নামাবলী

আশালতা এর ছবি
লিখেছেন আশালতা (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০৬/২০১১ - ৭:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সুয়োরানীর হয়েছিল হাড় মড়মড়ে রোগ, আমার হল উদ্ভুট্টি কান কট কটে ব্যারাম । থেকে থেকে কানের ভেতর কটকট কটকট । কী যে জ্বালা । দেখেবেছে এক ডাক্তারের কাছে হাজির হলাম । দেখি বিরাট সাইন বোর্ডে বড় করে নাম লেখা, বুলন্দ্‌ চৌধুরী । বাহ, বেড়ে নাম । শুনতেই বেশ তেজিয়াল বোধ হয় । ভেতরে গিয়ে দেখি বেঁটে খাটো শুকনো চেহারার শ্যমলা রঙা অমায়িক বৃদ্ধ । মনে হল, যাহ্‌, নামকরণের সার্থকতা তো ঘটল না !

সেক্সপিয়ার সেই কবে 'নামে কিবা এসে যায়' বলে রায় দিলেও এখন ওসব তামাদি কথা । বরং নিজের নামটি কি করে অক্ষয় করা যায় তার ফিকিরে সবাই ব্যস্ত । গিনেস বুকে নাম তোলার জন্যে কত কাণ্ড যে লোকে করে । আগেকার মত ছেলের নাম এখন দু কড়ি-পাঁচ কড়ি-পচা-বিশু কেউ রাখেনা । এখনকার বাবা মায়েরা খুব হুঁশিয়ার । সন্তানটিকে লাখে এক প্রমাণ করতে নামও রাখেন দুস্প্রাপ্য প্রকৃতির । সেদিন ডাক্তার খানায় একজনকে দেখলাম ছেলেদের নাম রেখেছেন, 'ব্যাটারি' আর 'ডেটল' । নাম শুনে ডাঙ্গায় খাবি খেলাম ।

অবশ্য এটি কলির শুরু মাত্র । মিতিনের ক্লাসের ফ্রেন্ডের নাম 'এবঙও', আর টিচারের নাম, 'ইউ মে' । আমাদের এক ফ্যামিলি ফ্রেন্ড তার চিল্লানোরাস কাঁদুনে দুই ছানার নাম রেখেছে 'সিডি' আর 'ক্যাসেট' । অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে ওই নামই এখন স্থায়ী । বাবার এক পুরনো বন্ধুর নাম ছিল 'পাঞ্জাবী' । ছোটবেলায় আমি উচ্চারন করতে পেতাম না, বলতাম 'পাঞ্জামা-পাঞ্জামী' । সেটাই চালু হয়ে গিয়েছিল । উনার ছোট ভাই বাইসেপস্‌ ট্রাইসেপস্‌ ফোলান মিশকালো দশাসই চেহারার গুঁপো ভদ্রলোক । নাম 'গোলাপ' । আহা !

সাধারণত সবাই ফুল-পাখি-রং-গান-নদী-রত্ন বা বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের নামে নাম রাখে । কারো ইংরেজি নাম পছন্দের । যেমন- লোটাস-ভিক্টর-লাইফ-জুয়েল-হেলেন ইত্যাদি । কিছু কিছু বাবা মার আবার ফলমূল খুব প্রিয় । তাই বাচ্চাদের নাম দেন লেবু-আতা-আপেল-পেয়ারা- ডালিম-কমলা-অরেঞ্জ এইসব । আমাদের পাড়ায় একটা পরিবার ছিল, সব্বার ফলের নামে নাম । আমরা ওদের বলতাম ফ্রুট সালাদ । নামগুলো মোটেও বিদঘুটে নয়, কিন্তু শুনতে কেন জানি মজা লাগে । ফিক করে হাসি পেয়ে যায় ।

নাম বিদঘুটে করার জন্য আত্মীয় স্বজন বা পাড়া পড়শির জুড়ি নেই । আমাদের গ্রামে একজনের নাম ছিল মন্মথ । পড়শিরা আদর করে ডাকতে লাগল 'মথো' । আটা ময়দা মথে জানি, তাই বলে মানুষ ! এক জায়গায় বেড়াতে গিয়ে মজার এক পরিবারের দেখা পেয়েছিলাম । তাঁদের বড় ভাই '৪৭ এর দেশ বিভাগের সময় বাস্তহারা হয়ে চলে আসার সময় পথেই জন্মেছিলেন । সেই 'ভ্যাজাল' এর সময় জন্মে আরও ভ্যাজাল বা ঝামেলা তৈরি করায় তাঁর নাম পড়ে 'ভেজালু' । পরের জন ভ্যাদর ভ্যাদর করে কথা বলার কারণে 'ভদু' । তাঁর ছোটজন ভাদ্র মাসে জন্ম বলে নাম পেয়েছেন 'ভাদু' । আরেকজনের নাম 'চেথ্‌রু' (এই নামের শানে নযুল জানিনা । বোধ করি চিৎপাত হয়ে ঘুমনোর স্বভাব জাতীয় কিছু একটা কারণ হবে ) । সবচে ছোট জন সবার নয়নের মণি , নাম মশা ।
এঁদের দুই কাজিন আছেন । ওনারাও কম যান না । একজন বেশি ফ্যাদলা পাড়েন বা বকবক করেন বলে নাম হয়েছে 'ফেদলু' অপর জন গুলবাজ বলে 'ফেকু' ।

সাদ্দাম হোসেন ইরাক আক্রমন করার পর তো বাচ্চার নাম সাদ্দাম রাখার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল । অনেকে অবশ্য এত জোশিলা নাম পছন্দ করেন না । তাই বাচ্চার নাম রাখেন বেবি-সুইটি-মিষ্টি- চকলেট, এমনকি বাচ্চা । একবার এক বৃদ্ধা মহিলার নাম 'বাচ্চা' শুনে ভড়কে গিয়েছিলাম ।

আমাদের ছোটবেলায় একটা কমন খেলা ছিল কেউ একজন ছুটতে ছুটতে এসে হটাত বলে উঠত, জানিস, টুকু হারিয়ে গেছে ! আমরা সবাই জিজ্ঞেস করতাম, কোন টুকু ? সে তখন আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলত, এই এত টুকু ! অম্নি সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ত । খুবই ননসেন্স খেলা । কিন্তু আমরা আমোদ পেতাম । সেদিন এক বাসায় গিয়ে শুনি ওদের ছেলের নাম টুকু । সেদিন হাসি চেপে রাখা দায় হয়েছিল । আমার এক খেলার সাথী ছিল, খুব বেঁটেখাটো গাঁট্টা গোঁটটা দেখতে । বাসায় ওর নাম ছিল আণ্ডা । আমরাও তাই ডাকতাম । বড় হয়ে ও একটা ভয়ঙ্কর খুনে গুন্ডা হয়েছে । কিন্তু আমার মা-র তা মনেই থাকেনা । রাস্তায় দেখা হলে সবার সাম্নেই জিজ্ঞেস করে বসেন, বাবা আণ্ডা, কেমন আছ ? আণ্ডা বাবু মুখ লাল করে বলে ফুপু, আমার নাম তো এখন আর আণ্ডা না । আম্মা বলেন, আচ্ছা আচ্ছা । পরের বার আবার ভুলে যান ।

এতক্ষনে অনেকেই নিশ্চয় ভুরু কুঁচকে ফেলেছেন, নিজে ভালো মানুষ সেজে দুনিয়ার সবার নাম নিয়ে ত্যানা পেঁচাচ্ছি বলে । এবার একটু নিজের ঢোল পেটাই তবে । আমার বাবা সাড়ে ছফুট লম্বা ভীষণ সুপুরুষ ছিলেন । পরিবারে নাম ছিল 'বাঁঠু' । কোন মানে হয় ? আর আমি ? সব্বার দু মাইল তিন মাইল লম্বা নাম হয় , একটা দুটো ইস্ত্রি দিয়ে ভাঁজ করে ওঠানো নাম থাকে, আদর করে ডাকা নাম থাকে, নামের কত রকম বিলাসিতা । আর আমার তিন অক্ষরের একটাই সবেধন নিলমণী নাম, সাথে পদবী, ব্যাস । ওটাই তোলা, ওটাই পেট, যাকিছু ওই একটাই । তাও বেশির ভাগ সময় ছেলেদেরই এই নাম রাখা হয় । আর এই জীবনে আমার নামে যে কটা মানুষ দেখেছি সব কটা হাড় পাজি । সাধে কি আর নাম ভাঁড়িয়ে লিখি !!

আশালতা


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই গল্প আগেও সচলে বলছি। আবার বলি...
আমার বউয়ের যখন ছাও হবে, তখন তার আব্দার নাম রাখতে হবে "ন" দিয়া। কারন আমাদের দুজনের নামই "ন"দিয়া। তাও আবার আনকমন হইতে হইবো।
অনেক খুঁজে সবচেয়ে বেশি "ন" সমৃদ্ধ শব্দ বের করলাম "ননসেন্স"। শুনেই বউ ঝাড়ু দিয়ে পিটাইতে আইলো।
তারপর অনেক চিন্তা করে বের করলাম আরেকটা নাম "নমরুদ"। এবারও ঝাঁটার বাড়ি জুটলো কপালে।
এরপর জিগাইলাম নামের শেষে "ন" থাকলে চলবো? চোখ পিটপিটায়ে জিগাইলো কী নাম? আমি বললাম "শয়তান"
এরপরের ইতিহাস না জানাই ভালো।

এই দুঃখে নাম রাখাই বাদ দিলাম। ছাও জন্ম নিলো। আমি নাম রাখি না। খালা ফুপুরা একেকজন একেক নামে ডাকে। নুসাইবা... নাওয়ার... আরো কী কী জানি নাম। আমি ডাকি "চান্দু"

প্রথম জন্মদিনের দিন কেক অর্ডার দিতে গেছি, কেকওয়ালা জিগায় কী নাম লেখুম? আমি বললাম "নিধি"
নামটা টিকে গেলো। সবাই ডাকা শুরু করলো নুসাইবা নাওয়ার নিধি

কিন্তু ওসব আরবী ফার্সী নাম আমি বুঝি না, মুর্খ মানুষ। স্কুলে ভর্তি করানোর সময় ফরম ফিলাপ করতে হবে, কী লিখবো? লিখে দিলাম "আকাশলীনা নিধি"

কাহিনী শেষ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আশালতা এর ছবি

হা হা হা হা ...কপাল গুণে বেঁচে গেছেন । আমি হলে তক্ষুনি 'ঘুষায় নাক ফাডায়ালাইতাম' নির্ঘাত হো হো হো

তবে হ্যাঁ, দুটো নামই আমার খুব খুব পছন্দের । ভার্সিটিতে থাকতে একজনের সাথে শুধু ওই আকাশলীনা নাম ছিল বলে স্বভাবের বাইরে গিয়ে গায়ে পড়ে ভাব করেছিলাম । ভাবটা টেকেনি অবশ্য । মেয়েটা সারাক্ষন ভুরু কুঁচকে টিপিক্যাল মেয়েলি গল্প করত আর পিচ পিচ করে এদিক ওদিক থুতু ফেলত । আমার জীবনানন্দ প্রেম চটে যাচ্ছিল আরেকটু হলেই...

কৌস্তুভ এর ছবি

হো হো হো নামাবলী মজারু হইছে।

আমি কিন্তু খুউব ভালো মানুষ... মানে ভালো ছেলে... আমারে মন ভরে চকলেট-আইস্ক্রিম-জেলাত্তো-ক্যানোলি খাওয়াতে পারেন, অপচয় হবে না... দেঁতো হাসি

আশালতা এর ছবি

সেকি ! এত চকলেট-আইস্ক্রিম খেতে নেই জানেন না ? শেষে ডায়াবেটিস হলে কে দেখবে ? তারচে অল্প একটু (গুড়) খান ।

রিসালাত বারী এর ছবি

ছোট বেলার চার পাড়াতো ভাইয়ের কথা মনে পরে গেল। তাদের চার ভাইয়ের নাম ছিল - সন্তু-নন্তু-পোকা-কিন্তু!!! পোকা ভাই আর কিন্তু ভাইরে আমার বেশ ভাল্লাগতো, ডেকে শান্তি পেতাম দেঁতো হাসি

লেখা পইড়া মজা পাইছি।

আশালতা এর ছবি

কিন্তু !!! এটা একটা নাম ?! তবে পোকা নামটা পছন্দ হয়েছে । আমার একটা প্রিয় গাবলু আছে, চার বছর বয়েসেই ওজন ৩০ কেজি ! ওইটাকে এই নাম দিতে হবে । অবশ্য ওর মা ষড়যন্ত্র টের পেলে আমার খবরই আছে দেঁতো হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আমি নিজেই নিজের নাম থুইছি, চিজ বার্গার আকিকা দিয়া। ধুগো, উইদ হ্রস্ব উ-কার। আর, ভবিষ্যতে যদি কোনো বান্দর পোলাপানের বাপ হৈতে পারি তাইলেও নামধাম ঠিক কইরা থুইছি। কিন্তু সেগুলা কমু না। এমনিতেই তো পোলাপানের মাও হবার লাইগ্যা কোনো মাতারিরে এখনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতার্লাম না। এই নামাবলী শুনলে আমার বাড়ির সামনে লাইন পইড়া যাবে। না, আমারে ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়ার জন্য না। বরং প্রবল ঝাঁটাক্রমনে আমারে পটল বাগানে যেতে বাধ্য করার জন্য! মন খারাপ

আশালতা এর ছবি

এহ হে, আপনি এখনও দিল্লিকা লাড্ডু রসবঞ্চিত ! আর আমি ভাবছি ওই প্রপিক এর মত আপনিও বুড়ো মানুষ খাইছে
তবে যাই বলুন, কারুর ঝেঁটেল শুভেচ্ছা প্রাপ্তি দেখতে পাওয়াটাও বড় সুখের জিনিষ চোখ টিপি

অপছন্দনীয় এর ছবি

নিজেরখানা আর না-ই বা বললাম - সেটা একটা আরবী বাক্য(!)। নামের নাকি সুন্দর অর্থ থাকতে হয় এবং আনকমন হতে হয় তাই তেইশখানা অক্ষরের বিশাল এক ঝামেলা। ডাকনামটা আরো আজিব, আজ পর্যন্ত আর কারো শুনিনি এবং সেটার অর্থ নাকি পারিজাত। আমার মত কেলেকুচ্ছিত হোঁদল কুতকুতের নাম পারিজাত(!) - এর চেয়ে উদ্ভট আর কিছু হতে পারে না।

তবে হ্যাঁ, আনকমন(!) চমৎকার(!!) অর্থযুক্ত নামের উৎপাত প্রচুর আছে। এই যেমন ধরুন আমার বয়স এখনো তেতাল্লিশ হয়নি, কিন্তু এ পর্যন্ত তেতাল্লিশবার স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির খাতায় ওই নামখানা ভুল লেখা হয়েছে - হিসেবে বছরে গড়ে একবারের বেশি। যেহেতু নিজের সাথে বাপ মায়ের নামও বাংলাদেশে লিখতে হয়, কাজেই আমার যদি কখনো n-খানা ছানাপোনা থাকার কোন সম্ভাবনা থাকতো তাহলে সর্বমোট কমপক্ষে 43(n+1) বার ওই নাম ভুল লেখার সম্ভাবনা থাকতো (ভাগ্যিস সেই সম্ভাবনা নেই)। আর ডাকনামটা শুনে কেন যেন মানুষ মেয়ে ভাবে। একবার এক নাম-শুনে-প্রেমে-পড়া পাণিপ্রার্থীও জুটেছিলো - সে এক বিভৎস ঘটনা মন খারাপ

নামের এত আপদ থাকার দরকারটা কী? কারো নাম আগুন পানি বাতাস মাটি কাক বক হলেই বা সমস্যা কোথায়? বাংলাদেশে যেহেতু মানুষের নিজের চেয়ে চৌদ্দপুরুষের পরিচয় অনেক বড় ব্যাপার, আমার তো মনে হয় সেখানে 192.168.0.1 জাতীয় নামই সবচেয়ে ভালো হতে পারতো - বেশ বংশ মেলানোর জন্য সিরিজ মিলিয়ে বিয়ে টিয়ে দেয়া যেতো... তা না যত সব আপদ ঘাড়ে চাপানো হয় মন খারাপ

আশালতা এর ছবি

নাম শুনেই প্রেম ! এসব তো লাইলি-মজনুর কালে ঘটত । এই যুগেও এসব হয় নাকি ?
আর সিরিজ মিলিয়ে বিয়ে !! আপনার ক্ষুরে ক্ষুরে দণ্ডবৎ ! রক্ষা করুন ! আমার কোন নাম্বারই মনে থাকেনা, নিজের ফোন নাম্বার জিজ্ঞেস করলে ভুরু কুঁচকে, মাথা কাত করে কয়েক সেকেন্ড ভাবতে হয় । ওরকম হলে আমি তো সমুদ্রে পড়ব ।

ইশ্‌ তেইশ বনাম তিন- কি অবিচার !

অপছন্দনীয় এর ছবি

আন্তরিকতা বিহীন, চিন্তা না করে কথা বলা, খেয়ালীবিশেষ লায়লী মজনুর যুগেও ছিলো এ যুগেও আছে।

আশালতা এর ছবি

তা আছে স্বীকার করি, কিন্তু এর একদম উলটো স্বভাবের মানুষও কিন্তু দুনিয়ায় ফুরিয়ে যায়নি এখনও । বরং আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় সৃষ্টিকর্তা একই সেটের মানুষ আলাদা আলাদা যুগে সেট করে দেন কেবল ।

কৌস্তুভ এর ছবি

কই, শুনি সেই পারিজাতের প্রতিশব্দটা? দেঁতো হাসি

আশালতা এর ছবি

না বাপু কাজ নেই পারিজাতের প্রতিশব্দ শুনে । সচলে আবার 'আন্তরিকতা বিহীন, চিন্তা না করে কথা বলা, খেয়ালীবিশেষ' কেউ থাকলে বিপদ হতে পারে। খাইছে

অপছন্দনীয় এর ছবি

খোমাখাতায় দেখুন, আমার প্রোফাইলে ঢুকলে অ্যাড্রেস বারে পাবেন খাইছে

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

আমার এক বন্ধুর দুই জমজ ভাইপোর নাম: কর্কটক্রান্তি চক্রবর্তী, মকরক্রান্তি চক্রবর্তী। আমার এক বন্ধুর ডাকনাম ডলার, ছোটভায়ের নাম ইয়েন, বোনদের ডাকনাম জিলাপি ও টফি। দুভায়ের নাম শুনেছিলাম-জন্ডিস আর গ্যাস্ট্রিক, কে জানে পিতৃপ্রদত্ত না বন্ধুদত্ত। আমার ছোটবোনের স্কুলে ভর্তির সময় নাম খুঁজে না পেয়ে যে-নাম দেওয়া হয়, তার মানে "যার নাম নেই"।

আপনার নামটা কিবা?

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

আশালতা এর ছবি

ক্রান্তি তবু সহনীয়, সাধারন লোক চট করে বুঝবেনা, কিন্তু জন্ডিস-গ্যাস্ট্রিক ?!! অ্যাঁ অসুখের নাম সারাজীবন প্রিয় মানুষের সাথে জুড়ে দেয়াটা কিরকম মানসিকতা বুঝলাম না ।
আমার নাম আপাতত আশালতা । একদিন-প্রতিদিন আমার স্বপ্নেরা সরে যায়; তবু আশায় বাঁধি ঘর । এই জন্যে আমি আশালতা । ইচ্ছে আছে কখনও যদি সচল বা নিদেনপক্ষে হাচল হই, সেদিন নিজের নামটা দেব ।

অপছন্দনীয় এর ছবি

যে ভাবে এগোচ্ছেন, তাতে হয়ে যেতে বেশিদিন লাগবে বলে মনে হয় না হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

দুয়ে সন্ধি হয়ে মর্কটক্রান্তি চক্রবর্তী হয়ে গেলে কিন্তু খুব মশকিল! খাইছে

আশালতা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

মৌনকুহর. এর ছবি

চলুক

আশালতা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

আয়নামতি1 এর ছবি

কি আজব ব্যাপর! গতকাল এখানে আমি খুব ছোট্ট একটা মন্তব্য করেছিলাম, যার অর্থ পোষ্টটি দারুণ মজারু! কিন্তু সেটা আসেনি বলে আজকে শব্দেরা কেমন হাতে-পায়ে বেড়ে গেলো দেখেছেন লতাদি? আপনার লেখার মতই সুন্দর আপনার নিকটি(এবং অবশ্যই আমারটিও লইজ্জা লাগে ) যেদিন প্রথম আপনার নিকটি দেখেছি, কালবেলার 'মাধবীলতার' কথা মনে পড়ে গেছে। 'লতা ভীষণ জড়িয়ে ধরে' আপনার লেখায় সে গুণ আছে কিন্তু! মজারু আরো অনেক পোষ্ট চাই হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার একাউন্টটি সক্রিয় হয়ে গেছে। ইমেইল পাননি?

আশালতা এর ছবি

অ্যাঁ ?! একাউন্ট সক্রিয় হল কবে ? কখন ? কিভাবে ?? আমি যে কোন মেইল পেলাম না তবে ? আর... সক্রিয় হলে পরে কি করতে হয় ?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনি আশালতা না আয়নামতি? আয়নামতি একাউন্ট থেকে লগইন করতে পারবেন এবং পোস্ট দিতে পারবেন।

আশালতা এর ছবি

... তার মানে আমার ইমেইল একাউন্ট থেকে ?! বেশ ! ধন্যবাদ। চেষ্টা করে দেখব...

আশালতা এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ আমি নতুন করে কোন মেইল পাইনি, রেজিস্ট্রেশন এর পর যে মেইলটা এসেছিল, সেটা থেকে লিঙ্ক ক্লিক করে গিয়ে নাম পাসওয়ার্ড দিলে নিচ্ছেনা ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া

আয়নামতি1 এর ছবি

@ মুর্শেদ, ভাইয়া আশালতাদিদি আর আয়নামতি দু'জন আলাদা কিন্তু! এই মন্তব্যটা পড়ে আমি ইমেইল চেক করে এলাম। নাহ্ সচলের কাছ থেকে কোন ইমেইল আসেনি( বলে নেয়া ভালো, রেজি: করবার পর পরই নাকি সবাই একটা মেইল পান, আমি সেটাও পাইনি ওঁয়া ওঁয়া সে কথা জানিয়ে আমি সচলে চিঠিও দিয়েছিলাম(এ পর্যন্ত তিন দফায় চিঠি দিয়েছি সচল বরাবর মন খারাপ ) কিন্তু সচল পাষাণের মতই নীরব থেকেছে। যেহেতু আপনি মেইলের কথা বললেন তাই এখানেই সেটার উল্লেখ করে গেলাম। ব্যাপারটা নিয়ম বর্হিভুত হলে ক্ষমাপ্রার্থী।

আশালতা এর ছবি

ভাগ্যিস সচলের এইরকম মধুর ভুল হয় মাঝে মাঝে, নইলে আর আমার মত বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ত নাকি ! আমার কাছে শব্দেরা প্রায়ই রঙ আর ছবি হয়ে পৌঁছয় । এমনিতে আয়নার সাথে আমার ভীষণ ঝগড়া হলেও আয়নামতি নামটা শুনলেই পুরনো যুগের আয়নাঘরে কেশ এলানো কোন উদাসিনী সুন্দরীর কথা মনে হয় হাসি

আশালতা এর ছবি

যেই না সচলের ভুল ত্রুটিকে একটু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করলাম, অম্নি আয়নামতি কে দেয়া মন্তব্য লাফিয়ে ২৪ থেকে ২৯ এ চলে গেল । বাকি আরও গোটা দুয়েক তো হাওয়াই । সে জন্যেই বলে, আদর পেলেই বাঁদর হয় ! হুঁহ্‌ !

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

লেখাটা বেশ মজার হয়েছে।

আমার নাম ভালা। তবে আমাকে অনেক নামে ডাকা হয়। তার সবগুলাই আমার বেশ পছন্দ। খালি পিতা-মাতা প্রদত্ত ডাক নামটা অন্য কিছু হইলে বেশি খুশি হইতাম, এইটারে পচায়ে অনেক কিছু বানানো যায় যেগুলান খুব ভালো বিশেষণ দাঁড়ায় না! আরো সমস্যা হলো প্রথমবার শুনে অপরিচিত লোকে আরো দুইবার জিজ্ঞেস করে, কী নাম বললাম, তারপর যেটা করে সেটা হলো জিজ্ঞেস করে আমি কোন্‌ ধর্মের, তারপরে আবার বানান ভুল করে। তাই ডাক নাম বলা ছেড়ে দিয়েছি মেলা আগে থেকে, পূর্ব-পরিচিত বা কাছের লোকজন, বন্ধুবান্ধব ছাড়া আর কেউ এই নামে ডাকে না। আর এইযে ব্যাকপ্যাকিং নামটা, এইটা নিজের আকিকা দেয়া, মেলা দুঃখে এই নাম নিলেও নামটা আমার বড়ই পছন্দের। দেঁতো হাসি

তবে আমি ব্যাপক নামকরণ করি। নামকরণের জন্যে আমার সু(!)নাম আছে। শয়তানী হাসি
আম্মাদের এক মশা চাচা ছিল, আমাদের এক টফি, এক ডলার চাচা আছে, এক মামার পরিবারে সবার নাম রঙের নামে, আরেক মামার পরিবারে সবার নাম পাখির নামে! আর পরিচিত এক ডাক্তার পরিবারে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা সব আছে! আবার আরেক পরিচিত বিজ্ঞানী পরিবার আছে যাদের সবার নাম বৈজ্ঞানিক এককের নামে!!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

আশালতা এর ছবি

এখন মনে হচ্ছে ভাগ্যিস আমার নামটা ছোট বড় কিছুই করা যায়না । তবে আপনার নিকটা কিন্তু দারুন । দেখলেই লুকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস মত আসে । সত্যিই যদি অমন হওয়া যেত ! আহা !

ফাহিম হাসান এর ছবি

খুব চমৎকার একটা পোস্ট। লেখা-মন্তব্য পড়ে গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আমার এক পিচ্চি কাজিনের স্যালাইভা গ্ল্যান্ড খুব সক্রিয় ছিল। ওকে সবাই ডাকত "লালা মিয়া"।

উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় জৈব রসায়ন খুব ত্যক্ত করত। আমি আর আমার বোন আরেক কাজিনের নাম রেখেছিলাম ২,২ - ডাইমিথাইল ইথার !!

আশালতা এর ছবি

লালা মিয়া !! হো হো হো হো হো হো হো হো হো

আমি লিখে পারিনি, বরং আপনাদের মন্তব্যে পোস্টটা সমৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে হাসি

সুমাদ্রি এর ছবি

বেশ মজার লেখা এবং মন্তব্যগুলো ও সরেস। ছোটবেলায় পাড়ায় ক্রিকেট খেলতে আসতেন মেজদা'র বন্ধু শহীদ ভাই। এক ওভার করতে গেলেই উনি কম করে হলেও দুই ওভার বল করতেন কারণ প্রতি এক বল অন্তর অন্তর উনি একটি দুটি ওয়াইড বল করতেন। সবাই উনাকে নিয়ে বেশ হাসাহাসি করত, একটা নামও জুটেছিল এ গুনের জন্য। " বেকাইয়া "। আমরা চট্টগ্রামের মানুষ, একদিন ঢাকায় গেছি আমি আর মেজদা কি একটা কাজে। হঠাৎ দেখি এক রাস্তার অন্য পারে শহীদ ভাই। মেজদা বেশ ক'বার গলা সপ্তমে তুলে ডাকল- শহীদ, শহীদ, ওই শহীদ্যা। শহীদ ভাইয়ের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তারপর মেজদা ছুঁড়ল মোক্ষম অস্ত্র, ডাকল, " ওই বেকাইয়া "। অমনি দেখি শহীদ ভাই মাথা ঘুরিয়ে ঠিক আমাদের দিকেই তাকাল। তারপর রাস্তা পেরিয়ে এসে কোলাকুলি পর্ব সেরে বলল, " আমার নাম শহীদ বেটা।" শহীদ ভাই নিশ্চিত সচলায়তন পড়েন না। যদি পড়ে ও থাকেন তবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আশালতা এর ছবি

হাসি হাসি হাসি

অনিকেত এর ছবি

চমৎকার লাগল লেখাটি, আশালতা।
আমার নিজের নাম নিয়ে গর্ব করার কিছুই ছিল না। একেবারে সাধারণ গোবেচারা টাইপের নাম। মধ্যপ্রাচ্যের এক দুঃশীল দুর্যোধনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করে আমার নামটি পরিগ্রহন করে আমাকে যুগপৎ গর্বিত এবং বিস্মিত করে তুলেছিলেন। আমার গর্ব ও বিস্ময়ের অনুভূতি অত্যন্ত স্বল্পজীবি ছিল। পরবর্ত্তীতে দীর্ঘসময় ধরে (এখন পর্যন্ত) নামটির কারণে স্থানে-অস্থানে হেনস্তা হই। শুধু সেইখানে থেমে থাকলে একটা কথা ছিল। আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের দূর্বৃত্ত শাহজাদার নামের সাথেও আমার নামের মিল হয়ে গেল। শুধু নামের কারণে এমন লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার হতে হতে অন্যের বিটকেল নামগুলো আমার ভাল করে কখনো খেয়ালই করা হল না। আপনার লেখার কারণে কিছু কিছু অদ্ভূতুড়ে নাম শোনার সৌভাগ্য হল। বুঝতে পারলাম---একমাত্র আমিই নামের কারণে ভুগছি না।
সচলে যখন লেখালেখি শুরু করি---তখন নাম নিই 'অনিকেত'। অন্য কোন কারণ ছিল না--স্রেফ অনাদিকাল হতে গৃহহীন, ঠিকানাহীন হয়ে আছি এই পরবাসে---এই অনুভূতি হতেই নামটা নেয়া। এখন কেন জানি আমার আসল নামের চেয়ে এই নামটাকেই ভালবাসি অনেক।
অনেক ধন্যবাদ আপনার লেখাটার জন্যে---আরো অনেক লিখুন।
ভাল থাকুন সকল সময়ে
শুভেচ্ছা নিরন্তর

সচল জাহিদ এর ছবি

বস, অনিকেত যে আপনার লেখকী নাম সেইটা আজমাত্র জানলাম। আমার ধারনা ছিল অনিকেত আপনার ডাকনাম !!!


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অনিকেত এর ছবি

হা হা হা, হ মিয়া। আমার একটা ডাকনামও আছে অবশ্য। নামে নামে একেবারে বদনাম হয়ে গেলাম বস।

আশালতা এর ছবি

ভালো লাগা জানানোয় ধন্যবাদ অনিকেত ।
আপনার লেখা মোটামুটি গুলে খেয়েছি বলে আমি কিন্তু আপনার সত্যি নামটা আগেই জানতাম হাসি

সচল জাহিদ এর ছবি

চমৎকার লেখা। নাম নিয়ে লেখা বলেই এই লেখাটার বিজ্ঞাপণ রেখে যাই, পড়লে মজা পাবেন।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

আশালতা এর ছবি

ধন্যবাদ সচল জাহিদ । ওই লেখাটা আগেই পড়েছি এবং যথারীতি চোখ কপালে উঠেছে । নাম নিয়ে লোকের এত বিড়ম্বনা হতে পারে সত্যিই ভাবিনি ।

কল্যাণF এর ছবি

চলুক

আশালতা এর ছবি

হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

guest_writer এর ছবি

আশাদি আছো কেমন? একটা সিরিয়াস টাইপ গল্প ঝারো তো... এইটাও মজা হইসে চলুক

আশালতা এর ছবি

আছি তো বেশ বেঁচেবর্তেই কিন্তু নাম নেই ধাম নেই এটা কে গো ? আর...সিরিয়াস টাইপ গল্প লিখব আমি ?! তবেই সেরেছে ! ইয়ে, মানে...

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

রঙ্গিন ফেরেশতা এর ছবি

অসম্ভব ও বেসম্ভব সুন্দর হয়েছে।নাম নিয়ে আমার একটা ব্যাপার আছে,কারো নাম শুনলেই মনে মনে একটা চেহারা কল্পনা করে ফেলি তারপর দেখা হলে পুরাই উলটা হয়।কল্পনার সাথে কোন মিল নাই।ফ্রুট সালাদ পরিবারের কথা শুনে মনে পড়লো আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ে ছিল নাম বাংলা।তার বোনের নাম ভাষা আর ভাইয়ের নাম সাহিত্য।শুনে খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম।একদিন ওদের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে দেখি ওর ভাইয়ের নামের সাথে কোন মিলই নাই।আমি ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই খুব রাশভারী একটা মানুষ হবে তা না দেখি লুঙ্গি হাটুর উপর তুলে বিড়ি টানছেন! মন খারাপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।