কুশল জানতে চাইলে ভাল লাগার কথা কিন্তু এই অতিকায় নগরজীবনে আমরা সত্যিই কি অন্য কারো কথা কান পেতে শুনতে যাই ? মনে তো হয়না । এখানে সবার ছুটবার বড় তাড়া । সবাই বাকি সব্বাইকে ছাড়িয়ে যেতে চায় । কর্পোরেট জগতে কুশল প্রশ্ন তাই আসে শুধুই বক্তব্যের প্রারম্ভিকতা হিসেবে
-কেমন আছেন ? ভাল ? আজ আমার বিলটা কিন্তু দিতেই হবে-
-কি খবর ? ভাল আছেন তো ? সরি আমি আপনাদের সাথে আর কাজ করতে পারছি না-
-কেমন আছেন ? ......আপনার রিপোর্ট টা তো একদম ফালতু হয়েছে-
-কেমন আছেন ? এই শাড়িটা কেমন হল বলুন তো, ও গিফট করেছে...এত মানা করলাম শোনেই না, কি যে করি, ১০০০০ টাকা দাম......
সারাদিন এরকম বহু প্রশ্নহীন প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে একটা সময় হাঁপ ধরে যায় । তবু শ্বাস নেবার ফাঁক ফোঁকর খুঁজে পাইনা । অনেক আগেই আমরা সভ্য হয়েছি তো, তাই নানা রকম কায়দা কেতা দিয়ে নিজেদের নিশ্ছিদ্র বর্মে আটকে ফেলাটাও শিখে নিয়েছি ভীষণভাবে ।
সেদিন অফিস ফেরত বাসায় গিয়েই দেখি বাইরের ঘরে মেজ মামা বসে আছেন । এই নিঃসন্তান এবং দুর্মুখ বৃদ্ধটি আমার নিজের মামা না হলেও কিভাবে মেজ মামা হয়ে গেলেন তার ইতিহাস আমি নিজেও ভুলে গিয়েছি । ওঁর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে সকলের সাথে বহু আগেই ওনার সম্পর্কচ্ছেদ ঘটেছে । শুধু আমাকে উনি মাঝে মাঝে অতি অসময়ে ফোন করে দীর্ঘ গল্প করেন । এই ভয়ে আজকাল আমিও উনাকে এড়িয়ে চলি । কিন্তু আজ বাসায় এসে হাজির । তাই দেখে একটু অপ্রস্তুতই হয়ে গেলাম ।
আমাকে দেখেই বিরাট একটা হাসি দিয়ে মামা বললেন, তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল, তাই চলে এলাম । তার পর ঝুঁকে পড়ে মাথায় হাত রেখে বললেন, কেমন আছিস রে মা ?
আমার হটাৎ কি যে হল, যে প্রশ্নটা শুনে সারাদিন বিরক্ত হই সেটা শুনেই আচমকা চোখ ভরে পানি চলে এল । মাথা নিচু করে চোখের পানিটা লুকোতে লুকোতে ধরা গলায় বললাম,
ভাল আছি, আমি ভাল আছি ।
লেখক- আশালতা
মন্তব্য
কেমন আছেন ?
হা হা হা ! আমার মনেই হচ্ছিল এরকম একটা কমেন্ট আসবে....
ভাল আছি, আমি ভাল আছি
ছোট্ট কিন্তু চমৎকার একটা লেখা আশালতা। শেষটায় আপনার আবেগ আমাকেও ছুঁয়ে গেলো। আমার নিজের মেঝ মামার সাথেও বিভিন্ন কারণে তার ভাইবোনদের সম্পর্কটা বেশ শীতল। তিনি মাঝে মাঝে আমাকে ফোন করে দরাজ গলায় জানতে চান, "কেমন আছিস ভাম?"
তিনি আমাকে ভাম ডাকেন। ভাম শব্দের অর্থ জানিনা তবে পাঁঠা বা ওই ধরণের কিছু একটা হবে। কিন্তু আমি সেই ডাকটার জন্যে অপেক্ষা করি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ রাতঃস্মরণীয় । এইসমস্ত ছোট ছোট পাওয়াই বোধ হয় জীবনের অসংখ্য অপ্রাপ্তিকে সহনীয় করে দেয় ।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, ভাম মানে কিন্তু পাঁঠা নয়, হুলো বন বেড়াল
পাঁঠা নয়, মেছোবাঘ বা বাঘডাশ (মতান্তরে বনবিড়াল)! 'মফ মফ' জাতীয় একটা শব্দ করে ডাকে। ছোটবেলায় ডাক শুনতাম, এখন মনে হয় বিলুপ্ত।
লম্ফনরত মন্তব্য!
হে হে হে... কেমন আছেন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হে হে হে... জ্বী ভালোই আছি
আমিই বা বাদ যাবো কেন? একটু ঘুরিয়ে জানতে চাইছি, ভালো আছেন?
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
এই তো ভাই আছি ভালোই । আপনি ভালো আছেন তো ?
লেখায়
মৌনকুহরকে ধন্যবাদ ।
ভালো থাকবেন
ধন্যবাদ রিসালাত বারী ।
বাংলায় 'হাই, হেলো' জাতীয় কোন ডাক নেই বলে 'কেমন আছো' তার জায়গায় বসে গেছে। আক্ষরিক অর্থে কেউ জানতে চায় না কেমন আছি। এমনকি সবচেয়ে কাছের মানুষটিও অনেক সময় জানতে ভুলে যায়, কেমন আছি।
যে দুর্মুখ বুড়োকে এত বিরক্ত লাগে সবার, তার কেমন আছো তে চোখে পানি আসলো কেন?
কাটখোট্টা প্রশ্ন, তবু জানতে কৌতুহল হলো।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নাগরিক ব্যস্ততায় আক্ষরিক অর্থে কেমন আছি কেউ জানতে চায় না বলেই কেউ যখন ভীষণ ভালবেসে জিজ্ঞেস করে তখন তা মন ছুঁয়ে যায় । দুর্মুখ বুড়োটি আমাকে যে ভীষণরকম স্নেহ করেন সেটা উনার রুক্ষতার ওপরও আমি বুঝি ।
আপনার প্রশ্নটি কাটখোট্টা হোক না হোক, আমার লেখার ব্যর্থতার পরিচায়ক তো বটেই ।
নাগরিক ব্যস্ততায় আক্ষরিক অর্থে কেমন আছি কেউই জানতে চায় না বলেই কেউ যখন খুব ভালবেসে জিজ্ঞেস করে তখন সেটা মন ছুঁয়ে যায় । দুর্মুখ বুড়োটি যে আমাকে ভীষণরকম স্নেহ করেন সেটা তাঁর রুক্ষতার ভেতর থেকেও আমি বুঝি ।
আপনার প্রশ্নটা কাটখোট্টা হোক না হোক আমার লেখার ব্যর্থতার পরিচায়ক তো বটেই ।
ব্যাপারটা নির্ভর করে কে, কাকে, কী পরিস্থিতিতে এবং কোন টোনে প্রশ্নটা করছেন। একবার একজনের সাথে লম্বা ফোনালাপের শেষ পর্যায়ে বললাম, "তারপর, আপনি কেমন আছেন?" উত্তরে উনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। বুঝলাম এর আগে উনি যা কিছু বলেছেন সেগুলোর কোনো মানে ছিলো না। যা কিছু বলার সেটা তিনি এখন বলবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে বাক্যের মানে নির্ভরশীল এ আমি বুঝি । আমার লেখায় মানবিক সম্পর্কের মামুলি কিন্তু খুব সুন্দর একটা দিককে তুলে আনতে চেয়েছি শুধু ।
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
আমার তো মনে হয় মাঝে মাঝে অনেকেই জিজ্ঞেস করতে ভুলে যায় - "কেমন আছ?"
বিশেষ করে খুব ফর্মাল কোন আলাপের শুরুতে বা শেষে আমি যখন এই প্রশ্নটা করি কাওকে, অনেকেই মনে হয় চমকে যান...
আসলে প্রশ্নের ধরন, বলবার অভিব্যক্তি, আর কে জিজ্ঞেস করলো তাই নিয়ে সবটা মনে হয়... কখনো কখনো কেউ কেউ আপনি যেমনটা বললেন, শুধু কথার কথা হিসেবে কুশল জিজ্ঞেস করবে, এই আশাতেও অপেক্ষমান থাকতে ভালো লাগে...
লেখাটা খুব ভালো লাগলো... আর আপনি, ভালো থাকবেন। কী আছে দুনিয়ায়?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
কিছু কিছু মানুষের জন্যে অপেক্ষমান থাকতে ভালো লাগে সত্যিই । পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
"কেমন আছ" খুব শক্ত প্রশ্ন। তবে, অনেকসময়ই প্রশ্ন করার জন্যই করা, উত্তরটাও দায়সারা হয়। তবে, মাঝে মাঝে কিছু কিছু মানুষের করা এই প্রশ্নটা ঠিক আপনার লেখার মতই ছুঁয়ে যায়, যখন বুঝতে পারি তারা সত্যিই জানতে চান কেমন আছি। খুব ভাল লাগল আপনার লেখাটা, ভাল থাকুন।
ধন্যবাদ আনন্দী কল্যাণ । এত সুন্দর করে প্রশংসা করলে ইচ্ছে করে আরও একগাদা ছাইপাঁশ লিখে ফেলি
এবং সব না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তরটাও প্রত্যাশা করে নেয়া হয়। ধরেই নেয়া হয় কেমন আছেন এর উত্তরে বলা হবে ভালো আছি। একটু অন্যরকম উত্তর দিয়েছেন কি হয়ে গেলো। "এ একটু কেমন যেন!"
উত্তর জেনে প্রশ্ন করার অর্থ কি জানি না, তবে খুব বিরক্ত লাগে শুনলে।
ধন্যবাদ কল্যাণ। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
শুধু কথায় কাজ হবে না দিদি, বড় বড় লেখা দেন শিগগির শিগগির
নতুন মন্তব্য করুন