একটা গল্প লেখার অপচেষ্টা
গ্রামটা শান্ত আর শীতল। চারিদিকে ছায়া ঘেরা। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটা খাল। খালটার দুপাশে সার সার নৌকা বাধাঁ। খালের গা ঘেষে ওদের বাড়ি। সারাদিন ছুটোছুটি, হুটেপুটি করেই মেয়েটার দিন কেটে যায়।খালের ওপাশটায় রয়েছে মেয়েটার পুতুল খেলার ঘর। বন্ধুদের নিয়ে সারাদিন ওঘরটায় মুনার কত যে আয়োজন! দিনগুলো যেন স্বপ্নের মত কেটে যায়।
গ্রামের মানুষদের যাতায়াতের জন্য খালটাই একমাত্র ভরসা। পূর্ণিমা অমাবস্যার রাতগুলোতে গ্রামের সবাই নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। রাতের আধারে ছই ছাড়া নৌকায় জ্বলতে থাকে হারিকেন। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন আকাশের তারাগুলো সব মাটিতে নেমে এসেছে।
মুনার বাবা শহরে চাকরি করেন। তাই নিয়মিত আসতে পারেন না। কিন্তু সপ্তাহশেষে বাবার একটা চিঠি মুনার চাই। ডাকপিয়ন যেদিন চিঠি দিয়ে যায় সেদিন মুনার আনন্দ যেন ধরে না। কোন সপ্তাহে চিঠি না পেলে মুনার সে কি অভিমান!!!
সময়ের পরিক্রমায় একদিন মুনাদের গ্রামেও মোবাইল পৌঁছে গেলো। নতুন মোবাইল পেয়ে মুনা সব ভুলে ওটা নিয়েই পড়ে থাকলো। কিছুক্ষণ পর পরই বাবাবকে ফোন, ”বাবা তুমি কি করছো? খেয়েছো? আরও কত কি!” কিছুদিন যেতেই মোবাইলটা আর ভালো লাগে না মুনার। ও আবারও সপ্তাহ শেষে বাবার চিঠির আশায় বসে থাকে। কিন্তু এখন আর ডাকপিয়ন আসে না। খালটাও ক্রমশ শুকিয়ে উঠছে। মুনার কিছু ভালো লাগে না।
সময় পেরিয়ে যায়। মুনা বড় হতে থাকে। এখন আর বাবার সাথে মুনা অভিমান করে না। বাবা ভাবে, মেয়ে বড় হয়েছে, তাই বোধহয় চুপচাপ। বাবা নিয়মিত ওকে ফোন করে। কিন্তু মাঝেমাঝেই ফোন ধরতে ওর ভালো লাগে না। বাবা ভীষণ রেগে যায়।
একদিন মুনাও শহরে পড়তে চলে যায়। শহরে গিয়ে মুনা প্রথমেই একটা চিঠি লেখে ওর বাবাকে। মেয়ের অভিমান বুঝতে পেরে বাবা আবার চিঠি লিখতে শুরু করেন। এখন আবার ডাকপিয়ন আসে নতুন বার্তা নিয়ে। বাবা লেখেন, জানিস মা, ”খালটা আবার পানিতে ভরে উঠেছে”।।
অর্ক রায় চৌধুরী
মন্তব্য
সহজ কথায় বড় একটা বিষয় তুলে ধরলেন......
কি জানি! খালটার চেয়ে মোবাইলটাই মনে হয় আমাদের বেশী প্রিয়!!!!!
বেশ লাগলো গল্পটা
আরেকটু বড় হলে ভাল লাগত। লেখার ভঙ্গী সুন্দর!
ভাই অফিস ফাঁকি দিয়ে লিখেছি।।।
আর বড় করতে গেলে বসের রুমে ডাক পড়তো!!!
তাহলে সাতখুন মাফ!
এইবার থামেন!! ভাই বরকন্দাজ...

জানিস মা, "খালটা আবার পানিতে ভরে উঠেছে"।।
বেশ ভালো লাগলো অল্প কথার এই গল্পটা।
ধন্যবাদ ভাই।
এক কালে বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের একটা বিলবোর্ড চোখে পড়তো যাতে লেখা ছিলো -
চিঠি লিখুন, ইহা স্থায়ী
বিলবোর্ডটা মনে হয় এখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে, তাই আর দেখা যায় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ওটা তো আজকাল দেখা যায়-ই না, পোষ্ট অফিসগুলোর অবস্থাও তথৈবচ।

ধন্যবাদ ষষ্ঠ পান্ডব লেখাটা পড়ার জন্যে।
ভালো লেগেছে "অল্প কথার গল্প"! "চিঠি" মিস করি খুব!
যতগুলো পেয়েছি জমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি।
ধন্যবাদ শায়ের আমান
আমারও আছে জমা চিঠি অনেক...! মাঝে মাঝে পড়ি। পড়ে স্মৃতিকাতর হই। শুধু ডাকপিয়ন আসে না বহুদিন!
সুন্দর গল্প, লিখতে থাকুন
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
এইসব হাবিজাবি লিখেও এত মানুষের বাহবা!!!

লিখবোনা মানে!! অবশ্যই লিখবো!!!!
ধন্যবাদ মর্ম
ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল ভাই
নতুন মন্তব্য করুন