একটি আত্মপ্রকাশের গল্প

তানিম এহসান এর ছবি
লিখেছেন তানিম এহসান [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৬/২০১১ - ৭:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভেজা রোদ্দুরে হাটতে হাটতে আর যাই হোক ক্লান্তি আসেনা। ২১ শে জুন, ২০১১ সাল, আজ কির্তনখোলা নদীর ধারে লাইনটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আমার এটা সবসময় হয়, কোন লাইন কিংবা গান মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে।

“শব্দেরা কোথা হতে এসে হাত পা চেপে ধরে
আর আমার শুধু উত্তুরে হাওয়ার টানে
দিনমান বয়ে চলা
গ্রাসাচ্ছনে আরো জোটে সুপ্রাচীন চাঁদ, জল, আর খেরো খাতা।।”

সচলায়তনে লিখবো বলে লিখতে বসেছি, কোথাও ছাপানোর জন্য লিখার অভ্যেস করিনি, অনভ্যস লাগছে। বহুদিন ধরেই শুনে আসছি ‘ব্লগিং’, ’ব্লগার’ আর তা নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। আর আমি নিজের মতো করে লিখতেই থাকি আর ভাবি, কোথায় পাঠাবো, পাঠাতে ইচ্ছেও করে আবার করেওনা। লিখি আর বন্ধুদের এসএমএস করি, ইমেইল করে পাঠাই, কাউকে পড়ে শোনাই - আমার মন ভরেনা। বারবার মনে হয়, আরো কিছু মানুষকে যদি পড়াতে পারতাম, বলতে পারতাম। আজম খানকে নিয়ে একটা লিখা শুনে, আমি ছাপাতে ছাই শুনে, বন্ধু শামীমা বিনতে রহমান ‘সচলায়তন’ এর জন্য জোর করে বলে। আমার অভ্র নেই, সচলায়তনে ঠুকে আমি অনেককিছুই পড়তে পারিনা, আমি দেখি যে আজম খানকে নিয়ে লেখাটা আমি ঢাকায় রেখে চলে এসেছি, কিন্তু আমার মন চায় কিছু লিখি। আমি অন্য জায়গা থেকে একটা কবিতা কপি করে এনে নানান জায়গায় ক্লিক করে করে সেটাকে পেষ্ট করি কিন্তু পোষ্ট কিভাবে করবো বুঝতে পারিনা, আমি অযথাই ক্লিক করি। মন খারাপ হয়, আমি ভাবি কাজ শেষে রুমে ফিরে যেয়ে আবার চেষ্টা করবো কিন্তু আমার চেষ্টা করতে ইচ্ছে করেনা, আমি ঘুমাই।

২১ শে জুন, ২০১১ সালের সকালবেলায় আমি অভ্র ডাউনলোড করে আবারো সচলায়তনে ঢুকি, ইদিকউদিক দেখি, হঠাৎ আমার চোখ আটকে যায়, আমি আমার সমগ্র অসিত্ব জুড়ে কি যেন একটা টের পাই, আমি দেখি আমার কপি-পেষ্ট করা কবিতাটি ছাপা হয়ে গেছে; একটা কোনায় দেখা যাচ্ছে আমার কবিতার নাম “সনাতন, ফিরে এসো মৃত্তিকার বোধ”। আমি আমার ছাপা হওয়া কবিতাটি বারবার পড়ি, আমি শামীমাকে ফোন দেই, আমার লেখা সচলায়তনে ছাপা হয়েছে। আমি টের পাই আমার ভেতরে কি যেন একটা ভেঙে গেছে, একটা আগল ভাঙা অনুভূতি খেলা করে আমার শিরায় শিরায়।

“অদ্ভূত আবেগে হে সখা, দ্বার ভাঙে
কিভাবে যেন একটার পর একটা আগল ডিঙে
উঠোনে দাড়ায় এসে নিরাকর কেউ!
ভেতরের জলজ ঢেউ
উপকূল ছাপিয়ে পায় বনানীর দেখা
খুব করে একা একা!!”

আজ ২২ শে জুন ২০১১ একটা পথযাত্রার শুরু সম্পূর্ণ আবোলেতাবোলে হয়ে গেছে, হোক। নিজেকে প্রকাশ করার একটা অদ্ভূত দ্যোতনা মানুষের ভেতর কাজ করে, তাই বোধকরি প্রকাশিত হবার পর চিৎকার করে নিজেকে বলতে ইচ্ছে করে - “লিখে যা বেটা!!”

- তানিম এহসান; বরিশাল, ২১.০৬.২০১১


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

লিখে যান। হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

লেইখ্যা যায়েন মাশ্‌শাব। বরিহাইল্যা মানু মুই ভালো পাই। মোর দাদায় আল্লে বরিহাইল্যা, অরজিনিয়াল বাড়ি আল্লে পিরিচপুরের ভাণ্ডাইর‌্যায়। ঘোরতে ঘোরতে বরিশালের কোনওহান বাদ রাহি নায়। যাইতে যাইতে সাতলা-জল্লা তামাইত গেছি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক(শান্তিপ্রিয়) এর ছবি

লিখে যান ভাইয়া। আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে। এত আবেগ নিয়ে যে লেখে তার লেখা অবজ্ঞা করার উপায় নেই গুরু গুরু

মৌনকুহর. এর ছবি

লিখে যান!! হাসি

আয়নামতি1 এর ছবি

নিজেকে প্রকাশের এই উচ্ছ্বাস সচল থাকুক হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

রাত ১১:২৫ মিনিটে দারুন এক্সাইটমেন্ট নিয়ে ল্যাপটপ খুলেছি, মুখ ভর্তি হাসি - ছাপা হলো কি হলোনা কিন্তকেন যেন মনে হচ্ছে ছাপা হয়ে গেছে। ছাপা হয়েই গেছে!! কমেন্টভি হ্যায়! রাত জাগলে আমি পরদিন ঘুম থেকে উঠতে পারি কিন্তু বিছানা ছাড়তে পারিনা। কাল খুলনা যাবো, কেন যেন মনে হচ্ছে, কাল সকাল সকাল সটান বিছানা ছেড়ে উঠে পরবো, গান গাইতে গাইতে ফ্রেস হবো, ফুরফুরে মেজাজে জীবনানন্দের এই বরিশাল ছাড়িয়ে রুপসা নদীর ধারে যাবো - হ্যাভী মজা হবে মামা। সবাইকে কমেন্ট এর জন্য ধন্যবাদ। সবাই মিলে লিখতে থাকি .....

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

হ্যাভী মজা হবে মামা।

অ্যাঁ চিন্তিত

তানিম এহসান এর ছবি

খাইছে

তিথীডোর এর ছবি

হ.. লিখে যান। দেঁতো হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

চলুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লিখতে থাকেন... পাঠক রইলো

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

লেখা প্রকাশিত হবার মজাটাই অন্যরকম, তাই না? হাসি
পড়ুন আর লিখতে থাকুন। স্বাগতম।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সজল এর ছবি

অকৃত্রিম উচ্ছ্বাস ভালো লেগেছে। তবে কমেন্টের "মামা" ডাকটা ভালো লাগেনি। লিখতে থাকুন হাসি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তানিম এহসান এর ছবি

সবার নিজ নিজ সার্কেলে একদম নিজস্ব একটা কিছু থাকে। আমার সব বন্ধুরাই আমাকে মামা ডাকে। সেই থেকেই এটা লিখা, এটা আমার জন্য একটা খুবই আনন্দের বিষয়। বাদ দিই কিভাবে বলুন তো?

তানিম এহসান এর ছবি

হু, লিখছি! ধন্যবাদ সবাইকে

এহসানুল হক এর ছবি

ভাল লিখেছ মামা!!!

আশালতা এর ছবি

মডারেশনে থাকাকালীনই এই লেখাটা পড়েছিলাম। নিস্পাপ ছেলেমানুষী উচ্ছাসটুকু ভালো লেগেছে, আমরা সবাইই কম বেশি আগে পরে সময়ে এই অনুভবের ভেতর দিয়ে গিয়েছি বলেই বোধ হয় মজা লেগেছে পড়তে। লিখুন আরও বেশি বেশি। সাথেই আছি।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তানিম এহসান এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।