দয়া করে আমার এই পোষ্টে খারাপ লেগেছে কিংবা দুঃখ পেয়েছেন এ জাতীয় মন্তব্য করবেন না। কারুর সহমর্মিতা অথবা সহানুভূতি চেয়ে মানবিক আবেদন জানানোও আমার উদ্দ্যেশ্য নয়। এ লেখার তাৎপর্য কেউ বুঝতে পারলেই লেখার সার্থকতা খুঁজে পাবো। ধন্যবাদ।
সাবরিনা সুলতানা
বি-স্ক্যান প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক হপ্তার জন্যে ঢাকা যেতে হয়েছিলো ৯ই জুলাই। ঢাকা যাওয়া আসার জন্যে সাধারণত আমি ট্রেনে কেবিন নেওয়ার চেষ্টা করি যেহেতু হুইলচেয়ার সাথে নিয়ে ঘুরতে হয়। নানা ভোগান্তি পেরিয়ে ট্রেনে কুলির সাহায্যে তবুও উঠা যায় কিন্তু বাসে তো হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্যে কোন সুবিধেই নেই! যাই হোক, দূর্ভাগ্যক্রমে এবার ঢাকা যাওয়া এবং আসার জন্যে কেবিনের টিকেট পাইনি। অনেক ঝামেলার পরে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের টিকেট যোগার করেছি। আমার একটু পরে পরেই রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাতে পায়ে ঝি ঝি ধরে যায় যদি না খানিকক্ষন পর পর নড়ে চড়ে বসি আমি। দুঃচিন্তা ছিলো খুব এই নিয়ে। তাই ট্রেনের চেয়ারের চেয়ে আমার নিজের হুইলচেয়ার সবচে সুবিধাজনক। এই সব মাথায় নিয়েই ৯ তারিখ স্টেশনে গেলাম। সুবর্ণতে উঠেই দেখি দরজা দিয়ে ঢুকতেই প্রথমে পর পর দুটি সিঙ্গেল চেয়ার। যিনি বসে ছিলেন চেয়ারে সেই ভদ্রলোককে আমার অসুবিধার কথা বলে বিনীত অনুরোধ জানালাম আমার টিকেটের সাথে যদি তিনি নিজের টিকেটটি বদলে নেন তাহলে এই সিঙ্গেল সিটে আমার সহকারী মেয়েটিকে বসিয়ে তার পাশে হুইলচেয়ারে বসেই আমি যেতে পারি। এতে কারুর হাঁটা চলারও অসুবিধে হবে না। তিনি এবং ট্রেনের এটেডেন্স নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে গেলেন বিষয়টির মানবিক দিক চিন্তা করে। আমার নিজের দুঃশ্চিন্তারও লাঘব হলো এই ভেবে ফেরার পথেও কোন অসুবিধে হবে না। আমার শারীরিক অবস্থা যে কোন বিবেকবান মানুষ নিশ্চয় বুঝবেন। সত্যি কথা বলতে কি খুব সহজে এমন কিছু ভেবে বসার আগে আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার বসবাস বাংলাদেশ নামক এক জায়গায়!
অনুষ্ঠান শেষে কমলাপুর স্টেশন থেকে গত ১৬ তারিখ বিকেলে ৩টা ৩০মিনিটে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে রওনা দিয়েছিলাম ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশ্যে। ৯ তারিখের মতোন এবারো আমার বগির দায়িত্বে যিনি ছিলেন তাকে অনুরোধ জানালাম সিঙ্গেল চেয়ারের পাশে আমার টিকেট বদলে আমাকে হুইলচেয়ার নিয়ে বসতে দেওয়ার সুবিধেটি কি করে দেওয়া যায়!? তিনি খুব আন্তরিকভাবেই বললেন “অবশ্যই যায়! যাত্রীদের সুবিধা অসবিধে দেখাই তো আমাদের কাজ। এই সিটটি যার তিনি এলেই আমি ব্যাবস্থা করে দেবো।“
সুবর্ণ এক্সপ্রেসের “গ” বগির ৫২নং সিটে আমার সহকারী মেয়েটিকে বসিয়ে আমি নিশ্চিন্ত মনে পাশে আমার হুইলচেয়ার নিয়ে বসে গেলাম। টিকেট হাতে তৈরি ছিলাম সিটের মালিক এলেই তাকে আমার বিষয়টি বুঝিয়ে বলবো। উত্তরা স্টেশনে একজন আমার পিছনে এসে বললেন এই সিটটি আমার। আমি ঘাড় ঘুরাতে পারছিলাম না তাই তাকে দেখতে পেলাম না। ওই অবস্থাতেই তাকে অনুরোধ করলাম, “একটু কষ্ট করে যদি আমার টিকেটের সাথে আপনার টিকেটটি বদলে নেন, আমার এই অবস্থা...” তিনি আর শুনতেই চাইলেন না। হুট করে বাইরে চলে গেলেন। শুনতে পেলাম বগির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে তার কথা কাটাকাটির আওয়াজ। যা বুঝলাম তিনি একজন সাংবাদিক। নিজের সিট ছাড়া বসবেন না। আশে পাশের সিট থেকে কয়েকজন যাত্রী উঠে আমার শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে তাকে অনুরোধ করছিলেন। অন্যান্য বগির তিন চারজন কর্মিও এসে কথা বলছিলেন আমার হয়ে। কিন্তু তার এক কথা তিনি কারুর সাথে সিট শেয়ার করবেন না। আমার তখনো বিশ্বাস ছিলো আমি নিজে কথা বললে তিনি আমার কষ্টটা বুঝবেন। তাই আমি নিজে উনার সাথে কথা বলতে চাইলাম। কিন্তু আমার সাথে তিনি কথা বলবেনই না।
শুনলাম তার কন্ঠেই, “সুবর্ণ এখন আর ট্রেন নেই, মালটানা গাড়ি হয়ে গেছে।“
শোনা মাত্র আমার হাত পা শক্ত হয়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে রেলকর্মিকে জানালাম, “আমি উনার সিট ছেড়ে দিচ্ছি। নিতান্তই যখন আমার কথা শুনবেন না তিনি আমার সমস্যা আমি কোনভাবে ম্যানেজ করে নিতে পারবো।“
ঠিক সে মূহুর্তেই বগির অপরপ্রান্তের সিঙ্গেল সিটটি খালি করে দিলেন একজন। আমার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় একঝলক তার চেহারা যতখানি দেখলাম খুব পরিচিত মুখ মনে হলো কেনো জানি। খানিক্ষন পরেই রেলকর্মির কাছে তার নাম জানতে পেলাম। তিনি আমাদের চট্টগ্রামেরই। বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকার মিডিয়া জগতে আছেন। এর আগে চট্টগ্রামেই কাজ করতেন। বছরখানেক আগে আমার সাথে ফোনে একবার কথাও হয়েছিলো। খুব ইচ্ছে হলো ফোন দিয়ে একবার বলি, “আমার শরীর দুর্বল হতে পারে কিন্তু মন দুর্বল নয়। একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে বিশেষত পেশায় সাংবাদিক হয়ে সামান্য একটা সিটের জন্যে আমার শারীরিক অসহায়ত্বকে এতো বড় অপমান করতে আপনার বিবেকে এতটুকু বাধলো না!? একবার অন্তত আমার অবস্থাটা জানার চেষ্টা করলে কিইবা ক্ষতি হতো! আমি তো খুব চাপাচাপি করিনি সিট ছেড়ে দেওয়ার জন্যে! শুধু অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এইটুক অনুরোধ একজন মানুষই তো করতে পারে অপর একজন মানুষের কাছে।“
আমি তাকে কিছুই বলিনি। ফোন করে পরিচয় দিয়ে তাকে লজ্জা দিতে আমার বিবেকে বাধঁছিলো। আমার এই লেখার উদ্দ্যেশ্য কোনভাবেই সেই ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে হেয় করা নয়। একজন সাংবাদিক আমার হুইলচেয়ার সমেত আমাকে “মাল” আখ্যায়িত করলেই সব সাংবাদিক খারাপ এটা অন্তত ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি না। কিন্তু খুব খারাপ লেগেছে আমার এই ভেবে সাংবাদিকতা যার পেশা এমন একটি ইস্যুতে মানুষকে অমানুষ ভাবার মতোন তার অদ্ভুদ মানসিকতা। নাকি এটাই স্বাভাবিক! আমি খুব দ্বিধান্বিত, তবে কি আমারই ভুল হলো!?
মন্তব্য
পেশাদারীত্ব দেখাতে গিয়ে মনুষ্যত্ব খুঁইয়ে ফেলাটা এখন আমাদের মজ্জায় ঢুকে গেছে বুঝি!
এবং সম্ভবত চিরটাকাল এভাবেই থাকতে পছন্দ করবে বাঙ্গালী জাতি!
সাম্প্রতিক ঘটনায় দেখি সাংবাদিকদের মনুষ্যত্বহীন চেহারাটাই সামনে চলে আসছে বারবার...
বিদেশে বাসে-ট্রেনে-বিল্ডিংয়ে-ফুটপাথে হুইলচেয়ারের জন্য ব্যবস্থা করতেই হবে, আইন আছে। তার জন্য পরিকাঠামোর পেছনে অতিরিক্ত খরচা করতেও পিছপা নয় এরা। আর আমাদের সরকারের তো সাধারণ মানুষজনের জন্যই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, তাহলে যাদের তাঁরা 'নিম্নবর্গীয়, অপাংক্তেয়' মনে করেন তাদের জন্য কী করবেন?
কৌস্তভ, আমি আমার লেখায় সাংবাদিক সমাজকে দায়ী করিনি কিন্তু...একজন ব্যাক্তি কেনো তার সাংবাদিক পরিচয়ে অহংকারি হবেন সেটাই আমার প্রশ্ন। আমি আরো সাংবাদিককে ব্যাক্তিগতভাবে জানি যাদের একেবারেই ভিন্ন রূপ দেখেছি। এবং সেদিন আমি সত্যিই খুব অবাক হয়েছি!
আর একটা কথা, আইন কিন্তু আমাদের দেশেও আছে। নেই শুধু আইনের সঠিক বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ২৯ নং ধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম-সুযোগ, সম-অংশগ্রহণ ও সম-অধিকারের কথা বলা হয়েছে। খোদ সংবিধানে তাদের অধিকারের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু আমরা কি তাদেরকে এই সুযোগ পেতে সহায়তা করি?
এভাবে ভাবলে তো কিছুই বদলাবে না দেশে। আমাদের কারণেই কিন্তু আমাদের উন্নতি হয় না। আমরা আসলে মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
সাবরিনা আপনি বুঝতে পারছেন না। কেউ কেউ মনুষত্ব প্রতিবন্ধী হয়। এরা ঠিকঠাক বিবর্তিত প্রাণি নয়! অবুঝ প্রাণি মনে করে ভুলে যান...
আপনার ভুল হবে কেন! আপনি বুঝতে পারেন নি ওই প্রাণিটিও প্রতিবন্ধী ছিলো!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বলার কিছু নেই
আমাকে কিছুই বলতে হবে না। যা বোঝাতে চেয়েছি মনে প্রাণে যদি সেটুকু অনুভব করতে পারেন তাহলেই আমার কষ্ট লাঘব হবে। আমি শুধু দেখতে চাই জাতির বিবেক জেগে উঠছে। পথে ঘাটে আর কাউকে যেনো আমার মতোন অপমানিত হতে না হয়... এর বেশি কিছু আমার চাওয়ার নেই।
অপমানটুকু আমাকেই কেন্দ্র করে অন্য কিছুতে হলে হয়তো এতোটা লাগতো না ...কিন্তু তিনি ভুলক্রমে আমার সবচে' দুর্বল জায়গাটাতে আঘাত হেনেছেন। প্রাণ আছে বলেই কেবল প্রাণী বলা যায় তাকে এখন সম্ভবত।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে।
সেল ফোন দিয়ে একটা ছবি তুলে পাবলিশ করে দিতেন। কিংবা ভিডিও। এই মহিলার মতো শিক্ষা হোতো তাহলে
আগের অভিজ্ঞতা ছিলো না তো! বোকার মতোন হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। এখন থেকে এই বুদ্ধি কাজে লাগাবোনে...
কৃতজ্ঞতা
সহমত অনার্য সঙ্গীতরে সাথে:-"আপনার ভুল হবে কেন! আপনি বুঝতে পারেন নি ওই প্রাণিটিও প্রতিবন্ধী ছিলো!"
সাংবাদিক নামধারী প্রতিবন্ধী।
এম আব্দুল্লাহ
কৃতজ্ঞতা
আপনার লেখাটির উদ্দেশ্য সফল হোক, এই কামনা।
সেটাই যেনো হয়... অসংখ্য ধন্যবাদ
সাবরিনা, আপনার ঘটনায় আমি অবাক হইনি। সাধারণীকরণ করতে চাই না, তবে এই বিশেষ পেশার মানুষদের অনেকের কাছ থেকে এমন সব ব্যবহার পেয়েছি বা অন্যদের সাথে এমন ব্যবহার করতে দেখেছি তাতে আপনার ঘটনাটিকে আমার কাছে অবাক করার মতো মনে হয়নি। ভবিষ্যতেও আপনি যদি আবার ঠিক একই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হন তাহলেও অবাক হবো না। বাংলাদেশ ভিআইপিদের দেশ। এখানে রাজনৈতিক ভিআইপি, আমলা ভিআইপি, সামরিক ভিআইপি, ব্যবসায়ী ভিআইপিদের পাশাপাশি সাংবাদিক ভিআইপিরাও আছে। আপনি এক ম্যাঙ্গো পাবলিক, আপনি এরচেয়ে ভালো আর কী আশা করতে পারেন! পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন কিনা জানি না; যদি বিশ্বাস করেন তাহলে আগামী জন্মে এই দেশে ভিআইপি হয়ে জন্মাবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভি আই পি হলে যদি এমনই হতে হয় আমাকে তবে আমি দ্বিতীয় জন্মেও সাধারণ মানুষ হয়েই জন্ম নিতে চাই। অন্তত নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে পারবো...
এটা শুধু সাংবাদিক বলে নয়, বাংলাদেশী "মহান" সমাজের অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে দূরপাল্লার বাসে আবার এনাদেরই দেখবেন ঠান্ডার বাতিকে পড়ে তিন রো সামনের সহযাত্রীকেও জানালা বন্ধ রাখতে বলতে...
আহা। আপনার জানা উচিত ছিল পুলিশ সাংবাদিক আর ছাত্রলীগ এদের সাথে বেয়াদবি করা নিষেধ...
হুম ... জানা থাকলো। অনুরোধ করাটাকে ইনারা বেয়াদবীর পর্যায়ে ভাবেন। এমন ভুল ভবিষতে হবে না
আপনার শক্ত মন আর দৃঢ়তার সাধুবাদ জানাই। আপনি পাশাপাশি যারা সহযোগীতা করেছে তাদেরকেও উঠিয়ে এনেছেন সমান মনোযোগে। বড়দের কাছ থেকে শেখার থাকে, আপনার কাছ থেকে আবারও শেখা হলো। ভালো থাকবেন, আপনার এবং আপনার নিজ^ পৃথিবীর জন্য শুভকামনা রইলো!
সহযোগী মনোভাবাসম্পন্ন মানুষগুলোকে তুলে ধরার কারণ এরাই আমাদের আশার আলো। আমাদের দেশে এখনো আলো আছে যে আলো আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে। তাদের নিয়েই আমাদের স্বপ্নের দেশ গড়ে তোলা যায়। কিন্তু তার জন্যে আমাদের প্রত্যেককেও একটু ভাবতে হবে...একটু একটু করে জাগতে হবে তবেই না অসম্ভব সম্ভব হতে পারে...
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
শুভকামনা আপনার জন্যেও
সাংঘাতিক সাংবাদিক।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
সাংবাদিকতা পেশার কতটা অবমাননা হয় তাই ভাবছি
ক্ষমা করে দিও ওই সাংবাদিককে। তিনি সাংবাদিক হতে পারেন- কিন্তু মানসিকভাবে মৃত (সাইকোলোজিক্যালি ডেথ) এটা হয়তো ওই সাংবাদিক জানেন না।
আমার কাছে তাকে অবশ্য হলুদ ছাড়া সাংবাদিকও মনে হচ্চে না। এমন কোনো গণমাধ্যমে তিনি কাজ করেন, হয়তো সেখানে তার শেখার মতো কিছু নেই। আর পরিচয় দেওয়ারও কিছু নেই। ভেতরে নিগৃহীত হতে হতে তাই হয়তো বাইরে একটু সাংবাদিকতাকে ক্ষমতা হিসেবে ব্যবহার করে করে বহুদিন আগেই তার মৃত্যু ঘটেছে। যেমনই হোক তিনি একজন মৃত মানুষই বটে। আর মৃত মানুষকে ক্ষমা করাটাও মানুষ হিসেবে আমাদেরই দায়িত্ব বটে। প্রার্থনা করি-ওই সাংবাদিক যেন, আর মৃত সাংবাদিক হয়ে নয় মানুষ হয়ে পূনর্জন্ম লাভ করেন।
আমার ব্যাক্তিগত কোন ক্ষোভ নেই কারুর উপর। তাই ক্ষমা করা না করার প্রশ্নই আসে না। ভেতরে যা ক্ষরণ হয়েছে তা তো হয়েই গেছে। সেটা সামলে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে বৈকি। কিন্তু আমি ভাবছি শুধু এই আর কোন সাবরিনাকে যেনো এইভাবে অপমানিত হতে না হয় ...এইটুক আমাদের সবাইকেই বুঝতে হবে বাংলাদেশে গুটি কয়েক মাত্র সাবরিনা সাহস করে পথে বের হয় আরো অগুনতি সাবরিনাদের ঘর থেকে বাইরে বের করে আনার জন্যে। এদের দুর্বলতার সুযোগে এভাবে অপমান করা হলে সমস্যা আরো বাড়বে বৈ কমবে না...
ক্ষমা করে দিও ওই সাংবাদিককে। তিনি সাংবাদিক হতে পারেন- কিন্তু মানসিকভাবে মৃত (সাইকোলোজিক্যালি ডেথ) এটা হয়তো ওই সাংবাদিক জানেন না।
আমার কাছে তাকে অবশ্য হলুদ ছাড়া সাংবাদিকও মনে হচ্চে না। এমন কোনো গণমাধ্যমে তিনি কাজ করেন, হয়তো সেখানে তার শেখার মতো কিছু নেই। আর পরিচয় দেওয়ারও কিছু নেই। ভেতরে নিগৃহীত হতে হতে তাই হয়তো বাইরে একটু সাংবাদিকতাকে ক্ষমতা হিসেবে ব্যবহার করে করে বহুদিন আগেই তার মৃত্যু ঘটেছে। যেমনই হোক তিনি একজন মৃত মানুষই বটে। আর মৃত মানুষকে ক্ষমা করাটাও মানুষ হিসেবে আমাদেরই দায়িত্ব বটে। প্রার্থনা করি-ওই সাংবাদিক যেন, আর মৃত সাংবাদিক হয়ে নয় মানুষ হয়ে পূনর্জন্ম লাভ করেন।
সাবরিনা আপা,
আমি দৃষ্টি চট্টগ্রাম এর একজন কর্মী হওয়ায় এই সাংবাদিক সমাজের অনেককেই খুব কাছ থেকে দেখার ও জানার সৌভাগ্য হয়েছে। এদের বেশিরভাগই এখন আর সাংবাদিক নেই, রীতিমত সাঙ্ঘাতিক হয়ে উঠেছেন। আপনি নিজে একজন সাংবাদিকের স্ত্রী হওয়ায় ওকে নিশ্চয় ভদ্রতাবশত কিছু বলেন্নি।তবে এইসব কুকুরের জন্য মুগরই দরকার।
নির্ঝর শ্রাবণ
সাংবাদিক সমাজ কিন্তু খারাপ নয়। কখনো কোন জাতি বা গোষ্ঠী একি সাথে খারাপ হতে পারে না। গুটি কয়েকের জন্যে পুরো সমাজকে দায়ী করা উচিৎ নয় আসলে।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।
অযথাই নাক উঁচু করা মানুষগুলোর জন্য শুধুই করুণা!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ। নিজে সচেতন হোন। অন্যকেও সচেতন করে তুলুন।
দেখেন, দোষ ওই (সাংবাদিক) লোকটির নয় ! বরং এটা তার গুণ যে তিনি আমাদের এই প্রতিবন্ধী সমাজটার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন। এটা আমাদেরই সীমাবদ্ধতা যে আমরা এই সমাজের মাপে নিজেদের মেরামত করে নিতে পারিনি, কষ্ট পাই ! আমাদের এই প্রতিবন্ধিতাগুলো আসলে আমাদের গড়ে তোলা সমাজেরই ছায়া। হাঁটতে বসতে চলতে ফিরতে কতো বিচিত্র প্রতিবন্ধিতা দেখতে হয় আমাদেরকে ! যেমন ধরেন, মাঝপথে হাত তুলে থামিয়ে যে লোকাল বাসটিতে উঠতে পেরে এই মানুষের জটলাজটলির মধ্যে নিজেকে ভীষণ সৌভাগ্যবান ভাবছি। একটু পরে একই কায়দায় যখন আরেকজন লোক উঠাচ্ছে বাসে, তখন আমিই চিৎকার বকাবাদ্যি করছি ড্রাইভারকে- ওই ড্রাইভার এইটা কি গরুর গাড়ি বানাইছো !
আগে এগুলোতে খুব রাগ হতো। এখন কৌতুক উপভোগ করি ! মনে কষ্ট নেয়ার কিছু নেই সাবরিনা। গরু যদি মানুষের মতো ব্যবহার করে, সেটাতেই বরং আশ্চর্য হবেন, বিচলিত হবেন ! আর মানুষ যখন গরুর মতো ব্যবহার করে (যদিও গরুরা অনেক ভদ্র নিরীহ হয়), তখন বরং প্রাপ্তির আনন্দে উল্লসিত হবেন এই ভেবে যে- এইটা যে আসল গরু, আগে বুঝি নি কেন !!
রবি ঠাকুরের মতো বলতেই হবে- মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ ! নইলে চলাফেরা করাটাই দায় হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, মানুষ আর গরুর মধ্যে তফাৎটা দিন দিন কমে আসছে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনার কথায় ১০০ ভাগ সত্যতা আছে কিন্তু দাদা আপনার কি মনে হয় না এই অবস্থা থেকে আমাদের বের হয়ে আসা দরকার ?? কতকাল আমরা "সব বুঝিয়াও না বুঝিবার ভান করিয়া আছি" টাইপ প্রবাদ মাথায় করে রাখবো !!??
আমি মোটেই হতাশ নই। যতো দেখছি আমার জেদের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু অনেকে ধৈর্য রাখতে চান না। সমাজের এ ধরণের অবস্থার কারণেই কিন্তু আমাদের দেশে পারিবারিক চাপ বেড়ে যায়। ঘর বন্দি হয়ে থাকে অনেকে। এই কারণেই মানুষ আর গরুর মধ্যেকার দূরত্বটা আরো বাড়ানো প্রয়োজন আমাদেরই...
আপনার একাউন্টটি এক্টিভেট করে একটি ইমেইল পাঠানো হয়েছে। অনুগ্রহ করে চেক করে দেখুন।
সম্মানিতবোধ করছি সচলায়তনে পরিবারের একজন হতে পেরে। আমার একাউন্টটি এক্টিভেট করে দেবার জন্যে কৃতজ্ঞ। কিছু ত্রুটির কারণে আমার একাউন্টে ঢুকতে খুব সমস্যা হচ্ছে। সচল কতৃপক্ষকে একটি মেইল করে সমস্যার কথা জানিয়েছি। দেখার অনুরোধ করছি ... আবারো ধন্যবাদ।
কিছু বলার নেই! হাজার হলেও উনারা জাতির বিবেক বলে বিবেচিত হন।
আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এবং একটা কাজিন আপনারই মতো, শারিরীকভাবে চলৎশক্তিহীন। আমি দেখি বা বুঝি এই সমাজ তাদেরকে কিভাবে ট্রিট করে। আপনার মনোবলকে শ্রদ্ধা। এটা বজায় রাখুন সারাজীবন, প্রতিকূলতার মধ্যেও শান্তিতে থাকবেন।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
যার সমস্যা সেই বুঝবে এমন একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে আমাদের দেশে। আমি নিজে বাইরের দেশের পরিবেশ না দেখলে কিংবা ভুক্তভোগী না হলে হয়তো আমিও গা ভাসিয়ে দিতাম এই স্রোতে...
ধন্যবাদ আপনাকে। নিজে সচেতন হোন। অন্যকেও সচেতন করে তুলুন।
ভালো থাকুন।
অদ্ভূত আঁধার এসেছে আমাদের দেশটিতে আজ--
বিবেকহীন চক্ষুহীন ঋষভপুঙ্গবে ছেয়ে গেছে আসমুদ্রহিমাচল।
কিন্তু সবকিছুর পরও আমি আশা ছাড়তে রাজি নই।
সাবরিনা, এই দিন বদলাবে---আমি নিশ্চিত জানি। আমি, আপনি, আমরা এই জীবদ্দশায় দেখে যাব একটা 'মানবিক' স্বদেশ---এই আমার প্রার্থনা।
নিরন্তর শুভ কামনা
আমার জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না... তবে আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি, একদিন এমন দিন আসবে এই দেশে যেদিন কাউকে নিজের প্রাপ্য অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নামতে হবে না আর। সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সর্বক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতার সম অধিকার সবার জন্যেই থাকবে।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।
নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন করে তুলুন।
"Priority Seat" বলে আমাদের দেশে কোন ব্যবস্থা সুস্তত ভাবে চালু নাই, থাকলে ও কেউ মানে না। বাইরের দেশে এসে বুঝছি, যারা শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের অধিকার রক্ষা করা সাধারন মানুষের কর্তব্য। বাসের সিট থেকে শুরু করে সব জায়গাতে কি ভাবে তাদের অধিকার রক্ষা করা হয়, সত্যি শেখার বিষয়।
আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নেই।
অনেকেই জেনে অবাক হতে পারেন কিংবা না জানার ভান করে চুপ করে থাকেন অথচ সত্য হলো, বাইরে থেকে আমাদের দেশে দূরপাল্লার যাত্রার জন্যে যেসব বাসের পার্টস আমদানী হয় তাতে হুইলচেয়ারের ব্যবহারকারীদের হুইলচেয়ার সমেত বসার একটি জায়গা এবং র্যাম্পের সুব্যবস্থা থাকে। আমাদের দেশে সেই সমস্ত পার্টস একত্র করার সময় হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর জন্যে নির্ধারিত খালি জায়গায় একটি চেয়ার বসিয়ে দেওয়া হয়। র্যাম্পের অংশটি নিয়ে তারা কি করেন সেটা নাহয় নাই বললাম আর...এই হলো আমাদের দেশ!
ci ci ci . . . . . ar theke akjon rikshwa wala o onek valo.....
আপনার লেখার মূলে যে বিষয় তা আমাদের এই বিকল সমাজ ব্যবস্থার ই একটি প্রয়োগ। শুধু পরালেখা করে ডিগ্রি নিয়ে মানুষ হওয়া যায় না, মানুষ হতে হলে বিবেক বুদ্ধির যথাযত প্রয়োগ করতে হয়। যা বর্তমানে আমাদের মাঝে খুবই কম প্রচলিত।
আমি আপনাদের সাথে একটি বিষয়ে একমত নই "সাংবাদিক নামধারী প্রতিবন্ধী'' বলে আপনারা ওই লোক কে তিরস্কার করেছেন।এতে প্রতিবন্ধী দের ছোট করা হয়েছে।প্রতিবন্ধী কেউ ইচ্ছে করে হয় না, মানুষের জন্মগত ভাবে এটা একটা দুর্ভাগ্য।কিন্তু ওই সাংবাদিক ব্যক্তি যে আচরণ করেছে তা একজন বিবেকহীন ,বিকল মস্তিস্কের পশুর মতো আচরণ।
প্রতিবন্ধীদের জন্য সহানুভূতি নয়,সমানুভুতি।
আমি আপনাদের সাথে একটি বিষয়ে একমত নই "সাংবাদিক নামধারী প্রতিবন্ধী'' বলে আপনারা ওই লোক কে তিরস্কার করেছেন।এতে প্রতিবন্ধী দের ছোট করা হয়েছে।প্রতিবন্ধী কেউ ইচ্ছে করে হয় না, মানুষের জন্মগত ভাবে এটা একটা দুর্ভাগ্য।কিন্তু ওই সাংবাদিক ব্যক্তি যে আচরণ করেছে তা একজন বিবেকহীন ,বিকল মস্তিস্কের পশুর মতো আচরণ।
প্রতিবন্ধীদের জন্য সহানুভূতি নয়,সমানুভুতি।
এই পশুরা মানুষ হোক
ইতিমধ্যে হাজারের বেশী পাঠক পড়েছেন সাবরিনার এই লেখাটি। আমরা কি সবাই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতে পারি যে এমন কোন অবস্থাতে কাউকে দেখলে তার কাছ থেকে অনুরোধ পাবার আগেই আমরা তাকে আমাদের আসনটি গ্রহন করতে বলবো?
আমি শাওনের সাথে সম্পূর্ণ একমত এবং এটাও জানি অন্যারা হয়তো ঠিক ভেবে বলেননি কথাটা - তবু এটা আমাকে বিদ্ধ করেছে - আমিও যে এক প্রতিবন্ধী সন্তানের বাবা।
আশা করি আমি আবার কাউকে আঘাত দিলাম না, ক্ষমা চাই আঘাত দিলে।
সাইফ শহীদ
আপু, আমার পরিবারে কয়েকজন সাংবাদিক আছে। তাদের কাছেই মাঝে মাঝে শুনি তাদের সহকর্মীদের বিভিন্ন কীর্তি-কাহিনী। আমি শুধু সবাইকে বলি, যদি বিবেকটাও না থাকে, অন্তত এভাবে ভাবুন যে আপনি কাউকে না কাউকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনার জেলার মানুষদেরকের, কিংবা আপনার পেশার মানুষদেরকে, কিংবা আপনার লিঙ্গের মানুষদেরকে; আর দেশের বাইরে এই বাংলাদেশকে আর সবসময়ই আপনার পরিবারকে। এভাবে ভাবতে পারলেও অমানুষেরা মানুষের মত আচরণ করতে পারে। এইটুকুও যারা ভাবতে পারে না, তাদেরকে আসুন আমরা সবাই ক্ষমা করে দিই। ইতর প্রাণীর সাথে রাগ করে লাভ নাই।
ভীষণ ভাবে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সমবেদনা নয়। মন থেকে বলছি আপনি সত্যিই পেরেছেন, এগিয়ে যেতে... আরও এগিয়ে যান। আপনার ওয়েবসাইটটাও দেখে এলাম......
এগিয়ে যান। নিরন্তর শুভকামনা। অনেক ভালো থাকুন। আপনাদের প্রয়োজন আছে।
ডাকঘর | ছবিঘর
ওই ব্যাটার মানসিক সমস্যা আছে, আন্ডার ডেভেলপড মস্তিষ্ক নিয়ে চলাচল করছে প্লাস বাড়িতে নাইলে অফিসে ঝাড়ি খাইছিল ওইদিন (এই রকমই কোন বেকুব আচরণের জন্যে বলাই বাহুল্য)। এর জন্যে করুণা ও একটি চড় বরাদ্দ।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন