কনোকো ফিলিপসের সাথে চুক্তি-- স্বার্থের পেছনের স্বার্থ
ভেবেছিলাম পাশ কাটিয়ে যাবো, কোন কিছুই লিখবো না। কিন্তু সচলে লেখা প্রকাশের লোভেই হোক আর নিজের ভেতরের ভাবনাগুলো অন্যের সাথে শেয়ার করার তাগিদেই হোক কিছু একটা লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।
ইতিমধ্যেই কনকোফিলিপসের সাথে বাংলাদেশের করা চুক্তি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়ে গিয়েছে। নতুন করে বলার তেমন কিছু নেই। তারপরও মনে হলো কোথায় যেন একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে মূল বিষয়টাকে আমাদের নজরের বাইরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক.................
বর্তমান চুক্তি মোতাবেক কস্ট রিকভারির ৫৫% গ্যাস বাদ দিয়ে বাকী ৪৫% গ্যাসের মধ্যে বাংলাদেশ ৫৫-৮০% পাবে এবং সেটাও নির্ভর করছে বিভিন্ন শর্তের উপর, যেমন উৎপাদন পর্যায়ে খরচ বেড়ে গেলে বাংলাদেশের অংশ কমে যাবে। আর রপ্তানীর ব্যাপারে যা বলা হচ্ছে তা হলো চুক্তি মোতাবেক পেট্রোবাংলা গ্যাস কিনতে অসমর্থ হলেই কেবল কোম্পানী গ্যাস এলএনজিতে রুপান্তর করে রপ্তানী করতে পারবে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতুর লেখাটা বেশ যুক্তিযুক্ত। বিডি নিউজ ২৪.কম পত্রিকার ৩ জুলাই তারিখে প্রকাশ। http://opinion.bdnews24.com/bangla/2011/07/02/%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%B8-%E0%A6%86%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A7%8D/
বিগত সময়গুলোতে যতবারই অন্যান্য কোম্পানীর সাথে গ্যাস উত্তোলনের ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে ততবারই সরকার গ্যাস রপ্তানী করে দেবে বলে তুমুল হৈচৈ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে (আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই) কোন সরকারই গ্যাস রপ্তানী করতে পারেনি। সেটা যতটা না রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধীতার কারনে তার চেয়ে বেশী সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত প্রতিরোধের কারণে। তাই এবারের চুক্তির ক্ষেত্রেও আমার মনে হচ্ছে সরকার আসলে গ্যাস রপ্তানী করতে পারবে না। উল্টো দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে সরকার হয়তো অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গ্যাস কিনে রাখতে বাধ্য হবে। কারণ দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে যে পরিমান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন তার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের বিকল্প নেই। আর দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা না মেটাতে পারলে ক্ষমতায় থাকা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কাজেই সরকার নিজের স্বার্থে হলেও গ্যাস রপ্তানী থেকে বিরত থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।
এবারের চুক্তির যে বিষয়গুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশী আলোচনা হচ্ছে তা হলো (মোটা দাগে)-
1) পি এস সি-০৮ এর দূর্বলতা।
2) গ্যাস রপ্তানী করে দেয়া।
3) অন্য কাউকে না দিয়ে নিজেদেরই অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজটা সম্পাদন করা।
বাংলদেশের নিজেদের পক্ষে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো অর্থের যোগান। কারণ এত বড় একটা কাজ হাতে নেয়ার পর যদি গ্যাস পাওয়া না যায় তবে যে পরিমান অর্থ ব্যয় হবে তা পুষিয়ে নেবার মত আর্থিক সঙ্গতি এদেশের নেই। প্রাথমিক ব্যয় মেটানোর জন্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহনের কথা বলেছেন। এই ঋণ নিয়ে সরকার যদি অনুসন্ধাণ চালায় এবং পরিশেষে গ্যাস না পায় তবে ঋণ মেটাতে গিয়ে দেশের অর্থনীতি আরও হুমকীর মুখে পড়বে বলে আমার মনে হয়। তাই অভ্যন্তরীন উৎস থেকে ঋণ গ্রহন কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা আলোচনার দাবী রাখে।
অন্যদিকে উন্নত প্রযুক্তি ভাড়া নেয়ার মাধ্যমেও অনুসন্ধাণ ও উত্তোলন কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। যেটা আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান বিপি সাধারণত করে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রেও গ্যাস পাওয়া না পাওয়া একটা বড় ভূমিকা পালন করবে প্রযুক্তি ভাড়া নেয়াটা আদৌ লাভজনক হবে কিনা। কাজেই আমি ধরে নিচ্ছি প্রযুক্তি ভাড়া বা নিজেদের প্রযুক্তির ব্যবহার কোনটার মাধ্যমেই এ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব না।
এক্ষেত্রে তাই তৃতীয় কোন পক্ষকে অনুসন্ধাণ ও উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ, যেটা বর্তমান সরকার করেছে।
তবে এই চুক্তি নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং বুদ্ধিজীবি মহলের এত বিরোধীতা কেন!!! কারণ চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারের দূর্বলতা কিংবা দেশের স্বার্থকে খাটো করে দেখে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া। চুক্তির বিষয়গুলো একটু ভালো করে খেয়াল করলেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে আমাদের স্বার্থ যথেষ্ট সংরক্ষিত হয়নি। এক্ষেত্রে ব্যর্থতা সরকারের আর সফলতা কনোকো ফিলিপসের।
আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা মূলত এখানেই.......
চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকার কেন ব্যর্থতার পরিচয় দিলো সেটা ক্ষতিয়ে দেখতে গেলে আমার মনে হয় আর্ন্তজাতিক রাজনীতির চাপকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাব যথেষ্ট প্রবল। বড় দুটি রাজনৈতিক দলই যথেষ্ট মার্কিন লবি রক্ষা করে চলে ক্ষমতায় আরোহনের জন্যে। আর তাই নিজেদের এবং মার্কিনীদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিতে কোন রাজনৈতিক দলেরই বিবেকে বাধেঁ না। আর বর্তমান সরকার যে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া সেটা তার বর্তমান কার্যক্রম এবং সংবিধান সংশোধনের ধরন খেয়াল করলেই যথেষ্ট স্পষ্ট হয়ে উঠে। সেইসাথে গ্যাস চুক্তির মাধ্যমে যদি মার্কিনীদের আশ্বাস পায় তবে তো পোয়াবারো!!! এক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ তাদের কাছে কোন গুরুত্বই বহন করে না।
অপরপক্ষে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের দেশের আমলা, মন্ত্রীরা যথেষ্ট দূর্নীতিগ্রস্থ। তারাও অনেক সময় নিজেদের আখের গোছানোর জন্য দেশের স্বর্থবিরোধী চুক্তি করতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে। অতীতে তার প্রমাণ বাংলাদেশের জনগণ পেয়েছে।
পরিশেষে থাকল আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবি মহল যাদের মধ্যেও অনেক ধারা বিদ্যমান। এদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আই এম এফ এর মত আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। আর দেশের স্বার্থবিরোধী কোন বিষয় নিয়ে যখন দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে তখন এই মানুষগুলো মূল বিষয়কে পাশ কাটিয়ে অপেক্ষাকৃত দূর্বল বিষয়কে পুজিঁ করে আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে দেখা যায় কদিন পরেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়েছে এবং তারাও চুপচাপ। কারণ ততদিনে তাদের পকেট ভারী হয়ে যায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যা হয় তা হলো----
‘‘ আসল ঘরে মশাল নেই
ঢেকি ঘরে চাদোঁয়া”।। নিয়ে আমাদের ব্যস্ত করে তোলা হয়।
কাজেই যতদিন পর্যন্ত দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা এবং পারস্পরিক হানাহানি ভুলে অধিকারবোধের জায়গা থেকে চুক্তি সম্পাদন করা না হবে ততদিন পর্যন্ত কোন কিছুতেই কিছু হবে না। উল্টো বিদেশীরা আমাদের দূর্বলতা আর হানাহানির সুযোগ নিয়ে আমাদের সম্পদ লুটে নিয়ে যাবে আর দিনশেষে আমরা ওদের তাবেঁদারে পরিণত হব।
অর্ক রায় চৌধুরী
ভাই লিংক ্এ্যাড করতে পারলাম না। কিভাবে করে কেউ বলবেন কি!!
মন্তব্য
হুমমম
হুমমম
আমার সহজ উপলবদ্ধি, সরকার প্রতিবছর ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ভুর্তুকি দিচ্ছে শেভরনকে আর মাত্র কয়েকশো কোটি টাকা বাপেক্স কে দিতে পারে না!!!!!!
পারে। কিন্তু তাতে করে শেভরন যতগুলো লোকের উদরপূর্তি করতে পারে, বাপেক্র তা পারে না।
নতুন মন্তব্য করুন