তারিখঃ ৮ জুন ২০১১
স্থানঃ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, গুলিস্তান। সময়ঃ সকাল ১১টা
ঢোকার মুখেই help desk বাংলায় বেশ বড় করে লিখা সৎ পরামর্শ কেন্দ্র। অথচ সারাদিনেও সৎ তো দূরের কথা অন্তত কুপরামর্শ দেয়ার মতও কারো দেখা নেই। ভেতরে অসংখ্য বৃদ্ধ- বৃদ্ধার কোলাহল। এদের কেউ এসেছেন সুদূর পঞ্চগড় থেকে, কেউবা ভোলা, আবার কেউ পদ্মাপারের। এদের মধ্যে আছেন নাটোরের ছমির শেখ, হানাদারদের বাঙ্কারের কাছে গিয়ে গ্রেনেড চার্জ করতে যাঁর এতটুকু বুক কাপেনি, আজ তাঁর সারা শরীর কাঁপে। আছেন ভৈরবের যুদ্ধে পা হারানো আব্দুল মিয়া, আরও আছেন রহিমা বিবি, যুদ্ধ যার স্বামীকে কেড়েছে, আর নিয়তি কেড়েছে বাকিটুকু। কারো দরকার রেশন কার্ড, আবার কারো ভাতাসুবিধা।
একদিকে তাঁদের কোলাহল অন্যদিকে দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তার ধমক " আপনারা এটা মাছের বাজার পেয়েছেন নাকি?" এই ধমকেও কারো কোন প্রতিক্রিয়া হয়না। কারণ, একদিন যাঁদের ধমনীতে রক্ত টগবগ করে ফুটত আজ তাঁরা অসহায়,ন্যুজ।যতটা না বয়সের ভারে তার চেয়ে বেশি অপমানে, গ্লানিতে।
হায়রে স্বাধীনতা ! অথচ আজ আমরা যে এইদেশে স্বাধীনভাবে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি তার প্রতিটা কণা এই মুক্তিযোদ্ধারা অর্জন করে এনেছেন। যে কর্মকর্তাটি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধমক দিল তার সেই ধমক দেয়ার অধিকারটুকুও এই মুক্তিযোদ্ধারাই ছিনিয়ে এনেছেন।
জীবিত অবস্থায় আমরা যাঁদের এতটুকু সম্মান জানাতে পারছিনা মরার পরে রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাঁদের কি-ইবা আসে যায়।
আর তাই হয়তো সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশারফ বলে গিয়েছিলেন " স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলাদের চায় না, চায় রক্তস্নাত শহীদ............
নির্ঝরা শ্রাবণ
মন্তব্য
মুক্তিযুদ্ধ আমার কাছে সর্বদাই আবেগের, পুরোপুরি শুদ্ধ আবেগের এক বিষয় যেখানে জগতের কোন যুক্তি খাটেনা। তাই একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে যেকোনো মুক্তিযোদ্ধার অপমানকেই আমার বাবার প্রতি অপমান বলে মনে হয়.........
নির্ঝরা শ্রাবণ
এইই অবস্থা! খুব খারাপ লাগে এসব শুনলে।
আরেকটু বড় করে লিখতে পারতেন কিন্তু।
নির্মম সত্য!!
আমরা যদি যোগ্য ব্যক্তিকে তার যোগ্য সম্মানটুকু দিতে পারতাম তাহলে কি আর আজ আমাদের এই করুণ পরিস্থিতি দেখতে হত? এই দেশে শিক্ষকের মর্যাদা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর, মুক্তিযোদ্ধা যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশ তাদের হাতে ভিক্ষার ঝুলি...............আমরা পরিবর্তনের কথা বলি, পরিবর্তনটা কি শুধু নির্বাচনে জয়লাভের ম্যানিফেস্টো হয়েই থাকবে? নাকি সত্যিকারের কিছু পরবর্তন আসলেই ঘটবে, যা দিয়ে আমরা এই মানুষগুলোকে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু ফিরিয়ে দিতে পারব?
দীপাবলি
অনেক চেষ্টা করেছিলাম লেখাটিকে আরেকটু বড় করতে......পারিনি। আমার আবেগ যেন বিবেক হয়ে বাধা দিচ্ছিল "থাক না চাপা এইসব গ্লানি........." কারণ এ তো ১৬ কোটি মানুষেরই লজ্জা
নির্ঝরা শ্রাবণ
এই আমাদের স্বাধের দেশের করুন পরিনতি।
labin rahman
বিষণ্ণ একটা লেখা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
মনটা খারাপ করে দিলেন
এসব পড়লে কষ্ট হয়।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হা
মনটাই খারাপ করে দিলেন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সচলায়তনে এটা আমার প্রথম পোস্ট। যারা কষ্ট করে পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর এই লেখাটা যাদের মন খারাপের কারণ হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- কিছুক্ষণ পরেই আমরা এই ব্যাপারটা ও এই মানুষগুলোর কথা ভুলে যাব। কারণ এইসব ব্যাপারে আমাদের স্মৃতিশক্তি গোল্ডফিশেরও অধম......
নির্ঝরা শ্রাবণ
.............
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন