বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংষ্কৃতি বর্তমানে গড়ে উঠেছে তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে লুটেরা শ্রেণীর চরিত্র পূর্নাঙ্গভাবে ধারন করেছে এ কথা আজ নির্মম সত্য। দূর্নীতি আজ সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের শ্রেণী চরিত্র মূলতঃ একই হলেও এটা ঐতিহাসিক সত্য নয়। বিভিন্ন ধারার সবচেয়ে লুটেরা শ্রেনীর লোকগুলো সামরিক ও বেসামরিক আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগী মধ্যবিত্ত সাম্রাজ্যবাদের দালাল বুদ্ধিজীবিদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের শুরু থেকেই সংগঠিত হয়েছে। এরাই অগনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার রূপকার, ধারক ও বাহক যা এদের শ্রেণী চরিত্র টিকিয়ে রাখার জন্য চরমভাবে অপরিহার্য। এরাই কৌশলগতভাবে সর্বহারা, শ্রমজীবি ও কৃষক ইত্যাদি নিন্মবর্গীয় শ্রেণী থেকে দালাল সৃাষ্টি করে এবং এইসব দালালদের অর্থনৈতিক শ্রেনী-উত্তোরণ ঘটায়। এসব দালালের মাধ্যমেই সাম্রাজ্যবাদী নেটওর্য়াক নিন্মবর্গীয় মানুষের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক শৃঙ্খল তৈরির মাধ্যমে শোষনমূলক এক অসম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বহমান রেখেছে।
এ শৃঙ্খলে গরিবের হাত-পা সব সবয়ই বাঁধা তাই ভোটের রাজনীতিতে সবসময়ই এদেশের লুটেরা অংশই জয়ী হয়েছে। এক নব্য জমিদারী প্রথায় প্রজারা সব সময়ই মেনে নিয়েছে প্রভু ও তাদের পালিত দালালদের প্রতারনা ও জালিয়াতি। এই জালিয়াত শোষকরা নব্য-উপনিবেশ কায়েমের মাধ্যমে কয়েকশ বছরের পুরোনো আর্ন্তজাতিক শোষক চক্রকে এক প্রায় অনতিক্রম্য শক্তিতে পরিণত করেছে। বড় বড় সাম্রাজ্যের উপনিবেশিক শাষন ও প্রতিনিধিত্ব তাদের এদেশীয় দালালদের হাতে হস্তান্তরের মাধ্যমে সাবেক প্রকাশ্য উপনিবেশিক শক্ষি মূলতঃ নব্য-উপনিবেশ বহাল রেখেছে। এ পরোক্ষ শোষন যে কম পুঁজিতে বেশী লাভজনক ব্যবসা আর সে অনুসিদ্ধান্ত যে সত্য তা উপলব্দির পর সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের এদেশীয় দালালদের উপর আর্শিবাদের হস্তকে চিরস্থায়ীভাবে প্রসারিত করে। এই নব্য-উপনিবেশে এক ছাপোষা কিন্তু শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে যারা মূলতঃ সাম্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তথা পুঁজিবাদের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা থেকে রস সংগ্রহ করে পরগাছা হিসেবে বেঁচে থাকে। উপনিবেশিক আমল থেকেই এরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করলেও ক্রমে এরা নব্য উপনিবেশিক আমলে চরম পুঁজিবাদের বিকাশে মূখ্য সহায়ক অঙ্গ হিসেবে আবির্ভূত হয়। কেননা এলিটদের পরগাছা হিসেবে এরা শাষক শ্রেণীর অবিচ্ছেদ্য অংশ নিজেদেরকে দেখার মানসিকতা লাভ করে যা এদের দালাল চরিত্রকে আড়াল করে দেয় আমলা, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, ব্যবসায়ী ইত্যাদি উপাধি নিজ নিজ সুবিধানুযায়ী নিজেদের মদ্ধ্যে বন্টন করে নেয়ার মাধ্যমে। যেহেতু সাম্রাজ্যবাদের দালাল গোষ্ঠী থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ এরা সবসময়ই অগনতান্ত্রিক শাষন ব্যবস্থার লেজুরবৃত্তির মাধ্যমে শ্রেণী উত্তোরনের চেষ্টা চালিয়ে যায়। কেননা উপনিবেশ অগনতান্ত্রিক শাষন ও সাম্রাজ্যবাদ একে অন্যের আষ্টে পিষ্টে বাঁধা। এই মধ্যবিত্ত গোষ্ঠীই মূলতঃ নিন্মবর্গের সাধারন মানূষকে ধোঁকা দেয়ার কাজটি করে থাকে। নব্য-উপনিবেশ আমলে এরা এত শক্তিশালী যে সাম্রাজ্যবাদের স্থানীয় প্রধান এজেন্ট ও প্রশাসক এদের মধ্য থেকেই বেছে নেয়া হয়। তাই স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় এই দালাল চক্রের মাধ্যমে অগনতান্ত্রিক শাষনকে স্থায়ী রূপ দেয়ার ক্রমাগত চক্রান্ত দেখতে পাই কখনও মুসলিম লীগ, কখনও বিএনপি, কখনও জাতীয় পার্টি আবার কখনওবা জামাত নামক সাম্রাজ্যবাদের তোষক বিভিন্ন দূবৃত্ত চক্র দ্বারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা থেকে।এই দালাল গোষ্ঠীই ১৯৭৫ সালের পর বেশীরভাগ সময় জুড়ে এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল।
নিন্মবর্গের মানুষদের কথা যে অবদমিতই থেকে গেছে তা কিন্তু নয়। এদেশের রাজনীতিতে মূলত দুটি ধারাঃ আওয়ামী লীগ ও এন্টি আওয়ামী লীগ লুটেরা ও দালাল নেতৃত্বাধীন ধারা ছিল প্রথম থেকেই। দূর্বল নেতৃত্ব, বিচ্যুতি, বিবৃতিবাজ আর্মড চেয়ার (armed chair) ও বড় বড় কথা বলা পলিটিশিয়ান এবং সুবিধাবাদীদের কারনে এক সময়কার বড় ধারার বাম রাজনীতি ক্রমশ ম্রিয়মান। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, সমাজতন্ত্রী ও গনতন্ত্রের চেতনায় বিশ্বাসী সব শ্রেণীর সাধারন জনগনের আস্থা অর্জন করে ৬০ এর দশকেই চুড়ান্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। স্বাধীন বাংলার রূপকার মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনই আওয়ামী লীগের এ জনপ্রিয়তার মূল কারন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হাজার পাতা লিখলেও তা শেষ হবেনা। যাহোক, বঙ্গবন্ধু মানুষের আস্থার মর্যাদা রেখেছিলেন বলেই বাকশাল গঠনের মাধ্যমে একটি কল্যাণমূলক আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর কাজ শেষ করে যেতে পারলে বাঙালী আজ হয়ে উঠত পৃথিবীর বুকে এক মহান জাতি। অবসান হতো ২ শত বছরেরও অধিককাল স্থায়ী সাম্রাজ্যবাদী শোষনের। বাংলার মুক্তিকামী জনগন হয়ে উঠত পৃথিরীর সব শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অনুপ্রেরনা। তা হয়নি, তার আগেই হয়েছে ১৫ আগষ্ট ট্র্যাজেডি।
আতংকিত সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি তাদের এদেশিয় দালালদের সহায়তায় ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে মুক্তিকামী মানুষের সপ্নের বাংলাদেশকে শুরুতেই গ্রাস করে নেয় এবং পরের ২১ বছর এদেশীয় দালাল ও তাদের বিদেশী প্রভূরা এদেশে চালায় নির্বিচার লুটপাট। এসময় দালাল চক্র তৃণমূল পর্যন্ত এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করে এবং অপপ্রচার চালিয়ে ধোঁকা দিয়ে জনগনকে কাছে টানার চেস্টা করে। কিছটা সফলও হয়, একশ্রেণীর মানুষকে বিভ্রান্ত করে দলে টানতে সক্ষম হয়। এসময়ই এদেশে ধনী আরো ধনী হয়েছে, উল্টোদিকে গরিব আরো গরিব হয়েছে। দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ চরম দরিদ্রসীমার নীচে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হয়। টানা দীর্ঘ ২১ বছরের হরিলুটের ফলে সমাজ মনস্তত্বে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। দূর্নীতি সমাজের ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মই নিয়ম বলে সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিগনিত হতে থাকে। অবৈধ অর্থ উপার্জন করার মানসিকতা ছাত্র ও যুবসমাজের একাংশকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। চরম বেকার সমস্যা ছাত্র ও যুবসমাজের মনস্তত্বে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, দলে দলে তরুন সহজে ধনী হবার আশায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে দালাল শ্রেণীর কর্মচারি বনে যায়। ফলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, খুন-খারাবি সহ বিাভন্ন অপরাধ পেশা হিসেবে জনপ্রিয় হতে থাকে, সেই সাথে ধীরে ধীরে সমাজ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সাম্রাজ্যবাদী লুটেরা সংস্কৃতি বিক্ষেপিত (diffused) হয়ে এক দ্রুত পচনশীল সমাজের জন্ম দিলেও বড় অংশ তখনও আদর্শ বিচ্যুত হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মুক্তিকামী জনগন এসময় উপলব্ধি করে যে দালাল চক্র পচনশীল এ সমাজে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে তাদের পুরোনো কৌশল (common strategy) প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের চক্রান্তে লিপ্ত। এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এক গনআন্দোলন গড়ে ওঠে। তারপরও দালাল চক্র ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন ও সম্পন্ন করে। ফলে গনআন্দোলন দূর্বার অসহোযোগ আন্দোলনে পরিনত হয় ও গন অসহযোগীতার মুখে দালাল চক্র ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। আওয়ামী লীগ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। যদিও এবারও নীল নকশার নির্বাচনের মাধ্যমে গনরায় পাল্টে দেয়ার ষড়যন্ত্র হয় এরং দুষ্কৃতিকারীরা কিছুটা সফলও হয়, তারপরও গনপ্রতিরোধের মুখে তাদের পক্ষে নির্বিচার কারচুপি করা সম্ভব হয়নি। গনআন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ এক ঐতিহাসিক ভুল করে বসে। ৭১’র পরাজিত মৌলবাদী অপশক্তি বাংলাদেশে তাদের রাজনৈতিক বৈধতা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ৯৬’র গনআন্দোলনে শরিক হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এই অপশক্তির দূরাভিসন্ধি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। এর জন্য এদেশের জনগনকে পরবর্তী সময়ে অনেক বেশী মূল্য দিতে হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির পাশাপাশি মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদী আমলাদের একাট অংশ তাদের শ্রেণী চরিত্র অক্ষুন্ন রেখে তাদের কৌশল (strategy) পরিবর্তন করে জনতার মঞ্চে যোগদান করে রাতারাতি আওয়ামী লীগার বনে যায় । সাম্রাজ্যবাদী ষড়যক্ত্রের ফলাফল সমাজ পচনের জীবানু আওয়ামী লীগকে সময়ের পরিক্রমায় অনেকটা গ্রাস করে নেয়। নতুন প্রজন্মের কর্মীদের অনেকেই ক্ষত-বিক্ষত সমাজের প্রচলিত লুন্ঠন ব্যবস্থাকেই সহজে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক এলিট শ্রেণীতে উত্তোরনের কৈৗশল হিসেবে ধারন করতে থাকে। এরা মুক্তিযুদ্ধের ও কল্যাণ রাষ্ট্রের চেতনা থেকে বিচ্যুত হয় এবং সাবেকী আমলের দুবৃত্তদের প্রতিচ্ছবি হিসেবে আর্বিভূত হয়। দলটির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছুসংখ্যক সাম্রাজ্যবাদী ভূত আবারো ৭২-৭৫ সালের ভূমিকায় আর্বিভূত হয়ে স্বরুপে ফিরে আসে ও লুটপাটে নেতৃত্ব দিতে থাকে। আওয়ামী নেতৃত্ব এদের দমন করতে পূর্বের মত দারুনভাবে ব্যর্থ হয়। অনেকক্ষেত্রে সরকার প্রধান ও দলীয় সভাপতিকে এদের সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি মনে হতে থাকে। দুই আমলেই এর প্রধান কারণ অবশ্য সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন পরবর্তী সময়ের সামাজিক বিশৃংখলা ও ফলাফলস্বরূপ জনগনের একাংশের নৈতিক বিপর্যয়। সম্ভাব্য কার্যকারণ সম্পর্ক পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সাম্রাজ্যবাদী নিপিড়ন, শোষন ও বঞ্চনা থেকে দৃশ্যত মুক্তির পরবর্তী কিছুকাল জনসংখ্যার একটি অংশের (পিড়নজনিত কারনে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত মুক্তি সংগ্রামী ও চরম নিপিড়িত মানুষ) নৈতিক বিপর্যয় অস্বাভাবিক নয় যা সেই অংশের মানুষের স্থায়ী মনস্তত্বে পরিনত হতে পারে যার সুযোগ গ্রহণ করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের অনুগত দালালরা। এই সমাজ মনোস্তত্ব স্বাধিনতা পরবর্তী বাংলাদেশ ও উত্তর উপনিবেশিক আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দেখতে পাই। যাহোক, নব্য আওয়ামী লীগার ও প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা দালালরা আওয়ামী লীগের শর্ষের ভুতদের সাথে একাত্ব হয়ে গনরাজনীতিতি চরম নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি করে। এদের সহযোগীতায় ও এদের অবৈধ পুঁজির ব্যবহার করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সব স্তরে বিশৃংখলা সৃষ্টির মাধ্যমে জনগনের সরকারের বিরুদ্ধে পুনরায় ষড়যন্ত্র শুরু করে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি। এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে তৃণমুল পর্যায় পর্যন্ত সব স্তরে এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছাতে থাকে, সেই সাথে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ও উপাত্ত সরবরাহের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে দেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করা হয়। ফলে এদেশের সাধারন মানুষের মুক্তির স্বপ্ন ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে। সমাজ মনস্তত্বে আবার লাগে ধাক্কা। সাধারন পার্টি কর্মী ও নিন্মবর্গের মানূষের কণ্ঠস্বর (subaltern voice) রোধ করা হয়। বিভ্রান্ত হয় সাধারন মানুষ - অনেকেই আওয়ামী লীগ ও দালাল গোষ্ঠীর কেন পার্থক্য খুঁজে পায়না। এক অস্থির সমাজ মনস্তত্বের সুযোগে সাম্রাজ্যবাদীরা পরবর্তী সাধারন নির্বাচন সামনে রেখে একদিকে জনমনে আওয়ামী বিরোধী মনভাব গড়ে ও আওয়ামী লীগকে ইসণাম ধর্ম বিদ্বেষী অপপ্রচার করে ধর্মীয় মৌলবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর মাধ্যমে সাধারন মানুষের আবেগের সাথে প্রতারনা করার কৌশল গ্রহন করে এবং দেশব্যাপী ইসলামী জঙ্গিবাদীদের নেটওর্য়াক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, সাধারন নির্বাচনের সময় অবৈধ পুঁজির ব্যাপক বিনিয়োগ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে থাকা এজেন্টদের সাহায্যে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। আবারও সফল হয় সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সব কারিগরী ষড়যন্ত্র (conspiracy mechanism) সফল করার মাধ্যমে ২০০১ সালের আবার রাষ্ট্রক্ষমতা কেড়ে নেয় পুরোনো লুন্ঠনকারী চক্র। শুরুতেই এবার তারা পরিকল্পনা করে গনহত্যা চালিয়ে আওয়ামী লীগের কণ্ঠস্বরকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়ার, দেশব্যাপি হত্যা করা হয় হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীকে, আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয় হয় লক্ষ লক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী। চরম ধর্মান্ধতার বর্গিপ্রকাশ ঘটায় ধর্মীয় মৌলবাদী অপশক্তি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নেমে আসে চরম নির্যাতন। লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘুর ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া হয় ও সম্পত্তি জবর দখল করে নেয়া হয়। দেশব্যাপি ধর্ষিত হয় কয়েক হাজার নারী যাদের বেশীরভাগই ছিল সংখ্যালঘু। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুষ্কৃতিকারীদের নির্বাচন পরবর্তী এ চরম সন্ত্রাসে অসহায় হয়ে পড়ে সাধারন মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর পুত্রদ্বয় ও তার বন্ধুগনের, তার ভাই-বেরাদারদের এবং দলীয় নেতাদের নজিরবিহীন দৌরাত্বে এদেশ পরিণত হয় হীরক রাজার দেশে। রাস্ট্র আর জনগন পরিচিত হয় নজিরবিহীন সব অভিজ্ঞতার সাথে। চোরাচালানকারী হয় লাঠিপেটা মন্ত্রী। টাকার কুমির বনে যায় আরো অনেক নাম না জানা লোক। এই লুটেরা সরকার আর তার দোসর জামায়াতে ইসলামী হাসিল করতে থাকে যার যার স্বার্থ। জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথমবারের মত জঙ্গিবাদ মাথাচারা দিয়ে ওঠে এদেশে। অন্যদিকে দূর্বল বিরোধী দলকে আবার গোছাতে থাকেন শেখ হাসিনা। যেহেতু একই মুদ্রার ভিন্ন পিঠ হিসেবে তারা আগেই চিহ্নিত হয়েছে, সাধারন সমর্থক ও জনতা তাতে সাড়া প্রদান করেনি। শুরু হয় রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া সরকার ও বিরোধীদলের ক্ষমতার দ্বদ্ধ। বিরোধীদল রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হলেও তাদের রাজনৈতিক অবস্থান জামাত তথা মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ বিরোধী। জামাত উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারলেই রাজৈেনতিকভাবে দেউলিয়া আওয়ামী লীগকে খতম করা সম্ভব। আর এতেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে ধর্মভিত্তিক বাংলাদেশ রাস্ট্র। অন্যদিকে তারা হটকারী বিএনপির নিয়ন্ত্রক চক্রকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে শেখ হাসিনাকে শেষ করতে পারলেই সারা জীবন ক্ষমতায় থাকার পথ পরিস্কার। ২১ আগষ্ট ২০০৪ সংগঠিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নারকীয় রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি, সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। সবকিছু মিলে দেশে যে অরাজকতা তৈরী হয় তাতে জনগনের কাছে নগ্ন হয়ে পড়ে বিএনপি-জামাতের আসল চেহারা।
৭৫ পরবর্তী ক্রমশ অধঃপতিত রাজনীতি আওয়ামী লীগকে নষ্ট করলেও এবং ক্রমশ লুন্ঠনজীবিদের বিচরনক্ষেত্রে পরিনত হলেও বাংলাদেশ নামের আমাদের এই রাস্ট্রের জন্মেলাভের যে আবেগ, তা থেকে এদেশের জনতা কখনও আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়নি। যদিও একথা আজ প্রামানিত সত্য যে আওয়ামী লীগ সব সময়ই জনতার আবেগের সাখে বিশ্বাসঘাতকতাই করেছে। যাহোক, বিএনপি-জামাতের দূঃশাষনে অতিষ্ট জনগনকে নিয়ে আবার সংগঠিত হয় আওয়ামী লীগ। জনগনের অবশ্য যাবার অন্যকোন জায়গাও ছিলনা। এদেশে মানুষের কথা ভাবে, মানুষের জন্য রাজনীতি করে এমন নেতা আর দল যে নেই। শুরু হয় দুই দল ধোকাবাজের ক্ষমতার দ্বদ্ধ। একদল চালাতে থাকে লুন্ঠন আর একদল করে হরতাল। এ হরতাল ছিলনা মানুষের অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে, ছিল পরবর্তী লুন্ঠনকারী হিসেবে আর্বিভূত হতে। ফলাফল যা হবার তাই হলো, শুরু হলো সংঘাত। নব্য উপনিবেশবাদীরা এ সুযোগটাই খুঁজছিল। অনেকদিন থেকেই তৃতীয় শক্তির খোঁজ করছিল, কেননা লুটেরা হলেও রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে সব সময় সব সুবিধা আদায় করা কষ্টকর। রাজনৈতিক লুটেরা প্রাতিপক্ষগুলোকে একমঞ্চে এনে কাজ করানো অনেক সবসময়ই কঠিন, এটা তারা বুঝতে সক্ষম হয়েছিল। কেননা বৃহত্তরভাবে উদ্দেশ্য এক হলেও ক্ষমতার লড়াইয়ে সাম্রাজ্যবাদের স্থানীয় এজেন্টরা পরস্পর বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে। নব্য উপনিবেশিক দেশগুলোতে এরা বিভিন্ন বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা হিসেবে নিযুক্ত হয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মেকানিজমে। এরাই জনগনের সাথে ধোকাবাজীর স্থানীয় নীল নকসা প্রনয়ন করে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সুতোর টানে এরা পুতুল নাচে। আবার সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোও কৌশলগত ও বানিজ্যিক স্বার্থে একে অন্যের উপনিবেশ দখলের আবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যায়। ১/১১ পূর্ববর্তী বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর ক্রিয়াশীল পক্ষগুলোর মধ্যে সবগুলো অর্ন্তঃদ্বন্ধ ও বহির্ঃদ্বন্ধই সক্রিয়ভাবে ক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছিল। ফলে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ ব্যাহত হতে থাকে ও প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টারত অন্য নব্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দ্বারা চ্যালেঞ্জের সমুক্ষিন হয়। এই পরিস্থিতিতে প্রাধান্যবিস্তারকারী মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পূর্বপরিকল্পনানুযায়ী তৃতীয় পক্ষকে সামরিক বাহিনীর এজেন্টদের মাধ্যমে রাস্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। শুরু হয় সিভিল এজেন্ট দ্বারা পরিচালিত সামরিক এজেন্টের সমর্থনপুষ্ট অন্তবর্তীকালীন সরকারের নামধারী এক নজিরবিহীন শাসন। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল প্রতিদ্বন্ধী অন্য এক নব্য সাম্রাজ্যবাদী আঞ্চলিক উদিয়মান শক্তি। বাংলাদেশের জনগনের বড় একটা অংশ আঞ্চলিক এই সা¤্রাজ্যবাদীদের বিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে। বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলোকে এরা বাগে আনতে না পারলেও সামরিক বাহিনীতে, তথাকথিত বুদ্ধিজীবি নামধারী সিভিল (!) সোসাইটিতে, বেসামরিক আমলা হতে আর রাজনীতিবিদদের মাঝ হতে ব্যাপকভাবে এজেন্ট নিয়োগ করতে সক্ষম হয়। রাজনৈতিক সরকারহীনতার সুযোগে এদের পোষা বলয়টিও সরকারে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে সক্ষম হয়। এ পরিস্থিতি আর দক্ষিন এশিয়ার রাজনৈতিক আধিপত্যের ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তিটির সাথে পশ্চিমারা উইন-উইন গেম (Win-win game) খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরু হয় এদেশে উত্তর উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের নতুন মেরুকরন। নতুন লেজুর রাজনৈতিক দল গঠনের কৌশল ব্যর্থ হয়, স্থানীয় দালালদের মধ্য থেকে যোগ্য (!) নেতার অভাবে। বিশ্লেষন করে দেখা হয় স্বাভাবিক নির্বাচন হলে পুরোনো লুটেরা দুই গোষ্ঠীর মধ্যে যে জয়লাভ করবে তাদের সাথেই নতুন করে সমঝতা করাটাই লাভজনক। নির্বাচন হলো। আওয়ামী লীগ জিতল। আবার নতুন বিভ্রান্তিতে ভোট দিল এদেশের জনগন। আগের চেয়ে অনেক বেশী শক্তি নিয়ে গঠন করল সরকার। আবার প্রতারিত হল এদেশের মানুষ। আবার একই লুন্ঠনকারীদের কবলে দেশ। এখানে এখন বেঁচে থাকা দায়। ধোকাবাজদের বিলাসিতা এখন বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। তাই আগের চেয়ে অনেক বেশী গতিতে ধনী আরো অনেক অনেক ধনী হচ্ছে। যেভাবেই হোক গড় আয়তো বাড়ছে ! হোক না গরিব আরো গরিব, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ তো হবে ! এটা এখন হিরক রাজার দেশ। ন্যায় বিচারহীনতার দেশ। বিচার বর্হিভ’ত হত্যার দেশ। শেয়ারবাজার লুটের দেশ। খুনি মওকুফ পাবার দেশ। সীমান্তে ফেলানীদের মেরে সীমানার কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখার দেশ। গনপিটুনিতে ছাত্ররা মরে যাবার দেশ। স্কুলের শিশুরা আকাতরে গরু-ছাগলের মত মরে যাবার দেশ। বিনা শর্তে তেল-গ্যাস-বন্দর ইজারা দেবার দেশ, বিনা শর্তে অন্যরা ট্রানজিট পাবার দেশ। শত শত বিশ্ববিদ্যালয় আর লক্ষ লক্ষ মাস্টারর্স পাশের দেশ ! আরো কত কত কিছুর দেশ।
নব্য উপনিবেশবাদের চুড়ান্ত শিকার এখন বাংলাদেশ। নব্য উপনিবেশবাদ আজ আমাদের সমাজ মনঃস্তত্বে যে পরিবর্তন এনেছে, তা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভ্রান্তিকে সত্য বলে বোঝার বোধ তৈরী করেছে। আমাদের জীবনাচরন আর সংস্কৃতিকে করেছে এলিয়েন। শঠতাই হলো আমাদের আচরন এখন। পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি আর ফ্যাশন হলো এখানকার মানুষের জাতে ওঠার রাস্তা। আসলে ওদের চোখে আমরা ক্লাউন। কত বোকা আমরা ব্যক্তি স্বার্থে দেশকে বিক্রি করি। আসুন আবার তরুন প্রজন্মকে সংঘবদ্ধ করি। বলি ওদের আমাদের এ পরাধিনতার কাহিরুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ। আবার যেতে হবে যুদ্ধে এদেশের সব তরুনদের। দেয়ালে পিঠ আমাদের ঠেকা। এখনই সময়। এসো সবাই, শামিল হই নতুন বিপ্লবে। পৃথিবীর বুকে আমরা হই সব শোষিত আর বঞ্চিত মানুষের নতুন প্রেরনা।
লেখকের নাম Saif Jewel
মন্তব্য
জুয়েল! লিখতে থাকুন! কতদিন দেখা হয়না!
তানিম ভাই, আগে লিখতাম না, শুধু বলতাম। লেখা শুরু করার পেছনে আপনার অনেক অনুপ্রেরনা। সচলায়তনেও আপনারই অনুপ্রেরনায় ব্লগ লেখা। এটা সত্যিই একটা অলটারনেটিভ প্লাটফর্ম। সত্যিই আমাদের দেখা হয়না অনেকদিন। অনেক কথা জমা আছে আপনার জন্য।
সচেতন তারুনের ঐক চাই
অনেক ধন্যবাদ তরুন। অনেক অনেক ভাল থাকবেন। সব শোষন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে তরুন সমাজের ঐক্য এখন সময়ের দাবী।
সচেতন তরুন এর ঐক চাই
ঠিক হয়তো বুঝাতে পারবো না কেন, কিন্তু লেখাটি সুপারফিসিয়াল বলে মনে হলো। স্পষ্ট যুক্তি, তথ্য ও বিশ্লেষণের অভাব বোধ করেছি। পুরো ব্যাপারটিকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কয়েকটি পোস্টে দিতে পারেন।
ফারুক হাসান ভাই,
যদি সুনিদ্দিষ্টভাবে লিখতেন কোথায় কোথায় স্পষ্ট যুক্তি, তথ্য ও বিশ্লেষণের অভাব আছে তাহলে ভালো হতো এবং এ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা করা যেত। আপনাকে ধন্যবাদ।
কয়েকটি উল্লেখ করছি-
১। সমাজ মনঃস্তত্বের পরিবর্তনগুলি ঠিক কি কি তা পরিষ্কার হলো না।
২। পুঁজিবাদ বলতে যে জ্ঞান আমরা পেলাম সেটা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদি অর্থনীতি এবং এটি কম পুঁজিতে বেশি মুনাফার একটা উপায়। এরকম ঢালাওভাবে মনে করার কারণ কি?
৩। সমস্ত দোষ গিয়ে পড়লো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ঘাড়ে, দালাল হিসেবে। আর আমাদের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা? সামরিকযন্ত্র কি মধ্যবিত্তশ্রেণী?
৪। মুক্তিকামী জনগণ কি কেবল আওয়ামী লিগের নেতৃত্বেই বিশ্বাসী?
৫। বাকশাল কীভাবে একটি কল্যানময় মহান জাতির রূপরেখা ছিল?
৬। পোস্টের দ্বিতীয় অংশের প্রধান আলোচ্য বিষয় আওয়ামী লীগ। নব্যউপনিবেশবাদ, মনস্তত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি সেখানে আর দেখা যায় না।
ফারুক হাসান ভাই
১.সমাজ মনস্তত্বের পরিবতর্নের ধারা লেখার দ্বিতীয় ও শেষ প্যারাতে ধারাবাহিকভবে উল্লেখ আছে।
২.পুঁজিবাদ সবসময়ই মুনাফার সাথে সম্পৃক্ত। সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারও মুনাফার লোভেই ঘটে। তাই সাসাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী অর্থনীতি একই সূত্রে গাঁথা।
৩.মধ্যবিত্ত বা মিডল ক্লাস বলতে শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক শ্রেনীকে বোঝায় না। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় উৎপাদন মালিক ও সামন্তপ্রভু ছাড়া সামরিক ও বেসামরিক আমলা, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি সবাই মধ্যবিত্ত।
৪.৭১’র চেতনা থেকে দেখলে মুক্তিকামী জনগন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে বিশ্বাসী ছিল কিন্তু আওয়ামী লীগ তা ধরে রাখতে পারেনি এটা আমার লেখায় আছে।
৫.বাকশাল স্পষ্টতই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রাক পদক্ষেপ ছিল। বাকশাল নাম থেকেই প্রথমত এটা প্রতিয়মান। আর বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ ছিল উপনিবেশিক শাষনের ধারাবাহিকতার ফসল। এর মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু মেহনতি আর সর্বহারা মানুষদের মুক্তির পথ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বাকশাল সময়ে সমাবায় ভিত্তিক ভূমি বন্টনই এর প্রমান। সব উতপাদনশীন খাত ব্যক্তি মালিকানাধীন থেকে রাষ্ট্রীয়করন করাও ইঙ্গিত দেয় তিনি মেহনতি আর সর্বহারা মানুষদের মুক্তির কথাই ভাবছিলেন। আর বাকশাল কোন একদলীয় শাষন ছিলনা বরং পুজিবাদী আর মুনাফাখোর দালালদের বিনাশকরন প্রক্রয়া। কমিউনিষ্ট পার্টি সহ সব প্রগতিশীল দল আর নেতৃত্ব বাকশালের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করেছিল।
৬.লেখাটির দ্বিতীয় অংশের প্রধান আলোচ্য বিষয় আওয়ামী লীগ নয়
আপনাকে আনেক ধন্যবাদ।
১।
আপনি মধ্যবিত্তের যে সংজ্ঞাটা উপরের কমেন্টে দিলেন, সেটা পোস্টের শুরুতে পরিষ্কার করে নেয়া প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু এই সংজ্ঞা কতটুকু ভ্যালিড?
২।
বর্তমান বিশ্বের ধনী এবং পুঁজিবাদি রাষ্ট্রগুলির সবাই কি সাম্রাজ্যবাদী? আমি এইক্ষেত্রে মোটা দাগে কয়েকটি উদাহরণ টানতে চাচ্ছি। প্রথমত, ধরুন কোরিয়ার কথা। উত্তর কোরিয়ায় কম্যুনিজম আর দক্ষিণ কোরিয়ায় পুঁজিবাদ। দক্ষিণ কোরিয়া কি সাম্রাজ্যবাদী? যদি হয়ও, দক্ষিণ কোরিয়ার পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও আপনার বলা সাম্রাজ্যবাদ যে একই সূত্রে গাঁথা সেটা দেখাতে বিস্তারিত ব্যাখ্যার দাবি রাখে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির আরেক উদাহরণ সিঙ্গাপুর কি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র?
মেনে নিচ্ছি যে সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্য হচ্ছে কম পুঁজিতে বেশি মুনাফা অর্জন। কিন্তু একটি পুঁজিবাদী অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হতে পারে (সবসময় নয়) তার ইকোনোমিজ অফ স্কেল। বর্তমান প্রযুক্তির বিশ্বে একটি পুঁজিবাদী অর্থনীতিও ব্যাপক উৎপাদনের উপরে ভিত্তি করে দাড়াতে পারে। পল ক্রুগম্যান দেখিয়েছেন যে আন্তঃরাষ্ট্র বাণিজ্যের জন্য সবসময় তুলনামূলক সুবিধা (comparative advantage) না থাকলেও চলে। তার জন্য দরকার উৎপাদনে ইকোনোমিজ অফ স্কেল। এখন, পুঁজিবাদী অর্থনীতির সামর্থ্য আছে একে ব্যবহার করার, যার জন্য সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের খেলায় ইকোনোমিজ অফ স্কেল দুধভাত চাল ছাড়া বেশি কিছু নয়।
৩। আপনি ধরে নিয়েছেন যে বঙ্গবন্ধুর বাকশালের পূর্ণ প্রবর্তন আমাদেরকে একটি মহান জাতিতে পরিণত করতো। প্রথমত, আপনার এসাম্পশনের ভিত্তিগুলি কি, ঠিক কি কি কারণে আপনি এমনটা মনে করেন, সেটা লেখার কোথায়ো আসে নি। কীভাবে মেহনতি ও সর্বহারা মানুষের মুক্তি বাকশালে লুকায়িত ছিলো, বলবেন?
দ্বিতীয়ত, আমি আবারো একদলীয়-রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার প্রসঙ্গ টানবো, কেননা আপনার ইউটোপীয় বাকশালের যে ধারণা তার বাস্তব ফলাফল আসলে কি হতে পারতো সেটা বোঝার জন্য কাছাকাছি কেবল এই দেশটিই দেখছি। তাদের প্রধান নেতা কিম ইল সুং কয়েক দশক শাসন করার সুযোগ পেয়েছিলেন, যেটা বঙ্গবন্ধু পান নাই। কিম ইল সুং পারতপক্ষে তার নিজস্ব ধারণাগুলির বাস্তবায়ন করেছিলেন। এখন তার এবং তার ছেলের বাস্তবায়িত উত্তর কোরিয়া কে দেখুন। বর্তমান উত্তর কোরিয়া যদি আপনার মহান জাতির সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে তাহলে আমার কিছু বলার নাই।
ফারুক হাসান ভাই
আপনার দ: করিয়া আর সিঙ্গাপুরকে উন্নত দেশ হিসেবে আখ্যায়িতকরনের ভিত্তি কি? কোন অর্থনৈতিক সংজ্ঞানুসারে এই দেশ দুটো উন্নত? এদের আর্থনীতি কি উৎপাদন নির্ভর না সেবা নির্ভর? যে কয়টা কারখানা এখানে আছে এগুলো কি উৎপাদক না প্রকৃয়াজাতকারী কারখানা? এগুলোর মালিক পক্ষ কি রাস্ট্র বা জনগন নাকি বড় বড় শিল্পন্নোত দেশের (্িজ-৮) বড় বড় বহুজাতিক কম্পানি? উৎপাদনের জন্য যে কাঁচামালের প্রয়োজন হয় সেগুলোর উপর কি দেশ গুলোর নিয়ন্ত্রন আছে?
এইসব দেশ আসলে পেটি বুর্জোয়া নিয়ন্ত্রিত সেবা ভিত্তিক অর্থনীতি নির্ভর প্রান্তিক দেশ। উৎপাদন যন্ত্র ও হাতিয়ারের উপর এদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই। পশ্চিমা সাম্রাজ্যর লোকাল সেন্টার। সস্তায় শ্রম পাওয়া যায় বলে পশ্চিমারা এখানে কারখানা তৈরী করেছে। অন্য কোথায় সুাবধা হলে সেখানেই যাবে পশ্চিমারা। এদের অর্থনীতির চাকা পশ্চিমা শক্তির হাতে জিম্মি। তাই প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলেই এদের অর্থনীতি তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়বে।
মহান চে’র একটা বানী দিয়ে দিলাম, "The inflow of capital from the developed countries is the prerequisite for the establishment of economic dependence. This inflow takes various forms: loans granted on onerous terms; investments that place a given country in the power of the investors; almost total technological subordination of the dependent country to the developed country; control of a country's foreign trade by the big international monopolies; and in extreme cases, the use of force as an economic weapon in support of the other forms of exploitation."
— Che Guevara, Marxist revolutionary
আর পশ্চিমা দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উপনিবেশিক শোষনের ফলে আমাদের যে মনঃত্বাত্তিক ভ্রান্তি ঘটেছে তার থেকে আপনার এই চিন্তা হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে উত্তর কোরিয়ার মানুষের অবস্থা ভাল নয়। আপনি আসলে পশ্চিমা মিডিয়ার প্রপাগান্ডা সত্য বলে ধরে নিয়েছেন। তারা কিউবা আর ভেনিজুয়েলা সম্পর্কেও একই রকম বলে।
আমার মধ্যবিত্তের সংজ্ঞার ভিত্তি হিসেবে নিচের নোটটি দেখতে পারেন,
The 'Middle Class'
The term 'middle class' is used by Marxists -- including Marx and Engels themselves -- in two different ways:
Firstly, in the historical sense,
"... in the sense of... the French word 'bourgeoisie that possessing class which is differentiated from the so-called aristocracy (Friedrich Engels: Preface to 'The Condition of the Working Class in England: From Personal Observation and Authentic Sources', in: Karl Marx & Friedrich Engels: 'Collected Works', Volume 4; Moscow; 1975; p. 304).
secondly, when speaking of modern capitalist society, with the meaning of petty bourgeoisie',
Between the bourgeoisie and the proletariat, stands the petty bourgeoisie:
"In countries where modern civilisation has become fully developed, a new class of petty bourgeois has been formed" (Karl Marx & Friedrich Engels: 'Manifesto of the Communist Party' in: Karl Marx: 'Selected Works', Volume 1; London,' 1943; p. 231).
The English term 'petty bourgeoisie' is an anglicisation of the French term 'petite bourgeoisie', meaning 'little bourgeoisie'. Marxist-Leninists define the petty bourgeoisie as a class which owns or rents small means of production which it operates largely without employing wage labour, but often with the assistance of members of their families: "A petty bourgeois is the owner of small property", (Vladimir I. Lenin: Note to: 'To the Rural Poor', in: 'Selected Works', Volume 2; London; 1944; p. 254).
As a worker, the petty bourgeois has interests in common with the proletariat; as owner of means of production, however, he has interests in common with the bourgeoisie. In other words, the petty bourgeoisie has a divided allegiance towards the two decisive classes in capitalist society.
Thus, the 'independent' petty bourgeois producer
"... is cut up into two persons. As owner of the means of production he is a capitalist; as a labourer he is his own wage- labourer". (Karl Marx: 'Theories of Surplus Value', Part 1; Moscow; undated; p. 395).
and consequently petty bourgeois "...are for ever vacillating between the proletariat and the bourgeoisie". (Joseph V. Stalin: 'The Logic of Facts', in: 'Works', Volume 4; Moscow; 1953; p. 143).
This divided allegiance between the two decisive classes in modern capitalist society applies also to a section of employed persons -- those who are involved in superintendence and the lower levels of management -- e.g., foremen, charge-hands, departmental managers, etc. These employees have a supervisory function, a function is to ensure that the workers produce a maximum of surplus value for the employer. On the one hand, such persons are exploited workers, with interests in common with the proletariat (from which they largely spring); on the other hand, their position as agents of the management in supervising the efficient exploitation of their fellow employees gives them interests in common with the bourgeoisie:
"An industrial army of workmen, under the command of a capitalist, requires, like a real army, officers (managers) and sergeants (foremen, overlookers) who, while the work is being done, command in the name of the capitalist", (Karl Marx: 'Capital: An Analysis of Capitalist Production', Volume 1; Moscow; 1959; p. 332).
"The labour of supervision and management... has a double nature. On the one hand, all labour in which many individuals cooperate necessarily requires a commanding will to coordinate and unify the process.... This is a productive job.... On the other hand, this supervision work necessarily arises in all modes of production based on the antithesis between the labourer, as the direct producer, and the owner of the means of production. The greater this antagonism, the greater the role played by supervision". (Karl Marx: 'Capital: A Critique of Political Economy', Volume 3; Moscow; 1971; p. 383-84).
Because of this divided allegiance, which corresponds to that of the petty bourgeoisie proper, Marxist-Leninists place such employees (and their dependents) in the petty bourgeoisie. For the same reason, Marxist-Leninists also place persons in the middle and lower ranks of the coercive forces of the capitalist state -- the army and police -- (and their dependents) in the petty bourgeoisie
আমার প্রশ্নটা দঃকোরিয়া ও সিঙ্গাপুর উন্নত রাষ্ট্র কিনা সেটা ছিলো না (কিন্তু যেহেতু আপনি টেনেছেন তাই পরে বলছি)। আমার প্রশ্ন ছিলো যে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র দঃকোরিয়া ও সিংগাপুরকে আপনি সাম্রাজ্যবাদী বলে মনে করেন কিনা? সে প্রশ্নের উত্তর আপনি এখনো দেন নি।
এখন তারা উন্নত রাষ্ট্র কিনা সেটা নিয়ে আমার কথাগুলো বলি। আমার মনে হচ্ছে যে মাথাপিছু আয়, বিস্তারের হার, জনগণের মৌলিক এবং অন্যান্য চাহিদা পূরণ, শিক্ষা-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, বাণিজ্য, ইত্যাদি ইত্যাদির কোনোটিই আপনার ধর্তব্যের মধ্যে নয়। তাই অর্থনীতির কোন সংজ্ঞায় আপনার আস্থা আছে সেটা আমাকে জানাবেন, তাহলে চেষ্টা করা যেতে পারে যে দঃ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুর উন্নত দেশ কি না।
উৎপাদন নির্ভর বলতে আপনি কীভাবে বোঝাচ্ছেন? উন্নত অর্থনীতি হতে হলে কাস্তে হাতে মাঠে ধান-গম ফলাতে হবে? খনি থেকে কয়লা তুলতে হবে? শিল্প বিপ্লব চাইলে এখন সবাইকে হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটাতে হবে?
আপনার কমেন্টের উপরের অংশটি অত্যন্ত জেনারাইলজড এবং তথ্যবিভ্রাটপূর্ণ অংশ। আপনি কি জানেন যে প্রযুক্তি একটি হাতিয়ার? অনেক শিল্প এখন আছে যেখানে বিপ্লব ঘটানোর জন্য এখন আর সস্তা শ্রমিক খুঁজতে হয় না। "পেটি বুর্জোয়া নিয়ন্ত্রিত সেবা ভিত্তিক অর্থনীতি নির্ভর প্রান্তিক" দেশ সিঙ্গাপুরে ছয় বছর থেকে আমি এই প্রথম শুনলাম যে এখানে সস্তায় শ্রম পাওয়া যায় বলে পশ্চিমারা কারখানা তৈরি করেছে। সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির যে দুইটি বৃহত কন্ট্রিবিউটর - রাসায়নিক এবং ইলেকট্রনিক্স খাত - সেই দুইটি খাতের প্রতিটি এখন প্রযুক্তি নির্ভর। সেবাখাত এখন কত নম্বরে সেটা একটু ঘেটে দেখবেন। যদিও আমি সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলছি না, কিন্তু শুনতে খারাপ লাগতে পারে। উৎপাদন যন্ত্র, হাতিয়ার ইত্যাদি শব্দের সংজ্ঞার আধুনিকায়ন জরুরী, বিশেষ করে যারা বর্তমান বিশ্বে বাস করেন কিন্তু প্রযুক্তিকে অস্বীকার করেন তাদের জন্য।
আমার একটা ভিউ পয়েন্ট বলিঃ কবে অর্থনীতি তাসের ঘরের মত ভেঙে যাবে সেই ভয়ে কাউকে বর্তমান অবস্থার উন্নয়নের ক্রেডিট থেকে বঞ্চিত না করাই ভালো। দুর্ভাগ্য যে সোভিয়েতের মত "উন্নত" অর্থনীতির শেষটাও এরকম হয়েছে।
পরিশেষে, আপনি কি উত্তর কোরিয়ার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানেন? প্রপাগান্ডার ভীড়ে এই দেশটা নিয়ে জানার কোনো উপায়ই দেখছি না।
ফারুক হাসান ভাই,
উন্নত দেশ বলতে আমি শিল্পন্নোত দেশ বুঝি। যেখানে প্রাথমিক উৎপাদক থেকে শুরু করে পন্য সবকিছুর উপরই দেশটির নিয়ন্ত্রন থাকবে। বিছু বহুজাতিক কোম্পানি এসে কিছু কারখানা আর কিছু কর্পোরেট অফিস খুলে ফেললেই উন্নত দেশ হয়না। এইসব বহুজাতিক কম্পানিতে কাজ করে আর এর ফলে যেসব সেবাখাত গড়ে ওঠে তার ফলে প্রাপ্ত সুবিধা থেকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যদি জনগনের মাথাপিচু আয় বেড়ে যায় তাহলেই কি উন্নয়ন হয়ে গেল?
বহুজাতিক কোম্পানীর প্রদত্ত ব্যবহারের সুযোগ পেলে বা শিল্পোন্নত দেশ থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি কিনে আনলেই এর উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ হয়ে গেল? তাহলেই কি উৎপাদনশীল অর্থনীতি হয়ে যায়? সিঙ্গাপুরের কারখানাগুলোর প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ নিজস্বভাবে তৈরী? কাঁচামাল কি নিজেদের? নাকি সব কিছুই পশ্চিম ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান আর চীন থেকে আনা?
উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তি তৈরী করে এবং বিশ্বব্যাপি বাজারজাত করে। হতে পারে সেটা সিঙ্গাপুরেই প্রক্রিয়াজাত করে, তাই বলে সেই প্রযুক্তির মালিক তারা নয়, বহুজাতিক কোম্পানিই মালিক। সিঙ্গাপুরের মানুষ বা সেখানে যারা যায় তারা ব্যবহারকারী মাত্র। এখান থেকে বহুজাতিক কোম্পানীরা ব্যবসা গুটিয়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে তাদের স্বার্থ শেষ হয়ে গেলে। তাহলে বলেন সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি কি সেবাখাত ভিত্তিক না?
এখন আসি উন্নত দেশের সংজ্ঞা প্রসংগে। তিনটি সংজ্ঞা নিচে দিলাম। দেখুন কোনটা অনুযায়ী সিঙ্গাপুরকে উন্নত দেশ বলা যায়।
The UN also notes
In common practice, Japan in Asia, Canada and the United States in North America, Australia and New Zealand in Oceania, and most European countries are considered "developed" regions or areas. In international trade statistics, the Southern African Customs Union is also treated as a developed region and Israel as a developed country.
Investopedia explains Developed Economy
The most well-known current examples of developed countries include the United States, Canada and most of western Europe, including England and France.
Terms such as "emerging countries," "third world countries" and "developing countries," are commonly used to refer to countries that do not enjoy the same level of economic security, industrialization and growth as developed countries.
Wikipedia
Terms similar to developed country include advanced country, industrialized country, more developed country (MDC), more economically developed country (MEDC), Global North country, first world country, and post-industrial country. The term industrialized country may be somewhat ambiguous, as industrialization is an ongoing process that is hard to define. The term MEDC is one used by modern geographers to specifically describe the status of the countries referred to: more economically developed. The first industrialized country was the United Kingdom, followed by Belgium, Germany, United States, France and other Western European countries.
তাহলে আপনি বলছেন শেখ মুজিব বেঁচে থাকলে বাংলাদেশে উপনেবেশিক শক্তির প্রকোপ থাকতো না বা কম হত? শেখ সাহেবের ঠিক কোন কোন নীতি/পদক্ষেপ/দিকনির্দেশ থাকে আপনার প্রাক ১৯৭৫ এর পরিস্থিতিকে উপনিবেশিক শক্তির প্রভাবমুক্ত বলে মনে হয়েছে জানতে পারলে উপকার হত। বাকশালের কোন কোন দিকগুলো জনগণের কল্যানে আসতো সেটাও জানা গেলে ভাল লাগতো।
যে আওয়ামী সভানেত্রী এত সহযেই বিভ্রান্ত করা যায়, তার নেতৃত্ব এতদিনযাবত এই পার্টিটি মেনে নিচ্ছে কেন?
দুর্দান্ত,
আপনাকে আনেক ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে উপনিবেশিক শোষনের আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে জনতার মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। অবশ্য আপনি যদি পাকিস্থান আমলকে উপনিবেশিক যুগ মনে না করেন সেটা ভিন্ন কথা। আমি মনে করি আর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই এ উপনিবেশের অবসান ঘটেছিল যদিও সেটা সাময়িক ছিল। অ্যান্থনি মাসক্যারেনহাস কুমিল্লার ১৬ ডিভিশন হেড-কোয়ার্টারে থাকাকালীন সময় বারবার একটা কথা শুনতে পেয়েছেন- ‘আমরা পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবেলার প্রয়োজনে বিশ লক্ষ লোককে মেরে ফেলবো। এমনকি দরকার হলে পূর্ব পাকিস্তানকে আরো ত্রিশ বছর কলোনি হিসেবে ব্যবহার করবো’।
বাকশাল স্পষ্টতই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রাক পদক্ষেপ ছিল। বাকশাল নাম থেকেই প্রথমত এটা প্রতিয়মান। আর বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ ছিল উপনিবেশিক শাষনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিক সংগ্রামের ফসল। এর মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু মেহনতি আর সর্বহারা মানুষদের মুক্তির পথ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বাকশাল সময়ে সমাবায় ভিত্তিক ভূমি বন্টনই এর প্রমান। সব উতপাদনশীন খাত ব্যক্তি মালিকানাধীন থেকে রাষ্ট্রীয়করন করাও ইঙ্গিত দেয় তিনি মেহনতি আর সর্বহারা মানুষদের মুক্তির কথাই ভাবছিলেন। আর বাকশাল কোন একদলীয় শাষন ছিলনা বরং পুজিবাদী আর মুনাফাখোর দালালদের বিনাশকরন প্রক্রিয়া।। কমিউনিষ্ট পার্টি সহ সব প্রগতিশীল দল আর নেতৃত্ব বাকশালের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করেছিল।
আর শেখ হাসিনা আর বর্তমান আওয়ামী লীগ সস্পর্কে আমার অবস্থান আমি লেখায় উল্লেখ করেছি।
জুয়েল, আপনার পক্ষে কিন্তু আরো পষ্ট হওয়ার সুযোগ থেকেই গেছে। এই আলোচনা কিংবা প্রতিপাদ্যগুলো দীর্ঘ বিতর্কের বিষয় এবং সে বিতর্ক থেকে এখন পর্যন্তকিন্তু কোন সহমতে পৌছুনো গেলোনা। বাকশাল নিয়ে আপনার মধ্যে আগে থেকেই একটা আবেশ কাজ করে আসছে, সে আবেশটার সাথে প্রমাণ এবং বিভ্রান্তিদূর করার মত যথেষ্ট উপাত্ত যোগ হলে আমার মনে হয় সবারই লাভ হয়!
লেখা যেন না থামে, এইভাবে টানাহ্যাচড়া করতে করতেই কিন্তু একটা পথ পথের দেখা পায়!
তানিম ভাই
আমার লেখাটির শেষ প্যারায় আমি একটা লাইন উল্লেখ করেছিলাম,
সেটা ছিল, নব্য উপনিবেশবাদ আজ আমাদের সমাজ মনঃস্তত্বে যে পরিবর্তন এনেছে, ‘তা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভ্রান্তিকে সত্য বলে বোঝার বোধ তৈরী করেছে‘।
এরই ধারাবাহিকতায় বাকশাল শব্দটাকেও বেশীর ভাগ মানুষ একটা গালির পর্যায়ে ভাবে। এটা হয়েছে আমাদের ভাবনা সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা বিনির্মিত হওয়ার ফলে।
আমি বাকশালকে সমাজতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে কমিউনিজমে উত্তরনের একটি প্রচষ্টা বলে মনে করি। আমি এও বিশ্বাস করি বাস্তবে কমিউন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। যদিও এও বিশ্বাস করি যে বাকশাল গঠন সময়োপযোগী পদক্ষেপ ছিলনা। আরো সময় নেয়ার দরকার ছিল। ৭১’র মাত্র ২৪ বছর আগে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া একটা উপনিবেশের সমাজ বাকশালের মহান উদ্যোগকে ভূলভাবে উপলব্ধি করার অবকাশকে সে সময় মাথায় রাখা হয়নি। তার অর্থ এই নয় যে বাকশাল গঠনের সিদ্ধান্ত একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ছিল।
আমি আবার বলছি, বাকশাল স্পষ্টতই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রাক পদক্ষেপ ছিল। বাকশাল নাম থেকেই প্রথমত এটা প্রতিয়মান। আর বাংলাদেশ বাকশাল ছিল উপনিবেশিক শাষনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিক সংগ্রামের ফসল। এর মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু মেহনতি আর সর্বহারা মানুষদের মুক্তির পথ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বাকশাল সময়ে সমাবায় ভিত্তিক ভূমি বন্টনই এর প্রমান। সব উতপাদনশীন খাত ব্যক্তি মালিকানাধীন থেকে রাষ্ট্রীয়করন করাও ইঙ্গিত দেয় তিনি মেহনতি আর সর্বহারা মানুষদের মুক্তির কথাই ভাবছিলেন। আর বাকশাল কোন একদলীয় শাষন ছিলনা বরং পুজিবাদী আর মুনাফাখোর দালালদের বিনাশকরন প্রক্রিয়া। কমিউনিষ্ট পার্টি সহ সব প্রগতিশীল দল আর নেতৃত্ব বাকশালের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করেছিল।
যাহোক লেখাটা যদিও বাকশাল নিয়ে ছিলনা, তাও প্রসঙ্গ এসে যাওয়ায় বাকশাল নিয়ে আনেক আলোচনাই করতে হলো।
লিখতে থাকুন! উত্তরনের পথ নিয়ে লিখুন, আমাদের এইটাই বেশী দরকার এখন!!
জনাব জুয়েল, আপনার লেখা নিয়ে মন্তব্যে আগ্রহ বোধ করছিনা কারন শিরোনাম এবং কন্টেন্টের মধ্যে বৈসাদৃশ্য।
একটা কারেকশন করে দেই যদি কিছু মনে না করেন। বাকশাল শব্দের এলাবরেশনটা একটু ঠিক করে নেবেন। এটা হচ্ছে, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। কিছু কিছু লোকেরা অবশ্য বলতো যে, 'বাক' স্বাধীনতায় 'শাল' দেয় যে দল, সেই দলই বাকশাল।
একটা দল বা আদর্শের স্বপক্ষে কলম ধরছেন অথচ সেই দলের নামটাই ঠিকমতো জানেন না। এতে দুটো বিষয় ইন্ডিকেট করতে পারে। প্রথমত, আপনি লেখার খাতিরে এই লেখাটা লিখেছেন; কোনও আদর্শিক জায়গা থেকে নয়। আর দ্বিতীয়ত, আপনি এমনই এক অন্ধ অনুসারী যে দলের নামটাও ঠিকমতো জানার প্রয়োজন বোধ করে না।
ধন্যবাদ। লেখালিখি চলুক।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
রাতঃস্মরণীয়,
ধন্যবাদ আপনাকে। ভূলটা অমার্জনীয়। তাই আপনার মন্তব্যও স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহন করলাম। কিন্তু আমার লেখাটা বাকশাল নিয়ে নয়। লেখার সামান্য কিছুটা অংশজুড়ে বাকশাল বিষয়ক আলোচনা ছিল। কিন্তু এ প্রসঙ্গটি মন্তব্য হিসেবেই বেশী আলোচিত হল। হতে পারে আমি বোঝাতে পারিনি। অথবা কেউ কেউ হয়ত বোঝেনি।
মূল আলোচনা ছিল নব্য উপনিবেশবাদ ও এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত সমাজ মনঃস্তত্ব নিয়ে। লেখাটির বেশীরভাগ আংশজুড়েই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। বিশেষ করে, .সমাজ মনস্তত্বের পরিবতর্নের ধারা লেখার দ্বিতীয় ও শেষ প্যারাতে ধারাবাহিকভবে উল্লেখ আছে।
আর একটা কথা আমি সমাজতান্ত্রিক চেতনা ধারন করি এটা সত্য কিন্তু কোথায় উল্লেখ করিনি যে আমি বাকশালের অনুসারী।
আবার আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আবার স্বীকার করছি আমার ভূলটা অমার্জনীয় ছিল।
নতুন মন্তব্য করুন