পুঁজি পাচারঃ মাধ্যম সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ফেসবুক

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০৬/২০১১ - ৫:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছু দিন আগে টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠান দেখার সময় একটি মুঠোফোন কোম্পানীর বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। বিজ্ঞাপনটি ছিল এইরকম----একটি ছেলে চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠলো, দাঁত ব্রাশ করল তারপর কম্পিউটারের সামনে বসলো। বসে ফেসবুক ওপেন করে নোটিফিকেশন দেখলো, মন্তব্য করলো এরপর বন্ধুদের সাথে chat করা শুরু করলো। একটু পর তার মুঠোফোনে রিং বেজে উঠলো এটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে তার ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। এটা দেখে সে যারপরনাই বিরক্ত হলো এবং অনেক কষ্টে কম্পিউটার বন্ধ করে মুখ কালো করে ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। এমন সময় একটি দৈববাণী তার কানে ভেসে এলো ---“ফেসবুক নোটিফিকেশন এখন তোমার মোবাইলে।“ মোবাইলে এই সুবিধা পেয়ে সে প্রচন্ড খুশি হয়ে হাসিমুখে ক্লাসের উদ্দেশে এগিয়ে গেলো।এতক্ষণ যে মুখ বিষন্নতায় ভারাক্রান্ত ছিলো তা যেন একমূহূর্তে উধাও।

ফেসবুকের এমন অপব্যবহার দেখে আমি নিজেই বিষন্ন হয়ে পড়ি এবং টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখার আগ্রহ হারিয়ে এসে চিন্তায় ডুবে যাই।আমি আধুনিক, প্রযুক্তিবাদী। মার্ক জ়াকারবার্গের প্রতি মনে মনে খুব কৃ্তজ্ঞতা প্রকাশ করি এইজন্যে যে তিনি আমাদের ফেসবুক উপহার দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। যোগাযোগের যে কয়টি মাধ্যম আছে তার মধ্যে ফেসবুককেই আমার সবচেয়ে সহজলভ্য ও উন্নত মনে হয় যার মাধ্যমে সংযুক্ত থাকা যায় সবার সাথে।

এখন অনেকেই ভাবছেন বিশেষ করে তারা যারা আমার লেখাটি পড়ছেন যে কিভাবে এটা পুঁজিপাচার করছে? পুঁজি দুটো প্রক্রিয়ায় পাচার হচ্ছে।

প্রথমত, যে সময়, মেধা এবং মনোযোগ ঐ ছেলেটির ঐ সময়ে ক্লাসের পড়ায় দেওয়া উচিত ছিলো তা সে ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে অবহেলায় নষ্ট করছে।এভাবে আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের মেধার অপমৃত্যু ঘটাচ্ছি।যেটা কাজে লাগিয়ে হয়ত সৃষ্টিশীল কোন কাজ করা যেত। আমাদের মনে এই প্রশ্ন একবারও জাগে না যে জিনিসটির পেছনে আমারা আমাদের মুল্যবান সময় নষ্ট করছি তা আমরা কেন তৈরি করতে পারিনি, কেন আমরা একজন মার্ক জাকারবার্গ তৈরি করতে পারিনি?

শুধু তাই নয় এটি এখন বিভিন্ন সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কারখানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন আগে একটি জনপ্রিয় ব্লগে একজন ব্লগার সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা যাতে সাবধানে তাদের ছবি আপলোড করেন।এখানে যেসব ছবি আপলোড করা হয় সেগুলো নিয়ে একটি মহল রীতিমত বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছে এবং দেশের তরুণ প্রজন্মের পকেট কাটছে। এই বিষয়ে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন।(আমি ভুলে গিয়েছি লেখাটি কোন ব্লগে পড়েছি। তাই লিংকটি দিতে পারিনি বলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি)।

দ্বিতীয়ত, এই নোটিফিকেশন সুবিধা পেতে যে অর্থ তাকে দিতে হবে এবং প্রাপ্ত অর্থ হতে মুঠোফোন কোম্পানী গুলো যে মুনাফা লাভ করবে তার প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর পুঁজি পাচারের জনপ্রিয় মাধ্যম হলো Transfer Pricing. Transfer Pricing কি সেটা সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন সব বহুজাতিক কর্পোরেশন তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রায় বেশিরভাগ কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি মধ্যবর্তী অন্য কোনো উন্নত দেশ হতে আমদানী করে। এই বৈধ আমদানী প্রক্রিয়ায় তারা ওভার ইনভয়েসিং করে যাতে সরকার কে মুনাফা কম দেখানো যায়।মুঠোফোন কোম্পানীর জন্য Transfer Pricing করা আরো সহজ। কারন তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ সহ অনান্য সকল কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকেই আমদানী করতে হয় ।

Transfer Pricing এর মাধ্যমে পুঁজি পাচার করলে একসাথে দুটো সুবিধা পাওয়া যায়। একটি হলো এদেশের সরকার কর্তৃক মুনাফার উপর আরোপিত কর ফাঁকি দেওয়া। অন্যটি হল তাদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষকে খুশি রাখা।এমনিতেই এইসব বহুজাতিক মুঠোফোন কোম্পানীগুলো উচ্চ মজুরি প্রদানের মাধ্যমে মেধা ক্রয় করেএকটি এলিট শ্রেণী তৈরি করছে যা আয় বৈষম্য বাড়ানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মধ্যেই সৃষ্টি করেছে অন্য আরেক বাংলাদেশ। এটি মেধা পাচারের সহজ প্রক্রিয়া। দুঃখের বিষয় হলো আমাদের দেশেরই কোন মেধাবীর মাথা থেকেই হয়তো এই সুবিধা প্রদানের বিষয়টি এসেছে। এর ফলে কোম্পানীর মুনাফা বাড়বে, তার বেতন বাড়বে। দেশের কথা, তরুণ প্রজন্মের কথা তার চিন্তা করার দরকার কি? এই প্রসঙ্গে একটি জনপ্রিয় পত্রিকার বিজ্ঞাপনের সংলাপ মনে পড়ে গেল-"দেশ আমাকে খাওয়ায় না পড়ায়, দেশের কথা ভাবার বহু লোক আছে।"

এখন প্রশ্ন হলো এই অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য আমরা কাকে দোষ দিব?ফেসবুকের এহেন অপব্যবহারের জন্য এর উদ্ভাবক মার্ক জাকারবার্গকে দোষ দেওয়া চলে না। বস্তুত দোষ হল আমাদের নেতৃ্ত্বের মেধাজনিত অপুষ্টির যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্বার্থ চরিতার্থ করা ও মুনাফাবাজির উদ্দেশ্যে তাদের নৈতিকতা বোধ কে বিসর্জন দিয়ে এইসব বিজ্ঞাপন প্রচার এবং মুঠোফোনে এই ধরণের সুবিধা প্রদানের অনুমতি দিয়ে আসছে।আমাদের নীতি-নির্ধারক মহলের কর্তাব্যক্তিরা এক বারও কি ভেবেছেন বিজ্ঞাপনে যে ছেলেটি কে দেখানো হয়েছে তা তাদেরই কারো ছেলের প্রতীক যে তার পড়াশোনার সময়টুকু অবহেলায় নষ্ট করছে কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে জড়িয়ে পড়ছে কোন অপরাধমুলক কর্মকান্ডে। ।আর কতকাল আমরা চোখ বন্ধ করে এইসব অপকর্ম সহ্য করব? আমাদের কি এখনো জেগে উঠার, প্রতিবাদ করার সময় আসেনি?


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম এই পোস্ট পড়ে।

guest_writer এর ছবি

বর্তমানে বহুজাতিক পুঁজি নৈতিকতাকে রীতিমত ধর্ষণ করে চলছে...... এবং ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী বলে এই ধর্ষণেও আমরা বেশ সুখ পাচ্ছি .... কারণ আর কিছুই নয়, মাস শেষে মোটা অঙ্কের কড়কড়ে নোট, সাথে গাড়ী...... আর কি লাগে ......... এর উপর ভর করে সুন্দরী... নারী তো আছেই !!! এইদেশে তরুণদের সবচে আকাঙ্খিত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর চাকরী............ যারা এইদেশের পরিবেশকে সবচেয়ে বেশি দুষিত করে ............ আবার সরকার মহাশয়কেও খুশি রাখে সবচে বেশি কর দিয়ে ............ এ যেন ধর্ষণের পর ধর্ষিতাকে পেট খালাশের খরচ দেয়া !!!!!!!!!!! আমরা তরুণরাও আজ তাই নৈতিকতা শব্দটিকে ইতিহাসের পাতায় স্থান দিয়ে পুঁজির ধর্ষণে স্বর্গসুখ(!!!) অনুভব করছি

নির্ঝরা শ্রাবণ

দুর্দান্ত এর ছবি

১। মোবাইল ফোনে ফেসবুকের নোটিফিকেশান পাওয়া ফেসবুকের অপব্যাবহার কেন হচ্ছে বুঝতে পারিনা। ক্লাসে বসে ফেসবুকিং করাকে খারাপ লাগলে বলে ফেলি, যে ছাত্র ক্লাসে মনযোগ দেবেনা, সে ফেসবুক হাতের কাছে না পেলে অন্য কিছু খুঁজে নেবে, মোবাইল/ফেসবুক ঠেকিয়ে তার মনকে ক্লাসে আটকে রাখার চেষ্টা শিশুসুলভ বাতুলতা মাত্র। ধরে নিন স্কুলে ইসলামিয়াত বা ব্যাকরন বা কলেজের ইংরেজী সাহিত্যের মত বাস্তব জীবনে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর কথা। এগুলো বসে বসে অনিচ্ছায় গিলবার চাইতে ক্লাসে বসে ফেসবুকিয়ে শেখা সামাজিক দক্ষতা জীবনে অনেক বেশী কাজে লাগে। এখানে ছল শেখা যায়, ভনিতা শেখা যায়, চটুল ভাষার মারপেঁচ শেখা যায়, সুললত না হোক - খিচুড়ী বিদিশী ভাষাও আয়ত্বে চলে আসার সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে। আমার তো মনে হয় ক্লাসরুমে ফেসবুকের ব্যাবস্থা করে দেয়ায় মোবাইল কোম্পানীগুলোর কিছু ধন্যবাদ প্রাপ্য।

২। ট্রান্সফার প্রাইসিং নিয়ে আমার ধারনা একটু ভিন্ন। 'ট্রান্সফার প্রাইসিং' ধারনাটি একটি কম্পানির দুটি উদ্যোগের মধ্যে আদান প্রদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একি কোম্পানির দুটি উদ্যোগ বাজার দরে কারবার না করে নিজেদের সুবিধামত পণ্যের মূল্য নির্ধারন করতে পারে। বাংলাদেশ যেহেতু এখনো বিদেশী পুজি নির্ভর, তাই এখানে বিদেশী উদ্যোক্তারা যাতে তার পুঁজি ও মুনাফা ফেরত নিতে পারে তার জন্য এখনো আমাদের দেশে একটি সুপ্রশস্ত ট্রান্সফার প্রাইসিং নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। শস্তা শ্রমের মত বাংলাদেশের প্রশস্ত ট্রান্সফার প্রাইসিং নীতি আমাদের দেশে পুঁজিপ্রবাহ বাড়িয়েছে। মুনাফা ও পুজি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াকে আপনি পাচার বলছেন, আমার তো মনে হছে সেটা আইনসিদ্ধ।

আবার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ট্রান্সফার প্রাইিসং করে টাকা পাচার করতে হলে বিদেশে তাদের যন্ত্রাদি বানানোর বা সরবরাহ দাতা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। আপনি কি এরিকসন - হুয়াওয়েকে এগুলো গ্রামীন-রবি'র অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ভাবছেন?

তবে এটা ঠিক, দেশে ওভার-ইন্ভয়সিং ও হুন্ডিবাজী হচ্ছে, এবং সেটা দিয়ে দেশের বিদিশী মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে। সেটা সরাসরি চুরি ও বেআইনী, কিন্তু তার সাথে ট্রান্সফার প্রাইসিং এর সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয়না।

৩। টেলিকম সেক্টরে উঁচু বেতন প্রদান নিয়ে করা অভিযোগটাও ঠিক বুঝতে পারলাম না। বহুজাতিকের বেশী বেতন দেশের মেধার অনেকটাই দেশের ভেতরে টেনে রাখছে। এদের বেতন কমিয়ে দিলে তারা বিদেশে চলে যাবে। মেধাবীদের কি দেশে থেকে বিলাসিতা করার অধিকার নেই বলতে চান? 'লেখাপড়া করে যে, গাড়ীঘোড়া চড়ে সে' - এটা কে না জানে?

guest_writer এর ছবি

দুর্দান্তকে বলছি.........
১। আমি লেখার শুরুতেই বলেছি ফেসবুক যোগাযোগের উন্নত মাধ্যমগুলোর একটি। বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত দেশগুলোতে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেশি। কিন্ত ঐসব দেশে এটি শুধুই যোগাযোগের মাধ্যম। অনেকটা বাকি মাধ্যম গুলোর মত। কিন্তু আমাদের দেশে ফেসবুকের ব্যবহার রীতিমত ক্রেজ এবং স্মার্টনেসের পরিচায়ক। মোবাইলে ফেসবুক নোটিফিকেশন পাওয়া খারাপ কিছু নয়, কিন্তু আমার আপত্তি হলো ক্লাসরুমে এর ব্যবহার নিয়ে। আপনি বলছেন যে ক্লাসে মনোযোগ দিবে না সে ফেসবুকের পরিবর্তে অন্যকিছু খুঁজে নিবে। এটা ঠিক। কিন্তু আমরা তাদের কি করে মনোযোগী করা যায় তা নিয়ে না ভেবে তাদের মনোযোগকে সরিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছি।
২। মুনাফা ও পুঁজি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া আইনসিদ্ধ।কিন্তু সেটা সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দেওয়ার পর। কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই কোম্পানীগুলো transfer pricing এর আশ্রয় নেয়। এই জন্য তারা ওভার ইনভয়েসিং করে। আপনি নিজেও বলছেন ওভার ইনভয়েসিং চুরি ও বেআইনী। transfer pricing এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পুঁজির বহিঃপ্রবাহ হচ্ছে, অন্তঃপ্রবাহ নয়।
৩। বেশি বেতন প্রদান খারাপ কিছু নয়। কিন্তু বেতনটা কেন বেশি দেওয়া হচ্ছে সেই উদ্দেশ্যটাও যাচাই করা দরকার। বেশি বেতন যদি সিগারেট বেচা বাড়ানো অথবা মানুষের মগজ ধোলাইয়ের জন্য হয় তাহলেতো প্রশ্ন থেকেই যায়।

দীপাবলি

guest_writer এর ছবি

সচলায়তনে এটা আমার প্রথম পোস্ট। হাসিব, নির্ঝরা শ্রাবণ এবং দুর্দান্তকে আসংখ্য ধন্যবাদ তাদের মতামত প্রদানের জন্য।

দীপাবলি।

guest_writer এর ছবি

সচলায়তনে এটা আমার প্রথম পোস্ট। হাসিব, নির্ঝরা শ্রাবণ এবং দুর্দান্তকে অসংখ্য ধন্যবাদ তাদের মতামত দেওয়ার জন্য।

দীপাবলি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

প্রথমত, যে সময়, মেধা এবং মনোযোগ ঐ ছেলেটির ঐ সময়ে ক্লাসের পড়ায় দেওয়া উচিত ছিলো তা সে ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে অবহেলায় নষ্ট করছে।এভাবে আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের মেধার অপমৃত্যু ঘটাচ্ছি।যেটা কাজে লাগিয়ে হয়ত সৃষ্টিশীল কোন কাজ করা যেত।

এটা একটা সমস্যা বটে। তবে সোশ্যাল ওয়েবকে অবহেলা করার উপায় নেই। নতুন কিছু প্রডাক্ট এসেছে যেগুলো সোশ্যাল ওয়েবের কনসেপ্ট কাজে লাগিয়ে পজিটিভ এনফোর্সমেন্ট করছে। যেমন, grockit.com শিক্ষার জন্য সোশ্যাল প্লাটফরম, linkedin.com চাকুরীর জন্য সোশ্যাল প্লাটফরম।

শুধু তাই নয় এটি এখন বিভিন্ন সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কারখানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন আগে একটি জনপ্রিয় ব্লগে একজন ব্লগার সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা যাতে সাবধানে তাদের ছবি আপলোড করেন।এখানে যেসব ছবি আপলোড করা হয় সেগুলো নিয়ে একটি মহল রীতিমত বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছে এবং দেশের তরুণ প্রজন্মের পকেট কাটছে।

এধরনের সমস্যা প্রায় সব রকম মিডিয়াতেই থাকবে। সুবিধে গুলো খেয়াল করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছবি/খবর কিভাবে পাচ্ছি আমরা?

দ্বিতীয়ত, এই নোটিফিকেশন সুবিধা পেতে যে অর্থ তাকে দিতে হবে এবং প্রাপ্ত অর্থ হতে মুঠোফোন কোম্পানী গুলো যে মুনাফা লাভ করবে তার প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর পুঁজি পাচারের জনপ্রিয় মাধ্যম হলো Transfer Pricing.

এক্ষেত্রে আমাদের নতুন আইডিয়া নিয়ে ইনোভেট করা দরকার। ফেইসবুক বাদ দিয়ে, বন্ধ করে আসলে তেমন কোনো লাভ হবে না।

নৈষাদ এর ছবি

১। মোবাইল ফোনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা আরও ভয়াবহ রে ভাই। অদূর ভবিয্যতে মোবাইল ফোনে হাই-স্পিড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাবে এবং অনেক বেশি মানুষ যাতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে সেটার চেষ্টা করা হবে। এই অপচেষ্টা রোধে কী করা উচিত বলে আপনার মনে হয়

২। ‘মুনাফা’ ‘পাচার’ কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন-কানুনের মধ্যে থেকে করতে হয়। ট্রান্সফার প্রাইসিং নিয়ে আর বিস্তারিত আলোচনায় গেলাম না, দুর্দান্ত বলেছে।

৩। ‘উচ্চ-মজুরী’ প্রদানের মাধ্যমে মেধাক্রয়/এলিট শ্রেণী তৈরী এবং মেধা পাচার মন খারাপ - এই বিষয়ে কী করা যায় জানার ইচ্ছে রইল।

দিগন্ত বাহার() এর ছবি

ছবি আপলোড করে ঝামেলা সংক্রান্ত ব্যাপারে সম্ভবত আপনি [url=http://bit.ly/jWtKXJ ]এই পোস্টটির[/url] কথা বলতে চেয়েছেন।
মন্তব্যে পড়লাম বলেছেন,

আমাদের দেশে ফেসবুকের ব্যবহার রীতিমত ক্রেজ এবং স্মার্টনেসের পরিচায়ক

মুঠোফোন ব্যাবহারের প্রথম দিকেও তাই ছিল, আস্তে-আস্তে এখন অনেকটাই পেশাদারীত্ত্বের দিকে যাচ্ছে, ফেসবুকও সেদিকেই যাবে বলে আমি মনে করি। অনেক বেশি দুর্ভাবনার কিছু নেই।
মোবাইলে নোটিফিকেশনের ব্যাপারে কতদুর জানেন জানি না। আমি এক মাস হলো 'ফেসবুক মোবাইল' চালু করেছি। নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্যে কোন চার্জ কাটা হয় না। প্রতি একটা নোটিফিকেশোনের জন্যে দুটো করে মেসেজ আসে, এখন পর্যন্ত এক টাকাও দাবি করা হয়নি। যদি আপনি মোবাইলের মেসেজ অপশনের মাধ্যমে 'স্ট্যাটাস' দিতে বা মন্তব্য/প্রতিমন্তব্য করতে চান(মানে আপনার ফোন থেকে মেসেজ 'পাঠিয়ে' যা করতে হবে) সেক্ষেত্রেই শুধুমাত্র চার্জ প্রযোজ্য। কিন্তু শুধু নোটিফাই করতে কোন টাকা নেয়া হয় না।
মনযোগহানীর যে কথাগুলো বললেন সেসবে একমত, তবে এমন সমস্যা অন্য যেকোন কারনেও হতে পারে, ব্যাবহার এবং প্রভাব ব্যাক্তির আন্তর্জালীয় স্বভাব/রুচী/উদ্দেশ্য নির্ভর।

guest_writer এর ছবি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ কে......
আমি ফেসবুক বন্ধ বা বাদ দিতে বলিনি। আমি নিজেই ফেসবুক ব্যবহার করি। এর ভাল দিক গুলো সম্পর্কে আমি নিজেও জানি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি বাড়ানোর আন্দোলনকে যখন প্রশাসন অন্যখাতে প্রবাহিত করে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো তখন ভিসির বিরুদ্ধে জনমত তৈরির কাজটি আমরা ফেসবুকের মাধ্যমেই করেছি। কিছুদিন আগে সরকার প্রধানমন্ত্রীর বিদ্রুপাত্মক ছবি প্রকাশের জন্য ফেসবুক বন্ধ করে সমালোচনার মুখে পড়ে। এটা মতপ্রকাশের অধিকার কে সীমিত করে। আমি বলতে চেয়েছি ঐসব সেবা সম্পর্কে যেগুলো ক্ষতির কারন। যার পিসি বা ল্যাপটপ নেই সে মুঠোফোনে ফেসবুক ব্যবহার করবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিজ্ঞাপনটি ঐভাবে চিত্রায়িত না করে এটি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আমাদের কিভাবে লাভবান করছে তা দেখানো যেত।

নৈষাদকে.........
আমি আমার লেখার শুরুতেই বলেছি আমি প্রযুক্তিবাদী। প্রযুক্তির সুফলগুলো আমাদের সাদরে গ্রহন করা উচিত। বাংলাদেশ এইক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের বিভাগে ইন্টারনেট সুবিধা নেই বলে আমরা খুব হতাশ ছিলাম। হাইস্পীড ইন্টারনেট আসবে এটাতো ভাল। ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে আমার কোন বিরোধ নেই। আমি বলতে চাইছি এটা যোগাযোগের মাধ্যম, সেটা হিসেবেই থাকুক।এটা নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি যেন না করি।

এলিট শ্রেণীদের আমি কিছু করতে পারব না। আমি শুধু বিবেকের তাড়নায় তাদেরকে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতাটুকু মনে করিয়ে দিতে চাই। এই সমাজটা, দেশটা আমাদেরই। এইযে তরুণ তারাই হয়ত একদিন অনেক বড় বিজ্ঞানী হবে,অর্থনীতিবীদ কিংবা প্রযুক্তিবীদ হবে। ওরাই আমাদের ফেসবুকের চেয়েও উন্নত কিছু উপহার দিবে। আমদের উচিত তাদের সে সুযোগ করে দেওয়া। আমরা কি পারিনা এই ব্যাপারে আরেকটু সচেতন হতে?

অপছন্দনীয় এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত না করে পারছি না।

প্রথমত, সোশ্যাল নেটওয়র্কিংকে ক্রেজ হিসেবে নিলে নিজের কাজের সময় নষ্ট হয়, ঠিক আছে। তবে সেটা শুধু ফেসবুকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি অনেক সোশ্যাল ব্যক্তিকে চিনি যাঁদের কর্ম প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো। আমার নিজের আত্মীয়া একই সেট অফ গেস্টের জন্য তিন দিনে দুইটা দাওয়াতের ব্যবস্থা করেছিলেন দুই উপলক্ষ্যে, যার একটাতেই দুইটা সেরে দেয়া যেতো। আরেক ফ্যামিলির কথা জানি যাঁরা যে কোন পরবে জনা বারো এক দিন পরপর সবাইকে নিয়ে দাওয়াতের ব্যবস্থা করেন, একই গেস্টদের নিয়ে একেকবার একেকজনের বাসায়, এটাও একসাথে করা যেতো কিন্তু করেন না, দেখাতে হবে না! এইসব ফালতু ট্র্যাডিশন রক্ষা করতে গেলেও ফেসবুকের চেয়ে কম সময় নষ্ট হয়না।

দ্বিতীয়ত, মোবাইল কোম্পানী উচ্চ বেতন দিয়ে যে এলিট শ্রেণী তৈরী করে সেই এলিট শ্রেণীর মানুষদেরও অনেকের ঘুষ খাওয়ার অভ্যাস না থাকলে নিজের পরিবার নিয়ে ঢাকা শহরে বেঁচে থাকতে প্রাণান্ত পরিচ্ছেদ হয়। এটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। ওই তথাকথিত এলিট শ্রেণীতে যাঁরা পড়েন না, সরকারী কর্মকর্তা বা অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাঁদের কী হয় সেটা আর না বললেও চলে। দেশের জীবনধারণের ব্যয় যদি অধিকাংশ মানুষের আয়ের চেয়ে বেশি হয় সেটা মোবাইল কোম্পানীর বেতনের দোষ নয়, অন্য কারো ব্যর্থতা। মোবাইল কোম্পানীর বেতন যদি সরকারী অফিসারের কয়েকগুণ হয়, এবং সেই কয়েকগুণ বেতনেও যদি জীবনধারণ করতে কান দিয়ে ধোঁয়া বের হয়, তাহলে মোবাইল কোম্পানীর বেতন বেশী নয় বরং সরকারী কাজে বেতন কম।

তৃতীয়ত, অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার জন্য মাফিয়া ওয়ারস এর চেয়ে বাংলা সিনেমা অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। তার চেয়েও বেশি ভূমিকা রাখে "জনদরদী আর দেশদরদী" রাজনৈতিক দল। পুরো পৃথিবীসুদ্ধ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে যদি অপরাধমূলক হয়ে না ওঠেন তাহলে খালি একটা দেশের মানুষের হওয়ার কোন কারণ দেখছি না।

আমি দুঃখিত, আপনার লেখার মর্মার্থ পুরোপুরি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলাম।

পাঠক007 এর ছবি

স্কুলে ক্লাস ভালো না লাগলে চটি পড়তাম। এখনকার ছেলেরা ফেসবুকিং করে। খারাপ না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।