ছিন্নপথটাও নগরে শীর্ণকায়ে ধুঁকে
পথিকের পদপাত আটকে ধরে
অকার্বন রসে তেষ্টা মেটে কিছু;
শুকিয়ে তাও সবকাঠ, সূর্য ঢেলে দেয়
নতুন উত্তপ্ত তরঙ্গ অবাধ- সে
পথে তবু এক চিলতে শূন্যস্থান নেই-
লোকের দাবানলেও পুড়ছে এ নগর!
এখানে ঘাস নেই- অসবুজ চারপাশ
কংক্রীটে রৌদ্রের জালে আটকে পড়েছে
বিধ্বস্ত কপোত কার্নিশে তবু মরীচিকা খুঁজে
ইশারায় দেয়ালে মাথা গুঁজে বিভ্রান্ত ঊনকুকুর!
ছাদের উপরে স্বচ্ছ নীলাম্বরি বৈরান্যে
মেঘদের খুঁজে ব্যর্থরথে চড়ে
নগরে ফিরে আসে স্মৃতিকথা নিয়ে-
কখন কোনকালে দিয়েছিলো
মেঘঝরা শিশির দুদণ্ড হায়!
তবু শুধু আকাশ আমরা পুড়ে যেতে দেখি অঙ্গার
রোদের আগুনে পুড়ে প্রাচীন নগর বিদগ্ধ-
গলে পড়ছে তার রোমকূপ, ঝলসে গেছে
কিশোরীর সোনারং ত্বক (মন ভালো নেই);
সূর্যে আরেকবার প্রতিফলিত উত্তাপ!!
শৈশবদল জমাজলে দেয় আমগ্নডুব
অকৃপণ বোশেখ সুধাসাধরূপ
তার্পিনোলিনের ঘ্রাণে তার পকেটে
দীর্ঘদিবস হলুদ রং মাখে আর আঁশ!
ঝলসানো নগরে ওষ্ঠাগত বার্ধক্যের
বাহুতে কাঁপে কালবৈশাখ প্রমত্তা-
নগর রৌদ্রপ্রদাহ যায় ভুলে ক্ষণ;
সরু সরু নদী অঙ্কে তার জলজ
শৈশবের কাগজের নৌকা ভাসায় রঙিন-
ডুবে গেলে বলে' রোদ ফিরে আয়!
এখানে রোদের আগুন লেগে গেছে শুধু
মানুষের দাবানল পুড়ছে আর
নগর ঝলসে প্রাচীনতম হয়ে উঠছে!
মন্তব্য
অসাধারণ! এই রকমই তো চাইছিলাম! ওই যে বলেছিলাম 'সম্পন্ন' কবিতা, এই হলো সেই সম্পন্ন কবিতা। সুপাঠ্য, শব্দশৈলী অসাধারণ, দীর্ঘ পঠনের ক্লান্তিভার নেই, অক্ষরবৃত্তের ধীরলয়ে আচ্ছন্ন করে রাখে, অপ্রাপ্তির আর্তিতে স্মৃতিমেদুর করে তোলে। 'সুসম্পন্ন' বা 'মানসম্পন্ন' নয় শুধুই 'সম্পন্ন' কবিতা। যেখানে স্পর্ধিত উচ্চারণ নেই, আছে মানবিক মধ্যবিত্ত ম্রিয়মান অস্ফুট আর্তি।
দু-এক জায়গায় অক্ষরবৃত্ত হোঁচট খেয়েছে। ইচ্ছাকৃত কিনা জানিনা। ইচ্ছাকৃত হলেও বোধকরি অপ্রয়োজনীয়। একটি কথা স্মরণ রাখলে উতরে যাওয়া যায়, "জোড়ে বাঁধুন জোড়, বিজোড়ে বিজোড়"। ৬, ১০, ১৪, ১৮, ২২, ২৬, ৩০ যে মাত্রাতেই বাঁধুন, কিম্বা একাধিক মাত্রার পাঁচমিশেলি আনুন ক্ষতি নেই। মাঝে মাঝে দুচারটে দুরান্তিক মিল থাকলেও গদ্যভাব বজায় থাকবে, সেক্ষেত্রে অক্ষরবৃত্তের উপরের দিকের মাত্রাগুলি ব্যবহার করা উপযোগী হবে। হয়ত এসব টোটকা আপনার জানাই আছে, আমি শুধু শুধু বেহুদা বকে গেলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
তখন বুঝতে পারি নি পুরোপুরি এবার বুঝলাম ঠিক করে। আপনার মন্তব্য থেকেও কতকিছু শিখি! কী কারুকাজ প্রতিটি বাক্যে!
ভাইয়া মাত্রার কথা মাথায় রেখে যে লিখতে পারি না, সেক্ষেত্রে মাত্রাসম্পন্নতা চাইলে কবিতা লেখার পর তা আবার রিফাইন করতে হবে আমার ক্ষেত্রে। তাতে পরাধীন হয়ে যেতে হবে মনে হয়। আর ভাব প্রকাশের স্বাধীনতাও থাকবে আবার যুগপৎ মাত্রাসাম্যও থাকবে এ আমার দ্বারা হবে না, অক্ষম আমি। প্রকৃত কবিরা তা পারে, তাদের অবশ্য পারতেও হয় না, এম্নিতেই এসে যায়!!
আর ভাইয়া আপনার কি মনে আছে বৈশাখ নিয়ে কবিতা লিখব কথা দিয়েছিলাম?
কথা কিন্তু রাখলাম।
ভাই,
সামলে। একজন কবির সবচাইতে বড় সম্পদ তাঁর কল্পনা শক্তি। সেটিকে অনন্ত পাখা মেলবার জন্য অনেক আকাশ খুলে দিতে হবে। কাঁচুলির কাজ স্তনের শোভাবর্ধন, তার স্বাভাবিক প্রস্ফুটনের কণ্ঠরোধ করা নয়। তেমনি ছন্দ যদি সুবর্ণ কঙ্কণ না হয়ে হ্যান্ডকাফে পরিণত হয় তবে তা অবশ্য বর্জনীয়।
লিখো, অনেক অনেক লিখো।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এই কল্পনাশক্তির অবাধ প্রসার আর স্বাধীনতা রাখতেই এখন মাত্রা নিয়ে কম চিন্তা করি ভাইয়া, তবে এক সময় করব। আমি বিচিত্র বিষয় ও ঢংএ কবিতা লিখতে চাই, কিছুটা পরীক্ষামূলক ভাবেও। একটা উদাহরণ দেই যেমন এবরশন নিয়েও কবিতা আছে(অনেক আগের), সচল কোন এক কারণে হজম করে নাই(হয়ত স্পর্শকাতর বিষয়বস্তু তাই!)
দারুণ উদাহরণ আর উক্তি!!
আপনার কোন কথাই বেহুদা নয়, আবারো বলছি আমি শিখি। সব সময় ভুলটা ধরিয়ে দিবেন, অনুরোধ।
আর একটি অনুরোধ কিন্তু করেছিলাম- এই অনুজকে তুমি বলতে!
ভালো হইছে ।
যাক তোমার তাহলে রাগ ভাঙল!! ধন্যবাদ বন্ধু।
মৃত্যুময়, রোমেল ভাই খুব জরুরি উপদেশ দিয়েছেন উপরে। তাঁর চেয়ে ভালো করে বলার ক্ষমতা আমার নেই। মনে রেখো - ছন্দ শেকল নয়, ছন্দই মুক্তি। শুভ কামনা।
জ্বি সুমন ভাই, রোমেল ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখি, উনি ভুলটা ধরিয়ে দেন, আর এখনতো আরেক জন অভিভাবক পাওয়া গেলা ম, ধীরে ধীরে আশা করি ত্রুটিগুলো দূর হয়ে যাবে............
কথাটি অবশ্যি সত্য!!!
নতুন মন্তব্য করুন