একটু বড় হবার পর আমরা ও ওনাদের জন্য কেক কিনে নিয়ে আসতাম বা পুডিং বানাতাম বাসায়। উনাদেরকে রাত ১২ টায় উঠিয়ে সেই কেক কাটাতাম। আম্মাতো লজ্জায় মারা যান প্রত্যেকবার, আর আব্বার মুখে মিটিমিটি দুষ্ট হাসি। আর যেদিন থেকে বাসায় ক্যমেরা আসলো, সেদিন থেকে তাদের এই বিশেষ মুহূর্তের ছবি ও তোলা শুরু করে দিলাম।
এইবার এনাদের সংসার নিয়ে কিছু কথা বলি। ছোট বেলা থেকেই দেখতাম উনারা ঝগড়া করছেন। এই ঝগড়ায় আব্বাজান একতরফা চিৎকার করতেন, আম্মাজান সবসময়ই চুপচাপ থাকতেন। ঝগড়ার শেষ হোত আব্বাজানের থালা-বাটি গ্লাস এগুলা ভাংচুরের মাধ্যমে। তবে দাবার ঘুটি এখন পালটে গেছে। গত ৪, ৫ বছর ধরে দেখছি, আম্মা ও চিৎকার করেন, আব্বা ও চিৎকার করেন, আর দুজনের ঝগড়ার মাসিক গড় ও বেড়ে গেছে। দুজনেই দেখি আবার দুজনরে চোখ রাগায়। এই ঝগড়ায় আমরা কখনও অংশ গ্রহণ করিনা বড়জোর তাদের একজনের বিরুদ্ধে অন্যজনের কম-প্লেন শুনি, ভুলে ও কোন কমেন্ট করিনা। ফোনে যদি কথা হয় আম্মার সাথে, উনি আব্বার নামে একগাদা কম-প্লেন ফাইল করবেন আমার কাছে, তারপর মুহূর্তেই আব্বাজান ও একগাদা কম-প্লেন নিয়ে হাজির হবেন। আমার ও তো মানুষের কানরে ভাই, কত আর অহেতুক এই ঝগড়া ফেসাদের কাহিনী শোনা যায়, অগত্যা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়াই আমার প্রধান কর্তব্য। সাধারণত এই কাজটা আমি সাফল্যের সাথেই করি, মাঝে মাঝে যদি ভুল করে একজনের বিরুদ্ধে কিছু বলছিতো সেই দিন আমার আর রক্ষে নাই।উনাদের অভিমান পর্ব চলবে, একজন অন্যে কত ভালো সেটা বোঝানোর প্রাণান্ত চেষ্টায় আমার ফোন-বিল বাড়াতে থাকবেন। আমি অধর্য্য হয়ে উশখুশ করতে থাকি উনাদের এই অবিরাম প্রচেষ্টায়। আজকাল এমন অবস্থা হয়ছে যে, উনাদের একজনরে কিছু বললে দুজনের গায়ে ফস্কা পড়ে যেনো আরেক জোড়া লাইলী মজনু। নিজেরা ঝগড়া করবেন তো আমাদের কি, কিন্তু আমরা একজনকে কিছু বললে উনারা পুরা এরশাদ খালেদা জিয়া স্টাইলে জোট বেধে দলাদলি শুরু করে দেন। আমি বাইরে থাকার সুবাধে প্রায়ই তাদের ক্রস ফায়ারে পড়ি। আম্মা আব্বা একদলে, অন্য ভাইবোনেরা একদলে, মাজখানে আমারে দলে নেয়ার জন্য দুইপক্ষেরই টানাটানি। জান হাতে নিয়ে আমি তাই কইদিন ফোন করা বন্ধ করে দেই বাসায়, পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হবার অপেক্ষায় থাকি।
ইদানীং-তো ঠোকাঠুকির পরিমাণ আর ও বেড়ে গেছে দেখলাম। কবে যেনো ফোন করলাম,আম্মুর সাথে কথা বলছি, আব্বা ওইপাশ থেকে চিৎকার করে বলছে তোমার মেয়েরে বলো তোমারে যেন বিদেশ নিয়া যায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম কাহিনী কি। মা বললো আমার চাচাতো ভাই বড় কাকা কাকীরে দুবাই নিয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম তো সমস্যা কি। মায়ের মুখ থেকে যা উদ্ধার করতে পারলাম তা হোল, গতবছর মায়ের শরীর বেশ খারাপ যাওয়াতে উনারে আমি আমার কাছে এনে চেকআপ করাতে চাইছিলাম, আব্বা নাকি সেই কথা নিয়া এখন খুব লাফালাফি করতেছে। উনারে আমি কেন নিয়ে আসার কথা বললাম না, শুধু আম্মারে কেন বলছি। আমি বললাম, উনার তো কোন অসুখ নাই, তো এক কাজ করেন উনারে বলেন একটা বিরাট অসুখ বাধাইতে, তারপর উনারে আমার কাছে আইনা চিকিৎসা করামুনে, কথা মুখ থেকে ফেলছি কি ফেলিনাই, আমারতো জিভে কামড়, এইটা আমি কি করলাম, আম্মাজানের হিদায়েত পর্ব শুরু হয়ে গেলো। তো আম্মাজান আব্বাজান আজকাল এসবই করে বেড়ান, তাদের এই সব কাজের ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করতে পারবোনা, আজকে তাই এখানেই ক্ষেমা দিলাম।
বন্দনা
মন্তব্য
হুমমমম, ভালো লাগলো!
আমার বাবা-মা'র একই রকম ঝগড়া দেখতে দেখতেই বড় হলাম!
========
আমি জানি না
ধন্যবাদ guest_writer।
ওনাদের জন্য শুভেচ্ছা।
ওনাদের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ কৌস্তুভদা।
পরিবারগুলো টিকে থাকুক, টিকে থাকুক ভালোবাসার অটুট বাঁধনে!!!!!
ধন্যবাদ কবিকে শুভ কামনার জন্য।
সব বাসাতে মনে হয় একই রকম...আমাদের বাসাতেও প্রায় একই স্টাইলে ঝগড়া-বিবাদ , প্রেম-ভালোবাসা হয়...
ভালো লাগলো
nawarid nur saba
অনেক ধন্যবাদ সাবা। আমার ও ভালো লাগলো এই শুনে যে আপনার বাসাতে ও একই ব্যপারস্যপার ঘটে।
ওনাদের জন্য শুভেচ্ছা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ওনাদের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নজুদা।
দুজনকেই বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার শুভেচ্ছাবার্তা পৌছে দেব।
ভাবে ভালবাসায় , সুখে দুখে, মান অভিমানে , হাসি আনন্দে বেচে থাকুক টোনা টুনির সংসার । ওনাদের জন্য শুভ কামনা ।।।
ধন্যবাদ The Reader। আপনার শুভ কামনা মাবাবাকে জানিয়ে দেব।
হা হা আমি আর একটুর জন্য পুরা বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম - আরে আমার গল্প কে লিখলো, নাকি আমি-ই লিখে ভুলে গেলাম!!? হাহাহা! ওনাদের জন্য অনেক অনেক প্রার্থনা। আপনার জন্যেও।
আপনার কথা শুনে অনেক মজা পেলাম :)। অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদেরকে আপনার প্রার্থনায় রাখার জন্য।
হুম, তবে আব্বা-আম্মার ঝগড়া-ঝাঁটি আমার কখনোই ভাল লাগে না। যত ভালবাসাই থাকুক ভেতরে। সেটা তো আর ছোটবেলায় বুঝতাম না। আর আম্মা যখন বলত, আর থাকবে না এইখানে। বলে কাপড় চোপড় গুছিয়ে চলে যেত... :'( :'( :'(। আব্বা অফিসে চলে গেলে কিছুক্ষণ পরে আবার ঠিক চলে আসত। কিন্তু আমার এসব ভাল লাগত না।
কি বলবো বুঝতে পারছিনা।তবে মন খারাপ করবেন না rajkonya, পরিনত বয়সে মা বাবারা একজন আর একজনের খুব ভালো বন্ধু হয়ে যান।আমার অসুস্থ মাকে আমার বাবাই সারাখন আগলে রাখেন, উনি যতটা করেন আমরা সন্তান হয়ে ও অতটা করে উঠতে পারিনা।আপনি ভালো থাকুন, অনেক শুভকামনা rajkonya এর জন্য।
আপনার মা বাবার জন্য বিলম্বিত শুভেচ্ছা
আপনার বিলম্বিত শুভেচ্ছার জন্য বিলম্বিত ধন্যবাদ। আসলে এইকয়দিন সচল পড়া হয়নি, তাই মন্তব্যগুলোর কোন উত্তর দেয়া হয়নি।
ওরা আরো অনেকদিন বাঁচুন এবং ঝগড়া করতে করতে বাঁচুন। সচল হতে পারলে আমার ঠাকুমা আর দাদুর গল্প শোনাবো আপনাদের। আপনাদের দেশের লোক, ময়মনসিং। আজো ভালো লাগে আম্মার সেই ডায়লগ,"কি দেখে যে তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা?"
বন্দনা, ভালো লিখেছেন, আরো ভালো লিখুন।
- অদচৌ
এই ঝগড়াতো বাঙালীর ঘর ঘর কি কাহানি।
আমরাও আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি।
ভালো থাকবেন বন্দনা।
আপনার জন্য শুভকামনা।
-----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
নতুন মন্তব্য করুন