সংবিধানে বেশ অনেকখানি কাটাছেড়া আর জোড়াতালি হল আওয়ামী সরকারের ক'বছরে। ৫ম সংশোধনী বাতিল দিয়ে শুরু, আর শেষ পর্যন্ত নতুন করে ১৫তম সংশোধনী। সংবিধান কতটা সাংঘর্ষিক হল, সেই আলোচনা তো চলছেই, কিন্তু আরো একটা বিষয় আমাকে ভাবাচ্ছে। আওয়ামী লীগ কি সংবিধানে একটা ব্যাকডোর তৈরী করল? অসাংবিধানিক শক্তির আসার পথকে রুদ্ধ করল, নাকি অন্য কোন অশুভ শক্তির পথ খুলে দিল?
(অনেকটাই যদি-কিন্তুর মালা গাথা, আজাইরা ভাবার মত অলস মাথা না থাকলে মাফ করবেন প্লিজ...)
বীরবলের গল্পটা মনে আছে - সম্রাট আকবর জিজ্ঞেস করলেন দেশে সবচেয়ে বেশি কোন পেশার মানুষ। বীরবল বললেন ডাক্তার। সম্রাট অবাক হয়ে বললেন চিকিৎসার অভাবে কত লোক মারা যায়, আর তুমি বলছ ডাক্তার সবচেয়ে বেশি, পাগল হলে নাকি? বীরবলের জবাব, বিশ্বাস না হয় একবার বলেই দেখুন একটু সর্দি লেগেছে। বাংলাদেশে মনে হয় এখন এমন ডাক্তারের চেয়েও সংবিধান বিশেষজ্ঞ বেশি। রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের ঘাড়ে ধরে, গাড়ি পুড়িয়ে, হরতালে আটকে রেখে শিখিয়েছে। এই জ্ঞান নিয়েই যদি-কিন্তুর মালা গাথি, আমার মত অলস মাথার ক'জনের সাথে শেয়ার করি।
৫ম আর ৭ম সংশোধনী আদালত বাতিল করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়া সংশোধনী টিকে থাকার কথা নয়। কিন্তু আদালত এই বাতিলেই থামলেন না, ৫ম সংশোধনীর কোন কোন বিধান মার্জনা করলেন। আগের আর নতুন সংবিধানের ধারাগুলো থেকে বেছে নিয়ে সংবিধান সাজালেন। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, সংবিধানের এই সংশোধনে সংসদের প্রয়োজন হলো না। আইন মন্ত্রীও বললেন, আদালতের রায়েই সংবিধান পরিবর্তন হয়ে গেছে, শুধু নতুন করে ছাপিয়ে নিলেই হবে। তিন-চতুর্থাংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েও আওয়ামী লীগ পরিবর্তনের জন্য আদালতকেই যথেষ্ঠ মানলো। বিএনপি শুরুতে কিছুটা আপত্তি জানিয়ে তাই মেনে নিল।
এরপর আদালত ১৩তম সংশোধনীও (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) বাতিল করলেন, কিন্তু এবার সংসদকে দ্বায়িত্ব দিলেন বিকল্প বেছে নেয়ার। এর ফলেই তাড়াহুড়োয় করা ১৫তম সংশোধনী। এবার ৭২ এর মূলনীতি ফিরিয়ে আনার নামে ধর্মনিরপেক্ষতা আর রাষ্ট্রধর্মের খিচুড়ি হল। পুজিবাদি বাংলাদেশে কাজির গরু সমাজতন্ত্র কেতাবে ফিরে এলো। স্বৈরাচারি এরশাদ কেবল রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে বসিয়েছিলেন, এর আগে জিয়া বসালেন বিসমিল্লাহ। এবার অন্য আরো কিছুর সাথে এদের অপরিবর্তনীয় করে দেওয়া হল। ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার জন্যই এতকিছু, কতটা কাছে গেলাম - গোলক ধাঁধার চক্করে পড়লাম মনে হয়।
এবার আমার আশঙ্কার কথা বলি। প্রথম আলোয় মিজানুর রহমান খান লিখেছেন এই ১৫তম সংশোধনীও চ্যালেন্জ করার মত। এখন ভাবুন পরবর্তী কোন সরকারের আমলে কেউ এসে এটাকে চ্যালেন্জ করে বসলো। আমাদের প্রধান বিচারপতি সরকারই নিয়োগ দেন, আর আদালতের উপর সরকারের প্রভাব তো ওপেন সিক্রেট। তাহলে সরকার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াই স্রেফ আদালতকে ব্যবহার করেই এটাকে বাতিল করে দিতে পারবে। শুধু তাই নয়, বেছে বেছে নিজেদের পছন্দমত সংবিধানকে সাজিয়ে নিতে পারবে। আবার যদি এই সংশোধনী টিকে থাকে, আর সংবিধানে এমন অপরিবর্তনীয় বিধান রাখাই যায়, যাকে আদালতও চ্যালেন্জ করতে পারে না তাহলে আল্লাহই জানেন আমাদের পরবর্তী সরকারগুলো সংবিধানে আরও কত অপরিবর্তনীয় বিধান ঢোকাবে। একটা তো বলাই যায়, জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষনা।
সংবিধান কি অনেকটা টালমাটাল হয়ে গেলো না?
-আতিক
atiq dot atiq_atiq dot yahoo dot com
মন্তব্য
হু... মনে হচ্ছে স্কুলের ইতিহাস বইয়ের মতো সংবিধানও প্রতি মেয়াদে বদলে যাবে... বিপদ বিপদ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সংবিধানের হার্ড কপি না ছাপিয়ে সফট কপি রাখলেই হয়, ছাপাছাপি ঝামেলা।
চম্ৎকার এনালাইসিস। আপনার আশংকার ভিত্তি আছে। এজন্যই হয়তো বিএনপি'র এক নেতা বলেছেন ক্ষমতায় গেলে তারা এই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেবেন। বিচার বিভাগের ঘাড়ের উপর সওয়ার হয়ে কার্যসিদ্ধির এই প্রবণতা ভয়ংকর!
এম আব্দুল্লাহ
আতিক,
সাহস করে লেখাটা দেবার জন্যে ধন্যবাদ। আসলে বাংলাদেশের জন্যে ছাপানো সংবিধানের কি বিশেষ তেমন প্রয়োজন আছে? এখনিতো ভালই চলছে...
বিলেতেরও ছাপানো সংবিধান নেই - দেশ কি চলছে না? আর আমাদের সুপ্রিম কোর্টতো আছেই - যেখানে ব্যক্তি-স্বাধীনতার চাইতেও সুপ্রিম কোর্টের 'সম্মান' বেশী বড়। [সুপ্রিম কোর্টের সম্মান কি এতই ঠুনকো যে কোন সভাতে খোলামনে কোন প্রশ্ন তুললে তার সম্মান ক্ষুন্ন হয়ে যায়?] সাংবিধানিক যে কোন প্রশ্ন মনে আসলেই আমরা যে কোন ঘরোয়া বৈঠকে প্রশ্ন তুলবো আর যদি দেখি তাতে আমাদের কোন শাস্তি হয়নি তবে বুঝবো প্রশ্নটি সঠিক।
কোথায় যাচ্ছি আমরা? - দেশ স্বাধীন হবার ৪০ বছর পরেও এই সব আলোচনা করতে হচ্ছে...
সাইফ শহীদ
নতুন মন্তব্য করুন