সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি তখন, নতুন নতুন বই পড়ার প্রবল নেশা সারাক্ষন আচ্ছন্ন করে রাখে, নতুন কিছুকে জানার, নতুন কিছুকে চেনার জন্য কচি মন সর্বদাই আঁকুপাঁকু করে। বাড়ীতে রাখা হত দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক, তার শুক্রবারের সংখ্যাটি ছিল বড়ই আকর্ষণীয়, নানা রঙ্গিন ছবির সাথে দেশ-বিদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানের চিত্র-বিচিত্র নানা খবরের ভাণ্ড।
এমন-ই এক শুক্রবারে ছিল অর্ধেকেরও বেশী পাতা জুড়ে এক চিত্রকরের নানা পেইন্টিং সহ তার জীবন কাহিনী, নাম তার ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, বাড়ী সাত সমুদ্দুর তের নদীর পারের দেশ নেদারল্যান্ডে। অদ্ভূত সব চিত্রকর্ম, একদল সূর্যমুখী- কেমন যেন অস্ফূট, অতি গাঢ় নীল আকাশের সামনে দিয়ে চলেছে এক একাকিনী মহিলা, শিল্পীর খ্যাপাটে এক আত্নপ্রতিকৃতি। চিত্রকর্ম ক্ষুদে থাকতে যা বুঝতাম, বিভিন্ন জাদুঘর আর সংগ্রহশালা দেখা ছাড়া এখনো তার বিশেষ একটা উন্নতি হয় নি, কিন্তু কেমন যেন জীবনের আলো ছড়ানো চিত্রকর্মগুলো মাথায় গেথে গেল, মনের ভিতরে প্রোথিত হয়ে গেল ভ্যান গগ নামটি। চেষ্টা করতাম স্কুলে জীবন থেকেই তার ও তার অমর সৃষ্টিগুলো সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করতে। এক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমালাম ইউরোপে, বিশ্বের সেরা সব জাদুঘর আর আর্ট গ্যালারীগুলো তাদের আগল খুলে ধরল যেন আমার উদ্দেশ্যে। তবে যেখানেই পা ফেলার সুযোগ হয়েছে চেষ্টা করেছি ইম্প্রেশনিস্ট আন্দোলনের প্রিয় চিত্রকর ভ্যান গগের জীবনের আলো দিয়ে আঁকা চিত্রকর্মগুলো দেখার জন্য- হেলসিংকি, সেন্ট পিটার্সবার্গ, অসলো, স্টকহোম, প্রাগ, বুদাপেস্ট, প্যারিস- আমার ভ্যান গগ পরিক্রমা শেষ হয় না কিছুতেই। প্রতি ভ্রমণেই অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে উঠতে থাকে অপরূপ সব স্মৃতিতে। এমনি ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করি নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামে অবস্থিত ভিনসেন্ট ভ্যান গগ জাদুঘরে, যেখানে শিল্পীর জীবন ঘষে পাওয়া আগুনের প্রজ্জলিত শিখায় আঁকা সৃষ্টিগুলোর সবচেয়ে বড় সংগ্রহটি রয়েছে, আমাদের আজকের যাত্রা সেদিক পানেই।
ভিনসেন্ট ভ্যান গগ জাদুঘরের সামনে প্রতিদিন লেগেই থাকে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়, একটু সকাল সকাল পৌঁছালেও ঝাড়া ঘণ্টা দেড়েক ঠাই দাড়িয়ে অপেক্ষার পরে সুযোগ পেলাম টিকেট কেটে ভিতরে ঢোকার, সেই সাথে দেখলাম দুঃখজনক ভাবে ভিতরে ক্যামেরা ব্যবহার নিষিদ্ধ। আগেই বলেছি, ভ্যান গগের অগণিত চিত্রকর্মের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা এইটি, শদুয়েকের উপর পেইন্টিং আর স্কেচ ঠাই পেয়েছে এইখানে। ভ্যান গগের যে কোন কাজ এখন নিলামে উঠলেই নিশ্চিত ভাবে বলা যায় তার দাম ১০০ মিলিয়ন ইউরো( এক হাজার কোটি টাকা) উঠবে, সেখানে এতগুলো চিত্রকর্ম চর্মচক্ষে দেখার সুযোগ যে কি বিশাল প্রাপ্তি, তা সৌভাগ্যবান মাত্রই জানে। এই এক জাদুঘরের সংগ্রহগুলো নিয়ে আজ পর্যন্ত কোটি কোটি পাতার বই ছাপা হয়েছে নানা ভাষায়, ক্ষুদ্র কলেবরে তাই পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনায় না যেয়ে মনের মুকুরে চিরস্থায়ী আসন জিতে নিয়েছে এমন কিছু পেইন্টিংস সাথী করেই এগিয়ে যায়।
প্রথমেই দৃষ্টিসীমায় আসে অতি বিখ্যাত চিত্রকর্ম দ্য পট্যাটো ইটার্স, জীবনের প্রারম্ভে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের দুর্দশা নিয়ে অতি চিন্তিত ছিলেন ভ্যান গগ, হাতে বাইবেল নিয়ে কয়লাখনির মজুরদের সাথে বাস করে দেখেছিলেন জীবনের ক্লেদময় আঁধার দিকটা, হয়ত সেই রূঢ় অভিজ্ঞতার নির্যাস থেকেই আঁকা দ্য পট্যাটো ইটার্স। বিষণ্ণ হতাশাময় ক্যানভাসে পাঁচ শ্রমজীবী মানুষের এক পরিবার, সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর পর খাবার টেবিলে বসেছে, ঘরের মাঝে আলোর উৎস একখানা টিমটিমে বাতি, যা ঘরের অন্ধকার দূর করার বদলে বিবর্ণ দেয়ালকেই আরো প্রকট ফুটিয়ে তুলেছে যেন, টেবিলে খাবার একমাত্র আয়োজন আলুসেদ্ধ! সেই যৎসামান্য খাবারটুকুই তারা ভাগাভাগি করে নিয়েছে পরম তৃপ্ততায়। চিত্রকর্মটিতে যেমন আছে প্রগাঢ় বেদনার ছায়া, বুক চিরে আসা দীর্ঘশ্বাস, ঠিক তেমনি আছে আগামীর আশা, আছে রৌদ্রজ্জল দিনের স্বপ্ন। চিত্রসমালোচকদের মতে ভ্যান গগের অধিকাংশ চিত্রকর্মই আলো ঝলমলে রঙে রাঙ্গানো, কেবল শিল্পীজীবনের প্রথম দিকে গুটিকয়েক সৃষ্টি এমন ধূসর বিষণ্ণতায় ডোবানো। এর পরে আসে তার আঁকা বিভিন্ন পোর্টেট, বার্চ আর পপলার গাছের সারি, গ্রামের দৃশ্য। তারপরেই প্যারিসে অবস্থানকালীন সময়ে (১৮৮৬-১৮৮৮) সৃষ্ট অপূর্ব সব চিত্রকর্মের সম্ভার, যার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ভ্যান গগের বিভিন্ন রূপে আঁকা আত্ন-প্রতিকৃতি। বিশ্বের আর কোন শিল্পী ভ্যান গগের মত নিজেকে এতবার ক্যানভাসে এতো এলোমেলো রঙে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে এঁকেছেন কি ! হয়ত নিজেকে জানার, আত্নার অতলান্তে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নের উত্তর খুজে পাবার বারংবার চেষ্টায়ই নিজেকে অবিরত এঁকে চলতেন তিনি- কোন সময়ে সোনালী খড়ের টুপি মাথায়, নীল শার্টে, কমলা দাড়িসহ, ফেল্ট টুপি মাথায়, কখনো মুখে পাইপ, আবার কাটা কান ঢাকবার জন্য ব্যান্ডেজে মোড়ানো মুখমণ্ডল, কখনো অঙ্কনরত অবস্থায় নিজেকে আঁকা। আর প্রতিটা আত্ন-প্রতিকৃতির রয়েছে একান্ত আপন বৈশিষ্ট্য,পিছনের দৃশ্যপটগুলো প্রতিটাই আলাদা ভঙ্গীতে, ভিন্ন রঙ ও আঙ্গিকে ভাস্বর। এছাড়া রয়েছে জাপানি জীবন নিয়ে তার করা একাধিক কাজ, বোঝা যায় জাপানি শিল্প সম্ভার নিয়ে ভ্যান গগের ছিল অকৃত্রিম আগ্রহ, তার অনেক কাজেই দেখা যায় ঘরের দেয়ালে ঝুলছে জাপানি চিত্রকর্ম বা বর্ষপঞ্জি।
পরের কক্ষে আছে শিল্পীর উল্কার মত তেজোদীপ্ত, ভাস্বর কিন্তু ক্ষণস্থায়ী মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে করে যাওয়া অগনিত মাস্টারপীসের সবচেয়ে বিখ্যাতগুলো- সানফ্লাওয়ারর্স, সূর্যমুখী ফুল নিয়ে করা তার জগদ্বিখ্যাত সিরিজের কয়েকটা আমাদের চোখের সামনে। কেমন যেন মন আবেশ করা ভাল লাগায় আমাদের দৃষ্টি বারংবার সেধে যায় ক্যানভাসগুলোতে। সূর্যমুখী উজ্জল জীবনের প্রতীক, ক্ষণস্থায়ী জীবনে তীব্র আনন্দে অবগাহন করাই হয়তবা তার জীবনের লক্ষ্য, পাশাপাশি অবলোকনকারীদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় নির্মল আনন্দের জোয়ারে। কিন্তু ভ্যান গগের অতি বিখ্যাত সূর্যমুখীগুলো কেমন যেন অন্যরকম- ভেজা ভেজা, অভিযোগ মোড়া, অস্ফুট। কোন কোনটা আবার হলদে পাপড়ি ঝরিয়ে ফেলে দর্শকদের জন্য রেখেছে গাঢ় ধূসর কিছু ক্ষয়ে যাওয়া অংশ। এটা কি বিশ্বের প্রতি ভ্যান গগের নিজের জীবন নিয়ে একান্ত আক্ষেপ! আজ প্রবল প্রতিভাবান বলে বিবেচিত হলেও বেঁচে থাকতে তো একবারও শিল্পীর মর্যাদা পান নি তিনি, আজ শত শত মিলিয়ন ইউরোতে তার চিত্রকর্ম নিলামে ওঠে, কিন্তু জীবদ্দশায় মাত্র একটি পেইন্টিং তিনি বিক্রি করতে পেরেছিলেন যৎসামান্য দামে তাও আর্ট ডিলার ভাই থিও ভ্যান গগের সহযোগিতায়! আজ পর্যন্ত ভিনসেন্ট ভ্যান গগের সেরা আত্নজীবনী রচনা করেছেন আরভিং স্টোন, লাস্ট ফর লাইফ নামের সেই অনবদ্য বইয়ে আছে অমৃত কুম্ভের পানে শিল্পীর একাকী জীবন যাত্রার করুন নিখুঁত বিবরণ। বইটির হলিউডের রূপোলী চলচ্চিত্রায়নে পাগলাটে শিল্পীর ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন কার্ক ডগলাস, বইটি বহু আগে বাংলাতেও রূপান্তরিত হয়েছিল জীবন-তৃষ্ণা নামে।
ফুল নিয়ে ভ্যান গগের রয়েছে বিশাল কাজের সংগ্রহ, সূর্যমুখী বাদেও রয়েছে আইরিশ, পানসি, পপি, আসটার নানা জাতীয় ইউরোপে ফোঁটা ফুল নিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় আঁকা পেইন্টিং, তবে আলাদা ভাবে মন ছুয়ে যায় সদ্য কুঁড়ি ফুটে বের হওয়া সফেদ আলমন্ডগুচ্ছ গুলো, কি অনাবিল শুভ্রতা, কি শান্তির সুবাতাস বয়ছে নীলরঙা দৃশ্যপটের স্ফুটিত পুষ্পমঞ্জরীতে। জীবজগৎ নিয়েও ছিল ভ্যান গগের অপরিসীম কৌতুহল, টেবিলে উল্টানো কাঁকড়া বা ফলখেকো সোনালী বাদুড়ের উপর চিত্রকর্মতো ছিলই, সেই সাথে প্রথমবারের মত দেখলাম ক্ষুদে মাছরাঙা নিয়ে রঙধনুর সাত রঙে আঁকা তার অনন্যসাধারণ কাজটি। পাখিপ্রেমী হওয়াতেই হয়ত আলাদা করে সময় দিলাম কোন নাম না জানা স্রোতস্বিনীর উপরে নলখাগড়ার বনে বসে থাকা বর্ণময় ক্ষুদে পাখিটির চিত্রকর্মের সামনে। বহমান জলধারা, তার উপর সৃষ্ট প্রতিবিম্বে ভ্যান গগের আঁকার বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট। পাশ থেকে এক শিল্পপ্রেমী বলে উঠল- আরে, এ যে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী মাছরাঙা!
আছে শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে আঁকা তার অমর চিত্রমালা, ভ্যান গগ মনে করতেন খেটে খাওয়া কর্মরত মানুষদের নিয়ে চিত্রকর্ম এতো কম হবার কারণ তাদের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা অত্যন্ত কঠিন, অধিকাংশ শিল্পী বুড়ো ধনী আর সুন্দরী মডেলদের এঁকেই আত্নতুষ্টিতে ভুগতেন, কিন্তু ভ্যান গগের ছিল দৃঢ় সংকল্প আর পাগলপারা ইচ্ছে। মজুরদের পাশে থেকে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন বীজবপনরত কৃষকের সংগ্রাম, কাস্তে হাতে নিড়ানিরত কিষান, কখনও বা ব্যস্ত লাঙ্গল নিয়ে।
তার ত্রিভূবনবিদিত ল্যান্ডস্কেপগুলো নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই, বিশেষ করে জীবনের শেষ বছরগুলোতে (১৮৮৯-১৮৯০) আঁকা অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্যের কিছু ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তীব্র হলুদ আর গাঢ় নীলে মেশানো অপরূপা পৃথিবী। আকাশের মেঘ ও নক্ষত্র আঁকতে ভ্যান গগের দক্ষতা ছিল সমসাময়িক শিল্পীদের মাঝে সবচেয়ে বেশী, কিন্তু সেই চিত্ত চঞ্চল করা ভালো লাগায় ভরানো চিত্রকর্মগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সারা বিশ্বে। ভ্যান গগ জাদুঘরে আছে অন্যান্য শিল্পীদের ঈর্ষনীয় সংগ্রহ, বিশেষ করে সমসাময়িক জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর- ক্লদ মনে, এদুয়ার মানে, ক্যামিল পিসারো, সেউরাত, বানার্ড, কর্বেট, তুলুস-লোত্রেক প্রমুখের। তবে সবচেয়ে বিখ্যাতগুলো আঁকা তার অতি প্রিয়জন ইম্প্রেশনিজমের আরেক দিকপাল পল গগ্যাঁর আঁকা আত্ন-প্রতিকৃতি আর সূর্যমুখীর সিরিজ অংকনরত ভ্যান গগ, ভ্যান গগের ও পল গগ্যাঁর বন্ধুত্ব নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক কিংব্দন্তীর।
বিশাল সংগ্রহশালার প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি, অবাক হয়ে ভাবছি মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে এত নিখাদ শিল্প সৃষ্টি করা সম্ভব হল কোন তীব্র নেশায়, এমন সময় সামনের দেয়াল থেকে যেন লাফ মেরে সামনে এসে দাঁড়াল বহুল পরিচিত মাঝারি আকারের একটা ক্যানভাস, যা প্রথম দেখেছিলাম সেই সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় খবরের কাগজে- সোনালী গমের ক্ষেত, দূরে অবারিত উম্মুক্ত নীলাকাশ আর ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে উড়ে চলেছে একদল কালো কুৎসিত কাক। জীবনের আলো ঝলমলে হাসি ঝরানো ক্ষেতে কেন মৃত্যুদূতনামিয়ে আনলেন শিল্পী? কি এমন গোপন কষ্ট ছিল তার এই বসুধরার প্রতি, কি সেই চাপা বিষণ্ণ অভিমান! ধারনা করা হয়, হুইটফিল্ড উইথ ক্রোজ নামের এই অতিবিখ্যাত পেইন্টিংটাই ছিল তার জীবনের শেষ কাজ। এটি শেষের পরপরই এক অজানা কারণে আত্নহননের জন্য নিজের উপর গুলি চালান তিনি, তাৎক্ষণিক ভাবে মৃত্যু তাকে ছিনিয়ে না নিলেও সেই আঘাতে কিছুদিন পরে না-দেখা ভুবনে যাত্রা করেন ক্ষ্যাপা চিত্রকর। থেমে যায় জীবনের গাঢ় রঙে রাঙ্গানো ক্যানভাসের উপর তুলির আঁচড়। কিন্তু ভিনসেন্ট ভ্যান গগ বেঁচে আছেন এবং থাকবেন কোটি কোটি শিল্পপ্রেমীর মনে অভিমানী প্রস্থানকারী হিসেবে নয়, আলো ঝরানো প্রাণ ভরানো চিত্রকর্মের চিত্রশিল্পী হিসেবে। সেই জন্যই তো তার স্বদেশের আমস্টারডামের এই জাদুঘরটি পরিণত হয়েছে শিল্প প্রেমিকদের জন্য অবশ্যদ্রষ্ট এক মহা তীর্থক্ষেত্রে। --------- তারেক অণু
মন্তব্য
ফ্লিকার থেকে ছবি সংযোজনের জন্য এই টিউটোরিয়ালটি দেখুন:
http://www.sachalayatan.com/faq#t716n772
আপনার বর্ণনা বেশ লাগলো, সাথে কিছু ছবি যুক্ত করলে(ফ্রি উৎস থেকে) আরও জমতো।
love the life you live. live the life you love.
লেখা চলুক।
পরের পোস্ট ঠিকঠাক মতো ছবি জুড়ে আসবে আশা করি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
উপরে মুর্শেদ ভাই একটা টিউটোরিয়াল দিয়েছেন ছবি জুড়তে, একটু দেখে নেবেন। ছবি ছাড়া পোস্টটার পুরোটা রস পাওয়া গেলো না ভাই।
...ভ্যানগগ বড় 'ইন্টারেস্টিং' চরিত্র মনে হয় আমার কাছে। আরভিং ওয়াশিংটনের বইটার সংক্ষিপ্ত একটা রুপ পড়ে খুব আগহ বোধ করেছিলাম তাকে নিয়ে।
যা হোক, আপনার পরিক্রমণ চলতে থাকুক, জারি থাকুক লেখাও।
অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে। ছবি কিছু আপলোডের চেষ্টা করেছিলাম, আবারো বিফল। লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ এস এম মাহবুব মুর্শেদ ভাই, দেখি পরের বার। মাঝখানের লেখাতে ঠিকই গেল...। -- অণু
ভ্যান গগ ইশ্বরের সমান!
লেখা খুব সুন্দর হয়েছে কেবল ছবির জন্য পূর্ণতা পেলো না! ভ্যান গগের প্রায় সব ছবিই নেটে পাওয়া যায়। খুঁজে পেতে দিয়ে দেবেন নাকি?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এ কেমন কথা হল রে ভাই। আমি আইনস্টাইন প্রায় ঈশ্বরের সমান মনে করি।
হে হে , তারা ঈশ্বরের চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ
facebook
ভাই আপনি এত বেশি ঘোরেন কেন??!! এত ঘোরা ভালো না!! (হিংসে হয় ভাই)
লেখা চমৎকার।
লেখাটি ভাল লেগেছে।
আলু-খোর পরিবারের ছবিটি নিয়ে দুটো কথা বলি। আমরা জানি এই ছবিটি প্যারিসে পাঠানোর আগে ছবি আঁকিয়ে হিসেবে ভিন্সেন্টের পসার ছিলনা। ১৮৮২ সালে হেগ এর য়োসেফ ইসরায়েল এই ছবিটি একে প্যারিসে খ্যাতি লাভ করে। আলোকক্ষেপন, ছবির উপকরণ, তাদের অঙ্গভঙ্গি ছাড়াও ভিন্সেন্টের আলু-খোর ছবির সাথে ইসরায়েলের ছবিটির আরো অনেক মিল আছে। ধারনা করা হয় অনেকদিন চেষ্টা করে সুবিধা করতে না পেরে ভিন্সেন্ট উপায়ান্তর না দেখে ১৮৮৫ সালে ইসরায়েলের পরিচত এই ছবিটির একটি নতুন তাফসির করেছে। তবে এই ছবির মডেল বেলজিয়ামের নয়নেনের দা খ্রোত পরিবারটি ভিন্সেন্টের বাবার কাছে ঋণবদ্ধ ছিল, (সেই সুযোগেই) যারা কোন রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই ভিন্সেন্ট এর ছবির মডেল হয়েছে মাসের পর মাস। একদিন আলু-খোর ছবিতে পেছন ফিরে থাকা মেয়েটি (গর্ডিনা) কে বলপূর্বক অন্তঃসত্ত্বা করা অভিযোগ এড়াতে ভিন্সেন্ট নয়নেন ছেড়ে চলে যায়। এই ঘটনাগুলো এই ছবির ওপর ভিত্তি করে ভিন্সেন্টের দারিদ্র-দর্শন নিয়ে নানারকম যেসব কথাবার্তা পড়া যায় বা শোনা যায়, তার থেকে একটি ভিন্ন সত্যের দিকনির্দেশ দেয়।
সৃষ্টির পেছনের এই বাস্তব গল্পগুলি জানতে ভালো লাগে।
আগের লেখার মতন এই লেখাটাও দারুণ লাগলো। ছবির টেকনিক্যাল খুটিনাটি তেমন বুঝি না, কিন্তু ভ্যান গগের ছবির মধ্যে সবসময় কি যেন থাকে! মনটাকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, তার ছবিতে প্রায়ই গাঢ় নীল রঙের প্রাধান্য থাকে। এটার কি কোনো বিশেষ কারণ আছে?
লেখার মাঝে কখনো কখনো দুটি প্যারা একসাথে লেগে যাচ্ছে। দুটি প্যারার মধ্যেকার গ্যাপের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন।
অনেক ধন্যবাদ দুর্দান্ত, তথ্যময় মন্তব্যের জন্য। আসলে আলু-খোর ছবিটি ভ্যান গগের আকা বলে আমার কোন দিনই মনে হয় নি , কারণ যে পেইন্টিংগুলো দেখে তার ভক্ত হয়েছি তার সবই তো রঙে ঝিলমিল, প্রথম দিক কার পাঁশুটে ছবিগুলো কেন যেন আমায় টানে নি কোনদিনও।
ফারুক ভাইয়ের সাথে পুরো একমত,সৃষ্টির পেছনের এই বাস্তব গল্পগুলি জানতে ভালো লাগে। তার ছবি গুলোয় নীল আর হলদের ছড়াছড়ি থাকেই, তবে আমার সবচেয়ে প্রিয় The Church at Auvers এ দেখেছি নানা নীলে সমাহার, সে এক অদ্ভুত সম্মোহনী কাজ।
মৌনকুহর, কি করব! নেশা হয়ে গেছে যে, কয়দিন ঘুরতে না পারলে চক্ষে অন্ধকার দেখি। তবে হিংসা বেশী করেন না কিন্তু, তাহলে বলে দিব ২ সপ্তাহ পর কোথায় থাকব, তখন কিন্তু আরো বেশী চটে যাবেন, আমার কোন দোষ থাকবে না !! হি হি, ভাল থাকবেন সবাই--- অণু
আয় হায়! বলে কী!
তা যাচ্ছেন কই ভায়া?? পোস্ট-ছবি দেখার আশা রইল।
লেখাটা পড়ে ভীষণ ভাল লাগল ।মনে হল যেন আপনার সাথে আমিও ঘুরে আসলাম ভ্যান গগের জগত থেকে। তথ্যবহুল লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
অনার্য সঙ্গীত- দিয়েছিলাম রে ভাই, আসে নাই !!
আফরিনা হোসেন- অনেক অনেক ধন্যবাদ, এর চেয়ে বড় প্রশংসা আর কিছু হতে পারে না ভ্রমণ কাহিনির জন্য।
মৌনকুহর--, হুম্ম, জানতে আসলেই চাচ্ছেন, সত্যি চটে যাবেন কিন্তু ! আচ্ছা, ধারনা দিচ্ছি, দেশটির শিক্ষা ও চিকিৎসা বিশ্বের সেরাদের কাতারে। লিঙ্গবৈষম্য, শিশুমৃত্যু, মাদক সমস্যা, পথ শিশু--- এই সমস্যাগুলো নেই বললেই চলে অথচ দেশটিকে তথাকথিত ৩য় বিশ্বের ( অত্যন্ত বর্ণবাদী শব্দ) একটি হিসেবে ধরা হয়। সেই সাথে জানিয়ে রাখি,প্রাকৃতিক ভাবে বিশ্বের সবচেয়ে নয়নাভিরাম জায়গাগুলোর মধ্যে এটি একটি- সাদা বালুর সৈকত, নীল ল্যাগুন, সবুজ নারকেল বীথি---
এইবার তো জানলেন !! সকলকে শুভেচ্ছা -অণু
ক্যুবা?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
Almond Branches in Bloom - খুব প্রিয় ছবি।
almond এর উচ্চারণ তো জানি আমন্ড, ডাচ-রা কি অন্যরকম বলে?
লেখা ভালো, তবে একটু কষ্ট করে ছবি এমবেড করাটা শিখে নিন।
ওলন্দাজ ভাষায় আমন্ড কে বলে আমান্দেল (amandel).
ভিন্সেন্টের এই ছবিটি তেও'র ছেলের জন্ম উপলক্ষে তেও ও য়োহানা জন্য উপহার। তেও তার ছেলের নাম রাখল ভিন্সেন্ট-উইলিয়াম। তেও'র দেয়া এই সম্মান ও উপহার ভিন্সেন্টের মনে গভীর দাগ কাটে। ইউরোপে আমন্ড ফুল হল বসন্ত ও শীত শেষে নতুন জীবনের আগমনবার্তার প্রতীক। এই ছবিটি সে আঁকে তেও ও য়োহানার বিছানার পেছনের দেয়ালে টানানোর জন্য়। ইউরোপের কিছু কিছু সন্তানসম্ভব জুটি সমাগত সন্তান ছেলে হবার খবর এই ছবিটি তাদের বসার ঘরে টানিয়ে ঘোষনা করে। এই ছবিটি সমসাময়িক আরো কিছু ছবির মতই জাপোনিস্ম এ সিক্ত। হিরোশিগে'র চেরিফুল ও বাঁশের ছাপচিত্রের কথা ভাবুন।
দারুন। পড়তে পড়তে মনে হলো আপনার সাথে সাথে আমিও ছবিগুলি দেখছি। এমন লেখা আরো চাই !
ও হ্যাঁ, এই যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় সেই ছবিটা The Church at Auvers :
****************************************
আপনার সবগুলো লেখাই পড়েছি। ঘোরাঘুরির শখ দেখছি ভালো ভাবেই আছে। আপনার অ্যান্টার্টিকা ভ্রমণের বর্ণনা সবচেয়ে ভালো লেগেছে, কারণ ঐ ভ্রমণ কাহিনিতে ব্যক্তিগত কিছু গল্প উঠে এসেছে। আর লেখায় আরেকটু ছোট ছোট প্যারা করলে পড়তে সুবিধা হয়।
ভালো থাকুন। বন্ বন্ করে ঘুরতে থাকুন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
(গুড়)
...........................
Every Picture Tells a Story
আবার অনেক ধন্যবাদ দুর্দান্ত, কি দারুন সব তথ্য দিচ্ছেন। হিরোশিগের প্রদর্শনীর উপর একটা লেখায় হাত দিয়েছি, আশা করি সেখানেও আপনার কাছ থেকে অনেক তথ্য পাব।
পেন্নাম কৌস্তুভ দা, চেষ্টা করছি, আশা করি পরের টাতেই ঠিক হয়ে যাবে।
ফাহিম হাসান ভাই, মনে হয় উত্তর মেরুর লেখাটির কথা বলছেন। অ্যান্টার্টিকা যাবার জন্যে তক্কে তক্কে আছি, কিন্তু দিল্লী একটু দূর মনে হচ্ছে। যাওয়ার আগে জানাবো।
অনেক ধন্যবাদ মনমাঝি, আসলে প্রিন্ট দেখে কিন্তু এটাকে খুব ভাল লাগত না, কারণ কোন প্রিন্টেই ঐ নীলাকাশ ধরা পড়ে না, তাই, প্রথম বার সেই অলৌকিক নীলাভ সৌন্দর্যে হতবাক হয়ে পড়েছিলাম।
ষষ্ঠ পাণ্ডব---- মোক্ষম ধরেছেন !!! জানতাম, বুঝে যাবেন।
শুভেচ্ছা সবাইকে---- অণু
জাদুঘরের সামনের ছবি- অণু
[img=6x4][/img]
কিছু কইলাম না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অসাধারণ লেখা- আমাকেও নি যায় ।
চ
ল
ছে ।
কড়িকাঠুরে
নতুন মন্তব্য করুন