'স্বদেশকে চেনে বলেই ওরা বিশ্বকে চিনতে পারে।' কারা? - এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি।
উত্তর: ফরাসিরা।
যদিও আমি তখনো ফরাসি আর ফার্সির পার্থক্য বুঝে উঠতে পারি নাই। কিন্তু নবম-দশম শ্রেনীর বাংলা পাঠ্যবই এ অন্নদাশঙ্কর রায়ের পারী নামক ভ্রমণ কাহিনীটি পড়ে প্যারিস ঠিকই চিনে ফেলেছি। ‘দুই হাজার বছর তার বয়স তবু চুল পাকল না’ এই লাইনটির ব্যাখ্যা মুখস্থ না করার কারণে পরীক্ষায় লাইনটির উৎস আর প্রসঙ্গ লিখেই পাঁচে এক দের কিছু একটা নম্বর পেয়ে যাবো ভেবে খুশি থাকতাম। পরীক্ষা পাশের জন্য পড়া ঐ ভ্রমণ কাহিনীটি পড়েই প্রথমবারের মত একটি বিদেশি শহর সম্বন্ধে এত কিছু জানা।
রাত জেগে পাঞ্জেরী থেকে প্রশ্ন উত্তর মুখস্থ করতাম আর কল্পনা করতাম প্যারিসে বুঝি বিশাল বিশাল চার পাঁচ লেনের রাস্তা, যেখানের একটি লেনে চলে ঘোড়ার গাড়ি অন্যান্য লেন গুলোতে বুঝি আছে ট্রাম বাস আর মানুষ! রেনেসাঁর আমলের কথাও তখন কোথায় যেন পড়ে ফেলেছি। তাই চিনে ফেলেছি দাড়িওয়ালা আঁকিয়ে ভদ্রলোক লিওনার্দো দা ভিঞ্চি কে। অবশ্য তাঁর আকা মোনালিসা দেখার চেয়ে আমার আগ্রহ ছিল সে কেমন করে অত আগে হেলিকপ্টারের মত একটা উড়ুক্কু যান ডিজাইন করে ফেলেছিল সেটা জানার। আর তাছাড়া মোনালিসার একটি বাধাই করা পোস্টার আম্মু ঘরের দেয়ালে টানিয়ে রেখেছিলো সেই পিচ্চিকাল থেকেই। সেই থেকে মোনালিসা নামের এই ভ্রু-হীন মহিলাকে আমাদের ঘরে দেখে দেখেই বড় হয়েছি। পাঞ্জেরী গাইডের ব্যাখ্যা আর বর্ণনা মূলক প্রশ্ন উত্তর মুখস্থ করতে গিয়ে বুঝে নিয়েছি, প্যারিসের লোকজন সব চিত্রশিল্পী, কবি, সাহিত্যিক আর নয়ত দার্শনিক; যারা সারাক্ষণ ক্যাফে তে বসে আড্ডা দেয়, সিগারেট ফুকে আর দার্শনিক মার্কা কথা বাত্রা বলে।
আমার এই পারী সর্বস্ব প্যারিস জ্ঞান নিয়ে এত সব কিছু কল্পনা করেছি ঠিকই কিন্তু সত্যি সত্যি প্যারিস যাবার সাধ তখনো হয়নি। আরেকটু বড় হয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির দেশে কবিতার দেশে পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো যে জায়গাটা একবার গিয়ে দেখে আসতে পারলে মন্দ হতো না। কোথায় কোথায় যাবো কি দেখবো তা আলাদা করে কখনো ভাবিনি। প্লেনে করে যেতে হবে সেটাই ছিল আমার সেই সময়ের সব চেয়ে বড় উত্তেজনা। প্লেনে চরে ঘুরে বেড়াবার শখ ছিল ছোট বেলা থেকেই। মাস্টার্স করতে সুইডেনে এসে প্লেনে উঠার সাধ মিটেছে ঠিকই কিন্তু ঘরের মায়ায় বিদেশে এসেও তেমন করে বিদেশ দেখা হয়ে উঠেনি আমার।
'মেঘের সঙ্গে নেইতো আমার আড়ি,
আকাশের মেঘ আকাশেই থাক,
তারার রাজ্যে যে যাবার যাক।
সুদূরের ডাকে আমি জোরে মাথা নাড়ি।
যে যাই বলুক, আমি বড় ঘরকুনো,
চেয়েছি নিজের জমিতে দাঁড়াতে,
মাটির গভীরে শিকড় বাড়াতে।
নভোচারী হতে চাইনি তো কক্ষনো।
বেড়াবার সখ ছিল না কি করে বলি?
তবু পা বাইরে বাড়াবার আগে,
ঘরের মায়াই চোখে মুখে লাগে,
ঘুরে ফিরে দেখি হৃদয়ের অলি গলি।'
যে বছর প্রথম সুইডেনে আসলাম তখনি একবার সস্তায় রাইয়ানিয়ার প্লেনের টিকেট কিনে ফেলেছিলাম প্যারিস যাবো বলে। কিন্তু পরমুহুর্তে প্যারিস যাবার চেয়ে একটা ল্যাপটপ কেনা বেশি জরুরী মনে হল। তাই সেবার 'লিমিটের রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে' এর চক্করে পড়ে আর যাওয়া হল না।
এবার সুইডেন থেকে ফেরার বছর চলে এলো। তাই আবার প্যারিস এর কথা মনে হল। সত্যি কথা বলতে নিজের আগ্রহের চেয়ে বন্ধুদের উৎসাহ উদ্দীপনার কারণেই যাওয়া হল এবার।
আমরা সাতজন। ৪ জন ছেলে ৩ জন মেয়ে। মেয়েদের মাঝে ২ জন আজারবাইজান বংশ উদ্ভূত সুইডিশ এবং আরেক জন ভারতের উড়িষ্যার কন্যা। সে বাংলা বলতে পারে। ছেলেদের মাঝে ২ জন ভারতীয় আর দুজন বাংলাদেশি। আমারা সবাই এখানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই প্রোগ্রামের ছাত্র ছাত্রী। তাই একে অপর কে বহুদিন থেকেই চিনি। প্রায় ছয় মাস থেকে জল্পনা কল্পনা করতে করতে শেষ পর্যন্ত এবার যাওয়া হল জগদ্বিখ্যাত প্যারিস নগরী।
নিকঃ ছাইপাঁশ
রকিবুল ইসলাম কমল
মন্তব্য
কিন্তু তারপর কী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পোস্টের নাম তো 'অবশেষে প্যারিস যাত্রা'; সুতরাং লেখা এখানেই থামার কথা। ছাইপাশ যদি কখনো 'অবশেষে প্যারিস ভ্রমণ' লেখেন তখন বাকিটা জানতে পারবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তাই বলে আমরা প্রিল্যুড শুনে বসে থাকবো? ইন্টারল্যুড নাই?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ভাই, আসলে প্রিল্যুড শুনিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কেউ ইন্টারল্যুডে আগ্রহী হয় কিনা। অন্তত একজন যখন শুনতে আগ্রহী তাই এই পোস্টটা প্রথমপাতা দেখে সরে গেলে পরের পোস্ট গুলো দেয়া যেতে পারে।
পাণ্ডব দা, পরের পোস্টের নাম দিব 'অভাজনের প্যারিস ভ্রমণ'।
----------------------
অচেনা পাখি
অস্তিত্বের দ্বৈততা
বলতে ভুলে গেছি। কবিতাটি যেন কেউ আমার লেখা বলে ভাববেন না। এটি কবি আবুল হোসেনের কাছ থেকে ধার নেয়া।
-------------------------------
এই গরমে ঘোল খান
অতি উত্তম, ‘অভাজনের প্যারিস ভ্রমন’ এর জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। আর আপনিও নিশ্চই আমাদের এইভাবে জিভের আগায় জল এনে দাড় করিয়ে রাখবেননা!
দুই / তিন দিনের মধ্যেই দিয়ে দিব।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------পুরনো ছাইপাঁশ------------
একজন ‘লেখক’ এবং বছরের প্রথম দিন!
তারপর?
আসিতেছে...
প্রিল্যুড পড়ে মন ভরল না। আসল ভ্রমণের গল্প চাই শিঘ্রি।
ওদের উচ্চারণ রায়ানএয়ার।
উচ্চারণ ঠিক করে দেবার জন্য ধন্যবাদ। কিছুদিনের মধ্যেই আরেকটি লেখা দিবো প্যারিস ভ্রমন নিয়ে।
ছবির দেশে কবিতার দেশে পড়ার পর থেকেই প্যারিশ ভ্রমন নিয়ে সব কিছু পড়তে ইচ্ছা করে। আর সব ভ্রমনকাহিনী পড়ে পড়ে বহুদূরের না-দেখা শহরটিকেও বড় আপন মনে হয়। আপনার চোখে দেখা প্যারিস এর অপেক্ষায় থাকলাম
আমার চোখে প্যারিস আপনার কতটা ভালো লাগবে জানি না। তবে আমাদের ভ্রমণটা নিয়ে আরো কিছু লেখা দিব কিছুদিনের মাঝে। চোখ রাখুন সচলায়তনের পাতায়।
ঈদের শুভেচ্ছা থাকল। গুগলে "প্যারিস ভ্রমণ " লিখে সাচ' দিয়ে এই লিঙ্ক-এ প্রবেশ করলাম। আপনার পোস্ট পড়ে ভালই লাগল। ইউরোপ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । যাচ্ছি নভেম্বারে ইনশাল্লাহ।
আর আমি পিএইচডি করছি অস্টেলিয়ার ক্যানবেরাতে। নিজের গবেষণাকম’ উপস্থাপন করতে ইতালির সরেন্টো শহরে একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে যাচ্ছি ২৩ নভেম্বার। ফিরতি ফ্লাইট প্যারিস থেকে ৮ই ডিসেম্বার । ১৫ দিনের ট্যুর। কনফারেন্সে শেষে ঘুরবার ইচ্ছে আছে সুইজারল্যান্ড, জামা’নি, ফ্রান্স, বেনেলাক্স (বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, লুক্সেম্বাগ’)। কিন্তু একটা সমস্যা হবে মনে হচ্চে-সেটা হল কোথায় কোন দশ’নীয় জায়গা আছে দেখার মতো । যদিও ইন্টারনেট ঘেটে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে কিন্তু কম খরচে কিভাবে যাওয়া যাবে সেটা জানবোবা কিভাবে? এই সব শহরে যদি পরিচিত কেউ থাকতো, তাহলে ভালই হতো। পরামশ’ দিতে পারত, বা গাইড হিসেবে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারত।
আমার এক বন্ধু আছে ইতালির ইন্টার মিলান শহরে আর একজন আছে জামা’নির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে। জুরিখ থেকে একজন সায় দিয়েছেন সুন্দর জুরিখের রুপ-লাবণ্য দেখাবেন বলে। এই তিন দেশে না হয় হলো, কিন্তু বাকিগুলোর যে কি হবে?
আপনার পরিচিত কেউ যদি হেল্প করার মত থাকলে আওয়াজ দিয়েন। ইমেইলঃ
সেলঃ +61405071491
ভাল থাকবেন- এই প্রত্যাশা।
নতুন মন্তব্য করুন