আমার জন্ম হয়েছিলো বন্যার সময়। ৮৮’র বন্যায়। সবার মুখে শুনতে শুনতে আমি যেন স্মৃতিতে দেখতে পাই কিভাবে আমাকে কোলে করে পানি’র উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো এক বাসা থেকে আরেক বাসায়।
কল্পনাটা আরো পাকাপোক্ত করে দেয় ৯৮’র বন্যা। ডি এন ডি বাধ ভাঙে ভাঙে অবস্হা। পোস্তগোলা, কুসুমবাগে’র রাস্তায় সবাই মিলে বালুর পর বালুর বস্তা দিচ্ছিলো। এগুলোও অবশ্য আমার শোনা। তখনও অতদূর যাবার মতো বড় হয়ে উঠিনি। ডি এন ডি বাধ যে কোনটা সেটাই ঠিক জানতাম না আমি অনেক দিন। শুধু বুঝতে পারছিলাম আমরা আছি একটা বড়সড় bowl মধ্যে যার চারিদিকে পানি উপচে পড়তে চাচ্ছে, চুইয়ে ঢুকেছেও অনেক। এখন সেটা ভেঙে যাবার মতো অবস্হা আর ভেঙে গেলেই পানি সব ঢুকে পড়ে আমাদের একতলা বাড়িটা খুব সহজেই ডুবে যাবে। ডুবে গেলে কিভাবে থাকবো তার একটা জল্পনা কল্পনা হচ্ছিলো, ছাদে’র উপর একটা অস্হায়ী ঘর বানানো’র কথাও চিন্তা করা হচ্ছিলো। খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য বুড়ো বাধটা তার সর্বশক্তি দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছিলো বৃষ্টির আস্কারা পাওয়া বন্যার মতো কিশোরীর দুরন্তপনা।
যদিও আমাদের গ্রামে বন্যার জন্য ৮৮, ৯৮’র জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। টিভিতে যদি বন্যা শব্দটা উচ্চারিত হয় তাহলেই বুঝতে হবে আমাদের গ্রামের বাড়ির ঘরের কোণায় পানি চলে এসেছে। কাকা প্রতিবারের মতোই একটা বিশাল নৌকা কিনে ফেলেছেন। এবং এ দ্বীপবাড়ি থেকে ঐ দ্বীপ বাড়ি গুলোতে যাওয়ার জন্য অটোমেটিকালি বাশে’র সাকো গুলাও তৈরী হয়ে গিয়েছে। সে নৌকা নিয়ে বের হয়ে পড়তাম শেষবার এসে যে মাঠে ক্রিকেট খেলে গিয়েছিলাম তার উপর!
মাঠটা পার হলেই বিশাল চক্ সাগরে পরিণত হয়েছে। অবশ্য কখন মাঠ পার হলাম আর কখন বিল এসে পড়লাম তা আর পার্থক্য করার কোন উপায় নেই। শুধু স্রোতের শক্তিতে বোঝা যায় এখনকার পানিরা আর শান্ত নেই, বন্য হয়ে উঠেছে। বাতাস তাদের খেপিয়ে তুলছে আরো। আমি এমনিতেই সাতার টাতার পারি না। অ্যাবাউট টার্ণ করে ফিরে আসতাম।
আজকে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার ঘরের মেঝেতে এক ম্যাচে’র কাঠি উচ্চতার পানি। না আমি গ্রামে না। ঢাকাতে। একদিনে’র টানা বৃষ্টিতে আমাদের ঘরে পানি উঠে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এখন আমাদের বাড়িটাই হয়ে গেছে একটা bowl এর মতো। এলাকা উন্নয়ন কতৃপক্ষে’র একনিষ্ঠতায় চারিদিকে’র রাস্তা ক্রমবর্ধমান হারে উচু করাতে করাতে আমাদের বাড়িটা ধীরে ধীরে আন্ডারগ্রাউন্ডেড হয়ে গেছে। আর পানি গুলো গ্রাভিটেশনাল নীতি মেনে আশ্রয় নিচ্ছে ঘরের ভেতর। বাড়িতে ঢোকার পথে কার্ণিশে মাথা লেগে যায়। কার্ণিশে বড় বড় করে লিখে দেবো কিনা ভাবছি
“রাজা বাদশা’র বাড়ি – অনুগ্রহ করে কুর্ণিশ করে প্রবেশ করুন। নচেত্ আপনার মাথা কেউ বাচাতে পারবে না”।
খাটে’র উপর বসে বসে কুমির কুমির খেলছি।
“এই গাঙে কুমির নাই, ঝাপুস ঝুপুস নাইয়া যাই”
-বলে মাঝে মাঝে পানিতে নামছি দরকার হলে। তারপর আবার খাটে, চেয়ারে উঠে বসছি।
আর বসে বসে নৌকা বানিয়ে ছাড়ছি। পানি যে একেবারে নিস্তরঙ্গ তাও না। সিলিং ফ্যান এর বাতাস বেশ ভালোই স্রোত তৈরী করছে। নৌকা চলছেও বেশ জোরে।
এই লেখার পাতাটাও এখানে না ছেড়ে মেঝের পানিতে নৌকা বানিয়ে ছাড়তে পারলে ভালো হতো, অন্তত ‘সচল’ থাকতো।
শ্লার ‘ভরসা ম্যাচে’র কোন ভরসা নাই। সব গুলা কাঠি ভিজে ড্যাম্প হয়ে আছে। আবার বাক্সের উপর লেখা ‘ভিজলেও জ্বলে!’
পুনশ্চ: বর্ষাপ্রেমিক গন, ক্ষমা হোক।
-অপ্রকৃতিস্থ
মন্তব্য
দারুণ লেখা!
তবে বানানে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
অসংখ্য ধন্যবাদ অমিত আহমেদ
বুঝতে পারছিলাম এই রকম শুনতেই হবে আসলে অজানা ভুলগুলো বাদে বেশি'র ভাগ ভুলগুলোই ইচ্ছাকৃত না....আমার কি বোর্ডের লাইন ধরে ১ থেকে ০ পর্যন্ত সব গুলো কি নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলোতেই কিনা চন্দ্রবিন্দু খন্ড 'ত'..এইসব ছিলো। তাই এই দূরবস্থা। আর অসতর্কতার ভুল গুলো তো থেকেই যায়।
এরপর থেকে আরো সচেষ্ট থাকবো।
টানা বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা যে কেমন বিকট হাড়ে হাড়ে সেটা জানি! লেখাটা বেশ ভালো লাগলো
অসংখ্য ধন্যবাদ আয়নামতি।:) জলাবদ্ধতা, চাইলে মনে হয় আমি এই ব্যাপারে একটা পি এইচ ডি ও করতে পারি
আমরাও কলকাতায় একই অবস্থার ভুক্তভোগী হয়ে থেকেছি...
অসংখ্য ধন্যবাদ কৌস্তভ লেখা পড়বার জন্য...যাক এই কমন ব্যাপারটা ছিলো বলেই হয়তো আমার লেখায় ভেসে আসা...!
ভালো লেগেছে
ধন্যবাদ শান্তিপ্রিয় ভালো লাগা জানাবার জন্য । আপনার মৃত্যুচ্ছা লেখাটা পড়েছি। আপনি খুবই ভাল লেখেন।
আবারও বলছি, আপনার লেখার মধ্যে খুব চমৎকার একটা শক্তিশালী এনার্জি আছে। ঠিকঠাক ব্যবহার করলে দারুন জিনিষ তৈরি হবে। লিখতে থাকুন।
(অ টঃ ৮৮ তে জন্ম ! এ যে নেহাত ছেলেমানুষ )
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
হাহ হাহ হা....আমি কিন্তু ভয় দেখাতে মানা করে আগেই বলেছিলাম আমি বাচ্চা মানুষ.... চিন্তা করেছি যদি 'সচল' হতে হতে বুড়ো না হয়ে যাই....তাহলে নিজেকে সর্বকনিষ্ঠ সচল হিসেবে দাবি করবো
আর 'শক্তিশালী এনার্জি' ! সে যাক.....
অনেক অনেক ধন্যবাদ আশালতা.... আপনার অনুপ্রেরণা সত্যিই আমার কাছে অর্থবহ
ভালো লাগলোতো।
৮৮ তে অনেক নৌকাবাজী করছিলাম। তবে ৮৮/৯৮ এর চে ০৪ এর বন্যা অনেক বড় ছিলো।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ভালো লাগা জানানো'র জন্য অনেক ধন্যবাদ নজমুল আলবাব ।
আমার স্মৃতিশক্তি অতি বিভ্রান্তি কর....বছর টছর গুলিয়ে যায়। নাহলে নিশ্চই ০৪ এর বন্যাটাই লিখতাম। :\
ভালো লেগেছে।
বেশি ভালো লাগছে এজন্য যে কিছুদিন আগেও দারুণ লিখতে পারেন এরকম নতুন মুখের আনাগোনা সচলে কমে গিয়েছিল। এখন আর তা মনে হচ্ছে না।
ব্যক্তিগতভাবে আমার অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি শব্দের ব্যাবহার পছন্দ নয়। কেমন যেনো লেখাটাকে হালকা আর 'দূরবর্তী' করে তোলে। ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বাসে বসে আপনার কমেন্টটা পড়েছিলাম। গর্বে তখনই বুক দেড় দুই ইন্চি বেড়ে গিয়েছিলো। মন্তব্য পেতে সব সময়ই ভালো লাগে। তার উপর এতো ভালো ভালো মন্তব্য পেয়েছি, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আসলে bowl এর বদলে বুল/বোল/ বাটি বলে শান্তি পাচ্ছিলাম না..ঠিক কোন শব্দ মাথায় আসছিলো না....বালতি বলেও ঠিক বোঝাতে পারছিলাম না...শেষে বাধ্য হয়েই লিখলাম। অনেক ধন্যবাদ লেখাটিকে এতখানি গুরুত্ব দেবার জন্য।
আরো লিখুন!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
:D
লেখা ভালো লেগেছে, চালিয়ে যান।
১৯৮৮'র বন্যার পরে ব্যাপক ত্রাণ সংগ্রহ করেছিলাম আর ত্রাণ সংগ্রহে গিয়ে বেশ বিচিত্র কিছু অভিজ্ঞতাও হয়েছিলো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমার খানিকটা বিব্রতকর বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিলো মঙ্গা নিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে। অবশ্য খুবই ছোট ঘটনা। জন্মের সময়কার বিচিত্র ঘটনা জানতে চাইতেই পারি...একটা লেখা লিখে দিয়ে দেন
অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগা জানানো'র জন্য।
বন্যার পানির ভোগান্তি সইতে হয়নি কখনো- বন্যার স্মৃতি বলতে এখনো চেনা রাস্তার হঠাৎ নৌপথে রূপান্তর, শখ করে নৌকায় শহর ঘোরা, ত্যাঁদর বন্ধুদের হঠাৎ আক্রমনে বন্যার নোংরা পানিতে ভিজে যাওয়া।
তবে মনের কোন এক কোনায় আবছা হয়ে আছে ৯৮ এর বন্যায় আমাদের স্কুলে এসে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোর কথা। আপনার লেখা ওদের কাথা আরেকবার মনে পড়িয়ে দিল।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আমার এখানে বন্যা বলে কোন ব্যাপার নাই। বৃষ্টি নামের কেউ রাস্তা দিয়ে হেটে গেলেও আমি নিশ্চিত ঘরে পানি উঠে যাবে। :|
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করবার জন্য।
৮৮র বন্যায় আমরা খাটে বইসা বড়শী দিয়া মাছ ধরতাম, নৌকায় দৌড়াইতাম...
৯৮র বন্যায় প্রচুর ত্রাণ তুলছি... দারুণ অভিজ্ঞতা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হাহ হাহ হা...৮৮'র বন্যায় খাটে বইসা মাছ ধরছেন। আর আমি বন্যা ছাড়াই পানি'র মধ্যে থাকতে থাকতে দিনে দিনে মাছ হচ্ছি !
----------------------------------------------------------------
কুকুর, বেড়াল ও বেওয়ারিশ লাশ , আদ্রতা ও সান্দ্রতা
এটা কোন জায়গা ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
অসাধারণ লেখা। আরো লেখা চাই।
তিনবছর পর রিপ্লাই করছি! লেখা দিয়েছি!!
নতুন মন্তব্য করুন