আগের লেখাটি না পড়লেও ক্ষতি নেই। পড়া থাকলে লেখার মেজাজটা ধরতে সুবিধা হবে। তাই লিঙ্কটি শুরুতেই দিয়ে নিলামঃ অবশেষে প্যারিস যাত্রা
ফ্রান্স বুঝি তাদের কাছেই সব চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় যারা মনে প্রাণে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক। যে কারণে সুনীল বলেছেন, প্রত্যেক শিল্পীর দুটি মাতৃভূমি। একটি যেখানে সে জন্মেছে, অন্যটি হল ফ্রান্স। কিন্তু আমার মত অভাজনের মাতৃভূমি একটাই। তাই পৃথিবীর যেখানে যাই সে জায়গার সাথে আমার মাতৃভূমির কোন একটি জায়গার মিল খুঁজতে শুরু করি। এবং শেষ পর্যন্ত কিছু একটা মিল পেয়েও যাই। যেমন, প্যারিসে নেমেই মনে হল এখানকার গাছের পাতা আর ঘাসের রং গুলো সুইডেনের মত নয়, বাংলাদেশের মত। এখানকার জাললি কবুতর গুলো দেখতেও ঠিক আমার দাদা বাড়ির টিনের চালে বসে থাকা জালালি কবুতর গুলো মতই। সে যাই হোক, মিল খুঁজতে নয়; মূলত সবার মুখে প্যারিসের নানান গল্প গুজব শুনেই শুনেই আমার এখানে ঘুরতে আসার আগ্রহ সৃষ্টি আর বন্ধুদের উৎসাহ উদ্দীপনায় অবশেষে যাত্রা সম্ভবপর হয়েছে। আমার এই প্যারিস নিয়ে দেয়া পোস্ট গুলোতে প্যারিস যেতে আগ্রহী কেউ পড়ে হয়তো প্র্যাকটিকাল কিছু বিষয় জেনে উপকৃত হতে পারেন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানের জবরদস্ত শৈল্পিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ব্যাপার গুলো হয়তো অধরাই থেকে যাবে।
প্যারিস যাবার ৬ মাস আগে থেকেই চলছে আমাদের ছাড়া ছাড়া পরিকল্পনা। ৩ দিনে কিভাবে প্যারিসের সব গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে ফেলা যায় আর কিভাবে সবচেয়ে কম খরচে কিন্তু ভালোভাবে প্যারিসের থাকাকালীন সময়টা পার করা যায় সেটাই ছিল মূলত পরিকল্পনার বিষয়। ফাঁকিবাজ বলে আমি বাদে আমদের গ্রুপের বাকি ছয় জন কাজ ভাগ করে নিয়েছিলো। যেমন, কাউকে দেয়া হল হোটেল ব্যবস্থা করার দায়িত্ব, কেউ ট্রান্সপোর্ট, কেউ খাওয়া দাওয়া, কেউ দর্শনীয় স্থান। সবাই রীতিমত যার যার ভাগ করে নেয়া বিষয় গুলোর উপর গবেষণা শুরু করে দিলো। আমাদের গ্রুপের সাতজনের মাঝে এলনাজ নামের মেয়েটি তো ১৪ পৃষ্ঠার ছোটখাটো একটা 'মাস্টার্স থিসিস পেপার' তৈরি করে ফেলল প্যারিসের দর্শনীয় জায়গা গুলোর উপর! যার যার গবেষণা আপডেট জানাবার জন্য কিছুদিন পর পর বিশেষ মিটিং এর ডাক দেয়া হত। হোয়াইট বোর্ডে মার্কার দিয়ে চার্ট করে ফিগার-মানচিত্র একে একেক জন তার গবেষণা লব্ধ সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গুলোর সুবিধা অসুবিধার কথা জানাত আর বাকি সবাই মিলে আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করা হতো আমরা কোনটি বেছে নেবো আমাদের ট্যুরের জন্য। এরকম একটা মিটিং এ হঠাৎ কেউ ঢুকে পরলে ভাববে আমরা বুঝি প্যারিসে কোন বিশেষ ইনটেলিজেন্ট অপারেশনে নামছি!
স্বাভাবিক ভাবেই প্যারিস পৌঁছাবার আগে থেকেই ইন্টারনেটে আমাদের প্যারিস ভ্রমণ শুরু হয়ে গেলো। আর সত্যি সত্যি ঘুরে আসার পর তো মনে হচ্ছে, কোন একটা ট্যুরিজম কোম্পানি খুলে ছোট খাটো প্যারিস ট্যুর গুলোর কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ করতে পারবো।
সুইডেন থেকে যাচ্ছি। তাই প্রথম যে বিষয়টা কোন রকম আলোচনা না করেই ঠিক করে ফেলা যায় সেটা হচ্ছে, আমরা যাচ্ছি রায়ানএয়ারে। রায়ানএয়ার খুব সম্ভবত ইউরোপের সবচেয়ে সস্তা ফ্লাইট। যাবার তারিখটা অনেকদিন আগে ঠিক করে ফেলতে পারলে কল্পনাতীত সস্তায় প্লেনের টিকেট পাওয়া সম্ভব। (কখনো কখনো শূন্য টাকায়!)। মোটামুটি দামের টিকেট পাওয়ায় আমাদের মধ্য থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত সদস্য মইয়ুর এবং মিরাজ আগেভাগেই টিকেট কিনে ফেললো সবার জন্য।
প্রতিটি সুবিধারই কিছু অসুবিধা থাকে। এই প্লেনে যাবার প্রধান অসুবিধা হচ্ছে দুটি। এক প্লেন গুলো বেশির ভাগ সময় ল্যান্ড করে মুল শহর থেকে বেশ দূরের রিজিওনাল এয়ারপোর্ট গুলোতে। সেখান থেকে ইউরো খরচ করে গন্তব্যে পৌঁছানোও একটা হ্যাপা। দুই নম্বর সমস্যা হচ্ছে, ব্যাগের ওজন। কাঁধের ব্যাগে সর্বোচ্চ ১০ কেজি। আর ওদের ১০ কেজি মানে ১০ কেজিই। একটুও বেশি নয়। ব্যাগের আয়তনেরও নির্দিষ্ট মাপ আছে। ওদের কাছে সেই মাপের একটি খোপ বানানো আছে, সেখানে ব্যাগ ঢুকিয়ে দেখাতে হবে যে মাপ ঠিক আছে। নইলে ব্যাগ ফেলে যেতে হবে।
রায়ানএয়ারে ভ্রমণের বেলায় আনুষঙ্গিক যে বিষয় গুলো মনে রাখা উচিত। কোন ধরনের তরল পদার্থ বহন করা যাবে না। স্নো, পাউডার টুথ পেস্ট, লৌশান, ক্রিম সব ১০০ মিলি কৌটার মধ্যে করে নিতে হবে। ১০০ মিলির বড় হলে সেটা চেক ইন করার সময়ই রেখে যেতে হবে। প্লেনে কোন খাবার দাবার দেয়া হয় না। সিট নাম্বারের কোন বালাই নেই। তাই আগে ভাগে উঠে গ্রুপ ধরে যেখানে খুশি বসে পরলেই হল।
আমরা খোজ খবর করে এই সব নিয়ম কানুন জেনে বোর্ডিং পাস প্রিন্ট করে ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি। এখন ভাবনার বিষয় হচ্ছে থাকবো কোথায়?
পরিচিত কেউ যদি পাওয়া যায় তাহলে নতুন যায়গায় ঘুরে বেড়ানোটাও সহজ হয়ে যায় আবার থাকার খরচটাও বেশ খানিকটা বেচে যায়। কোন আত্মীয় সজন পেলাম না থাকার মত। একা গেলে কাউচসার্ফিং এ চেষ্টা করে দেখা যেত। কিন্তু আমাদের সাত জনের এত বড় দলকে কে থাকতে দিবে? তাই এখানে চেষ্টা করাই বৃথা সময় নষ্ট।
স্বল্প খরচে থাকার উপায়ের মধ্যে আছে ইয়ুথ হোস্টেল, রেন্টেড এপার্টমেন্ট আর রেসিডনশিয়াল হোটেল। ইয়ুথ হোস্টেলের দুরবস্থা, নোংরা পরিবেশ আর বিশেষ করে ছারপোকার অত্যাচারের কথা শুনে ভয়ে সেদিকে গেলাম না। বাকি রইলো রেন্টেড এপার্টমেন্ট। কিন্তু ভ্রমণসঙ্গী মেয়ে সদস্যদের সন্দেহ বাতিক মন হোটেলের চেয়ে কিছুটা কম খরচ স্বত্বেও এপার্টমেন্ট ভারা করে থাকায় সায় দিলো না। তাই শেষ পর্যন্ত হোটেলই বুকিং করতে হল।
হোটেলস ডট কম থেকে ১০টি হোটেল নিয়ে নির্বাচন শুরু হল। শেষ পর্যন্ত গার্ডেন হোটেল নামক হোটেলটি তার লোকেশন আর কম ভারার কারণে বুকিং করা হল। দুটি রুম ঠিক করা হল। চার জন ছেলের জন্য একটি রুম দিতে তারা রাজি হওয়াতে একেকজনের ভাগে ভারাটাও কম পড়লো। আর মেয়ে তিন জন শেয়ার করবে আরেকটি রুম। ইন্টারনেটে হোটেলটির লে আউটে দেখতে পাচ্ছিলাম সামনে একটি বাগান। তাই আমরা অনুরোধ করে তিনতালার রুম দিতে বললাম যেন বাগান আর প্যারিসের সুবাস নিয়ে আশা বাতাস কোন বাধা ছাড়া সরাসরি আমাদের হোটেল রুমের জানালা দিয়ে ঢুকে আমাদের চোখে মুখে শৈল্পিক ফরাসি পরশ রেখে যেতে পারে। কিন্তু তখন আমরা কেউই বুঝতে পারিনি সেই হোটেলে তিন তালায় ওয়াই ফাই সংযোগ পাওয়া যাবে না শুধু মাত্র উঁচুতে থাকার কারণে! যাই হোক হোটেলটি মেট্রো স্টেশনের খুব কাছা কাছি হওয়ায় যোগাযোগে খুব সুবিধা হয়েছে। এখানে বলে রাখা ভালো রুম বুকিং এর সময় দামা দামি করার অভ্যাস ততটা কাজে না লাগলেও গ্রুপ ধরে গেলে একই রুমে এক্সট্রা বেডের ব্যবস্থা করে বেশি মানুষ থেকে ভারাটা কাস্টোমাইজ করে নেয়া যেতে পারে।
ঘর থেকে রওনা হলাম রাত ৩টায়। প্রথমে সেন্ট্রামে যেতে হবে তার পর সেখান থেকে স্টকহোম স্কাভাস্তা এয়ারপোর্টে। ফ্লাইট ভোর ছয়টায়। ছোট্ট বিমান অনেকটা পাখির মত পাখা ঝাপটাতে ঝাপটাতে আকাশে উড়াল দিল। আমরা সংখ্যায় বিজোড় বলে আমি আলাদা পরে গেলাম। জানালার পাশে বসেছিলাম বলে সময়টা ভালোই কেটে গেলো। মেঘের উপর দিয়ে যাবার সময় ছোট বেলায় দেখা কেয়ার বেয়ার কার্টুনটার কথা মনে পড়ছিল।
বোভেই (Beauvais) এয়ারপোর্টে নামার জন্য মেঘ ভেঙ্গে যখন প্লেনটি নিচে নামছিল তখন থেকেই পাখির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি প্যারিসের দিকে। অনেক বড় একটি শহর যার বুকের মধ্য দিয়ে বয়ে চলছে সিন নদী। বাতাসে বেশ কয়েকটি চক্কর দিয়ে নামলো এই পাখি-প্লেন, পা রাখলাম অর্ধেক নগরী অর্ধেক কল্পনার শহরে। ছোট্র এই রিজিওনাল বিমানবন্দর থেকে বাসে করে রাস্তার দু'ধার দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম ৮৫ কিলোমিটার দুরের প্যারিস মুল শহরের দিকে। আমারা দল বেধে সামনের সীট গুলোতে বসেছি। বাসটা দেখতে ঠিক ঢাকা-সিলেটের এনপি পরিবাহনের মত। শহরে ঢোকা মাত্র ড্রাইভার আমাদের বিভিন্ন টুরিস্ট স্পট গুলো আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে লাগলো আর ফ্রেঞ্চ ভাষায় অনেক কিছু বলার চেষ্টা করলো। প্রথমবারের মত তখন বুঝতে পারলাম ফ্রান্সে এসে পরেছি। রাস্তা থেকেই আইফেল টাওয়ারের চুড়া দেখা যাচ্ছিলো। ড্রাইভার সেদিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেই বাসের সবাই সেটা দেখার জন্য জানালায় হুমড়ি খেয়ে পড়লো। আমি জানালা দিয়ে তাকাতেই আমার মাইয়োপিয়া আক্রান্ত চোখে প্রথমেই পড়লো মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য বসানো আইফেল টাওয়ারের মত একটা বিশাল থাম্বা। সত্যি কথা বলতে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য আমি সত্যিই ভাবছিলাম এটাই বুঝি আসল আইফেল টাওয়ার! কিছুক্ষণ এদিক সেদিক খোজা খুঁজি করার পর অবশ্য দূর থকে বিশাল আইফেল টাওয়ারটা আমার চোখে ধরা দিলো।
আমরা বাস থেকে নামলাম। আমাদের গবেষণা লব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আমারা আগেই নিশ্চিত জানি প্যারিসের বিভিন্ন জোনের উপর ভিত্তি করে চার পাঁচ রকম ট্রান্সপোর্ট টিকেটের মধ্যে কারনেট নামক টিকিটই আমাদের জন্য সাশ্রয়ী। আমারা সরাসরি মেট্রো ধরার জন্য আন্ডার গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে গেলাম। এবং কাউন্টারে টিকেটের জন্য লাইন ধরেই বুঝতে পারলাম, এদেশে ইংলিশ চলে না। কাউন্টারের মহিলা একটি শব্দও ইংলিশ জানে না। আমাদের সাথে আগেই ম্যাপ নিয়ে এসেছি। যে ম্যাপে মেট্রো রুট গুলো আকা আছে। সেটা দেখে টিকেট কিনে সঠিক স্টেশনে পৌঁছলাম। কিন্তু হোটেল খুঁজে বের করতে হোটেলের চার পাশের রাস্তা দিয়ে বেশ কয়েকবার চক্কর দিতে হয়েছে। হোটেলে পৌঁছে দেখতে পেলাম আমাদের রুমে গাদাগাদি করে চারটি বেড পাতা। মেয়েদের রুমে তিনটি।
আমারা ফ্রেশ হয়ে খাবারের খোজে বের হলাম। টার্কিশ একটা হোটেলে তিতির পাখির মাংস দিয়ে ঠাসা একটা বিশাল আকৃতির স্যান্ডউইচ খেলাম। সাথে ছিল ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। ফ্রান্সে বসে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাবার সময় একটি অকারণ ভালোলাগায় মনটা খুশি হয়ে গেলো!
সেখান থেকে সরাসরি মেট্রোতে করে চলে এলাম প্যারিসের মতিঝিল, লা দিফেন্সে। এখানে দেখার আছে আকাশ ছোঁয়া বড় বড় অফিস-আদালত আর শাপলা চত্বরের বদলে আছে আর্ক দ্য লা দিফ্যান্স (arche de la Defense)। এটি একটি বিশাল মনুমেন্ট। প্রায় ঘনক আকৃতির বিশাল একটি দালান যার মধ্যেখানটা ফাকা। এই ঘনক আকৃতির মাঝে একটি বিশেষত্ব আছে। সেটি হচ্ছে, দৈত্যাকার এই দালানটি আমাদের এই ত্রিমাত্রিক জগতে একটি চতুর্মাত্রিক কিউবের মডেল! (?) জটিল জ্যামিতির চেয়ে এর বিশালত্বই আমাকে মুগ্ধ করেছে।
এটি এতই বিশাল যে শুনেছি এটার মাঝখানের ফাকা দিয়ে চাইলে একটি বিমান সুন্দর মত যাওয়া আশা করতে পারে। শিল্পী খুব সম্ভবত এটিকে দুইশ’ বছর আগের আর্ক দ্য টিয়ম্ফ (Arc de Triomphe) এর আধুনিক ভার্শন বানাতে চেয়েছেন। পুরনো গানের যেমন আধুনিক রিমেকে হয় এটা হচ্ছে মনুমেন্টের রিমেক। দুটোই বিজয়ের প্রতীক। পুরনোটা সামরিক বিজয় আর নতুনটা হিউমেনিটির বিজয়। পুরনোটি এই জায়গাটা থেকে সরল লেখা বরাবর প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে আমাদের দিকে মুখ করে অবস্থিত। মেট্রোতে না গিয়ে আমরা হেটে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম, কারণ ততে এই শহরের নাম না জানা আরও অনেক কিছু দেখার সুযোগ হবে। ও, আরেকটি জিনিশের কথা বলতে ভুলে গেছি। আর্ক দ্য লা দিফ্যান্স এর পাশে আছে চমৎকার একটি বিশাল একটি বৃদ্ধাঙ্গুলির ভাস্কর্য। ক্ষুদ্র আমার সামনে এটি বিশাল হলেও পাশের এই আকাশ ছোঁয়া দালানটির কাছে কি তার বিশালত্ব ধরা পরে? তবুও পর্যটকরা নিখুঁত এই ধাতব আঙ্গুলটা হেটে এসে ছুঁয়ে দেখছে। এটা কি তাহলে তার থেকে দশ গুন বড় এই বিশাল চতুর্মাত্রিক জ্যামিতিক ভজঘট কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে? এই ভাস্কর্যটি সম্বদ্ধে আসলে আমার কিছুই জানা নাই। কারণ দর্শনীয় স্থানের লিস্ট তৈরির দায়িত্ব প্রাপ্ত এলনাজ তার গবেষণা পত্রে এটা সম্বন্ধে কিছুই উল্লেখ করে নাই। তাই আমরা নিজেরা একটা নাম দিয়ে দিলাম; থাম্বজিলা (গডজিলার অনুকরণে)। যাই হোক হাটতে হাটতে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে এক সময় আমরা আর্ক দ্য টিয়ম্ফে এসে পৌঁছলাম। এই মনুমেন্টটা অনেকটা ইন্ডিয়া গেইটের মত দেখতে। পার্থক্য হচ্ছে, ইতিহাস, দেয়ালের অসাধারণ কারুকার্, আর আয়তনে। বিভিন্ন দিক থেকে ছুটে আসা ১২টি বড় বড় রাস্তার ঠিক মিলনস্থানে মনুমেন্টটির অবস্থান। এটি সম্রাট নেপোলিয়নের আমলে বানানো একটি গেইট। দেয়ালের গায়ে খোদাই করা কত শত যোদ্ধা, আর ঘোড়ার আকৃতি মিলিয়ে যুদ্ধের নকশা আকা দেয়াল।
আমি যেদিনের কথা বলছি সেদিন ছিল ১৪ই জুলাই। রাস্তা পার হয়ে আর্কের কাছে যেতেই বুঝলাম আজ ফ্রান্সের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন। শত শত মেলিটারি ক্যাডেট প্যারেড শেষ করেছে মাত্র। বেশ কয়েক জন বয়স্ক, (খুব সম্ভবত) অবসর প্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের দেখলাম হুইল চেয়ারে করে আসতে। তাদের কয়েকজনের আবার পা নেই, কারো হাত নেই! তারাও মেলিটারি পোশাকে বুকে দশ বারটা ব্যাজ লাগিয়ে ব্যাটারি চালিত হুইল চেয়ারে বসে বিপুল বিক্রমে প্যারেডে অংশ গ্রহণ করেছে। পরে জানতে পেরেছি, সেদিন ছিল বাস্তিল ডে মেলিটারি প্যারেড। প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে প্রতি বছর এই দিনে এখান থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্যারেড শুরু হয়।
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেটে এসে আমরা সবাই তখন ভয়ানক ক্লান্ত। তারপরও দমবার পাত্র নই আমরা কেউই। রাস্তার পাশের দোকান থেকে জুস আর শুকনো খাবার কিনে খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করে নিলাম। এবার সেখান থেকে রওনা হলাম পৃথিবীর সব চেয়ে পরিচিত মনুমেন্ট, আইফেল দেখতে। এবার আরও দুই কিলোমিটার হাটা পথ।
ক্লান্ত পায়ে হাটছি। আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠা বেশি ক্লান্ত হয়ে জুতা খুলে ফেলেছে।
আমার হঠাৎ একদিন আমাদের পারার কবি মুনির ভাই এর সাথে মহাখালী থেকে হেটে শাহবাগ আসার কথা মনে পড়ছে। আমরা দল বেধে হাঁটছি, আর কানে বাজছে...,
জানো কি
কতোটা ক্লান্ত হলে পেছনের পথ পেছনেই পড়ে থাকে
জানো কি কী করে স্বদেশ হারায়
কীভাবেই আমি কীভাবেই তুমি পরবাসী।
আমি জানি সেই পথ দূর, ঠিকানা খুঁজে আর লাভ কি!
ছাইপাঁশ
লেখা এবং হাটা দুটোই চলবে...
মন্তব্য
বাকি ছবি গেলো কই!?
যেটা আছে সেটাও তো ঠিক জায়গায় নাই! মডারেশনের সাহায্য প্রার্থী।
নিশ্চয়ই সামনে আরো কিছু আছে কারন ভ্রমন সম্পর্কিত প্রসতুতির উপরই আপনার লেখাটি ছিলো। সেটাও দারুন লেগেছে আপনার দলগত প্রচেষ্টার কথা জেনে। কিন্তু ভাই, প্যারিস এর উপর, প্যারিস নিয়ে লিখুন। কি দেখলেন, কি খেলেন, স্যান্ডউইচ না, ফরাসী কি খেলেন, কি কি ফরাসি জানলেন - এইসব। অপেক্ষায় থাকলাম, শুভেচ্ছা ,
ভাই প্যারিস নিয়েই তো লিখছি। দুটি দর্শনীয় স্থান ঘোরা কিন্তু এই পর্বে শেষ।
ফরাসি তেমন কিছুই শিখি নাই। এক মসিয়ে মানে বোধহয় মিস্টার।
ফরাসি কিছুই খাই নাই। তবে ফ্রান্সে খুব জনপ্রিয় স্পেনের একটা খাবার খেয়েছিলাম। :-/
মুন চায় ফেরিচ যাব!
নিশ্চই যাবেন একদিন।
অর্ধেক প্যারিস ঘুরে নিলাম! বাকিটুকু পড়ে গোটা প্যারিস ঘুরে নেয়া যাবে ছবি দেবার অনুরোধ থাকলো পরের পোষ্টে।
এই পোস্টেই আরও দুটি ছবি দিয়েছিলাম। কিন্তু ছবি গুলো কেন যেন এলো না।
যতবারই ছবি দিতে যাই কোন একটা সমস্যা হয়। প্রিভিউতেও ক্রস আশে, ছবি দেখা যায় না। এটা কি শুধু আমার বেলাতেই হচ্ছে নাকি অন্যরাও ফেইস করছে বুঝতে পারছি না।
যাই হোক এখানে একটি ছবি দেয়ার চেষ্টা করে দেখি।
বুঝতেই পারছেন এটি 'থাম্বজিলা'র ছবি।
দেখেন এই খানেও ছবি আসে নাই! বিরক্ত লাগে কিনা বলেন?
ভাল লাগছে, সিরিজ চলুক।
তরল পদার্থ, ১০০ মিলি এই নিয়মগুলো সব বিমানবন্দরেই মোটামুটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড হয়ে গেছে, এটার মধ্যে এয়ারলাইন্স-দের নিজস্ব নিয়ম তেমন থাকে না।
রায়ানএয়ার যেহেতু দূরের দূরের এয়ারপোর্টগুলোয় নিয়ে যায়, সেখান থেকে শহরে আসতেই কিন্তু অনেকটা সময় এবং টাকা খরচা হয়ে যায়। অনেক ছোট এয়ারপোর্টে ভালো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থাকেই না, ট্যাক্সিই একমাত্র উপায়। অথবা শাটল বাসেই ১৫-২০ টাকা ভাড়া। আর এক-দুদিনের জন্য বেড়াতে গিয়ে যদি ট্রান্সপোর্টেই ঘন্টাখানেক খোয়াতে হয়, তাহলে সেটাও কিন্তু ভালোই লস, কারণ বেড়াবার সময় বেশ খানিকটা কমে গেল।
প্যারিস একটা বিশাল জায়গা, আর আপনারা তিন দিন ধরে ঘুরেছেন যখন, সিরিজ ভালই লম্বা হবে আশা করি।
ছবি ঠিকঠাক মত দিতে না পারার কারনে লেখার ইচ্ছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বেশ, আমিও হাটছি আপনাদের সাথে সাথে ............
ধন্যবাদ। আরও অন্তত দুটি পর্ব লাগবে হয়তো শেষ করতে।
আপনাকে স্বাগতম আমাদের ভ্রমনে।
বাহ। খুব ভালো।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ।
গন্ধে অর্ধভোজন যেমন তেমনি আপনার লেখা পড়ে প্যরিস অর্ধভ্রমণ করে নিচ্ছি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।
ধন্যবাদ শান্তিপ্রিয়। আপনাদের মন্তব্যে উৎসাহ পাচ্ছি।
নামটা লা দেফন্স। জায়গাটা প্যারিসের প্রধান বানিজ্যিক এলাকা, অনেকটা মতিঝিলের মত। প্যারিসের সুউচ্চ ও আধুনিক আর্কিটেকচারের সমাহার এখানে। বাকি প্যারিসে পুরোনো আর্কিটেকচার খুব সচেতন ভাবে ধরে রাখা হয়েছে। ঘুরতে এসেও আপনি কি চমৎকার বর্ননা লিখে ফেললেন অথচ আমি প্রতিদিন মেট্রোর ভিড়ভাট্টা ঠেলে এই এলাকা পার হই কিন্তু আপনার মত করে দেখা হয় না। আপনার বর্ননায় প্যারিস দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
ওদের উচ্চারণটা ধরতে পারি না। কোথাও থেকে যে দেখে নেব সেরকম কিছুই পাচ্ছি না। তাই কাছা কাছি কিছু একটা লিখে চালিয়ে দিচ্ছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
নতুন মন্তব্য করুন