১. ক্লাস ওয়ান। বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। সেদিন মনে হয় সাধারণজ্ঞান পরীক্ষা ছিল। আর মাত্র ১০/১৫ মিনিট বাকি। আমার সব প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ, শুধু একটিতে আটকে আছি। বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? আমার ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার বানান ভুলে গেছি।আমার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। ডাক্তার বানান পারি, কিন্তু আমি ত ডাক্তার হতে চাইনা। ঘাড়ের রগটা সেই ছোটবেলা থেকেই একটু ত্যাড়া হবার কারনে আমি ডাক্তার লিখতেও নারাজ। বেশ কিছুক্ষন পরে বানান মনে পড়ল আর লিখেও আসলাম। তখন আমার খুশি দেখে কে?
পাঠক নিশ্চয়ই মনে করছেন আজ এতদিন পরে আমি আসলেই ইঞ্জিনিয়ার হতে পেরেছি কিনা। আমি আসলে একজন pseudoengineer হয়েছি।
২. ক্লাস সেভেন। বাসায় বসে ফুপিয়ে কাঁদছি। একটু আগে আম্মা বেশ কষে একটা ধোলাই দিয়েছেন। সেই সাথে ক্ষণে ক্ষণে বাসা থেকেও বের হয়েও যেতে বলছেন। জীবনে সেই প্রথমবারের মত স্বপ্ন জাগলো নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার। কিন্তু সাথে সাথেই মনে হল, খাব কি ? জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করতে রাজী আছি, কিন্তু না খেয়ে থাকার কষ্ট না। আমার নিরুদ্দেশ হওয়া আর হলনা।
তাই বলে আমার সেই স্বপ্নটা কিন্তু মরে যায়নি, শুরু হয়েছিল মাত্র। এরপরে যখনই পৃথিবীতে আমার বাঁচার উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাপক আত্মগবেষণা(!) করেছি, তখনই সিদ্ধান্তে এসেছি কোনোরকম পেট চালার মত উপার্জন হতে পারলেই সব ছেড়েছুড়ে চলে যাওয়াটা মন্দ হবেনা। আমার এই স্বপ্নটাও কিছুটা পূরন হয়েছে, বাসা থেকে অনেক দূরে সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে আছি। কিন্তু ভিতরের আমি ত জানি, স্বপ্নের এরকম বাস্তবায়ন আমি চাইনি।
৩. ক্লাস এইট। আম্মার সাথে বাজারে গিয়েছি। আমাকে একটা দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে তিনি কিছু একটা কিনতে গিয়েছেন হয়ত। হঠাত এক বয়স্কা মহিলার কথোপকথন কানে আসল। তিনি সদ্য আমেরিকা থেকে ঘুরে এসেছেন। তাঁর ছেলে তাঁকে নায়াগ্রা ফলস দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। চোখেমুখে এক অপূর্ব দীপ্তি নিয়ে তিনি শ্রোতাকে শোনাচ্ছেন সেই গল্প। সাথে সাথে আমিও দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। আমিও আমার মাকে একদিন নায়াগ্রা ফলস দেখাতে নিয়ে যাব। হয়ত আমার মা-ও কোনোদিন চোখেমুখে স্বর্গীয় সুখ নিয়ে কারো কাছে গল্প করতে পারবেন, “আমার ছেলে আমাকে নায়াগ্রা ফলস দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল”। কুলাঙ্গার এই আমি কিছুটা কষ্টও পেয়েছিলাম। মাকে নিয়ে যাওয়া ত দূরের কথা, আমি নিজেই কোনোদিন যেতে পারি কিনা তার নাই ঠিক।
আমার অন্যান্য স্বপ্নের মত এই স্বপ্নও কিছুটা পূরণ হয়েছে। অবশেষে আমি আমেরিকা আসতে পেরেছি, কিন্তু মাকে এনে নায়াগ্রা দেখানোর মত সামর্থ্য এখনো হয়নি। আদৌ কি হবে ? আমার মা কি ততদিন বেঁচে থাকবেন ?
স্বপ্নগুলো এরকম আধাখাওয়া রুটির মত থাকে কেন ?
পড়াচোর
মন্তব্য
ভাই আমিও পড়া চোর
ও তাই?
আপনি এখন থেকে পুরাটাই খাওয়া শুরু করেন না কেন ভাই? কিছু কিছু করেতো বেশ এগিয়েছেন দেখছি, রুটি অর্ধেকটা খেয়ে রাখেন কোথায়? ফ্রিজে নাকি ফেলে দেন? ফেলে দিয়েননা, ফেলে দিয়েননা, এইগুলা পরে কাজে লাগে।
আপনার মায়ের জন্য শুভেচ্ছা রইলো, কেন যেন মনে হচ্ছে উনি অচিরেই নায়াগ্রা ফলস দেখতে পারবেন, আপনি তখন তাকে আপনার আধ খাওয়া রুটিটার কথা বলতে ভুলবেননা যেন?
লেখা চলুক!
হবে ভাই...পূরণ হইতেই হবে....
ধন্যবাদ, আশা রাখি।
পড়াচোর
এহহে, আপনি সেই পড়াচোর না যার আরেকটা লেখা কিছুদিন আগে ছাপা হয়েছিলো? সেটাও জোশ হয়েছিলো।
নামটা সেইরকম, উল্টায়ে দিলে আরো সেইরকম হবে - চোরপড়া!!! পানি পড়া, রুমাল পড়া, গুড় পড়া, সরবত পড়া আছে কিন্তু এই চোরের দেশে ‘চোরপড়া’ বলে কোনকিছু শুরু হলে তাবৎ চোরগুলার মধ্যে একটা মচ্ছব শুরু হয়ে যাওয়ার কথা!
হুম, আমিই সেই পড়াচোর।
পড়াচোর।
অবশ্যই পূরণ হবে। সাবলীল লেখার জন্য
ধন্যবাদ।
স্বপ্ন পূরণ হোক.........
লেখায়
ধন্যবাদ, আপনার মত যদি লিখতে পারতাম !
পড়াচোর।
আজকে আব্বা আম্মা ভিসা পেলেন। এক সপ্তাহ পর আসছেন। এই প্রথম বোধহয় আম্মা বেড়াতে বের হবেন গত ৩০ বছরে। কী যে ভাল লাগছে। আব্বা আম্মার জন্য কিছু করতে পারলে কী যে একটা তৃপ্তি হয়।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আপনি ত লাকি ! দারুন ব্যাপার। মা-বাবাকে নিয়ে যত খুশি ঘুরে বেড়ান। ভালো থাকবেন।
পড়াচোর
ধন্যবাদ।
পড়াচোর।
"বাসা থেকে অনেক দূরে সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে আছি। কিন্তু ভিতরের আমি ত জানি, স্বপ্নের এরকম বাস্তবায়ন আমি চাইনি"।
এক্কেবারে আমার মনের কথা। লিখাটা অনেক ভালো লাগলো, আপনার স্বপ্নগুলো পুর্ণ হোক এই প্রত্যাশা করি।
ধন্যবাদ,
পড়াচোর
আপনার স্বপ্ন পূরণ হোক। মা'কে নিয়ে যান নায়াগ্রা দেখাতে।
ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ
ধন্যবাদ,
পড়াচোর।
নতুন মন্তব্য করুন