সম্প্রতি ই-ভোটিং নিয়ে অনেক খবর আসছে মিডিয়াতে; অনেকেই এর পক্ষে বিপক্ষে মত দিচ্ছেন। সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ই-ভোটিং চালু করতে চান। তার সেই ইচ্ছা পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
বিরোধী দলীয় নেত্রী বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই খালেদা জিয়ার অবস্থানকে শুধুমাত্র আওয়ামী বিরোধিতা হিসেবে দেখছে। কেউবা আবার একথাও বলছেন যে, বিএনপি আধুনিক ও প্রযুক্তিমনস্ক নয় বলেই এই বিরোধিতা।
মিডিয়ার এতসব কথা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, ই-ভোটিং সম্পর্কে মানুষের ধারণা তেমন একটা নেই।
আমার নিজের চেনাপরিচিত অনেকেই ই-ভোটিং শব্দটি শুনে ভেবেছিলেন এটি বোধহয় আওয়ামী লীগের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানেরই একটি পদক্ষেপ। তাই শুরুতেই বলে নেয়া ভালো যে ই-ভোটিং কিন্তু আসলে ইন্টারনেট ভোটিং নয়। বরং ই-ভোটিং মানে হলো ইলেক্ট্রনিক ভোটিং অর্থাৎ কিনা ইলেক্ট্রনিক একটি মেশিনে ভোট দেবার ব্যবস্থা। প্রচলিত ভোট প্রদানের মতোই এখানেও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে; সেখানে গিয়ে তারা ব্যালট পেপারে সিল না মেরে যন্ত্রের বোতাম টিপে ভোট দেবে। ভোট দেওয়ার পর তাদের হাতে অমোচনীয় কোন কালিও লাগানো হবে না।
অনেকেই জানতে চাইতে পারেন ই-ভোটিং যন্ত্রটি কেমন? সরলভাবে বলা যেতে পারে ই-ভোটিং যন্ত্রটি হলো একটি ৬-ভোল্টের ভোটিং বাক্স যাতে কিছু বোতাম থাকে যার প্রতিটি নির্দিষ্ট করা থাকে একেকজন প্রার্থীর জন্য। একজন ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীর জন্য নির্দিষ্ট বোতামটি চেপে তার ভোটটি দিতে পারেন।
এবার দেখা যাক এই প্রক্রিয়ার কিছু খুঁটিনাটি!
এই ধরনের মেশিনগুলোর কেতাবী নাম ‘Direct Recording Electronic (DRE) voting machines’ হলেও ‘Electronic Voting Machine’ বা EVM নামেই মেশিনটি বেশী পরিচিত।
ছবিতে দেখানো হয়েছে ভারতে তৈরী একটি ইভিএম – বামদিকের বাক্সটি ব্যালট ইউনিট এবং ডান দিকের বাক্সটি কন্ট্রোল ইউনিট, যা একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে একটি ৫ মিটার দীর্ঘ কেবল দিয়ে। ব্যালট বাক্সে সীল দেবার পরিবর্তে ভোটারকে চাপ দিতে হবে তার পছন্দের প্রার্থীর জন্য নির্দিষ্ট বোতামে।
যন্ত্রটির গঠন এবং ব্যবহার বেশ সরল বলে এই ধরনের মেশিনে ভোট জালিয়াতি করা সহজ, এবং এই জালিয়াতির সম্ভাবনাই হলো এই পদ্ধতিতে ভোট-ব্যবস্থার বিরোধিতার মূল কারণ!
২০০৯ এর যে নির্বাচনে ভারতীয় কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে।, সেখানে ই-ভোটিং নিয়ে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নবিন চাওলার উপস্থিতিতে ওমেশ সায়গল প্রমাণ করে দিয়েছেন এই নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছে। এর আগে পর্যন্ত কমিশনার চাওলা এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন, এমনকি এর তদন্তও তিনি করতে চাননি! সায়গলের প্রমাণের পর ভারতে ইলেকশন কমিশন এটি তদন্ত করে দেখছে! শুধু তাই নয়, ভারতীয় নির্বাচন কমিশন পরিকল্পনা করছে জালিয়াতি এড়ানোর জন্য কিভাবে ভবিষ্যতে ই-ভোটিং এর প্রিন্টেড রিপোর্ট রাখা যায় যাতে পুনরায় ভোট গণনা করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, কাগজের প্রিণ্টই যদি করা হবে তাহলে পুরনো পদ্ধতি কি দোষ করেছিল?
আসলে ই-ভোটিং পদ্ধতিতে জালিয়াতি নানা ভাবেই করা যায়।
জালিয়াতির একটি প্রধান উপায় হতে পারে এর কোন যন্ত্রাংশ এমনভাবে বদলে দেয়া; যাতে ভোটার যে বোতামই চাপুন না কেন ভোট একজন প্রার্থীর পক্ষেই পড়বে। সেক্ষেত্রে এটি হবে ভোট জালিয়াতির যন্ত্র। পোলিং অফিসার তাদের ইচ্ছামতো প্রার্থীকে জয়ী করবেন। বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারও তার সর্বশেষ বক্তৃতায় বলেছেন যে, ই-ভোটিং ভোটিং কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্ব ঠেকাতে পারে না। তাহলে নির্বাচন কমিশন কার পছন্দের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার জন্য এই পদ্ধতি চালু করতে চায় সেই প্রশ্ন করা যেতেই পারে?
ভোট জালিয়াতির আরো একটি উপায় হতে পারে পোর্টেবল হার্ডওয়ার ডিভাইসের সাহায্যে ভোটের রেকর্ড নিয়ে তা পরিবর্তন করা, যা মূলত নির্বাচনের ফলাফলই বদলে দেয় এবং ব্যালটের গোপনীয়তা রক্ষা করে না।
ইভিএম এ ডাটা এনক্রিপশনের ব্যবস্থা নেই বিধায় দ্বিতীয় পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে কারিগিরীদিক থেকে সহজ!
এই যন্ত্রে ভোট গ্রহণ করা হোলে জালিয়াতির ব্যাপারটি স্থানীয় নির্বাচন কর্মী দ্বারাই করা সম্ভব। ব্যালট বাক্স ছিনতাই এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থার আর দরকার পরে না!
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সবগুলো কেন্দ্রে প্রথম ই-ভোটিং চালু হয় ২০০৪ সালে। দুটি ভারতীয় কোম্পানী এই মেশিন বানায়, Electronics Corporation of India (ECIL) এবং Bharat Electronics Limited (BEL)। এই মেশিন বর্তমানে নেপাল ও ভূটানে ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামীতে তারা বাংলাদেশেও সরবরাহ করবে। প্রতিটি মেশিনের দাম কয়েক হাজার ডলার। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকার মেশিন কিনতে হবে। এ ব্যাপারে কোন তথ্য এখনো নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেনি। যা প্রকাশিত হওয়া দরকার। প্রাথমিকভাবে যদিও বলা হচ্ছে যে, এই খাতে মাত্র ২০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে। কিন্তু প্রকৃত ব্যয় আরো বেশি হবে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সম্প্রতি ভারতের নেট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর হরি-প্রসাদ, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের ডঃ হলডারম্যান, এবং নেদারল্যান্ডের এক্টিভিস্ট গনরিজিপ ই-ভোটিং জালিয়াতি নিয়ে একটি বিশদ গবেষণা করেন যা ২০১০ এর অক্টোবরে আমেরিকার শিকাগোতে অনুষ্ঠিত ১৭তম কম্পিউটার এন্ড কমিউনিকেশনস সিকিউরিটি কনফারেন্সে প্রকাশিত হয়। ভারত সরকার এটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেয়, এবং হরিপ্রসাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে তাঁকে কে ই-ভোটিং মেশিনটি সরবরাহ করেছিলো সেটি জানবার জন্য। হরিপ্রসাদ এই তথ্য দিতে অসম্মতি জানালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়!
জালিয়াতির এসব প্রমাণ এবং উন্নত দেশগুলোর ই-ভোটিং ব্যবস্থা বাদ দেবার উদাহরণ থাকা স্বত্তেও বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন ই-ভোটিং নিয়ে গোপনে এগিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য এ পরিকল্পনা করা হয়েছে ২ লাখ মেশিন কেনার! রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা না করেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন! ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত সেনাপতি মইনুদ্দীনের মাৎসনায়ের সময়ে সুযোগ পাওয়া একজন ‘চান্স-কমিশনার’। হায়দ্রাবাদ থেকে ইভোটিং মেশিন আমদানী করে সেগুলোকে গাজীপুরের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরীতে পুনরায় রঙ করে বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে ভোট-ব্যবস্থার প্রচলনের মূলে রয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার।
আমেরিকার ই-ভোটিং জালিয়াতির জন্য উইকিপিডিয়ার রেফারেন্স দেখাই যথেষ্ট।
জার্মানীতে আদালত রায় দিয়েছে ই-ভোটিং তাদের সংবিধান-পরিপন্থী, এবং সে দেশের সরকার এই পদ্ধতি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ইতালীসহ ইউরোপের নানা দেশ এই পদ্ধতির ভোট গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। যেখানে এইসব উন্নত দেশগুলোই ই-ভোটিং গ্রহণ করেনি বা প্রত্যাখ্যান করেছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের কম শিক্ষিত মানুষের ক্ষেত্রে জোর করে এই পদ্ধতি প্রবর্তনের পেছনে দুরভিসন্ধি ছাড়া আর কি থাকতে পারে?
তথ্যসূত্রঃ
1. Security Analysis of India’s Electronic Voting Machines; Prasad, HK; Halderman, JA & Gonggrijp, R; April 29, 2010; Published by ACM 2010 Article; http://portal.acm.org/citation.cfm?id=1866309&dl=ACM
2. E-Voting: Digital Democracy or a Cash Cow for Consultants?; Diane Farsetta; PR Watch, Volume 11, No. 2, 2nd Quarter 2004; http://www.sourcewatch.org/index.php?title=E-Voting:_Digital_Democracy_or_a_Cash_Cow_for_Consultants%3F
3. German Court Rules E-Voting Unconstitutional; http://www.dw-world.de/dw/article/0,,4069101,00.html
4. Was Election 2009 rigged? http://ia.rediff.com/www/news/2009/jul/04was-election-2009-rigged.htm
5. India plans paper trail for electronic voting machines; http://news.idg.no/cw/art.cfm?id=458F6A49-1A64-67EA-E4AD73BBFC5BB062
6. Researcher Arrested in India After Disclosing Problems With Voting Machines; Kim Zetter ; August 23, 2010; http://www.wired.com/threatlevel/2010/08/researcher-arrested-in-india/
7. Electronic voting; Wikipedia; http://en.wikipedia.org/wiki/Electronic_voting
8. Local news; http://www.bdnews24.com/
- রণ, জুন ১১/২০১১
মন্তব্য
জালিয়াতি রোধে আমাদের উচিত প্রস্তরযুগে ফিরে যাওয়া। একমাত্র পাথর কুঁদে ব্যালট বানালে জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। পাথরের ব্যালটের ওজন ও বৃহদাকৃতির কারণে ছোটখাট মাপের জালিয়াতি করা সম্ভব হলেও বড় মাপের জালিয়াতি করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে।
কথায় আছে, যেমন কুকুর তেমন মুগুর। আমাদের জন্য পাথরের বিকল্প নাই।
সহমত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সহমত
অজ্ঞাতবাস
ভোটের ব্যাপারে মেম্বরের উপ্রে কুন কতা নাই। চরম ভাবে সহমত।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
প্রচলিত কাগজ ব্যালট বক্স সহকারে ভোট এই দেশে অনেকবার হয়েছে প্রত্যেকবারই তো যে দল হেরছে সে দলই তো দেশি বিদেশী কনসপেরিসি আবিস্কার করেছে নির্বাচনের পরপরই নাকি ব্যালট বক্স্ অতিরিক্ত ভোট কাগজ সিল ছাপ্পর পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাচূত দলের কথা বিশ্বাস করলেও তো ধরে নিতে হয় দেশে প্রচলিত সিল ছাপ্পড় দিয়েও একটা ভালো ইলেকশন হয় নাই!
এইতো কয়েকদিন আগে ভারতে পশ্চিম বঙ্গে বাম ফ্রন্টও ইলেকসন হেরে গিয়ে দাবি করছে সবই নাকি ভোট মেশিনের কারসাজী বিজেপীও কয়েকদিন ইলেকসনে গো হারা হেরে গিয়ে দুই একদিন গরম গরম কথা বলে অফ গেছে কিন্তু ভারতের বেশীর ভাগ মানুষই মনে করে ই ভোট এর ঊপড় আস্থা জ্ঞাপন করছে
ই ভোট হচ্ছে আগামী দিনের প্রযুক্তি এইটা আজ হোক কাল হোক প্রতিষ্ঠা পাবে কারন এইটা লাখ লাখ ব্যালট কাগজ নষ্ট করা এবং ভোটের ফলাফল দ্রুত পেতে সাহায্য করে
এই ইভিএম আমি যত দূর জানি বুয়েট এর আবিষ্কৃত, আপনি যা বললেন, সব বাইরের কথা বললেন, আপনি কিভাবে প্রমান করবেন যে, বুয়েটের এই মেশিনেও এরকম করা সম্ভব? আর ইভিএম ছাড়া যে দুর্নীতি হবে না, এ বিষয়ে আপনি নিশ্চিত হলেন কিভাবে?
"...ভোট দেওয়ার পর তাদের হাতে অমোচনীয় কোন কালিও লাগানো হবে না।" What is the source of this information?
"...জালিয়াতির এসব প্রমাণ এবং উন্নত দেশগুলোর ই-ভোটিং ব্যবস্থা বাদ দেবার উদাহরণ থাকা স্বত্তেও বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন ই-ভোটিং নিয়ে গোপনে এগিয়ে যাচ্ছে। ... যেখানে এইসব উন্নত দেশগুলোই ই-ভোটিং গ্রহণ করেনি বা প্রত্যাখ্যান করেছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের কম শিক্ষিত মানুষের ক্ষেত্রে জোর করে এই পদ্ধতি প্রবর্তনের পেছনে দুরভিসন্ধি ছাড়া আর কি থাকতে পারে?" If there any technical problem then it should be find out and solve it. As few whites didn't accept EVM, that doesn't mean that its a rubbish thing & should be rejected. Hearing your argument I think we should live in the stone age.
"...এইতো কয়েকদিন আগে ভারতে পশ্চিম বঙ্গে বাম ফ্রন্টও ইলেকসন হেরে গিয়ে দাবি করছে সবই নাকি ভোট মেশিনের কারসাজী..." Where did you find it? I never heard any complain at any print or electronic media by CPIM of West Bengal. Its just your manufactured statement.
প্রথম কয়েক লাইন পড়েই প্রশ্ন জাগলো: শেখ হাসিনার নাম শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বলার কারণ কী?
গ্রহনযোগ্য জবাব পেলে পরের অংশ পড়ব।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
এখন পর্যন্ত কোন নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ হয়নাই? ইভিএম আসলেও হবে (আসার আগেই তো দেখছি এটা নিয়ে দুরভিসন্ধি খোঁজা হচ্ছে)।
আজকে হাসিনা চেয়ারে বসে ইভিএম চালু করতে চাচ্ছে আর খালেদা না না করছে। দুদিন পরেই খালেদা চেয়ারে বসলে ইভিএম ভালো হয়ে যাবে আর হাসিনা রাস্তায় বসে কান্নাকাটি করবে। কাজেই উনাদের দিকে না তাকিয়ে সামনে তাকানোই কি ভালো না? আজ হোক কাল হোক কাগজের ব্যালট একদিন লাটে উঠবেই, আর বাংলাদেশও আজ না হোক কালকে হলেও এই টেক নিবে। যে পানি খেতেই হবে সেই পানি এখন ঘোলা করে রেখে লাভ আছে? বরং ইভিএমের সিকিউরিটি কিভাবে বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে কথা হতে পারে।
কোনো মন্তব্যের আংশিক উদৃতি কিন্তু বক্তব্যকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে পারে। যেমন আপনি জার্মানীর কথা বলেছেন আদালত ই-ভোটিংকে অসাংবিধানিক বলেছে। কিন্তু আপনি আদালতের রায়ের পরের অংশটি এড়িয়ে গেছেন। আপনার ৩ নং সূত্র থেকে উদৃতি দিচ্ছি-
Germany's highest court has ruled that the use of electronic voting in the last general election was unconstitutional. However, the Karlsruhe judges said the 2005 vote was still valid as there was no evidence of errors.
লেখায় ইভিএমের পেছনে সাখাওয়াত আর সাখাওয়াতের পেছনে মইন খোঁজা অপ্রাসংগিক মনে হয়েছে। তার চেয়ে বরং আপনি ইভিএমের সমস্যাগুলো নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো।
কিছু ব্যাপার বুঝলাম না -
যন্ত্র যদি পুরোপুরি একটা সিলড বক্স হয় তাহলে যন্ত্রাংশ বদলাবে কি করে? আর যদি সিলড বক্স না হয় তাহলে ই-ভোটিংয়ের বিরুদ্ধে কথা না বলে বলা উচিৎ যন্ত্রগুলো যেন ঠিকমতো ডিজাইন করা হয় সেটি বলা।
এনক্রিপশন থাকলে ভোটের রেকর্ড পাল্টাবে কি করে? আর এনক্রিপশন না থাকলে সেটি এড করে দিলেই তো হয়। এটা তো ই-ভোটিংয়ের দোষ না। এটা যন্ত্রের ডিজাইন ঠিকমতো করলেই তো হয়।
এই বক্তব্যগুলো তথ্যসূত্রগুলো দেয়া যাবে কি?
- বাংলাদেশের ই-ভোটিং মেশিনগুলো ভারত সরবরাহ করবে।
- ইভোটিং মেশিন এনে পুনরায় রং করার ব্যাপারটা।
- আমেরিকার টোটাল ব্যাপার জানিনা। আমি যে ইউনিভারসিটিতে পড়ি সেখানে একটা সাইবার ডিফেন্স ল্যাব আছে। সেখানকার ডিরেক্টর এলান শেরম্যান ই-ভোটিং নিয়ে প্রচুর কাজ করেন। তার ফান্ডও সেইরকম।
শেহাব, হ্যাকিং ডেমোক্রেসি প্রামাণ্যচিত্রে দেখেছিলাম আমেরিকায় ভোটিং মেশিনে কি উপায়ে জালিয়াত করা হয়েছে। Diebold নামক এক কোম্পানী সম্ভবত জড়িত ছিলো।
অফটপিকঃ বাংলাদেশে অনেক স্থানে Diebold এর এটিএম দেখেছি।
এই পোস্টটা প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য মডারেটরদের অনুরোধ জানাচ্ছি। নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া এখানে আর কিছু নেই। রাগিব ভাইয়ের বক্তব্য পুরোপুরি সঠিক। লুৎফুল কবীর স্যার অত্যন্ত সম্মানিত ব্যাক্তিত্ব। আইআইসিটি'র ল্যাবে তাঁর অনুমতি স্বাপেক্ষে কিছুদিন কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সূত্রে ইভিএম'র তৎকালীন ডেভেলপার মাসুম ভাই ও মিকাঈল ভাইয়ের কাজ খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। ভারতের মেশিনটির ছবি এবং তৎসংক্রান্ত তথ্য এখানে এনে আপনি শুধু জলঘোলা করছেন।
গদাম সহকারে মাইনাস।
Rajib আপনি আমাকে ভদ্রভাবে আমার তথ্যের সূত্র নিয়ে প্রশ্ন করতে পারতেন আমার মতামত না নিয়েই তথ্য জালায়াতির অভিযোগ তুলা কি এক প্রকার অভব্যতা না ? যাই হোক নিচে খবরটা কোট করে তুলে ধরছি
( outlook india)
তবে এধরনের অভিযোগ ভারতের সব রাজনীতিক দলই পরাজয়ের সম্ভাবনা পিট বাঁচাতে এ ধরনের মন্তব্য বেশির ভাগ সময়েই ভোট মেশিন চমৎকার ভাবে কাজ করেছে আমি এই মেশিন পরবর্তী ইলেকশনে ব্যবহারের পক্ষে
এই পোস্ট টি না সরিয়ে বরং এ ব্যাপারে আরো তথ্য প্রমাণ প্রকাশ করলে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে দ্বিধা দূর হবে। রাগিব ভাইয়ের সহপাঠীর তথ্যগুলো যুক্ত করলে খুব চমৎকার হয়।
গতকালই প্রথম প্যারা দেখে এর আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো। শুধু দুইটা জিনিসের দিকে তাকালেই এই লেখার উদ্দেশ্য বোঝা যায়-
১) শেখ হাসিনাকে শেখ হাসিনা ওয়াজেদ লেখা।
২) সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী লেখা- প্রধানমন্ত্রী হয় দেশের, কোন দলের না। এই ধরনের শব্দ ইচ্ছাকৃত ছাড়া সচরাচর কেউ ব্যবহার করে না। এই লেখার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেই আর কিছু বলি নি।
অলমিতি বিস্তারেণ
EVM দিয়ে ভোট গ্রহণের ডেমোনেস্ট্রেশন সংক্রান্ত কিছু প্রাসঙ্গিক ছবির লিঙ্ক
রাগিব ভাইয়ের কাছ থেকে আরো তথ্য এবং ছবির জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
এই বিষয়টা নিয়ে একটা বিশাআআআল লেখা তৈরি করার কথা আমার অনেক আগেই। নানান সমস্যা, যোগাযোগের ব্যর্থতা, আমার খুঁতখুঁতানি-ইত্যাদি নিয়ে শেষাবধি আর লেখাটা হলোই না। হবেও না বোধহয় আর। পোস্টককে এজন্যে প্রথম কইষ্যা মাইনাসসসস।
গত চট্টগ্রাম সিটি কর্পো নির্বাচনে যে-ওয়ার্ডে (জামালখান) ই-ভোটিং হয়, আমি সেখানকার একটি কেন্দ্রে কর্মরত থেকে ইতিহাসের সাক্ষী এবং অংশ হয়ে যাই। পরীক্ষামূলক এই গুরুভার সম্পাদনা করার জন্যে উদগ্রীব ছিলেন সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, যদিও বেশ কিছু দরকারি জায়গায় ফাঁকফোঁকর চোখে পড়ে। পোস্টদাতা ইচ্ছে করেই বেশ কিছু মিথ্যে তথ্য দিয়ে এবং হাওয়ায় তাওয়া ঘুরিয়ে সেখানেই রুটিভাজার কাজটি সেরে অনেকেরই প্রশংসা অর্জন করেছেন দেখতে পাচ্ছি। কাজেই, বিশদে বলার আর তেমন কিছু নেই। রাগিব আমার চাইতে হয়তো এর পেছনের আরো বিস্তৃত বিবরণ দিতে পারবেন, তাই আমি চুপ করেই থাকি। তবে, এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কি কি সমস্যার আমি সম্মুখীন হয়েছি মাঠপর্যায়ের একজন হিসেবে, সেটার ফিডব্যাক হয়তো কারোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতেও পারে, সেই আশ্বাসে সে-কথাগুলো তুলে রাখতে পারি চাহিবামাত্র প্রদান করার নিশ্চয়তায়। পাইল্যাবের নাম আমরা সবাই মনে রাখবো এই বিশ্বাসে আপাতত চুপ গেলাম।
শেষ তথ্য, সেদিন ভোট শেষ করে বাসায় আসতে আসতেই না আসতেই অল্প কিছুক্ষণ পরেই চারটা ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়, এবং সেগুলো ছিলো ইভিএমে করা। আর্জেন্টিনা আর কার যেন খেলা চলছিল সেদিন বিশ্বকাপের। এতো আরামে আর কখনো ভোট শেষ করি নি। আমি কিছু ব্যবস্থাগ্রহণসাপেক্ষে ইভিএমের পক্ষে ১০০০০ ভাগ।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
সাধারণ ভোটারদের মনেও কিন্তু এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। মানুষের মন থেকে সকল সন্দেহ আগে দূর করা দরকার..
নেক্সট ইলেকশানে বিএনপি জেতার পর ইভিএম হালাল হয়ে যাবে এনশাল্লাহ!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
গণক মিস্তিরি র সাথে সহমত
লেখক ভারত এবং আমেরিকায় ই-ভোটিং সৃষ্ট ব্যপক জালিয়াতির কথা বলেছেন; কিন্তু দেশ দুটির প্রধান বিরোধী দল কি ই-ভোটিং প্রযুক্তির অধীনে যেকোন নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিয়েছে? ই-ভোটিং ব্যবসহায় কখনো কোথাও ত্রুটি দেখা দিতেই পারে; কিন্তু তাই বলে এ ত্রুটি মান্ধাতার আমলের কারচুপির অবারিত সুযোগ করে দেয়া ভোটিং পদ্ধতিটি টিকিয়ে রাখার রক্ষাকবচ, লেখকের এমন যুক্তি মোটেও মানা যাচ্ছে না।
এখানে অনেকেই অনেক কিছু লিখেছেন। যেমন, দ্রোহী লিখেছেন, ‘জালিয়াতি রোধে আমাদের উচিৎ প্রস্তরযুগে ফিরে যাওয়া।’ তাতে নজরুল ইসলাম সহমত জানিয়েছেন। পরেরদিন আরো সহমত জানিয়েছেন কয়েকজন। তারা হয়তো জানেন যে, প্রস্তরযুগে গণতন্ত্র কেমন ছিলো। বিষয়টি নিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনে দেন দরবার করতে পারেন।
ক্র্যাক কমান্ডো বিদেশী ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে যা বলেছেন সেটা এদেশের হেরে যাওয়া দল শুধু নয়। নির্বাচন শুধু নয়। বিভিন্ন ইস্যুতে হরহামেশাই শুনতে হয়। ষড়যন্ত্র খোঁজাটা এই জাতির মজ্জাগত একটা বিষয়। কেউ বলেন কনসপিরেসি। কেউ বলেন ষড়যন্ত্র। কেউ বলেন জল ঘোলা করা।
উদাসী ইভিএমকে বুয়েটের আবিষ্কার হিসেবে দেখছেন। আমি বিষয়টিকে দেখি বুয়েটের তৈরি হিসেবে। সেযাক।
রাজিবের জন্য পরামর্শ হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য শুনুন।
সবচেয়ে মজার মন্তব্য করেছেন অনার্য সঙ্গীত। তিনি 'শেখ হাসিনা ওয়াজেদ' লেখার কারণে পুরো লেখাটা পড়েননি। আমার প্রশ্ন হলো তাহলে কি লিখব; 'শেখ হাসিনা সঙ্গীত'? আশা করি তিনি পরের অংশটুকু পড়বেন।
মাহবুব রানা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন। তাকে ধন্যবাদ। সেসঙ্গে শেহাবকেও।
রাগিব দলীয় প্রোপাগান্ডা হিসেবে দেখছেন ব্যাপারটাকে। রতনে রতন চেনে। আমিই নিজেকে চিনতে পারলাম না। তিনি অনেক মজার মজার কথা বলেছেন। যেমন, ‘ড. লুৎফুল কবীর অত্যন্ত সম্মানিত একজন গবেষক। তার দলের হাতে তৈরি মেশিনের মধ্যে ভূত খুঁজে বিএনপিগন্ধীদের বিশেষ ফায়দা হবে না।’ তিনি আরো বলেছেন যে, বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমল থেকেই এই কাজ শুরু হয়েছে। তারমানে তিনি জানাচ্ছেন যে, ইভিএম এই সরকারের আমলের কোন উদ্যোগ নয়। এবং ড. লুৎফুল কবীর বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময় সরকারের দ্বারা আদিষ্ট হয়ে কিংবা নিজ উদ্যোগে এই কাজটি শুরু করেছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন যে, এই কাজের ক্ষেত্রে ড. লুৎফুল কবীরের একটি দল আছে। যারা এর নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত।
রাগিব, আরো জানাচ্ছেন যে, তিনি আমেরিকাতে ড. হ্যালডারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বাংলাদেশে ড. লুৎফুল কবীরের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তারা দু’জনেই এই ভোটিং মেশিন অ্যানালাইসিস করতে রাজী। এখানে তার রোলটি কি ঠিক বুঝতে পারিনি? তার যদি ভোটিং মেশিন বিষয়ক কোন পরামর্শ থাকে তিনি সেটা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে পারেন। তিনি সেই কাজটি না করে সরকারের প্যারালাল একটি কাজ করার জন্য প্রো একটিভ ভূমিকা নিয়ে আসলে কি করতে চান? অতীতে আমরা দেখেছি এই জাতীয় অতি উৎসাহী লোকজন দেশের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বয়ে আনেন। তার যদি কোন ধরনের যোগাযোগ কিংবা বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থেকে থাকে তবে সেটা তিনি প্রোপার চ্যানেলে বিতরণ করার চেষ্টা করলেই ভালো। কেউ যদি মনে করে যে, দেশকে শুধু সেই ভালোবাসে তাহলে তাকে সোজা জানিয়ে দিতে চাই দেশপ্রেম কারো কাছে বন্ধক দেওয়া হয়নি।
তিনি গণনা করে কি লিখেছেন আর তাতে অন্য যারা সায় দিয়েছেন তাদের জন্য একটি প্রশ্ন রেখে যাই, ড. লুৎফুল কবীর সাহেবের সঙ্গে ড. কায়কোবাদ এবং অন্য আরো অনেকের সমস্যাটি কোথায় হচ্ছে?
এসএম মাহবুব মোর্শেদের প্রস্তাবটিতে আমি সহমত।
সবজান্তা তার মন্তব্যে নিজের নামের সার্থকতা রেখেছেন। তাকে অভিনন্দন।
রিসালাত বারী কিছু লিঙ্ক দিয়েছেন। মজা পাইলাম!
বাকিদের মন্তব্য নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। মোটামুটি একইরকম।
শেষ প্রশ্নটি রেখে যাই সবার জন্য: ইভিএম তৈরির দায়িত্ব কে পালন করবে? এটা কি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নাকি ড. লুৎফুল কবীর এবং তার দলের সম্পত্তি হবে? এটা কি রাষ্ট্রের কাছে বিক্রি হবে নাকি রাষ্ট্র এটা তৈরি করবে? এটা কি টেন্ডার দিয়ে কেনা হবে নাকি সরাসরি ক্রয় করা হবে? যদি টেন্ডার হয় সেখানে কি শুধুমাত্র লুৎফুল কবীর সাহেবের টিম অংশ নেবে? তারা যে দামে এটা তৈরি করে দেবেন সেটাই যে যথার্থ দাম সেকথা কে নিশ্চয়তা দেবে? এতে যে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় হবে না সেই নিশ্চয়তা কে দেবে? আমরা কি মনোপলি ব্যবসার সুবিধা কাউকে করে দিতে চাচ্ছি? আমেরিকাতে বসে রাগিব কি সেই ব্যবসার অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন? তিনি কি হারে কমিশন আশা করছেন?
আপাতত এটুকুই।
রণ
শুধুমাত্র বাংলাদেশ আর পাকিস্তান-এই নাকি ই-ভোটিং প্রচলন বাকি আছে..আজকে daily star এ একটা editorial এমনি পরলাম..http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=১৯০২২৬ [ সর্বশেষ line ] .. লেখক কোথা হতে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন যে উন্নত দেশ গুলা ই-ভোটিং বাতিল করছে, উল্লেখ করলে সন্দেহ দূর হতো..
নতুন মন্তব্য করুন