আমি নারী বলেই আমার বাবা আমাকে আদর করে মা-মণি বলে ডাকে আর আমার সন্তানও মা বলে জড়িয়ে ধরে পরম মমতায় আর নির্ভরতায়।নারী বলেই আমি হতে পারি কারো ভালোবাসার প্রিয় মানুষ, কারো জীবন সঙ্গিনী ।নারী বলেই আমার রক্তে মাংসে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে আমারই অংশ,আমার সন্তান আর আমি হই রতœগর্ভা ।আবার আমি নারী বলেই যৌতুকের দাবী মিটাতে না পেরে ভালোবাসার মানুষের হাতে আমাকে হতে হয় নির্যাতিত ।নারী বলেই আমার নিষ্পাপ মুখখানা ভালোবাসার ক্রোধের আগুনে ঝলসে যায় বারেবার আর আমি হই এসিডদগ্ধা ।নারী বলেই পথে ঘাটে লাঞ্ছনার স্বীকার হয়েও মাথা নীচু করে ঘরে ফিরতে হয় কোন প্রতিবাদ ছাড়াই ।নারী বলেই আমার নামের সাথে যোগ হয় বীরাঙ্গনা,নির্যাতিতা,ধর্ষিতা ।আর নারী বলেই আমাকে ব্রোথেলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় ।সভ্য সমাজের দেয়াল আমাকে আটকে রাখে ঐ নিষিদ্ধ চার দেয়ালে সমাজকে কলুষমুক্ত রাখতে ।আর একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন আবদ্ধ চার দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে বাজে আমার কানে প্রতিনিয়ত ।
আমি কি অবরোধবাসিনী ? চার দেয়ালে কি আমার জীবনটা আজও আটকে আছে ? না।চার দেয়ালে আজ আর আমার জীবন আটকে নেই ।কিভাবে থাকবে ? এই আধুনিক যুগে আমি পড়াশোনা করছি,চাকরি করছি,নিজের ইচ্ছেমতো বাইরে বের হতে পারছি ।তবুও আমি আজ অবরোধবাসিনী,সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অবরোধবাসিনী ।মাঝে মাঝে মনে হয়,আগের যুগটাই হয়তো ভালো ছিল । কারণ কোন অন্যায় জেনে বুঝে সহ্য করার চেয়ে না বুঝে সহ্য করা ঢের ভালো।তবে আশার কথা -এখন যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে সব অন্যায়েরও বেশ পরিবর্তন এবং পরিমার্জন হয়েছে । ঠিক তেমনি যৌতুকের স্টাইলেরও পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর আগের মতো টাকা পয়সা কিংবা গয়নাগাটি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি হয়না । কারণ এখন মেয়ের বাবা মায়েরা এসব ছোট খাটো বিষয়গুলো নিয়ে আর মাথা ঘামায় না । তারা চায় যেকোন মূল্যে তাদের মেয়ের সুখী দাম্পত্য জীবন । তার জন্যে তো মেয়েকে সাজিয়ে দেয়া মানে গয়নাগাটি আর তাদের বাসার আসবাবপত্র আরও পারলে মেয়ের জামাইয়ের একাউন্টে বেশ মোটা অংকের টাকা ,এসব তো মামুলি ব্যাপার । এক্ষেত্রে কিন্তু ছেলে এবং ছেলের পরিবার নির্দোষ । কারণ তারাতো নিজ থেকে কিছু চাইছে না ।আর তাছাড়া কেউ যদি খুশী হয়ে এসব দিতে চায় তখন তো না করাটা অশোভন বিশেষ করে শিক্ষিত মার্জিত, ভদ্রলোকদের জন্যে ।এটা কিন্তু মধ্যবিত্তদের চিত্র,উচ্চবিত্তদের কথা নাই বা বললাম ।আর নিম্নবিত্তদের ঘটনাগুলো খুব সহজেই অনুমেয় কারণ একটা রিক্সা অথবা ভ্যানগাড়ি ছাড়াতো ওদের বিয়েই হয় না।এতো গেল যৌতুক পর্ব সরি এটাকে বরং উপঢৌকন বলাই ভালো কারণ সুশিক্ষিত আর স্বশিক্ষিত সমাজ বলে কথা ।
আর বিয়ে পর্ব সেতো আরও ভয়াবহ।আমি আজ পর্যন্ত এমন কোন ছেলেকে দেখিনি যে ভাবে তার বউ সুন্দরী হবেনা। আর ছেলের বাবা-মা নিজের গঙ্গারাম টাইপের ছেলের জন্যেও সুন্দরী মেয়ের খোঁজে চারদিক চষে বেড়ান।এযেন বাজারে কচুশাক কিনতে যাবার মতো অবস্থা।যে শাকটা বেশি সতেজ,সবুজ সেই শাকটাই কিনবে কিন্তু কেউ জানতে চাইবে না এটা কি শিব মন্দিরের পাশে জন্মেছে না-কি মসজিদের পাশে জন্মেছে না-কি নোংরা নর্দমার পাশে জন্মেছে।এখানে গুনগত মানের চেয়ে বাইরের চাকচিক্যেরই প্রাধান্য বেশি।বাস্তবিক অর্থে আমাদের মেয়েদের চেহারার গুরুত্ব অনেকটা কচুশাকের মতো।অথচ মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে মাতামাতি করার কিছুই নেই ।একজন মানুষ দেখতে সুন্দর এটা তার ক্রেডিট নয় ,সে ভালোমানুষ,তার ভালো কিছু গুণাবলী রয়েছে এটা তার ক্রেডিট । কারণ চেহারাটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কিন্তু সে ভালো মানুষ আর তার গুণাবলী তার নিজের অর্জন ।আমাদের উচিত মানুষের নিজের অর্জনটাকে মূল্যায়ন করা কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমরা এখনো তা করি না।আমাদের এই দোদোল্যমান মনটা চাকচিক্যের প্রতি বড় বেশি দুর্বল ।
আর কোন কারণে যদি কোন মেয়ের ডিভোর্স হয়ে যায় তাহলে তো আর কথাই নেই ।আমরা এখনো ভাবি, সংসার টিকিয়ে রাখার মহান দায়িত্ব যেমন মেয়েদের উপর ন্যাস্ত,ঠিক তেমনি সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য দায়ীও মেয়েরা।আর ডিভোর্সী মেয়েদের দিকে আমরা এমন ভাবে তাকাই যেন তারা ভিন্ন গ্রহের প্রাণী,তাদের কানের দুপাশে খয়েরী রংয়ের দুটি শিং গজিয়েছে আর গায়ের রংটা যেন কটকটা হলুদ।এমন কিম্ভুতকিমাকার চেহারা নিয়ে যে বের হবে তার তো মাথা হেট হবে তা জানা কথা ।তাইতো তারা মাথাটা একটু হেট হয়েই থাকে ।ডিভোর্সী মেয়েদের আবার বিয়ে ! - এটা চিন্তা করাও অনেক কঠিন কাজ অথচ একটা ডিভোর্সী ছেলে ঠিকই আরেকটা অবিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে ।তখন কিন্তু ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষ একসাথে হয়ে পান চিবাতে চিবাতে আগের বউয়ের কুৎসা রটনায় মশগুল থাকে। নতুন যে মেয়েটা বিয়ে করতে যাচ্ছে সেও কিন্তু এক্ষেত্রে কম যায় না, মনে মনে আগের বউটার চৌদ্ধগোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে তারই ব্যবহূত গয়নাগুলো গায়ে জড়ায়।
আর স্বামীর চেয়ে যদি স্ত্রীর যোগ্যতা বেশি থাকে তাহলে তো আরেক যন্ত্রনা ।অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর যোগ্যতা বেশি তখন তো স্ত্রীরা এরকম করেনা বরং তারা এটা নিয়ে গর্ববোধ করে ।তবে ছেলেরা কেন তা পারে না ?এখানে ভালোবাসা এবং পারষ্পরিক বোঝাপড়ার চেয়েও কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় নারী এবং পুরুষের বিভেদ ?ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের একটা বিষয় খুব ভালোভাবে শিখানো হয়,তা হলো - ‘মেনে নাও ,মানিয়ে নাও’। যে মেয়ের মেনে নেয়ার এবং মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা যত বেশি সংসারে তথা জীবনে সে তত সুখী।কিন্তু এটাকে কি সুখ বলে ? না-কি এটা যেকোন মূল্যে নিজের সংসার নামক জিনিসটাকে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা।এই চেষ্টাটা মেয়েরা করে কখনো নিজের নামের আগে ডিভোর্সী শব্দটার সংযোজনের ভয়ে কখনো আবার নিজের সন্তানদের ব্রোকের ফ্যামিলির ছেলেমেয়ে না করার ভয়ে।আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি এই বৃথা চেষ্টাটা কি তারা সামাজিকতার ভয়ে করে না এর পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে ।হয়তো কখনো ভাবিনি ।
ছোট বেলায় এক আতœীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম ।হঠাৎ দেখলাম ছেলে বুড়ো সবাই পাশের বাড়ির দিকে দৌড়াচ্ছে।হুজুগে বাঙালি ব্যাপরটাতো রক্তে মিশে আছেই তাই আমিও ওদের পিছন পিছন ছুটলাম বৃথা সময় নষ্ট না করে।ভেবেছিলাম খুব মজার কিছু ঘটেছে তা না হলে সবাই এতো আগ্রহ নিয়ে যাচ্ছে কেন?অনেকের কাছে হয়তো ব্যাপারটা বেশ মজার ছিল।আমার খুব খারাপ লাগছিল যখন দেখলাম একজন মহিলাকে,তাকে মহিলা না বলে মেয়ে বলাই ভাল কারণ তার বয়স বড়জোর ১৭-১৮ ,তাকে বেদম প্রহার করছিল তার স্বামী ।আর সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে ছিল ।সেদিনের সেই মেয়েটার অপরাধ ছিল তার শরীরটা খারাপ ছিল বলে ঠিক সময়ে রান্না করতে পারেনি ।আমি আরও অবাক হয়েছিলাম ঘন্টা দুয়েক পর ঐ বাড়িতে গিয়ে যখন দেখলাম ঐ মেয়েটা তার স্বামীর জন্য রান্না করছে ।এটা প্রায় ১৬-১৭ বছর আগের ঘটনা।
মাস ছয়েক আগে আমি পরিচিত এক আপুর বাসায় গিয়েছিলাম,স্কুলের বড় আপু,খুব ভালো বিতার্কিক ছিলেন।এখন ভাল একটা চাকরী করেন।অনেক বছর পর দেখা স্বভাবতই আমার খূব ভালো লাগছিল ।আপুকে একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে দেখে আমি বললাম,ব্যথা পেয়েছ না-কি?
প্রশ্নটা শুনে আপু কিছু বলার আগেই তার ছেলেটা বলল,কি হয়েছ জানো...
তবে মায়ের কড়া চোখের চাহনি উপেক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব হলো না ।তাই বাক্যটা অসমাপ্তই রয়ে গেল।
আপু বলল,আর বলিস না ,বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম ।কথাটা বলে আপু মৃদু হাসল।আমি আর কিছু বললাম না সেই যুক্তিখন্ডনে পারদর্শী বিতার্কিককে শুধু হাসিটুকু ফিরিয়ে দিলাম।
অল্পকিছুদিন আগে হাসপাতালে ডিউটি করছি ।হঠাৎ এক রোগী নিয়ে ১০-১২ জনের একটা গ্র“প এসে উপস্থিত।তাদের আচার আচরণটা বাদে আর বাকি সবই ছিল উচ্চবিত্তদের মতো ।কি সমস্যা জিজ্ঞেস করায় মহিলার স্বামী বলল,বাথরুমে পড়ে গিয়েছিল।মহিলাটি নিশ্চুপ।আমি যখন মহিলাকে প্রশ্নটা আবার জিজ্ঞেস করলাম তখনও তার স্বামী আগের বাক্যটাই উচ্চারণ করল এবং তার স্ত্রী নিশ্চুপ ।
সত্যিই আমাদের মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তদের বাথরুমগুলো কোন এক বিচিত্র কারণে শ্যাওলা ধরে থাকে যার ফলে খুব পিচ্ছিল হয় ।আর সেই পিচ্ছিল বাথরুমে কেন জানি ঐ বাড়ির বৌয়েরাই আছাড় খায় মা কিংবা মেয়েরা নয়। মোজাইক করা কিংবা টাইল্স বসানো বাথরুমে শ্যাওলা ধরাটা কি অসঙ্গতিপূর্ণ নয় ?
ছোটবেলায় কোথাও বেড়াতে গেলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কিছু সূচিকর্ম চোখে পড়ত যদিও এখন তা বিলুপ্তির পথে ।আমার কথা সেটা না ।আমি এখানে বিলুপ্তপ্রায় শিল্পকে বাঁচানোর কথা বলছি না । আমি বলছি বিলুপ্তপ্রায় নারী সত্তাকে জাগিয়ে তোলার কথা ।যারা মাঝেমাঝেই ভুলে যায় তাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ।যারা ভুলে যায় কারো স্ত্রী কারো মা এর আড়ালেও তার সম্পূর্ণ নিজের একটা পরিচয় আছে । একটা মেয়ে হোক সে যোগ্যতাসম্পন্ন কিংবা গন্ডমূর্খ সবাই শুধু একটা আশ্রয় খুঁজে।আর এই আশ্রয়ের জায়গাটুকু টিকিয়ে রাখতেই নিজের আতœসম্মান টুকুও বিসর্জন দিতে তারা দ্বিধাবোধ করেনা।তবু কি তারা তা করতে পারে সবসময় ?যা বলছিলাম সেখানে বড় করে একটা কথা লেখা থাকতো ‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে’ এই লাইনটার নিচে ছোট করে আরেকটা লাইন ছিল ‘গুণবান পতি যদি থাকে তার সনে ’ ।আজ ১৭-১৮ বছর পরও সূচিকর্ম বিলুপ্তির দিকে ক্রমশ ধাবিত হলেও আমাদের মনের গহীনে সেই সূচিকর্মের আগের লাইনটাই খুব গভীর ভাবে গেঁথে আছে । কষ্ট হয় এই ভেবে মেয়েরা আজও অধিকার বঞ্চিত । আর যদি তাই না হতো তাহলে আজও কেন তাদেরকে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নামতে হয় ? কেন নারী অধিকার,নারী আন্দোলন নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বক্তৃতা দিতে হয়,সেমিনার করতে হয় ? এটা কী মেয়েদের সম্মান করা না-কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যে তোমরা এখনো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওনি এখনো মেয়েই রয়ে গেছো?
আমার কথা শুনে অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন আমি পুরুষ বিদ্বেষী। কিন্তু আমি তা কিভাবে হব! যার রক্ত আমার শরীরে,যার ভালোবাসা আমাকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখে ,আমার বাবা তিনি তো একজন পুরুষ ।আর আমার ভাই সেও তো পুরুষ । আবার আমাকে সংসার করতে হবে যার সাথে সেও হবে একজন পুরুষ।আমি তাদেরকে যথেষ্ঠ সম্মান করি।কারণ নারী এবং পুরুষ পরষ্পরের সম্পূরক ।কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় যত কৃতিত্ব সব পুরুষের আর যত ব্যর্থতা সব নারীর ।কারো ছেলেমেয়ে যখন খুব ভালো কিছু করে তখন সে হয় বাবার ছেলে কিংবা মেয়ে আর যদি খারাপ কিছু করে তখন সব দায়ভার তার মাকে নিতে হয় ।কিন্তু কেন?
নারী স্বাধীনতা বলতে আমি এই বুঝাচ্ছি না যে তাদেরকে অশালীন পোশাক পড়তে হবে,নাইট ক্লাবে যেতে হবে,আধুনিক যুগের মেয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্যে কমপক্ষে দুই ডজন প্রেম করতে হবে কিংবা উশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে হবে অথবা ছেলেদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অগ্রসর হতে হবে অথবা ধর্মীয়মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে হবে।নারী স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি চিন্তার স্বাধীনতা,ব্যক্তি স্বাধীনতা,স্বাধীনতার অপব্যবহার নয়।ছোটখাটো পোশাক পড়া আর দুইচারটা বাংলিশ কথাবার্তা বললেই কেউ স্মার্ট হয়ে যায় না ।স্মার্ট হতে গেলে আগে নিজেদের চিন্তাধারাকে স্মার্ট করতে হবে।
সমাজে এবং সংসারে টিকে থাকতে গেলে প্রতিটি মানুষেরই কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয় সেটা ছেলে বা মেয়ে হিসেবে নয় মানুষ হিসেবে।আমার খুব ভালো লাগে যখন দেখি,মায়ের প্রতি খুব দায়িত্বশীল ছেলেমেয়ে, গভীর মমতা আর উৎকণ্ঠা নিয়ে বোনের জন্য অপেক্ষা করা কোন ভাই কিংবা কর্তব্যপরায়ণ কোন স্বামী । নারী এবং পুরুষ কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয় । তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় তারা উভয়েই মানুষ এবং সৃষ্টির সেরা জীব । তবে সৃষ্টির সূচনা থেকেই নারীদের সীমাবদ্ধতা ছিল,আজও আছে এবং কিছুটা সীমাবদ্ধতা নারীদের থাকবে এটা আমিও স্বীকার করি । তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদেরও উচিত নিজেদের চিন্তাধারা এবং নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। যার যার জায়গা থেকে মেয়েদের সম্মান করা ।আর বাথরুমগুলোর পিচ্ছিলতা কমিয়ে ফেলা।এটা কমবে যেদিন অন্যের বাড়ির বাথরুমে নিজের বোন-মেয়ে পিছলে পড়বে সেদিন।আমি এমন একটা দিনের স্বপ্ন দেখি যেদিন থেকে সবাই মেয়েদেরকে মেয়ে হিসেবে মূল্যায়ণ না করে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ণ করবে।যেদিনের পর থেকে মেয়েদেরকে আর প্ল্যা-কার্ড হাতে রাস্তায় নামতে হবে না।আমার স্বপ্ন দেখাটা কি বোকামি না কি আবেগপ্রবণতা ? উত্তরটা আমি জানতে চাই আপনাদের সবার কাছ থেকে ।
- শামীমা রীমা
ইণ্টার্ণ চিকিৎসক,ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ।
মন্তব্য
আপনার উন্মুক্ত মন সব অবরোধ ছাড়িয়ে মেঘমুক্ত আকাশে উড়–ক সাবলীল উল্লাসে! দ্রোহটা ধরে রাখবেন! শুভেচ্ছা,
আমার মতো প্রতিটি মেয়ের প্রতিই আপনার এই শুভকামনা থাকুক ।ধন্যবাদ ।
শামীমা রিমা
আইচ্ছা, একটা কথা জিগাই, একটা মেয়ে কি চায় না যে তার জামাই পা্যট্রিক রা্যফটার আর শাকিব খানের হাইব্রীড হইবো? খালি পোলারাই কি এই শ্রেষ্ঠ বেয়াদবী চিন্তাটা মাথায় নিয়া ঘোরে? আমি এই প্রশ্নের জবাব জানি না, তাই জিগাইলাম আর কি।
-মেফিস্টো
প্রথমে আপনার প্রশ্নের উত্তরঃ
মেয়েদেরকে মেয়ে হিসেবে মূল্যায়ণ না করে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ণ করা হবে এই স্বপ্ন দেখাটা আবেগপ্রবণতা নয়।
১) প্রতিটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাই একটা যুদ্ধ। এবং সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ছেলে না মেয়ে তাতে কিছু যায় আসে না। ওই যুদ্ধ যদি লড়তে না পারেন, তাহলে সারা জীবন অনের দয়ায় তাদের নিচেই থেকে যেতে হবে। সেটা শিক্ষাক্ষেত্রে হোক আর প্রফেশনাল ক্ষেত্রেই হোক, সব ক্ষেত্রেই সম্মুখ যুদ্ধটা করতেই হবে, যদি উঠতে চান।
দুঃখিত, আপনার এই "ছেলেদের সাথে সম্মুখযুদ্ধ" লাইনটা আমার কাছে পুরোপুরি ডিসক্রিমিনেটিং মনে হলো। এটার অর্থটা যদি হয়ে থাকে মেয়েদের কেবল মেয়েদের সাথেই প্রতিযোগিতা করতে হবে, তাহলে পুরো পোস্টটারই আর কোন অর্থ থাকে না। যুদ্ধের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা দল যদি করেন, তাহলে অবশ্যই একটা দল আরেকটার উপরে যাবে।
২) অনৈতিক কাজ কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু অনৈতিক কাজ করতে হলেই ধর্মকে বুড়ো আঙুল দেখাতে হবে এটা যেমন ঠিক নয়, তেমনই ধর্মকে বুড়ো আঙুল দেখালেই সব অনৈতিক হয়ে যাবে এমনও নয়। ধর্ম নিজেই প্রচুর অনৈতিকতাকে সমর্থন করে। আবার অন্যদিকে, অবরোধবাসিনী যদি না হতে চান তাহলে ধর্মের বাছা বাছা কয়েকখানা বিধানকে বুড়ো আঙুল দেখানো ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই।
আপনার পোস্টের শেষ থেকে দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফটা ভালো লাগলো না। পোস্টের মূল কথা যেদিকে যায়, এই প্যারাগ্রাফের কিছু বক্তব্য সেগুলোর পুরো উলটো লাগলো।
মূল্যায়ন বানানটা ভুল করার জন্য দুঃখিত, কপি করতে গিয়ে হয়ে গেছে।
নারীর প্রতি মানসিক ও শারীরিক সহিংসতা, নির্যাতন বন্ধ হোক। এ ধরনের যে কোন ঘটনায় ব্লগ, সোশ্যাল নে্টওয়ার্কগুলোকে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হোক।
সচলে স্বাগতম
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আমরাও ঠিক তাই চাই।ধন্যবাদ ।
শামীমা রিমা
আবেগী হলেনই বা, আপনি খুব ভালো কিছু পয়েন্ট তুলে এনেছেন।
আবেগ কারো কাছে হয়তো মূল্যহীন আবার কারো কাছে অমূল্য।তাইতো এই লেখাটা ।প্রতিটি মেয়েই এই বিষয়গুলো উপলব্ধি করে কিন্তু সাহস করে বলে না ।ধন্যবাদ আপনাকে ।
লেখাটা ভালো লেগেছে। সচলায়তনে স্বাগতম, লিখতে থাকুন। মন উজাড় করে লিখবেন, ডিপ্লোম্যাটিক লেখার দরকার নেই। আর সমালোচনাগুলো ভালো করে লক্ষ্য করবেন, দেখবেন লেখার মান আরও উন্নত হবে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমি নারী বলেই দেশের খ্যাতনামা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী হওয়ার পরও আত্মীয় স্বজনদের আমার বাবা- মাকে বলতে শুনি------লেখাপড়াতো অনেক হল এবার মেয়ের বিয়ে দাও। মেয়ের বিয়ে দিলে তার জামাই তোমাদেরও অভিবাবক(!!!!!!!!!!) হবে। আমার বাবা- মা পড়াশুনা শিখিয়ে আমাকে এত বড় করলেন, তাহলে তাদের অভিবাবকত্ব করার জন্য আমার জামাইকেই প্রয়োজন হবে কেন? আমি কি তাদের দেখাশুনা করতে পারব না?
উত্তর খুঁজে বেড়াই.........পাই না। হয়ত আমি নারী বলেই এর উত্তর জানা নিষেধ।
দীপাবলি।
দীপাবলি আপা, পাশ করতেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালইয় থেকে তাহলে বুঝতেন চাকরী বাকরী, বাসায় টাকা দেয়া আর বাবা মাকে দেখাশোনা করা কি মজার জিনিস!! আপনারা বাস করতেছেন একটা ফ্যান্টাসীর মধ্যে। ১০,০০০ টাকা বেতনের চাকরীর জন্য যখন বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে ঝুলে অফিসে যাই, ব্যাগের মধ্যে থাকে টিফিন ক্যারিয়ারে করে আনা রুটি আর ভাজি। তখন মনে হয় আমি পরাধীন থাকতে চাই, আমি ভাত চাই!! স্বাধীনতার গুল্লি মারি। আমার যাপিত জীবন একদিন যাপন করুন, স্বাধীনতার ভুত মাথা থেকে চলে যাবে।
তাহলে পরাধীন হয়ে যান, কে বাধা দিচ্ছে?
আমার যা বলার তার বেশীরভাগই অনীয়’দা (পছন্দ) বলে দিয়েছে।
শুধূ এটুকু বলতে চাই, সময় লাগবে। আর আপনি বা আমরা যে পরিবর্তনগুলোর কথা ভাবি তার জন্যে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আনাটা জরুরী, তা না হলে সমাজ বদলাবে না।
সচলে স্বাগতম, যদিও আমার নিজেরই বেইল নাই
জনাব অপছন্দনীয়,ধর্মীয়মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাকে আমি আলাদা ভাবে বুঝাতে চেয়েছি ।আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি শুধু আমরা ছেলেরা কিংবা মেয়েরাই করি তাহলে মনে হয় এই লেখাটা পোস্ট করার কোন দরকার ছিল না ।আসুন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা হলেও পরিবর্তন করি ।
শামীমা রিমা
দুঃখিত, আপনার লেখাটা পড়ে আমি এটা বুঝিনি যে আপনি স্পেশালাইজড ছেলে-ছেলে বা মেয়ে-মেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বোঝাচ্ছেন না এবং এটাও মনে হচ্ছিলো যে ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ এবং অনৈতিকতাকে আপনি সমার্থক বলছেন। আপনার দৃষ্টিভঙ্গী বা আপনি দৃষ্টিভঙ্গীর ঠিক কোন পরিবর্তন চাচ্ছেন সেটা এখনো আমার কাছে পরিষ্কার নয়।
আপনাকে অনুরোধ করছি ভবিষ্যতে এই ধরনের সিরিয়াস লেখা লেখার পরে পোস্ট করার আগে দয়া করে একটু পড়ে দেখুন যে কোন বাক্য একাধিক অর্থ বা ভুল অর্থ বোঝায় কিনা। সেক্ষেত্রে পাঠকের একটু সুবিধা হবে।
সত্যি বলতে কি, ওই শেষ থেকে দ্বিতীয় প্যারায় এসে মনে হচ্ছিলো পুরো ব্যাপারটাই তথাকথিত ইসলামিক ফেমিনিজম জাতীয় কিছু একটা। সম অধিকার চাই কিন্তু ধর্ম ঠিক, ধর্মগ্রন্থ ঠিক, শরীয়া ঠিক, ইসলাম ইজ গ্রেট - এ ধরনের কথা আসলে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা ছাড়া আর কিছুই নয়।
নিছক গদ বাঁধা বস্তা পচা অত্যন্ত সস্তা সিনেমাটিক ডায়ালগে ভরা লিখা। কিছু প্রশ্ন?
১) কেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার মেয়েটি একটি সাধারন ডিগ্রী পাশ ছেলের সাথে প্রেম করতে শুনি না? বিয়ে তো বহুত দূরের কথা। কেন শিক্ষিত মেয়েরা তাদের থেকে উচ্চতর যোগ্যতার ছেলে খুঁজে বেড়ায়।
২) ছেলেরা সুন্দরী মেয়ে খুঁজে। আর কোন মেয়ের স্বপ্ন তার স্বামী হবে জাস্ট ৫ ফুট লম্বা, কিংবা জামাই ১০ হাজার টাক বেতন পায়?
৩) ছেলেদের যৌতুকের কথা বল্লেন্ ডিভোর্স হওয়ার পর ঠিকই কিন্তু ভরন পোষণের খরচ দিতে হয়, যে কারনেই ডিভোর্স হোক না কেন? কোন শিক্ষিত মেয়ে বলে যে আমি ওই টাকা নিব না।
৪) ঘরে ঘরে কি শ্বাশুড়ি, ননদ দ্বারা বঊরা নির্যাতিত হয় না? সেই নির্যাতনের হিসাব তো পত্রিকায় আসে না। কয়টা বউ বলতে পারবে "আমার শ্বাশুড়ির সাথে আমার খুউউউউউউউউউউউউউউউব ভাল সম্পর্ক!
৫) আমাদের সমাজে পুরুষ্রা স্বাধীন। বিয়ের পর ছেলে মাকে টাকা পাঠাতে পারে না, আশে পাশের ভাবীদের সাথে স্ট্যাটাস মেইন্টেনের জন্য প্রানান্তকর পরিশ্রম করতে হয়!! সেসব কি? শ্যলিকার ওড়নার দামের সমপরিমান টাকা ও মা বাবা ভাই বোন্দের জন্য বরাদ্দ থাকে না। এগুলা কি নির্যাত্ন না।
৬) ভিকারুন্নিসায় একটা মেয়ে নির্যাতিত হল, কিছু বলছে খালেদা, হাসিনা, সাজিয়া,মতিয়া,দিপুমনি?! কি বলে যাচ্ছে মুন্নি সাহা, হোসনে আরা? এরা যদি ছেলে হত আপনার লিখায় আরেকটা প্যারা ই যোগ হত শুধু।
যত দোষ নন্দঘোষ হিসেবে না দেখে, চোখ থেকে ঠুলি খুলুন
বাইরের দুনিয়াতে পরিমলে ভরা সন্দেহ নাই, আপনার পাশের জন যে হোসনে আরা না সেইটা একটু চেক করে নিয়েন।তারপর আন্দোলনে নামেন।
১) তার কারণ, পুরুষতান্ত্রিকতা শুধুমাত্র পুরুষদের বৈশিষ্ট্য নয়, এটা সমাজের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। নারীরাও এর বাইরে নন। মননশীলতার পরিবর্তন প্রয়োজন সবার ক্ষেত্রে, শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে নয়।
২) মেয়েদের স্বপ্ন ওরকম থাকে না হয়তো, কিন্তু সুদর্শন হতেই হবে এরকম চরম রেসিস্ট পণও তাদেরকে করতে দেখিনি আমি। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, কিন্তু সাধারণভাবে যেমন রেসিস্ট পুরুষরা (সবাই নন) এবং তাদের স্লেভ-মার্কেট-কাস্টমার গ্রেডের বাবা মা (সবাই নন) পাত্রী খুঁজতে গিয়ে সুন্দরী নয় বা ফর্সা নয় এই দোষে কাউকে রিজেক্ট করেন সেভাবে পাত্রের ক্ষেত্রে করা হয় না।
৩) ডিভোর্সের পরে ভরণ পোষণের খরচ এবং বিয়ের সময় মোহরানা নামে একটা নোংরা প্রথা দুটোই তুলে দেয়া উচিত। তার বদলে নিয়ম হওয়া উচিত যে ডিভোর্সের সময় যদি কোন সন্তান থাকে, তার ভরণপোষণ দুইজনেরই করতে হবে।
৪) হয়, তবে সংখ্যা বেশি না।
৫) বিয়ের পরে মাকে টাকা পাঠানো যদি ছেলের অধিকার হয়ে থাকে, তাহলে মাকে টাকা পাঠানো মেয়েরও অধিকার। কয়জন পুরুষকে দেখেছেন স্ত্রীর আয়ে হাত দেয় না?
৬) পুরুষ বা মহিলা যা-ই হোক, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ নিজের স্বার্থ হাসিল ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে কথা বলবে আশা করেন আপনি?
সহমত।
aj prothom aslam ekhane. rima apu and onno jara montobbo korechen tx a lot onk kichu sikhlam. kintu akta kotha bolte chai. je ghorer bou ra bathroom slip kheye poren!!!!!!!!!. se ghoreo akjn ma achen jini akjon nari. tini ki paren na. slip kheye pora ta thamate. je barir bathroom e slip kheye porche akjon bodhu. se ghorer korta bakti ti akjon purush. jar nijer o hoito ba akti meye ache. sei meyeo akdin amon akti ghore jabe. tini ki chaiben tar meyeo ovabe bathroom e slip kheye poruk??
onek choto manush hoye jodi onnay kichu bole thaki tobe khoma korben dhonnobad.
মনে হোল এক্কেবারে আমার মনের কথাগুলা লিখেছেন। অনেক ভালো লাগলো রিমা আর ও লিখুন।
ধন্যবাদ ।
শামীমা রিমা
খাঁটি কথা লিখেছো।
মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
শামীমা রিমা
নতুন মন্তব্য করুন