বিবর্তনের মূল বক্তব্য হচ্ছে যে পারিপার্শ্বিকতার প্রয়োজনে জীবের মধ্যে কিছু কিছু সুক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটতে থাকে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এরকম পরিবর্তনের সমষ্টী ক্ষেত্র বিশেষে জীবকে তার আদি অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থায় নিয়ে যায়। অনেক সময় তা নতুন একটা স্পিসিস (প্রজাতি) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।লক্ষ্য করলে আমাদের নিকট পূর্বপুরুষ থেকে আমাদের মধ্যে এরকম কিছু সুক্ষ্ম পরিবর্তন পাওয়া যাবে। যেমন আমার দাদা মাঠে কাজ করতেন বলে (পারিপার্শ্বিকতার প্রয়োজনে) তার পায়ের তলা আমার চেয়ে শক্ত ছিল। আবার(পারিপার্শ্বিকতার কারণে) আমি আমার দাদার তুলনায় বেশী বুদ্ধিমান। বিবর্তনের ক্ষেত্রে এরকম ছোট ছোট পরিবর্তন হাজার বছর ধরে ঘটতে থাকে। এর মূলে আসলে কাজ করে অর্থনীতির চাহিদা ও যোগানের সুত্র। যেসব প্রজাতি নিজেদের মধ্যে পরিবর্তনের যোগান দিয়ে পারিপার্শ্বিকতার চাহিদা সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে তারাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে।
চাহিদা ও যোগানের ফলে বিবর্তনের এরকম ধারা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনেক ক্ষেত্রেও লক্ষ্যনীয়। যেমন ১৫ বছর আগে প্রথম যখন মোবাইল ফোন আসে তখন তা প্রায় ফুট খানেক লম্বা, ভারী একটা যন্ত্র বিশেষ ছিল। পারিপার্শ্বিকতার (এ ক্ষেত্রে কাস্টমারের) চাহিদার কারনে মোবাইল ফোনে ছোট ছোট পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ধীরে ধীরে তার এন্টেনা (লেজ?) গায়েব হয়ে যায়, আকারে ছোট হতে থাকে, ডিস্প্লে কালার বৃদ্ধি পেতে থাকে। এসব পরিবর্তনের ধারায় আজ আমাদের হাতে স্মার্ট ফোন। এছাড়া সেই একই আদি মোবাইল ফোন থেকে যাত্রা শুরু করে কিছু কাজিন স্পিসিস ও আত্মপ্রকাশ করেছে। যেমন এম পি থ্রী প্লেয়ার, এম পি ফোর প্লেয়ার ইত্যাদি। তাছাড়া পারিপার্শ্বিকতার (কাস্টমারের চাহিদার) নেতিবাচক প্রভাবে কিছু আদি কাজিন স্পিসিস বিলুপ্তও হয়ে গেছে বা যাচ্ছে, যেমন পেইজার।
কেউ কেউ বিবর্তনবাদ কে গ্রহন করতে পারেননা তার প্রধান কারন বিবর্তনবাদ প্রচলিত কিছু ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক। যারা ধর্মকে সবকিছুর উপরে স্থান দেন তাদের পক্ষে বিজ্ঞানের এ অংশকে অস্বীকার করা ছাড়া উপায় থাকেনা। আরো একটি বিষয় হচ্ছে অনেকে বিবর্তনের Time Scale এর দিকে পুরোপুরি মনোযোগ প্রয়োগ করেন না। আমি যদি আমার দাদার চেয়ে বুদ্ধিমান হই, এবং আমার পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে কয়েক লক্ষ বছর ধরে যদি এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে তাহলে আমার কয়েক লক্ষ বছর পরের প্রজন্ম আমার দাদার চেয়ে কতটুকু বেশি বুদ্ধিমান হবে তা কল্পনাতীত। আর এরকম আরো কয়েকটি মৌলিক ও নাটকীয় পরিবর্তন ধীরে ধীরে হয়ত আমাদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রজাতির আভির্বাব ঘটাবে।
- sohailchowdhury
মন্তব্য
পড়ে মনে হলো আপনি ল্যামার্কের মতবাদে প্রভাবিত। প্রকৃতপক্ষে জীব পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য কোন বৈশিষ্ট্য অর্জন করে না। বরং তার মধ্যে ক্রসওভার ও মিউটেশনের ফলে উদ্ভূত ক্ষুদ্র পরিবর্তন ওই পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর মত হলে সেই বৈশিষ্ট্য ন্যাচারাল সিলেকশনে টিকে যায়, এবং এই পরিবর্তনগুলো জমা হতে হতে সম্পূর্ণ নতুন একটা প্রজাতির উদ্ভব হয়।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
হ।
এই ব্যপারটা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে না বললে গোল লেগে যায়!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বিবর্তনবাদের নাম শুনে আকর্ষিত হয়ে পড়তে গেলাম, কিন্তু লেখাটায় তেমন কিছুই নেই বলতে গেলে ... আপনি যে দুয়েকটা কথা লিখেছেন এই নিয়ে বহু বিস্তারিত আলোচনা আছে এমনিতেই... তার উপর আভির্বাব ইত্যাদি নানা বানানভুল...
আমি এখানে বিবর্তনবাদের ব্যাপারে আমার ধারনা সহজভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম। মিউটেশন ও ক্রসওভার এর ব্যাপারটা মাথায় আসলেও সহজ কোন উদাহরণ পাইনি। তবে ল্যামার্কের মতবাদটা আমার জানা ছিলনা। রেফারেন্স এর জন্য সজল সাহেবকে ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে এরকম বিষয় নিয়ে লেখার আগে হোমওয়ার্কটা অবশ্যই করে নেব।
আমি আসলে সচলায়তনে নতুন। কিছুটা অতি উৎসাহেই এ পোষ্টটা দেয়া। অনেকদিনের চর্চার অভাবে এবং কিছুটা তাড়াহুড়ো করে পোষ্ট দিতে গিয়ে আমার ভাষা ও বানানে ভুল হচ্ছে। সচলায়তনের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার আশা রাখি।
যাইহোক, আমার লেখার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসে আপনাদের মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনি মনে হয় ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারেননি, আপনার সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে ধারণাটা ল্যামার্কের ধারণার সাথে মিলে যায়, যেটা ভুল। আমার দেয়া লিংকএর চারটা লিংকই দেখেন, একটু পরিস্কার হতে পারে। মূল ব্যাপার হচ্ছে, জীব পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য কোন বৈশিষ্ট্য অর্জন করেনা, এবং সেটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত ও হয় না। যেমন ল্যামার্কের মত জিরাফের গলা লম্বা হওয়ার কারণ হচ্ছে, গাছের উচ্চতা বাড়ার কারণে এক প্রজন্মের জিরাফ গলা উচু করে পাতা খাওয়ার চেষ্টা করে, তার গলা একটু লম্বা হয়, আর এই লম্বা হওয়ার ব্যাপারটা পরের প্রজন্মে চলে যায়, এভাবে অনেক প্রজন্ম যাওয়ার পর জিরাফের গলা আজকের মত লম্বা। কিন্তু ব্যাপারটাতো তা নয়, ব্যায়াম করে দশাসই শরীর বানালেই কিন্তু আপনি এই নিশ্চয়তা দিতে পারেন না যে আপনার সন্তান পালোয়ান হয়ে জন্ম নিবে।
অন্যদিকে ডারউইনের মতে (এবং এটাই বিবর্তনের গৃহীত মত), কোন একটা প্রাণী/প্রাণী দম্পতির অনেকগুলো বাচ্চা জন্ম নিল, তাদের মাঝে অনেক রকম ভ্যারিয়েশন দেখা যাবে, কিছু বাচ্চার মাঝে সামান্য অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট দেখা যাবে, এর মাঝে যে ভ্যারিয়েশন এবং বৈশিষ্ট্যগুলো ন্যাচারাল সিলেকশনে টিকে যাবে, তারাই পরবর্তীতে পরের প্রজন্মে সঞ্চারিত হবে। এভাবে চলতে থাকবে।
আসলে বিবর্তন ভালোমত বুঝতে পারলে সবারই সুবিধা। এই জন্য অনলাইনে ডকুমেন্টারী দেখতে পারেন, বই পড়তে পারেন। আমি সুযোগ পেলেই এই নিয়ে ঘাটি, নিজের বুঝার ব্যাপারটা আরো পরিস্কার করার জন্য। জানেনই তো জানার কোন শেষ নেই
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সজল সাহেব আপনাকে ধন্যবাদ। বিবর্তনবাদ সম্পর্কে আমার ধারণার ছিল যে 'পারিপার্শ্বিকতার প্রয়োজনে' জীব প্রজন্মে ছোট ছোট পরিবর্তন আসতে থাকে। আমি আপনার মন্তব্য ও লিংক পড়ে আমি ঠিক বুঝে থাকলে এটাই হচ্ছে ল্যামার্কীয় দৃষ্টি ভঙ্গি, যা পরবর্তিতে ডারউইনের তত্ত্ব ভুল প্রমান করে প্রতিস্থাপন করে ফেলে। ডারউইনের তত্ত্বের বক্তব্য ছিল জীব প্রজন্মের নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ বা বিলুপ্তির কারন 'পারিপার্শ্বিকতার প্রয়োজন' নয়। এগুলো বরং প্রাকৃতিক নির্বাচনে টিকে যাওয়া (ক্রসওভার ও মিউটেশন এর ফলে আসা) কিছু random পরিবর্তন। আর দীর্ঘ কাল ধরে এরকম বৈশিষ্টের সমষ্টি অনেক সময় নতুন প্রজাতির আবির্ভাব ঘটায়।
আমার বক্তব্য বা ধারণায় ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দিবেন আশা করছি।
এবার অনেকটাই ঠিক আছে। তবে আমি যতটুকু বুঝি টিকে যাওয়া বৈশিষ্ট্যের র্যান্ডম অংশটা আসে মিউটেশনের জন্য, কিন্তু পুরো পরিবর্তন র্যান্ডম না। একটা কাজ করুন না, বিবর্তনের উপর ভালো কোন বই পড়ে সহজ করে আরেকটা ব্লগ লিখে ফেলুন। বন্যা আহমেদের "বিবর্তনের পথ ধরে" বাংলায় লিখা বিবর্তনের উপর একটা ভালো বই। ভালো থাকবেন।
আর ইয়ে সজল এর পর সাহেব না লাগালেই কি নয়, নিজেকে বয়োবৃদ্ধ মনে হয়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
নতুন মন্তব্য করুন