আজ ব্লগ ঘাঁটতে গিয়ে দেখি একজন প্রমীলা ব্লগার 'ধুর ছাই এই বোরিং জীবন আর ভাল্লাগেনা' বলে একটা আহাউহু পোস্ট দিয়েছেন, আর সবাই উনাকে ভাল লাগাবার নানারকম উপদেশ দিয়ে চলেছেন । এই কাণ্ড দেখে আমার জয়নবদের কথা আবার মনে পড়ে গেল ।
কদিন আগে ইস্কাটনের এক এন জি ও তে যেতে হয়েছিল কিছু তথ্যের দরকারে । ওরা দুস্থ নারী, বিশেষত এইডস আক্রান্ত নারীদের নিয়ে কাজ করে সাথে তাদের ইনফর্মেশন ও রাখে । বিস্তর জ্যাম ইত্যাদি পেরিয়ে দুপুরে যখন পৌঁছলাম, দেখি কারেন্ট নেই । এমন মেজাজ খারাপ হল । ওই গরমে সিদ্ধ হতে হতে পাঁচ বছরের পুরনো নিউজ পেপার কাটিং ঘাঁটতে কারই বা ভাল লাগে ? কিন্তু কি আর করা, দাসখত লিখে দিয়েছি, দাসীবৃত্তি করতেই হবে । এক গাদা মোটা মোটা খাতা নিয়ে বসলাম ।
প্রথম খাতাটা খুলতেই মনে হল একটা বড় সড় ধাক্কা খেলাম । একটু পরেই ওই গরমেও কেমন শীত শীত করতে লাগল । গা গুলোতে লাগল । খাতাগুলোর সমস্ত পাতা জুড়ে সাদা কাল রঙে বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত নিখোঁজ সংবাদের মেয়েদের মুখ । পাতার পর পাতা জুড়ে অগুন্তি ছবির পর ছবি । এরা সবাই হারিয়ে গেছে ।
'হারিয়ে গেছে' !! ছোট্ট অথচ কি তীব্র ভয়ঙ্কর একটা কথা । শুধুমাত্র 'হারিয়ে গেছে' বললেই কি ব্যাপারটা ফুরিয়ে যায় ? একটা মানুষ মানে তো শুধু একলা একটা মানুষ নয়, তার সাথে জুড়ে থাকে আরও কতগুলো মানুষের ভাল লাগা মন্দ লাগা, আশা-নিরাশা, স্বপ্ন- উচ্ছ্বাস আরও কত কিছু মিলিয়ে এক একটা গোটা জীবন। শুধুমাত্র দুটো শব্দ দিয়ে সেই জীবন টাকে কি নেই করে দেয়া যায় ? 'হারিয়ে' যেতে কতটুকু কষ্ট সহ্য করতে হয় আর দশটা মানুষ , যাদের ঠিকানা কখনই হারায়না , তারা কি কখনও বুঝতে পারে ?
না পারেনা । আমরা কেউই সেটা বুঝতে পারিনা । পারিনা বলেই আমাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জীবনে এইসব অবান্তর খবরে আমরা কখনই বিচলিত হইনা । ওই সাদাকাল ছবির মুখগুলোর নিঃশব্দ আর্তচিৎকার আমাদের প্রিয় গানের সুর ছাপিয়ে কান অব্দি পৌছয় না ।
ওই দুপুরে জয়নব নামের এগার বছরের একটা মেয়ের ছবি দেখেছি, ফুল কুঁড়ির মতো ফুটফুটে একটা মেয়ে, যার নয় বছর বয়েসে বিয়ে হয়েছে, দশ বছর বয়েসে তার স্বামী তাকে বিক্রি করে দিয়ে পালিয়ে গেছে , এগার বছর বয়েসে তার এইডস ধরা পড়েছে । এরকম জয়নব একজন নয় আরও অনেক অনেক আছে ।
এই মেয়েগুলো স্বপ্ন দেখতে শিখবার আগেই স্বপ্ন হীন হয়েছে । এদের কাছে জীবন মহার্ঘ এক জিনিষ । ওরা জানে, ঠিক কত দাম দিয়ে জীবন কিনতে হয় । আমরা যখন দুঃখ বিলাস করে 'ধ্যাত, এই জীবন ভাল্লাগেনা' বলি, জয়নবরা তখন নিঃশব্দে আমাদের ভণ্ডামির ওপর সপাটে চড় কষায় ।
আমরা, মানুষরা, চোখ খুলে ঘুমিয়ে থাকি বলে কিছুই টের পাইনা ।
মন্তব্য
পড়লাম। জয়নবদের নিয়ে কিছু বলার মুখ নাই।
আশেপাশে অনেককেই জীবনের উপর বিরক্তি প্রকাশ করতে শুনি। সাধারনত মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি যে আমরা কত বেশি ভাগ্যবান যে এই কথাটা বলতে পারছি। জয়নব, হেনা, বা ফেলানীর জায়গায় জন্মালে এভাবে বলতে পারতাম না।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ রু ।
জয়নব দের জানা আমার জন্য খুব জরুরী একটা অভিজ্ঞতা ছিল । এর পর থেকে নিজের জীবন নিয়ে অভিযোগগুলো নিজের কাছেই কেমন যেন দুর্বল ঠেকে ।
লেখাটা ভাল লাগল। লেখকের নাম তো জানলাম না।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আবজাব লেখাটা ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম । আর লেখকের নাম তো জেনেই গেলেন এখন
লেখকের নামটাও নিখোঁজ
ভালো লাগছে
চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লেখকের নামটা ইচ্ছে করেই দিতে চাইনি । কিছু লেখার পর নাম লিখতে কেন যেন বড্ড আলসি লাগে আমার । বোধ হয় পাতে দেবার মতো কিছু লিখেছি মনে হয়না বলে । আপনাদের ভালো লাগাটা তাই আমার জন্য বিশাল পাওয়া ।
নিখোঁজ লেখকের লেখাটা ভাল্লাগলো
ধন্যবাদ মাহবুব লীলেন ।
অপছন্দনীয়র মুখ ভার কেন ? লেখা ভাল লাগেনি ?
লেখকের নাম কি আশালতা? ভাল লাগলো লেখাটা।
আনন্দী কল্যাণের অনুমান ঠিক আছে । ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগল ।
আরও কত নিখোঁজের খবর তো অজানা অপ্রকাশিতই থেকে যায়।লেখাটা ভাল লাগল।
ধন্যবাদ অরিত্র অরিত্র ।
নিখোঁজের খবর প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত থাকাটা বড় কথা নয় । আমরা, মানুষরা, রকেট বানিয়ে চাঁদ তারা ছুঁয়ে ফেললেও এখনও অমানুষদের মতো কাজ করছি এটাই কষ্টের ।
আমি ধিক্কার জানাতে পারিনা, আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি।কষ্টের তীব্রতাও মনে হয় কমে যাচ্ছে।
আমাদের ভাল না লাগার বিলাশিতা আছে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
নতুন মন্তব্য করুন