এমন পরিবার কমই আছে যেখানে কারো না কারো ক্যান্সার হয়নি। সাম্প্রতিক কালে এই রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও মনে হয়। আগে তেমন শোনা যেত না এর নাম। আজকাল সাধারণ বা বিখ্যাত প্রায় মানুষের এই রোগ হচ্ছে এমন শোনা যায়। মাত্র দেড় মাস আগে পপ সম্রাট আজম খান মারা গেলেন এই ক্যান্সারে ভুগেই। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট শ্যাভেজ যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন তার কথাও কিন্তু তাবৎ দুনিয়ার লোক জেনে গেছেন। প্রশ্ন হলো কেন হয় ক্যান্সার? আর হঠাৎ এর প্রকোপই বা বাড়ছে কেন?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ নয়। অন্যান্য অনেক রোগের মতো ক্যান্সার কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণ বা জীবাণুর দ্বারা সংঘটিত হয় না। যেমন যক্ষ্মা রোগ হয় মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক একটি ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ হলে। তো কোনো ভাবে যদি অই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বন্ধ করে দেয়া যায় তাহলে কিন্তু আর যক্ষ্মা রোগ হবে না কারোরই। ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয় ক্যান্সারের বেলায়। কারণ ক্যান্সার কোনো একটি একক রোগ নয়। আসলে প্রায় শতাধিক রোগকে একত্রে ক্যান্সার বলা হয়। যাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে অন্যদের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য ও কারণ বা রিস্কফ্যাক্টর। যেহেতু একটি মাত্র কারণ বা রিস্কফ্যাক্টরের মাধ্যেম ক্যান্সার হয় না তাই একটি মাত্র কারণ বা রিস্কফ্যাক্টরকে নিয়ন্ত্রণে এনে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় না। আমরা জানি কিছু কিছু জীবনযাত্রার পদ্ধতি স্বাস্থ্যকর নয়। যেমন তামাক সেবন, শারিরীক শ্রম না করা, উচ্চ ক্যালরির খাদ্যাভাস, অল্প বয়সে বিয়ে করা বা সন্তান ধারণ করা, বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ানো ইত্যাদি। তো যতদিন দিন যাচ্ছে মানুষ ক্রমেই এই সব অস্বাস্থ্যকর অভ্যেসে আরো বেশি বেশি অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে। ফলে ক্যান্সারসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। গবেষকরা সম্প্রতি আরেকটি নতুন রিস্কফ্যাক্টর চিহ্নিত করেছেন ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে। তা হলো রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমনো। যুক্তরাষ্ট্রে মেরিল্যান্ড রাজ্যের ৫৯৬৮ মহিলার উপর চালিত এক গবেষণা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এঁদের সবাইকে ১৯৯৮ সালে শারীরিক পরিশ্রম আর ঘুমের প্যাটার্ণ সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। পরবর্তী নয় বছর তাঁদেরকে অনুসরণ করে (ফলোআপ) দেখা হয়েছে কারা কারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। মোট ৬০৪ জন এই সময়ের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। দেখা গেছে ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী যে সব নারী প্রতিদিন গড়ে এক ঘন্টা মাঝারি ধরণের শারীরিক শ্রমের পাশাপাশি রাতে কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমিয়েছেন তাঁদের ক্যান্সার যাঁরা একই ধরণের শারীরিক শ্রম করেছেন কিন্তু অতক্ষণ ঘুমোননি তাঁদের তুলনায় শতকরা ৪৭ ভাগ কম হয়েছে! বেশ চমকে ওঠার মতো পরিসংখ্যান কোনো সন্দেহ নেই। এতে বোঝা যায় তরুণ ও মধ্যবয়সীদের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রম আর যথেষ্ট ঘুম দুটোই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে। তবে শারীরিক শ্রম না করে শুধু ঘুমোলে কিন্তু তেমন লাভ হবে না।
পর্যাপ্ত সময়ের ঘুম দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এটা জানা ছিল। তবে ক্যান্সারের সাথে এর সরাসরি সম্পৃক্ততার খবর এই প্রথম জানা গেল। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা অবশ্য পুরো জীবনাচরণই ঢেলে সাজানোর পক্ষপাতী। । কারণ শুধু একটা রিস্কফ্যাক্টরকে বাদ দিলেও বাকিরা তো থাকলই। আবার অনেক ক্যান্সার জন্মগত যা সাধারণত প্রতিরোধ করা যায় না। তবুও পরিমিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যগ্রহণ, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মতো ইতিবাচক বিষয়গুলোকে যদি পর্যাপ্ত সময় ধরে ঘুমের সাথে মেলানো যায় তাহলে হয়তো ক্যান্সার নামক দৈত্যের হাত থেকে মুক্তি মিললেও মিলতে পারে!
জহিরুল ইসলাম নাদিম
মন্তব্য
একটা নতুন ও দরকারী তথ্য জানা হলো। ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
লেখাটা শুরু করেই শেষ করে দিলেন। নতুন তথ্যটা জানিয়ে দেবার জন্যে ধন্যবাদ।
ব্যাপারটা আমিও ভেবেছি। যখন লিখছিলাম তখন মনে হয়েছে মোটামুটি দৈর্ঘ্য ঠিক আছে। এখন দেখছি ছোট দেখাচ্ছে! ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ একটি জরূরী পোস্টের জন্য।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে কম ঘুম স্থূলতার কারণ।
এম আব্দুল্লাহ
দেখা যাচ্ছে যে ঘুমই জীবন! ধন্যবাদ আপনাকে অসংখ্য।
দরকারি পোস্ট। ধন্যবাদ তথ্যটি জানানোর জন্য। যাই, ঘুমাই গিয়ে
ঘুমোন তবে অতিরিক্ত কোনো কিছু্ই কিন্তু ভালো নয়!!
ছোটোর উপর ভাল আলোচনা।
ধন্যবাদ আপনাকে ছোটো সমালোচনা করার জন্য
আমি আপনার লিখা টা নিয়ে কিছু বলতে চাই ।আপনার এই লিখাটা তে কিছু ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।অথবা কলমের আচরে ভুল হয়েছে......।।
(...।।কারন ক্যান্সার কোন একটি একক রোগ নয়। আসলে প্রায় শতাধিক রোগকে একত্রে ক্যান্সার বলা হয়.........।।)
আপনার এই লিখার পুরু অংশটি একটা ভুল তথ্য......।
আসলে ক্যান্সার হলো আমাদের শরীরের কোষের
(আমদের শরীর গঠনে এক প্রকার ইটের মত একক) অনিয়মিত সংখ্যা বৃদ্ধি। মানে হলো ।।আমাদের শরীরের কোষ সাধারন ভাবে একটা কোষ বিভক্ত হয়ে দুইটা কোষ হয়...যদি এর ব্যাথয় ঘটে মানে হলো একটা কোষ থেকে একটা কোষ অথবা একটা কোষ তিন তা বা তার অধিক হয় ঠিক এই অবস্তা টা কেই ক্যান্সার বলে। এখন প্রশ্ন হতে পারে কেন এই রকম ঘটে ??? ঘটবে না বা কেনো বলেন আপনার শরীরে ও তো একটু রাগ টাগ হয়,, নাকি? আপনার শরীরে বাইরে থেকে খারাপ কিছু এসে পড়লে এ রকম টা হয়...।আর এই খারাপ কিছু গুলো হলো ব্যাক্টেরিয়া,ভাইরাস,হেযাডারস রাসায়নিক পদাথ,র্যাডিয়েশন ইত্যাদি......
আসলে এর মেকানিজম বুঝাতে হলে আমাকে আরো বিস্তারিত লি্কতে হবে...।।আসলে কিভাবে সচলায়তনে লিখা পোস্ট করতে হয় আমি ঠিক জানি না তাই শুধু মতামতের অংশেই দিলাম......।কিভাবে কি করতে হয় লিখা পাঠাতে কেউ কি আমাকে বিস্তারিত সাহায্য করতে পারবেন???????
ভালো মানুষ
রিসাচ স্টু্ডেন্ট
ডিপাটমেন্ট অভ ইমিউনোলোজি
দক্ষিন কোরিয়া
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়া ও মন্তব্য করার জন্য। তবে আপনার মন্তব্যের ব্যাপারে একটু দ্বিমত করতে চাই। আসলে সচলায়তন যে শুধু বিশেষজ্ঞরা ভিজিট করেন তাই নয় সাধারণ অনেক পাঠক এখানে আসেন যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড মেডিসিন নয়। আমি তাই জটিলতা এড়িয়ে সহজ ভাষায় বলেছি। শরীরের কোনো কোষ যখন হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংখ্যায় এবং আকারে বাড়তে থাকে তখন তাকে বলে টিউমার। টিউমার দুই রকম হয় বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট। বিনাইন টিউমারগুলো আকারে বড় হয়ে প্রেসার ইফেক্ট দেয়া ছাড়া তেমন ক্ষতি সাধারণত করে না। তবে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলো ভীষণ আক্রমণাত্মক। তারা নির্দিষ্ট গন্ডি ছাড়িয়ে দূর দূরান্তেও ছড়িয়ে পড়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে মেটাসটাসিস। এই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলোকে বলে সাধারণ ভাষায় বলে ক্যান্সার। আমরা যারা চিকিৎসক আমাদের কাছে এর নাম কারসিনোমা। প্যাথলজির যে সব ঢাউশ বই রেফারেন্স হিসেব স্বীকৃত যেমন Robbin's pathologic basis of disease এর Neoplasia chapter পড়ে দেখলে বুঝতে পারবেন কেন ক্যান্সারকে একক রোগ হিসেব দেখা হয় না। এটা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত একটি বিবৃতি - আমার ব্যক্তিগত মত নয়। কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যকে বাদ দিলে ফুসফুসের ক্যন্সার আর ব্লাড ক্যান্সারের ফারাক এত বেশি যে তাদের আলাদা রোগ হিসেবে বর্ণনা করাই বিধেয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
হুম এখন ব্যাখাটা ঠিক আছে......।আর আমি ভাই অত জ্ঞানী না তাই ভাই বৈজ্ঞানীক ব্যাখাও দিতে পারি নি......।আপনার লেখা পড়ে মনে হলো আপনি একজন চিকিৎসক।।তো এই ব্যাপার গুলো আমার থেকে ভাল বুঝেন।তারপর ক্যান্সয়ার সংজ্ঞাটায় ঠিক আমার মন ভরে নি...আপনি যেই বইটার রেফারেঞ্চ হিসেবে দিয়েছেন সেটার কি কোন লিংক আছে আপনার জানাতে।।দিতে পারলে পারলে ভাল হতো নিজের চোখটা কে একটু বুলিয়ে নিজের ভুল টা কে একটু ভেঙ্গে নিতাম...(cancer is a combination nearly houndred of diseses) আমার ঠিক এই জায়গাটাতে বঝতেছি না......ধন্যবাদ আপনার সুন্দর ব্যাখার জন্য......।
নতুন মন্তব্য করুন