রাতের আফ্রিকা
- সুমাদ্রি শেখর।
কাসিয়াপ্লু গ্রামের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে যে বিশাল ফ্রমাজের* গাছ তার মাথার ওপর চুপটি মেরে বসে আমায় দেখছে গোল সুন্দরী চাঁদ। আফ্রিকায় আজ পূর্ণিমা। আমার ক্যাম্পে ডিউটি পোস্টের প্রহরী ছাড়া আর কেউ জেগে নেই, এই মধ্যরাতে চন্দ্রবিলাসে মগ্ন হওয়ার মত পাগল নিশ্চয় ওরা নয়, তার চেয়ে বরং ওদের সতর্ক চোখ নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে ঘন অন্ধকার আফ্রিকান অরন্যের দিকে যেখান থেকে থেকে থেকে ছুটে আসে বিচিত্র শব্দ আর উষ্ণ হাওয়ার ঝাপটা। আমার রুমের সামনের ঘাসের লনে শুয়ে আছে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সোনালু গাছের ছায়া। সেই ছায়ার ভেতর জোছনার বিচিত্র আঁকিবুকি, পৃথিবীতে এমন অপূর্ব উল্কি কে বা এঁকেছে আমি বিস্ময়ে ভাবি। মায়াবী চাঁদ আজ রাতে যেন তার সবটুকু রূপ ঢেলে দেবে আফ্রিকার অরণ্যে ছাওয়া গ্রামগুলোর উপর।
ক্যাম্পের সামনে দাঁড়ানো পাহাড়টাকে মাঝে মাঝে দানবের মত দেখায় রাতে। পূর্ণিমা তাকেও রূপবান করে তুলেছে। পাহাড়টার নিচেই বয়ে চলেছে ছোট্ট একটা জলের ধারা। তার উপর চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ে পাথুরে পাহাড়টার গোড়াটাকে আলোকিত করে ফেলেছে। পাহাড়টার ওধারে একটা ছোট গ্রাম আছে। হাল্কা একটা ধোঁয়ার আভাস ওদিক থেকে উঠে সুন্দরী নর্তকীর মত শরীর দুলিয়ে আকাশে মিইয়ে যাচ্ছে। রাতে ও গ্রাম থেকে ভেসে এসেছিল পাম মদের গন্ধ আর তাম্বুরের* আওয়াজ। পূর্ণিমা রাতে ওদের ও কি কোন উৎসব হয়? এখন শুধু বাতাসের শিস, ঝিঁঝিঁর ঐকতান আর ব্যাঙের ডাক ছাড়া বিশ্বচরাচরে আর কোন শব্দ নেই। গ্রামের শিকারী কুকুরটার গলাও থেমে গেছে বেশ আগে, বুঝি পামের মদিরা তাকে ও বিভোর করে দিয়েছে। তবে এই সুযোগে জংগল থেকে বেরিয়ে পড়বে আগুতির* দল, মৃত্যুর ভয় নেই জেনে তারা হামলে পড়বে মানিয়ক* ক্ষেতে। কোথাও দোজো* শিকারী কি ওতপেতে আছে মুখে রঙ মেখে গাজেল* পুরুষকে ধোঁকা দেবার মানসে? কে জানে, আমি শুধু দেখি ফ্রমাজের গাছের তুলো উড়ে যাচ্ছে ভরা জোছনার আলোতে আর সুন্দরী চাঁদের দিকে প্রনয় অভিসারে উড়ে যায় মোয়ানিউ* দম্পতি।
****** ফ্রমাজের- শিমুল সদৃশ গাছ।
তাম্বুর- ঢাক।
আগুতি- বড় ইঁদুরের মত প্রাণী। আইভরিয়ানরা শিকার করে এই প্রাণীকে।
মানিয়ক- এক ধরনের মেতে আলু।
দোজো- প্রথাগত শিকারী।
গাজেল- হরিণ।
মোয়ানিউ- চড়ুই।
মন্তব্য
আপনার লেখা যতই পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি! আফ্রিকাকে যারা কাছে থেকে দেখবার সুযোগ পাননি তাদের মন ভরে দেবার জন্য যত্ন নিয়ে লিখুন!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ রোমেল ভাই। এমন বিরান বনভূমিতে চাঁদের আলো দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
আফ্রিকার প্রতি আমার তেমন কোন মোহ ছিল না। কিন্তু আপনার লেখা পড়ে ভিন্ন চিন্তা করতে হচ্ছে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
মন ভরল নাতো । আরও একটু পড়তে ইচ্ছে করছিল
আফ্রিকার সবকিছুই ভালু পাই। চালিয়ে যান ভায়া।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
একটু ছবি দিতেন... আরো বড় করে লিখতেন..
আফ্রিকার জন্য আমার অনেক আগ্রহ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বেশ ভাল লাগলো রাতের আফ্রিকার বর্ণনা।
ছবি অনেক তুলি কিন্তু সচলের ধরাবাঁধা সাইজের চেয়ে ছবিগুলো বড় বিধায় আপলোড হতে চায়না, কি যে করি!!@ নজরুল ভাই। লিখতেই বসেছিলাম, কিন্তু বেরসিক আর বেজায় হিংসুটে কাল এক মেঘ এসে অমন অপূর্ব চন্দ্রিমার উপর ইচ্ছে করেই জল ঢেলে দিল। দেখতে যেমন কাল, মনটাও তার কাল।@আশালতাদি। @বইখাতা, নীড়সন্ধানী।
ঠিকই আরো একটু লেখলে কী ক্ষতিটা হতো! কালো মেঘের দোষ আপনার লেখায় সে বাধ সেধেছে, আমাদের আগ্রহের মুখে যে আপনি পানি ঢেলে দিলেন সে বেলায় কী হওয়া দরকার বলেন দেখি শাস্তি হিসেবে পরের বার বড় পোষ্ট চাইইইইই। সাইজ মত ছবি সংযোগের অনুরোধ থাকলো।
গোপনে ঠিকানা জানিয়ে দেবেন, চাঁদ অমন করে আর কোন রাতে কাছে এলে আপনার আগ্রহের কথা জানিয়ে দেব তাকে, সে কিন্তু ঠিকই খুঁজে নেবে আপনার জানলা।@ আয়নামতি।
ছবি চাই আবশ্যিকভাবে।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
সৌমাদ্রি মুগধ মুগধ.....
নতুন মন্তব্য করুন