ঘটনা একঃ
সুইজারল্যান্ড থেকে গতবছর দেশে গিয়েছিলাম বেড়াতে, গ্রামের বাড়ির দোকানে চা খাওয়ার সময় এক লোক আমার কাছে প্রশ্ন করে ‘ভাই আপনে কুন দেশে থাকেন?’, আমি বললাম সুইজারল্যান্ড, তারপর লোকটা আবার প্রশ্ন করে ‘ঐটা কি ইতালির লগে?’ আমি বললাম কাছাকাছি , তারপর সে আমাকে বলে ‘ভাই পলাইয়া ইতালি যানগা, তাড়াতাড়ি কাগজ পাইবেন, ইতালি হইল বড়লোকের দেশ’, সে আমাকে একটা দালান দেখাইয়া বলে ‘ঐযে বাড়িটা দেখতাছেন ঐটা মোবারকের পোলা ইতালির টাকা দিয়া বানাইছে’ ,
তারপর থেকে ইতালিকে আমার বিদেশ মনে হয় অন্য দেশ ইতালির মত মনে হয়না, আমি ওই লোককে বলেছি বড় হয়ে আমি ইতালি যাব, এইটা আমার “এইম ইন লাইফ”. ঘটনা এইখানেই শেষ না আরো আছে, ওই লোক আমাকে বলছে তার নাকি পরিচিত দালাল আছে, আদম ব্যপারি, একদম বিশ্বত, কোন টাকা মাইর যাবেনা কারন দালালের বাবা হাজী, আমি জানতে চাইলাম টাকা কেমন লাগবে? সে আমকে বলল ১৪ লাখ টাকা, ভিসার নাম ‘স্পন্সর ভিসা’ কাজ ভালো[ তবে সে বিস্তারিত জানে না] আমার কাছে জানতে চাইল আমি ইংরাজি কেমন জানি? বললাম এই মোটামুটি চালাইয়া যাইতে পারব। সে আমাকে বলল ইংরাজিটা আরেকটু ভালো করে শিখতে। আমি বললাম ঠিক আছে মামা আগামী বার দেশে আসার সময় ১৪ লাখ টাকা সহ ভালো ইংরাজি শিখে আসব ইনশাল্লাহ।
[দোয়া রাইখেন আপনারা, আল্লাহ ভরসা।। ইতালি আমি জাইয়াই ছারমু কাগজ সহ।
ঘটনা দুইঃ
আব্বার সাথে বাজারে গেছি অনেক দিন পর, ফিরার পথে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলের জন্য টাকা চাইলেন মসজিদের হুজুর, জানতে চাওয়ার আগেই বললেন যা দিব তার ৭০ গুন আখেরাতে ফিরত পাব, আমি বললাম আখেরাতে ক্যাশ টাকা দিয়ে করব কি? হুজুর বললেন সমপরিমান সওয়াব পাওয়া যাবে, আব্বা পাশে ছিলেন বলে হয়তো হুর পরীর উদাহরন দিলেন না, আমি আবার বললাম বেহেস্ত কোন একরকম হলেই চলবে আমার ফাইভ স্টার হতে হবে এমন কোন আবদার নেই, তাছাড়া আমি এমনিই বেহেস্ত যাব কারন আমি তো সরকারি চাকরি করিনা। হুজুর বিরক্ত হয়ে বললেন পোলাপান শিক্ষিত করলে এই এক বিপদ...আরো কিছু শুনার আগে আব্বার চেহারা খেয়াল করে পকেট থেকে ২৫০ টাকা বের করে দিলাম, তবে আব্বা একটু সামনে জেতেই হুজুরকে বললাম ২৫০*৭০=১৭৫০০!! টাকা আমার কিন্তু ফিরত চাই। বেশেস্তে গিয়াই আমি আপনেরে খুঁজা শুরু করব মনে রাইখেন।
ঘটনা তিনঃ
জুম্মার নামায শেষে দুপুরে খাবারের পর বাসার সবাই একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে, ছোট বেলার মত আব্বা আম্মার চোখ বুযে গেলেই আমি পাশের বাড়ির ছাদে, এবার নিজের বাড়ির ছাদে গিয়ে দেখি বাসার কাজের বুয়া আয়েশ করে বিড়ি টানছে, আমার উপস্থিতি টের পেতে বুয়ার কিঞ্ছিত সময় লাগল, চটযলদি বিড়িটা ফেলে বুয়া বলল ‘ আমার কোন নেশা নাই তবে মাঝে মাঝে মাথা ধরলে একটা দুইডা টান দেই এই আর কি’। বুয়া জানতে চাইল এই দুপুরে আমি ছাদে কেন? আমি সুইজারল্যান্ড থেকে আনা ফিলিপ মরিসের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিয়ে বললাম বুয়া আপনের মত আমারো কোন নেশা নাই তবে মাঝে মাঝে মাথা ধরলে একটা দুইডা টান দেই এই আর কি...
মন্তব্য
মজা পেলাম। তিন-এর শেষটা খুব ভালো লাগল।
গতবার যাব যাব করেও ইতালি যাওয়া হয় নাই। ওই দালালের ঠিকানাটা দ্যান দিকি!
কৌস্তুভদা
আমার যার সাথে কথা হয়েছে সে আসল দালাল না, সে দালালের হইয়া দালালি করে, তাই আসল দালাল খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন হয়ে যাবে, তবে আপনার চিন্তা নাই, ওই লোক আমাকে এইটা ও বলেছিল যে দুনিয়াতে ধনি দেশ আছে তিনটাঃ প্রথমটা হইল সউদি, দ্বিতীয়টা হইল ইটালি। বাকিটা হইল আম্রিকা। যেহেতু আপনি আম্রিকা থাকেন আপনার অন্য কোন ধনি দেশে আসতে হবেনা।
মাহমুদ
কৌস্তভদা,
ফ্লাইট কিন্তু ২০ ফুট কন্টেইনারের ভিতর, আরও জনা বিশেক এর সাথে গাদাগাদি করে ভূমধ্যসাগরে ভাসতে ভাসতে হবে। রাজি থাকলে আওয়াজ দিয়েন জায়গায় দাঁড়াইয়া।
ব্যাপক মজা পাইলাম
হে হে, হুজুর ব্যাটারা বড় ফাজিল। শেষেরটা বেশী মজার। - অণু
৫০ ঊর্ধ্ব কোন মহিলাকে বিড়ি খাওয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে আমি বেশ অবাক, দেশে ধনী সমাজের কালচারে যেমন একটা পরিবর্তন আসেছে একই ভাবে দরিদ্র সমাজেও অনেক পরিবর্তন এসেছে, যেমন ধরেন আমারদের বুয়ার তিন বার বিয়ে হয়েছে গত কয়েক বছর ধরে উনি তার প্রথম স্বামীর সাথে অলিখিত বন্ধনে আবদ্দঅনেকটা [live together after break up].
ধনী এবং দরিদ্র সমাজের অনেক মিল আছে এই বিষয়টা নিয়ে একটা পুরা লেখা দেবার ইচ্ছা আছে
যাই হোক ভালো থাকবেন সব সময়
মাহমুদ
আমি কিন্তু অনেক ছোট থেকেই দেখেছি বুয়ারা ধূমপান করেন... আসলে অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে গ্রামের মহিলারা ধূমপান করে আসছেন, বিশেষ করে তামাক চাষ হয়ে যেসব এলাকায় সম্ভবত সেসব অঞ্চলে। আমরা শহুরেরাই আসলে হঠাৎ দেখে অবাক হই।
তবে আমার একটা অবজারভেশন আছে, সমাজের খুব উচ্চবিত্ত আর সমাজের একদম নিম্নবিত্তদের মাঝে সামাজিক জীবনযাপনে অনেক মিল আছে, মাদক, মদ, বিবাহ, সম্পর্ক, ইত্যাদি বিভিন্ন দিক দিয়ে... ভিন্ন শুধু আমরা মধ্যবিত্তরা...
লেখাটা ভালো লাগলো... মজা পেলাম হুজুরের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ছাড়বেন বলেছেন জেনে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
মজার লেখা। লিখুন নিয়মিত।
তবে সবক'টা ঘটনাই যেহেতু ইতালী যাওয়া সংক্রান্ত না, তাই শিরোনামটা অন্য রকম হতে পারতো।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সজলদার সাথে এক মত.... আপনার আরো মজার ঘটনার অপেক্ষায় রইলাম...
তিন নম্বরটা জটিল লাগলো
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
জটিল!! লিখতে থাকুন বস।
love the life you live. live the life you love.
বস, আপনার মত আমারো কোন নেশা নাই, তবে মাঝে মাঝে মাথা ধরলে দুই একটা টান্ দেই আরকি।
৩ নাম্বারটা লাজবাব। লিখতে থাকুন প্লিজ।
মাঝে মাঝে মাথা ধরলে দুই একটা টান্ দেই আরকি! এইবার দেশে গেলে বুয়াকে বলতে হবে টানের সাথে মাঝে মাঝে একটু পানও করি এই আর কি, তবে আমার নেশা নাই কিন্তুক[ঈমানে কইতাছি] । বুয়ার জন্য দেশে যাবার সময় কোনটা নেয়া যায় বলেন তো ?
বুয়ার জন্যে। বলেন কি!
আপনের মত আমারো কিন্তুক নেশা নাই, কয়া দিলাম...
চমৎকার...
তিনটা ছত্রই ভালো লেগেছে! শেষটা অসাধারণ!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
মজার লেখা।
অসাধারণ
...........................
Every Picture Tells a Story
আমার ২য় টা বেশি মজা লাগলো...হাহাহা~~~ ২৫০*৭০
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
আপনার লেখা পড়ে মনটা একটু দমে গেল। আমি সরকারি চাকরি করি। যে বেতন পাই, বাড়ী ভাড়া দেয়ার পর খুব কষ্ট করে চলতে হয়। আমার নিকটতম আত্মীয় মাত্র তিন বছর হল একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছে; তার নিজের দুইতলা নির্মাণাধীন বাড়ি প্রায় শেষের পথে। আমার বাবাও সারাজীবন ভাড়াবাড়ীতে থেকে সরকারি চাকরি করে এখন অবসরে। রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট দিয়ে অনেক ধরণের এস্টিমেট করেও তার স্ত্রীর 'নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন' পূরণ করা গেলনা। এখন ফতোয়া শুনছি যে মরলে বেহেস্তও পাওয়া যাবে না। প্রাইভেট জব জিন্দাবাদ, তিন বছরে বাড়ি আর মরলে নিশ্চিত বেহেস্ত। আমার ছেলেকে শিখাচ্ছি এটা।
মামুন ভাই
আপনাকে আঘাত দেয়ার আমার কোন উদ্দেশ্য ছিল না,
বেশি দূর যেতে হবেনা আমার দুই বন্ধুর বাবা সরকারি চাকুরে এদের মাযে একজনের টিফিনের অবশিষ্ট অংশ অন্য জনকে খেতে দেখেছি অনেকবার, আজ সেই অবশিষ্ট অংশ টুকু খাওয়া বন্ধুটি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ব্রুক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর যার টিফিনের অবশিষ্ট অংশ টুকু সে খেত সেই ভারি টিফিন ওলা এখন পারায় একটা ঠিকাদারি প্রতিস্টান চালায়। দুই বার হাজতও কেটেছে
মনে রাখবেন বেতিক্রম সব জায়গায় আছে, আপনি হয়তো সেইসব বেতিক্রমি মানুষের মাঝে একজন
ভালো থাকবেন সব সময়
বড় হয়ে তো আমিও ইতালী যাইতে চাই... শুধু মনিকারে দেখতে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বস মনিকারে ঠিক চিনতে পারতাছিনা
আমার ল্যেবে একটা ইতালিয়ান লারকি আছে ‘লাউরা’ নামে, ইমেইল লাগলে আওয়াজ দিয়েন
মাহমুদ
আমিও ইতালী যেতে চাই,
তবে বড় না হয়েই...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বড় না হয়ে ইতালি জাওয়াটা আনন্দের হবেনা সামারে ইতালিতে একটু বেশি গরম পরে, আর গরম পড়লে ইতালিয়ানদের কাপড়ের সাইজ তাপমাত্রার সাথে ব্যস্তানুপাতিক হারে পরিবর্তন হয়
এক কাজ করেন আপনি শীত কালে যান, তাহলে নজরের হেফাজত করতে হবেনা
মাহমুদ
দারুন মজা পেলাম। সবচাইতে ভালো লেগেছে হুজুরের সাথে বাতচিত আর মুগ্ধ হয়েছি বুয়াকে ফিলিপ মরিস দেয়ার তরিকায়। হে - হালকায়ে “তরিকত” - ”কসমে ইতালি” - দুপুর বেলায় ভাত খাবার পর একটা দারুন সুবাসিত চায়ের মত লাগলো আপনার লেখা!!
আমিও ইতালী যেতে চাই, পিজ্জা আর পনিরের লোভে।
লেখা
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
দারুন!!!!!!!
যে কয় দারুন তার নাম হারুন
আপনার এইম ইন লাইফ সফল হউক।
খুব সুন্দর লিখেছেন, সবচেয়ে ভালো লেগেছে দুই নম্বরটা।
জটিল লাগল।
এই উইকএন্ডেই জুরিখ, লুসার্ন; মাউন্ট টিটলিস ঘুরে এলাম। আপনার দেখা পেলে বেশ আড্ডা দেয়া যেত।
জেনেভা আসেন নাই? আসল মজাইত দেখলেন না, জাউকগা পরের বার আইলে আমার সুইজারল্যান্ড নিয়ে লেখার পোস্টে যে লাইট পোস্টের ছবিটা আছে ওইটার নিচে সন্ধার সময় পাইবেন আমারে
ভাই, জটিল হইসে। চলুক।
নিটোল
ব্যাফক মজা ফাইলাম.......
সুমন ভাই, খুব এ মজার হইছে আপনার লেখাগুলা, আজকেই পরার একটু সময় পাইলাম, ভালো কাটল সময়..ধন্যবাদ. জেনেভা তে আসার প্লান আছে ...আসলে সরাসরি লাম্প পোস্ট এর নিচে চইলা আসব ...দেখা হইব
হা হা হা
বেশ মজার ঘটনাগুলা!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দারুন - খুব মজার
দান সবাই করতে পারে না, এটা একটা নেশার মত। আপনি নরসংদীর কাদের মোল্লার নাম শুনেছেন সে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা দিয়ে এলাকাবাসীদের জন্য মসজীদ করে দিয়েছেন। আপনি বলবেন স্কুল, কলেজ তো করে নাই কিন্তু না এগুলো সে অনেক আগেই করেছে। সে এতিমখানা ষ্ট্রাষ্ট এগুলো তো আছেই ইদানিং সে প্রতি ইউনিয়নে এটা করে মসজিদ করে দেবে। সে ইনসেপটার মালিক। এর চেয়ে কত বড়লোক আছে কয়জন দান করে। বেচে থাকার জন্য কত টাকা দরকার আর ফুর্তি করার জন্য কয় বছর (যৈবন) পাব......
নতুন মন্তব্য করুন