সেভেন সেভেন স্মরণে
এম আব্দুল্লাহ
৭ জুলাই ২০০৫। অন্যান্য দিনের মতো সকাল ৫ টার শীফটে কাজ শুরূ করেছি। ২৫ নং বাস ধরে স্টেপনি গ্রীণ থেকে সোজা ব্যাংক স্টেশনে এসেছি। লণ্ডন আল্ডারগ্রাউণ্ডের কর্মব্যস্ততা শুরু হতে তখনো দেরী আছে। তখনো জানিনা কি গজব নেমে আসছে লণ্ডন ট্রান্সপোর্টের উপর।
টেসকো মনুমেন্টে আমার কাজ হচ্ছে রেপ্লিসমেন্টে (Replenishment)। ৯৩০ এর দিকে কাজ শেষে যখন বাসে করে ফিরছি, তখন দেখলাম একজন মহিলা তটস্থভাবে বাসের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্ট করছে। বাস ড্রাইভার মনে হল কিছুটা বিব্রত! লণ্ডণ শহরে পথচারীরা সাধারণত: নির্দিষ্ট জায়গা দিয়েই রাস্তা পার হয়। সকালেই এরকম ঘটনায় ড্রাইভার কিছুটা হতচকিত হলেও তখনো আসল ঘটনা আচ করা যায়নি।
অলগেইটে বাস পৌছালে পুলিশ এবং ফায়ার বিগ্রেডের আলগা একটা তৎপরতা চোখে পড়ল। কিছু লোক জটলা পাকিয়ে দাড়িয়ে আছে অলগেইট ইস্ট স্টেশনের সামনে বিভিন্ন কোণায়। সুয়েদ ভাইয়ের কাছ থেকে মোবাইলে কল পাওয়ার পরই কেবল জানতে পারলাম যে লণ্ডন আণ্ডারগ্রাউণ্ড এবং লণ্ডন বাসে বোমা হামলা হয়েছে।
মাস্টার্স স্টিটের বাসায় ফেরার বিবিসি ওয়ানে ঘটনার ছবি দেখে শিউরে উঠলাম। মনে পড়ে গেল টি এস ইলিয়টের লেখা ওয়েস্টট লেণ্ড (The Waste Land) কবিতার দু’টি চরণ:
Shall I at least set my lands in order?
London Bridge is falling down falling down falling down
ইলিয়ট কল্পনা করেছিনে লণ্ডন ব্রীজের ভেঙ্গে পড়ার, কিন্তু ছবি দেখে মনে হচ্ছে পুরো লণ্ডন ভেঙ্গে পড়ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে বাবার ফোন এসেছে। তাকে জানিয়ে দিলাম যে আমি নিরাপদেই বাড়ি ফিরতে পেরেছি। তবে ঐদিন সকালে যারা কাজে বেরিয়েছিল, তাদের অনেকেই সেদিন বাড়ি ফিরতে পারেনি। ৭/৭ এর সন্ত্রাসী হামলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে এখনো অনেক লণ্ডনার।
এম আব্দুল্লাহ
মন্তব্য
"সন্ত্রাসের ছায়া, গ্রহণের মতো ক্রমাগত গ্রাস করে চলেছে বিশ্বের প্রতিটি
প্রান্ত। শ্রীনগর, এবোটাবাদ, করাচি, কাবুল, নিউইয়র্ক, লন্ডন কিংবা
বোম্বে। পৃথিবীর তাবৎ শহরগুলোর কোনটির নাম বাদ দিবেন। শহরগুলোই একেক
অঞ্চলের প্রতিক। সাধারণ মানুষরাইতো সন্ত্রসের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
এর থেকে মুক্তির উপায় কী? বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কি ক্রমাগতই তাদের ব্যার্থতার
স্বাক্ষর রেখে যাবেন? আপনি ২০০৫ এর স্মৃতিচারণ করেছেন। এর পরে আরো কত শত
ঘটনা ঘটে গেছে সমগ্র পৃথিবীতে যার প্রধান শিকার হয়েছে নিরীহ মানুষ। আমরা
কী করতে পারি? আসুন আমরা আমাদের শেষ ভরসা পরম বরুনাময়ের নিকট প্রার্থনা
করি..."
এনায়েত
ঘটনার অহ্যহতি পরেই সন্ত্রাস-বিরোধী পুলিশ সন্দেহবশত: এক ব্রাজিলিয়ান যুবককে যার নাম জিন চার্লস ডি মেনেজ (Jean Charles de Menezes) গুলি করে হত্যা করে যা পুরো লণ্ডন জুড়ে টেরর পুলিশের তৎপরতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
এটা সত্য যে সাধারণ মানুষরাই সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশী।
ধন্যবাদ আপনাকে পড়া এবং মন্তব্যের জন্য।
এম আব্দুল্লাহ
আমার বৃদ্ধা নানু ওইদিন অল্পের জন্যে বেঁচে গিয়েছিলেন।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনার নানু সৌভাগ্যবানদের একজন। তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।
৩০ নাম্বার বাসে করে হেকনী থেকে আমরা কাজিনরা মিলে কতবার সেন্ট্রাল লণ্ডনের দিকে ঘুরতে গিয়েছি। সেই বাসটিও বোমা হামলার শিকার হয়..
আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
এম আব্দুল্লাহ
নতুন মন্তব্য করুন