১.
টিভির ওপর রাখা ছিল পিএস-২ টা। ঘরে ঢুকেই খালা দৌড়ে গেল সেটার কাছে। হ্যাচকা টানে কর্ড, প্লাগ সব ছিড়েখুড়ে সেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে খালা চিৎকার করে আর্তনাদ শুরু করল, 'এইটাই আমার সুপ্ত, এইটাকে কেউ আমার কাছ থেকে নিতে পারবা না।' ঘরে উপস্হিত কারো কোন ভাষা নেই, এর থেকে মর্মন্তুদ কোন দৃশ্য কি পৃথিবীতে কেউ দেখেছে কখনো?
২.
অসম্ভব দুরন্ত ছেলে সুপ্ত। এবছর এসএসসি পাশ করেছে। লেখাপড়ার দিকে কোনদিনই মনযোগ নেই ছেলেটার। সারাদিন আছে শুধু কম্পিউটার গেম আর রেসলিং নিয়ে। তিন বছর আগে বাবাকে হারিয়ে আরো যেন বেপরোয়া হয়ে গেছে। বাবা বেচে থাকতে আদর আর প্রশ্রয় দিয়ে মাথা খেয়ে গেছেন ছেলেটার। শেষ বয়সের সন্তান বলেই কিনা কে জানে! এখন কারো কথা কানে তোলে না, মা'র কথা তো নয়ই। শুধুমাত্র মেজ ভাইটাকে একটু ভয় পায়। মেজ ভাই অনিক দুরন্তপনা সহ্য করতে না পেরে মাঝে মাঝে বেদম পিটুনি লাগায় সুপ্তকে।
যেমন দুরন্ত তেমনই বোকা ছেলেটা। শেষবার যখন দেশে গেলাম তখন অনেক বুঝালাম তাকে। মাকে বেশী জ্বালাইও না সু্প্ত। সেও রাজী, 'না ভাইয়া, আমি ভালো হয়ে গেছিনা?' কিন্তু দুদিনের বেশী শান্ত সুবোধ হয়ে থাকা পোষায়না তার।
তার কিছুদিন পরেই তার টেষ্ট পরীক্ষার রেজাল্ট হলো। দৌড়ে বাসায় ঢুকেই চিৎকার, 'মা, আমি থার্ড হইছি"। আমরাতো অবাক বলে কি ছেলে। খালা আমাকে বললো, 'দেখতো বাবা গাধাটা কি বলে'। আমি ওকে নিয়ে আবার স্কুলে গেলাম। গিয়ে দেখি তার পজিশন শেষ দিক থেকে তিন নম্বর। তার কোন বন্ধু তাকে বুঝিয়েছে যে ওটাই থার্ড, আর সে তা মেনে নিয়েছে। তবে আমরা খুশিই বলতে গেলে, এ্যালাও তো হয়েছে!এস.এস. সি’র রেজাল্ট বের হবার পর দেখা গেল সে আমাদের অবাক করে দিয়ে বেশ ভালো করেছে, জিপিএ ৪.৬। সবাই খুশি, সবথেকে খুশি আমার খালা।
৩.
ইদানিং তার বন্ধুবান্ধবের পরিমান এবং বন্ধুপ্রীতি এত বেশী বেড়ে গেছে যে খালার দুশ্চিন্তা অনেক বেড়ে গেছে, দিনকাল তো ভালোনা। সময় নেই অসময় নেই বন্ধুবান্ধবের সাথে বাড়ির বাইরে চলে যায়। কিছু বলতে গেলেই বলে,'আমি বড় হয়ে গেছি না?'
গতসপ্তাহে একদিন গেছে কোন ব্ন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে, সন্ধ্যার মধ্যে ফিরবে বলে। ৭ টা ৮ টা ৯টা পেড়িয়ে সে ফিরল রাত ১১ টায়। মাঝে কোন যোগাযোগ নেই, খালা চিন্তায় চিন্তায় অস্হির, প্রেশার ট্রেশার বেড়ে প্রায় আধমরা। ১১ টায় ফিরেও তার মাঝে কোন অনুশোচনা নেই, 'কেন এত চিন্তা করো, আমি বড় হয়ে গেছিনা?' অনিক মেজাজ হারিয়ে বেদম পিটুনি লাগায় বহুদিন পর। পিটুনি খেয়ে একটু কি বোধোদয় হয় তার? পরে ভাবিকে জানায়,'নাহ্ আসলেই ভালো হয়ে যাইতে হবে, বড় হয়ে গেছিনা? মা'কে আর কষ্ট দিবোনা।'
কিন্তু যেইকি সেই। পরদিন ঘুম থেকে ওঠে বেশ দেরী করেই। নীচ থেকে বন্ধুর ডাক শুনে মাকে না বলেই চলে যায় বাইরে। কয়েক বন্ধু মিলে শরীরের জ্বালা মেটাতেই কিনা নেমে যায় বাসার থেকে একটু দুরে একটা ডোবা নাকি পুকুরে। ওঠে ঝাড়া দেড় ঘন্টা পর। সাথে আরেকটি সমবয়সী বন্ধু। পানি থেকে ওঠার পর তার দুরন্তপনা আর থাকেনা। শান্ত হয়ে শুয়ে থাকে সাদা কাপড় জড়িয়ে খাটিয়াতে, বন্ধুর পাশে।
হাজার হাজার মাইল দুরে টেলিফোন হাতে স্তব্ধ আমি ভাবি, তুমি আর বড় হতে পারলেনা সুপ্ত। এভাবে কি মায়ের অশান্তি কমাতে হয়?
----------------------------------------------------------------------
অনঘ
অন্টারিও, ক্যানাডা
মন্তব্য
.......................
মন খারাপ হয়ে গেল............
সুপ্তের আত্মা শান্তিপ্রাপ্ত হোক..................
ভাইদের কাহিনিগুলো এমনই হয় কেন !!!
সান্তনা দেবার ভাশা খুজে পেলাম না।।। যার যায় শুধু মাত্র সেএই প্রকৃত ভাবে অনুভব করতে পারে হারানর বেদনা।।। দুরন্ত সুপ্ত র আত্মা শান্তি পাক।।।
লেখা আমার কাছে ভাল লাগলে আমি মন্তব্য লিখি- ভালো হইছে, দারুন হইছে, সুন্দর হইছে।
এই লেখাটা পড়ার পর বুঝতে পারছি না কি মন্তব্য লিখবো...
............................
..........................
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
........................
.......................
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন