হুজুরদের গল্প ৫

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৫/০৬/২০১১ - ১১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হুজুরদের গল্প ৩
হুজুরদের গল্প ৪

তাবলীগ পর্ব

ঢাকা শহর। গ্রাম আর মফস্বলের নীরিহ, গোবেচারা, আরবি পড়িয়ে খাওয়া কূপমণ্ডুক হুজুরগুলো এখানে নেই। তবে এ শহরে আসার পর যে ধরণের হুজুরদের মুখোমুখি হতে হয়েছে তারা প্রধানত তাবলীগার। এনারা যে কূপমণ্ডুক তা বলা যায়না কারণ শহরটা তো আর বাড়ির পাশের কুয়ো নয়, আর মণ্ডুকবৃত্তির দায় অর্পণ করতে গেলে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা লাগে এনাদের কেউকেউ তার বহু ঊর্ধ্বে- উঁচু দরের প্রতিষ্ঠান থেকে কামেলিয়াত পাওয়া এলেমদার আলেমরা, যারা নিশ্চয় ব্যাঙের আধুলি নিয়ে ঘোরেন না। নীরিহ হয়ে থাকা এনাদের মূলমন্ত্র, বলা যায় অনেকটা নীরিহ নেমাটোডের মত কারণ সুযোগ পেলেই গোলকৃমির মত পশ্চাতে লেগে পড়েন। তাঁদের আরবি পড়িয়ে খাওয়ার কোন জরুরত নেই, তবে উপযাচক হয়ে ইহকাল আর পরকালের অশেষ নেকি হাসিলের চাবিকাঠি হাতে ধরিয়ে দেবার অনিঃশেষ তাগিদ সর্বদা বোধ করেন। অনেকে হাঁটেন লাইন ধরে-শ্লথচরণে-রেলওয়ের মালগাড়ির মত, বহুজন মিলে একপাতে ভুরিভোজ করেন, দুপায়ে বসে পানি খান। শিষ্টাচারমাফিক মলত্যাগ করার কোন কোড-অব-কন্ডাক্ট আছে কিনা বিলক্ষণ জানা নেই, তবে টয়লেটের সামনে হরদম পিটি-প্যারেড করে অবশিষ্ট মূত্রবিন্দুকে শিশ্নমুণ্ডু থেকে অর্ধচন্দ্র সহকারে এনারা হটিয়ে থাকেন। বনানী-গুলশানের জিশান-সুসানেরা যেমন ফি-লাইন আড়াই হালি ইংরাজী শব্দ জপে, আজিজ মার্কেটের বঙ্গ হাফিজ’রা যেমন বঙ্কিম যুগের বঙ্কিম বাংলায় গপেসপে, তেমনি এনারাও আরবি কিম্বা পারসিক শব্দের রওশনে রসিয়ে রাখেন নিজেদের রসনাকে।

ভার্সিটি থেকে আসার পথে রমনা পার্কে হাঁটছি। শুনেছি রমনায় প্রমোদবালারা প্রমোদ দেবার জন্য প্রায়ই ঘুরাঘুরি করে। তো প্রমোদবালার খপ্পরে পড়ার অভিজ্ঞতায় কতটুকু প্রমোদ আর কতটুকু প্রমাদ সেটা গুনে দেখার মনস্কামনায় এদিক সেদিক হাঁটছি, খোদাপাকের কি খোশখেয়াল, গণিকার খপ্পরে নয়, পড়ে গেলাম একপাল তাবলীগারের খন্দকে। রমনা পার্কের লাগোয়া কাকরাইল মসজিদ আবার তাবৎ বাংলার তাবলীগারদের হেড-আপিস তাই এধারার ফাঁদে ধরা খাওয়াটা অসম্ভবও ছিল না।

দলের মধ্যে একজন, বিশাল পেটুয়া। পাজামার শক্ত বাঁধনের চাপে বিশাল ভুঁড়িটা কিলিমাঞ্জারো ডিঙিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার মতন সূক্ষচূড় হয়ে আছে। কাঁচা-পাকা দাঁড়ি, পরেছেন পাগড়ি, আমাকে অনেক বড় বাক্যের একটা সালাম দিলেন। আমি মাথা দুলিয়ে সালামটা নিলাম। জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার নাম কি ভাইজান?”

আমি বললাম, “শুভঙ্কর প্রপঞ্চাচার্য”

একি ভানুমতির ভোজবাজি নাকি ইন্দ্রের ইন্দ্রজাল! প্যারাসিটামল যেমন জ্বর-ব্যথা তাড়ায়, ক্যাস্টারল যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য তাড়ায়, তেমনি সেদুটো শব্দ গন্ধমাদনের মহৌষধের মত সবকটা হুজুরকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল।

কিন্তু নিকট অতীতে এমন বুদ্ধি মাথায় খেলেনি যখন ভার্সিটির হুজুর ভাইয়ারা আমাকে ধরেছিল। নাম জিজ্ঞেস করতেই তাদের প্রভাবিত করার জন্য স্বীয় নামের আরবীয় অংশটাই ততোধিক চটকদার আরবি উচ্চারণ মিশিয়ে সাগ্রহে বলে দিয়েছিলাম, যার মাশুল গুনতে হয়েছিল অনেক মাস। সময়ে অসময়ে বিভিন্ন মেয়াদে লুকোতে হয়েছে হাগুখানায়, হামামখানায়, খাটের তলায়, ছাদের উঁচায়, এখানে, ওখানে, সেখানে। মাগরিবে মসজিদের মাহফিলে দেখা করার আশ্বাস দিয়ে ভাগতে হয়েছে এস্কাটনে, খালার বাসায়।

সিনিয়র তাবলীগাররা যখন চলে গেলেন, তখন ব্যাচমেট কিম্বা জুনিয়ররা তেমন সুবিধা পারত না, কারণ ব্যাচমেটদের পাম-পট্টি দিয়ে ভাগিয়ে দিতাম, এক ধমকে বসিয়ে দিতাম জুনিয়রদের। এদিকে রুমটা খালি হয়ে গেছে, আমার রুমমেটগণ- মুরতাদ কবি তারেক ভাই, মুশরেক লোগ সঞ্জয়দা এবং ‘বিশেষণোর্ধ্ব’ আদিল ভাইকে রুম থেকে কিছুটা সম্মান, কিছুটা সম্মার্জনী প্রদানপূর্বক বিদায় দেওয়া হয়েছে। এসেছে নতুন শিশু, তাদের ছেড়ে দিতে হয়েছে স্থান। এই শিশুদের মধ্যে আবার একজন সেই হুজুর সম্প্রদায়ের সদস্য , তার নাম, ধরি, ফজল আহমদ।

ফজল ছেলেটা আদ্যপন্ত শান্ত, শিষ্ট। ভোরে উঠে কলা-কমলা খায়, চিড়ে-মুড়ি চিবায়, কদাপিও ক্যান্টিনের করিডোর মাড়ায়না। নিয়মিত পড়াশুনো করে, দিন পড়ে এলে দ্বীনের দাওয়াতে বেরোয়। মুভি দেখা আর গান শোনার প্রশ্ন তো আসেই না, পেপারে পত্রিকায় স্বল্পবসনা তপ্ত-সপ্তদশী কিংবা স্ফীতবক্ষা স্বর্নকেশীদের দেখলেই ‘মিনজালেক’ বোলে লাফিয়ে উঠে পড়ে। ব্যাচমেটরা মেয়ে সংক্রান্ত রসালাপ করলে কানে বারুদসংকুল দিয়াশলাই গোঁজে নয়তো সশব্দে ইস্তেগফার পড়ে, গুমরাহী বাতচিত করতে তাদের নিরুৎসাহিত করে।

ফজল যেমনটা শান্ত ও স্বল্পবাক, তার জিগারে-ইয়ার বজলুর রহমান ওরফে বজল তদ্রুপ চঞ্চল ও অতিভাষী। রুমে আসলেই তার সমবয়েসীদের দ্বীনের দাওয়াত দিতে সে ব্যতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে। শরীয়ত অথবা হাকিকত সম্পর্কে দু তিনটে হাদীস চয়ন না শোনালে তার স্বস্তি হয় না। তবে সবচে অস্বস্তিকর এবং দুর্গ্রহ হল দ্বীন-ধর্ম সম্পর্কে বয়ানকৃত তার উদ্ভট সব গল্পগুলো।

জনি, আমার জুনিয়র। টিউশনি থেকে এসেছে। ছেলেটা অনেকটা ক্লান্ত আর বিধ্বস্ত। পরেরদিন তার দুটো সিটি- কিছুই নাকি আগে পড়া নেই- তাই রাতভর পড়তে হবে। আরেক রুমমেট শামসুল, সারাদিন কম্প্যু গুঁতোয় আর পানি খায়। হরেক পদের ছবি-সম্পাদক সফটওয়্যার সম্পর্কে তার অগাধ পাণ্ডিত্য। মাধুরীর ধড়ে শাহরুখের গুহ্যদেশ জুড়ে দেওয়া তার কাছে আঙ্গুলি তিনের তা-ধিন-ধিন কেবল। আমি বসে বসে ব্লগ পড়ি, নয়তো ফেসবুকে আপুদের ওয়ালে কমেন্ট লিখে বেড়াই, ইয়াহু চ্যাটরুমে বেশরম বেহায়া মেয়েদের তন্নতন্ন করে খুঁজে মরি।

ইত্যবসরে কোন এক মধুলগ্নে এসে হাজির ফজল-বজল যুথ। তাদের রসায়ন দেখি আর ভাবি, যেন কোন এক জনমে তাঁহারা দুজন হংসমিথুন ছিল। আমাকে দেখে রীতিমত বিশাল দৈর্ঘ্যের এক সেলাম জ্ঞাপন করল বজল। সেটার কুদরত এবং শাণে আমার কদাচারী কব্জি প্রায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে উঠে গিয়ে “অ্যাডাল্ট ফ্রেন্ড ফাইন্ডার” এর ওয়েবপেজটা বন্ধ করে দিল। বজল এসে ফজলের চেয়ারটা টেনে বসল। তার বসার কায়দাটা একটু অদ্ভুতুড়ে মনে হল। কেমন যেন অভিকর্ষের বিরুদ্ধাচরণ করে, পশ্চাৎদেশকে একটু আলগা করে বসল, নতুন ফোঁড়া-ফুঁসকুড়ি গজালে অখন্ড নিতম্ব যেমন শক্ত কাষ্ঠল তক্তার আঁচ বাচিয়ে চলতে চায়, তেমনটা। এটা হয়তো হঠাৎ করে পোশাকাভ্যাস বদলানোর ফসল হতে পারে, নয়তো কালামে-কিতাবে রীতিমত নিড়ানি দিয়ে বের করে আনা কোন শরীয়তসিদ্ধ ধর্মাচারণও হতে পারে যা কলিকালে তাগুতের গুঁতোয় বিলীন হতে বসেছে।

বজল- শামসুলের কাছে আর্জি পেশ করে, সে তাদের সাথে যাবে কিনা। এই সেমিস্টারের পরই খুলনা কী বাগেরহাটে তাদের একটা সফর আছে। শামছুল, নামটার মধ্যে এক অপূর্ব ঐসলামিক সৌন্দর্য বিদ্যমান থাকলেও ছেলেটার দিলের মধ্যে বোধকরি বেশখ নাপাকি লেগে ছিল তাই সে পাল্টা প্রশ্ন করে বসে, “খুলনা যাবি, বাঘে ধরলে? বাঘে না ধরার দোয়া জানিস তো?”

বজল বুঝতে পারে তার সাথে ইয়ার্কি মারা হয়েছে। “তো শোন”, শামছুলকে গম্ভীর ভঙ্গিতে বলে সে। “একবার এক তাবলীগ কাফেলা দ্বীনের খেদমতে দূর মুলকে যাচ্ছিল। যাত্রাপথে মাগরীব হয়ে এলে কোন এক শান্ত-সুকুন জঙ্গলের পাশে দায়ি ভাইয়েরা তাঁবু গেঁড়ে বসেন।”

ক্লাইম্যাক্সের গন্ধ পেয়ে আমি টটস্থ হয়ে উঠি। খোমাখাতা বন্ধ করে, কার্পু মাছের মতন হা করে কথা গিলতে থাকি।

বজল বলে চলে, “তারপর সেই কাফেলার ইমাম সা’ব সকল মুমিন মুক্তাদির ভাইদের নিয়ে সে জঙ্গলের ধারেই যখন জামায়াতে সালাত আদায় করার নিয়্যাতে কিয়াম নিলেন ঠিক এমন সময় সেই সুনসান জঙ্গল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে এক খাতারনাক বাঘ।

ঘটনার যেন ঘনঘটা। উৎকর্ষে উপনীত বজল হুজুর। উত্তেজনায় লোম তো খাড়া হয়ে যায়ই যায়।

“সেই জুলুম জানোয়ারের হুংকারে তাবৎ আসমান-জমিন তো বিলকুল দোফাট্টা। গাছে গাছে সমস্ত পাখ-পারিন্দাও পুরোদস্তুর পেরেশান।”

“তারপর”, চোখ পাকিয়ে বলে শামছুল।

“কিন্তুউউ- ইমাম সাব তো বেশখ মজবুদ ইমানদার। একমাত্র খোদা ছাড়া- জ্বীন, শেতান, জানোয়ার, ইনসান কোন কিচ্ছুতে তার পাতল বাল পরিমাণও ডর নাই। তিনি জোর গলায় বলে উঠলেন, ‘হে জোরদার-জুলুম শার্দুল, তুমি জানো আমি কমজোর- নালায়েক ইনসান। তুমি চাইলেই এখনই হাপুস করিয়া আমাকে খানা বানাইয়া ফেলিতে পারো। ঠিক আছে, তোমার মত ভুখা মাখলুকের খানা হইতে আমার কোন ওজর নাই, কিন্তু এই মুহুর্তে আমার মাওত আসিলে এই অগণিত মুমীন মুসল্লির এক ওয়াক্ত সালাত যে কাজা হইবে, তাঁহাদের বন্দেগীতে যে বিড়ম্বনা হইবে, তাহার জন্য খুদাকে আমি কি জওয়াব দিব? হে শার্দুল, তুমি আমাকে একটু পরে ভক্ষণ করিও।’ ”

পাশে ফজলের মুখটাও দেখলাম উজ্জ্বল হয়ে উঠল। শামছুল নড়েচড়ে বসে,

“মালিকের কি অশেষ রহমত,আমলদার সেই ঈমাম সাবের কথা শুনে সেই জবরদস্ত জানোয়ারেরও মন গলে গেল। শিকার করা তো দূরের কথা, সেই বাঘ এক দৌড়ে গভীর জঙ্গলে পালিয়ে গেল।”, কথাগুলো ব্যাক্ত করে বজলের মুখে যেন আলেকজান্দ্রিয় বিশ্বজয়ী হাসি খেলে গেল।

“ঠিকাছে”, বলল শামসুল, “কিন্তু তোরা যে এক পাতে চৌদ্দজন মিলে খাবার খাস, একজনের জিহ্বা চাটা ঝোলের উপর আরেকজন জিহ্বা লেলিয়ে চেটে খাস, এইটার কি হবে? আমাকেও যদি এভাবে খেতে হয় তবে তো আঁতে জট পাকিয়ে যাবে। ইস, কি অস্বাস্থ্যকর রে বাবা!”

বজল বলে, “শোন, এই জিনিস অস্বাস্থ্যকর তোকে কে বলল? না জেনে কথা বলবি না। ”

“তো, খুবই স্বাস্থ্যকর নাকি?”

“শোন, এক আমেরিকান বিজ্ঞানী একবার কোন এক তাবলীগ কাফেলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাত তিনি এই দৃশ্য দেখেছিলেন। তারপর..”

আমি আবারো নড়েচড়ে বসি। নিশ্চয় আরেকটা থ্রিলার আসবে।

“তারপর আল্লার কী মর্জি, সেই বিধর্মী বেতরিক আমেরিকানের দিলে সওয়াল গুজার হল- 'এনারা এভাবে একই পাতে এতজন আহার করছেন কেন?' তিনি তো বড়ই হেকমতদার বিজ্ঞানী। তো উনি, ঐ কাফেলার মুমিন ভাইদের কাছ থেকে এরকম একটা খানা’র থালা চেয়ে নিলেন।”

“তাই নাকি, কেন?”, শামসুল ভ্রুকুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

“তারপর তিনি সেই থালাটাকে নানারকম কেমিকেল দিয়ে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে, দেদার মহাব্বাত আর সাবাতের সহিত পরীক্ষা করে দেখলেন। তিনি দেখলেন…” এ পর্যায়ে বজলের গলার আওয়াজ আগেরচে দরাজ হল। দজলা-ফোরাতের কুলধ্বনির মত একটা সুরলহরী আকণ্ঠ খেলে গেল যেন। “…বহুজনের জিহ্বার লালা মিশে ওইখানে এমন একটা মেডিসিন তৈয়ার হয়, যেইটা দিয়ে অনেক কঠিন কঠিন, অনেক শক্ত শক্ত বিমারী শেফা হয়ে যায়।…. সুভানাল্লাআআআ।”, প্রায় সাথে সাথে ফজলও ‘সুভানাল্লা’ বলে উঠলো।

বজলের চোখেমুখে আহলাদের নূর ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে। সে গর্দান দোলাতে দোলাতে হাসি মুখে আমার দিকে তাকায়, হয়তো আমার কাছ থেকে একটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশায়।

আমি বলি, “তোমার নিজের দেখা এমনতর কোন রোগমুক্তির অভিজ্ঞতা আছে?”

“আলবৎ” বলল বজল। “আমাদের নজিবুল ভাইসাবের গালে একবার মেছতার মত কালো কালো কি জানি হইছিল।” পাশে টেবিলের উপর উদোম পড়ে থাকা একটা ভিডু-চাকতি অনেকটা নির্লিপ্তভাবে হাতে নিল সে। তারপর সেটাকে মুখের উপর আলতো করে ঘঁষার ভঙ্গিতে বলল, “একদিন জামাতে খানার পর ভাইসাব নাকি বিসমিল্লা বলে থালাটা নিয়ে সেইজায়গায় এইভাবে মাজন করেন। মাবূদের রহমতে এখন উনার সেইসব কাচরা দাগ বিলকুল সাফ হয়ে গেছে।” বজলের কথায় দাঁড়ি পড়ার পর আমি কিছুক্ষণ নির্বিকার তাকিয়ে রইলাম।তারপর হাত উপরে তুলে, থুতনি নাচিয়ে জবাব দিলাম, “সবই মালিকের খেয়াল!!”

জনি অনেক্ষন ধরে মুখ বেজার করে, ভ্রুকে বেশকরে বাঁকিয়েই বজলের ঘ্যানঘ্যানানি শুনছিল। নিরবতা ভেঙে হঠাত সে বলে ওঠে, “হ্যাঁরে বজল, এরকম প্লেট একটা কী আমাকে এনে দিতে পারবি?”

বজল বলে, “জরুর। আমার হেফাজতেই এরকম একটা আছে। কিন্তু কেন?”

জনি বলল, “আমারো একটু অসুখের জায়গায় মাজন করতে হবে”

বজলের মুখের হাস্যরেখা আরো প্রশস্ত হয়। হয়তো এই ভেবে যে, এইরুমের তিন নালায়েকের একজনকে সামান্য হলেও লাইনে আনা গেছে। উত্তেজনার সাথে জিজ্ঞেস করে সে, “কিন্তু দোশত, তোমার বিমারীটা কী?”

-“অর্শ”

(আসতে পারে...)

ধৈবত


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

শয়তানী হাসি

অপছন্দনীয় এর ছবি

টয়লেটের সামনে ... পিটি প্যারেড ... অর্ধচন্দ্র সহকারে হটিয়ে...

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

কিলিমাঞ্জারো ডিঙিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার মত সূক্ষ্মচূড়

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

শুভঙ্কর প্রপঞ্চাচার্য

গড়াগড়ি দিয়া হাসি পুন্ডরিকাক্ষ পুরকায়স্থ মনে পড়ে গেলো...

এই ভাষা পারেন কেমনে?

অতীত অতিথি এর ছবি

ভাইরে ভাই......এক্কেরে ফাডালাইছেরে...... গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি

গুরু তুমার হাতদুটিতে চুম্মাইতে মঞ্চায়...

অতীত

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হো হো হো খুব ভালো। একেবারে মর্মঘাতী! হো হো হো

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

এই তাবলীগদের চেয়ে ধর্মান্ধ আর কোন মুসলিম সম্প্রদায় নাই। এরা পৃথিবীকে ১৪০০ সালে আটকে রাখতে প্রাণপণ, এদের বিশ্বাস আর জীবন যাপন প্রাগৈতিহাসিক। প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এদের আক্রমনে মেধাবী ছেলে গুলোর উজ্জ্বল ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে চিন্তাচেতনায় পঙ্গু-প্রতিবন্ধী করে ফেলছে, তারা উচ্চশিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়ছে। এই উদ্ভট সম্প্রদায় সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা সময়ই স্পষ্ট করে দিবে!!! এদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য নাই এটাই রক্ষা!!!

লেখায় চলুক

সিরাত এর ছবি

এই তাবলীগদের চেয়ে ধর্মান্ধ আর কোন মুসলিম সম্প্রদায় নাই।

অমূলক।

কুতবী সালাফি, জাওয়াহরি-লাদেন লাইনের? আল্ট্রা-হার্ডকোর-দেওবন্দি? তাকফির ওয়াল হিজরা? সালাফিস্ট গ্রুপ ফর প্রিচিং এ্যান্ড কমব‌্যাট?

সাই দ এর ছবি

তাবলীগের বাস্তবিক কর্মকাণ্ডের জন্যই এদের কে ধর্মান্ধ বলা যায়।

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

বাংলাদেশে এদের অস্তিত্ব/তথ্য উপাত্ত কি আছে?!

আর এরা ধর্মান্ধ অবশ্যই, কিন্তু এদের থেকেও ধর্মোন্মাদ আছে। অমূলক কিছু বলি নি!!!!!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হো হো হো

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

তুই পোলাটা ব্যাদ্দপ। হুজুরে বুহিমুল্লাহ টের পাইলে খবর আছে তোর...

অর্ফিয়াস এর ছবি

এক্কেরে মাইরা হালায়ছেরে ....... গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সবজান্তা এর ছবি
সায়ন (১) এর ছবি

গুল্লি গুল্লি গুল্লি

বজল এর চেয়ারে বসার বর্ণনাটুকু পড়ে অন্যকিছু আন্দাজ করছিলাম। চোখ টিপি

তারানা_শব্দ এর ছবি

অর্ধচন্দ্র সহকারে হটিয়ে... শুভঙ্কর প্রপঞ্চাচার্য... =))গড়াগড়ি দিয়া হাসি

হাসতে হাসতে শেষ...আগের পর্বগুলো পড়তে হবে গড়াগড়ি দিয়া হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

আয়নামতি1 এর ছবি

হো হো হো খাইছে

তারাপ কোয়াস এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি


love the life you live. live the life you love.

মৌনকুহর. এর ছবি

ধৈবত, আপনার লেখনীতে ধার আছে, এক কথায় উত্তম জাঝা!

কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে, আজকাল কূপমণ্ডূক-সংকীর্ণমনা-গোঁড়া-বকধার্মিক একটি জনগোষ্ঠীকে কেবল বাহ্যিক সাজ-সজ্জা দেখেই আমরা 'হুজুর' বলে ফেলছি। আবার অর্থ ও নারীলিপ্সু কোন 'ভণ্ড কবিরাজ'-কে পেলেই আমরা তাকে বলছি 'ভণ্ড পীর'

সত্যিকার অর্থে, অন্তঃকরণকে পরিশুদ্ধ না করে কেবল পোশাকি ধার্মিকতায় 'হুজুর' বা 'পীর' হওয়া যায় না। আর 'পীর'দের প্রধান এবং মুখ্য কাজ মানুষের নৈতিক এবং চারিত্রিক উন্নতি সাধনে কাজ করা, কোন ধরণের 'খনকারি' বা 'তাবিজ' ব্যবসা কিংবা 'কবিরাজি' করা নয় যা বর্তমান সময়ের তথাকথিত পীরেরা করছেন।

দুঃখের বিষয় এটাই, হুজুর-পীর উপাধিসমূহের তাৎপর্য না বুঝে অথবা না জেনে, মানুষরূপী এক দল চতুষ্পদ জানোয়ারকে আমরা এইসব উপাধি দিয়ে দিচ্ছি।

আপনার 'হুজুরদের গল্প' সম্পূর্ণ সিরিজের প্রেক্ষিতে আমার এই মন্তব্য। সচলের সহযাত্রী হিসেবে আপনার নিকট আমার দাবি রইল, হুজুর-পীর শব্দাবলীকে আক্রমণ না করে, আপনার শক্তিশালী লেখনী দিয়ে দয়া করে তথাকথিত ঐসব ভণ্ড হুজুর-পীরদের মুখোশটা উন্মোচিত করে দিন। তারা এইসব উপাধি ব্যবহার করে যে কেবল নিজের স্বার্থ-সিদ্ধি বৈ আর কিছু করছে না-- এই বিষয়টা ফুটিয়ে তুলুন।

অনেক অনেক ভালো থাকা হোক।

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

পাঠক এবং মন্তব্যকারী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ভয়ঙ্কর মজার! হো হো হো

সুমন চৌধুরী এর ছবি
স্বপ্নডানা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

ফালতু পাঠক এর ছবি

নিজের রুমে একা একা বসেই পড়ছিলাম আর হাসছিলাম ৷ সত্যি অপূর্ব আপনার লেখনি, চমত্কার আপনার ভাষার দখল এবং ব্যবহার, অসাধারণ আপনার গল্প বলার ঢং ৷ বাংলা ভাষায় রম্য লেখকের বড়ই অভাব, আশা করি ভবিষ্যতে আরো ভালো বিষয় নিয়ে আরো দারুন সব লেখা পাবো আপনার কাছে থেকে ৷ এক নিশ্বাসে পরে ফেললাম ৷ পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম, বেশি দেরী করবেন না ৷

ফালতু পাঠক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

শিশিরকণা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি উত্তম জাঝা!

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

পাঠক এবং মন্তব্যকারী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ

ফাহিম হাসান এর ছবি

হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিয়া হাসি

উত্তম জাঝা!

মাহবুবুল হক এর ছবি

ধৈবত, আপনি এখনো অতিথি কেনো বুঝতে পারছি না। আপনার ভাষা দারুণ ! আর বিষয়টাও চমৎকার!
আমার খুব লোভ হচ্ছে এমন একটি লেখা লিখতে। আপনার সরস, প্রাণবন্ত এবং বিষয়োপযোগী ভাষার জন্য শ্রদ্ধা। প্রিয় পোস্টে দিলাম।
লিখতে থাকুন।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধৈবত কবে ঘটেছে ব্যাপারটা?

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

 জলছাপ এর ছবি

ধৈবত ভাইয়া, সবগুলো গল্পই পড়লাম এবং খুবি ভালো লাগলো পড়ে উত্তম জাঝা!

আর কবি-মৃত্যুময় ভাইয়ার একটা কথা মানতে পারছি না,

\" এদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য নাই এটাই রক্ষা \"


তাবলীগের কিছু দল আছে আমার জানামতে তারা তাদের জীবিকা নিরবাহ করেন তাবলীগ করে। তাদের রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য না থাকলেও, অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও প্রশ্নের সম্মুখিন হাসি

আলতাইর এর ছবি

আপ্নেরা বড়ই পাষন্ড নাফরমান!! নাউজুবিল্লাহ!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।