এমিলি ও জাহিদদের জন্যে প্রার্থনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২২/০৭/২০১১ - ১০:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রার্থনার শক্তি ও সামর্থে আমি মোটামুটি আস্থাশীল। আমার মনে আছে, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে এসে গোটা বাঙালীর সমস্ত আবেগ আর ভালোবাসা যেন কেন্দ্রীভূত হয়েছিলো ১১টি দামাল ছেলের মাঝে। নিজের অজান্তেই আমরা সবাই সেদিন এই ছেলেগুলোর জন্য প্রার্থনা করেছিলাম। চোখের জলে হয়তো ভিজে গেছি আমরা, কিন্তু শেষ বলটি না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রার্থনা করে গেছি। বাংলাদেশ ফুটবল দলের জন্য কিংবা দেশীয় কোন ক্লাবের জন্য শেষ কবে এমন প্রার্থনা করেছি, মনে পড়ছে না। ছোটবেলায় যখন আবাহনীর হারে বুক ভার হয়ে থাকতো সারাদিন, মোহামেডানের প্রতিটা খেলোয়াড়কে চিরশত্রু মনে করে শাপ-শাপান্ত করা হতো অযথাই, যে জন্যে প্রিয় খেলোয়াড়ের তালিকায় আলফাজ কিংবা জুয়েল রানার জায়গা হয়নি কখনো, হয়েছে মোনেম মুন্না আর আরিফ খান জয়ের মত আবাহনীয়ানদের, সেই যুগ কতো দূরে ফেলে এসেছি---এখন ভাবতেই অবাক লাগে। ওয়ালী ফয়সাল আর মিঠুনদের খেলা তাই এখন আর দেখা হয় না---স্নেইডার আর নেইমারদের পাল্লায় পড়ে গোল্লায় গেছি বহু আগেই। তবুও সেদিন যখন বিশ্বকাপের প্রাক বাছাই ম্যাচে পাকিদের সাথে বাংলাদেশের ম্যাচ পড়লো---সব ছেঁড়েছুঁড়ে ভাবলাম দেখেই ফেলি। কী আছে জীবনে?

ব্‌ষ্টিস্নাত সেই ম্যাচে দু'দলের কেউই উচ্ছ্বসিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। এবং বলা বাহুল্য, মাঠের যেই দুর্গম বারি কান্তার অবস্থা ছিল, তাতে স্বাভাবিক পারফরম্যান্সই দেখানো দুস্তর ছিল, উচ্ছ্বসিত তো দূরের কথা। তুলনামূলক ভালো খেলে তবু বাংলাদেশ জয় ছিনিয়ে নেয় ৩-০ গোলে। এবং সবাইকে চমকে দিয়ে একটা গোলও করে বসেন এমিলি। 'চমকে দেন' কথা এই কারণে বলছি যে, গোটা লীগে শেখ জামালের সাইডবেঞ্চে শুয়ে বসে কাটিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। এমিলির এই রাজকীয় আরাম-আয়েশের নেপথ্য কারিগর ছিলেন শেখ জামালের শ্রীলঙ্কান কোচ পাকির আলী সাহেব। ক্লাব কর্ত্‌পক্ষেরও নিশ্চয়ই কিছু দায় থেকে যায় এখানে। তারা জাতীয় দলের সব খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছেন নিশ্চিত শিরোপা পাবার আশায়। তার উপর আফ্রিকা থেকে ভাড়া করে এনেছেন একঝাঁক মাগুর মাছ। ধারে ও ভারে এই মাগুর মাছদের তুলনায় আমাদের ছেলেরা হয়তো কিছুটা পিছিয়ে, তাই বলে এমিলির মত ফরোয়ার্ড বদলি খেলোয়াড় হিসেবে কোচের বদান্যতার অপেক্ষায় থাকবেন, এটা ভাবতে খুব কষ্ট হয়। দেশের ফুটবলের ন্যূনতম ভালো চাইলেও এমন কাজ করতে মঞ্জুর কাদের সাহেবদের দ্বিধা হত। সে যাই হোক, সুখের খবর এই যে, এমিলি আবার ফর্মে ফিরেছেন এবং তা শেখ জামালের কর্ত্‌পক্ষের মুখে চপেটাঘাত করেই।

তো পছন্দের খেলোয়াড় এই এমিলিকে নিয়ে একটি মন খারাপ করা সংবাদ পড়লাম গতকাল পত্রিকায়। এমিলি আর দেশীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিঠুন নাকি জাতীয় দলের অনুশীলন ফাঁকি দিয়ে মানিকগঞ্জে গেছেন কী এক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে (প্রচলিত অর্থে 'খ্যাপ' খেলতে)। যে খেলোয়াড়দের নামীদামি ক্লাবগুলো ২০-২২ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেয় প্রতি বছর, তারা কেনো সামান্য ক'টা টাকার জন্য নিজেদের পরিচয় গোপন করে 'খ্যাপ' খেলতে গেলেন? এমিলির ব্যাপারটা তবু জাস্টিফাই করা যায় এই ভেবে যে, ছেলেটা বহুদিন ধরে খেলে না। গোলগাল বলটায় লাথি দেবার জন্য হয়তো তার হাত-পা (:পি) নিশপিশ করছিলো। কিন্তু মিঠুনের ব্যাপারটা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। একটা সময় ছিলো যখন ফুটবলারদের আন্দোলন করে খেলার অধিকার আদায় করে নিতে হত। এখন তো আর সেই যুগ নেই। সারা বছর ধরে খেলা হচ্ছে। পরপর দু'বার কোটি টাকার টুর্নামেন্টও আয়োজিত হল। এই সুযোগে কাজী সালাহউদ্দিন অবশ্যই একটা বড়সড় ধন্যবাদ পেতে পারেন। কাজপাগলা এই লোকটা ফুটবলকে ফুটবলারদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরপরও তরুণ ফুটবলারদের এসব আচরণ আমাদের ব্যথিত করে বৈকি। আশা করি, এই ঘটনা থেকে তারা কিছুটা হলেও শিক্ষা নেবেন এবং নগদ লোভের পেছনে চাবুক না ছুটিয়ে দেশকে কিছু দেবার চেষ্টা করবেন। এই দেশের মানুষ আর কিছু না হোক, মন উজাড় করে ভালবাসা দিতে জানে। সেটাই বা কম কিসে?

২৩ জুলাই, ২০১১। হ্যাঁ, কালকের এই দিনটা হতে পারে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের এরা দিনগুলোর একটি। কেননা, এদিন লেবাননের বিরুদ্ধে ওদের মাটিতে খেলতে যাচ্ছে আমাদের জাহিদ-এমিলিরা। এই রাউন্ড উৎরোতে পারলে কোরিয়া-জাপানের মত দলের সাথে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাব আমরা। বহুদিন দেশের ফুটবলকে নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখি না আমরা। আজ হঠাৎ করেই কেন জানি মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ পারবে। নিশ্চয়ই পারবে। এই মিঠুন-এমিলিরাই আমাদের আনন্দে উচ্ছ্বল করে তুলবেন, যেমনটা করেন তামিম-সাকিবরা। মেসি-রোনাল্ডোর খেলা আমাদের উচ্ছ্বসিত করে, কিন্তু গর্বিত করে না। আপনাদের সাফল্য, সে যত সামান্যই হোক না কেন, তা আমাদের অহংকারে স্ফীত করে। নিষ্প্রাণ বাঙালী দপ করে জ্বলে উঠি আপনাদের এক একটি জয়ে।

সুখবর কী জিনিস, গত কিছুদিনের জীবন পরিক্রমায় আমরা তা ভুলতে বসেছি। প্রতিদিন আমরা একটু একটু করে ব্যর্থ হই, ক্লান্ত হই এবং পরাজিত হই। এই ব্যর্থ-ক্লান্ত-পরাজিত মুহূর্তে তাই একটা জয় আমাদের খুব খুব দরকার। বাংলাদেশের ক'জন আপনাদের এই খেলার খবর রাখছে, আমি বলতে পারবো না। তবে আপনাদের সামর্থ আছে এই অবস্থা পরিবর্তন করার। আপনাদের একটি জয় পারে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে আবার ফুটবল উন্মাদনা জাগিয়ে তুলতে। আমরা দেখেছি, ১৬ কোটি মানুষের প্রার্থনা কখনো বিফলে যাবার নয়। আপনারাই পারেন, দেশীয় ফুটবলকে ভুলে যাওয়া এই মানুষগুলোকে প্রার্থনার ময়দানে জড়ো করতে। অপেক্ষায় আছি সেই দিনের, যেদিন আপনাদের খেলার টিকেট কিনতে গিয়ে আমাদের ফিরে আসতে হবে, শুনতে হবে " টিকেট তো সব শেষ হয়ে গেছে, বাহে।" বাসায় এসে ফেডারেশনকে কষে গালাগাল করবো, ফেসবুকে একগাদা স্ট্যাটাস দিয়ে মনের ঝাল মেটানোর চেষ্টা করবো আর টার্ম ফাইনালের সিলেবাসকে ব্‌দ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সমস্ত দিন কাটাবো আপনাদের জয়ের জন্যে প্রার্থনায়। বাংলাদেশ ফুটবল টিমের জন্য শুভকামনা।

---আশফাক আহমেদ


মন্তব্য

তানিম এহসান এর ছবি

শুভকামনায় যোগ দিলাম!

কৌস্তুভ এর ছবি

প্রার্থনার শক্তি ও সামর্থে আমি মোটামুটি আস্থাশীল।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচেই তো তাদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন কোটি কোটি লোক। কয়টা ম্যাচ জিততে পেরেছে দল? ঠিক ৫০%, একটা কয়েন টসের মত র‍্যান্ডম হলেও যা হত। তাহলে সবার প্রার্থনা কী বুস্ট দিল? ভারতকে ৩৭০ করা থেকে আটকাতে পেরেছিল?

তবে শুভেচ্ছা জানাতে তো দোষ নেই, দোষ নেই আশাবাদী হতেও।

সজল এর ছবি

ওই মিয়া ভাব লন? আর আপনেরা একশো কোটি লোক মিলে প্রার্থনা করছেন, আমাদের পনেরো কোটির প্রার্থনা এর কাছে পারে? চোখ টিপি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

হাহাহাহা...

"সজল" ভায়াকে পারলে এই মন্তব্যের জন্যে "সচল" ভায়া করে দিতাম দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

দুজনকেই চলুক খাইছে

সজল এর ছবি

দেঁতো হাসি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

মন মাঝি এর ছবি

হা হা হা... সাব্বাস ! আপনি শেষমেশ পরিসংখ্যানবিদকে পরিসংখ্যান শিখায়ে দিলেন ! হাসি

****************************************

কৌস্তুভ এর ছবি

কস্কি মমিন!

(ইয়ে, ভালো বলেছেন কিন্তু!)

সজল এর ছবি

একেবারে দিলাম কৌস্তুভের মুখে ঝামা ঘষে!

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

মৌনকুহর. এর ছবি

অনেক অনেক শুভ কামনা.........

শায়ের আমান এর ছবি

আশা করছিঃ বাংলাদেশ ২-১ লেবানন

আশফাক এর ছবি

খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। আপাতত livescore এ চোখ রাখা ছাড়া কোন গত্যন্তর দেখতেসি না

নিটোল ( অতিথি) এর ছবি

আসলেই ফুটবলের নবজাগরণের জন্য দু-একটা বড় জয় দরকার। আমাদের বয়েসীরা ফুটবলের উন্মাদনা দেখেনি, যেমনটা দেখেছে ক্রিকেট নিয়ে। আশা করি এতোসব খারাপ খবরের ভীড়ে উচ্ছ্বসিত হবার মতো সংবাদ এ ছেলেরা আমাদের দিতে পারবে।

নিটোল

ফারুক হাসান এর ছবি

আমি আজকে ড্র হলেই খুশি। খেলাটা যেহেতু লেবাননেই। কিন্তু লেবাননকে হারাতে পারলে বেশ হয়! এর আগে কি কখনো বাংলাদেশ লেবাননের বিপক্ষে জিতেছে?

আশফাক এর ছবি
ফারুক হাসান এর ছবি

ধুররো! ৪ গোল খাইছে।

আশফাক এর ছবি

মন খারাপ(

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।