কবরস্থান ,কাফনের কাপড় , কবর শব্দ গুলো আসলে কেমন ? অনেক ছোট বেলায় নানা-নানীর কবর দেখেছি , একটু বড় হয়ে দাদা-দাদী , আরেকটু বড় হয়ে মামা র কবর দেখেছি ।
আজিমপুর কবরস্থানে এই প্রথম যাওয়া । অনেক বড় একটা কবরস্থান । এত বড় কবরস্থানে আগে যাওয়া হয়নি । চুপচাপ , গাছ-পালা, যেন ঢাকা শহর থেকে বাহিরে কোথাও...। কত-শত মানুষ এখানে চির-নিদ্রায় আছে , সবার প্রতি সালাম জানাতে জানাতে এগুলাম । জানাজা ঘরের কাছে এসে রাতুল থেমে গেলো ।
চলে এসেছি । আমার প্রথম সন্তান একটা মেয়ের কবর । যার নাম রাখা হত রিদা বিনতে জাওয়াদ । রিদা মানে আল্লাহ র আশীর্বাদ প্রাপ্ত । সামনে সবুজ ঘাসে এক হাত একটা যায়গা , উপরে খোলা আকাশ , আমি অনুভূতিশূন্য । রাতুল ভেবেছিলো আমি অনেক কান্নাকাটি করবো । আমাকে আনতে চায়নি । কবরের নীরবতা ভেঙ্গে কাছাকাছি একটা লোককে দেখলাম মায়ের কবরে চিৎকার করে কাদছে । শুধু আমি চিৎকার করে কাদতে পারছি না । কোন দোয়া মনে আসলো না , মোনাজাত করতে পারলাম না । দুটা জিনিস চাইলাম আল্লাহর কাছে - কোন মা কে যেন সন্তানের কবরে আসতে না হয় ; আর আমি যেন তাড়াতাড়ি আজিমপুর কবরস্থানের মাটিতে মেয়ের কাছে ফিরতে পারি ।
ফিরে আসার সময় হঠাৎ মনে হল মেয়েটা আমাকে আভিমান করে বোলছে যে 'আমাকে মেরে ফেলে আবার কবরে আসো কেন? এর উওর আমি দিতে পারিনি ।
ডিসেম্বরে যখন জানলাম আমি কনসিভ করেছি তখন আনন্দ আর ভয় একসাথে আসলো । আমি অনেক অ্যালার্জিক মেডিসিন খেয়েছি তাতে কি কোন ক্ষতি হোল ? ডক্টর ভয় পেতে মানা করলো । একে একে পাচটা মাস শেষ হলো । ৬ এপ্রিল ডক্টর দেখাবার তারিখ ছিলো । ৫ এপ্রিল আম্মু জানতে চাইলো বাচ্চার নাড়াচাড়া বুঝি কিনা । নাহ তখনো বুঝিনি , আম্মু বললো আজকেই যেতে ডক্টরের কাছে । রাতুলের সেদিন ফ্লু হয়েছে । তাও বললাম নিয়ে যেতে । গেলাম , ডক্টর দেখে বললেন এইতো নড়লো বুঝোনি । আমি আসলেই বুঝিনি । সেদিন আলট্রাসনোগ্রাম দিলো । রাত নয়টা বাজে । তাও চলে গেলাম ল্যাব এইড । মনের ভেতর একটা আস্থিরতা । রাত ১১ টায় করা হলো আলট্রাসনোগ্রাম । আমি সনোলজিস্টের অস্থিরতা টের পেলাম , বুঝতে পারলাম খারাপ কিছু । বাচ্চার নাড়াচাড়া দেখলাম , হার্টবিট শুনলাম , দেখে বুঝে গেলাম দেখতে রাতুলের মত দেখতে । জানতে চাইলাম ছেলে নাকি মেয়ে । উনি জানালেন মেয়ে । আসলে ওনাকে দেখেই বুঝেছি ভালো কিছুনা তাই বের হয়ে রাতুলকে বোললাম । রিপোর্ট আসার পর রাতুল ওর বন্ধুর বোনকে ফোন করলো । খুবই খারাপ ব্যাপার , বাচ্চাটার মাথার খুলি হয়নি এবং ব্রেনের সামনের অংশটিও গঠন হয়নি । মেডিক্যাল সাইন্সে এটা neural birth defect--annencephaly --এই সমস্যাটা আসলে কেন হয় সেটা এখনও আবিষ্কার হয়নি । ডক্টর জানালেন বাচ্চাটা পেটে মারা যেতে পারে আবার জন্মে কয়েক ঘন্টা পরই মারা যাবে । তাই এটাকে রাখা না রাখা একই । এটাকে রিমুভ করতে হবে । ৬ এপ্রিলটা গেলো ডক্টরদের কাছে দৌড়ের উপর । ৭ এপ্রিলটা হাসপাতালে ভর্তি । ৮ এপ্রিল জোড় পূর্বক এবোরশন । নাড়ীর সাথে নাড়ীর বিচ্ছেদ , জীবন থেকে মৃত্যু । কাফনের কাপড়ে জড়িয়ে দাফন । মাথার খুলি ছাড়া মেয়েটা যেন পৃ্থিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটা । কাধ থেকে পা পর্যন্ত যার এত্ত নিখুত তার মাথার খুলিটা কেনো আল্লাহ দিলেন না জানিনা । প্রশ্ন করবো না । আল্লাহ যা দেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় । আমার বুকটা খালি তাও আমি সন্তুষ্ট , আল্লাহর কাছে আমার মেয়ে অনেক ভালো আছে এটা ভাবতে ভালো লাগে ।
সারাক্ষন অপেক্ষা কবে যাবো মেয়ের কাছাকাছি , যেখানটা অনেক পবিত্র ,নীরব , গাছপালা আর পাখির ডাকে ভরপুর । মেয়ের প্রশ্নের উত্তর সামনা-সামনি দেয়াই ভালো ।
***ফলিক এসিড নামে একটা ভিটামিন অনেক সময় তা রোধ করতে পারে ।
nawarid nur saba
মন্তব্য
...............
আপনাকে সান্ত্বনা দেবার ধৃষ্টতা দেখাবো না। কামনা করি আপনার শোক প্রশমিত হোক। অচিরেই আপনার কোল আলো করে আরেকজন "রিদা" আসুক সুস্থ্য-সবল হয়ে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মনটা ভারি হয়ে গেলো। নীরবে সমবেদনা জানিয়ে গেলাম।
--------------------------------------------------------------------------------
আপনাকে কিছু বলার ভাষা নেই, আপনার মর্মবেদনা উপলব্ধি করার মতো অনুভূতি তো নেই-ই। তবে এক রিদা গিয়ে স্বর্গ থেকে অনেক অনেক সুস্থ-সবল রিদা পাঠিয়ে দিক আপনার জন্যে, শুধু এই কামনা করি।
অতীত
কিছু লেখা আছে যেখানে কোন মন্তব্য করতে নেই। এই লেখাটা সেরকম।
আপনার কল্যাণ হোক, 'রিদা'র-ও।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
সমবেদনা রইল। আশা করি আপনি শীঘ্রই আরেকটি সুস্থ শিশুকে কোলে পাবেন।
ভয়ে শিউরে উঠলাম! আপনার জায়গায় নিজেকেই বসালাম কিনা!
মেঘরং
মনটা খুব বিষণ্ণ হয়ে গেল। আশাকরি আরেকজন রিদাকে কোলে পাবেন আপনি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এই লেখায় মন্তব্য করতে পারলাম না, ভালো থাকুন আপনি।
.....
বলার মত কিছু নেই......
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
.....................
কী বলবো! লেখাটা সবটুকু পড়ে শেষ করতে পারিনি। আর অন্য কিছু পড়ার ইচ্ছাটাও মরে গেল। এর চেয়ে ভয়াবহ কষ্ট আর কী হয়! স্রষ্টা আপনাকে শক্তি দিন। আরো একজন রিদা আসুক আপনার কাছে, এই পৃথিবীতে, এইই প্রার্থনা।
সে ফিরবে আশায় থাকুন
labin rahman
কোথায় যেন একবার পড়েছিলাম যে পিতা(মাতা)র কাঁধে সন্তানের লাশ হচ্ছে সবচেয়ে ভারী জিনিস। আপনার দুঃখের সমান কোন সমবেদনা জানা নেই আমার। শুধু এইটুকুই বলি, এমনও তো হতে পারতো যে আপনার কন্যাটির বয়েস বারো বছর এবং হঠাৎ করে একদিন স্কুল থেকে বাড়ী ফিরবার পথে বেপরোয়া কোন গাড়ীর নীচে চাপা পড়লো। এমনটি হচ্ছে প্রতিদিন। এমনভাবে শুধু স্মৃতিটুকু বুকে নিয়ে যন্ত্রনাময় জীবন যাপন করছেন অনেকে। জানি সব সন্তানের মৃত্যুই পিতামাতার কাছে দুঃসহনীয়, তবুও কামনা করি আপনি সামলে উঠবেন। খুব তাড়াতাড়ি আর একটি শিশু আসুক আপনার কোলে। তার মধ্যেই আপনি খুঁজে পাবেন অকালমৃত রিদাকে।
সমবেদনার শব্দগুলোও হারিয়ে গেছে............
...............
সমবেদনা রইল। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। ভালো থাকুন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আমাকে দোয়া করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ......
nawarid nur saba
বোন,
আমার একটি ভাই ছিল। কাজল তার নাম। সাত মাস বয়সে মায়ের বুক শূন্য করে দিয়ে চলে গেছে পরপারে। অনেক প্রাপ্তির পরও এখনও মাকে হারানো ছেলের জন্য আঁচলে মুখ লুকিয়ে নিভৃতে কাঁদতে দেখি।
তোমায় সান্তনা দেবার মতো ভাষা নেই। সন্তানস্নেহ যে কি, না হারালে কি কেউ তা বুঝে?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না...
ভালো থাকবেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গতকাল থেকেই অনেক কবার এই লেখাটায় ঘুরে গেছি, কোনবারই ঠিক কি বলা উচিত ভেবে বের করতে পারিনি । মন খারাপটা ভেতরে জমে থাকছে কেবল ।
ধন্যবাদ আমাকে সমবেদনা জানাবার জন্য ।
নতুন মন্তব্য করুন